হিংস্রতায় ভালোবাসা পর্ব শেষ

#হিংস্রতায়_ভালবাসা
#পর্ব_১৪
#শেষ_পর্ব
#রীমা_শারমিন

রাস্তায় আহিলের সাথে আর কোন কথা হয়নি।। আসতে আসতে কখন যে আহিলের কাঁধে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টেরই পাইনি।। হালকা ঝাকুনি অনুভব করতেই চোখ মেললাম।।

— কি ব্যাপার ম্যাডাম,আর কত ঘুমাবেন এবার উঠুন!!

আহিল কি সত্যি আমাকে রেখে যাবে? একথা ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে গেল আবার।চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি আহিল দেখার আগেই মুছে নিলাম।। আহিল নেমে গাড়ির দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দিল।। নেমে ওর হাতে হাত রেখে দাড়ালাম।। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলাম, এটা তো আমার বাড়ির রাস্তা না একটা অচেনা জায়গা।

— আহিল এটা কোথায় আছি আমরা??
— চুপচাপ চল আমার সাথে, গেলেই দেখতে পাবে!!

আহিলের পাশে হাটছি। আর আহিল আমার হাতটা শক্ত করে মুঠোয় ধরে রেখেছে যেন আমি একটা ছোট বাচ্চা হাত ছাড়লেই হারিয়ে যাব।।কিছুক্ষণ পরে একটা সুন্দর জায়গায় পৌছালাম আমরা।। এটা একটা সুন্দর রিসোর্ট একপাশে সুইমিংপুল আর তার চারপাশ খুব সুন্দর করে লাইটিং করা অনেক লোকজনও দেখা যাচ্ছে, দেখে মনে হচ্ছে কোন পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।।(এই গল্পের লেখিকা রীমা শারমিন) আমি আশপাশ ভালো করে দেখে বোঝার চেষ্টা করছি আসলে এখানে কি হচ্ছে।। হঠাৎ করে আমাকে কেউ জাপটে ধরল। মানুষটার শরীরের স্মেল বেশ পরিচিত।। আসলে মায়েদের শরীরে একটা আলাদা স্মেল থাকে যেটা চোখ বন্ধ করেও অনুভব করা যায়।। মায়ের পাশে বাবা আর প্রিয়ু রয়েছে।। মা বাবা এখানে কি করছে?? তার মানে আহিল আমাকে মিথ্যে ভয় দেখিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে।। কত বজ্জাত একটা ছেলে ভাবা যায়!! এসব ভাবছিলাম হঠাৎ করে আহিলের গলার আওয়াজ পেলাম,,,

— লেডিস & জেন্টলম্যান অ্যাটেনশন প্লিজ!!থ্যাংক ইউ অল অফ ইউ ফর কামিং টু মাই পার্টি। নাউ কাম টু দা পয়েন্ট,, আজ আমি আপনাদেরকে খুব স্পেশাল একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ডেকেছি।।

আহিল আমার কাছে এগিয়ে এসে হাত ধরে নিয়ে গেল।। তারপর বলল,,,

— মিট উয়িথ মাই ওয়াইফ প্রানো এন্ড শী ইজ দা মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট পার্ট অফ মাই লাইফ।আপনারা সবাই জানেন গত দুইমাস আমি অসুস্থ হয়ে হাস্পাতাল ছিলাম আর যেদিন আমার এক্সিডেন্ট হয় সেদিন আমাদের ফার্স্ট এনিভার্সারি ছিল। তো যেহেতু সেদিন কোন পার্টি হয়নি আজ সেই উপলক্ষে এই এ্যারেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে।

সবাই আমাদেরকে অভিনন্দন জানাতে লাগলো।।তারপর আহিল আমার হাত ধরে বলতে লাগলো,,

— প্রানো,আমি জানি আমি তোমার সাথে অনেক বেশি খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। কিন্তু তখন আমার মনে একটা অন্যরকম ধারণা ছিল।।আমার ভুল ধারণা ছিল, আমি তোমাকে বুঝতে পারিনি।।(এই গল্পের লেখিকা রীমা শারমিন) আমার জীবনের ঘটে যাওয়া স্মৃতি যেন আর ফিরে না আসে সেই চিন্তা থেকে এসব কিছু করা। কিন্তু তুমি আমার সেই ভুল ভেঙে দিয়েছ,, আমাকে তোমার ভালবাসা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছ যে,সবাই এক হয়না!! আমি তোমাকে ভীষণ ভালবাসি।। আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ সো মাচ জান!!

