হিয়ার মাঝে পর্ব ৯

#হিয়ার_মাঝে
৯.
#WriterঃMousumi_Akter

মায়ের কাছে পরীক্ষার ফিস চাইতে গেলাম।সবাই পরীক্ষার ফিস আগে দিলেও আমি প্রতিবার ই পরীক্ষার দিন সকালে দিই।আমার জন্য স্যার রা এটুকু ছাড় দেন।পনেরা দিন ধরে টাকা চেয়ে যাচ্ছি কিন্তু মা কোনো পাত্তাই দিচ্ছেন না।একটু পরেই এক্সাম মায়ের কাছে আবার গেলাম মা ফিস টা।মা দাঁত খিচে বলে উঠলো আমার কাছে একটা টাকাও নেই।তুই কি এম এ, বি এ পাশ করবি নাকি।কাড়ি কাড়ি টাকা নিয়ে এভাবে নষ্ট করছিস।কি ভাবছিস এত লেখাপড়া শিখলেই ভাল বিয়ে হবে তোর।তোকে কেউ কোনদিন বিয়ে করবে না।তোর ব্যাকগ্রাউন্ড জানলে কে তোকে বিয়ে করবে।তোর বাপ তোকে পয়দা দিয়ে আমার ঘাড়ে উঠিয়ে দিয়ে নিজে আরামে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।তার তো কোনো দায় নেই।যত দায় সব আমার।আমার কাছে কোনো টাকা নেই।আমি নরম কন্ঠে বললাম মা উপবৃত্তির টাকা তো তোমার কাছেই দিয়েছিলাম।তখন ই মা আরো বাজে ভাবে বলে উঠলো কিরে মিথু দুই টাকা দিয়ে খোটা দিচ্ছিস।কখনো তো বলিস না মা এই টাকা টা নাও নিয়ে তুমি কিছু একটা কিনে নিও।নিজের মা হলে খোটা দিতে পারতিস মিথু।কখনোই পারতিস না। এইজন্য বলে আপন আর পর।কোনো টাকা পয়সা নেই আমার কাছে। তোর কোনো পরীক্ষা দেওয়া হবে না।

এমন সময় নিরব এসে বলে আন্টি আমি জানি আপনার মনে অনেক কষ্ট।আপনার সংসারে অনেক ঝড় তুফান বয়ে গিয়েছে।বাট এইখানে মৃথিলার কোনো দোষ নেই।মৃথিলা কিন্তু আশরাফ সাহেব এর সম্পত্তির সমান অংশিদার।ভুল যা করার আঙ্কেল করেছে এতে মৃথিলার কোনো দোষ নেই আন্টি।আমার মনে হয় আপনার মৃথিলার উপর দোষ দেওয়া উচিত নয়।মৃথিলাকে পরীক্ষা দিতে দিন আন্টি।

বাবা নিরব তোমাকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই।তুমি ওর বিষয় নিয়ে ভেবো না।আমি ওকে পরীক্ষার টাকা দিয়ে দিয়েছি সেটা ও কি করেছে শুনে দেখো তো।আমাকেও তো টাকার হিসাব দিতে হয়।তোমার আঙ্কেল বার বার হিসাব নেন সব টাকার।বলেই মা কিছু টাকা আমার মুখের উপর ছুড়ে মেরে চলে গেলো।

