হিংস্রতায় ভালোবাসা পর্ব ১১+১২

পর্ব ১১+১২
#হিংস্রতায়_ভালবাসা
#পর্ব_১১
#রীমা_শারমিন

হঠাৎ করে কলিংবেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। ঘড়িতে তখন দুইটার কাছাকাছি। আহিলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে সোফাতেই বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।দরজা খুলে দেখলাম আহিল দাঁড়িয়ে আছে। ওকে বেশ বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। মুখটা একদম শুকনো। আহিল ঘরে ঢুকতে ঢুকতে জিজ্ঞেস বলল,,

— এত দেরি হলো যে দরজা খুলতে?
— এত দেরি করে বাসায় আসলে দেরিতো হবেই!

আহিল আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকাল তারপর আবার জিজ্ঞেস করল,,

— মানে?

আমি আহিলের কাছে গিয়ে ওর শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললাম,,

— মানে এখন কয়টা বাজে? আহিল হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলতে নিলে, আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,,

— থাক,আপনাকে আর বলতে হবে না। আমি বলে দিচ্ছি এখন রাত দুইটা বাজে।
— আসলে একটা মিটিং ছিল তাই লেইট হয়ে গেল।
— ঠিক আছে এখন আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন,একসাথে খাবার খাব!!
— আমি এখন আর খাব না,খিদে নেই।
— আপনি না খেলে নাই,,আমারতো ভীষণ খিদে পেয়েছে!
— হ্যাঁ, তো তুমি খাও কে বারন করেছে? এতরাত অবধি কে জেগে থাকতে বলেছে?
— স্বামীর জন্য স্ত্রীকে আবার কাউকে বলে দিতে হবে জেগে থাকতে?
— বেশ ভালো, এখন আমি বললাম তো যাও খেয়ে নাও।
— বলেছিতো একসাথে খাব।
— আমি খাব না বলেছি তো!
— তাহলে আমিও খাব না। (অভিমানী সুরে)
— কেন, তোমার না অনেক খিদে লেগেছে?
— লেগেছিল এখন নেই, আমি গেলাম ঘুমাতে।

আহিলকে মনে মনে বকতে বকতে ঘরে চলে এলাম। বেরসিক হাজবেন্ড একটা। এত সুন্দর করে সাজলাম একটু প্রশংসাও করলো না? কেন,একটু প্রশংসা করা কি যেত না? হুহ,,খাব না আমিও। এত কষ্ট করে রান্নাবান্না করে রাখলাম আর এখন এসে বলছে উনি খাবে না।খাবারও খেল না আর একটু প্রশংসাও করল না। সবচাইতে হারামি আর পাজি বর আপনি মিস্টার আহিল খান!!

— ওওও আচ্ছা তাই বুঝি?

আহিলের কন্ঠস্বর শুনে জিভে কামড় দিয়ে পেছনে তাকালাম। এতক্ষণ অন্যদিকে ঘুরে একা একা এসব বলছিলাম। আহিল যে কখন আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে টেরই পাইনি।। আহিল চোখ গরম করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর হাতে খাবারের প্লেট।।

— নাহ মানে,
— কি না মানে মানে করছো?কি যেন বলছিলে তুমি?
— ককই কিকিছু নাতো, কিছু বলছিলাম না আমি।।

একগাল হেসে আহিলের দিকে তাকালাম।।আহিল হাসলও না রাগ করল কিছু বুঝলাম না।। কিন্তু একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলাম। আহিল খাবার বিছানার ওপর রেখে আমাকে খেতে ডাকতে লাগলো কিন্তু আমি শুনেও না শোনার ভান ধরে রইলাম।

— কি হলো এখানে আসতে বলেছি না?
— কেন, আমার খিদে নেই এখন। আমি যাব না।
— তুমি আসবে নাকি আমি আসবো?

