হৃদমাঝারে শুধু তুমি পর্ব ১

#হৃদমাঝারে_শুধু_তুমি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট:০১

“কলেজের এক তরুণীকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করলেন এক কলেজের শিক্ষক….. ছিঃ ছিঃ ছিঃ”

ভার্সিটির ক্যান্টিন এ বসে ফেসবুক স্ক্রলিং এর সময় নিউজটি পড়তে গিয়ে মাঝ পথে থেমে গেলো হৃদিতা।

হৃদিতা:হায়রে,আজকাল কার শিক্ষক দের মতি গতি বুঝি না বাপু।কিভাবে ছাত্রী কে তুলে নিয়ে যায়…. ছিঃ ছিঃ ছিঃ!

আপন মনে বির বির করছে হৃদিতা।আর বাকি সবাই আড়চোখে আপাতত ওকে দেখছে,আর পাগল ছাড়া কিছু ভাবছে না। বিষয়টা বুঝতে পেরে চুপ করে থাকলো হৃদিতা।

হৃদি:ধুর এই অরিন কখন আসবে।

তখনই শুনা গেল মাইক এ এনাউন্সমেন্ট।

“আসসালামু আলাইকুম, ডিয়ার শিক্ষার্থীবৃন্দ।আসলে আমি এক কুত্তা কে খুঁজছি।প্লীজ কেও কুত্তা টিকে বলবেন এনাউন্সমেন্ট রুমে আসতে।”

প্রথমে ভার্সিটিতে কুত্তা খুজা,আর নিজ থেকে কুত্তা কে এনাউন্সমেন্ট রুমে আসতে বলার সাইন্স টা বুঝতে পারলো না হৃদিতা।

এদিকে ভার্সিটি চত্বরে পা দিতেই পুরনো স্মৃতি নাড়া দিয়ে উঠলো অরিনের।কত না স্মৃতি এই পল্টনে।কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সব বদলে গেছে আজ। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাওকে খুঁজে চলেছে অরিন।কিন্তু খুঁজে না পেয়ে এনাউন্সমেন্ট রুমে চলে গেল।

কুত্তা খুঁজার এনাউন্সমেন্ট করার পর পাশে থাকা এক মেয়ে বলে উঠলো

মেয়ে:কুত্তা কিভাবে খুঁজবে?আর সেই বা এনাউন্সমেন্ট বুঝবে কি করে ।

অরিন:উপস,সরি! হ্যাল্লো হ্যাল্লো! এটেনশন এগেইন প্লিজ। ভুলবশত কুত্তা বলে ফেলেছি।আসলে ওটা কুত্তা না কুত্তি হবে।আম….আরেকটু সহজ এর জন্য নাম উল্লেখ করি।কুত্তি টার নাম হৃদিতা হৃদি।ভার্সিটির নিউ স্টুডেন্ট ।ওকে বাই।

এতক্ষণে শটান হয়ে উঠে দাড়ালো হৃদি।পুরা ভার্সিটি তে ওকে ভাইরাল করলো এভাবে? আশেপাশে সবাই এই কথা শুনে হাসছে ।

হৃদি:ভাগ্য ভালো এরা কেও জানে না আমিই হৃদি।অরির বাচ্চা।

বলে ছুট লাগালো ।কিন্তু কিছুটা গিয়ে আবার ফিরে এসে ব্যাগ আর মোবাইল নিল।

হৃদি:উই মা।আমার সম্পদ।

বলেই আবার ছুট লাগালো। এনাউন্সমেন্ট রুমের সামনে আসতেই দেখলো প্রায় অনেকে একটা মেয়েকে ঘিরে বসে আছে।মেয়েটির পরনে নীল টপস আর সাদা স্কার্ট।গলায় নীল সাদা মিশ্রণের স্কার্ফ।আর ঢেও খেলানো চুল গুলো উপরে ঝুটি করা।

হৃদি: অরি!

অরিন ঘুরে তাকালো।মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,

অরিন:ঐতো কুত্তা থুক্কু কুত্তি এসে গেছে।

আশেপাশে সবাই হেসে দিল।

হৃদি: অরির বাচ্চা তোকে আমি!!

হৃদির তেড়ে আসতে দেরি ,কিন্তু অরিনের ব্যাগ হাতে নিয়ে দৌড়াতে দেরি নাই ।

হৃদি :অরি!!

