#হৃদরোগ
#অহর্নিশা
#পর্ব_সংখ্যা ৭
• তপ্ত দুপুরে স্ট্যান্ডের রাস্তা ধরে শো শো করে বড়ো বড়ো গাড়ি যাচ্ছে , সাইকেলের আনাগোনা খুবই কম। চারিদিক কোলাহলের শব্দে মুখরিত। এই কোলাহলে একে অপরের কথোপকথন হয়তো শোনা যাবে না । তাও সুদেষ্ণার বন্ধুগন সুদেষ্ণার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে অধির আগ্রহে……
সুদেষ্ণা সবার কৌতূহলী মুখের দিকে চেয়ে বলা শুরু করলো„„„„„ আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড হিমাদ্র, তাই তার বাড়ির এড্রেস জানা খুব একটা কঠিন না ।
তোর থোবরা দেখে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করলো হিমাদ্র ভাই ??……. অনিক দাঁত কেলিয়ে বললো।
কেনো রে আমি দেখতে সুন্দর না ?„„„ আমাকে তার সঙ্গে মানাবে না?„„„„ সুদেষ্ণা গম্ভীর মুখে জিজ্ঞাসা করলো।
কে বলেছে তুই সুন্দর না ? ভাই তুই পুরো পটাকা আচ্ছিস ।„„„„ অনু সিরিয়াস ভাবে বললো । সবার দৃষ্টি অনুর ওপর নিবদ্ধ । অনু আবার বলা শুরু করলো,,,,,,,
জানিস তোদের একসাথে দারুন মানাবে, তোদের একসাথে দেখে যে কেউ বলবে “রব নে বানা দি জোরী”। তোদের জোরী পুরোই হর্স লিম্বাচিয়া আর ভারতি সিং এর মতো । „„„„„ বলেই হট্ট হাঁসিতে ভেঙ্গে পড়লো।
সুদেষ্ণা সহ সবাই অনুর দিকে চোখ ছোটো করে তাকালো।
অনু সবার অভিব্যক্তি দেখে চুপ করে মুখের ওপর আঙ্গুল দিয়ে বসলো ।
আরে সেই দিনকার ঘটনার পর হিমাদ্র ভাই তোর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট কীভাবে একসেপ্ট করলো সেটাই বলছিলাম,,,,, অনিক বললো।
আমি জানতাম হিমাদ্র সেই ঘটনার পর আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করতেন না । তাই ফেইক আইডি থেকে রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম , একসেপ্ট করে নিয়েছে „„„„„ সুদেষ্ণা রহস্যময় হাঁসি দিয়ে বললো।
বাহ ভালো করেছিস, তারপর„„„„ স্নেহা ব্যাঙ্গ করে বললো।
তো শোন,,,, আমি ফেসবুক থেকে এড্রেস জেনে অনুকে বললাম খোঁজ নিতে, তো অনু খোঁজ নিয়ে জানিয়েছে যে প্রিন্সিপালের বাড়ি আমাদের কলেজ থেকে কিছুটা। তাই ভাবলাম কলেজের নাম করে যাওয়াই যায় । যেই ভাবা সেই কাজ, তাই আমরা বাড়ি থেকে সকাল করে বেরোলাম । শুধু চিঠিটা লেটার বক্সে ফেলতে একটু সময় লেগেছে,,,,,, সুদেষ্ণা একটু ভাব নিয়ে বললো।
জিও মেরে সেরনি,,,, এই বলে আকাশ সুদেষ্ণার পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিলো ।
তো কী লিখেছিস চিঠিতে ?? আমাদেরকেও বল আমরাও একটু শুনি তোর প্রেম বাণী,,,,,,, কেয়া আগ্ৰহ নিয়ে বললো।
ভাই এটা আমার ব্যক্তিগত , এটা বলা যাবে না,,,,,, সুদেষ্ণা মুচকি হেঁসে বললো ।
বন্ধুদের মধ্যে আবার কীসের ব্যক্তিগত ?? তাছাড়া আমিও তো তোর সাথে গিয়েছিলাম, আমাকে বলতেই পারিস,,,,, অনু দাঁত কেলিয়ে বললো।
গিয়ে আমাকে উদ্ধার করেছো , এসো তোমার চরণ স্পর্শ করি,,,,,,, এই বলে সুদেষ্ণা অনুর পা ধরতে উদ্ধত হলো ।
থাক ভাই , নমস্কার করতে হবে না,,,, অনু সুদেষ্ণাকে বাঁধা দিয়ে বললো ।
যখন কথা হচ্ছে বন্ধুদের মধ্যে ব্যক্তিগত ব্যাপারের ,,,,,তো তুই যদি আমাদেরকে নিজের বাসরের কথা বলিস , তাহলে আমিও নিজের চিঠির কথা বলবো । কী বলিস ?,,,,,,, সুদেষ্ণা দুষ্টু হেঁসে বললো।
বাসরের কথা বলবো মানে ?? আরে ভাই তোরাই থাকিস আমার বাসরে আমি না হয় থাকবো না ।,,,,, অনু বোকা হেঁসে বললো।
অনুর কথা শুনে সবাই কপাল চাপড়ালো ।
এই তোরা ক্লাসে যাবি না ?,,,,, সুদেষ্ণার ক্লাসমেট অন্তরা ওদের পাশ থেকে যাওয়ার সময় সুদেষ্ণাকে উদ্দেশ্যে করে বলে ।
হ্যাঁ ।,,,, তুই চল আমরা আসছি।