আহিল বোধহয় এখন রেগে যাচ্ছে,আহিল উঠে আসতে চাইলে তার আগেই গিয়ে বসলাম ওর সামনে।

— হা করো!
— কেন?
— তোমাকে বিষ খাওয়াবো তো তাই।
— আমি খাব না।
— তোমার আজ বড্ড বেশি সাহস বেড়ে গেছে মনে হয়।
— এটা সাহস নয়,স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালবাসা আর স্বামীর কাছে স্ত্রীর করা আবদার।।

আহিল আমাকে এভাবে কথা বলতে দেখে বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার মুখের দিকে।। আর থাকবে নাই বা কেন, এর আগে আমি কখনো এভাবে কথা বলিনি ওর সাথে। কারণ তখন যা বলতাম আর যা করতাম পুরোটাই ওকে ভয় পেয়ে। কিন্তু এখন যা বলছি আর যা করছি পুরোটাই ওকে ভালবেসে।। আমার বিশ্বাস আমার ভালবাসাই ওর মধ্যে থাকা হিংস্রতাকে শেষ করে দিতে পারবে।। আহিল জাস্ট হা করে তাকিয়ে আছে আমার মুখের দিকে।। আমি ভাব নিয়ে ওনার মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললাম,,

— আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আমি জানি,তাই বলে এভাবে তাকানোর কিছু নেই!!

আহিল আমার কথায় বেশ অপ্রস্তুতবোধ করল মনে হয়। আর ওকে এই অবস্থায় দেখতে বেশ মজাই লাগছিল।।

— চুপচাপ খাবার টা খেয়ে নাও।অনেক বকবক করেছে!
— খেতে পারি তবে একটা কন্ডিশন আছে!
— আমি তোমার কোন কন্ডিশন মানতে রাজি নই।
— তাহলে আমিও এখন খেতে রাজি নই!! (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম)
— ভালো ব্ল্যাকমেইল করা শিখে গেছ দেখছি?
— সবই আপনার ক্রেডিট!

আহিল অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল, বুঝে গেছে আজ তর্ক করে লাভ নেই।।

— ঠিকাছে, বল কি কন্ডিশন? আমি রাজি।
— আপনার হাতে খাইয়ে দিতে হবে আর আপনাকেও আমার সাথে খেতে হবে, ব্যস এইটুকুই এখনকার মতো !!
— কিন্তু আমি…
— কোন কিন্তু না,,আপনি বলেছেন আমি যা বলবো আপনি রাজি।
— ওকে।
আহিলও বাধ্য হয়ে খেয়ে নিল আমার সাথে।

পাশাপাশি শুয়ে আছি দুজন কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই।। আহিল নীরবতা ভাঙল,,

— এখনো ঘুমাচ্ছ না যে?

আমি চুপ করে রইলাম কিছু বললাম না, আহিল আবারও জিজ্ঞেস করল,,

— কি হলো কথা বলছো না যে? আমি জানি তুমি ঘুমাওনি প্রানো!!

ওনার দিকে না ঘুরেই বললাম,,

— এমনি ঘুম আসছে না।

আহিল আমাকে ওর দিকে ঘুরিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল। কারণ আমি ওর হাতের ওপর ঘুমাতে পছন্দ করি। আমি ওর হাতের ওপর মাথা রাখলাম আর আহিল মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।।

— মন খারাপ ?
— উহু!!
— জানি তো!!
— কি জানেন?

আহিল কপালে একটা গাঢ় চুমু একে দিল।

— জানি যে,আমার বউয়ের মন খারাপ!!
— কচু জানেন আপনি,আমার মন ঠিকই আছে।।
— তুমি কি জানো, না সাজলেও অনেক বেশি সুন্দর লাগে আমার বউকে?

