হৃদমাঝারে শুধু তুমি পর্ব ১৫ ও শেষ পর্ব

#হৃদমাঝারে_শুধু_তুমি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট:১৫(অন্তিম পর্ব)

বিথী:ছোট মনি!তোমার মেয়ে বলছে সাজবে না।এটা কোনো কথা?

তনয়া:আপুর সাথে এক গাদা ছবি তুলবো,তুলে ফাহিমা আর মুন কে দিবো। আর উনি বলে মেক আপ করবে না।মেক আপ না করে কি কাজের বেটির মত বিয়ে করবে নাকি?

অরিনের মা:অরিন এগুলো কি?আয় রেডী হো।সময় নেই ।

মেজো মনি: হ্যাঁ,বিথী তুই ও আয়!!

বড় মনি: কইরে অরিন,আয়!

অরিন জাস্ট কল্পনা করছে,সবাই মেক আপ নামক অস্ত্র নিয়ে তার দিকে তেড়ে আসছে।আর ভুত ওয়ালি ফেস নিয়ে বিয়ের আসরে গেলো।আদ্রিয়ান ওকে দেখা মাত্রই ভুত বলে মাটিতে বেহুঁশ হয়ে পড়ে রইলো।অরিন আবার দিল চিৎকার,

অরিন: ইম্পসিবল।

বলেই বিথীকে ঠেলে দিলো দৌড়।
বিথী:তনুর বাচ্চা ধর ওকে।
বলে আবারও ছুট।

মনের সুখে নিজের লুঙ্গি ধরে হাঁটছে রামু। অরিনের বাবার সাথে বেশ ভাব আছে বলে তাকে বিয়েতে ইনভাইট করা হয়েছে ।

রামু: বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ীর সামনে দিয়া
রঙ কইরা হাইট্টা যায়, ফাইট্টা যায়
বুকটা ফাইট্টা যায়
ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়!!
বলতে না বলতেই টুকুশ করে বাম কাঁধে বেশ জোড়ে ধাক্কা খেলো।

রামু: ও মা,আমার হাত!

অরিন:সরি নানু!!

বলে আবারও দৌড় ।অরিনের সাথে ধাক্কা লেগেছে রামুর।রামু আবার সামনে তাকাতেই বাম কাধে কেও ধাক্কা মারে ।

রামু:আমাগো!

বিথী:সরি দাদু।

বলেই অরিনের পিছনে দৌড়।

রামু:আর কেও বাকি আছে নি?
বলতে বলতে খেলো ধাক্কা,এবার আর হাতে নয় ,এমন ভাবে ধাক্কা খেলো যে বেচারা উল্টিয়ে পরে গেলো ।

রামু: ও মা গো আমার কোমর।

তনয়া:ওই বুইড়া বেটা দেখে হাঁটতে পারেন না।ধুর আপনার জন্য ওই আপুরে ধরতে পারবো না ।

রামু:বুড়ো কারে কও,মুই জোয়ান আছি।

তনয়া: ধুর,সর।যেই না চেহারা,আবার নিজেরে জোয়ান কয় সরেন!খবিশ একটা।
বলেই আবার দিল দৌড়।

রামু উপরে দুই হাত তুলে বললো,
রামু: হে খুদা,আমারে কোন দিক দিয়া বুইড়া লাগে।বয়স মাত্র পঁচিশ নাম দিছে মোর খবিশ।খোকার বয়সী বাচ্চার লগে এমন অপরাধ ধমমে সইবো না।
বলে সামনে ঘুরে হাঁটতে গিয়েই খেলো আবার ধাক্কা,এবার খেয়েছে পিলার এর সাথে।
রামু:শালার কপালটাই খারাপ,কেন যে বিয়াত আইলাম।মা গো,মুই চোখে দেখি না কেন? ওরে কেও ধর,বেহুঁশ!!