সবাই একে অপরের থেকে বিদায় নিয়ে যে যার ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা হয় ।
________________________________________________
হিমাদ্র,,,,,,, কোথায় তুমি?? তাড়াতাড়ি এখানে এসো….. হেমন্ত রায় চৌধুরী চিৎকার করে বললেন ।
চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে রান্না ঘর থেকে ছুটে এলো হিমাদ্রর মা ।
কী হয়েছে কী ?? এ ভাবে চেঁচাচ্ছো কেন ?,,,,,, হিমাদ্রর মা শান্ত ভাবে জিজ্ঞাসা করলেন। ততোক্ষণে হিমাদ্র ও নীচে নেমে মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে ।
রেখা তোমার গুনধরকে জিজ্ঞাসা করো মেয়েটা কে ??,,,, ছোটদা যদি না বললে আমি হয়তো জানতেই পারতাম না ।,,,,,এই বলে তিনি ছেলের দিকে তাকালেন।
ছোটদা হলো বাড়ি গার্ড । তার নাম দীনেশ প্রসাদ , এই বাড়ির লোকেরা সবাই ভালোবেসে ছোটদা ডাকে । ছোটদা এখানেই থাকে , তার কেউ নেই। ছোটদার বেশ বয়স হয়েছে , তাই তিনি খুব একটা কাজ করতে পারেন না । তাও তিনি কাজ করেন , প্রবল আত্মসম্মানী কী না। তিনি কাজ না করলেও এই বাড়ির কারোর কোনো অসুবিধা হবেনা , তিনি খেটে খাওয়া মানুষ তার এক কথা,,,, যত দিন বেঁচে আছি খেটে খাবো। আজকের ঘটনা,,,,,,,সকাল বেলা হেমন্ত রায় চৌধুরী যখন কলেজের উদ্দেশ্যে বেরোছিলেন তখন তিনি চিঠিটা ওনার হাতে তুলে দেন । হেমন্ত রায় চৌধুরী দেখেন চিঠির খামের ওপর লিপস্টিক এর দাগ আর নামের জায়গায় হিমাদ্রর নাম লেখা। তিনি ছোটদা কে জিজ্ঞাসা করেন চিঠিটা কে দিয়েছে?? তো ছোটদা জানান তিনি কাউকে দেখেননি । পুরো চিঠিটা পড়েন হেমন্ত রায় চৌধুরী, তারপর বাড়ির ভিতরে যান । বাকিটা ইতিহাস,,,,,,,,,,,, ।
মেয়ে ??? আদ্র তোর বাবাই কোন মেয়ের কথা বলছেন ?,,,,,, এই বলে রেখা ছেলের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালেন।
আই ডোন্ট নো,,,,,এই বলে হিমাদ্র চলে যেতে নেয় ।
দাঁড়াও বেয়াদপ ছেলে , আমার অনুমতি ছাড়া তুমি এক পা ও নড়বে না।
বাবার কথা শুনে হিমাদ্র সোফায় বসে , দৃষ্টি তার মেঝের ওপর ।
ছেলের বিরুদ্ধে এমন কথা শুনে ফুঁসে উঠলেন রেখা , বরের দিকে আঙ্গুল তাক করে বললেন,,,,,,এই একদম আমার ছেলেকে বেয়াদপ বলবে না । তোমার কাজ টাজ নেই সাত সকালে আমার ছেলের নামে বদনাম দিচ্ছো ।
তোমার ঢং দেখলে বাঁচি না, এমন বলছো যেন তোমার ছেলে ধোঁয়া তুলসী পাতা। শোনো রেখা , আমার কাছে কিন্তু প্রমান আছে ।
কীসের প্রমান ??,,,, রেখা চোখ ছোটো ছোটো করে বললেন ।
তোমার ছেলে প্রেম করে ,,,,,,, হেমন্ত রায় চৌধুরী ভাব নিয়ে বললেন।
তো কী হয়েছে?? তুমি করোনি ?,,,,,,,, রেখা ঠোঁট বাঁকিয়ে বললেন।
তাই তো আগে থেকে সাবধান করছি , যাতে আমি যা ভুল করেছি আমার ছেলে না করে ।,,,,,, বিড়বিড় করে বললেন হেমন্ত রায় চৌধুরী।
এরকম বিড়বিড় করে কী বলছো ??
হে হে,,,,,কোথায় কিছু না তো ।,,,, হেমন্ত রায় চৌধুরী বোকা হেঁসে বললেন।
কয় দাও দেখি কী প্রমান আছে,,,,,,
এই নাও,,,,,, এই বলে হেমন্ত রায় চৌধুরী একটা চিঠি রেখার দিকে বাড়িয়ে দিলেন।
তুমি যখন এত কষ্ট করে প্রমান যোগার করেছো তুমিই বরং পড়ে শোনাও,,,,, বাড়িয়ে দেওয়া চিঠিটা না নিয়ে রেখা বললেন।
আচ্ছা তাই হোক,,,,,,,এই বলে হেমন্ত রায় চৌধুরী চিঠির দিকে মনোযোগ দিলেন „„„„„„
Sweetheart ,,,,,,,
চিঠির ওপরের দিকের লেখা পড়ে ছেলের দিকে বাঁকা চোখে তাকালেন হেমন্ত রায় চৌধুরী ,,,,,দৃষ্টি তার মেঝেতে স্থির । তাকে নিয়ে এতক্ষণ যে কথা হলো তাতে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। আদেও সব কথা শুনেছে কী না কে জানে। ,,,,,,,, তিনি পড়া শুরু করলেন ……..
প্রিয় কঠিন পুরুষ,
চলবে,,,,,,,,,,,