আমি নিঃশব্দে টাকা গুলো নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম।গেট এ সুপ্তি দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য।আমার মন খারাপ দেখে সুপ্তি আমাকে বলে আজ ও গালি দিয়েছে আন্টি তোকে তাইনা।আমি মাথা নিচু করে হাঁটছি।সুপ্তি আমাকে বলে ওই ডাইনি কে তুই মা ডাকিস কেনো ও তো সৎ মা হওয়ার ও যোগ্য না মিথু।আমার মনে চাই ওদের খুন করে জেলে চলে যায়।আর নবনিতা আপু বার বার ফেইল মারে তাই এত জেলাস ফিল করে তোকে নিয়ে। সুপ্তি ওর ব্যাগ থেজে নুডুলস বের করে আমাকে দিয়ে বলে আগে এটা খেয়ে নে তুই।সুপ্তি জানে বেশীর ভাগ দিনে আমাকে না খেয়েই আসতে হয়।তাই ও আমার জন্য খাবার নিয়ে আসে।বড় একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছি দুজনে।সুপ্তি আনাকে নুডুলস খাইয়ে দিচ্ছে।এমন সময় কালো জিন্স আর কালো গেঞ্জি পরে প্যান্টের দুই পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে রইলো নিরব।নিরব কে দেখেই কাশি শুরু হলো আমার।সুপ্তি আমাকে চোখ ইশারা দিয়ে বলে তোর হিরো হাজির বলেই নিরবের হাতে নুডুলস এর টিফিন বক্স ধরিয়ে দিয়ে বলে ভাইয়া আপনি একটু খাইয়ে দিন না।

আমি সুপ্তির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললাম কি বলছিস এগুলা।সুপ্তি আমার ইশারায় বলা কথাটা জোরে বলে উঠলো নিরব ভাইয়া দেখুন না মিথু আমাকে ধমক দিচ্ছে।

নিরব সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বলে কে আমার হবু শালিকাকে ধমক দিচ্ছে তাকে একটু দেখতে চাইছি আমি।কার এত সাহস।

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।কে উনার হবু শালি।ভারী অদ্ভুত ব্যাপার।আমি নিরবের কাছে গিয়ে বললাম ও আপনার হবু শালি কিভাবে শুনি।কথাটা বলতেই নিরব আমার মুখের মাঝে নুডুলস গুজে দিয়ে বললো আমি কিছু জানিনা সে আমাকে বলেছে আমার এই সিঙ্গেল জীবন দেখে তার খুব কষ্ট হচ্ছে।তাই সে আমাকে তার বান্ধবী দিবে।এখন কোন বান্ধবী দিবে আমি কি জানি বলেই আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে দিলো।

আমি সুপ্তির দিকে তাকিয়ে বললাম কিরে কাহিনী কি সুপ্তি।ঘটকালি শুরু হয়ে গিয়েছে তাইনা।তা কাকে দিচ্ছিস শুনি।সুপ্তি চোখ পিট পিট করে বললো এই মিথু জেরিন কে দিলে কেমন হয় বল তো।আমি রেগে মেগে বললাম মেয়ে আর পাস নি তাইতো। নিরব আমার মুখের কাছাকাছি এসে বলে কেনো জেরিনের মাঝে কি সমস্যা আছে।আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম আছে অনেক সমস্যা আছে আপনাকে ওর সাথে মানাবে না।জেরিন আটা ময়দা মাখে। নিরব আমার মুখে একটা ফু দিয়ে সামনের চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বলে আটা মাখে না এমন মেয়ে খুজে দাও।আমি অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম এখন সবাই আটা মাখে তাই কাকে খুজবো।আর আপনার না প্রেমিকা আছে তাকে খুজতে এসছে।নিরব হাত দিয়ে চুল চুলকাতে চুলকাতে বলে হুম ঠিক ই বলেছো।আম্মুর বউমা এ শহরেই আছে।আস্ত একটা পরী সে।আম্মুর বৌমার সন্ধানেই এখানে আসা।বাট খুব ই চিন্তায় আছি আম্মুর বৌমা এই আনস্মার্ট ক্ষ্যাত কে কি আর পছন্দ করবে।আমি নিরব কে ভরসা দিয়ে বললাম আপনাকে পছন্দ করবে না এমন মেয়ে কয়টা আছে শুনি।নিরব একটু বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,, সমস্যা মহা সমস্যায় আছি।

“কি সমস্যা ভাইয়া।”

“প্রথম সমস্যা আমাকে ভাইয়া ডেকে ডেকে আহত করছো।”

“কেনো ভাইয়া ডাকলে কি সমস্যা।”

“সুন্দরী রা ভাইয়া ডাকলে কেমন একটা লাগে।তাছাড়া বাপের বন্ধুর ছেলেরা কখনো কারো ভাইয়া হয় না বুঝলে। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী সব মেয়েরা একদিন বাপের বন্ধুর ছেলের প্রেমে পড়ে।”

“দ্বীতীয় সমস্যা কি?”

