হৃদমাঝারে শুধুই তুই পর্ব -১২

#হৃদমাঝারে_শুধুই_তুই
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-১২

ওই একটা মানুষ!একটা মানুষ দুদিন হলো আমার লাইফে ল্যান্ড করেই সবটা এলোমেলো করে দিচ্ছে।নিজেকে নিজের মধ্যে,নিজের মতো করে পাচ্ছিই না আমি।এই আমি,যে কিনা সবকিছু উড়িয়ে দিয়ে নিজের মতো করে থাকতে ভালোবাসি,সেই আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরেই বেরোই নি তার মুখোমুখি হতে হবে বলে।মামী,রাহাত এমনকি মামাও আরমানকে নিয়ে বেশ কেয়ারিং।আরমানের যেনো কোনো কিছুতে সমস্যা না হয়!এদিকে যতো জ্বালা হয়েছে আমার।লোকটা আমার সামনে আসলেই হৃদপিন্ড ট্রেনের গতিতে দৌড়াতে থাকে,দম আটকে আসে।এসব অনুভুতির সাথে তো কোনোদিনও পরিচয় ছিলো না আমার!তবে এখন কেনো?

নাহ্!এসব ভাবনা ভাবা মানায় না তোকে মিথি।তুই তো এসবে কোনোসময় জড়াতে চাসনি,বেহুদা এইসব নিয়ে ভাবছিস কেনো?আরতো শুধু আজকের দিনটাই এখানে।তারপর সে তার রাস্তা,আমি আমার রাস্তা।একটা জোরে শ্বাস ফেলে নিজেকে হালকা করে পা বাড়ালাম ডাইনিং রুমের দিকে।এ সকালে সবেই রুম থেকে বেরোলাম আমি।

ব্রেকফাস্ট টেবিলে কোনোদিক না তাকিয়ে বসে গেলাম।মামী বললো,

-কি ব্যাপার মিথি?তুমি এতোক্ষনে আসলে যে?শরীর খারাপ?

মাথা নাড়িয়ে না বোঝালাম।মামী বললো,

-তাহলে?অন্যান্যদিন তো মামী ডিম ফাটাবো,চাকু দিয়ে রুটি চারকোনা করবো,পানি গরম করে দেই বলে বলে কিচেনে হট্টোগোল বাধিয়ে দাও।আজ এতোটা দেরিতে ঘুম ভাঙলো বুঝি?

মাথা নিচু করেই হুম বললাম।পাশ থেকে রাহাত বললো,

-আর কিই বা পারে আপু?ওর দৌড় ওই অবদিই।রান্নার র টাও তো বোঝে না।

আমি রাগী চোখে ওর দিকে তাকালাম।ও কোনোরকম তোয়াক্কা না করে গ্লাসের দুধ শেষ করে আঙুলে নাক ঘষে ভেঙচি কাটলো।এই ছেলেটা বড্ড বাড় বেড়েছে!বিশেষ করে আরমান আসার পর।সবে মুখ খুলেছি ওকে কছু বলার জন্য তখনই,

-শামীমা আন্টি,তারমানে বলতে চাইছো মিথি রান্নাঘরে এন্ট্রি নিলেই তান্ডব বাধিয়ে দেয়?

আরমানের গলার আওয়াজে চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করলাম।আজ ওনার সাথে ঝগড়া করবো না।লোকটার সাথে কথাই বলবো না আর।মামী মুচকি হেসে কিছু আনতে কিচেনে ঢুকলেন।উনি নিচু গলায় আবারো বললেন,

-কপাল পোড়া হলে যা হয় আর কি!ভেবেছিলাম বউয়ের হাতে পঞ্চব্যন্জন খাবো।বাবা গো,এ আমাকে পাঁচটা চালসিদ্ধও খাওয়াতে পারবে না দেখছি।শালাবাবু,তুমি কি বলো?

কটমটে চোখে এতোক্ষনে তার দিকে তাকালাম আমি।একদম আমার সামনে হেলান দিয়ে চেয়ারে বসে হাসছেন।মনে হচ্ছে পা দুলাচ্ছেন। সামনে থাকা কাটাচামুচ উঠিয়ে তার দিকে তাক করে ধরে বললাম,

-ইউ…!আপনাকে আমি…

-ভালোবাসো?

-মাই ফুট!এতোক্ষন কিছু বলিনি তার মানে এই নয় যে আমি বোবা আর আপনি আমাকে নিয়ে যা তা বলবেন সেটা সহ্য করবো আমি।

-ইউ মিন তোমাকে নিয়ে আমি যা তা বলেছি?তোমাকে নিয়ে?