আমি চুপ করে রইলাম কিছু না বলে।।ও আবার বলতে লাগলো,,

— তুমি আমার কাছে সবসময়ই সুন্দর, সাজলেও আর না সাজলেও।। পৃথিবীর কোন মেয়ে আহিল খানের কাছে তার বউয়ের জায়গা নিতে পারবে না।

আহিল কথাগুলো শুনছিলাম আর নিজের মনে মনে খুশি হচ্ছিলাম আর লজ্জাও লাগছিল।।প্রিয় মানুষের কাছ থেকে নিজের প্রশংসা শুনতে চায় সবাই কিন্তু যখন সেটা হয়,তখন খুব বেশি লজ্জা লাগে।। আহিলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আহিলও আমাকে জড়িয়ে রইল।।

সকালে উঠে আহিলের জন্য নাস্তা বানাতে লাগলাম।। আহিলের ফেভারিট সবকিছু রান্না হবে আজ ঠিক করে নিয়েছি।। তাই সকাল সকাল উঠে পড়েছি। নাস্তা রেডি করে আহিলকে ডাকতে গেলাম। আহিলকে বারবার ডাকার পরেও ও উঠছে না।পর্দার কাপড় সরিয়ে দিলাম যাতে আলো চোখে পড়ে আর ঘুম ভাঙ্গে কিন্তু নাহ,তারপরও উনি কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছেন।।কি করবো ভাবতে ভাবতে মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো।।আমি রান্না ঘরে গিয়ে জোরে কয়েকটা বাটি মাটিতে ফেলে চিৎকার করতে লাগলাম, ভাবটা এমন আমি পড়ে গেছি। আর আমি শিওর আহিল আমার পড়ে যাওয়ার কথা শুনলে দৌড়ে চলে আসবে।।যেমন ভাবা তেমন কাজ।আমার চিৎকার শুনে আহিল একলাফে দৌড়ে রান্না ঘরে চলে এলো। আর এসে দেখল আমি মেঝেতে পা ছড়িয়ে কাদছি, আসলে আমিতো কান্নার ভান করছি সেটাতো আহিল জানেনা হিহিহি।। আহিল আতংকিত হয়ে আমার কাছে এলো।।

— কি কি হয়েছে তোমার, এভাবে পড়লে কিভাবে? ব্যাথা পেয়েছো?

আহিলকে এভাবে দেখে বেশ মজা হচ্ছিল আমার।। তাই ঠোঁট উল্টে মুখটা কাঁদোকাঁদো ভাব করে বললাম,,

— হ্যাঁ আহিল,, বাম পায়ে অনেক ব্যাথা পেয়েছি। মনে হয় পা টা ভেঙেই গেছে, ও মাগো কি ব্যাথা!!
— ইশশশ,,খুব কষ্ট হচ্ছে জান? চলো ঘরে পা মনে হয় মচকে গেছে!!

আমি আহিলের হাত ধরে উঠে আবার পড়ে যাওয়ার অভিনয় করতেই আহিল আমাকে অন্যহাতে ধরে নিল।। তারপর কোলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিল।।স্প্রে নিয়ে এলো দেয়ার জন্য।। আহিলের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।। ব্যাথা আমি পেয়েছি কিন্তু মনে হচ্ছে কষ্ট ও পাচ্ছে।। আমি শুধু আহিলকে দেখে যাচ্ছি ও কি বলছে আমার কানে যাচ্ছে না।। অজান্তেই চোখের কার্নিশে পানি এসে জমা হয়েছে গাল বেয়ে দুইফোটা পানি গড়িয়েও পড়ল।।আহিল আমার চোখে পানি দেখে বিচলিত হয়ে পড়ল।।

— তোমার বেশি কষ্ট হচ্ছে, চলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই তোমাকে।।

ভাবতেই কেমন লাগে,, যে মানুষটা আমাকে মেরে ক্ষতবিক্ষত করতে পারে অথচ আমার সামান্য ব্যাথায় এমন ছটফট করছে।।

— আপনি আগে ঘুম থেকে উঠলে এত কিছু হতো না।।
— আ’ম সরি জান।।
— এখন আপনি জলদি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি নাস্তা দিচ্ছি।।
— তোমাকে কোথাও যেতে হবে না। আমি এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি তুমি এখানেই বসে থাকো। একদম নড়বে না এখান থেকে।।

