হঠাৎ বর্ষনের রাতে পর্ব -১৭ ও শেষ পর্ব

#হঠাৎ_বর্ষনের_রাতে💖
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💖
— পর্বঃ১৭(শেষ)

“বিস্মিত চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে অর্নব ইরার মুখের দিকে!’আর ইরা চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে!’ইরাকে চুপ থাকতে দেখে অর্নব বিষন্ন ভরা কন্ঠে বলে উঠলঃ

—“কি হলো ইরা কথা বলছো না কেন?’

“অর্নবের ডাকে নিজের ভাবনা থেকে বের হয় ইরা তারপর আমতাআমতা করে বলেঃ

—“হুম হ্যা…

—“কথা বলছো কেন আর কি সমস্যা আছে?’

—“স্যার

—“হুম বলো….

—“আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?’

“ইরার এবারের কথা শুনে অর্নবের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো!’অর্নব প্রচন্ড হতাশ হয়ে বললোঃ

—“কি…

—“জ্বী স্যার,,আমার বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে!’আমি জানি স্যার আপনি আমায় ভালোবাসেন আমিও আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না!’জীবনে আমি অনেক স্বাধীনতা পেয়েছি যখন যা চেয়েছি বাবা আমায় সেটাই দিয়েছে, আমার পড়াশোনা করে চাকরি করার খুব ইচ্ছে আমার বাবা সেটারও অপূর্ণতা রাখে নি স্যার!”তাই আমি আমার বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না!’আমি চাইলেই আপনাকে রিজেক্ট করে দিয়ে চলে যেতে পারতাম কিন্তু আমি চাইনি আমার ভালোবাসা অজানা থাকুক!’

“ওই যে কথায় আছে না স্যার সব মানুষের জীবনে কিছু না কিছু অপূর্ণতা হয়ে থেকে যায় আপনিও আমার সেই অপূর্ণতা স্যার!’আমি চাইনি আপনাকে মিথ্যে বলে এখান থেকে চলে যেতে!’আপনাকে ছেড়ে থাকতে এই দুইদিন আমার অনেক কষ্ট হয়েছে!’হয়তো সামনে আরো হবে,কিন্তু আপনাকে ভালোবাসি বলে যতটা না কষ্ট পেতাম তার চেয়েও বেশি কষ্ট হতো আপনাকে ভালোবাসি না বলে চলে যেতে!’তাই বলে দিলাম আমি জানি স্যার আপনি হয়তো আমার কথাগুলো শুনে খুব কষ্ট পাঁচ্ছেন কিন্তু তারপরও আপনি এটা কখনো ভাবতে পারবেন না আপনি যাকে ভালোবেসেছিলেন সে আপনাকে ভালোবাসে নি!’

“এতটুকু বলেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ইরা!’তারপর বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বললো ইরাঃ

—“আই এম সরি স্যার…

“উওরে অর্নবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায় ইরা!’আর অর্নব জাস্ট বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রয় ইরার যাওয়ার পানে!’তার বিশ্বাসই হচ্ছে না ইরা কি কি বললো তাকে!’এমনটা আশা করে নি অর্নব!’বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইল অর্নব তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে ওখানেই….

_____

“মাথা নিচু করে নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে হেঁটে চলছে ইরা!’বুকের ভিতর খা খা করছে তাঁর,,সে ভাবে নি শেষ মুহূর্তে এসে তাকে এমন কিছু করতে হবে!’আজ দুপুরেও জানতো না ইরা,তার বাবা মা তার জন্য এমন কিছু ভেবে রেখেছিল!’আজ বিকেলেই বাসা থেকে বের হওয়ার সময়___

|| ফ্লাসবেক ||

“বিকেলে তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হয় ইরা!’এমন সময় ইরার মা এসে বললোঃ

—“কোথায় যাচ্ছিস এখন?’

—“একটু জরুরি কাজ আছে মা,

—“এখন কি জরুরি কাজ তোর বাবা আসতে আর কিছুক্ষন বাকি আর এখন তুই বের হচ্ছিস?’

—“টেনশন করো না মা,আমি যাবো আর আসবো!’

