হিয়ার মাঝে পর্ব ১১+১২

#হিয়ার_মাঝে
১১.
#WriterঃMousumi_Akter

আপুর ফ্রেন্ড রা বাসা থেকে চলে গেলো কিন্তু যাওয়ার সময় আপুকে আরো কুমন্ত্র দিয়ে গেলো।আপু ও মুড অফ করে বসে আছে।আপু মায়ের কাছে কাঁদতে কাঁদতে বলেছে সব কিছুর জন্যই আমি দায়ী।এগুলা শোনার অভ্যাস আমার আছে তাই কাউকে কিছু না বলে সন্ধ্যার আগে ছাদে গিয়ে দাঁড়ালাম।নিরব আমাকে ছাদে আসতে দেখে ও আমার পিছ পিছ এলো।ওর পরণে কালো জিন্স আর গায়ে কালো শার্ট।সব সময় এই কালো ড্রেসেই ওকে দেখি আমি।

হঠাত পেছন থেকে সুন্দর গানের গলা শুনে চমকে গেলাম আমি,,

Chal diya
Dil tera peecha peecha
dekhta main rah gaya

Kich toh hai
tere mere darmian jo ankaha
sa ra gaya main jo kabhi Keh na saka
Aaja kehta hoon oehli dafa
Dil main ho tum
Akho main tum
Pehli najar se hey Aaara

গান টা গাইতে গাইতে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।নিরব আমাকে বলে প্রায় টাইমে ছাদে দেখি যে।

ছাদে আমি বিভিন্ন ফুল গাছ লাগিয়েছি।আমার মন খারাপ হলেই ওদের সাথে কথা বলি।কয়েক রকমের বেলি,কাঠগোলাপ,রোজ তাছাড়া যাবতীয় সাদা যত ফুল আছে টুকটাক কালেক্ট করেছি।স্কুল বা কলেজে ফার্স্ট হলে স্যার রা খুশি হয়ে কিছু দিতে চাইলে আমি হয় গাছ না হয় বই দুটোর একটা নিয়েছি।স্যার রা সব সময় অবাক হয়ে যেতো এত কিছু থাকতে আমি বরাবর গিফট হিসাবে এ দুটো জিনিস ই বা কেনো গ্রহন করি।আসলে আমার মায়ের কবরে সাদা একটা বেলি গাছ আছে যেটাই প্রচুর ফুল হয়।বাবা নতুন ফ্ল্যাটে আসার পর আর মায়ের কবর দেখা হয় নি আমার।কত দিন হয়ে গিয়েছে মায়ের কবর দেখা হয় নি আমার।এই ছাদে থাকা সব বেলিদের দিকে তাকিয়ে থেকে মায়ের কথা ভাবতে থাকি।মায়ের শেষ কথাটা আমাকে জানতে দেওয়া হয় নি।আমাকে শুনতে দেওয়া হয় নি মা শেষ কি কথা বলেছিলো।হয়তো কিছু জানাতে চেয়েছিলো আমাকে কিন্তু আমার জানা হয় নি।আমাকে হসপিটাল থেকে বাবা এনে এই মায়ের কাছে দিয়ে বলে তোমার মা আল্লাহর কাছে চলে যাবে তুমি এখন থেকে এই মা কেই মা বলে ডাকবে।বাবা আমাকে মায়ের কাছে দিয়ে হসপিটাল যেতেই মা আমার দুই গালে এক টানা কত গুলো থাপ্পড় মেরেছিলো।আমার গাল গুলো কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়েছিলো।আমার পায়ে মায়ের দেওয়া সুন্দর নূপুর ছিলো সেই ছোট্ট বেলাতেই আপু পা থেকে খুলে নিয়ে গেছিলো।আমার মায়ের অনেক গহনা ছিলো মা বলতো আমার বিয়ের সময় ওগুলো দিয়ে আমাকে সাজাবে,মায়ের অনেক শখ ছিলো আমাকে নিয়ে কিন্তু আজ দেখুন মায়ের আদুরে মেয়ে থেকে সৎ মায়ের কাজের মেয়ে হয়েছি।মায়ের সাথে যদি এই জীবনে একটা বার দেখা হতো একটাই কথা জানতেই চাইতাম মা তুমি তো অনেক সুন্দরী ছিলে তাহলে কেনো এই বিবাহিত লোক টার সাথে বিয়ে করেছিলে।যে তোমাকে বিয়ে করে আমাকে জন্ম দিয়ে আমার জীবন টা নরকে পরিণত করে ছেড়েছে।জানেন আমার মা খুব সুন্দর ছিলো।আমার থেকেও সুন্দরী ছিলো।কথা গুলো বলতে বলতে দু,চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছিলো আমার।আমার কি দোষ বলুন। কেনো নিষ্টুর পৃথিবী আমাকে এত টা কষ্ট আর যন্ত্রণা দিচ্ছে বলতে পারেণ।কেউ কোনদিন জানতে চাই নি আমার ভেতরের কষ্ট। কেউ আসে নি আমাকে এই অশান্তির জীবন থেকে রক্ষা করতে।কেউ আমাকে এতটুকু ভালবাসা দিয়ে বলে নি আমার সাথে চলো সুখের দেশে।এ বাসায় যেই আসে সেই আমাকেই খোটা দিয়ে যায়।