অরিন দৌড়ে নীচে নেমে এলো।তনয়া উপর থেকে হৃদিতা,মমি,আরিফা,লামিয়া আর সোহার উদ্দেশ্যে বললো,

তনয়া:আপিরা অরি আপুকে ধরো।উনি মেক আপ করবে না বলছে।

ব্যাস আর কি লাগে সবাই মিলে অরিনকে ধরতে ব্যস্ত হয়ে গেলো ।
হৃদিতা:আব্বে চুন্নি,বিয়ের সময় মেক আপ কেন করবি না?

অরিন:ওইসব ভুত সাজার শখ আমার নাই ।

লামিয়া:অরিন দাড়া বলছি।ধরতে পারলে খবর আছে!

অরিন:হাহ এই অদ্রি বিন অরিন কে ধরা, ইম্পসিবল!

বলতে না বলতেই কারো ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলো ।
অরিন: আও আমার কোমর ভেঙ্গে গেছে রে,এবার আমাকে কে বিয়ে করবে রে, ও মারে

আদ্রিয়ান:ড্রামা কুইন!

অরিন:ওহ তুমি!দাড়িয়ে কি দেখো?ওঠাও আমাকে।

আদ্রিয়ান এক জোটকে অরিনকে টেনে উঠালো।

অরিন:আরে আস্তে আস্তে।

বিথী:আদ্রিয়ান ভাইয়া ওকে ধরে রাখো।
অরিন গিয়ে আদ্রিয়ান পিছে লুকালো।আদ্রিয়ান জ্যাকেট খামচে ধরে দাড়িয়ে আছে অরিন।
আদ্রিয়ান:ব্যাপার কি?

মমি:তোমার বউ বিয়েতে সাজবে না।

অরিন:আমি মোটেও সেটা বলি নি,আমি আমার মত সাজবো,কিন্তু ওই রাক্ষসীদের হাতে ভুত সাজবো না।

বিথী: রাক্ষসী কে?

অরিন:কে আবার,ওই পার্লারের মেয়ে গুলো। আস্তাগফিরুল্লাহ,কম করে হলেও দশ কেজি আটা ময়দা মাখবে।

লামিয়া:অরিন,তুই তো একবারই বিয়ে করবি,তাহলে একটু দিলে কি হয়?

অরিন:যদি ১০০ বিয়েও করি তাও সাজবো না,মানে না!

আদ্রিয়ান এর অরিনের ১০০ বিয়ের কথা শুনে কাশি উঠে গেলো।

অরিন:এই এডি বলো না আমি সাজবো না!

হৃদিতা:না আদ্রিয়ান ভাইয়া!ওকে সাজতে হবে।

অরিন:এডি!

আদ্রিয়ান একবার হৃদিতা আর একবার অরিনের দিকে তাকালো।

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,
আদ্রিয়ান: ও যেভাবে চায় সেভাবে সাজুক।

মমি:কিন্তু…

আদ্রিয়ান:বউ তো আমারই,না সাজলে ক্ষতি কি?আর এমনিও আমার বউকে না সাজলেই ভালো লাগে।

অরিন মুচকি হাসলো।

বিথী: লো,যাব মিয়া বিবি রাজি তো কেয়া কারে গা কাজী!!

অরিন: যা যা,হুশ হুশ।পিচ্ছি পোলাপান আসছে আমাকে ধরতে ।

হৃদিতা:বিয়েটা হতে দে তোর খবর আছে।

পার্লারের মেয়েরা বিথীকে সাজাতে বসে পড়লো।অরিন কে বিয়ের শাড়ি পরানো হলো।আর অরিন নিজে নিজেই সাজছে।
মমি:প্রথম দেখলাম বিয়ের কনে নিজে নিজে সাজছে!