“বলেই বের হতে নেয়!’ইরা দু’পা এগোতেই ইরার মা বলে উঠলঃ

—“তোর সাথে কিছু কথা ছিল ইরা…

“মায়ের কথা শুনে ইরা একটু থেমে বলেঃ

—“এখনই বলতে হবে আচ্ছা বলো…

—“আমরা তোর বিয়ে ঠিক করেছি ইরা,ছেলে তোর বাবার বন্ধুর ছেলে..

“মায়ের কথা শোনার সাথে সাথে থমকে যায় ইরা!’হতভম্ব হয়ে বললো সেঃ

—“হঠাৎ বিয়ে মা…

—“হঠাৎ কোথায় আর দেখ তোর বয়স তো কম হয় নি এখনো যদি বিয়ে না করিস তাহলে কিভাবে হবে মা,এমনিতেও তুই চাকরি করতে চেয়েছিস আমরা করিয়েছি এখন তো বিয়েটা করে নে…

—“কিন্তু মা…

—“আবার কিন্তু কিসের এবার আর কোনো বাহানায় কাজ হবে না ইরা,তোর বাবা ওনাদের কথা দিয়েছেন!’আচ্ছা শোন বাকি কথা ফিরে এসে বলবো,এখন তাড়াতাড়ি যা তোর বাবা আসার আগে চলে আসিস!’…

“উওরে ইরা কিছু না বলেই বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে!’পুরো রাস্তায় মন খারাপ করে ছিল ইরা,,আর পুরো রাস্তায় ভেবেছে অর্নবকে কি ভুলে যাবে সে!’

|| ফ্লাসবেক ওভার ||

“নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছে ইরা বাড়ির দিকে!’

_____

“রাত_৮ঃ০০টা….

“নিজের রুমের বিছানায় বসে আছে অর্নব,প্রচন্ড খারাপ লাগছে তাঁর!’সে ভাবতেই পারে নি ইরা এমন একটা উওর দিবে তাঁকে!’যখন একটা মেয়ে বলে_

“আমি তোমায় ভালোবাসি না,,তখন একটা ছেলের খুব কষ্ট হয়!’

“কিন্তু ইরার উওর কি ছিলঃসে ভালোবাসে তাকে কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না!’

“অর্নবের ইরার কথা শুনে একদমই স্তব্ধ হয়ে গেছে!’মাথা তার কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল তখনই!’অর্নব ভেবে ছিল ইরার উওর না হলে বাবার দেখা মেয়েকেই বিয়ে করবে সে,আর হ্যাঁ হলে ইরাকেই বউ বানাবে!’কিন্তু ইরা কি বললো ভালোবাসে তাকে কিন্তু বিয়ে করতে পারবে না!’এমন একটা উওর দিলো যে অর্নব ভেবেই পাচ্ছে না সে কি করবে বা তার কি করা উচিত!’সব কিছু কেমন এলেমেলো লাগছে অর্নবের!’মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরলো অর্নব!’তার খুব কষ্ট হচ্ছে বুকের ভিতর তোলপাড় চলছে!’

“অন্যদিকে আরেকজন….

“নিজের রুমে বসে আছে নীরবে,বুক চিঁড়ে কান্না পাচ্ছে ইরার কিন্তু সে কাঁদতে পারছে না!’ইরার বাবাও চলে এসেছে বাসায় কিছুক্ষন আগেই বাবা মায়ের সাথে কথা বলে এসেছে ইরা!’কালই নাকি তাকে দেখতে আসবে ছেলেপক্ষ!’সবকিছু যে এত দ্রুত হয়ে যাবে ভাবতে পারে নি ইরা!’

–“আচ্ছা আমি যদি বাবাকে অর্নবের কথা বলি তাহলে কি আমাদের মনে নিবে,নিতেও তো পারে ইরা,,

“মনে মনে ভাবলো ইরা!’চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ তার!’সবকিছু কেমন যেন অগোছালো আর খাপছাড়া লাগছে ইরার!’….

“আজ রাতে হয়তো ইরা অর্নব কারোই ঘুম আসবে না!’দুজনই যে যার রুমে বসে দীর্ঘ শ্বাস ফেলছে!’

“পরেরদিন বিকেলে….

