হৃদমাঝারে শুধুই তুই পর্ব -১১

#হৃদমাঝারে_শুধুই_তুই
#লেখনীতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-১১

আমার রুমের দরজা লাগিয়ে সেটাতেই পিঠ ঠেকিয়ে বাকা হাসছেন আরমান।একরাশ রাগ ড্রেসিং টেবিলের সামনের মোড়ায় বসে ফুসছি আমি।কিছুক্ষন আগে তার হাতের আঙুল থেকে ওড়না ছাড়াতে গিয়ে আধমরা হয়ে গেছি আমি। কি পেয়েছে কি লোকটা?আমিতো ওনাকে বলেই দিলাম ভালোবাসিনা ওনাকে আমি।তবুও এমন কেনো করছেন উনি।সেই এক কথা নিয়ে পরে আছেন,আমি তাকে ভালোবাসি সেটা নাকি বুঝতে পারছি না তাই স্বীকার করছি না।তাই বলে বারবার এরকম অস্বস্তিতে ফেলতে হবে আমাকে?বারবার এভাবে কাছে চলে এসে কি বোঝাতে চান উনি?

-এতো সহজে,এভাবে আম্মু আরুর সাথে দেখা করতে দিবো না তোমাকে!

আয়নাতেই তাকে দেখা যাচ্ছে।উনি আবারো সেই বিখ্যাত বাকা হাসি হেসে কথাগুলো বললেন।

-হ্ হোয়াট রাবিশ?বললেই হতো,আমিই বাইরে যেতাম না।আমারো ইচ্ছা নেই আপনার ফ্যামিলির কারো সাথে মিট করার!

-তাই নাকি?আই ডোন্ট ট্রাস্ট ইউ!

-আপনার নিজস্ব মতবাদে কিছু যায় আসে না আমার।বেরোতে দিন।

-চেষ্টা করে দেখতে পারো।

এটা আমার দ্বারা এখন সম্ভব না,আমি জানি।অন্তত ওনার সামনে থেকে তো নয়ই। ছোট একটা শ্বাস ফেলে বললাম,

-তাই বলে রুমে লক করে দিবেন?

-শুধু কি তাই করলাম নাকি?স্পেশাল টাইম স্পেন্ড করবো বলে নিজেও ঢুকে পরলাম তো!তোমাকে তোর আর নিজের সাথে বাধতে পারছি না এখনই,ভাবলাম আঙুলে ওড়না গিট দেই।

-দেখুন,আপনি এ বাসার গেস্ট,তাই এখনো,,,

-উম উম উম উম!ওসব বাহানা তো একদমই দিবা না তুমি।মানায় না তোমাকে।আসলে কি বলোতো,তুমি আমাকে কিছু বলতেই পারো না,কোথাও লাগে তোমার।অ্যাম আই রাইট?

এই কথাতেই আটকে গেলাম।কথা ঘোরাতে বললাম,

-ক্ কে বলেছে আমি তাদের সাথে দেখা করতে না পেরে অক্সিজেনহীনতায় ভুগছি?

আরমান ভ্রুকুটি করে বললেন,

-মানে?

-মানে আমি কি আগ বাড়িয়ে যাচ্ছি আপনার আম্মুর সাথে দেখা করতে?

-না তা যাচ্ছো না।তবে শামীমা আন্টি তো ভিডিও কলে কথা বলছে আম্মুর সাথে,আরুও ওখানে আছে।এখন আম্মু তো তার পুরোনো সখির ফ্যামিলির সবাইকে দেখতেই চাইবে তাইনা?

-তো?

উনি আমার কথাকে ভেঙচিয়ে বললেন,

-তো?তো তোমাকেও দেখাতো তখন শামীমা আন্টি।আর তুমিও তার কথাকে মানা করতে পারতে না।ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে যেতে দর্শন দিতে।

ওনার ভাষা শুনে কপাল আরো কুচকে এলো আমার।উনি নাকি সাংবাদিক?তাহলে তো উচ্চশিক্ষিত হবেন।এভাবে আমার কথাকে ভেঙচালেন কেনো?আর এমন ভাষায় কথা বলছেনই বা কেনো আমার সাথে?