“তোমার বাটপার বাপ।ওই ভাদাইম্মার বেটা রে নিয়ে সমস্যা আছে।আমার বিয়ের সময় আবার ও বাটপারি করবে।”

“এই হ্যালো!আপনার বিয়ের সাথে আমার বাপের সমস্যা কি।আর এত বাটপার বাটপার করবেন না।”

“বাটপার না হলে কেউ দুইটা বিয়ে করে নাকি।এর অবস্থা খুব খারাপ হবে এর জামাই এর হাতে।”

“নিরবের কথা বেশীর ভাগ আমার মাথার উপর দিয়ে যায়।মাঝে মাঝে মনে হয় উনি আমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলছে।আবার মনে হয় যে না।কারণ কয়েকদিন মাত্র হয়েছে উনি আমাকে চিনেন।অনেক ভাল মানুষ উনি তাই হয়তো মায়া দয়া হয় আমার কষ্ট দেখে তার জন্য আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন।”

এক্সাম এর টাইম হয়ে এসছে নিরব আমার আর সুপ্তির হাতে পানির পট আর কিছু চকলেট দিয়ে দিলো।পরিক্ষা শেষে দেখি নিরব দাঁড়িয়েই আছে।ফর্সা গাল টা রোদে লাল হয়ে আছে।নাকের ডগায় ঘামের ফোটা বিন্দু বিন্দু জমেছে।গায়ের গেঞ্জি ও ঘেমে গিয়েছে।আমরা বেরোতেই নিরব আমার হাত থেকে ফাইল নিয়ে প্রশ্ন পত্র দেখে বলে আমি জানি তোমার এক্সাম ভাল হয়েছে।সুপ্তি বলে ভাইয়া কিন্তু মিথুর সব কিছুই বোঝা শিখে গিয়েছে।নিরব বলে সেটা শুধু তোমাদের মিথুই বুঝতে পারছে না।আমি উনার পেচিয়ে বলা কথা না বোঝার ই চেষ্টা করি।নিরব আমাদের পাশের একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো।যদিও আমরা আসবো না কিন্তু নিরবের জোরাজোরিতে যেতে হলো।আমি নিরব কে বলেই দিলাম আমি কিন্তু কিছু খাবো না।

নিরব মেনু কার্ড দেখতে দেখতে বলে তোমার না খেলেও চলবে কিন্তু আমার খেতে হবে।তোমার বোনের হাতের যা বাজে খাবার আমার খেতে হয়েছে ওয়াক থুঃভাবতেই কেমন একটা বিশ্রি লাগছে আমার।

এত বাজে খাবার মানুষ কিভাবে রান্না করতে পারে।একটা সুস্থ মানুষ কিভাবে এগুলা খেতে পারে।কয়েক বার বমি করে ক্লান্ত আমি।আমাকে তাই এখন বাইরে থেকে খেতেই হবে।আমি নিরব কে বললাম চলুন আমি রান্না করে দিবো রাতে সেটা খাবেন।নিরব আমাকে বলে নো নো নো।ওই বিশ্রি খাবার হজম হবে কিন্তু তোমার কষ্ট আমার হজম হবে না।আমি নবনিতা কে বলে এসছি দুপুরেও তোমার হাতের রান্না খাবো।সে এখন রান্নায় বিজি আছে।

সুপ্তি নিরবের কথা শুনে হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছে।।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here