অরিন:আমার মেয়েরাও এমন হবে।

হৃদিতা:লো,বিয়ে হতে না হতেই মেয়ের চিন্তা বাহ বাহ, টু ফার্স্ট।

অরিন:বেশি বক বক করলে তোর থোতা মুখ ভোতা করে দিবো।

হৃদিতা মুখে হাত দিয়ে বসে রইলো।

অবশেষে এলো সেই সোনালী মুহুর্ত।অরিন আর বিথীকে আসরে আনা হলো।তিন অক্ষরের শব্দ কবুল বলতেই সম্পন্ন হলো বিয়ের কাজ।

তনয়া: যাই বলি,আপুর নরমাল সাজে কিন্তু বেশ লাগছে

আরিফা:দেখতে হবে না ভাবীপু টা কার!

তনয়া: ভাবীপু আবার কি?

আরিফা:অরিন আপু আমাকে বোন বলেছিলো,এখন সে আমার ভাবী। ভাবী আর আপু মিলিয়ে ভাবীপু!

তনয়া:বাহ, টেলেন্টেড!কিন্তু তার আগে আমার আপু।

আরিফা: ইহ,বললেই হলো?

তনয়া: হ্যাঁ হলো!!

হৃদিতা:চুন্নি গুলা,তোরা না ছবি তুলবি ?যা তোল ।শুধু ঝগড়া করে! যা…

তনয়া আর আরিফা গেলো ছবি তুলতে।

অনিক:আমাদের বিয়ে কবে হবে?

হৃদিতা: যবে বলবেন!

অনিক ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

অনিক: সিরিয়াসলি?

হৃদিতা:তো কি মশকরা করছি?

অনিক:তো মেডাম উত্তর?

হৃদিতা:সব প্রশ্নের উত্তর দিতে নেই!কিছু উত্তর বুঝে নিতে হয়।
বলেই চলে গেলো।

অনিক মুচকি হেসে মাথা চুলকালো।

সাগর:আরে ওই মোমবাতি!

মমি:আবার!

সাগর:আচ্ছা মমি! হ্যাপি?

মমি:হুমম!

সাগর:কিছু বলার ছিল!

মমি:জানি।

সাগর:কি জানো?

মমি:এইযে আপনি আমাকে ভালোবাসেন! রাইট?

সাগর:বাহ,জানোই তো উত্তর দেও! ডু ইউ লাভ মি?

মমি মুচকি হাসলো,কিন্তু কিছু না বলে হাটা লাগালো।

সাগর আবার বললো,
সাগর:উইল ইউ মেরি মি?মিস মমি!!

মমি পিছন ঘুরে বললো,
মমি: ডেট আমার বাবা মাকে বলে দিয়েন।

সাগর যা বুঝার বুঝে গেলো।

সাগর:দ্যাট মিন’স সামথিং সামথিং?

মমি: এভরিথিং!

লামিয়া বসে বসে বিথীর সাথে ছবি তুলছে আর তখন আদিব এলো।

আদিব:লামু।

লামিয়া: জী ভাই(আদিব চোখ রাঙানি দিল)জি জি বলুন।

আদিব:এটা ধর!

লামিয়া:কি এটা?

আদিব:খুলে দেখিস।
বলেই চলে গেলো।লামিয়া ধপ করে বিথীর পাশে বসে পড়লো।

বিথী: কি গো?

লামিয়া:তোর ভাই কে ভাইয়া বলি দেখে আমাকে রাগ দেখায়, এতে রাগের কি হলো?

অরিন:যদি ভালোবাসার মানুষ ভাইয়া ভাইয়া বলে ভাই বোনের সম্পর্ক বানানোর চেষ্টা করে,রাগ করবে না তো কি আদর করবে?

লামিয়া:মানে?

বিথী:ঐযে সামথিং সামথিং!