নিরব আমার সামনে একটা পাখির খাচা ধরে বলে এই যে তোমার সুখ পাখি এনে দিয়েছি।এর মাঝে একটা তুমি আর একটা আমি।তোমার সুখ পাখি এসে গিয়েছে।যে তোমার কালো অতীত কে চাঁদের স্নিগ্ধ আলো দিয়ে মুছে দিতে চাই।মৃথিলা কেউ আছে যে তোমাকে কিছু বলতে চাই।যে বলবে বলেই অনেক দূর থেকে এখানে ছুটে এসেছে।সে ভীষণ ভাবে দূর্বল তোমার প্র‍তি।আমি উনার কথা শুনতে শুনতে পাখিদের দিকে তাকালাম।খাচার মাঝে দুইটা পাখি একটা সবুজ আরেক টি হলুদ।পাখি দুটো মনে হয় আমাকেই বলছে মনের যা কষ্ট আছে আমাদের বলো।আমরা শুনতেই চাই।

নিরব আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,, মৃথিলা তুমি কি ভালবাসায় বিশ্বাসী।

আমি আবেগমাখা অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে বললাম না আমি এই জিনিসে বিশ্বাসী না।কারণ কেউ আমাকে কখনো ভাল ই বাসে নি।

নিরব বলে কেউ ভালবাসে তোমায় হয়তো সেই ভালবাসা একদিন ভয়ংকর রূপে পরিণত হবে।আজ আমার তোমাকে কিছু বলতে ইচ্ছা করছে মিথু।তাকিয়ে দেখো আমার দিকে।আম্মুর ছেলের এই নিশপাপ চোখে তাকিয়ে দেখো মিথু। যাকে দেখতে পাবে আম্মুর এই ভদ্র ছেলেটার সর্বনাশ সেই করেছে।

উনার চোখে তাকিয়ে দেখি আমাকেই দেখা যাচ্ছে।

ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি।গায়ে কালো সালোয়ার কামিজ।নিরব আমার দুই সাইডে দুই হাত দিয়ে উনার দুই হাতের মাঝে আমাকে রেখে আমার দিকে খানিক টা ঝুঁকে এসেছেন।উনার নাকের গরম নিঃশ্বাস উপচে পড়েছে আমার নাকে,মুখে,ঠোঁটে।মানুষ টা নেশাক্ত চোখে এক ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমার বুকের ধুক পুকনি বেড়ে চলেছে। মনে হচ্ছে ও আমার হার্টবিট এর শব্দ উনি শুনতে পাচ্ছেন।উনার ও কি এমন হচ্ছে।নাতো উনার এমন হলে তো উনার মুখ টাও টেনশনে চুপসে যেতো।কিন্তু নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে শুভ্র হাসি দিচ্ছেন আমার দিকে তাকিয়ে।উনি উনার হাত দিয়ে আমার চুল এর খোপা খুলে দিলেন সিল্কি চুল গুলো ঘাড় বেয়ে পড়লো।উনি উনার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে হাতের আঙুল দিয়ে মুখ থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিলেন।ইস কি লজ্জা।এই প্রথম বার কোনো ছেলের প্রতি আমার অন্যরকম অনূভুতি তৈরি হলো।আমার সমস্ত শরীর কাঁপছে।লজ্জায় উনার দিকে তাকাতে পারছি না আমি।নিজেকে উনার থেকে সরাতেও পারছি না।উনি হাতের আঙুল দিয়ে কপাল থেকে সুরসুড়ি দিতে দিতে নাক থেকে ঠোঁটে এসে স্টপ করলেন।আমার শরীরে অন্য কোনো শিহরণ বয়ে যাচ্ছিলো।আমি চোখ বন্ধ করে আছি লজ্জায় চোখ খুলতেই পারছি না।উনি হাতের আঙুল ঠোঁট থেকে গলা পর্যন্ত নিতেই আমি আঙুল ধরে ফেললাম কাঁপা কাঁপা হাতে উনার হাত ধরলাম।চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে দেখি উনি নেশাক্ত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।এই চাওনিতে অন্য কিছু ছিলো।এতদিন ভাবতাম আমাকে অসহায় দেখেই উনি এমন করতেন কিন্তু না আজ উনার চোখে অন্য কিছু দেখছি আমি।উনার স্পর্শ আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে শুধু মাত্র আমার অসহায়ত্ত্ব নয় উনি অন্য কিছু ভাবছেন।কি অদ্ভুত ব্যাপার যেখানে অন্য কোনো ছেলের স্পর্শ তে গা ঘিন ঘিন লাগে আমার সেখানে উনাকে কিছু বলতেই পারছি না আমি।সেই ক্ষমতাই আমার নেই।আমি ভেতর ভেতর উনার প্রতি কখন এতটা দূর্বল হয়ে পড়লাম কই বুঝতে তো পারলাম না।এটা কি উনি আমাকে সাহায্য করেন সেই দূর্বলতা নাকি অন্য দূর্বলতা।

