হিয়ার মাঝে পর্ব ১০

#হিয়ার_মাঝে
১০.
#WriterঃMousumi_Akter

রেস্টুরেন্টে বসে বসে নিরবের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।ভাল ভাবে দেখকে ওকে শুধু দেখতেই ইচ্ছা করে।কি সাংঘাতিক রকমের সুন্দর দেখতে।ওর স্মার্ট নেস সবার থেকেই আলাদা।অতিরিক্ত কথা বলে না সবার সাথে।গোমড়া মুখো সেটাও না।নিজের এটিটিউড সম্পূর্ণ আলাদা। নিরব মাছ,মাংস,সবজি সব কিছুর ই অর্ডার দিলো।আমি খাবোনা বলে বার বার না না করছিলাম এমন সময় ওয়েটার এসে বলে ভাবী ভাইয়া দিচ্ছে খান না।আপনি না খেলে কি আর ভাইয়ার ভাল লাগবে।এমন কপাল কজনের হয়।আপনি তো অনেক ভাগ্যবতী দেখুন ভাইয়া তার ভালবাসার মানুষ কে না খাইয়ে নিজে খাবে না।ওয়েটারের কথা শুনে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিলো আমার।আমি লজ্জায় মাথা তুলতেই পারছিলাম না।আমাকে কিনা নিরবের বউ বা প্রেমিকা ভাবছে।নিরব ই বা কি ভাবছে ছিঃ।এমন সময়ে সুপ্তি বলে ওঠে আচ্ছা ভাবি খান না ভাইয়া যখন এতবার করে বলছে।প্লিজ ভাবি খান।ভাবি আপনি না খেলে আমাদের পেট এ অসুখ করবে তো ভাবী।সুপ্তির ইচ্ছাকৃত বার বার ভাবি ডাক টা কেমন একটা গায়ে কাটার মতো ফুটছিলো আমার।

আমি সন্দিহান ভাবে টেবিলে একটু শব্দ করে একটা থাপ্পড় মেরে বললাম হ্যালো এক্সকিউজ মি সুপ্তি কে ভাবি।আর ওই ওয়েটার ই বা কাকে ভাবি ডেকে গেলো।

সুপ্তি ক্লিয়ার ভাবে বলে দিলো আমি তার বোন সো আমাকে তো বলে নি।এখানে আমি বাদে যে আছে তাকেই বলেছে।সুপ্তি আশ পাশে তাকিয়ে দেখে বলে ওই যে টেবিলে যে মহিলাটি বসে আছে উনি বিবাহিত উনাকে তো আর নিরব ভাই বিয়ে করবে না।তাই আমার মনে হচ্ছে তুই আমাদের ভাবি।

নিরব হালকা কেশে নিয়ে বলে খাওয়া শুরু করো নইলে জনে জনে যে আসবে সেই ভাবি ডাকবে।এখন যদি এই রেস্টুরেন্টের সবার মুখে ভাবি ডাক শুনতে চাও তাহলে না খেয়ে বসে থাকো আর আমি সাধতে থাকি।বলেই উনি বলা শুরু করলেন প্লিজ খাও না,রাগ করো না প্লিজ।কি নিয়ে রাগ করেছো খাচ্ছো না ক্যানো।প্লিজ কিছু বলো।আচ্ছা আর এমন হবে না।পাশের টেবিলের একজন মহিলা আমার কাছে উঠে এসে বলেন রাগ করো না স্বামির সাথে রাগ করতে নেই।তুমি তো অনেক লাকি তুমি রাগ করেছে তোমাকে কত অনুনয় বিনয় করছে আর ওদিকে দেখো।বলেই নিজের স্বামিকে বলে এই কিপ্টা তোমাকে সারা বছর সাধতে সাধতে একদিন নিয়ে এসে কত খোটা শোনাও।আর ওই ফার্সা সুন্দর ছেলেটাকে দেখো তো নিজের বউ কে কিভাবে সাধছে।মানুষের ও কপাল আল্লাহ আমার ও কপাল দিছে।বাবা যে কি দেখে তোমার মতো খাটাস দেখে বিয়ে দিয়েছিলো।ওই ছেলেটাকে দেখে শিখো কিভাবে বউ কে কদর করতে হয়।কুঞ্জুস কোথাকার।

