হৃদমাঝারে পর্ব -১৩

#হৃদমাঝারে – [১৩]

কাপাকাপা হাতে মোবাইলটা নিয়ে কলটা রিসিভ করে মেহরিমা।

– হ্যাঁ, হ্যাঁ ডক্টর খান বলুন। কথাটা বলা শেষ মাত্রই মেহরিমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। দাঁত দিয়ে ঠোট কামড়ে বড় বড় শ্বাস নিতে থাকে। ওপাশ থেকে শুনতে পেল ডক্টর ইমরান খানের কঠিন কন্ঠশ্বর।

– কমপ্লেনটা তুলে নাও।

– কখনো না।

– যদি নিজের ভালো চাও তাহলে কমপ্লেনটা তুলে নাও আর তোমার কাছে থাকা ভিডিওটা আমাকে দিয়ে দাও। না হলে তোমাকেও,,,

ডক্টর ইমরান খানের কথা শুনে দাঁত চেপে হাসে মেহরিমার। তারপর বলে,
– উহ্, আপনি কখনোই এই ভিডিওটা পাবেন না। এবার লোকসম্মুকে আপনার ভালো মানুষের মুখোশ খুলে দিবো। ডক্টর ইমরান খান, অনেক অপরাধ করেছেন আপনি এবার আপনার শাস্তি পেতেই হবে।

– তুমি ভুল করছো?

– আমার জিবনটাই তো ভুল ডক্টর ইমরান খান। জন্মের দিন নানা মারা যায় আর তার পরেই দাদি। ওহ্ সরি দাদিকে তো আপনি মেরেছেন। কি ঠিক বললাম তো?

ডক্টর ইমরান খান কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। যবে থেকে এই মেয়েটা পৃথীবিতে এসেছে তখন থেকেই তিনি একটা একটা ঝামেলায় সম্মুখীন হচ্ছে। যার কারনে নিজের মা-কেও খুন করেছেন ডক্টর ইমরান খান। এবার এই মেয়েটার একটা ব্যাবস্থা করতেই হবে। খুব বেড়েছে এই মেয়েটা। কেন যে সেদিন এই মেয়েটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে সে। এখন আফসোস হয় ডক্টর ইমরান খানের। ডক্টর ইমরান খান তার চোয়াল শক্ত করে বলে,

– তুমি ভিডিওটা আমাকে দিবে। আর আজকের মধ্যেই কমপ্লেইনটা তুলে নিবে। না হলে এর ফল কিন্তু খুব খারাপ হবে।

ডক্টর ইমরান খানের কথা শুনে স্মিত হাসে মেহরিমা। অধোর চেপে বলে, ঠিক আছে, আমিও দেখি আপনি আর কি কি করতে পারেন। কথাটা বলে কল কেটে দেয় মেহরিমা। বড় করে শ্বাস ত্যাগ ও ভাবেই বসে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

পরেরদিন সকালেই মেহরিমা রওনা দেয় কলেজের উদ্দেশ্যে। কলেজ গেটের কাছে আসতেই ফারহান এসে মেহরিমার হাত ধরে টেনে ওর গাড়িতে বসিয়ে দেয়। মেহরিমা কিছু বলতে যাবে তখন ফারহান ওর ঠোঁটে আঙ্গুল ঠেকিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দেয়। তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে থামে একটা নির্জন জায়গায়। ফারহান গাড়ি থেকে নেমে মেহরিমার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়েই মেহরিমাকে জড়িয়ে ধরে। ঘটনার আকস্মিক ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে মেহরিমা।

– কি করে পারো তুমি আমাকে এত কষ্ট দিতে।

মেহরিমা কিছু বলে না। আসলে ও বুঝতে পারছে না ওর এখন কি বলা উচিৎ। আস্তে আস্তে মেহরিমা ওর হাত উঠায় ফারহানের পিঠে। মেহরিমার হাত বিচরণ করছে ফারহানের পুরো পিঠ জুড়ে। কিছুক্ষণ পর ফারহান মেহরিমাকে ছেড়ে ওর দুই গালে হাত রেখপ বলে উঠে,