উনার বুকে হাত দিয়ে বললাম কি হচ্ছে। সরূন আমাকে যেতে দিন।।

কোথায় যাবে তুমি উনার কন্ঠে যেনো ভীষণ কোমলতা।এভাবে তো কখনো কথা বলেন না উনি।

নি নি নিচে যাবো আমি।

কি হচ্ছে বুঝো না তুমি।

না কি হচ্ছে।

একটা ছেলে একটা মেয়েকে সারাক্ষণ কেনো ফলো করে বুঝো না তুমি মিস মৃথিলা মিথু।

ইয়ে মানে না।

যদি না বুঝে থাকো আমার হার্টবিট এ কান পেতে শোনো। আর না হলে আমাকে ধাক্কা মেরে মেরে ফেলে চলে যাও আমি তো তোমাকে শক্ত হাতে তো ধরে রাখি নি তোমায় তো কোমল ভাবে ধরেছি।

এমন করছেন কেনো?আপনার না প্রেমিকা আছে উনি জানলে কষ্ট পাবেন।

আমি প্রেমিকার কাছেই তো আছি।আম্মুর বৌমা ই তো বুঝতে চাইছে না।

আপনি যান আপনার তার কাছে।

আমাকে অন্য মেয়ের কাছে পাঠাতে চাও।তুমি কষ্ট পাবে না।

আমি কষ্ট পাবো ক্যানো? কে হন আপনি আমার।

নিরব আমার মুখে একটা ফুউউ দিয়ে বলে বুঝো না কি হও। আমি তোমার,,,

এই কথাটা বলেই নিরব চট করেই আমার থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়ালো।বুঝলাম না ব্যাপার টা।তাকিয়ে দেখি আপু ছাদে। নিরবের জন্য নিজ হাতে খাবার বানিয়ে এনেছে।আপু নিরব কে বলে আপনি এখানে কি করছেন আমি যে সারাঘর খুজেও পেলাম না।আমি যে ছাদে আছি নিরবের সাথে এটা আপুর মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।আপু নিরব কে বলে আপনার জন্য নিজ হাতে খাবার নিয়ে এসছি।আর আমার সব ড্রেস বাথরুমে রেখে এসছি সব গুলো ধুয়ে ছিড়ে ফেলুন আমার সমস্যা নেই।আমার যে কি পরিমান হাসি পেয়েছে।নিরবের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।আপুর দেওয়া এই জঘন্য খাবার টা নিরব কে খেতে হবে তাই।আপু অনুনয় বিনয় করে নিরবের কাছে সরি বলে।নিরব ভাইয়া আপনি রাগ করবেন না প্লিজ আপনি তো জানেন ই আমি আপনাকে কিছুই বলতে পারি না।যা বলার ওই মিথুকেই বলেছি।সব দোষ ওই মিথুর।ওর জন্য আমি আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।

নিরব আপুকে বলে, নবনিতা আমি লাইফের সব কিছু এত সিরিয়াসলি নেই না।যে জিনিস টা সিরিয়াসলি নেই সেটা খুব ই মারাত্মক ভাবে সিরিয়াসলি নেই।।

আচ্ছা নিরব ভাইয়া একটা প্রশ্ন করি কিছু মনে করবেন নাতো।

প্রশ্ন টা না শুনে বলতে পারছি না।
#হিয়ার_মাঝে
১২.
#WriterঃMousumi_Akter

“নিরব ভাইয়া আপনার গফ আছে।”

“নিরব ভ্রু কুচকে নবনিতা আপুর প্রশ্নের উত্তর দিলো, গফ মানে কি?”