নিরব আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে হালকা কেশে মিচকি মিচকি হাসতে থাকে।সুপ্তি নিরব কে বলে নিরব ভাইয়া আপনি না আসলেই জিনিয়াস।এবার মিথু বুঝবে না খাওয়ার মজা।

পুরা শহর গুষ্টি মানুষের ভাবি ডাক না শোনার থেকে খাওয়া টায় বেটার বলে মনে হলো আমার।কোনো রকম খেয়ে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলাম। সুপ্তি বায়না ধরে সে পাশের পার্কে ঘুরতে যাবে।আমি তো কিছুতেই যাবো না।কারণ দেরি করে বাসায় ফিরলে ঝাটা পিটা একটাও মাটিতে পড়বে না।সুপ্তি বলে উঠলো আরে নিরব ভাইয়া আছে না উনি বাকিটা সামলেএ নিবে।নিরব একটা দীর্ঘঃনিশ্বাস ছেড়ে বলে এটাই তো বুঝছে না তোমার বেষ্ট ফ্রেন্ড।আমি নিরব কে বললাম দেখুন বাড়িতে অশান্তি হবে আর আপনি নিজের অজান্তে এই ঝামেলায় আরো বেশী জড়িয়ে পড়বেন।আর আমি সেটা চাই না প্লিজ চাই না।আপনি বাড়িতে চলুন।নিরব বলে ঝামেলায় জড়াতেই তো এখানে আসা মহারানী সেটা আপনি বুঝবেন না।আর সহজ সরল সোজা সাপ্টা সাদ সিধা লাইফ আমার কখনোই পছন্দ ছিলো না। লাইফে ঝামেলা না আসলে লাইফ টা ইনজয় হবে কিভাবে শুনি।উনার কথার সাথে না পেরে চুপ হয়ে রইলাম।

সুপ্তির জোরাজোরিতে পার্কে গেলাম।পার্কে জোড়ায় জোড়ায় কত মানুষ এসেছে।কেউ নিজের সন্তান নিয়ে এসেছে।ছোট বেলা মা আর বাবার সাথে কয়েকবার এসেছি এখানে।তখন মা আর বাবা হাত ধরে রাখতো আমার আর আপুর।খুব বেশী কিছু মনে নেই এত টুকুই মনে আছে আমার।পার্কের এক সাইডে গিয়ে দাঁড়ালাম আমি।এমন সময়ে নিরবের ফোনে ভিডিও কল আসে।নিরব কল রিসিভ করতেই একটা ছেলে বলে ওঠে হেই ব্রো কি অবস্থা।

প্যারা নেই চিল ব্রো।

প্রেয়সীর সাথে বিয়ে ঠিক হলো।

এত তাড়া কিসের, আগে মনের সাথে মন সেট হোক তারপর বাকিটা হবে।

আচ্ছা ভাবির একটা পিক দে দেখি।

নিরব সাথে সাথে ফোনের ব্যাক ক্যামেরা ঘুরিয়ে আমাকে দেখালো।নিরব যে আমার দিকে ক্যামেরা দিয়েছে সেটা তখন খেয়াল হয় নি আমার।কি যে খানিক ঘুস ঘুস ফুস ফুস করলো তা জানিনা।সুপ্তি বাচ্চাদের মতো নাগর দোলায় উঠে দোল খাচ্ছে।

নিরব আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে কার কথা ভাবা হচ্ছে শুনি।বিশেষ কেউ ম্যাডাম।

আমি নিরবের দিকে তাকিয়ে বললাম আমার আবার বিশেষ কেউ।

কেনো কখনো কি কাউকে ভাল লাগে নি।মনে হয় নি বিশেষ কেউ থাকুক তোমার জীবনে।

নাহ আমার জীবনে এমন কিছুই আসে নি।আমার সব সময় মনে হয়েছে এই অন্ধকারেই জীবন কেটে যাবে।

তখন নিরব আমাকে বলে এটা ভুল ভাবনা তোমার ম্যাডাম একজন বিশেষ মানুষ থাকার প্রয়োজন আছে।বলেই আবৃত্তি করতে থাকেন,,,,

“””একজন মানুষ লাগে,
যার সাথে কোনো কারণ ছাড়াই কথা বলা যায়,
রাগ করা যায়, অভিমান করা যায়!
চাইলেই একটু ছুঁয়ে দেয়া যায়, হাতে হাত রাখা যায়।

একজন মানুষ লাগে,
যার কাছে নিজের সকল ইচ্ছে গুলো নির্দ্বিধায় বলা যায়,
যার কাছে ছোট ছোট আবদার করতেও
কখনো ভাবতে হবে না।
সে কি ভাববে?