অরিন: নো ওয়ে।

একের পর এক ক্লাস ছুটে বেড়াচ্ছেন দুইজন।

হাতে কিছু ফাইল আর কাগজ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রামু।বয়স বেশি না ।২৫-২৬…হুট করে কারো ধাক্কায় পরে যেতে নিয়েও পড়লেন না তিনি।

রামু:এই কে রে?

অরিন:সরি দাদু দেখতে পাই নাই ।বলেই দৌড়।

রামু:ফাজিল মাইয়া।আমার বয়স এখনও কচি খোকার, এ আমারে দাদু বলে ।

বলেই ঘুরতে গেলে ধারাম করে আরেকজনের সাথে ধাক্কা খেয়ে সব ফাইল পরে যায়।

হৃদি:সরি নানু।

বলেই দৌড়।রামু হাতের বাকি সব ফাইল ফেলে দিয়ে বললো,

রামু: এগুলো কেন বাকি আছে? এগুলোও পরে যাক।

হৃদি:অরি থাম বলছি।

অরিন:এই অদ্রি বিন অরিন কে থামানো এত সহজ নয় ।

ওরা মাঠে চলে আসলো।এক পর্যায়ে হৃদি হাপিয়ে গেলো।

হৃদি:তুই থামবি না তো।

অরি:না।

হৃদি আশে পাশে তাকিয়ে একটা খালি ক্যান দেখতে পেল।ঐটা হাতে নিয়ে অরিনের দিকে ছুঁড়ে মারল।অরিন সেটা দেখে সরে গেলো আর ক্যান টা গিয়ে পড়লো একজনের মাথা। হৃদির মাথায় হাত।

হৃদি:ওহ নো!

অরি:এটা কি করলি?

হৃদি:সব তোর জন্য হয়েছে।

অরি:হাহ, যত দোষ সব নন্দ ঘোষ!

এদিকে একজনের জন্য ওয়েট করছিল অনিক,এভাবে মাথায় ক্যান পরায় ভরকে গেল।পিছনে তাকিয়ে দুইটা মেয়েকে দেখতে পেলো।অনিক ওদের কাছে গেলো।

অনিক:এটা কে মেরেছে।

হৃদি এক মুহুর্ত দেরি না করে অরিন কে ইশারা করলো। অরিন অবাক হয়ে বললো ,
অরিন:আমি?

হৃদি: হ্যাঁ তুই তো মারলি?বিশ্বাস করেন ভাই যা করছে এই মেয়ে করছে,আমি ভীষন ইনোসেন্ট।

অনিক:আপনার অভার অ্যাক্টিং ই বলে দিচ্ছে , ক্যান টা আপনি মারছেন।

হৃদি চুপ করে গেলো,

হৃদি: হে হে,ইয়ে মানে ভুলে।

অনিক:তো নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে কেন চাপান মিস বুচি।

হৃদি:ওই মিয়া বুচি কারে বলেন?

অনিক:আমার সামনে যে দাড়িয়ে আছে।

হৃদি: ইউ কুমড়ো পটাশ!

অনিক: হোয়াট?

হৃদি:বজ্জাত ব্যাটা,আমাকে কোন সাহসে আমায় বুচি বলেন।জানি নাক আমার বোচা।তাই বলে বুচি বলবেন?

অরিন: হৃদি,থাম!

হৃদি:তুই চুপ কর।

দুইজন ঝগড়া করেই যাচ্ছে আর অরিন থামানোর চেষ্টা করছে ।

বাইক থেকে নেমে ভার্সিটির গেটে দাঁড়িয়ে চোখ বুলিয়ে নিলো আদ্রিয়ান। দুইটা বছর কেটে গেলো এর থেকে দূর হয়েছে।কত শত স্মৃতি এর থেকেই শুরু ছিল।কিন্তু আজ দুরত্ব অনেক।আদ্রিয়ান ভিতরে ঢুকলো।

অরিন ওদের ঝগড়া থামানোর মধ্যেই অনুভব করলো ওর হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে, যা আদ্রিয়ানের ও হচ্ছে।

অরিন:সেম ফিলিংস!(মনে মনে)

আদ্রিয়ান:সেম অনুভূতি।(মনে মনে)

অরিন:আবারও কেনো?

আদ্রিয়ান:হটাৎ কেনো?

আদ্রিয়ান ওইসব এ পাত্তা না দিয়ে অনিক কে ডাকলো,

আদ্রিয়ান:অনিক?