আপুর কথা শুনে যেনো কিছুই বুঝলো না নিরব।

“গফ মানে বুঝেন না আপনি।”

“নাতো বুঝি না।।। What meanings the gf”

“ফাইজলামি না করে সত্যি করে করূন।”

“ওয়েট গুগল এ সার্চ করে আসি।গফ মানে কি? তুমি কি গড ফাদার বুঝাইতে চাইছো।”

“গার্লফ্রেন্ড বুঝাইতে চাইছি।আপনার কি প্রেমিকা আছে।”

“হুম আছে তো।”

“সিরিয়াসলি আছে আপনার গফ”

“হুম আমি মারাত্মক সিরিয়াস গার্লফ্রেন্ড নিয়ে।আমি জীবনে এই একটা বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত সিরিয়াস সেটা হলো গার্লফ্রেন্ড।”

“এত সিরিয়াস কেনো?তার মাঝে কি বিশেষ কিছু আছে।”

“হ্যাঁ সে একটা ম্যাজিশিয়ান নারী। নিরব আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে তার চোখের বড় বড় পাপড়ি দেখলে আমার প্রাণ হরণ হয়ে যায়।তার ওই পাতলা ঠোঁটে মাদকতা খুজে পাই আমি।বার বার ছুঁতে ইচ্ছা করে কিন্তু যদি সে অপবিত্র হয়ে যায় তাই কাছে গিয়েও সরে আসি।সে আমার এতটা মন কেড়ে নিবে ভাবতেই পারিনি।তাকে আর পাঁচটা মেয়ের সাথে তুলনা করা যায় না।তার তুলনে সে নিজেই।পৃথিবীতে এই একটা মাত্র মেয়েই আছে যে নিরব কে খুন করতে পেরেছে।মন কেড়ে নিয়ে আমার চারপাশ দিয়ে ঘুর ঘুর করছে।এই আকাশের নিচে প্রথম দেখেছিলাম আমি তাকে।সে কাঁদলে মনে হয় পৃথিবীর সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আমার।আর সে একটু হাসলে পৃথিবীর সব কিছু স্বাভাবিক লাগে আমার।”

“আপনার সে স্মার্ট নাকি অনেক।”

“হুম অনেক স্মার্ট সে।মানুষ স্মার্ট মানে যা বোঝে আমি তা বুঝি না।আমার কাছে স্মার্ট এর মানে ভিন্ন।যার ব্যাখা এখন দিতে পারবো না।”

“দেশী,নাকি বিদেশী।”

“দেশে তোমাদের মতো এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে থাকতে আমি বিদেশ মেয়ে খুজতে যাবো কেনো বলোতো।।”

“সত্যি এই দেশে।কোথায় থাকে সে।”

“মনে করো এইখানেই আছে।খুজে দেখো।”

“এইখানেই আছে।”

“হুম এই আকাশের নিচেই আছে।”

“এই আকাশের নিচে এখানেই আছে। কোথায় নিরব ভাই।”

“কেনো তুমি বুঝো না কোথায়?আশে পাশে ভাল ভাবে খুজলেই তো পেয়ে যাও।তুমি তো অনেক বুদ্ধিমতি মেয়ে।একটা ছেলে কাকে লাইক করতে পারে আই থিংক সেই ধারণা তোমার আছে।”

“এভাবে না বলে নাম টা বলুন।”

“নাম টা তুমি বলো সঠিক হলে আমি পাক্কা বলে দিবো ইয়েস।।”

“আমি বুঝে গিয়েছি আর নাম বলতে চাই না।যেহেতু এখানেই আছে সেহেতু নাম বলার প্রশ্নই আসে না।”

“আমি জানতাম তুমি ব্রিলিয়ান্ট মেয়ে।বুঝেই গিয়েছো যখন যাও আন্টিকে আজ ই বলো।আমাদের বিয়ের কথা পাকা করতে বলো।”

“না আপনি বলুন।”

“একজনের বাড়িতে এসে তাদের মেয়েকে বিয়ের কথা কিভাবে বলি।নিজের বিয়ের কথা এভাবে বলতেও তো লজ্জা করে তাইনা।আমি আমার মা বাবাকে বলে দিয়েছি।”