-আর নয়তো কি?

উনি বাকা হেসে আরেকটু এগিয়ে বসে বললেন,

-মানছো তবে?তুমিই আমার বউ হবে?হুম?

কথাটা বলে উনি চোখ মারলেন আমাকে।আমি থেমে গেলাম।কথার প্যাঁচে ফেলতে এক্সপার্ট উনি তা আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো।মামী একটা বাটি হাতে এগিয়ে এসে আমার হাতে ওভাবে চামুচ ধরা দেখে বললো,

-তোমরা আবার ঝগড়া করছো?

চামুচটা নামিয়ে নিলাম।আরমান বললেন,

-এটাকে ঝগড়া বলে আন্টি?রীতিমতো এটেম্প টু মার্ডার বলে,মার্ডার!

রাগে গা রি রি করছে আমার।ইচ্ছা করছে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে যাই।কিন্তু নিজের বাসা না বলে সে বেয়াদবিটা করলাম না।এরমধ্যে মামা নরমাল ড্রেসেই খেতে আসলো।আরমান রাহাত দুজনেই একদম ইনোসেন্ট বাচ্চার মতো ঠিকঠাক হয়ে বসলো।আমি কিছুটা অবাক হলাম মামাকে দেখে।আজ তো অফ ডে না,আর মামা ছুটিও নেয়নি।তবে পুলিশ স্টেশন যাবে না কেনো আজ।কৌতুহল দমাতে না পেরে বলেই উঠলাম,

-মামা?পুলিশ স্টেশন যাবেন না আজ?

মামা প্লেটে খাবার বাড়তে বাড়তে বললেন,

-না ছুটি নিয়েছি।

-কেনো?

-আজ তো শিমুলের বিয়ে,ওখানে ওর বাবা আমাদের সবাইকেই‌ যেতে বলেছে।

কথাটা শুনে একপ্রকার শক লাগলো আমার।মাঝে একটা দিন পেরিয়ে গেছে,শিমুল না এ বাসায় এসেছে,না আমি ওর খবর নিয়েছি।তাই বলে হুট করে এমন খবর শুনতে হবে তা ভাবতেও পারছি না আমি।

-কিহ?বিয়ে?

মামা স্বাভাবিকভাবেই খাবার খেতে খেতে বললেন,

-হুম।কাল ফেরার পথে ওর বাবার সাথে দেখা হয়েছিলো।বললো মেয়েটার কাল বিয়ে,সবাইকে নিয়ে যেতে।

কিছুটা চেচিয়ে বললাম,

-মানে কি?এভাবে হঠাৎ করে বিয়ে দিচ্ছে কেনো?আর ওর বয়সটাও তো কম!

আরমান ভাত নাড়তে নাড়তে স্বাভাবিকভাবেই বললেন,

-এখানে এমনই।ওদের বয়স ফোরটিন প্লাস হলেই বিয়ে হয়ে যায়।লাকিলি শিমুল ফিফটিন প্লাস হয়ে গেছে।

মুখ বাকিয়ে বললাম,

-আপনাকে বলি নি আমি।আর এমনভাবে বলছেন যেনো ওদের বিয়ের বয়সের উপর পিএইচডি করে রেখেছেন?

মামা বললেন,

-আরমান ঠিকই বলেছে মিথি।এখানে এমনই।মেয়েদের বিয়ের বয়সটা আঠারো মানা হয় না।তাই আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলেও পারি না।কয়জনের বিরুদ্ধেই বা স্টেপ নিবো বলো?

কিছুটা থেমে গেলাম।এই লোকটার যে প্রফেশনাল এক্সপেরিয়েন্স থাকতে পারে সেটা ভুলেই গিয়েছিলাম আমি।আরমান দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওভাবেই খাবার খাচ্ছেন উনি।যাক!গায়ে মাখেন নি আমার কথা!মামার দিকে তাকিয়ে বললাম,

-তো তাই বলে আইনবিরোধী কাজ সমর্থন করতে হবে?