লামিয়ার এতক্ষণে বুঝলো, গাল দুটো লাল হয়ে গেল।
অরিন:লজ্জা না পেয়ে এতে কি আছে দেখো।

লামিয়া প্যাকেট খুললো,ওখানে লামিয়ার কিছু পছন্দের জিনিস আর একটা চিরকুট। হাতে লিখা,
“শুধু তোমার জন্য প্রেয়সী”
লামিয়া মুচকি হেসে সব কিছু নিয়ে ঘরে রেখে এলো।আদিব কোণায় দাড়িয়ে ওকে দেখছে।লামিয়ার কেমন জানি লাগছে।আচ্ছা ভালোবাসার অনুভূতিগুলো কি এমনি মিষ্টি হয়?
আদিব:দেখছিস?

লামিয়া:না!

আদিব:কেন?

লামিয়া:ঐটা তোমার প্রেয়সীর জন্য,আমি কি তোমার প্রেয়সী নাকি?আমি তো বোন!

আদিব:মারবো টেনে এক চর, যাতে বোন হওয়ার শখ মজে যায়।

লামিয়া গাল ফুলালো।
লামিয়া:একটু মিষ্টি করে মুখে বললে কি হয়?

আদিব এতক্ষণে কাহিনী বুঝলো।মুচকি হেসে লামিয়ার কানের কাছে বললো,
আদিব:ভালোবাসি তোমায় প্রেয়সী!

বলেই লামিয়ার ফোলানো গালে চুমু দিয়ে চলে গেলো।আর লামিয়া গালে হাত দিয়ে সেখানেই ফ্রিজড।ঘটনা বুঝতে পেরে মুচকি হাসলো।

অরিন বসে বসে সবার খুনশুটি দেখছে।আসলেই ভালোবাসার অনুভূতি গুলো অদ্ভুত।আর প্রিয় মানুষকে নিয়ে সাজানো স্বপ্ন গুলো যখন সত্যি হয় তখন নিজেকে সব চেয়ে খুশি মনে হয়।অরিন আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো।

আদ্রিয়ান:কিছু বলবে!

অরিন:ছেড়ে যাবে না তো?

আদ্রিয়ান অরিন কে জড়িয়ে ধরে বললো,
আদ্রিয়ান:মৃত্যুর আগে অবধি না।

অরিন:ওই মিয়া,সবাই এখানে আছে।

আদ্রিয়ান:তাতে আমার কি,আমার বউকে জড়িয়ে ধরছি,অন্য কাওকে না।

অরিন:পাগল!

আদ্রিয়ান:তোমারই!

অরিন হালকা হাসলো,আর চোখ বন্ধ করে আদ্রিয়ান এর হার্ট বিট শুনতে লাগলো।প্রতিটা স্পন্দন যেনো বলছে,ভালোবাসি অরি পাখি!!
আপনমনে আওরালো অরিন,
“হৃদয়ের প্রতিটা স্পন্দনে লিখা তোমার নাম..
থাকতে চাই তোমার হৃদয়ে,হয়তো শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে।
ভালোবাসার অলিখিত অনুভূতি, বন্দী স্মৃতির খামে…
হৃদয়ের সুপ্তকোণে আছে , রৌদ্দুর যে তোমার নামে!!
কাঠগোলাপের ভালোবাসা,টানিয়ে রাখবে মনের দেয়ালে..
তোমার নামটি গেঁথে রাখবো এই হৃদয়ের কোণে।
কেননা আমার হৃদয়ে যে শুধুই তুমি,
হৃদমাঝারে শুধু তুমি!”

(~সাবরিন জাহান~)

#সমাপ্ত

(আজকে সবার গঠন মুলক মন্তব্য ,কি রকম লাগলো তার অনুভূতি আর রিভিউ আশা করতে পারি কি?)

1 COMMENT

  1. Golpota khub khub shondor hoyeche 😘😘😍😍❤valobashar majhe hajaro zor japta aashbe but shob protikul poristhiti Katie valobashar manushtar hath dore Sara jibon pashe thakai prokito valobasha 🥰🥰😘😘🤗🤗❤❤❤❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here