#হৃদমাঝারে_শুধুই_তুই
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-১৩
ম্যানেজিং ডিরেক্টরের কেবিনে ঢুকে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে রিয়া।আদিবকে এখানে দেখবে এমনটা একদমই ওর আশাতীত ছিলো।আদিব ফোনে কথা বলতে বলতে ফাইল চেক করছিলো।ফোনটা রেখে ফাইলে চোখ রেখেই বললো,
-ইয়েস?এনিথিং রং?
রিয়া ধ্যান ভেঙে নিজেকে সামলে নিলো।আসার সময় আদিবের সাথে সবার ব্যবহারে ওর কিছুটা হিনটস্ পাওয়া উচিত ছিলো।ইশ্!লোকটাকে কতো কথা শুনিয়েছে।যদিও ইনি নিজেই ব্যাপারটা অনেক সহজভাবে মানিয়ে নিয়েছেন সকালে।মনে হয়না সেগুলো ওর চাকরীজীবনে ইফেক্ট করবে।
কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আদিব মাথা তুলে চাইলো।রিয়াকে ঠায় মেরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ঠোট টিপে হাসলো ও।বুঝতে পারলো ওকে দেখেই এমন শকে আছে রিয়া।এতো তাড়াতাড়ি এখানে চলে আসবে ও এমনটা ভাবে নি আদিব।গলাটা ঝেড়ে বলল,
-মিস রিয়া?আর ইউ দেয়ার?
রিয়া সম্পুর্নভাবে বাস্তবে ফিরলো।একটু আমতা আমতা করে বললো,
-জ্বী,মানে সরি।না মানে ইয়েস স্যার।আসলে….
আদিব শব্দ করে হাসলো।চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,
-হেই!ডোন্ট গেট নার্ভাস!ইটস্ ওকে।
রিয়া কপালের ঘামটা ওড়নায় মুছে মেকি হাসি দিয়ে বললো,
-জ্বী।
আদিব রিমোট দিয়ে এসির পাওয়ারটা বাড়িয়ে দিলো।সামনের চেয়ারটা রিয়াকে দেখিয়ে নিজে ওর চেয়ারে বসে বললো,
-প্লিজ বি সিটেড।কি খাবেন বলুন?
রিয়া বসতে বসতে বললো,
-নাথিং।থ্যাংকস্।
-তা আপনি এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলেন যে?আমিতো ডেস্কেই আপনাকে ওয়েট করতে বললাম।
-আসলে ওখানে একটা মেয়ে বললো এমডির কেবিনে গিয়ে এপোয়েন্টমেন্ট লেটার কালেক্ট করে নিতে।তাই…
-আপনার এখনো এপোয়েন্টমেন্ট লেটার লাগবে?
-ম্ মানে?
-নাথিং!আপনাকে তো পরিচয়টাও দেওয়া হয়নি।আমি মেহনাজ ইফতেখার মাহির।জামান ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রেজেন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
রিয়া বিরবির করে বললো,
-যা ভেবেছিলাম।এখানে এভাবে তো ওর চানাচুর বিক্রেতা থাকবে না।
-কিছু বললেন?
-না।
-ওকে দেন,আপনার কাগজপত্র এনেছেন?
রিয়া ফাইল খুলে কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললো,
-জ্বী স্যার।এইতো এগুলো।
-হেয়ার ইজ ইউর এপোয়েন্টমেন্ট লেটার।এক্সাক্টলি নাইন টু ফাইভ আপনার শিডিউল।আজ যে ডেস্কে বসেছিলেন ওখানেই বসবেন।যে প্রজেক্টে আছেন তার সমস্ত ফাইলস্ ডিটেইলস্ কাল ডেস্কেই পেয়ে যাবেন।আর তারপরও যদি কোনো সমস্যা হয় আমাকে জানাবেন।ক্লিয়ার?
রিয়া মৃদ্যু হেসে ঘাড় দুলালো।কিছুটা অবাকও লাগছে ওর।বিষয়টা অদ্ভুত না?অফিসের এমডি ওকে সবটা বুঝিয়ে দিচ্ছে,ডেস্কে পৌছে দিচ্ছে,আবার বলছে কোনো সমস্যায় ডিরেক্ট তাকে কন্টাক্ট করতে।তারপর ভাবলো লোকটা হয়তো ওমনই।ও নিজেই দেখেছে সবার সাথে কতোটা ফ্রাংকলি কথা বলে।এজন্য ওকেও হয়তো..