হঠাৎ আহিল আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ল তারপর একটা রিং হাতে পড়িয়ে দিয়ে কিস করল হাতে।।ফাইনালি আমার ভালবাসা আহিল বুঝতে পেরেছে,, খুশিতে গাল বেয়ে নোনাপানি গড়িয়ে পড়ছে।। আমি এই মুহুর্তে বুঝতে পারছি না কি বলবো। আনন্দের অনুভূতি সবসময় বলে বোঝানো যায় না।।এই গল্পটা আমি রীমা শারমিন লিখেছি।। আহিল দাঁড়িয়ে আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাল।। হঠাৎ করে আহিলের রেগে যাওয়ার কারণ কি বুঝলাম না।।

— প্রানো,, তোমাকে একটা কথা কতবার বলতে হয়??
— কে কেন?

আহিল চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল,,

— একটু পরে যখন আমার বউকে পেত্নীর মতো লাগবে কাজল লেপ্টে, সেটা কি খুব ভালো হবে?? এত কেন কাঁদছো,,আজ কি কাঁদার দিন বলো??
— আমি আর কাঁদবো না,এই যে!!
— দ্যাটস মাই প্রিন্সেস!!!

আহিলকে জরিয়ে ধরলাম আহিলও শক্ত করে ধরে রইল।।সবাই হাত তালি দিয়ে উঠলে লজ্জা পেয়ে ছেড়ে দিলাম আহিলকে।।

— আপনার জন্যও একটা সারপ্রাইজ আছে!!
— তাই??
— হুম!!
— কি সারপ্রাইজ??
— বললে কি আর সারপ্রাইজ থাকবে নাকি?? পরে বলবো!!
— না,এখনই বল প্লিজ।।
— একটু ধৈর্য ধরুন, ঠিক সময়ে পেয়ে যাবেন!!
— ওকে!!

আহিল গাল ফুলিয়ে রইল।। কেক কাটার সময়েও মুখ গোমড়া করে রইল।। আহিলকে এভাবে দেখে বেশ মজা পাচ্ছিলাম মনে মনে হিহিহিহি।

আহিল ঘুমের ঘোরে পাশে হাত দিতেই বুঝল প্রানো নেই।। আহিলের ঘুম ভেঙে গেল।। হাতরে হাতরে বুঝতে পারল ওর পাশে কিছু একটা কাগজ রাখা রয়েছে।। উঠে বসল আহিল। চিঠি দেখে বেশ চমকে গেল।।চিঠিতে লেখা আছে,,
আমি জানি এই কথাটা আমার আপনাকে অনেক আগেই জানানো উচিত ছিল কিন্তু আমি জানাই নি। সেজন্য আমি খুবই দুঃখিত,, যদি পারেন আমাকে মাফ করে দিবেন। এত বড় একটা অসুখের কথা আপনাকে আমি জানাইনি।।যেটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা জানতে হলে আপনাকে এক্ষুনি ছাঁদে আসতে হবে।।

প্রানোকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু সারাবাড়িতে প্রানো নেই।তাই আহিল চিঠির কথা অনুযায়ী ছাঁদে ছুটে গেল।।গিয়ে দেখল প্রানো ছাঁদের এককোনায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে।।

— কি হয়েছে তোমার প্রানো? কি অসুখ হয়েছে আমাকে বলো?
— আহিল আসলে
— আসলে কি?
— আসলে
— আরে কি হয়েছে বলনা, আমার খুব টেনশন হচ্ছে!!
— আসলে আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন আর আমি মা!!
— কি জলদি ডাক্তারের কাছে চল,, ওয়েট!! কি বললা তুমি?? আ আমি বাবা আর তুমি
— হুম
— ইয়াহু,, আমি বাবা হবো ইয়ে,, আম সো হ্যাপি প্রানো,
আম সো হ্যাপি!!!

আহিল আমাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরাতে লাগলো।। আর বাচ্চাদের মতো খিলখিল করে হাসতে লাগলো।। এ যেন এক নতুন আহিল,,জীবনে প্রথম বাবা-মা হওয়ার অনুভূতি একটা সেরা অনুভূতি আহিলের চোখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।।

— আরে আহিল নামান আমাকে পড়ে যাব।
— আমি খুব খুব খুশি প্রানো,, থ্যাংক ইউ সো সো মাচ!! আমার জীবনে এত সুন্দর একটা মুহুর্ত এনে দেয়ার জন্য।। তুমি দেখো,আমি অনেক ভালো একজন বাবা হবো,যে ট্রাজেডি আমার লাইফে আমি ফেস করেছি আমার সন্তানকে কখনো সেরকম কিছু ফেস করতে দেব না,, অনেক ভালো বাবা হবো!!

আহিল কথা বলছিল তখন ওর চোখ থেকে পানি পড়ছিল।। আমি আর কিছু বললাম না নিজেকে হালকা করতে সময় দিলাম।। ওর বুকে মাথা দিয়ে সকালের সুর্যোদয় দেখতে লাগলাম।। আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম যেন মৃত্যুর আগে অবধি এভাবেই একসাথে একে অপরের সুখ দুখের সঙ্গী হয়ে থাকতে পারি!!

সমাপ্ত….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here