“নিজের রুমে বসে আছে ইরা কিছুই ভালো লাগছে না তাঁর!’এমন সময় তার রুমে প্রবেশ করলো ইরার মা!’বললেন উনিঃ

—“কি হলো তুই এখনো তৈরি হোস নি,ওনারা তো এসে পড়বে এখনই…

“মায়ের কথা শুনে ইরা নীরবে বলে উঠলঃ

—“হুম হচ্ছি…

—“এভাবে না ঝিমিয়ে তাড়াতাড়ি কর…

“এমন সময় ওদের রুমে ঢুকলো জেরিন!’হুট করে ইরাকে দেখতে আসবে শুনে চরম অবাক জেরিন!’সে ভাবে নি এভাবে আচমকাই ইরার বিয়ে ঠিক হয়ে যাবে!’ইরার মা জেরিনকে দেখে বলে উঠলঃ

—“তুই এসেছিস জেরিন?’

—“হুম আন্টি!’

—“খুব ভালো হয়েছে তুই এসেছিস, এই ইরাকে একটু তাড়াতাড়ি তৈরি করে দে তো,

—“জ্বী, আন্টি আপনি টেনশন করবেন না!’

“এতটুকু বলে জেরিন এগিয়ে আসে ইরার দিকে!’আর ইরার মা বেড়িয়ে যায় রুম থেকে!’ইরার মা বের হতেই জেরিন হতভম্ব কন্ঠে বলে উঠলঃ

—“হঠাৎ করে এগুলো কি হলো ইরা?’

—“তোকে আর কি বলবো হুট করেই বাবা মা এই সিদ্ধান্ত নিলো…

—“ওহ

—“হুম,আয় তোকে তৈরি করে দেই!’

.

“গাড়ি করে মেয়ে দেখতে যাচ্ছে অর্নব!’তার মটেও যেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু তারপরও বাবার মুখের ওপর কিছু বলতে পারছে না অর্নব!’আর কি বা বলবে এটা ভেবেও কিছু বলে নি অর্নব!’আজকে অর্নব ব্লাক শার্ট,ব্লাক জিন্স,শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ব্লোড করা, চুলগুলো সাজানো গোছালো, হাতে ব্লাক ওয়াচ!’সবকিছুই ঠিক আছে,শুধু ঠিক নেই অর্নবের মুড!’অর্নবের পাশেই বসে আছে অর্নবের মা আর অর্নবের ছোট বোন ইশা!’আর সামনে ড্রাইভারের পাশে বসেছে ইরার বাবা!’অর্নব নীরবেই গাড়ির জানালার দিকে মুখ করে বাহিরে তাকিয়ে আছে!’আর চোখের সামনে ভাসছে তার ইরার মুখটা!’আজ যেন একটু বেশি মনে পড়ছে ইরার কথা!’হঠাৎই অর্নবের চোখ যায় একটা রাস্তার দিকে!’এই রাস্তাটাই প্রথম দেখা হয়েছিল ইরা আর অর্নব!”হঠাৎ বর্ষনের রাতে” হুট করেই অর্নবের গাড়ির সামনে এসেছিল ইরা,,বৃষ্টির মধ্যে হুট করেই অর্নবকে জড়িয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়!’অর্নবের সেদিনই ইরার ভেজালো চেহারার মাঝে মায়াবী মুখ দেখে প্রথম ভালো-লাগা কাজ করেছিল!’কিন্তু তখন আর সেইভাবে ভালো লাগাকে ওতটা গুরুত্ব দেয় নি!’পড়ে অফিসে রোজ ইরাকে দেখে ওর সাথে মিশতে মিশতে কথা বলতে বলতে ধীরে ধীরে ভালো লাগা থেকেই ভালোবাসা হয়ে যায় অর্নবের!’পরিচয়টা বেশি দিনের না হলেও ভালেবাসাটা যেন আর ভাবলো না অর্নব প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তার!’হঠাৎই অর্নবের ভাবনার মাঝে বলে উঠল অর্নবের বাবাঃ

—“আমরা চলে এসেছি…

“বাবার কথা শুনে সামনে তাকালো অর্নব,,সামনে তাকাতেই আরো অবাক অর্নব!’অবাক হয়ে বললো সেঃ

—“এখানে….

____

“লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে আয়নার সামনে বসে আছে ইরা!’সামনেই তাকে সাজিয়ে দিচ্ছে জেরিন হঠাৎই বললো সেঃ

—“একটা কথা বলবো…

—“হুম বল না…

—“তুই অর্নব স্যারকে ভালোবাসিস তাই না আর অর্নব স্যারও…

“হুট করে জেরিনের এমন কথা শুনে অবাক চোখে তাকালো ইরা জেরিনের দিকে!’ইরার চাহনি দেখে জেরিন আবারো বলে উঠলঃ

—“কি হলো কথা বলছিস না কেন?’