-এক্সকিউজ মি?আপনার কি ইমাজিনারী জগতে বিচরন করতে বেশি ভালো লাগে নাকি?
রিয়া চমকে উঠে বললো,
-ন্ না।আসলে,তেমন কিছু না।
-না হলেই ভালো।যাই হোক,এখানে কারো সাথেই খুব বেশি ফর্মালিটিজ করতে হবে না।সবাই মিলে ফ্রেন্ডলি বিহেভ করলেই কাজগুলো ঠিকমতো হয়।সো ট্রাই টু বি ফ্রেন্ডলি টু অল।
-জ্বী স্যার।শিওর।
-বাসায় কে কে আছে আপনার?
হুট করে বাসার কথা জিজ্ঞেস করায় রিয়া একটু আটকে গেলো।ওর চেহারা দেখে আদিব বুঝে গেলো প্রশ্নটা ওকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।বললো,
-ইটস্ ওকে।এতোটা সেন্সিটিভ হতে হবে না আমার সাথে যে যা জিজ্ঞাসা করবো তাই বলতে হবে।
-না স্যার আসলে…
-ঠিকাছে,ঠিকাছে।দেখুন,এটা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার,যা সম্পুর্নই আপনার ইচ্ছায় প্রকাশ পাওয়া উচিত,তাইনা?যাই হোক,কিছু খাবেন না বললেন?
আদিবের কথায় একটু অনুতাপ হলো রিয়ার।এমনটা চায়নি ও।কিন্তু এটাও বুঝেছে লোকটা এতোটুকো মাইন্ড করেনি,উল্টো ওকে স্পেস দিচ্ছে।মাথা নিচু করে ঘাড় নাড়িয়ে মানা করলো ও।আদিব নিশব্দে হেসে বললো,
-মিস রিয়া,ডোন্ট ফিল গিল্টি।আমি সত্যিই চাইনা আপনার অনিচ্ছায় কিছু শুনতে।আর তো আর,একসাথে কাজ করতে করতে চেনাজানা হয়ে যাবে।ইটস্ নট আ বিগ ডিল!
রিয়া আবারো ঘাড় নারলো।আদিব বললো,
-পরশু নটায় চলে আসবেন কেমন? ইউ মে কাম নাও।
রিয়া ধীর পায়ে বেরিয়ে এলো।লোকটা বস হওয়া সত্ত্বেও কতো স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলো।আর ও?নিজে থেকে যেচে গিয়ে প্রথম দিনেই কোথাও একটা টানাপোড়ন বাধিয়ে এলো।আসলেই বড্ড বেশি বোকা ও।মনে মনে নিজেকে গালি দিয়ে নিজের উপরই রাগ দেখালো রিয়া।
রিয়া বেরিয়ে যেতেই টেবিলে হাত রেখে তাতে মুখ গুজে বসলো আদিব।মেয়েটা একটু বেশিই সোজা টাইপ।অফিসিয়াল কতো কথা বললো,তাতে ও স্বাভাবিকই ছিলো।যেইনা ফ্যামিলি নিয়ে বলতে গেছে,ও নার্ভাস হয়ে গেছে।এমন মেয়েও হয়?এতোটুকো কথাতেই এভাবে অস্বস্তিতে পরে গেলো?এর সাথে কথা বলার সময় তোকে দশবার ভাবতে হবে আদিব।সি ইজ টু সেন্সিটিভ!!! মনে মনে কথাগুলো ভেবে জোরে শ্বাস ফেলে কাজে মন দিলো ও।
•
-চোরের মতো অন্যের রুমে ঢুকেছো যে?আবার উকিঝুকিও দিচ্ছো এদিক ওদিক?
আরমানের গলা শুনে আঁতকে উঠলাম।সকালে ব্রেকফাস্টের পর ওনাকে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলাম।তখনই ভেবেছিলাম এর রুমে ঢুকে এমন কিছু একটা করবো যাতে আচ্ছামতো শায়েস্তা হয়ে যায়।কিন্তু আধঘন্টা হলো ভয়ে শুধু রুমের সামনেই ঘুরঘুর করেছি,ভিতরে ঢুকতে পারি নি।অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করলাম এই বলে যে এতোক্ষন আসেনি,এখনো আসবে না।মামা রুমে কিসব ফাইল ঘাটছেন,মামী কিচেনে,রাহাত টিভি দেখছে।আর আমি ভয়কে জয় করে ভেতরে ঢুকলাম।তবুও শেষ রক্ষা আর হলো কই?উনি হাজির!!!
-কি হলো?এখন মুখোমুখি হতেও ভয় পাচ্ছো?
