হিংস্রতায় ভালোবাসা পর্ব ১

নিজেকে বাঁচাতে প্রানপনে ছুটে চলেছি হাইওয়ে ধরে।। আর আমার পিছনে আছে কালো পোশাকধারী কিছু বডিগার্ড।। যে করেই হোক এদের হাত থেকে আমাকে বাঁচতেই হবে। অনেক কষ্টে বেরিয়েছি ধরা পড়লে চলবে না, সমস্ত শক্তি দিয়ে ছুটছি আমি।যে করেই হোক আমাকে এখান থেকে পালাতেই হবে। দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ করেই হোচট খেয়ে রাস্তার মাঝে পড়ে গেলাম আর তখনই একটা গাড়ি এসে দাড়ালো আমার সামনে।জ্ঞান হারাতে হারাতে দেখলাম গাড়ির দরজা খুলে আহিল আমার দিকে এগিয়ে আসছে আর আমি তখনই জ্ঞান হারালাম।।

হঠাৎ করেই পানির ঝাপটায় চোখ মেলে তাকালাম।আর চেয়ারের সাথে নিজেকে বাধা অবস্থায় দেখলাম। কিন্তু নিজেকে এই অবস্থায় দেখে মোটেই অবাক হইনি।কেননা, এটা আমার জন্য নতুন কিছু না।। কিন্তু আহিলের হিংস্র বাঘের মতো চাহনি দেখে বেশ ঘাবড়ে গেলাম।। আজ আমার কপালে খুব খারাপ কিছু আছে আন্দাজ করতে পারছিলাম।। আমার ভাবনার লাগাম টানলো আহিলের শান্ত গলার আওয়াজে,,

— আমার পারমিশন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাহস তোমার হলো কি করে প্রানো?
— আ আ আমার ভ ভ ভুল হয়ে গেছে আহিল!
— আহ,আমি এটা জানতে চাইনি প্রানো, আমি যেটা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও!তোমার সাহস হয় কি করে এই আহিল খানের কথা অমান্য করার??
— আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ, আর এই ভুল হবে না!!
— আমার প্রানো বলেছে আর আমি কি মাফ না করে পারি??

ওনার ধীর শান্ত কথায় চমকে উঠলাম।।উনি এত সহজে মাফ করে দেয়ার মানুষ না। কিন্তু…

— কি ভাবছো জান,,এটাই ভাবছো না, যে আমি এত সহজে কেন মাফ করে দিলাম?? ওয়েট জান,মাফ তো তোমাকে করবোই কিন্তু তার আগে তোমাকে একটা ছোট্ট শাস্তি পেতে হবে!!

— শাস্তি!!
— হ্যাঁ জান,,আমি এক্ষুনি আসছি!!

শাস্তির কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেল।। ওনার শাস্তি যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে সেটা একমাত্র আমিই জানি।।

সেদিনের কথা…..

আহিল আর আমি সেদিন বাইরে গেছিলাম ঘুরতে।আহিলের হঠাৎ করে একটা কল আসে আর ও একটু দূরে যায় কল রিসিভ করতে আমাকে ওখানে দাড়াতে বলে।একটু কাছেই আইস্ক্রিমওয়ালা ছিল । আমি কিছু না ভেবেই আইস্ক্রিম খেতে চলে যাই। আইস্ক্রিম নেয়ার সময় হঠাৎ করেই কেউ একজন আমার চোখ ধরে। পিছনে ঘুরে দেখলাম আমার কলেজের ফ্রেন্ড রাফি দাঁড়িয়ে আছে।। রাফির সাথে কথা বলছিলাম তখনই আহিল চলে আসে সেখানে আর আমাকে রাফির সাথে হেসে কথা বলতে দেখে।সেদিনই আমি প্রথম আহিলের হিংস্রতার রুপ দেখেছিলাম। কতটা নির্মম আর নিষ্ঠুরতা লুকিয়ে আছে ওর সাদাসিধে ভালোমানুষির মুখোশের আড়ালে সেদিনই জানতে পেরেছিলাম।পার্কের অত লোকের মধ্যে চুলের মুঠি ধরে আমাকে টানতে টানতে নিয়ে এসেছিল।। বাসায় আসার পরে বেল্ট দিয়ে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছিল। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি গরম ইস্ত্রি হাতের সাথে চেপে ধরেছিল কারণ আমি রাফির সাথে হাত মিলিয়েছিলাম।ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলাম আহিলের আওয়াজে।