“জেরিনের এবারের কথা শুনে ইরা নিজেকে আর শান্ত রাখতে না পেরে জেরিনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো!’আচমকা ইরার এমন কাজে চমকে উঠলো জেরিন!’সাথে ইরার কাজ দেখে অবাক হয়ে বললোঃ

—“আরে কাঁদছিস কেন,তার মানে তুই অর্নব স্যারকে আর অর্নব স্যার তোকে ভালোবাসে..

“উওরে মাথা নাড়ায় ইরা!’ইরার উওর শুনে বলে জেরিনঃ

—“তাহলে আঙ্কেল আন্টিকে বলছিস না কেন?’

—“বলে কোনো লাভ নেই বাবা ছেলেপক্ষকে কথা দিয়েছে…

—“তারপরও একবার বলে তো দেখতে পারতি..

“এরই মাঝে রুমের দরজা খুলে বললো ইরার মাঃ

—“তোদের হলো ওনারা তো চলে এসেছে…

“ইরার মায়ের কথা শুনে জেরিন বলে উঠলঃ

—“এই তো আন্টি হয়ে গেছে আপনি যান আমি এক্ষুনি ইরাকে নিয়ে আসছি..

—“ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসিস!’

—“জ্বী আন্টি…

“উওরে ইরার মা আর কিছু না বলে চলে গেলেন!’ইরার মা যেতেই ইরা নিজের চোখ মুখ মুছে বলে উঠলঃ

—“আমায় কি আরো সাজাবি…

—“আর একটু..

“এতটুকু বলে ইরার চোখ মুখ মুছে হাল্কা মেকাপ দিয়ে দিল জেরিন!’

.

“সোফার উপর বসে আছে অর্নব!’সে ভাবতেই পারে নি ইরাদের বিল্ডিং এই মেয়ে দেখতে এসেছে অর্নব!’এই মুহূর্তে অর্নবের মনে হচ্ছে একদিন যদি ইরার সাথে ইরার বাসায় ঢুকতো সে তাহলেই বুঝতে পারতো এটা ইরাদের বাসা নাকি অন্যকারো!’অর্নবের সামনেই বসে আছে একজন লোক হয়তো মেয়ের বাবা,তার পাশেই বসে আছে অল্প বয়সের একটা ছেলে হয়তো মেয়ের ভাই!’আর বেশি কিছু ভাবলো না অর্নব!’এরই মাঝে বলতে না বলতে মেয়ে হাজির!’ইরার বাবা ইরাকে আসতে দেখে বলে উঠলঃ

—“ওই তো ইরা চলে এসেছে…

“ইরা” নামটা শুনতেই অবাক চোখে তাকালো অর্নব সামনের মেয়েটির দিকে!’লাল টুকটুকে শাড়ি,হাতে লাল কাঁচের চুড়ি,খোলা চুল,চোখে কাজল,সাথে হাল্কা মেকাপ,অর্নব মেয়ের মুখ দেখে আরো চল্লিশ বোল্ডকা জাটকা খেলো কারন এই আর কেউ নয় অর্নবের ইরা!’

“অর্নব ইরার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর তাকালো অর্নবের বাবার মুখের দিকে!’অর্নবকে নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হেঁসে বলে উঠল আফজাল সাহেবঃ

—“কেমন লাগলো সারপ্রাইজ অর্নব!’

“বাবার কথা শুনে আরো অবাক অর্নব!’তার মানে ইরার সাথেই তার বাবা বিয়ে ঠিক করেছে!’মুহূর্তের মধ্যে অর্নবের মুড বদলে গেল,আর বুকের ভিতর শুরু হয়ে গেল এক অদ্ভুত ভালোলাগার শিহরণ!’সে ভাবতেই পারে নি এমন কিছু তার সাথে ঘটতে চলেছিল!’তার মানে কাল ইরা অর্নবের কথাই বলেছিল!’কিন্তু ইরা যেভাবে বলেছিল তার মানে ইরাও জানে ওর বাবার বন্ধুর ছেলে আমি!’…

“এদিকে…

“জেরিন ইরার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললোঃ

—“দোস্ত অর্নব স্যারই তোর বর..

