” তোমাকে আমার অনেক কিছু বলা হয়নি। সেইদিন আমাকে যা জিজ্ঞেস করেছিলে, আমি মিথ্যা বলেছিলাম। ”
বাইকের চাবির রিং ঘোরাতে ঘোরাতে নাজরানার কথা শুনছে মাসিফ। মাসিফ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
-” কোন দিন? কি কথা বলেছিলাম তোকে? ”
দীর্ঘ এক শ্বাস নিয়ে নাজরানা বলল,
-” আমার পছন্দের কেউ আছে কিনা! ”
-” ওহ। সেটা আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম তোর বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে তাই। হঠাৎ এই কথা? আর, কি মিথ্যে বলেছিস আমাকে? ”
নাজরানা শুকনো ঢোক গিলে বলল,
-” আমি একজনকে ভা..ভালোবাসি। ”
মাসিফ প্রচন্ড বিস্ময় নিয়ে বলল,
-” কি? আংটি বদল হয়ে গেলো। আর তুই এখন কথাটা বলছিস? তোকে ভালোয় ভালোয় জিজ্ঞাসা করেছিলাম তখন তো নির্দ্বিধায় বলেছিলি, না। এখন আমি আর কিছু করতে পারবো না। যা এখন, বিয়ের প্রস্তুতি নেয়। ”
নাজরানা মাথা নিচু করে চোখের কোণের পানি মুছলো। ভাঙা গলায় বলল,
-” আমার পুরো কথাটা শুনে নাও। তারপর তুমি যা বলবে তাই হবে। ”
-” আমার বলা, না বলা দিয়ে কি যায় আসে? আচ্ছা বল তুই। ”
মাসিফ এবার পূর্ণ দৃষ্টি মেলে নাজরানার দিকে তাকালো। নাজরানাকে দেখে মনে হচ্ছে, খুব আতঙ্কে আছে। চোখগুলো মনে হয় কান্নায় বেলুনের মতো ফুলে গিয়েছে। নাজরানা চোখ বন্ধ করে ঝরঝর করে বলে দিলো,
-” আমি তোমাকে ভালোবাসি। ছোট বেলা থেকেই তোমায় ভালো লাগতো। কিন্তু পরে কিভাবে যে ভালোবেসে ফেলেছি বুঝিনি। তোমাকে সাহসের অভাবে কিছু বলিনি, যদি আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট হয়! তুমি যদি অগ্রাহ্য করে দাও, তাহলে আমি মেনে নিতে পারতাম না। এই ভেবে চুপ ছিলাম। ভাবলাম সব ঠিক হয়ে যাবে। আর ফুফু আমাকে ভীষণ স্নেহ করেন। কিভাবে কি হবে, এসব ভেবেই আমি আর আগাইনি। কিন্তু আংটি বদলের পর থেকে মন ভীষণ ছটফট করছে। মনে হচ্ছে, আমার কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। তাই কথা গুলো না জানিয়ে পারলাম না। তবে হ্যাঁ, তুমি আমাকে অগ্রাহ্য করতে পারো। কপালে যা আছে তাই হবে। কিন্তু খুব দমবন্ধ লাগছিল তোমাকে না বলে। ”
নাজরানা একটু থেমে আবার বলল,
-” প্লিজ তুমি আমার কথায় রাগ করো না। আমাকে দরকার হলে থাপ্পর মারো। তবুও বিষয়টা এখানেই মিটমাট করে দাও। আমাদের মাঝেই থাকুক এটা। ”
মাসিফ নির্বিকারভাবে চেয়ে রইল। নাজরানা তাকে দেখে মাসিফের কোনো অভিব্যক্তি বুঝতে সক্ষম হলো না। কিন্তু মাসিফের মনে চলছে তান্ডব। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মাসিফ বলল,
-” তুই আমার চোখের সামনে থেকে দূরে যা। নিজের বিয়ের চিন্তা কর। ”
নাজরানা নিঃশব্দে প্রস্থান করলো। মনে মনে জানতো, যেন এটাই হবে।
______
আজ রাতে নাজরানার গায়ে হলুদ। পুরো পরিবার, আত্নীয়-স্বজন সকলে এসেছে গ্রামের বাড়িতে। বাড়িতে, উঠোনে মানুষের গিজগিজ। কোথাও একা একটু শান্তিতে থাকার জায়গা নেই। মা-ভাবীরা সবাই মিলে হলুদ বাটছে, স্টেজে টেবিল সাজানোর জন্য সামগ্রীগুলো ঠিক করছে। ছোট বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি তো আছেই। বাড়ির পেছনে বাবুর্চিরা রান্না করছে। ছেলেরা সবকিছু ঠিক করছে বা কাউকে কাজের ফরমাইশ দিচ্ছে।
এত ব্যস্ততায় নাজরানা না পেরে ওয়াশরুমে গিয়ে পানির ট্যাপ ছেড়ে অনেকক্ষণ কাঁদলো। এই শেষ! ঐ মানুষটার জন্য আর কাঁদবে না সে। কিন্তু মনকে বোঝানো বড় দায়।
গাঢ় হলুদ রঙের উপর ছোট ছোট সবুজ ও বেগুনি রঙের কাজ করা খুব সুন্দর একটা শাড়ি পরে স্টেজে বসে আছে। না চাইতেও মুখে বাকাত্যাড়া দাঁতের হাসি ঝুলে আছে। স্থির দৃষ্টিতে সবকিছু দেখছে। ঐ তো, মাসিফ ভাইকে দেখা যায়, সব দিকে কি সুন্দর তদারকি করছে। শরীরে কচুপাতা রঙের পাঞ্জাবি জড়ানো তার। কি সুন্দর দেখতে লাগছে!
নাহ, দেখা উচিত হবে না নাজরানার। চোখ সরিয়ে নিলো। নিজেকে সামলে নিল।
একে একে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে নাজরানাকে। এবার মাসিফের পালা। নাজরানা মনে করেছিল, ওই ঘটনার পর মাসিফ তার সামনে আসবে না। কিন্তু কি স্বাভাবিক ব্যবহার করছে মাসিফ!
হুট করে মাসিফ নাজরানার গালে হলুদ ছোয়ালে, মাসিফ কানের কাছে ধীরে ধীরে বলে,
-” তোকে ছোয়ানো এই হলুদ, সেই ইঞ্জিনিয়ার না ফিঞ্জিনিয়ারের কাছে যাবে না। এই হলুদ শুধু আমার গালেই ছোয়ার অধিকার আছে। ”
নাজরানা এ কথা শুনে থ বনে গেল।
মাসিফ আবারও কানে কানে বলল,
-” তোকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে বলতে হবে। ওহ হ্যাঁ, অনুষ্ঠান শেষে ফ্রেশ হয়ে নদীর তীরে দেখা করিস। ”
#চলবে
#হলুদ_ক্ষণে_স্তব্ধতা💛
#সূচনা_পর্ব
লেখিকাঃ #ইয়ানাত_রোযী
[ ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ]