হৃদরোগ #অহর্নিশা #পর্ব_সংখ্যা ৬

#হৃদরোগ
#অহর্নিশা
#পর্ব_সংখ্যা ৬

• চনন্দননগরের যান্ত্রিক শহরে শুরু হলো আবার নতুন দিনের সূচনা । আজকে সোমবার আর এই দিনে স্কুল কলেজ যাওয়ার একটু বেশিই তাড়া থাকে । পুরো সপ্তাহটা চলবে এবার ব্যাস্ততায়। ছুটির দিন গুলো অনেক তাড়াতাড়ি কেটে যায় বোঝাই যায় না । প্রতিদিনের মতো আজকেও স্ট্যান্ডে প্রচুর ভিড় , তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছাএ ছাএী ।

. এ ভাই আমাদের লেয়লীর কী খবর ?…. অনিক দাঁত কেলিয়ে বললো ।

আরে সুতৃষ্ণাদি এসেছে কয় দিন হলো তাই সু এত দিন আসিনি , আজকে আসবে কথা হয়েছে আমার। …. স্নেহা মিষ্টি হেসে উওর দিলো ।

সেই ঘটনার পর কেটে গেছে বেশ কয়েক দিন। সুদেষ্ণা আর হিমাদ্রর তেমন একটা দেখা হয়নি । কারন এই কয়দিন সুদেষ্ণা কলেজে আসেনি। দীর্ঘ দুই বছর পর সুদেষ্ণার দিদিভাই তার নিজের বাড়ি ফিরেছে , তাই এই কয়দিন সুদেষ্ণাকে আর পাওয়া যায়নি । সুদেষ্ণা নিজের দিদিভাইকে অনেক ভয় পায় আবার অনেক ভালোও বাসে । তাদের সম্পর্ক আর পাঁচটা দিদি বনের মতো নয় , সুদেষ্ণার দিভাই তার থেকে ছয় বছরের বড়ো। তার দিভাই খুব একটা বকাঝকা করে এমনটা নয় , আবার খুব একটা বন্ধুসুলভ তেমনটাও নয় । তার দিভাই এর ছোটো একটা মেয়ে আছে তার নাম সুদিতি । দিভাই এর বরের নাম রাহুল। সুদেষ্ণা রাহুল দা বলে ডাকে। রাহুল দাও সুদেষ্ণাকে নিজের বনের মতো স্নেহ করেন ।

কলেজের মেইন ক্যামপাস এ সুদেষ্ণা আর অনু বাদে সবাই আড্ডা দিচ্ছে । সময় হলেই যে যার ক্লাস করতে চলে যাবে । আসলে সবাই আলাদা ডিপার্টমেন্টের শুধু কেয়া আর সুদেষ্ণা বাদে । কেয়া আর সুদেষ্ণা ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের আর বাকীরা কেমেস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট ।

জানিস আকাশ কী করেছে ??….. মোহিত হঠাৎ বলে উঠলো ।

আবার কাকে গালাগাল দিয়েছিস ভাই ?,,,,,, কেয়া আকাশের দিকে চোখ ছোটো করে তাকিয়ে বললো ।

আমি কিছু করিনি রে , এই মোহি„„„„

কে কী করেছে ??,,,,,, আকাশ আর কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই সুদেষ্ণা আর অনুর আগমন ঘটলো । সুদেষ্ণা সবার দিকে একবার তাকিয়ে অনিককে প্রশ্ন করলো ।

এখানে আকাশের কথা হচ্ছে , কী আকাশ বলবো ? অনিক আকাশকে চোখ টিপ দিয়ে বললো।

আকাশ অনিকের দিকে চোখ গরম করে তাকালো।

এই ভাই তোরা শুনবি??,,,,, মোহিত বিরক্তি নিয়ে বললো।

হ্যাঁ তাড়াতাড়ি বল , অনু আগ্ৰহ প্রকাশ করলো ।

তো শোন,,,,, কালকে বিকেলের দিকের ঘটনা , আমাদের হোস্টেলের সামনে যে গালর্স হোস্টেল আছে না ? ওতে আমাদের কলেজের সিনিয়র রূপা দি থাকে । একদম আমাদের ঘরের সামনের ঘরটায়, মানে আমাদের জানলা থেকে ওদের জানলা দেখা যায় । এই আকাশ ওই দিদি টাকে দেখে বলেছে,,,,,

মেরে সামনে ওয়ালি খিরকি মে
এক চাঁদকা টুকরা রেহতা হে….. ( বাকিটা নিজের দায়িত্বে শুনে নেবেন )

বলেই খিলখিল করে হাঁসতে লাগলো মোহিত। বেচারার হাঁসতে হাঁসতে নাজেহাল অবস্থা„„„„ এতক্ষণ সবাই খুব মনযোগ দিয়ে মোহিত এর কথা শুনছিলো , তারা হঠাৎ হাঁসির কারন খুঁজে পেলো না ।