“জেরিনের কথা শুনে অবাক চোখে তাকালো ইরা সামনের দিকে!’ছেলের মুখ দেখে অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে সে!’অবাক চোখ নিয়েই ইরা গিয়ে বসলো তার বাবার পাশ দিয়ে!’ইরা বসতেই বলে উঠল অর্নবের বাবাঃ

—“কেমন আছো ইরা…

—“জ্বী ভালো স্যার…

—“হু এখন থেকে যে স্যার বলা বন্ধ করতে হবে ইরা আর বাবা বলে ডাকতে হবে…

“অর্নবের বাবার কথা শুনে সবাই হেঁসে দিল!’ইরা তো অবাকের ওপর অবাক হচ্ছে!’তার বিশ্বাসই হচ্ছে না অর্নবের সাথেই তার বাবা তার বিয়ে ঠিক করেছে!’ইরার অবস্থা বুঝতে পেরে বলে উঠল অর্নবের বাবাঃ

—“কি অর্নব ইরা দুজনেই অবাক হচ্ছো বিষয়টায় তাই না,,আসলে কি বলে তো তোমাদের বিয়েটা আরো আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম আমরা!’কারন ইরার বাবা হলো আমার ছোট বেলার বন্ধু!’অর্নবের বাবার কথা শুনে অর্নব অবাক হয়ে বললোঃ

—“তাহলে সেদিন…

—“ওটা জাস্ট একটু একটিন ছিল…

“বলেই হেঁসে উঠল অর্নবের বাবা!’অর্নবের বাবা অনেক আগেই ইরার বাবা মায়ের সাথে পরিচিত ছিল!’সেদিন অফিসে ইরা অর্নবকে দেখে শুরুতে একটু রেগে গেলেও পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে হেঁসে ফেলেন উনি!’

_____________

“মাঝখানে কাটে ২০ দিন!’এই ২০ দিনে বদলে গেছে অনেককিছু বদলে গেছে ইরা অর্নবের জীবন!’কারন ইরা অর্নবের বিয়ে গেছে আজ ২দিন হলো!’খুব ধুমধাম করেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের!’ইরা অর্নবের তো বিয়ের দিনও বিশ্বাস হচ্ছিল না তাঁরা তাদের ভালোবাসার মানুষকেই বিয়ে করেছে….

|| বিকাল_৫ঃ০০টা… ||

“আনমনেই একটা পার্কের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে জেরিন!’তারও বিশ্বাস হচ্ছে না ইরা অর্নবের বিয়ে হয়ে গেছে!’এসব ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছিল জেরিন এমন সময় হুট করেই সামনে আসফিকে দেখে কিছুটা অবাক হয় সে!’আজ অনেকদিন পর আসফিকে দেখছে সে কারন অনেকদিন আগেই আসফি কোনো এক কারনে বিদেশ গিয়েছিল!’তারপর আর যোগাযোগ হয়নি আসফির সাথে জেরিনের!’সে ভেবে নিয়েছে তার ভালোবাসা হয়তো একতরফা!’জেরিন বেশি কিছু না ভেবেই আসফিকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয়!’এরই মাঝে আসফি বলে উঠলঃ

—“আরে জেরিন তুমি,,কতদিন পর তোমায় দেখলাম?…

“আসফির কথা শুনে জেরিনও আর এগোতে পারলো না!’হাল্কা হেঁসে বললোঃ

—“হুম, ভালো আছেন স্যার?’

—“হুম তুমি?

—“হুম আমিও ভালো!’

—“তা তুমি একা তোমার বান্ধবী ইরা কোথায় কেমন আছে ও?’

—“জ্বী ভালো স্যার,ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে!’

“জেরিনের কথা শুনে আসফি অবাক হয়ে বললোঃ

—“কি সত্যি?

—“হুম….

—“নিশ্চয়ই অর্নবের সাথে তাই না?’

“আসফির কথা শুনে জেরিন অবাক হয়ে বললোঃ

—“হুম জানলেন কি করে?’

—“আরে আমি তো সেদিন পার্টির রাতেই বুঝেছিলাম অর্নব ইরাকে ভালোবাসে,যাক ভালো হয়েছে!’

“আসফির এবারের কথা শুনে জেরিন নীরব কন্ঠে বললোঃ

—“হুম…

—“তা তুমি কবে করছো?’