“আমি বলতে পারবো না নিরব ভাইয়া।”

“আচ্ছা থাক।সময় হোক।আম্মু আব্বু দেশে আসুক তারপর বলবো।”

খুব আশ্চর্য লাগলো আমার কাছে,আপু আমার আর নিরবের ব্যাপার টা জেনেও কোনো রিয়্যাক্ট করলো না যে। এত টা ভাল কিভাবে হতে পারে।আপুর তো এই পুরা শহর জানিয়ে দেওয়ার কথা যে আমি নিরবের সাথে খারাপ কিছু করেছি। আপুর তো ভীষণ রিয়্যাক্ট করার কথা ছিলো।আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না।আপুর বিহ্যাভ খুব ই নরমাল।আমি তো আপুকে চিনি সে তো এতটা নরমাল থাকা মেয়ে না।কিছু একটা উল্টা পাল্টা হয়েছে।নাকি মায়ের কাছে গিয়ে একবারে নালিস দিয়ে বকা দিবে।কি হবে এর পরে সেটা নিজেই বুঝতে পারছি না।

আপু নিরব কে বলে নিরব ভাইয়া সেই মেয়েটা এতটা ভাগ্যবতী সে হয়তো নিজেই জানতো না।আপনার মতো এমন সুন্দর একজন মানুষের ভাল লাগা মানে সত্যি অনেক ভাগ্যবতী সে।

নিরব আপুর দিকে তাকিয়ে বলে সে না আমি অনেক ভাগ্যবান যদি সে আমাকে গ্রহন করে।আমি এই জীবনে আর দ্বীতীয় কিছুই চাইবো না।

সে গ্রহন করবে একবার মুখ ফুটে বলেই দেখুন।সে হয়তো এটাই চাইছে আপনি তাকে বলুন।বলে দেখুন সে রাজি হবে।

নিরব আপুকে বলে থ্যাংক্স আমাকে সাহস দেওয়ার জন্য, আমি তাকে জানাবো আমার মনের কথা।

আপু আমাকে বলে এই মিথু এইখানে দাঁড়িয়ে হা করে কি দেখছিস।যা তো কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।আমার এখন কফি খেতে ইচ্ছা করছে।নিরব আপুকে বলে অন্যর হাতের কফি খেতে কি ভাল লাগে নবনিতা।কিছু ব্যাক্তিগত জিনিস নিজেকেই করতে হয়।সব জিনিস অন্যর উপর ছেড়ে দিতে নেই।বিয়ের পর বর যখন কফি খেতে চাইবে তখন কি করবে।আপু স্পষ্ট ভাষায় বলে দিলো কাজের মানুষ রেখে নিবো।আমার এসব কাজ টাজ মোটেও ভাল লাগে না।

আমি চুপচাপ নিচে চলে গেলাম।কফি বানাতে বানাতে ভাবছিলাম নিরবের কথা গুলো।আজ যেনো সব কিছু রঙিন লাগছে আমার কাছে।সব কিছুই সুন্দর লাগছে দেখতে।সব কাজ করতে ভাল লাগছে।আমার মনের মাঝে অন্যরকম ভাল লাগা বয়ে যাচ্ছে।বারবার ওই মানুষটার ঠোঁট কামড়ে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে থাকা টা মনে পড়ছে।কি মারাত্মক চাহনি ছিলো উনার।মনের মাঝে উনার সম্পূর্ণ বিচরণ চলছে।ছাদে ঘটে যাওয়া ঘটনা টা সে স্বপ্ন ছিলো না সেটা ভাবতেই পারছি না।মানুষ টা কয়েক মূহুর্তে মনের মাঝে রঙধনুর সাত রঙ এঁকে দিয়েছে।বসন্ত ছড়িয়ে দিয়েছে মনের মাঝে।উনার সামনে কিভাবে যাবো আমি।ইস কি লজ্জা।এমন লজ্জা আমার জীবনে কখনো পাই নি আমি।উনার দিকে আমি আর তাকাতেই পারবো না।আমি এটা বুঝে গিয়েছি উনিই সেই যে আমার জীবনে এসেছেন আমার জীবনের সব সমস্যা থেকে রক্ষা করতে।আমার এতদিনের স্বপ্ন তাহলে সত্যি হয়েছে।আগে প্রায় স্বপ্ন দেখতাম আগুনে পড়ে গিয়েছি কেউ একজন নিজের হাত পুড়িয়ে আমাকে আগুন থেকে রক্ষা করছেন।

