#হৃদমাঝারে_শুধু_তুমি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট:০২
ক্লাস এ কথা বলার কারণে টিচার অরিন কে সামনে আসতে বলে।দুই বেনি আর স্কুল ড্রেস পরিহিত ক্লাস টেন এ পড়ুয়া অরিন ভয়ে ভয়ে সামনে আগালো।
টিচার:তুমি কথা বলছিলে কেনো?
অরিন: স্যার ওই…
টিচার: শাট আপ!হাত পাতো।
অরিন বিস্ফোরিত চোখে তাকালো।
টিচার:কি বলেছি শুনো নি।
অরিন হাত পাতলো। স্যার স্কেল দিয়ে হাতে মারতে যাবে তখনই পিছন থেকে কেও বলে উঠলো,
“কি হচ্ছে?”
টিচার পিছনে তাকাতে দেখতে পেলো আদ্রিয়ান কে…
টিচার:আরে তুমি জাফর আবরার এর ছেলে না?
আদ্রিয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেললেন,এই লোক গুলো ওর বাবার নামটাই মনে রাখে,বিত্তশালী হলে যা হয় আরকি।
আদ্রিয়ান:জি না, হর্ষ বর্ধনের ছেলে..
সাথে সাথে সবাই হেসে দিল,অরিন ও মুখ চেপে হাসলো।টিচার খানিকটা ভরকে গেল।মেকি হেসে বললো,
টিচার:বুঝলাম না?
আদ্রিয়ান:আমার বাবার নাম জাফর আবরার এটা আমাকে মনে করানোর দরকার নেই,আমার ব্রেন শার্প আছে যথেষ্ট।তাই মনে থাকে।
আরেক দফা হাসির রোল পড়লো।
আদ্রিয়ান: একটু আগে কি করতে যাচ্ছিলেন?
টিচার:এই মেয়ে ক্লাস এ কথা বলে ক্লাস এর পরিবেশ নষ্ট করছিল,তাই পানিশমেন্ট দিচ্ছি।
আদ্রিয়ান:কি কারণে কথা বলছিলো জিজ্ঞেস করেছেন?
টিচার: হ্যাঁ অবশ্যই!
আদ্রিয়ান:কি কারণ?
এবার উনি চুপ গেলেন,আসলে তো উনি অরিনের কথা শোনেই নেই।
আদ্রিয়ান:কি কারণে কথা বলছিলে?(অরিন কে উদ্দেশ্য করে)
অরিন:আমার কলম নিশার কাছে ছিল,ঐটা চাচ্ছিলাম আর স্যার দেখে ফেলেছে।
আদ্রিয়ান এবার স্যার এর দিকে তাকিয়ে বললো ,
আদ্রিয়ান:বিনা দোষে কেন পানিশমেন্ট দিচ্ছিলেন।
স্যার চুপ করে রইলেন,আসলে একবার হলেও উনার অরিনের কথা শুনা উচিত ছিল।
স্যার:আসলে মিসটেক!
আদ্রিয়ান:মিসটেক হলে কি করা উচিত?
স্যার মাথা নিচু করলেন,অরিন এবার অসহায় চোখে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকালো। যার অর্থ ওসব কিছু করতে যেনো না বলে। স্যার কিছু বলতে নিবেন তার আগেই আদ্রিয়ান বললো,
আদ্রিয়ান:লিভ ইট!নেক্সট টাইম খেয়াল রাখবেন।আব, আপনার ক্লাস শেষ।সরি ফর ওয়েসটিং ইউর টাইম!
স্যার: নো নো ইটস ওকে।
স্যার নিজের জিনিষ নিয়ে বের হয়ে গেলেন,সেই সাথে আদ্রিয়ান ও।অরিন কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে,দৌড়ে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেলো।পিছন থেকে নিশা বলে উঠলো,
নিশা:অরিন আস্তে!
অরিন দৌড়ে বাইরে বের হয়ে দেখলো আদ্রিয়ান গাছে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ও চট জলদি তার কাছে গেলো। হাপাতে হাপাতে বললো,
অরিন:তুমি এখানে?
আদ্রিয়ান:ভুলে যাও নাকি আমার ভার্সিটি তোমার স্কুল এর সামনে।
অরিন:উফ সেটা না ,এখানে কি করছো?
আদ্রিয়ান:আমার ক্লাস শেষ,ঘড়িতে দেখলাম তোমার ও ছুটি হবে,তো তোমাকে হোস্টেল পর্যন্ত দিয়ে আসি ।
অরিন:ওহ তাই বলো।আজকে তুমি না আসলে ঐ টাকলা আমার হাত ঝালাপালা করে দিত।
আদ্রিয়ান বুকে হাত গুজে দাড়িয়ে বললো,
আদ্রিয়ান:এই আদ্রিয়ান থাকতে তার অরি পাখি কে কেও কিছু করতে পারবে না ।
অরিন মুচকি হাসলো।
অরিন:তো যাওয়া যাক।
দুইজন মিলে গল্প করতে করতে হাটছে, এক পর্যায়ে হোস্টেল পর্যন্ত চলে এসেছে।
আদ্রিয়ান:তো যাও পিচ্ছি।
অরিন:পিচ্ছি বললে কেন?