এমন একটা মানুষ লাগে
নির্ঘুম রাতগুলো যার বুকে মাথা রেখে
নিশ্চিন্তে পারি দেয়া যায়,
যার কাছে জমা রাখা যায় নিজের দোষগুলো
যে নিজের ভেবে লুকিয়ে রাখবে।

সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাড়ি ফিরে,
এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এগিয়ে দেয়ার জন্য হলেও
একজন মানুষ লাগে।

একজন মানুষ লাগে,
যে আমার কষ্ট গুলো নিজের মনে করে চোখ লাল করে ফেলবে।
আর নিজের কষ্ট হলেও আমার বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদবে।
আমার সামান্য খুশিতে যার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠবে।

একজন মানুষ লাগে,
যাকে যখন তখন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরা যায়,
চাইলেই মুখ ফুটে বলা যায় “ভালোবাসি,
ভীষণ ভালোবাসি”।

হ্যাঁ……
এমনই একজন মানুষ লাগে।

নিরবের কবিতা আমার মন ছুয়ে গেলো।

ওখান থেকে বাড়িতে ফেরার পর,,

বাড়িতে ঢুকে সবার অগ্নিমূর্তির ন্যায় মুখ দেখে বুঝতে পারলাম কিছু একটা গন্ডগোল নিশ্চিত হয়েছে।যায় হোক ঝাড়িটা আমাকেই শুনতেই হবে সেটা আমার আগেই জানা ছিলো।কাউকে কিছু না বলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করতে গেলাম সাথে সাথে আপু জামা কাপড় আমার মুখে ফেলে দিয়ে বলে এগুলা কি করেছিস।আমার বন্ধুদের সব দামি দামি ড্রেস এভাবে ছিড়ে ফেলেছিস কিভাবে? যেখান থেকে পারিস এগুলা কিনে এনে দিবি তা না হলে এ বাসায় তোর কোনো জায়গা হবে না।কাজ করতে বলা হয় বলে ইচ্ছা করে এগুলা করেছিস।আজ তোকে মেরেই ফেলবো।আপুর ফ্রেন্ড বলে আমার বয়ফ্রেন্ডের দেওয়া ড্রেস টা তুই নষ্ট করে ফেলেছিস জানিস এটার কত দাম।তোর মতো ফকিরন্নি বাচ্চা কে বিক্রি করলেও এটার মূল্য পাওয়া যাবে না।কখনো তো চোখে দেখিস নি তাই বুঝবি কিভাবে এই জামাকাপড় গুলোর মূল্য। আমি আপুর ফ্রেন্ড কে বললাম দেখুন আপু ভদ্রভাবে কথা বলুন আমাকে যা খুশি বলুন কিন্তু আমার মা বাবা তুলে কথা বলবেন না খবর দার।আপুর ফ্রেন্ড আমার দিকে তেড়ে এসে বলে কি করবি বললে একশ বার বলবো।চরিত্রহীনার মেয়ে কোথাকার।লজ্জা করে না মরে যেতে পারিস না। আবার ঢং দেখিয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া হয়েছিলো।দুঃচরিত্রের মেয়ে কোথাকার।কাল তোর কলেজে গিয়ে বলবো তোর মা কেমন ছিলো।তোকে যেনো কলেকেই এলাউ করা না হয়।