—“হুম আপনার মতো কাউকে পেলেই করে ফেলবো স্যার…

—“কি…

“আসফির কি শুনে ফট করেই মুখ ফসকে কি বলে ফেললো জেরিন ভাবতেই ঠোঁটে কামড় দিয়ে বললো জেরিনঃ

—“ইয়ে না মানে কিছু না আমি যাই বুঝলেন স্যার পরে কথা হবে!’

“বলেই চটজলদি যেতে নেয় জেরিন!’জেরিনকে যেতে দেখে ওর হাত ধরে বসলো আসফি তারপর বললোঃ

—“আমার মতো কেন আমাকেই বিয়ে করতে পারো জেরিন,কারন তোমায় বিয়ে করতে আমার কোনো আপত্তি নেই কিন্তু!’

“আসফির কথা শুনে হা হয়ে যায় জেরিন!’খুশি হয়ে বলে সেঃ

—“সত্যি…

“উওরে মাথা নাড়ায় আসফি!’আসফির কথা শুনে ফট করেই জড়িয়ে ধরে জেরিন!’প্রচন্ড খুশি সে!’হ্যাঁ আসফিও জেরিনকে ভালোবাসে কিন্তু সময়ের অভাবে কিছুই বলতে পারে নি!’সে জানে জেরিনও তাকে ভালোবাসে!’কথাগুলো আনমনে ভেবে আসফিও খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে জেরিনকে!’

“অতঃপর প্রকাশ পেয়ে গেল আরো এক জুটির ভালোবাসা!’ভালোবাসা হয়তো এমনি হুট করে হবে আবার হুট করেই প্রকাশ করে দিয়ে গড়বে এক নতুন গল্প!’❤️

____

“রাত_১০ঃ০০টা…..

“বেলকনিতে বসে আছে ইরা আর অর্নব!’এমন সময় আকাশ ফেটে শুরু হলো বর্ষন!’বেলকনিতে বসেই এই রাতের বর্ষন দেখছে ইরা আর অর্নব!’হঠাৎই অর্নব উঠে চলে যায় রুমের ভিতর!’অবশ্য এতে অনেক অবাক হয় ইরা কিন্তু কিছু বলে না!’এরই মাঝে আবারো হাজির অর্নব হাতে তার ইরার সেই বর্ষনের রাতের রেখে যাওয়া ওড়নাটা!’ইরা অর্নবের হাতে ওড়না দেখে অবাক হয় তার মানে এটা অর্নবের কাছে ছিল আর সে কিনা সেদিন তার বাড়ি তন্নতন্ন খুজেছিল ওড়নাটা আনমনেই হেঁসে ফেললো ইরা!’অর্নব ইরার পাশে বসে বলেঃ

—“তোমায় সেদিন বলেছিলাম ইরা তোমার একটা জিনিস আমার কাছে চলে এসেছিল এটাই হলো সেই জিনিস!’

“উওরে মাথা নাড়ায় ইরা!’অর্নব বসতেই ইরা অর্নবের কাঁধে মাথা রাখে!’ইরাকে কাঁধে মাথা রাখতে দেখে অর্নবও খুশি হয়ে ইরাকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ

—“বিশ্বাস করো আমি ভাবেনি আমি এইভাবে তোমায় পাবো,সেদিনও হঠাৎ বর্ষন ছিল আজও হঠাৎ বর্ষন হচ্ছে,সেদিনও রাত ছিল আজও রাত!’তুমি আমার “হঠাৎ বর্ষনের রাতে” আসা সেই গল্প ইরা যার কথা না বললেই নয়!’তোমায় আমি বড্ড ভালোবাসি ইরা কখনো ছেড়ে যাবে না তো!’

“বলেই নিজের হাতটা এগিয়ে দেয় অর্নব ইরার দিকে!’ইরাও খুশি মনে অর্নবের কাঁধে মাথা রেখেই ওর হাতটা ধরে বললোঃ

—“কখনো যাবো না আমিও যে তোমায় খুব ভালোবাসি!…

“অর্নবও খুশি হয়ে যায় ইরার কথা শুনে!’তারপর আর কি দুজনেই দুজনের কাঁধে মাথা দিয়ে দেখতে থাকে,,রাতের আকাশে আভাসে ভাসা বর্ষন!’সাথে বুনতে থাকে তাদের আগামী পথগুলো!’❤️

•—————সমাপ্ত—————•

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here