আরমান ভ্রু নাচিয়ে বললেন,

-কি গো?আবার বলো না শেষমেষ আমার এই স্টাইলে কথা বলার প্রেমে পরে গেছো!

সরু চোখে তাকালাম তার দিকে।উনি একটু শব্দ করেই হেসে বললেন,

-ইউ নো হোয়াট?যদি তুমি আমার সাথে শিমুলদের ভাষায় কথা বলতে পারো,আমিও এভাবে কথা বলতে পারি।ইজ ইট আ হিউজ ফ্যাক্ট?

মুখ ঘুরিয়ে নিলাম আমি।কথা বলতে ইচ্ছা করছে না আমার।কথা মানেই ঝগড়া।বেরোতেও পারছি না।

-বেরোতে দেবোও না এখন।

একটু অবাক হয়ে আবারো পাশ ফিরলাম।মনের কথা বুঝে যায় নাকি এ?সোজাভাবে বললাম,

-দেখুন,আমি মোটেও আপনার আম্মুর সামনে যেতাম না।আপনার সামনে পরেছিলাম বলে এখনো অবদি পস্তাচ্ছি!

উনি হু হা করে জোরে হেসে উঠলেন।বললেন,

-পস্তাচ্ছো?

-তা নয়তো কি?

-দেখাটা না হলে এখন এভাবে রোমান্স করতে কার সাথে হুম?ইউ শুড বি থ্যাংকফুল টু মি।

-রোম্….!

উনি আমাকে বলতে না দিয়ে বললেন,

-ফরগেট ইট!আসলে কি বলোতো,তুমি না গেলেও তোমার মামী তো ছাড়তো না।আমি চাইনা আম্মু তার বউমা এভাবে দেখুক।

-হেই!কারো বউমা টউমা নই আমি।আপনি মুখ সামলে কথা বলুন।

উনি নিজের ঠোটে আঙুল দিয়ে স্লাইড করাতে করাতে এগুলেন আমার দিকে।বললেন,

-ট্রাস্ট মি,অতি কষ্টে এখনো অবদি সামলেই রেখেছি।

আমি দাড়িয়ে গেলাম।ওনার ভাব আমার মোটেও ভালো লাগছে না।বললাম,

-দ্ দেখুন!মামী বাইরেই আছে,রাহাতও।আর মামাও যখন তখন চলে আসবেন।আ্ আপনি বেরোন আমার রুম থেকে।

-শুধু এগুলোই তোমার প্রবলেম?তাছাড়া নিজস্ব কোনো কারন নেই আমাকে তোমার কাছে না আসতে দেওয়ার?

কি বলবো?উনি কাছে আসলে যে দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়,হার্টবিট বেড়ে যায়,শরীর কাপতে থাকে এগুলো বলবো?এগুলোতো বাংলা সিনেমার নায়িকাদের কাহিনী!আমার সাথে এসব কেনো ঘটে?নাহ্!এতো বেশি ভাবছি কেনো আমি?আয়নায় তাকিয়ে দেখলাম আরমান থামেন নি।এগোতেই লাগলেন।একটা দম নিয়ে পাশ কাটিয়ে দৌড়ে যেইনা দরজা খুলতে গেছি উনি পিছন থেকে হাত ধরে ফেললেন আমার।বড়বড় চোখ করে পিছনে তাকালাম।উনি ঠোট টিপে হেসে বললেন,

-ভয় করছে?

আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম।জোরে জোরে শ্বাস ফেলছি।বললাম,

-দ্ দেখুন,আমি চেচাবো।

উনি একটানে আমাকে রুমের মাঝখানে দাড় করিয়ে নিজে আবারো দরজার সাথে দাড়িয়ে গেলেন।এক পা‌ ভাজ করে দরজায় লাগিয়ে কপালটা একটু চুলকে বললেন,

-সাউন্ডপ্রুভ রুম বোঝো?

অসহায়ভাবে তাকালাম ওনার দিকে।উনি ওভাবেই মুচকি হেসে বললেন,

-রাহাত জানে তুমি চেচালে ওর কি করনীয়,শুনতে পেলেও লাভ হতো না।তোমার মামা ফেরেনি।মামী কানে হেডফোন গুজে দুনিয়ার সব কথা আম্মুর কাছ থেকে কানে উঠাতে ব্যস্ত।নাও?