তারপর???„„„„ অনু আগ্ৰহ নিয়ে বললো।

মোহিত কিছু বলতে গিয়েও আবার শব্দ করে হেঁসে উঠলো ।

আকাশ মুখ বেঁকিয়ে তাকিয়ে রইলো মোহিতের দিকে ।

অনু মুখ থেকে “চ্” সূচক শব্দ করে বললো„„„„আগে হেঁসে নে তারপর বলিস, না হলে আগে বলে নে তারপর হাঁসিস ।

বলছি বলছি „„„„ বলে মোহিত আবার বলা শুরু করলো , তো ওই রূপা দি আমাদের আকাশের গান শুনে ক্রাশ খেয়েছে বুঝেছিস,,,,,, তাই তো হেডের কাছে কমপ্লেইন করে গেছে । আর হেড আকাশকে ওয়ার্নিং দিয়েছে, যদি দ্বিতীয়বার এরকম হয় তবে ওর বাড়িতে খবর যাবে । বলেই মোহিত হট্ট হাঁসিতে ভেঙ্গে পড়লো । তার সাথে সবাই হেঁসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

শালা তুই আর মেয়ে পেলি না ? শেষমেষ সিনিয়র?,,,,, অনিক দাঁত কেলিয়ে বললো।

হেঁসে নে, হেঁসে নে „„„„ অপনা টাইম আয়গা । জামার কলার ঝাঁকিয়ে একটু ভাব নিলো আকাশ ।

আচ্ছা দিদি টাকে তোর পছন্দ হয়েছে নাকি রে ? „„„ কেয়া দাঁত কেলিয়ে বললো।

আর বলিস না রে , আমি যখন এই গানটা গাইছিলাম তখন আমার কোথাও খেয়ালই ছিলোনা। তারপর আমার চোখ পড়লো সামনের জানলায় দাঁড়ানো দিদিটার ওপর , সে আগুন চোখে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। তারপরের ঘটনা ইতিহাস । সবি কপাল,,,,, বুঝেছিস?? এই বলে আকাশ কপাল চাপড়ালো ।

আরেক দফা হাঁসির রোল পড়লো ওদের মাঝে।

. চনন্দননগর কলেজে অনেক দূর দূর থেকে স্টুডেন্টরা আসে , তাই এই কলেজ থেকে হস্টেলের ব্যবস্থা আছে । ছেলে আর মেয়েদের হোস্টেল আলাদা আছে । সুদেষ্ণাদের সবারই বাড়ি মোটামুটি কাছেই, শুধু আকাশ আর মোহিত হস্টেলে থাকে ।

এই মোহিত ব্যাটা এসে থেকেই ঢোল পিটিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রথমে অনিককে বলেছে তারপর তোদের,,,,, আকাশ দুঃখ প্রকাশ করে বললো ।

আমাদের বলবে না তো , কাদের বলবে,,,, অনিক বললো।

এ ভাই জানিস , আমি কী করেছি ? ,,,,,, এই বলে সুদেষ্ণা অনুর দিকে তাকালো।

সবাই সুদেষ্ণার দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকালো।

কী করেছিস ?? ,,,,, স্নেহা চোখ ছোটো ছোটো করে বললো।

আমি আর অনু হিমাদ্রর বাড়ি গিয়েছিলাম, চিঠি দিয়ে এসেছি।,,,,, সুদেষ্ণা একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো।

কীহ্,,,,,, সবাই একসাথে বলে উঠলো।

তুই আমাকে বললি না কেনো সু ??,,,,,, স্নেহা মুখ ছোটো করে বললো।

তুই যেতে দিতিস না তাই বলিনি „„„ অনু বললো।

এবার তোর কী হবে রে সু ?,,,,, কেয়া আঙ্গুলের নখ খেতে খেতে বললো ।

হিমাদ্র জানলে তো কিছু বলবে ,,,,,,, সুদেষ্ণা শয়তানি হাঁসি দিয়ে বললো ।

তুই না বলেছিলিস হিমাদ্র ভাইকে আর ভালোবাসার কথা বলবি না? ,,,,,,, অনিক সুদেষ্ণা কে প্রশ্ন করলো।

আমি চিঠিটা লিখেছি তার কী প্রমান আছে?? তার পেছন আমি ছাড়ছি না এটাও তো বলেছিলাম । তাছাড়া আমি তার চোখের সামনে পড়বো না আর না ভালোবাসার কথা বলবো এটা বলেছিলাম। তার সামনে না পড়েই ভালোবাসার কথা জানিয়েছি , ঠিক করেছি না ?,,,,, সুদেষ্ণা দুষ্টু হেঁসে বললো ।

সবাই হাততালি দিয়ে শিস বাজিয়ে উঠলো।

মহান কাজ করেছো তুমি, এর জন্য তোমাকে তো পুরস্কার দেওয়া উচিৎ,,,,,, স্নেহা ব্যাঙ্গ করে বললো।

এসব কথা ছাড় , আগে এটা বল তুই হিমাদ্র ভাই এর ঠিকানা কোথায় পেলি ?,,,,,,,, অনিক চোখ ছোটো ছোটো করে বললো।

সুদেষ্ণা একটা মিষ্টি হাঁসি দিয়ে বলতে শুরু করলো,,,,,,

চলবে„„„„„„

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here