হালাল প্রেমের গল্পকথন পর্ব -০৩

#হালাল_প্রেমের_গল্পকথন -৩
Tahrim Muntahana

শশুড় বাড়িতে আজ তাহুর তৃতীয় দিন। কিভাবে সময় চলে যায় বুঝা বড়‌ই মুশকিল। দেখতে দেখতে বিয়ের তিনদিন‌ হয়ে গেল, আজ বিকেলে তাহু ফিরবে তার নিজ ভবনে। নিজ ভবনেই; শশুড় বাড়িতে এখন থাকার মতো উপযোগী সে হয়নি। সকাল থেকেই মন খারাপ করে বসে ছিল সে, এই মানুষ দের ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না, আবার মায়ের কাছে ফিরবে বলেও আনন্দ লাগছে। মূলত দুইয়ের সংমিশ্রণে কি রকম রিয়েকশন দিবে সেটা ভাবতে ভাবতেই তার মন খারাপ হয়ে গেছে। এমন সময় তাযিন ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

~ রেডি হন, সুনু!

তাহুকে কাছের মানুষ রা সুনু বলেই ডাকে।‌ ছোট বেলায় সোনা থেকে তাহুর নানির মুখে সুনু শুনতে শুনতে এটাই যেন তাহুর ডাক নাম হয়ে গেছে। এতে অবশ্য তাহুর কোনো সমস্যা নেই। বরং আদুরে লাগে অধিক। এই যে স্বামী ডাকলো, তার মন নিমিষেই পুলকিত হয়ে গেল। মন খারাপেরা কোথায় গিয়ে পালালো, ধরে বেঁধেও নিজের সাথে আটকে রাখতে পারলো না। এই মন খারাপ টাকে মাধ্যম করে আজকের‌ যাওয়াটা ক্যান্সেল করতে পারতো! কিন্তু আফসোস সে জোর করে অভিনয় করতে পারে না, হাসি পায়। যেমন তেমন হাসি নয়, এত হাসি পায় যে পাশের মানুষ গুলোও একসময় বিরক্ত হয়ে যাবে। তাহু নিজের ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,

~ রেডি হবো কেন? আমাদের না বিকেলে যাওয়ার কথা।

~ বাড়ি যাওয়ার কথা বলিনি, কলেজের কথা ভুলে গেছেন? পরীক্ষা সামনে তাও মনে হয় জানেন না।

~ কলেজ? কলেজ কেন যাবো? পরীক্ষা তাই আমার কি?

~ মানে কি? কি সব বলছেন?

~ প্রাচীন কালে কলেজ যেতাম তবে এখন যাবো ন!

তাহুর কথায় ভড়কে গেল তাযিন। প্রাচীন কালে মানে? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

~ আপনি না বিয়ের আগের দিন ও কলেজ গিয়েছিলেন, প্রাচীন কাল হলো কি করে?

~ আম্মু বলছে মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ের আগের জীবন আর বিয়ের পরের জীবন এক নয়। বিয়ের আগে যেতাম, বিয়ের পর যাবো ন, প্রাচীন কাল ই তো!

তাহুর এরকম হেঁয়ালি তে রেগে গেল তাযিন। এই মেয়ে নিশ্চিত আকাশ কুসুম ভেবে পড়াশোনা করবে না ঠিক করেছে। ধমক দিয়ে বললো,

~ ঠাস করে একটা চড় বসাবো, তাড়াতাড়ি রেডি হন, আমি বাইরে অপেক্ষা করছি। পড়াশোনা অফ করার চিন্তা মাথাতেও আনলে, আপনার সংসারের ভুত কিভাবে মাথা থেকে নামাতে হয় সেটাও আমার ভালো করে জানা।

তাযিন বাইরের দিকে হাঁটা ধরেছে, তাহু তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো,

~ আরে বুঝতে পারছেন না, লেজ বিশিষ্ট জায়গায় লেজহীন দের যাওয়ার কোনো অধিকার নেই। অধিকার রক্ষা করা নিজেদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, আমি কত দায়িত্বশীল ব্যক্তি আপনাকে নতুন করে বলতে হবে না নিশ্চয়!

বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে তেড়ে আসতে নিবে তার আগেই তাহু বোরকা পড়া শুরু করে দেয়। তাযিন রাগতে গিয়েও হেসে বাইরে চলে যায়। তাহু রাগে গজগজ করতে করতে রেডি হয়।
“পরীক্ষা তো কি হয়েছে? পরীক্ষা দিলেই হবে, আগে কেন কলেজ যেতে হবে। আজব ব্যাপার স্যাপার। ক্লাস হয়না, অযহত বসে থাকতে হবে! এখন এইটা বললেই তো বলবে বানোয়াট কথা, মিথ্যা বলি। অথচ মিথ্যা কথা আমার ধাঁচে নেই।”
এমন অনেক কথা বিড়বিড় করতে করতে রেডি হয় তাহু। সত্যি তো এটাই আজ ক্লাস‌ই হবে একটা! তা আবার বাহারি আলাপের ক্লাস। বাইরে যেতেই তাযিন কে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাহু কপাল কুঁচকায়। ইতস্তত করে বলে উঠে,

~ আপনি নিয়ে যাবেন আমাকে?

~ হ্যাঁ কেন? সমস্যা?

~ না মানে, কলেজে স্যার রা দেখলে প্রশ্ন করবে!

~ তো?

~ তো কিছুই না চলুন।

দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলেই তাহু বাইকে চেপে বসলো। তাযিন আর কথা বাড়ালো না, ছুটতে শুরু করলো গাড়ি। কারোর মধ্যেই আর কোনোরকম কথা হলো না।তাহু ভাবছে তাকে দেখে যদি সহপাঠীরা জিজ্ঞেস করে! কি বলবে সে? সত্য বললেও তো সমস্যা, এক কান থেকে চার কান চলে যাবে, আবার কেউ কেউ তো বলেও বসবে দাওয়াত দিলে না। বিব্রত হয় তাহু। কলেজ থেকে কিছুটা দূরেই নেমে যায়। তাযিন প্রশ্ন করলেও কোনো রূপ উত্তর সে দেয় না। বরং বলে উঠে,

~ অপাত্রে দান থেকে আপনাকে বাঁচালাম। সবাই যখন শুনবে আমার বিয়ে হয়েছে, আপনি আমার বর তখন ট্রিট চাইবে। ওদের কে খাওয়ানোর থেকে আপনি যাওয়ার পথে ভিক্ষকদের কিছু টাকা দান করে যাবেন। আমার এসব গ্যাদারিং পছন্দ না।

তাযিন মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে চলে গেল। মেয়েটার এসব দিক তাকে মুগ্ধ করে। কিছুক্ষণ সময় হাসি আমোদে টাকা নষ্ট না করে গরিবদের মাঝে টাকা গুলো বিলিয়ে দিলেও স‌ওয়াব পাওয়া যাবে, আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন, তাদের সংসারে বেশী বেশী বরকত দিবেন। এর থেকে ভালো পন্থা আছে নাকি! যাওয়ার পথে যতগুলো ভিক্ষুক কে চোখে পড়লো কম বেশী সবাই কেই সাহায্য করলো তাযিন। এদিকে কয়েক দিন পর কলেজ এসে তাহুর মনে হচ্ছে ক্লাস রুম টাই ভুলে গেছে। পথিমধ্যে তাহুর প্রিয় স্যারের সাথে দেখা। একপ্রকার ছুটেই গেল সে। হা* (সিক্রেট রাখতে বলা হয়েছে) স্যার তাহুকে দেখেই হাসলেন। সালাম বিনিময় করে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে বললেন,

~ সামনে তো পরীক্ষা, কলেজে আর এসো না, ক্লাস হবে না তেমন, বাড়িও তো অনেক দূরে।

~ দূর ফ্যাক্ট না স্যার, বাসা থেকে হেঁটে আসতে দশ মিনিট লাগে। তবে আমার এই বাসায় থাকতে ইচ্ছে করেনা। তাই এত দূর থেকে, কম আসি।

~ জামাই আসে নি?