লোকটার যুক্তি দেখে ভয়টা বাড়লো আমার।বারবার মনে হচ্ছে অন্যসময়,অন্য যে কেউ হলে তাকে দু মিনিটে শায়েস্তা করতে পারতাম আমি।তবে আজ কেনো নয়?কেনো উনার সাথে নয়?আরমানের দুষ্টু হাসি বেশ বুঝতে পারছি আমি।একপা দুপা করে পিছিয়ে গেলাম।উনি ওভাবেই এগোচ্ছেন।একসময় বেডের সাথে পা লেগে বেডেই আধশোয়া হয়ে পরে গেলাম।আরমান আর আমার মাঝে দুরুত্ব খুব একটা বেশি নয়।উনি এগিয়ে এসে আমার দিকে একদম ঝুকলেন।চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম আমি।বুকের ভিতরটায় যেনো ঝড়ো হাওয়া বইছে।হাত দিয়ে ধাক্কিয়ে ওনাকে সরিয়ে দেবো,ঘর থেকে বেরিয়ে যাবো এমনটা মস্তিষ্কে জানান দিচ্ছি বারবার।কিন্তু সে হাত যে বিছানার চাদর খামচে ধরে রেখেছে।

নিজের উপরে যেনো কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছি আমি।আরমান আমার কপালের চুলগুলো কানে গুজে দিলেন।ওনার স্পর্শে শরীরে আবারো বিদ্যুৎ খেলে গেলো।নিজেকে শক্ত করে এবার ওনাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম।তখনই দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ কানে এলো।চোখ মেলে দেখলাম আরমান সরে গিয়েছেন বেশ কিছুদুর।ঠোট কামড়ে হাসিটা আড়াল করে বললেন,

-ভয়ার্ত মিথি!সচরাচর যা চোখে পরে না।লাভড্ ইট!

আমি দম নিলাম কিছুটা।এবার ওনাকে ইচ্ছামতো শুনাবো।

-আপনি…..!

আবারো দরজায় ঠুকঠুক আওয়াজ।আরমান ঠোট উল্ঠে বললেন,

-তোমার সুশ্রাব্য প্রেমকথন শোনার সময়টুকো দিলো না এই শালা আইমিন শালাবাবুটা।সিগনাল দিচ্ছে,ওর আম্মুর কথা শেষ মেবি।এখন আসি।বাই!

উনি দরজা খুলে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন।আর আমি বরাবরের মতো মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলাম।এই লোকের জ্বালায় এ বাসায় থাকা দায় হয়ে পরেছে আমার।একমাত্র ঢাকায় ফিরতে পারলে তবেই শান্তি।নইলে এভাবেই জ্বালিয়ে মারবে আমাকে।মামী তার বান্ধবীর ছেলেকে নিয়ে সেন্সিটিভ বলে ওনাকে কিছু বলতেও পারছি না।আবার অন্য কারো কাছে বলবো?বিশ্বাস করবে আমাকে?যা সাধুবেশে আছে!ভাববে আমি ওনাকে পছন্দ করি না বলে বানিয়ে বলছি।কিই বা বলবো সে চিন্তা তো আছেই!সত্যিই কি এগুলোই ওনাকে দুরে না সরানোর কারন?নাকি ওনার কাজে ভালোলাগা শুরু হয়েছে আমার?চাইনা আমি এই মুহুর্তগুলো হারিয়ে যাক?তবে কি আমি….

রিল্যাক্স মিথি!রিল্যাক্স!এগুলোই কারন।আর একটা দিনেরই তো ব্যাপার।সহ্য করে নে,পরদিন তো চলেই যাবি।এসময় আর ঝামেলা করিস না,লোকটার থেকে দুরে থাকলেই তো হলো!!!হ্যাঁ,তাই করবো।আর যাবোই না ওনার সামনে।উনি ঝগড়া করতে আসলেও আমি ঝগড়া করবো না।জবাব দিবো না।তাহলেই হবে।হবে তো???

প্রখর রোদে উত্তপ্ত ঢাকার ব্যস্ত পথ।দুপুরের কিছুটা পরও হেলে যাওয়া সুর্যের রোদটা যেনো আরো বেশি তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। গাড়িগুলো থমকে আছে জ্যামে।কিছুক্ষন আগ অবদিও রাস্তাটা বেশ স্বাভাবিকই ছিলো।হুট করে কিসব পুলিশি তলবের জন্য গাড়ি আটকে দেওয়ায় জ্যাম পরেছে প্রচুর।পাশের ফুটপাতে বরফি,মালাই বিক্রেতার হাকডাক,ডাব বিক্রেতার হাত চালানোর ছন্দের সাথে দা এর খ্যাচখুচ শব্দ,আর রাস্তার গাড়ির ননস্টপ হর্ন গরমের মাত্রাকে যেনো আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।রিকশাটা জ্যামে আটকে ছিলো,বিরক্ত হয়ে ফুল ভাড়া দিয়েই ফুটপাতে দাড়িয়ে পরলো রিয়া।অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত ও,রিকশায় আরো বেশি গরম।তাই ফুটপাতে গাছের ছায়ায় দাড়ানোই বেটার মনে হলো ওর।

চাকরিতে জয়েনিং ডেট আরো দুদিন পর।কিন্তু সেদিনই নাকি নতুন কোনো প্রজেক্টের অর্ডার কমপ্লিটের লাস্ট ডেট,সবাই ব্যস্ত থাকবে।তাই‌ অফিসের রিসেপশন থেকে কল করে ওকে কালকের মধ্যেই এমডির কাছ এপোয়েন্টমেন্ট লেটার কালেক্ট করতে বলেছে।এমডি নাকি নিজেও নেই অফিসে,দুপুরের পর পৌছাবেন।তাই দুপুরেই ওকে কল করে জানানো হয় কিছু কাগজপত্র জমা দিয়ে এপোয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে আসতে।বাসায় লান্চ শেষে সবে ভেবেছে মিথিকে কল করবে,তখনই ফোনটা এসে মেজাজ হ্যাং করে দিয়েছে ওর।

ফুটপাতে দাড়িয়ে মনে মনে হাজারটা গালি দিচ্ছে ও সেই এমডিকে।এমনও হয়?চাকরি কনফার্ম করার পর থেকেই এতো প্যারা?যদিও চাকরিটা নিতান্তই শখের বশে নিয়েছে ও,তবুও মেনে নিলো ও সবটা।চাকরি বাকরির ব্যাপারে ধৈর্য্য ধরতে শেখা অনেক জরুরি।বেরিয়েছিলো মিথির জন্য গিফট্ কিনতে,কাল দিনটা পরই আসবে ও।এদিকে ওর কাগজগুলো ফটোকপি করানোও দরকার ছিলো।বাসার একটু দুরের দোকান থেকে কাজ শেষ করে রিকশা করে বাজরের দিকে যাচ্ছিলো ও।জ্যামটাও এখনই পরতে হবে।ধ্যাৎ!!!মনে মনে কথাগুলো আওড়ে আবারো রাস্তা ফাকা হলো কিনা দেখার জন্য উকিঝুকি দিতে থাকলো রিয়া।

সকালে খাবার খেয়েই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় চলে এসেছে আদিব।অফিস থেকে ফোন করেছিলো।আফরোজ জামান নিজেও ফোন করেছিলো ওকে।তার ভাষ্যমতে আরমান এখনো অতোটাও ছোট নয় যে ওর হাত ধরে ধরে আদিবকে চট্টগ্রাম দেখাতে হবে।আদিবকে ছাড়া অফিস অচলই বলা চলে।তাইতো কাজগুলো এই লাস্ট মুহুর্তে এসে আটকে গেছে।তবুও আসতে চায়নি ও।কিন্তু আরমান যখন নিজেই চলে আসতে বললো,আর জেদ করেনি।এমনিতেও মিথিকে পেয়ে এক বাসাতেই রয়েছে ও।তাই ওকেও কিছুটা স্পেস দেওয়া দরকার বলে বেরিয়ে এসেছে ও।

ঢাকায় পৌছে আগে সোজা অফিস যাবে বলে ঠিক করে নেয় আদিব। গাড়ি থাকা সত্ত্বেও আরমানের সাথে ওর শখ পুরন করতেই বাসে চিটাগাং গিয়েছিলো দুজনে।আরমান বলেছিলো গাড়ির কথা।আরমানদের বাসা থেকে ওর বিলাসিতার জন্য সবরকমের ব্যবস্থা করা থাকলেও ও বেশিরভাগ সময়ই সেগুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।তাই ইচ্ছে করেই বাসে করে ফিরেছে ও।কিন্তু কথা হলো বাসটা অফিস অবদি যায় না।তাই লোকাল বাসেই উঠতে হবে ওকে।গলায় বাধা টাইটা ঢিল করে দিয়ে এসে দাড়ালো বাস স্টপেজে।

রিয়া পাশেই দাড়িয়ে ছিলো।তবে কোনোদিকে সেরকম না তাকিয়ে শুধু রাস্তা কখন ফাকা হবে সেইটাই ভাবছে। প্রথম দিনেই তো আর আইডি কার্ড দিবে না ওকে।অফিসে গিয়ে আবার কোনো ঝামেলা না হয় তাই এপোয়েন্টমেন্ট লেটার থাকা জরুরি,আর তারজন্য কাগজপত্র জমা দেওয়া জরুরি।হাতের ফাইল থেকে দুটো কাগজ বের করে চেক করে নিচ্ছিলো ও।

স্টপেজে পাশেই একটা বেঞ্চে বসে এক মহিলা তার বাচ্চাকে বাতাস করছে।বাচ্চাটারও‌ গরমে অবস্থা খারাপ।আচমকাই বাচ্চাটা কান্না শুরু করে দিলো।চিৎকার শুনে রিয়া একপলক তাকালো সেদিকে।বাচ্চাটা আরো বেশি করে কাদছে এখন।বাচ্চার কান্না সহ্য হয় না রিয়ার। তাড়াতাড়ি গিয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিলো ও।বাচ্চার মায়ের হাতে ওর ফাইলটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,

-আপনি বাতাস করুন।

মহিলাটা তাই করতে লাগলো।রিয়া বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে এদিক ওদিক একটু হাটতেই কিছুটা শান্ত হলো।তাই আর ওর কাছ থেকে নিলো‌ না।

-এক্সকিউজ মি,পানি হবে?

আদিব হাতের পিঠে কপালের ঘামটা মুচছিলো।আওয়াজ পেয়ে পিছনে তাকিয়ে রিয়াকে দেখতে পেলো ও।উজ্জল ফর্সা গায়ে হালকা রঙের একটা থ্রিপিস।রঙটা নীল আর সবুজের মাঝামাঝি একটা রঙ।খুব শালীনভাবে ওড়না জরানো,হিজাব বাধা।সারা শরীরে রোদ লেগে জামার রঙটাকে আরো উজ্জল করে দিয়েছে।কিন্তু মুখে স্টপেজের ছাউনির ছায়া পরেছে।তবুও কপাল জুরে বিন্দু বিন্দু ঘাম।সেই ঘর্মসিক্ত কপাল কুচকে মেয়েটা ব্যস্ত হয়ে বাচ্চাটাকে ঝাকাচ্ছে,নাচাচ্ছে।রিয়া মাথা না তুলে বাচ্চার দিকে তাকিয়েই বললো,

-কি হলো?দিন না।

আদিব তখনো চুপ।রিয়া বিরক্তি নিয়ে সোজা আদিবের কাধে ঝুলানো ব্যাগের দিকে তাকালো।ওখানে বোতল ভর্তি পানি।ওটা ও নিজেই হাত দিয়ে নিয়ে বাচ্চাটাকে খাইয়ে দিলো,বাচ্চাটা একদম চুপ হয়ে গেলো কিছুক্ষনের মধ্যেই।ওকে ওর মায়ের কাছে দিয়ে দিলো রিয়া।মায়ের কোলে হাসছে এখন সে।মুগ্ধ নয়নে তাই দেখছে রিয়া।ওদিকে ওকে দেখে কেউ তার সবটা ভুলে যাচ্ছে।বাচ্চাটার দিকে তাকিয়েই হাত বাড়িয়ে বোতলটা আদিবের দিকে এগিয়ে দিলো রিয়া বললো,