– ভালোবাসি মেহু। খুব ভালোবাসি।

– আমিও তোমাকে ভালোবাসি ফারহান।

মেহরিমার জবাব শুনে ফারহানের চোখমুখ উজ্জল হয়ে যায়। অধোরে হাসি ফুটে উঠে তার। কিছুক্ষণের জন্যে হলেও ফারাহানের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আসলে মেহরিমা যে এখন তাকে ভালোবাসার কথা বলবে সেটা বুঝতে পারে নি ফারহান। তাই সে বুঝতে একটু সময় নিচ্ছে। মেহরিমা ফারহানের হাতের উপর হাত রাখে। অতঃপর বলে,

– তোমাকে যখন প্রথম দেখেছিলা তখনি আমি হাড়িয়ে গিয়েছিলাম তোমার ওই বাদামি চোখে। তোমার কাছে থাকে আমার অদ্ভুত এত ফিলিং হয়। আমি জানিনা সেই ফিলিংক্স এর নাম। তবে এটু বলতে পারি আমি তোমার সাথে থাকতে চাই। সারাটা জিবন তোমার সাথে কাটাতে চাই ফারহান। আই লাভ ইউ।

– আই লাভ ইউ টু। বলেই ফারহান মেহরিমা কপালের সাথে তার নিজের কপাল ঠেকিয়ে নেয়। আর তখনি মেহরিমা টুপ করে ফারহানের ওষ্ঠে কিছু করে। মেহরিমা ফারহানের থেকে সরে আসতে চাইলে ফারহান এক হাতে মেহরিমার কোমড় জড়িয়ে ধরে। আর বলে,

– ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছ কেন? চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো আর আমাকে একটু শ্বাস নিতে দাও। ফারহান মেহরিমার নাকের সাথে ওর নাকটা ঘষতে থাকে। মেহেরিমা মৃদু হেসে ফারহানের কলার চেপে ধরে।

১০,
মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে ডক্টর ইমরান খান। ঠোঁটের কোণে ঝুলে আছে তার শয়তানি হাসি। মোবাইলের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে মেহেরিমা ও ফারহানের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সময় টুকু। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর এটা দেখেই শয়তানি হাসি হাসছে ডক্টর ইমরান খান আর মনে মনে প্ল্যান করছে। কিছুক্ষণ পর একটা নাম্বারে ডায়াল করলে সে। টিটটিট শব্দ হতেই ওপাশ থেকে কেউ কলটা রিসিভ করে। তখন ডক্টর ইমরান খান বলতে শুরু করে,

– ছেলেটা কে?

ওপাশ থেকে কিছু একটা বলল। যেটা শুনে ডক্টর ইমরান খান স্মিত হেসে বলে,

– তুমি ওদের উপর নজর রাখো। সময় হলে আমি জানিয়ে দিবো কি করতে হবে। আর হ্যাঁ, আমার কিন্তু টাইম টু টাইম আপডেট চাই।

ওপাশ থেকে কিছু একটা শুনে অট্টহাসিতে ভেঙে পরে ডক্টর ইমরান খান। তারপর সে কল কেটে দেয়। মোবাইলের স্কিনের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর সেটা বিছানায় ছুঁড়ে মারে। মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে যায় তার। দাঁত চেপে বলে,

– আমার নামে থানায় কমপ্লেন করেছো তুমি মুন। তোমার জিবনটা আমি নরকে পরিণিত করে দিবো।
আমার ভাবতেই অবাক লাগছে তোমার শরীরে আমার রক্ত বয়ছে।