দুপুরে কলিং বেল বাজলো। আহিল সকালে যাওয়ার আগে বলে গেছে দুপুরে বাসায় আসবে।। আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে ভেতরে চলে এলাম। কিন্তু আহিল দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রইল আমার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে।। আমি গিয়ে আহিলকে জিজ্ঞেস করবো যে কেন দাঁড়িয়ে আছে,, তার আগেই নিজের বোকামিতে নিজেই লজ্জা পেলাম।।আহিল এগিয়ে এলো আমার কাছে তারপর ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,,

— তোমার পা একবেলায়ই ভালো হয়ে গেল??
— হ্যাঁ,না মানে। এই আরকি ভালো হয়ে গেল।।
— তাই না।
— হুম। তাই
— আমাকে বোকা বানানো হচ্ছে, দাঁড়াও তোমাকে দেখাচ্ছি।
— ধরতে পারলে তো দেখাবেন?

একথা বলেই ভোঁ দৌড় দিলাম। আহিলও পিছু পিছু ছুটতে লাগলো।।

#পর্ব_১২
#রীমা_শারমিন

আহিল খাবার টেবিলে বসে ওর সব পছন্দের খাবার দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল।। খাবার চটজলদি মুখে দিতে গিয়েই আবার থেমে গেল।। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম আহিলের চোখের দিকে।।

— তুমি খাবে না প্রানো?
— হুম খাব, পরে!
— না এখুনি খাও আমার সাথে।
— না পরে খাব বললাম তো।
— আরে বসো তো।

আহিল হাত ধরে টান দিতেই ব্যাথায় আহ্ করে উঠলাম।।

— হাতে কি হয়েছে?
— রান্না করতে গিয়ে তেল ছিটকে পড়েছে।
— একটা কাজও ঠিকঠাক করে করতে পারো না। সরো

আহিল একটু পরে হাতে দেয়ার জন্য ক্রিম নিয়ে এলো।আহিল হাতে ক্রিম লাগাচ্ছে আর কেমন জানি একটা রাগী রাগী লুকে তাকাচ্ছে আমার দিকে। আমি ভয়ে একটা ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলাম,,

— এ এভাবে করে তাকাচ্ছেন কেন আমার দিকে?
— কিভাবে?
— এইতো কেমন কেমন জানি করে!!
— এটা আবার কেমন তাকানো??
— জানি না।
— জানতেও হবে না। এবার এখানে চুপচাপ বসে পড়ো।কথার অবাধ্য হলে কপালে শনি আছে, গট ইট?
— হুম।
আমি চুপ করে মুখে আঙুল দিয়ে বসে রইলাম আহিলের সামনে।। আহিল ভাত মেখে মুখের সামনে ধরে ইশারায় খেতে বলছে কিন্তু আমাকে তো তখন শুধু চুপ করে বসে থাকতে বলেছে, তাই আমিও খাবার মুখে না নিয়ে চুপ করে বসেই রইলাম।।

— কি ব্যাপার, খাবার টা খেতে বলছি না?
–……..
— তুমি কিছু বলছো না কেন??
— ধুর বাবা, একবার বলেন চুপ করে থাকতে আবার বলছেন খেতে,, ঠিক করে বলুন আমি কি করবো?

আহিল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অসহায়ের মতো মুখটা করে আমার দিকে তাকাল।।

— দয়া করে আপাতত খাবার টা খেয়ে নাও প্লিজ!!
— ঠিকাছে, এতো করে যখন বলছেন তখন খেয়েই নেই।।
— আচ্ছা প্রানো,তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো??
— হুম বলুন না!!
— আচ্ছা, আমি যদি তোমাকে তোমার বাড়ি রেখে আসি আর তোমাকে এখানে আসতে আর…

আহিলের কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেলাম কেননা তীব্র পোড়া গন্ধ নাকে আসছিল।গ্যাস অফ করে আবার আহিলের কাছে আসলাম।।