-নিন।

আদিব এতোক্ষন কোনো ঘোরে ছিলো যেনো।আশেপাশে তাকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।যে মেয়েটা ওর দিকে একবার তাকানোও প্রয়োজন মনে করলো না,তাকে দেখেই এভাবে নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছে ও।ছিহ্!হাত বাড়িয়ে পানির বোতলটা নিলো‌ ও।রিয়ার এতোক্ষনে মনে পরলো কারো ব্যাগ থেকে একপ্রকার জোর করেই পানি নিয়েছে ও।কিন্তু সে লোকটাই বা কেমন?বাচ্চার কান্না শুনেও পানি দিলো না।এসব ভেবেই একপলক তাকালো আদিবের দিকে।

সরু চোখে আদিবকে আপাদমস্তক দেখে নিলো রিয়া।ইন করা সাদা শার্ট কালো প্যান্ট,ঘামে ভেজা চুল,হাতে সাদা একটা ব্রান্ডেড ঘড়ি।কাধে ব্যাগ।দেখে বোঝাই যাচ্ছে বেশ বড়লোক আর ভদ্র ঘরের ছেলে ফর্মাল ড্রেসে লান্চ ব্রেকে লান্চ শেষ করে আবারো অফিস ফিরছে।রিয়া কিছু বলার আগেই দেখলো রাস্তা ফাকা হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।কথা না বারিয়ে সামনে দাড়ানো রিকশায় উঠে চলে যায় ও।

ঠায় হয়ে দাড়িয়ে ছিলো আদিব।মেয়েটার কি এটা অহংকার ছিলো?দেমাগ দেখালো আমাকে?পানি নিলো নিজে হাত দিয়ে নিয়ে থ্যাংকস্ সরি কোনোটাই বললো না?এতে কি ওকে অপমান করা হলো না?এসব চিন্তা করে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নিলো ও।লোকজন তেমন নেই।সামনে তাকাতেই আদিবের মনে পরলো ওর বাসটাই মাত্র ছেড়ে চলে গেছে।শিট ম্যান!বলে মাটিতেই একটা লাথি মারলো।আজ ওর জন্য অফিসে ওয়েট করছে সব,ইভেন নতুন স্টাফরাও।দেরি করে গেলে ব্যাপারটা বাজে দেখাবে আর ওকে সবাই ইরেসপন্সিবল ভাববে।ধুর!

সব এই মেয়েটার জন্য হলো।না ও থাকতো এখানে,না পানি চাইতো,না বোতল নিতো,না ওর কথা আদিব ভাবতো,না তখন ওর বাস মিস হতো!কিন্তু দোষটা কি ওরই?ওই কি নিজের ইচ্ছায় মেয়েটার কথা ভাবছিলো না?কিভাবে বাচ্চাটার সাথে আনন্দে ছিলো মেয়েটা।কান্নাও থামিয়ে দিলো!আচ্ছা,ওর নামটাও তো জানা হলো না।হুহ!নুন্যতম ধন্যবাদ দেওয়ার সময় করলো না যে সে আবার নাম বলবে!

-ইশ্!মেয়েটা তো ওর ফাইল আর কাগজপত্র রেখেই চলে গেলো!

আদিবের ভাবনায় আঘাত হানে পাশে থাকা সেই বাচ্চার মা।আদিব ধীর পায়ে গিয়ে ফাইলটা হাতে নিলো।মহিলাটা বললো,

-ভাইয়া,আপনি একটু কাইন্ডলি এটা ট্রাফিক পুলিশকে বা পুলিশ স্টেশন দিয়ে আসবেন?দেখছেনই তো,আমার বেবিটা ছোট।আর গরমে কান্নাও করছে।আপনি যদি….

-পৌছে দেবো।

নির্বিঘ্নে কথাটা বলে দিলো আদিব।মহিলাটা কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলো।পরের বাস আসতেই চলেও গেলো।ফাইলটা হাতে করে বাসে উঠলো আদিব।সিটে গা এলিয়ে দিয়ে ফাইলটা খুলতেই মুখে হাসি ফুটলো ওর।

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here