স্যারের কথায় খানিক লজ্জা পেল তাহু। নিশ্চিত তার আম্মু নাহয় আব্বু খবর দিয়েছে। নিম্ন সুরে বললো,

~ রেখে গেলেন, আবার নিতে আসবেন।

~ আমার‌ সাথে দেখা করতে বলবে। পড়াশোনায় ফাঁকি দিও না কিন্তু। প্রিন্সিপাল স্যার কে একটু আগেও তোমার কথা বললাম।

স্যারের কথায় মাথা নেড়ে সায় জানালো তাহু। একসাথেই হেঁটে ক্লাসের দিকে চললো দুজন। স্যার নিজের ক্লাসে চলে যেতেই তাহু নিজেও ক্লাসে ঢুকে পড়লো। সবার দৃষ্টিই তখন তাহুর উপর। এই হলো এক সমস্যা। কেউ আসলেই সবার একত্র দৃষ্টি দিয়ে যেন ব্যক্তিটাকে ভয় দেখাতে প্রস্তুত থাকে সবাই। ফাঁকা সিটটাই বসতেই তাহুর কানে সালামের মিষ্টি কন্ঠ ভেসে আসে, তাহুর মুখে ফুটে উঠে এক চিলতে হাসি। ঘুরে তাকিয়ে নম্রতার সহিত সালামের জবাব দেয় সে। তার‌ই দিকে মিষ্টি হেসে তাকিয়ে আছে পৃথা নামের মেয়েটি। দুজনের ধর্ম সম্পূর্ণ আলাদা। একজন মুসলমান, আরেকজন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। তবুও মেয়েটা তাকে দেখেই সালাম দিবে, অথচ এখানে প্রায় তিনজন মেয়ে বাদে সবাই মুসলিম। সে সালাম দিলে মনে মনে জবাব দিবে ঠিক‌ই তবে কখনো তাকে কেউ আগে সালাম দেয় না। তাই অন্যান্যদের তুলনায় এই মেয়েটাকে সে একটু বেশীই সমীহ করে। তাহুর মনে আছে, কলেজে ক্লাস শুরু হ‌ওয়ায় কয়েকদিনের মাথায় মেয়েটি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলো,

~ তুমি কি আমার বন্ধু হবে!

সেদিন তাহু এতটা বিব্রত হয়েছিল, কিছুটা সময় একদম মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিল। সে জানে অমুসলিম ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের সাথে মুসলমানদের বন্ধুত্ব বা ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে না। এই বিষয়ে কোর‌আনে অনেকবার বলা হয়েছে। ধর্মের বাইরে সে কখনোই যেতে পারবে না, আবার মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিতেও খারাপ লাগছে। দোটানায় পড়ে তাহু যখন চুপ থাকে, মেয়েটিই তাকে এই বিব্রত অবস্থা থেকে বাঁচিয়ে নেয়। মিষ্টি হেসে বলে উঠে,

~ তোমার এত ইতস্তত করতে হবে না, যা বলার সরাসর‌ই বলো, আমি কিছু মনে করবো না। তোমাকে আমার অন্নেক ভালো লেগেছে, তাই বন্ধুত্ব করতে এসেছি।

তাহু তখন সাহস পেলো। এই তো কয়েকদিন আগেও সে হাদীস ব‌ই থেকে এই ব্যাপারে পড়েছে। তাই নিজেও নিম্নস্বরে বললো,

~ আমাকে ক্ষমা করো বোন। আমাদের ধর্মে অমুসলিম দের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করা হয়েছে। আমাদের ধর্ম ইসলামের দৃষ্টিতে পৃথিবীতে মানুষের আগমন হয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখেই। এই লক্ষ্য হলো আমাদের স্রষ্টা এক আল্লাহর এবাদত তথা দাসত্ব ও আনুগত্য করা। তাই অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন করা গুনাহ। তবে কি জানো? আমাদের ধর্ম এটাও শিক্ষা দেয় অমুসলিম দের সাথে সদ্ব্যবহার করা। তাদের কে কোনো রূপ কষ্ট না দেওয়া।
যাদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান এমন অমুসলিম ব্যতীত সবার প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা যায়। এক্ষেত্রে তোমার থেকে আমার দিকে এরকম কোনো যুদ্ধের, কটুক্তির ইঙ্গিত আসে নি। তাই আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে না পারলেও দুজনের মাঝখানে একটা সহানুভূতি ও সদ্ব্যবহারের সম্পর্ক থাকতেই পারে। তুমি কি কষ্ট পেয়েছো?