আদ্রিয়ান এর আওয়াজ শুনে অরিন চট জলদি ঘুরে তাকালো।আদ্রিয়ান আর অরিন দুইজনই অবাক হয়ে বললো,

অরিন: হার্ট অ্যাটাক!(মনে মনে)

আদ্রিয়ান: হার্ট অ্যাটাক!!(মনে মনে)

অনিক: ওহ তুই এসে গেছিস!

হৃদি অবাক হয়ে আদ্রিয়ান কে দেখলো, হুট করে মুখে এক চিলতি হাসি ফুটলো,

হৃদি:আদ্রিয়ান ভাইয়া!;

এতক্ষণে অরিন আর আদ্রিয়ান এর ধ্যান ভাঙলো।অরিন এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে ঘুরে ক্লাস রুমের দিকে গেলো।

হৃদি:অরিন!

অরিন:না অরি ,তুই কাঁদবি না,কাঁদবি না ওই প্রতারকের জন্য,একদম না (মনে মনে চোখের কোণের পানি মুছে নিয়ে)

আদ্রিয়ান:আদ্রিয়ান কন্ট্রোল, ও একটা প্রতারক,প্রতারকের জন্য কেনো কষ্ট পাবি(মনে মনে, চোখের কোণের পানি মুছে নিয়ে)

হৃদি সব টাই দেখলো।

হৃদি:আজ আমার একটা ভুলের জন্য আজ তোরা আলাদা,কিন্তু ভাবিস না।তখন কিছু করতে পারি নাই তো কি হয়েছে,এই সুযোগ আমি ছাড়বো না আমি(মনে মনে)

সেদিন আর ক্লাস করে নি ওরা।এবার পরিচয় দেওয়া যাক।
হৃদিতা আর অরিন ভার্সিটির প্রথম ইয়ারের স্টুডেন্ট ।আদ্রিয়ান আবরার এর অনিকেত অনি ,নিজের বাবার বিজনেস সামলায়।ভার্সিটি আসার কারণ তাদের বাবা- ই।বাকিটা পরে জানবেন।

অরিন বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে নিল।একটা উপন্যাস পড়তে লাগলো ।কিছুক্ষণ পর অনুভব করলো কেও বার বার উকি ঝুঁকি মারছে।

অরিন:কিছু বলবি তনয়া?

এতক্ষণ তনয়াই উকিঝুকি মারছিল।অরিনের ডাক শুনে বত্রিশ দাত বের করে হাসি দিয়ে বললো,
তনয়া:বুঝলে কিভাবে আমি আছি?

অরিন হাতে থাকা বইটা রেখে তনয়ার দিকে তাকালো।
অরিন:রুমে যদি কোনো বলদ থাকে ,তাহলে সেও বুঝবে।

তনয়া:আপু😒।

অরিন:কি বলবি?

তনয়া:আসলে আপু..

অরিন:না।

তনয়া:কি না?

অরিন:আমি জানি ,তুই এখন বলবি আপু আমি আর ফাহিমা এবার ট্যুরে যেতে চাই।প্লিজ মানা করো না।

তনয়া: যাই না?কি হবে?

অরিন:আপনি যা বান্দর,তাতে না করাটা স্বাভাবিক।

সামান্তা:এবারের গ্যারান্টি আমি দিচ্ছি?

অরিন:কিভাবে?

সামান্তা:কারণ এবারে আমি যাচ্ছি ওর সাথে গাইড হিসেবে ।

অরিন:তাহলে ঠিক আছে।

তনয়া:তোমরা আসলেই বজ্জাত,আমি তো নাইনে পরি তাও এত কিসের চিন্তা।

অরিন:বড়ো হলে বুঝবি।

সামান্তা:বাই দা ওয়ে আজকের দিন কেমন ছিল?

সামান্তার কথা শুনে মন টা খারাপ হয়ে গেলো অরিনের।

অরিন: ভালোই।সামু আপু তুমি যাও আমি রেস্ট নেই।তনু তুই ও যা।

দুইজন বেরিয়ে গেলো।অরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালার বাইরে তাকালো।কতই না মধুর ছিল পুরনো দিন গুলো।

“না পুড়লে কিসের ভালোবাসা,
ভাঙ্গে মন তবু ভেঙ্গে না যে আশা।
সে ছেড়া আর কেও নেই যে আমার।”

#চলবে…..

(কেমন লাগলো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here