#হিয়ার_মাঝে
#পর্বঃ১৩(বোনাসপর্ব)
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
২৮,
বাজারের ব্যাগ হাতে ইহসাস আর রাদ বাসাতে ঢুকতেই হিয়াকে সোফায় বসা অবস্থায় দেখতে পায় তারা। ইহসাস তো পুরোই ‘থ’ বনে যায় হিয়াকে দেখে। এ মেয়ে সাত সকালে তাদের বাসায় করছে টা কি? সকাল সকাল তার বড় বাবা ঘুম থেকে টেনে তুলে রাদের সাথে বাজারে পাঠিয়ে দিলো। মেজাজ প্রচুর চড়া ছিলো। এখন হিয়াকে দেখে খানিকটা নরম হয়ে গেলো ইহসাস। সে বাজারের ব্যাগ হাতেই বাড়ির মূল ফটকে দাড়িয়ে রইলো। রাদ হনহনিয়ে কিচেনে গিয়ে বাজারের ব্যাগ রেখে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু ইহসাসকে দরজার কাছে মু্র্তির মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে রাদ গিয়ে ইহসাসকে ডেকে উঠে। ইহসাস ঝাকি দিয়ে উঠে। হাত থেকে বাজারের ব্যাগটা গড়িয়ে যায়। তার ব্যাগে ছিলো সবজি। ব্যাগ পরে গিয়ে আলু গুলো সব ফ্লোরে গড়াগড়ি খেতে শুরু করলো। নাতাশা সিড়ি দিয়ে নামছিলো নিচে। সে এভাবে আলু পড়তে দেখে দৌড়ে আসছিলো ভাইয়ের দিকে। রাদ আর ইহসাস ততক্ষণে আলু কুড়াতে শুরু করেছে। আলু তুলতে গিয়ে কিছু বেগুনও গড়িয়ে যাচ্ছিলো। নাতাশা চিৎকার করে ইহসাসকে বলে,
” গা”ধা তোকে কে বাজার করতে সাথে নিয়েছিলো? সামান্য আলু আর বেগুনের ভারই নিতে পারিস না। ঢেড়স একটা৷”
হিয়া এতোক্ষণে মাথা তুলে তাকালো। ফোনের দিকে মনোযোগ থাকায় চারপাশে কি হচ্ছিলো, কিছুই বুঝতে পারেনি। ফোন হাতে থাকলে যেনো অন্যগ্রহে চলে যায় সে। ইহসাস নাতাশার কথা শুনে দাত কিড়মিড় করে বলে,
” নাতাশা, বাতাসা! বাতাসের সাথে মিলিয়ে যা। আমায় এভাবে অপমান করছিস কেনো? আমি তোর বড়ো ভাই। ভুলে গেছিস?”
” ঢেড়সকে কেউ ভুলে না। নাকের ইয়ের মতো ঢেড়সকে কে ভুলে? ”
” বাতাসায়ায়া।”
ইহসাস একটু চিৎকার করে আলু কুড়িয়ে ব্যাগে তোলা রেখে নাতাশার পিছনে ছুট লাগায়। নাতাশা ততক্ষণে ভোঁ দৌড়। সারা ড্রইং রুম জুড়ে ছুটছে। রাদ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। এদের কই সব গুছিয়ে তুলে দেওয়ার কথা। এরা ছুটোছুটি শুরু করেছে। হিয়া হ’তভ’ম্ব হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সব। এরা নাকি বড় হয়েছে! বাচ্চাদের মতো ঝ’গড়া করে সারা বাড়ি ছুটছে। আচ্ছা ভাইবোনের বন্ডিং এমন হয় বুঝি! কি জানি! অন্তর,রায়া আর সে তো এমন ছিলো না। রোবটের মতো লাইফ তাদের, সকালে উঠে নাস্তা করা, এরপর যার মনে সে ক্লাস,টিউশন শেষ করে বাসায় ফিরে ফোন নিয়ে ব্যস্ত বা এসাইনমেন্টের ডে’ডলাইন লিখতে ব্যস্ত থাকতে হতো। উইকেন্ডে একটু ঘুরাঘুরি তিনজনে মিলে। কখনও আনন্দ ছিলো না, কিন্তু একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ছিলো, প্রকাশ করতো না কেউ। কিন্তু কারোর কিছু হলে অপরজন পা’গল হয়ে যেতো টেনশনে। হিয়া দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। হিয়া এসব ভাবতে ভাবতে অন্য মনস্ক হয়ে গিয়েছিলো। নাতাশা এতোক্ষণ ড্রইং রুমের চারপাশে ছুটোছুটি করছিলো। এখন সে হিয়ার পাশে এসে বসে। ইহসাস থেমে যায়। রা’গী চোখে নাতাশার দিকে তাকায়। চোখ দিয়ে বুঝায়, ‘ পরে সুযোগ পাইলে তার খবর আছে।’ এরপর হনহনিয়ে হেটে রাদের কাছে যেতে ধরে। যাওয়ার সময় পায়ের তলায় আলু পরে সে ধ’রাম করে পরে যায়। উপস্থিত সকলে পুরোই ত’ব্দা খেয়ে যায়। এটা কি হলো! যখন বুঝলো, ততক্ষণে নাতাশা জোড়ে শব্দ করে হাসতে শুরু করেছে। হিয়া ইহসাসের এই অবস্থায় হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারলোনা। সেও মুখ টিপে হাসতে শুরু করলো। ইহসাস কোমড় ধরে উঠে বসলো। সে রাদের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বললো,
” ভাইয়া! তুমি এতোক্ষণ কি করলে? আলুগুলো তুলতে পারোনি? এখন আলুতে পিছলে আমার কোমড় আলু আলু হয়ে গেলো? ”
রাদ কি বুঝতে পারলো না। একে তো এতো বড়ো ছেলে অসাবধানতার বশে পরে গেলো। এখন আবার উদ্ভট কথা। নাতাশা আরও জোড়ে হেসে উঠে৷ হিয়াও এবার শব্দ করে হাসে। ইহসাস ওদের দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
” হাসো হাসো, দিন আমারও আসবে। সেদিন তোমরা এমনে পরবে। আমি হাসবো। ”
২৮,
আনিকা তখন কিচেন থেকে বেরুতে বেরুতে বললো,
” কি হয়েছে এখানে? এতো হাসাহাসি কেনো? কি নিয়ে হাসছে সবাই? ”
” ভাবী তোমার দেবর এতো বড়ো খাম্বা পোলা হয়ে সামান্য বাজারের ব্যাগ ক্যারি করতে পারেনা। ফেলে দিয়েছে, এরপর আমার সাথে ঝ’গড়া করে আলু তুলতে গিয়ে আলুতে পা পরে পিছলে পরেছে। ”
নাতাশা আনিকার কথার উত্তর দেয়। সে নাতাশার কথা শুনে সেও হাসাহাসিতে যোগ দেয়। ইহসাস এবার আনিকার কাছে বিচার দেওয়ার সুরে বলে,
” দেখেছো ভাবী? একে তো রাদ ভাইয়া আমায় হুট করে ডেকে চমকে দিয়েছে। পরে আলুগুলো না তুলে বসে থেকে আমায় ফে’লে দিয়েছে। এখন তোমরা সবাই হাসছো! নট ফেয়ার ভাবীমনি৷ ”
” বাহ পুরোই পল্টি! সব দোষ আমার। তুই বাজারের ব্যাগ রাখতে না গিয়ে তালগাছের মতো দাড়িয়ে থাকবি! আর আমি ডাকলেই দো’ষ! আজব তো? ”
রাদ ইহসাসের কথার প্রতিত্তোরে কথাটা বলে। আনিকা সবার কথা শুনে বলে,
” হয়েছে হয়েছে। তোমাদের সবজি তোলা হলো? হলে ব্রেকফাস্ট করতে আসো। নাতাশা তুমি আর বেচারার পিছনে লেগো না৷ এমনিতেই সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে। আবার এখন এমনে পরলো। এরথেকে বেশি কিছু বললে তার রা”গের চোটে বাড়িতে আ”গুন লাগবে। ”
ইহসাস মুখ টা গম্ভীর করে ফেললো এবার। নাতাশা,রাদ,আনিকা মিটমিটিয়ে হাসছে। হিয়া নিরব দর্শকের মতো বসে বসে দেখছে। ইহসাস এবার হিয়ার দিকে নজর দিয়ে বললো,
” হঠাৎ করে আমাদের বেয়াইন সাহেবা সকাল সকাল আমাদের এখানে। তাকে দেখতে গিয়েই এতো অঘটন।”
” তাই নাকি বিয়াই সাহেব? সুযোগ বুঝে দোষ আমার দিকে ঘুরাচ্ছেন?”