জোরে শ্বাস নিয়ে পিছন ফিরলাম।আরমান দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে বুকে হাত গুজে হাসছেন।
-কি গো?এখন থেকেই নজরদাড়ি শুরু করছো নাকি?নাকি ভবিষ্যৎ বরের জিনিসপত্র দেখতে আসছিলা?
সরু চোখে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললাম,
-ভুল করে ঢুকে পরেছি!
-হুম?এই তুমি আমাকে এতো বোকা মনে করো কেনো?
-আপনি সেটাই,আলাদাভাবে মনে করার কিছু নেই।
-একে তো চোরের থুরি,চুন্নির মতো ধরা পরেছো,তার উপর এতো জোর গলায় কথা বলছো?
তেড়ে গিয়ে বললাম,
-আপনার এতো সাহস?আপনি আমাকে…
উনি তার আঙুল দিয়ে আমার উচিয়ে ধরা আঙুল পেচিয়ে নামিয়ে দিলেন।তারপর দু হাতে দু কান ধরে বললেন,
-সরি,ভুল হয়ে গেছে।তুমি এখন কি চুরি করবে আমার?এটা হতেই পারে না।ভুল ভেবেছি আমি।
ভাব নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।কি যেনো মনে হয়ে আবারো পিছন ফিরে বললাম,
-কথাটা মাথায় রাখবেন।ভুল ভাবেন আপনি!
-কি বলোতো?মনটা চুরি করার ছিলো তা তো করেই নিয়েছো,তাই বললাম আর কি বা নিবে তুমি!
ওনার কথায় রাগ হওয়া অভ্যেসে পরিনত হয়ে গেছে নাকি ওনার কথাগুলোই গা জ্বালানো তাই নিয়েই কনফিউজড্ আমি।ফুসতে ফুসতে চলে এলাম ড্রয়িংরুমে।সোফায় বসে রাহাতের সাথে হানিবানি দেখছিলাম।পাঁচমিনিট পর আরমান শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে পাশের সিংগেল সোফায় এসে বসলেন।আমি একপলক তার দিকে তাকিয়েই জোরে জোরে কুশন পেটে ধরে হাসতে শুরু করে দিলাম।আমাকে ওভাবে হাসতে দেখে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছেন আরমান।আমি হেসেই চলেছি এখনো।রাহাত কিছুক্ষন তব্দা মেরে আমার হাসি দেখছিলো,তারপর আরমানের দিকে তাকিয়েও ওউ হাসতে শুরু করে দিলো।
-হোয়াট হ্যাপেন্ড?
….
-হাসছো কেনো তোমরা?
….
-হেই!ডু আই লুক লাইক আ জোকার?
আমরা হেসেই চলেছি।হাসির আওয়াজ শুনে মামী কিচেন থেকে বলতে বলতে বেরোলো,
-কি হলো টা কি মিথি?এই বয়সে কার্টুন দেখে ওভাবে হাসলে…
মামীও আটকে গেছে আরমানকে দেখে।সেও ফিক করে হেসে দিয়ে মুখ চেপে ধরলো।মামা ও ঘর থেকে গম্ভীর গলায় বললেন,
-কি হচ্ছে ওখানে?ডিস্ট্র্যাক হচ্ছি আমি কাজে!
সবাই মুখে হাত দিয়ে হাসি থামানোর বৃথা চেষ্টায় আছি।আরমান সবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বেসিনের আয়নার সামনে গিয়ে দাড়াতেই চোখ বড়বড় হয়ে গেলো ওনার।হয়তো নিজেকেই চিনতে পারছেন না উনি!সারা মুখে লালরঙের লিপস্টিকের দাগ!একবার কাদোকাদো চেহারা করে অগ্নিদৃষ্টি ছুড়ে দিলেন আমার আর রাহাতের দিকে।রাহাত চুপ!মামীও থতমত খেয়ে গুটিগুটি পায়ে কিচেনে চলে গেলো দেখলাম।বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসে রাহাতকে বললাম,
-বুঝলি রাহাত!ইসমে তেরা ঘাটা,মেরা কুছ নেহি যাতা!মিথির সাথে পাঙ্গা নিতে এসেছিলো!হুহ!
আরমান চোখ ছোট ছোট করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে রুমে চলে গেলেন।আমার তো কলিজায় পানি।আহ্ শান্তি।ইচ্ছা করেই তার তোয়ালে ভর্তি করে লিপস্টিক লাগিয়ে এসেছিলাম।জানতাম তাড়াহুরোয় ফ্রেশ হয়ে সরাসরি মুখে লাগাবেন,কাজে দিবে ব্যাপারটা।হলোও তাই।আরমান তোয়ালেটা এনে আমার সামনে ধরে বললেন,
-তুমি করেছো এটা রাইট?