-কিছু করার নেই।লোকটার তেমন সহায়সম্বল বলতে কিছুই নেই,তার উপর মাতলামি করতে করতেই দিন যায়।মেয়েটাই ওর একমাত্র পিছুটান।আমার মতে বিয়েটা হয়ে গেলে ওউ বাচবে,মেয়েটাও কিছুটা রক্ষা পাবে।

কথাগুলো সত্য।তবুও এসব শুনে নিজের চুল নিজে ছিড়তে ইচ্ছা করছে।কাল সারাদিন ওর খবর নেই নি,অন্তত যোগাযোগ হলে এটা তো জানতে পারতাম ও কি চায়!ওর বাবা ওকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে কি না।রাহাত বললো,

-ওয়াহ্!ভালোই হলো।মিথি আপু তো কালই চলে যেতে,যাওয়ার আগে শিমুল আপুর বিয়েটাও খাওয়া হয়ে যাবে।

একপলক আরমানের দিকে তাকালাম।রাহাতের কথায় তার রিয়্যাক্ট করার কথা ছিলো কি?কিন্তু উনি তো চুপ!কোনো ভাবান্তর না দেখে ভালোই হয়েছে বলে নিজেকে বোঝালাম।মামী বললো,

-তাহলে আমরা কখন যাচ্ছি?

মামা খেতে খেতেই বললেন,

-অনুষ্ঠান তো বিকেলে।

এই রে!বিকেলে গেলে শিমুলের মত শোনার আর সে অনুযায়ী স্টেপ নেওয়ার সময় কম পাবো।নাহ্!আগে আগেই বেরোতে হবে আমাকে।মামাকে বলতে যাবো তখনই,

-আই থিংক মিথির আগেই গিয়ে ওর পাশে থাকা উচিত।যতই হোক,মিথির সাথে তো বেশ ভাব ওর।

চোখ বড়বড় করে আরমানের দিকে তাকালাম।খাবার তো স্বাভাবিকভাবেই খাচ্ছেন উনি!তাহলে আমার কথার সাথে মিল রেখে কথা বলার মতো অস্বাভাবিক কাজ কেনো করছেন?মামা বললেন,

-হুম,কথাতো ঠিকই বলেছো তুমি আরমান।মিথি,তুমি কি বলো?আগেই যেতে চাও?

আমি খুশিতে হ্যা সুচক মাথা নাড়লাম।মামা বললেন,

-বেশ!পাঁচ মিনিটের পথ,তুমি চলে যেও।আমরা বিকেলেই যাবো।

লাফিয়ে উঠে বললাম,

-থ্যাংকস্ মামা।

-ঠিকাছে ঠিকাছে।বাট ইউ নিড টু মেক শিওর তুমি শিমুলের বাড়ি ছাড়া আর কোথাও যাচ্ছো না।এটুকো এশুরেন্স দিচ্ছো?

জানিনা শিমুলের বিয়ে নিয়ে কি মত!এটা সম্পুর্নই ওর কথার উপর ডিপেন্ড করছে।তবুও হ্যাঁ না বললে মামা বেরোতে দিবেন না তাই মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালাম।আরমান সরু চোখে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে খাবার খেতে লাগলেন।ব্রেকফাস্ট শেষে রুমে এসে ভাবতে লাগলাম কি হলে কি করবো!

চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছে রিয়া।কাল রাস্তায় ফেলে আসা ফাইলটাতে ওর সব কাগজপত্র ছিলো।বাসায় আসার পর মনে পরতেই আবারো সেই স্টপেজে গিয়েছিলো ও।কিন্তু পায়নি।ওখানকার ট্রাফিক পুলিশ,কাছের থানায় ডায়রি করেও এসেছে।এখনো অবদি কোনো খবর মেলে নি।সকালে তিনবার থানায় ফোন করেছিলো ও।অফিসার শেষবার ধমকে বলেছেন পাওয়া গেলে ওনারা নিজে খবর দিতে ফোন করবেন,রিয়া যেনো আর ফোন করে ডিস্টার্ব না করে।কপাল ধরে সোফায় বসে আর কি করতে পারে ও তাই ভেবে চলেছে ও।ওভাবে চিন্তা করতে দেখে ওর বাবা কবির রহমান বললেন,

-এতো বেশি ভেবো না।ফাইলটা যার কাছে আছে সে হয়তো এখনো বুঝে উঠতে পারেনি কি করবে ওটা।একটু পরেই দেখবে থানায় পৌছে দিবে।

একপলক বাবার দিকে তাকিয়ে আবারো চিন্তায় মশগুল হয়ে গেলো রিয়া।এরমধ্যেই ওর ফোনটা বেজে উঠলো।সেইভড্ নাম্বার।অফিস রিসেপশন লেখা।এবার তো এরা বলবে কাগজপত্র নিয়ে যেতে,কি হবে এবার?কি আর হবে?বলে দিতে হবে যে চাকরি করবো না আমি।এসব ভেবেই একটা জোরে শ্বাস নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো রিয়া।

-হ্যালো,মিস রিয়া?