হিয়া এবার ইহসাসের কথা শুনে মুখ খুলে। ইহসাস হিয়ার পাশে গিয়ে সেন্টার টেবিল থেকে একটা আপেল তুলে নিয়ে বসে পরে। মাঝখানে একটু ফাঁকা রাখে। আপেলে কা’মড় দিতে দিতে সে উত্তর দেয়,
” জ্বি বেয়াইন সাহেবা। ”
হিয়া ঠোট বাকায়। উঠে দাড়ায়, এরপর আনিকাকে বলে,
” ভাবী আমি আপুর রুমে যাচ্ছি। আপুকে একটু আমার জন্য কফি বানিয়ে দিতে বলিয়েন তো। মাথা ব্যাথা করতেছে। আওু জানে আমার মাথা ব্যাথা করলে কেমন কফি খাই৷ মাম্মা সকাল সকাল টেনে তুলে এনেছে। ভালো লাগছে না কিছু। ”
হিয়া কথাটুকু বলেই চলে যায়। ইহসাস নাতাশার দিকে তাকিয়ে বলে,
” আংকেল আন্টিও এসেছে নাকি? ”
” জ্বী এসেছে। উনারা সবাই ছাদে বসে সবাই চা খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছে সব বড়োরা মিলে।”
নাতাশা উত্তর দেয়, আনিকা বাজারের ব্যাগটা নিয়ে চলে যায় কিচেনে। রাদ বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে উপরে যেতে যেতে ইহসাসকে বলে,
” হিয়া তো আমাদের রুমে গেলো। আমি তোর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হলাম একটু৷”
ইহসাস আপেলে আরেক কা’মড় দিয়ে বলে,
” ওকে ব্রো। ”
নাতাশা ফোন ঘাটতে ব্যস্ত হয়ে পরে। ইহসাস আপেলে শেষ কা’মড় দিতে দিতে নাতাশাকে বলে,
” নাটাশা, আম্মু আর বড় মামনি কই রে? ”
” আম্মু কিচেনে, রান্না করছে। বড় মামনি ছাদে, উনার বেয়াইনের সাথে আড্ডা দিচ্ছেন।”
“আর মেঝো ভাবী?”
” হিয়া কি বলে? কফি চেয়েছে। তারমানে সেও কিচেনে। ”
“আমরা তো গত কালকেই আসলাম। আজ হঠাৎ আংকেল আন্টি আসলো? ব্যাপার কি রে বাতাসা?”
নাতাশা এতোক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে ইহসাসের কথার উত্তর দিচ্ছিলো। সে এবার ইহসাসের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত পি’ষে বলে,
” ভাইয়া, আমার নাম নাতাশা, বাবা আকিকা দিয়ে এটাই রেখেছে। নাটাশা, বাতাসা এগুলো আর একবার বলবা! তো তোমার মুখের চিত্র পাল্টে মানচিত্র হবে। ”
” তুই বড় ভাইকে মা’রবি পে”ত্নী? ”
” ভাইয়ায়া!”
নাতাশা রে’গে জোড়ে ইহসাসকে ডেকে উঠে। ইহসাসকে ফোন রেখে কি’লাতে শুরু করে। ইহসাস নাতাশার মা’র থেকে নিজেকে রক্ষা করতে করতে বলে,
” ওকে সিস, কুল, কুল। এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো? একমাত্র আদুরে বোন আমার। কাছে থাকেনা, খেপায় আর কই। যখন কাছে থাকিস একটু রাগাই। রাগ করিস না হ্যাঁ? ”
ইহসাসের কথায় নরম হয় নাতাশা। চোখের কোণে জল জমে। ইহসাস বোনকে বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরেছে। নাতাশা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে,
” হয়েছে, হয়েছে। এতো ইমোশনাল হইতে হবে না এখন।”
” লাভ ইউ বোনু। এখন বল তো, উনারা হঠাৎ আসলেন! কোনো কারণ ছাড়া তো আসার কথা না।”
” উনারা কানাডা ফিরবেন, তাই বিদায় জানাতে এসেছেন। ”
ইহসাস স্তব্ধ হয়ে যায় নাতাশার কথায়। তার মানে কি হিয়াও চলে যাবে! মনের মধ্যে কেমন একটা অসহনীয় যন্ত্রণা হতে শুরু করলো ইহসাসের। চোখেমুখে অন্ধকার নেমে আসছে যেনো! হিয়া তবে সত্যিই চলে যাচ্ছে! সে আর কোনো প্রশ্ন করতে পারলো না বোনকে। উঠে দাড়ালো, হিয়ার সাথে কথা বলতে হবে তার। কিছুতেই যেতে দেওয়া যাবে না হিয়াকে।
চলবে?