আহিল আমার সামনে দাড়িয়ে আছে আর ওর দুই হাতে রয়েছে জ্বলন্ত রড।। অনেকক্ষন আগুনে পোড়ালে যেমন হয় রড দুইটা তেমন লাগছে দেখতে কিন্তু এই গুলো দিয়ে আহিল কি করতে চাইছে, তবে কি?? না না,, চিৎকার করে উঠলাম ভয়ে।। শিউরে উঠল সারা শরীর।।

— আপনি কি কি করবেন এই রড দিয়ে??
— সেটা তুমি এক্ষুনি দেখতে পাবে জান,একটু ধৈর্য ধরো,, বলতে বলতে উনি আমার দিকে এগিয়ে আসলেন।।
— এগুলো দূরে রাখুন আহিল আমার কাছ থেকে,প্লিজ।।
— আরে এত ভয় কেন পাচ্ছ জান,,কিছু হবে না তোমার।। এই সামান্য একটু লাগবে কিন্তু সারাজীবন তুমি এর কথা মনে রাখবে।।

একথা বলতে বলতেই উনি গরম লোহার রডটা আমার পায়ে তলায় চেপে ধরলেন আর আমি গগন বিদারী চিৎকার করে উঠলাম।। আমার পা দুটো জ্বলে যাচ্ছে,, জ্বলন্ত আগুনে আমার পা পুড়িয়ে দিচ্ছে এমন মনে হচ্ছে।।

— আহিল আমার ভুল হয়ে গেছে,, আমাকে ছেড়ে দিন।
— সসসসস,,একদম চুপ। কোন আওয়াজ করো না।।
— আমাকে ছেড়ে দিন,, আহহহ প্লিজ মাফ করে দিন আমাকে।। আমার লাগছে আহিল, আমি সহ্য করতে পারছি না, প্লিজ।।
আহিল আমার কোন কথাই শুনছেন না,আমার চিৎকার শুনে উনি যে, এক পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছেন তার ছাপ ওনার চোখে মুখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমি।। আমার কষ্টে ওনার আনন্দ যেন দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে।। আর আমি কেদে চলেছি নিঃশব্দে।। চোখের পানির বন্যা বয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপহীন আহিল।আহিল কিছুক্ষণ পরে আমাকে এভাবেই রেখে চলে গেল ঘুমাতে।কাঁদতে কাঁদতে একসময় আবারও জ্ঞান হারালাম আমি।। তারপর আর কিছু মনে নেই।।

সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার তখন প্রায় আটটা বাজে ।। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখলাম আমি খাটে শুয়ে আছি কিন্তু আহিল নেই আমার পাশে।। আহিলের নাস্তা বানানোর কথা মাথায় আসতেই খাট ছেড়ে নেমে পড়ি।।ফ্লোরে পা রাখতেই ব্যাথায় কুকিয়ে উঠি।। মনে পড়ে যায় কাল রাতের সেই ভয়ংকর অত্যাচার।। আমার চিৎকারে আহিল ছুটে আসে।।

— আরে আরে প্রানো জান আমার, তুমি কেন এত কষ্ট করে নামতে গেলে বলোতো??

আহিলের আচরণে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম বোকার মতো।। ও এমন করছে যেন কিছুই হয়নি।।

— আ আসলে আপনার নাস্তা বানানো হয়নি এখনো, তাই
— তাই তুমি নাস্তা বানাতে উঠে পড়লে।। আমি নাস্তা বাইরে করে নেব, এত চিন্তা করো না তুমি।। তোমার জন্য স্যান্ডউইচ বানিয়ে রেখে গেছি টেবিলে খেয়ে নিও।।আমি এখন আসছি।।

আহিলকে এখনো আমি বুঝতে পারি না।। কখন যে কি চায়,বুঝি না আমি।।

আহিল চলে যেতেই কোনমতে দরজা লাগিয়ে এসে জানালার কাছে বসলাম।। চোখের সামনে ভেসে উঠল অতিতের সেই দিনগুলো।।

#হিংস্রতায়_ভালবাসা
#পর্ব_০১
#রীমা_শারমিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here