আদ্রিয়ান:তুমি তো পিচ্ছিই!
অরিন:কয়েকদিন পর এসএসসি দিবো।
আদ্রিয়ান হালকা হাসলো।
আদ্রিয়ান:হুমম ।এবার যাও, আমি গেলাম।কারণ আমি যতক্ষণ থাকবো ততক্ষণ তুমি ভিতরে যাবে না।
বলেই হাটা শুরু করলো,
অরিন:আরে ওই এডি।
আদ্রিয়ান হাঁটতে হাঁটতে বললো,
আদ্রিয়ান:চুপচাপ ভিতরে যাও।
অরিন:বিয়ে কবে করবে।
এবার থামলো আদ্রিয়ান।অরিনের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো,
আদ্রিয়ান:পিচ্চির এত বিয়ের শখ কেনো?
অরিন:আরেকটা পিচ্ছি আসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
আদ্রিয়ান বেকুব বনে গেলো। তা দেখে অরিন জোরে জোরে হাসতে লাগলো।আদ্রিয়ান অরিনের দুষ্টামি বুঝতে পারলো ।
আদ্রিয়ান:এভাবে হেসো না, সামলানো দায় হয়ে যাবে ।
অরিন:তাহলে নিয়ে যাও আমায় ।
আদ্রিয়ান মাথা চুলকালো। তা দেখে অরিন আবার হাসলো।
তনয়া:আপু।
তনয়ার ডাকে অতীত থেকে বাস্তবে ফিরলো অরিন।এতক্ষণ পুরনো দিন গুলো স্মৃতিচারণ করছিল।
অরিন:কি?
তনয়া:কখন থেকে ডাকছি , শুনো না?
অরিন:এই পেচি,বেশি কথা না পেচিয়ে বল কি বলবি!
তনয়া: কিহহ!আমি পেচি?তাহলে তুমি কি?
অরিন:আমি রাজকুমারী।
তনয়া: ইহ আসছে রাজ কুমারী।
সামান্তা:তোরা আবার শুরু করলি?
তনয়া :আমি না, আপু আগে করেছে!
অরিন: ওমনি সব দোষ আমার হয়ে গেলো?
তনয়া: হ্যাঁ!(তনয়া আর সামান্তা অরিনের আপন বোন।আর সামান্তা বিবাহিত)
অরিন: যা ভাগ।
তনয়া:সামু আপি কিছু বলবে?
সামান্তা:আমার মাথা বলবো!
তখনই রুমে ঢুকতে ঢুকতে সোহা তনয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
সোহা:তুই অলওয়েজ আমার মিষ্টিপির পিছে লাগিস কেন? (সোহা অরিনের ফুফাতো বোন,ক্লাস এইটে পড়ে)
তনয়া:ইহ মিষ্টিপি না ছাই।
সামান্তা :উফ তোরা যা তো,আমার অরিনের সাথে কথা আছে।
তনয়া:কিন্তু.
সামান্তা:তনয়া!
তনয়া গাল ফুলিয়ে বের হয়ে গেলো,সাথে সোহাও।
সামান্তা এসে অরিনের কাছে বসলো,
অরিন:কিছু বলবে আপি?
সামান্তা:কি হয়েছে তোর?কাল থেকে দেখছি কেমন মন মরা হয়ে আছিস।
অরিন: ও কিছু না,এমনেই নিও ভার্সিটি,আবার টিচাররা কেমন,ভালো মত পড়াশোনা করতে পারবো কিনা এই নিয়ে টেনশন।
সামান্তা: ওহ!আমি ভাবলাম কি না কি।আচ্ছা ।আরে শোন, বড় মনির মেয়ে আছে না?
অরিন: হ্যাঁ,আছে তো!কেনো?
সামান্তা:ওর বিয়ে দুই মাস পর।
অরিন:ওহ,তো মা কি এখন যেতে চাচ্ছে?
সামান্তা:হুমম,তুই তো জানিস ,মায়ের শুধু সুযোগ পেলেই হয়েছে বড় মনির কাছে যাওয়ার।
অরিন:তাই বলে দুই মাস?
সামান্তা: সেটাই তো?
অরিন:থাক যেতে দেও।
সামান্তা: এত আগে গিয়ে কি করবে?কোথায় সেই দুই মাস ।
অরিন মুচকি হেসে বলল,
অরিন:আমাদের লালন পালন করতেই তো নিজের জীবন পার করলো,এখন একটু করুক না। নিজের ইচ্ছে মত ঘোরাঘুরি।
সামান্তা:মাঝে মাঝে মনে হয় আমি ছোটো আর তুই বড়।তবে কথাটা মন্দ নয়।
অরিন:বাবা কি যাবে?