আপনার মাঝে তো একবিন্দু ভদ্রতা নেই আপুর বন্ধু বলে কিছু বললাম না।

কি বললি এত বড় সাহস তোর।বলেই আপুর ফ্রেন্ড জেরিন আমার গায়ে হাত তুলতে যায়।সাথে সাথে দেবদূত হয়ে নিরব পেছন থেকে এসে জেরিন আপুর হাত টা ধরে ফেলে।নিরবের চোখ রাগে রক্তজবার ন্যায় লাল হয়ে আছে।ভয়ানক রাগি মুডে আপুর ফ্রেন্ডের হাত ধরে আছে।নিরবের মতো শক্তিশালী ছেলে হাত চেপে ধরে রাখলে সেটা সহ্য করা সহজ কথা নয়।শুধু এটুকুই করে নিরব থেমে থাকলো না আপুর ফ্রেন্ডের গালে ঠাসসস শব্দে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো।নবনিতা আপু চমকে গেলো নিরবের এহেম কাজ দেখে।নিরব আমার দিকে তাকিয়ে বলে পায়ের জুতা খুলো মৃথিলা কুইক।আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছি।নিরব আবার আমাকে বলে জুতা খুলে এর মুখে ছুড়ে মারো।আমি নিরবের দিকে তাকিয়ে রইলাম নিরবে।

নিরব আপুর ফ্রেন্ড কে বলে কোন সাহসে আপনি ওর গায়ে হাত তুলতে গেছিলেন।আমি অনেক্ষণ ধরে আপনার এই বাজে কথা গুলো শুনছিলাম।ও কি আপনার রাখা চাকর নাকি।বাসা থেকে ময়লা কাপড় অন্যর বাসায় পরে আসেন কেনো?যা আত্মীয়ের কাছে বাসায় গিয়ে আবার পরিষ্কার করা লাগে।কেমন বস্তিমার্কা পরিবেশ এর মেয়ে আপনারা।

আপু বলে উঠলো নিরব ভাইয়া আপনি ওই ছোটলোক এর জন্য আমার ফ্রেন্ড এর গায়ে হাত দিলেন।আমার ফ্রেন্ড তো ভুল কিছু বলে নি।ওর মা যা করেছে তাই বলেছে।ও ইচ্ছা করেই ড্রেস গুলা ছিড়েছে।

ড্রেস গুলা ও ছিড়তে যাবে কেনো?একচুয়ালি আমি ভেবেছিলাম ওগুলা তোমার ড্রেস।আর আমার শখ করছিলো তোমার ড্রেস গুলা নিজ হাতে পরিষ্কার করার।এটা আমি ভালবেসেই করতে চেয়েছিলাম।আসলে হাতে কাপড় ক্লিন করার অভ্যাস আমার নেই তাই হয়তো ছিড়ে গিয়েছে।আই এম সরি নবনিতা আমার জন্য তোমার ড্রেস নষ্ট হয়েছে।আমি আর কখনো তোমার কোনো জিনিসে হাত দিবো না।আমার জন্য মৃথিলা গালি গালাজ শুনলো।গালি গুলা ওর গায়ে লাগে নি।আমার গায়ে লেগেছে কারন ড্রেস গুলা আমার হাতেই নষ্ট হয়েছে।আমাকে বন্ধুদের দিয়ে গালি শুনিয়ে হ্যাপি হয়েছো।আমি আর কখনো তোমার জন্য কিছু করার কথা ভাববো না।আজ খুব ই কষ্ট পেয়েছি আমি নবনিতা।

ইনফ্যাক্ট তোমার জন্য কত গুলা ড্রেস এর ও অর্ডার দিয়েছি বিকজ তোমার ড্রেস গুলা নষ্ট করে ফেলেছি তাই।

বলেই বিশাল একটা পার্ট নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার বলা এই মহা বানিয়ে বলা মিথ্যা শুনে।মানুষ টা সব কিছুর মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে কেমনে। উনার আসলেই আলাদা ট্যালেন্ট আছে।এর পর উনি কি করতে চাইছেন কি।বাট এই মানুষ টা ককন্টিনিউস আমার জন্য এত মিথ্যা বলে আপুকে টাইট দিয়ে যাচ্ছেন।এতটাই বা কেনো করছেন।

চলবে,,,

(আজকের পর্ব কেমন হয়েছে কমেন্টে জানাবেন।সবার রেসপন্স করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here