— হ্যাঁ বলুন কি বলছিলেন?
— কিছু না।। তুমি জলদি খেয়ে রেস্ট নাও।।আমাকে আবার যেতে হবে।।

আহিল বাড়ি যাওয়া নিয়ে কিছু বলছিল কিন্তু কথাটা শেষ করতে পারল না।।

প্রায় একমাস হয়ে গেছে। এই একমাসে আহিল কখনো আমাকে কোন শাস্তি দেয়নি।।অনেক কেয়ার করেছে।। এই কয়দিনে এই সংসারের প্রতিও আমার একটা অন্যরকম মায়া তৈরি হয়ে গেছে।। আগের এখান থেকে মুক্তি চাইতাম কিন্তু এখন মনে হয় এটাই আমার শেষ আশ্রয়।।আহিল মোটামুটি অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে আগের মতো আর কথায় কথায় রেগে যায় না।। আহিলের চোখে এখন আমার জন্য অন্যরকম ভালবাসা দেখতে পাই।। মজার বিষয় হচ্ছে আহিল অনেকগুলো কাজের লোকও রেখেছে সেদিন আমার হাত পুড়ে যাওয়ায়।। এখন আর আগের মতো নিজেকে একা লাগে না বোরিংও ফিল হয় না।।

আহিলের পয়েন্ট অফ ভিউ :

আহিল আর নয়না একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে মুখোমুখি।। আহিল মেন্যুকার্ড টা নয়নার দিকে এগিয়ে দিল ওর পছন্দমতো অর্ডার করার জন্য।।

— অর্ডার দাও তুমি কি খাবে! (আহিল)
— তুমি দাও না,, তুমি তো জানই আমি কি খাই। (নয়না)
— নো বেব,ইটস ইওর টার্ন, কাল আমি অর্ডার দিয়েছি আজ তুমি দিবে।
— ওকে।।

নয়না ওয়েটার কে ডাক দিয়ে অর্ডার করার পরে আহিল একটা গিফট বক্স নয়নার সামনে রাখল।।নয়নার গিফটবক্স টা খুলেই হা হয়ে গেল।। চোখ দুটো চিকচিক করে উঠল।।

— এটা আমার জন্য?? ডায়মন্ড রিং!!!
— ইয়েস বেব।।
— ওয়াও,,ইটস বিউটিফুল।আমাকে পড়িয়ে দাও!!
— দেব দেব,, কিন্তু এখানে নয়।
— তাহলে,কোথায়??
— গেলেই দেখতে পাবে!! তুমি খাবার টা শেষ করো আমি একটা ইম্পর্ট্যান্ট কল করে আসছি, কেমন??
— আমার সামনে কল করলে কি প্রব্লেম??
— তাহলে তোমাকে যে সারপ্রাইজ টা দিতে চাচ্ছি সেটা যে নষ্ট হয়ে যাবে!!
— ওকে।। তারমানে, আহিল খান আমার ফাদে পা দিয়ে ফেলেছে।। এতদিন আমি যা চাইতাম সেটা পুরন হতে যাচ্ছে।। নট ব্যাড,,নয়না তুইতো টু মাচ লাকি।। যে আহিল খান তার স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো কথা ভাবতেও পারতো না সে আজ তোর সাথে রুম ডেটে যাবে।। এইতো সুযোগ, আমার সকল ড্রিম ফুলফিল করার,,ফাইনালি উফ আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।। মনে মনে নয়না ভাবছিল এগুলো।।
কিছুক্ষণ পরে আহিল আসে।।

— চলো বেব!!
— ইয়াহ,শিওর!! আমিতো সেই কখন থেকে ওয়েট করে আছি।।

গাড়ি গিয়ে থামলো এক বিশাল বাংলোর সামনে।।নয়নার অতি উৎসাহিত মুখটা চুপসে বেলুনের মতো হয়ে গেল।। নয়না ভেবেছিল,হয়তো কোন হোটেলে যাবে ওরা।।