পৃথা খুব মনোযোগ সহকারে তাহুর কথা শুনেছিল‌। একটু পরিমাণ মন খারাপ না করে বরং তাহুর একটা হাত আঁকড়ে ধরে আনন্দ প্রকাশ করেছিল। এর পর থেকে মেয়েটা দেখলেই তাকে সালাম দিবে, কুশল বিনিময় করবে, কোনো পড়া না বুঝলে তাকে বলবে; বিনিময়ে তাহুও নিজের সাধ্যমতো ভালো ব্যবহার, সাহায্য করে। পৃথার কথায় তাহু নিজের ভাবনা থেকে বের হয়,

~ অনেকদিন পর আসলে, কোনো সমস্যা?

~ জি না, কোনো সমস্যা হয়নি, তবে বাড়িতে অনুষ্ঠান ছিলো তো তাই আসা হয়নি। তোমার শরীর, মন ভালো তো?

পৃথা হঠাৎ করেই বললো,

~ আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

অবাক হলো তাহু। মেয়েটা আলহামদুলিল্লাহ বলছে? তাহুর অবাকতা দেখে পৃথা হেসে বললো,

~ আমি তোমার সাথে তোমার মতোই কথা বলছি। কেন যেন আমার খুব ভালো লাগে।

তাহু হাসলো। মেয়েটা এত ভালো বলার বাহিরে। মূলত ইসলামে অমুসলিম দের সাথে বন্ধুত্বের কোনো বিধান না থাকলেও
সহানুভূতি প্রকাশ, হিত কামনা ও উপকার করার ক্ষেত্রে মুসলমান-অমুসলমানে কোন পার্থক্য নেই। অমুসলমানদের উপকার করার কোন বাধা নেই বরং ইসলামি রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিম জনগণ এক্ষেত্রে মুসলমান নাগরিকের সমান হকদার। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের জীবনে এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্তসমূহ রেখে গিয়েছেন। মক্কায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে সাহায্য প্রেরণ করেন। জন্তু-জানোয়ারের সাথেও সুবিচার করার জন্যে ইসলামের নির্দেশ রয়েছে। তাদের পিঠে তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপাতে নিষেধ করা হয়েছে। সেখানে ন্যায়বিচার ও সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইসলামি রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিম, চুক্তিতে আবদ্ধ অমুসলিম এবং শত্রু অমুসলিম সবাই সমান। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধরত নয় এবং মাতৃভূমি থেকে তোমাদেরকে বহিষ্কার করেনি তাদের সাথে দয়া ও ন্যায়বিচারের ব্যবহার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না।” (মুমতাহিনা-৮)

সেদিনের মতো ক্লাস শেষ করে তাহু গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তাযিনের অপেক্ষায়। নিতে আসবে বলে গেল তো, এখনো আসার নাম নেই। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতেও বিরক্ত লাগছে তাহুর। আবার কলেজে ঢুকতে যাবে, উপস্থিত হয় তাযিন। তাহু বলে উঠে,

~ স্যার আপনাকে দেখা করতে বলেছে, ওই যে আসছে!

নেমে দাঁড়ালো তাযিন‌। কাছাকাছি আসতেই নম্রতার সহিত সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করেই বললো,

~ আপনার প্রিয় ছাত্রী তো পড়তেই চায় না স্যার। আজ সকালে বলছে, প্রাচীন কালে কলেজ যেত, এখন যাবে না।

কিছুটা শব্দ করেই হেসে উঠলো স্যার। তাহু চোখ মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে র‌ইলো। লোকটার আক্কেল জ্ঞান নেই, স্যার‌ কি ভাববে! ভাববে না? বিয়ে হয়েছে বলে মেয়ের পড়ার চিন্তা নেই! কোথায় থাকলো তার সম্মান! অথচ তার ভাবনা মতো স্যার কিছুই বললো না, বরং তাহুকে সাথ দিয়ে বললো,

~ সেটা এমনিই বলেছে, ওর ব্রেইন খুব ফ্রেশ। যা পড়ে মনে থাকে। শশুড় বাড়িতে দেখাতে হবে না, তাহু খুব ভালো ছাত্রী।

~ আমি তো মজা করে বলেছি, আপনাকে কতকিছু বলি না স্যার? তাই বলে কি সেসব আমি করি?