সেদিন আর ক্লাস করা হলো না মেহরিমার। সারাদিন ফারাহানের সাথেই কাটিয়ে দিলো। গল্প আড্ডা খাওয়া আর রোমাঞ্চে ভরপুর ছিলো দিনটি। পরেরদিন ক্লাস করছে মেহরিমা এমন সময় আকাশ কল করে। আর বলে, পুলিশ ওকে ডাকছে। ডক্টর ইমরান খনের এরেস্ট ওয়ারেন্ট এসে গেছে। তার জন্যে মেহরিমার একটা সই লাগবে। তাই সেদিন কোনমতে ক্লাস শেষ করে মেহরিমা ফিরে তার নিজ বাড়িতে। মিঠুর সেদিন ক্লাস ছিলো না সেও বাসায় ছিলো। বাড়ি ফিরতেই ডক্টর ইমরান খান আবার দেখা করে মেহরিমার সাথে। রাত তখন এগারোটা বাজে ছুঁইছুঁই।

– ভিডিওটা আমাকে দিয়ে দাও মুন।

– কখনোই না। আমি আপনাকে এই ভিডিওটা দিবো না। একটু পর পুলিশ আসছে আপনাকে গ্রেফতার করতে তৈরী থাকুন। আপনি যে অপরাধ করেছে তাতে আপনার বাকি জিবনটা হয়তো ওই শ্রীঘরেই কেটে যাবে।

মেহরিমার কথা শুনে অট্টহাসিতে ভেঙে পরে তার বাবা। দু-হাতে মেহরিমার গাল চেপে ধরে বলে,

– দুদিনের একটা মেয়ে হয়ে আমাকে জেলের ঘানি টানাবি। এতটাও বড় হসনি এখনো। একদম মেরে ফেলে দিবো।

– ছাড়ুন আমাকে। লাগছে। মেহরিমা জোর করে তার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। দাত কটমট করে ডক্টর ইমরান খানের দিকে তাকিয়ে বলে,

– আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমার শরীরে আপনার রক্ত বয়ছে। তাই রাগ বলেন আর জেদ দুটোই আপনার থেকে কম নয়। আপনি যেমন নিজের অপকর্ম ঢাকতে মানুষের প্রাণ নিতে পারেন ঠিক তেমনি আমিও অন্যায়ের প্রতিবাত করতে নিজের প্রাণ দিতে পারি। নিজের জিবনের পরোয়া আমি কখনোই করি না। আমার ঘৃনা হচ্ছে আপনাকে বাবা বলতে। অবশ্য কখনো ডাকি তো তার একটু শান্তিও লাগছে। আপনার মতো একজন দেশদ্রোহীর রক্ত বয়ছে আমার শরীরে ভাবতেই নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইছে। আমি মরতে ভয় পাই না ডক্টর ইমরান খান।

– আচ্ছা, নিজের প্রাণের ভয় তুই করিস না। কিন্তু ওর আপনজনেরা! তাদের প্রাণের ভয় তো করিস। তোর মা আর মিঠুর প্রাণের ভয় করিস না তুই। আর কি যেন তোর লাভারের নাম, ও হ্যা, ফারহান। তার প্রাণের ভয় করিস না।

– আপনি এমনটা করতে পারেন না। চিৎকার করে বলে উঠে মেহরিমা। আমার মা আপনার ওয়াইফ মিঠু আপনার ছেলে। আপনি তাদের সাথে এমনটা করতে পারেন না।

– আমি সব পারি। নিজের হাতে আমার মাকে খুন করেছি আমি।

– নাহ। আপনি এমনটা করবেন না।

– করবো। আমি এমনটাই করবো। প্রুভ দেখবে। মোবাইলটা মেহরিমার সামনে এনে ধরে। মেহরিমা মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকিয়ে থো হয়ে যায়। ওর মা আর মিঠু ঘুমিয়ে আছে। আর এখানে দুজন লোক তাদের মাথায় বন্ধুক ধরে আছে।

দু-হাতে মুখ চেপে ধরে বসে পরে মেহরিমা। তখন ওর সামনে আরেকটা ভিডিও অন করে। যেটাতে একটা লোক ফারহানের গাড়ির বোম লাগাচ্চে।

– আপনি এরকমটা করবে না। চিৎকার করে কেধে উঠে মেহরিমা। আ- আমি আপনার স-সব কথা শুনবো। প্লিজ ওদের কোন ক্ষতি করবেন না।

চলবে,,,,,

#মাহফুজা_আফরিন_শিখা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here