— এখানে কেন??
— ও হো ডার্লিং,,উই নিড সাম প্রাইভেসি ইউ নো।। এর চাইতে ভালো নিরিবিলি জায়গা আর কোথায় পাবো বলো,আমাদের প্রাইভেট টাইম স্পেন্ড করার জন্য?? এখানে আমাদের কেউ ডিস্টার্ব করবে না।। কারণ,, বাংলোর আশেপাশে পুরোটা আমার সিকিউরিটি দিয়ে ঘেরা।। নাউ লেটস গো।।

আহিল নয়নাকে নিয়ে একটা বিশাল রুমের মধ্যে গেল।।রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো গোছানো।। নয়না চারপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিল।। আহিল ওর হাত ধরে একটা সিংহাসনের মতো চেয়ারে বসাল।।

— আমাকে এখানে কেন বসাচ্ছ আহিল??
— রানীকে তো সিংহাসনেই মানায়, তাই না??
— কিন্তু আমার হাত কেন বাধছো??
— সসসস,,একদম কোন কথা না। আমাকে আমার কাজ করতে দাও।।

আহিল একটা ছুড়ি নিয়ে নয়নার কপাল থেকে আস্তে আস্তে থুতনিতে নিয়ে এলো।
— আমার খুব ভয় করছে!! তুমি কি করছো?
— হাহাহাহাহাহোহোহো

আহিল নয়নার মুখে ভয়ের কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।।

— এ একি এভাবে কেন হাসছো??
— তোমার ভয় করছে বুঝি??
— হুম।।
— আহিল খানকে চিট করার আগে ভয় করেনি??
— ম মা মানে,,ককি বলছো এসব তুমি??
— তুমি বুঝতে পারছো না??
— না
— একে চেনো কি না দেখতো মিস নয়না ওরফে রিয়া? (একটা ছবি দেখিয়ে)

আহিলের মুখে রিয়া নাম শুনে চমকে উঠে নয়না।।সাথে আরও বেশি অবাক হয় ওর ছোট ভাইয়ের ছবি দেখে।

— এই ছবি কোথায় পেলে তুমি??
— আহিল খানকে তুমি করে বলার সাহস হয় কি করে তোমার?? আর তুমি আমার কাছে কৈফিয়ত চাইছো তাও আবার আমার সামনে বসে??

নয়না ভয়ার্ত আর অসহায় চোখে আহিলের দিকে তাকাল।।আহিলকে দেখে অনেক বেশি রাগান্বিত দেখাচ্ছে।। কপালের রগ দেখা যাচ্ছে ফুলে উঠছে রাগে।।

প্রানোর পয়েন্ট অফ ভিউ :

আজ আহিল আর আমার বিয়ের একবছর পুর্ন হবে।। সারাঘর মোমবাতি আর আহিলের ফেভারিট গোলাপ দিয়ে সাজালাম।।আজ আহিলকে চমকে দেব ও যখন আসবে আর ঘর এভাবে সাজানো দেখবে নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবে!! আর আজ আহিলকে আমি একটা স্পেশাল সারপ্রাইজ দেব যেটা পেলে আহিল অনেক বেশি খুশি হবে!!!কিন্তু আহিল কখন আসবে কে জানে??
আহিলের জন্য সেজেগুজে অপেক্ষাই করছিলাম তখনই কলিং বেল বাজলো। দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললাম কিন্তু সেখানে আহিল ছিল না।। ম্যানেজার সিনহা আংকেল দাঁড়িয়ে ছিলেন।। সিনহা আংকেল এতো রাতে কেন এসেছে জিজ্ঞেস করতে উনি যা বললেন, তাতে আমার পৃথিবী এক মুহুর্তের মধ্যে ওলট পালট করে দিল।। চারপাশে অন্ধকার দেখতে লাগলাম, মাথা ঘুরে ফ্লোরে পড়ে গেলাম।। এর পরের ঘটনা আর কিছু মনে নেই।।

চলবে…….

গল্প প্রায় শেষের দিকে, এই অবধি কেমন লাগলো জানাবেন।।
ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন,, ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here