এসব ভাবতে ভাবতেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।যদি নিরব পর মুহুর্তে এটা ফান হিসাবে নেই তাহলে আমার কি হবে।আমার পায়ের নিচে শক্ত মাটি নেই আমি এসব কি ভাবছি আমি যার নখের যোগ্য না তাকে নিয়েয় ভাবছি।জীবন টা তো সিনেমার মতো নয়।আমি সিনেমার মতো ভাবছি সব কিছু।পরে আবার নিজেকেই কষ্ট পেতে হবে।

কফি বানানো হয়ে গেলে উপরে নিয়ে গেলাম।আপু আর নিরব গল্প করছিলো।কফি এগিয়ে দেওয়ার সময় নিরব আমার হাত চেপে ধরছিলো ট্রের সাথে।আচ্ছা উনি সব সময় কি এত দেখেন আমার দিকে তাকিয়ে।পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আচ্ছা উনার কি একটুও লজ্জা করে না একভাবে কারো দিকে তাকিয়ে থাকতে।আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি।

এমন সময় আপু এসে বলে একটা কফি দিতে যদি এত সময় লাগে তাহলে অন্য কাজ করার সময় তো কেয়ামত পর্যন্ত সময় নিবি।দ্রুত কফিটা দে ফোট ওখান থেকে।নিরব আমার দিকে তাকিয়ে হালকা মাথা নাড়িয়ে ইশারায় বোঝায় মন খারাপ না করতে।আমিও চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম ঠিক আছে।।।।

নিরব আপুকে বলে নবনিতা তোমার যে ড্রেস গুলা আমি নষ্ট করে ফেলেছি তার জন্য কিছু ড্রেস অর্ডার করেছিলাম।এনেছি আমার রুমে চলো।আপু বলে ছিঃছি নিরব ভাইয়া আপনি আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন।ছিড়ে গিয়েছে তাতে কি।না এমনি ভাল লাগলো দিতে তাই দিচ্ছি।চলো আমার রুমে।নিরব আমাকে বলো তুমিও চলো মৃথিলা।আপু বলে ও কেনো যাবে।নিরব বলে কারণ ওর জন্য ও ড্রেস এনেছি ও ছোট মানুষ সারাদিন এত কাজ কাম করে ওকেও তো কিছু দেওয়া উচিত।

নিরব ভাই তাই বলে আমাকেও যা দিবেন ওকেও তাই দিবেন।আপনি আমাকে আর মিথুকে এক নজরে দেখেন।

নবনিতা আমি কখনোই দুজন কে এক নজরে দেখি না।সেটা মিথুও বোঝে আই থিংক তুমিও বুঝো।আমার কাকে কোন নজরে দেখি সেটা তো বোঝা উচিত।

আপু আর আমি নিরবের রুমে গেলাম।নিরব একটা বড় প্যাকেট খুলে বেশ কত গুলো ড্রেস দেখালো।আপু রাগে গিজ গিজ করছিলো আমাকে নিরব ড্রেস দিবে এটা সে মেনেই নিতে পারছিলো না।আপু ড্রেস গুলা দেখে বলে নিরব ভাইয়া আমার সব গুলোই পছন্দ হয়েছে সো আমি কাউকে এগুলার ভাগ দিতে পারবো না।আপনার যদি কারো জন্য দয়ামায়া হয় তাহলে কিনে দিন।আমি এগুলা সব নিয়ে নিলাম বলেই আপু আমার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যর একটা হাসি দিয়ে ড্রেস গুলো নিয়ে চকে গেলো।

আপু চলে গেলে নিরব আমার দিকে তাকিয়ে বলে উফফ বাবা বাঁচলাম বলেই আলমারি খুলে আলাদা একটা প্যাকেট বের করে বলে এটা আমার নিজস্ব পছন্দ তোমার জন্য।আমি জানতাম নবনিতা তোমাকে একটাও দিতে চাইবে না তাই ওগুলো ওর সামনে বের করেছিলাম।আর এই বিশেষ গুলো তোমার জন্য।

আমি কি বিশেষ কেউ।

অবশ্যই প্রেমিকারা বিশেষ কেউ হয় বলেই
উনি আমার নাক ধরে আবৃত্তি করেন

“কাছে পেয়েছি যত আগুন ছুঁয়েছি তত
হে প্রেম তুমি আমার শুভেচ্ছা নিয়ো, শুভেচ্ছা নিয়ো।”
… রুদ্র গোস্বামী।

চলবে,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here