-জ্বী বলছি।

-আপনাকে এমডি স্যার ডেকেছেন আজ।ঠিক সময়মতো চলে আসবেন কিন্তু!

-সরি,আমি আসছি না।

-মানে?

-দেখুন,আমি চাকরিটা করবো না।

-কেনো?সবকিছু তো কনফার্ম,কি সমস্যা?

-একচুয়ালি,আমার যে কাগজপত্রগুলো আজ লাগবে সেগুলো কাল রাস্তায় হারিয়ে গেছে।ওগুলো জমা দিতে না পারলে তো…

-ইটস্ ওকে,আপনি এসে স্যারের সাথে দেখা করে যান।কাগজগুলো এই মুহুর্তে অতোটা ম্যাটার করে বলে আমার মনে হচ্ছে না।আপনি আসুন।কেমন?

কান থেকে ফোন নামিয়ে একবার ফোনটা দেখলো রিয়া।আবারো কানে ধরে বললো,

-জ্বী ঠিকাছে।আসছি আমি।

ফোনটা কেটে দিয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলো রিয়া।খুব বেশি দুরে না ওর অফিস।রিকশা করে ওখানে পৌছাতেই সামনে একটা সাদা গাড়ি দাড় করানো দেখলো।ভাড়া চুকিয়ে ভেতরে পা বাড়াতেই কেউ বললো,

-এইযে মিস!

রিয়া পিছন ঘুরে দাড়ালো।গাড়ি থেকে ইন করা মেরুন শার্ট,কালো প্যান্ট,কালো সানগ্লাস পরে আদিব বেরিয়ে আসলো।সানগ্লাসটা খুলে রিয়ার দিকে এগিয়ে আসলো আদিব।এতোক্ষন ওরই জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছিলো ও।হাতে রিয়ার সেই ফাইল।রিয়া ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে আদিবের দিকে।আদিব শার্টের কলারটা ঝেড়ে বললো,

-হায় গারমি!

কথাটা শুনেই মেজাজ চড়ে গেলো রিয়ার।উল্টোদিক ঘুরতে যাবে তখনই‌ওর চোখ গেলো আদিবের হাতে থাকা ফাইলটার দিকে।ক্লিন ফাইল,ওরই কাগজপত্র রাখা ওতে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে।ছো মেরে ওটা কেড়ে নিয়ে রাগী গলায় বললো,

-একজনের এতো ইম্পোরটেন্ট কাগজপত্র হাতে পেয়ে ফেরত দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলেন না?

আদিব পুরোই বোকা বনে গেছে।ও ফেরত না দিলে ফাইলটা রিয়ার হাতে কি করে গেলো সেটাই ভাবছে ও।

-কি হলো বলুন?আপনি জানেন না এই কাগজগুলো কারো জন্য কতোটা নেসেসারি?আর..

আদিব হাত দিয়ে রিয়াকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

-ওয়েট আ মিনিট!আপনি ভুলে যাচ্ছেন ফাইলটা আমার কাছ থেকেই আপনার হাতে গেলো সবেমাত্র!

রিয়া একটু থামলো।তারপর আবারো বললো,

-ত্ তো কাল যখন পেয়েছিলেন পুলিশের কাছে দেননি কেনো?ওখানে জিডি করা আছে আমার।

-আজব তো?আমার আর কোনো কাজ নাই?আপনার ফাইল নিয়েই সারাদিন ঘুরবো নাকি?

রিয়া এবার দমে গেলো।এমনটা খুব কমই হয় যে রিয়া যুক্তিখন্ডন করতে ব্যর্থ হয়।লোকটা মিথ্যে বলেনি।তারও নিজস্ব কাজ আছে।মাথা নিচু করে বললো,

-সরি।আসলে একটু বেশিই টেন্সড্ ছিলাম,তাই ওভাবে বলে ফেলেছি।

আদিব কান এগিয়ে দিয়ে বললো,

-হোয়াট হোয়াট?সরি?আপনি সরিও বলতে পারেন?

-কেনো বলুনতো?

-না মানে কাল যখন আপনি আমার ব্যাগ থেকে ওভাবে বোতলটা নিয়ে নিলেন,একপ্রকার ছিনতাই করে,তখন সরি এক্সপেক্ট করেছিলাম।

-বাচ্চাটা কাদছিলো,ওকে পানি খাইয়ে শান্ত করলাম,আর আপনি আমাকে ছিনতাইকারী বলছেন?