দাত কেলিয়ে বললাম,
-ইয়াপ!
উনি তোয়ালেটা হাতের পিঠে ঝুলিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে বললেন,
-থ্যাংকস্।
অবাক হয়ে বললাম,
-মানে?
-তোমাকে সবার সামনে একটু জ্বালানোর জন্য একটা কজ খুজতেছিলাম।তুমি নিজেই দিয়ে দিলে।নাও ওয়েট ফর দ্যা কনসিকুয়েন্সেস!
কথাটা বলে উনি একটা রহস্যজনক হাসি দিয়ে চলে গেলেন।আর ভয়ে মুখ শুকিয়ে গেলো আমার।ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকিয়ে রাহাতকে দেখলাম ও যেনো বসে আছে আরমানের বলা কাজবাস্তবে দেখবে বলে।তখনই টিভিতে একটা কার্টুন বলে উঠলো,
-তু তো গ্যায়া!
হা করে সেদিকেই চেয়ে রইলাম।বেচারা কার্টুন আমার সিচুয়েশনটা কেমনে বুঝলো?
•
-তোর এ বিয়েতে মত আছে?
আমার সোজাসাপ্টা প্রশ্নে গায়ে হলুদ কাপড় জড়ানো শ্যামা মেয়েটা মনে হলো লাল রঙা হয়ে উঠলো।শিমুলের লজ্জা পাওয়ার ভাবভঙ্গিমা বলে দিচ্ছে ও বিয়েতে রাজি।তবুও আবারো বাজিয়ে দেখতে একটু গম্ভীর গলাতেই বললাম,
-বল শিমুল,বিয়েটা তোর ইচ্ছেতেই হচ্ছে?নাকি তোর বাবা জোর করে,,
ও ঠোট টিপে হাসি আটকানো টাইপ লুক দিয়ে বললো,
-যুদি বুলি বাপটো জুর কুরেছেক,তু কি করবিক?
-বিয়ে হতে দিবো না আমি।তুলে নিয়ে কোথাও লুকিয়ে ফেলবো তোকে।
ও গালে হাত রেখে আগ্রহ দেখিয়ে বললো,
-হু,তারপর?
-আর কি?তুই তোর নিজের মতো লাইফ লিড করবি এমন ব্যবস্থা করবো।দেখবি,খুব ভালো থাকবি তুই।
ও জোরে হেসে দিলো।বললো,
-আরে লা রে।বাপটো জুর কুরে লাই মুকে।
-তাহলে এভাবে হুট করে বিয়ে,,,,
এতোক্ষন দাড়িয়ে ছিলাম আমি।ও বিছানায় বসে মাথা উচু করে আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলো।হাতটা ধরে পাশে বসিয়ে বললো,
-উ পরসু রাতটো তুয়ার সাথে জঙ্গলটোতে গেছিলাম,আসার পর দেখি বাপটো জেগে গেছেক।উ মুকে উত্তো রাইতটতে বাইরে দেখে রেগেটো গেছেক।মেয়েটো ডুবেটো লা যায় ই ভয়ে কালই ইক কাকাবাবুর সাথে কুথাটো বুলে ই বিহা ঠিক করে ফেলেছেক।ইর লাগ্গিই তুর উখানেও যাই লাই।
-তারমানে বলছিস আমার সাথে জঙ্গলে গিয়েছিলি বলে,ধরা পরে গিয়েছিস বলে তোর বাবা মান সম্মানের ভয়ে তোকে বিয়ে দিচ্ছে?
-হু।
জোরে শ্বাস নিয়ে বললাম,
-দেখ!এসব আমার কারনে হয়েছে।আমি জঙ্গলে না গেলে তুইও যেতি না।আর হয়তো,,যাই হোক,এটা তোর বিয়ের বয়সই না আর তোর বাবার মান সম্মান এমনিতেও সে নিজেই খোয়া দিয়েছে।অবশিষ্ট কিছু রাখেনি।তাই তোর বিয়েটা হচ্ছে না।আমাকে সময় দে একটু,টিকিট কাটার ব্যবস্থা করছি।বিকেলে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পরপরই সবার ব্যস্ততার মাঝে তোকে নিয়ে আমি ফুড়ুৎ!পগার পার।ঢাকা যাচ্ছিস তুই আমার সাথে।
আমার কথা শুনে শিমুল মাথায় হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ভ্রুকুচকে বললাম,
-কি?এসব ব্যাপার না।তোকে নিয়ে পালাবো।আর শোন,এই বাবার জন্য মন খারাপ করিস না।স্বার্থপর একটা লোক।আব্বুকে বলে তোকে ভর্তি করিয়ে দেবো।জীবনে বড় কিছু হয়ে তারপর না হয় ফিরে এসে,,,
-থাম ক্যানেএএএএএ!!!