স্যারের সাথে আরো‌ কিছুক্ষণ কথা হলো। এবার বাড়ি ফেরার পালা। বিদায় নিয়ে যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে চললো। যেতে যেতে এবার দুজনের অনেক কথায় হলো। স্যার কে খুব ভালো লেগেছে তাযিনের সেসব‌ই বলছিলো। তাহু অর্ধেক শুনতে পেল তো অর্ধেক শুনতে পেল না, গাড়ির শব্দে শোনা যায়? আধো আধো যা বুঝলো তাই উত্তর দিয়ে গেল।

বিকেলের শেষ ভাগ, সূর্যের তেজ কমে এসেছে। তাযিন সেই কখন থেকে তাহুকে রেডি হতে বলছে, তাহু জেদ ধরে বসে আছে আজ যাবে না। যাবে না মানে, আজ কিছুতেই যাবে না। তাযিনের জেদ, সেও আর রাখবে না তাহুকে। পরীক্ষার বেশী দেরী নেই, এখন পরীক্ষায় খারাপ করলে লোকে বলবে, বিয়ে হয়েছে বলেই এমন হয়েছে‌। তা সে মানতে নারাজ। কেন সে এমন অপবাদ মাথায় নিবে। তাহু শেষমেষ না পেরে তাযিনের কাছাকাছি বসে আদুরে গলায় বললো,

~ কাল বিকেলে চলে যাবো, প্রমিস। আপনি এমন করছেন কেন? তানিয়া আপুও তো ঢাকা চলে যাবে কাল, একসাথে বের হ‌ই! একটা রাত কি এমন ক্ষতি হবে আপনার?

তাযিন হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে চুপ র‌ইলো। এই মেয়ের জেদের কাছে তার জেদ কিছুই না। তার কি ইচ্ছে করে না, ব‌উয়ের সান্নিধ্য পেতে? অবশ্য‌ই করে, প্রত্যেক পুরুষ মানুষ ই স্ত্রীর পাশাপাশি থাকতে ভালোবাসে, আনন্দে ঘেরা থাকে মন। হালাল সম্পর্ক গুলো তো এমন‌ই, ভালোবাসা ঢেলে দেন উপর ওয়ালা। তন্মধ্যে এই মেয়েটাকে তো সে পাগলের মতো ভালোবাসে। কিন্তু সেই ভালোবাসা সম্পূর্ণ প্রকাশের সময় তার এখনো আসে নি। মুখ গম্ভীর করে কিছু বলবে তার আগেই তাহু নানান রকম ভঙ্গিমা করে আবৃত্তি করে উঠলো,

~ “শশুড় বাড়ি মধুর হাড়ি
জানে না সকলে কথাটি
ব‌উ বায়না ধরে ধরেছে বরের কাছে
থাকতে হবে শশুড় বাড়িতে!
বরের কাছে অমূল্য ধন
ব‌উয়ের বায়না নাহি ফেলতে পারে!”

তাযিন হাতড়ে হাতড়ে এমন কোনো কবিতা খুঁজে পেল না। ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই তাহু এক গাল হেসে বললো,

~ মামার বাড়ি কবিতা, মো. বুলবুল হোসেনের। একটু আগেই গুগলে সার্চ দিয়েছিলাম। যাই হোক আপনি এমন ভাব করছেন যেন সৎ জামাই হন।

তাযিন কিছুক্ষণ তাহুর মুখের দিক তাকিয়ে র‌ইলো। এইসব যে তাহু একা করছে না সে বুঝতে পারছে। হয়তো তানিয়ায় বুঝিয়েছে এসব করতে। নাহলে যেই মেয়ে আম্মু-আব্বু ছাড়া কিছু বুঝে না সে মেয়ে জোর করে থাকতে চাইবে কেন! বোন ও কাল চলে যাবে, দুজনের মন ভাঙার আর ইচ্ছে হলো না তার। তাই বললো,

~ আপনি শশুড়বাড়ির মধুর হাড়ি খান, আমিও আমার শশুড়বাড়ি গেলাম।

তাযিন হনহন করে ঘরের বাইরে চলে গেল। তাহু কিছুক্ষণ তাকিয়ে হেসে বলে উঠলো,

~ বড়‌ই আশ্চার্যান্বিত হ‌ইয়া পড়িলাম তাহার ব্যবহার দেখিয়া!

চলবে..?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here