আদিব জোরে হাসলো।বললো,

-আরে ম্যাডাম রেগে যাচ্ছেন কেনো?কিডিং!আসলে কাল আজ দুটো ঘটনার জন্যই সরি না বলে থ্যাংকস্ বললে বেশি ভালো হতো না?

রিয়া বেশ অবাক হলো।লোকটা অদ্ভুতভাবে কথা দিয়ে সবটা ম্যানেজ করে নিচ্ছে।তার কথার মাঝেই যেনো সম্মোহনী শক্তি রয়েছে।আদিব তুড়ি বাজিয়ে বললো,

-হ্যালো?থ্যাংকস্ চেয়ে নিচ্ছি ভেবে আবার ছেচড়া ভাবছেন নাকি আমাকে?

রিয়া হেসে দিলো,সাথে আদিবও।এরপর রিয়া বললো,

-থ্যাংকস্,সিচুয়েশনে পরে…

আদিব দুহাত জোড় করে বললো,

-মার্জনা করুন।থ্যাংকস্ চেয়েছিলাম,এক্সপ্লেনেশন নয়।মেয়েরা নাকি একবার বলতে শুরু করলে আর থামে না।এন্ড ট্রাস্ট মি,এখন আমার সত্যিই অতো সময় নেই হাতে।

রিয়া একটু সরু চোখে আদিবের দিকে তাকালো।আদিব হেসে বললো,

-মজা বোঝেন না আপনি।মজা করে বেশ মজা পাই।এনিওয়েজ,চলুন যাওয়া যাক?

রিয়া বিস্ময় নিয়ে বললো,

-আপনিও এই অফিসে?

-ইয়াহ!

দুজনে একসাথে এগোলো।রিয়া আর আদিব একসাথেই যাচ্ছিলো।দাড়োয়ান থেকে শুরু করে প্রায় প্রত্যেকটি স্টাফ আদিবকে সালাম দিয়ে গুড মর্নিং বলছিলো।আদিব যে অফিসের উচ্চপদস্থ এম্পল্য়ি তা বুঝলো রিয়া।হাটতে হাটতে আদিবকেই দেখছিলো ও।লোকটা সবার সাথেই অনেক ফ্রি লি কথা বলছে,যা রিয়ার বেশ ভালো লেগেছে।একজায়গায় এসে থেমে গিয়ে আদিব রিয়াকে বললো,

-হেয়ার ইজ ইউর ডেস্ক।ওয়েট হেয়ার।

রিয়া ওর ডেস্কে বসতে বসতে বললো,

-হুম।থ্যাংকস্ ওয়ান্স এগেইন।

-মাই প্লেজার।

কথাটা বলে আদিব নিজের কেবিনের দিকে পা বাড়ালো।পাশের ডেস্ক থেকে একটা মেয়ে মাথা উচিয়ে বললো,

-নতুন?

রিয়া বললো,

-জ্বী।

-কি নাম?

-রিয়া।

-নাইস নেইম।আমি রাইশা।রুশা বলে সবাই।

-আপনার নামও সুন্দর।

-আপনি বলতে হবে না।তুমিই বলো।বাই দ্যা ওয়ে,কোন প্রজেক্ট?

-আসলে আজ আমাকে শুধু এপোয়েন্টমেন্ট লেটার কালেক্ট করতে আসতে বলা হয়েছে।

-কিহ?তাহলে এখানে কি?ওটা তো এমডি স্যারের কেবিনে।এখানে তো প্রজেক্টে ইনভল্বড্ স্টাফরা বসে।

রিয়ার এবার অদ্ভুত লাগছে।লোকটা তো ওকে এখানেই বসিয়ে দিয়ে গেলো।ওউ বোকার মতো বসে পরলো?নিজের উপর রাগ হচ্ছে ওর।উর্বি বললো,

-মাহির স্যারকে চেনো?

-না তো।

রুশা একটু চিন্তার ভাব ধরে বললো,

-তাহলে…?আচ্ছা,এক কাজ করো,সোজা গিয়ে বা দিক চলে গেলেই দেখবে এমডি স্যারের কেবিন।তুমি ওখানে গিয়ে স্যারকে বলে লেটারটা নিতে পারো।

ঠিকই বলেছে মেয়েটা।রুশাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিয়া হাটা লাগালো এমডি স্যারের কেবিনের দিকে।দরজায় দুবার নক করতেই কেউ বলে উঠলো কাম ইন।দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই রিয়া চক্ষুচড়ক গাছ!

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here