সামান্তা:না বাবা কিছু কাজের জন্য বাইরে যাবে।
অরিন:ওহ আর ফুপা- ফুপি কি এবারও আসবেনা?
সামান্তা:না মনে হয়।
অরিন:এই কাজের জন্য নিজের মেয়েটাকেও সময় দিতে পারছে না ।কতই বা বয়স সোহার ।এই বয়সে বেচারীকে বাবা মা ছাড়া থাকতে হচ্ছে।
সামান্তা:তাতে কি আমরা আছি না?
অরিন:হুমম
সামান্তা: ভার্সিটিতে কখন যাবি?
অরিন:এইতো একটু পর
সামান্তা: খেয়ে যাবি!
অরিন:না খেয়ে যাওয়ার সাধ্য কি আদো আমার আছে?
সামান্তা হাসলো।
ভার্সিটিতে পৌঁছে ব্যাগ নিয়ে ধারাম করে অরিনের পাশে বসে পড়লো হৃদিতা।
অরিন: কিরে মুখটা পেঁচার মত করে রেখেছিস কেন?
হৃদিতা:ওই পিনিকের বাচ্চা আমাকে আবার বুচি বললো।
অরিন:মানে?পিনিক কে?
হৃদিতা:আরে ওই ক্যান ওয়ালা!
অরিন: শেষ মেষ ক্যান ওয়ালা?
হৃদিতা: হ্যাঁ।বজ্জাত ব্যাটা।
অরিন:আচ্ছা কি করেছে?
হৃদিতা:শোন..
ফ্ল্যাশব্যাক
“কমলা নেত্ত করে ঢংগিয়া ঢংগিয়া”
গান গাইতে গাইতে ঢুকছে হৃদিতা।তখনই কেও বলে উঠলো,
অনিক:আরে বুচি।
হৃদিতা রেগে তাকালে অনিক কে দেখতে পেলো,
হৃদিতা:আপনি?
অনিক: জি মিস বুচি!
হৃদিতা:এই দেখুন ভালো হবে না কিন্তু,আমার নাক বোচা দেখে আপনি আমায় বুচি বলতে পারেন না।
অনিক:আমি তো বলবোই।
হৃদিতা: ইউ কুমড়োপটাশ!
অনিক: ও হেলো!আমার একটা কিউট নেম আছে ,অনিক অকে?
হৃদিতা:অনিক না রেখে পিনিক রাখা উচিত ছিল । ব্যাটা বজ্জাত।
বলেই চলে আসলো,আর অনিক এক দফা হেসে নিলো।মেয়েটাকে জ্বালাতে বেশ লাগে ওর ।
ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড
অরিন:তোর আর তোর পিনিকের পিনিক মার্কা কাহিনী।
হৃদিতা:হাহ!
অরিন সামনে তাকালে দেখলো একটু মেয়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।অরিন আর হৃদিতা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।
মেয়েটি: হাই আমি মমি!
হৃদিতা:মমি? কার মমি?আপনার কোনো মেয়ে পরে নাকি এখানে?
মমি: অফো,আমার নাম মমি।উম্মে মমি।
অরিন:ওহ।আমি অরিন।অদ্রি বিন অরিন।আর ও হৃদিতা হৃদি।
মমি: নাইস টু মিট বোথ অফ ইউ!আম..আমি এখানে বসি?
হৃদিতা:আরে বসে পর,আমরা ফ্রেন্ডস ই তো।
মমি হালকা হাসলো।তখনই প্রবেশ করলো স্যার।
স্যার:সো স্টুডেন্টস।তোমাদের ভার্সিটির বিজ্ঞান মেলা উপলক্ষে প্রজেক্ট এর সহায়তার জন্য কে কে থাকতে ইচ্ছুক।হৃদিতা আগে হাত তুললো।
হৃদিতা:এই অরিন হাত তোল।
অরিন:ধুর আমার এসব ভাল্লাগে না।
হৃদিতা:তোল নাহলে কথা বলবো না।
অরিন: ব্ল্যাকমেইল।
হৃদিতা বত্রিশ দাত দেখিয়ে বললো,
হৃদিতা:উহু সাদা মেইল এবার তোল,ওই মমি তুই ও তোল!
অনিচ্ছা সত্বেও নিজের নাম লেখালো অরিন।সাথে মমি আর হৃদিতা।
নাম নিয়ে গার্ড চলে গেলো। স্যার বের হতে গিয়ে আবারও ফিরে এসে বললো,
স্যার:আরেকটা কথা,মেইন গাইড এ থাকবে অনিক আহমেদ,আদ্রিয়ান আবরার এর সাগর ইসলাম ।
বলেই বের হয়ে গেলেন।
অরিন:আমার নাম উঠিয়ে নে হৃদি।
হৃদিতা কি বলবে বুঝছেনা।অরিনের এরকম বলার কারণ টা তো ওর অজানা না।
হৃদিতা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
হৃদিতা:সত্যি টা তোকে বলতেই হবে হৃদি(মনে মনে)
#চলবে….