শিমুল কানে হাত দিয়ে চেচিয়ে উঠলো।কি এমন বললাম আমি?এমন রিয়্যাক্ট করলো কেনো?
-ই,তু পাগলটো আছিস?তু শুনবিক তো মু কি চাই?নিজের মুতন কুরেই বুলেটো যাচ্ছিস,ভেবেটো যাচ্ছিস।শুন,মু চাই ই বিহাটো হোক!
-মানে?তুই কেনো,,,
-থাম!!!মু বুলবোক।আইন্ছে!মুকে লিয়ে পলাইনবেক।ই!তু জানিস মুর বিহাটো কার সাথে হুইন্ছে?
-ডাজেন্ট ম্যাটার।আমিতো বলেছি,এসব কোনো ব্যাপার না।তোকে,,,
-তু ফির মুখটো খুলেছিস?ইবার তুয়ার মুখটোই বিধে দিবোক।পারলে উ মাথাটোতেও।ইত্তো বেশি বেশি ভাবতেটো পারে উ মাথা?
-সোজাভাবে বল শিমুল!
শিমুল একটা জোরে শ্বাস নিয়ে বললো,
-বাপটো কাকাবাবুর কাছে বিহার কুথাটো বুলতেই উ মোড়লটোর ছিলে আসিক বাপের কাছে সুমুন্ধটো পাঠায়।মোড়লের ছিলে!বাপ তাই তুখনই রাজি হইন যায়।মুও চাইতাম লা ইখন মুর বিহাটো হুক।উ আসিক লা হয়ে উন্য কেউ হুলে মুই তুকে পলাইনোর কুথাটো বলতাম।
অবাকের চরম সীমায় পৌছে দাড়িয়ে গেছি আমি। বললাম,
-তারমানে ওই আশিকের সাথে,,,
শিমুল আবারো লজ্জায় লাল নীল হয়ে বললো,
-উয়ার সাথে মু কুথাটোও বুলতাম লা কুনোদিন।উ শুহুরটোতে থাকেক।মুকে ইকবার বুলেছিলোক,বিহাটোর পর মুকে পড়াইনবেক।সব দিবেক।তুখন শুনিই লাই উয়ার কুথা!ইখন দিখ,সত্যি সত্যি মুকে বিহাটো কুরছেক।
আমি ওর পাশে বসে হাত দিয়ে ওর কাধে ধাক্কা মেরে বললাম,
-ওওও!এতোক্ষনে আগাগোড়া বুঝলাম।মেয়ে তো আগে থেকেই প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।বিয়েতে মানা করবে কি!তাইতো আমাকেও এভাবে ঝাড়লি,হুম?
ও লজ্জায় কুকরে পাশ ফিরে বললো,
-যাহ!
আমি বেশ কিছুক্ষন এসব নিয়ে লেগপুল করলাম ওর।এরমধ্যে আরো চার পাচজন মেয়ে ভেতরে ঢুকলো।শিমুলকে নিয়ে নাকি ঘাটে যাবে কোন নিয়ম পালন করতে।ওর সিচুয়েশন দেখে ভালো লাগছিলো।একেই হয়তো বলে মেঘ না চাইতেই জল!চায়নি বিয়েটা হোক,কিন্তু বিয়েটা হচ্ছে,গ্রামের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যাক্তির ছেলের সাথে,যে কিনা ওকে আগে থেকেই ভালোবাসতো,শহরে নিয়ে গিয়ে ওকে পড়াশোনাও করাবে বলেছে।
আর কি চাই!ভালোবাসাটা হয়তো এমনই।সবক্ষেত্রে না আবার।বেশিরভাগ লাভ স্টোরিই তো ব্যর্থতা,ধোকা এইসব দিয়ে দ্যা এন্ড।আচ্ছা,এসব কেনো ভাবছি আমি?কোনোদিনই তো ভাবতাম না।আজ কেনো?শিমুলকে দেখে?নাকি আরমান আমার জীবনে এসেছেন বলে???
#চলবে…