হৃদয়ের প্রতিশ্রুতি পর্ব ৩

🌸#হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি 🌸

#আদিলা

#পর্বঃ৩

চারিদিকে বিশাল সবুজ প্রানবন্তর মাঠ… মাঠের বুকে ছোট ছোট নরম দুর্বা ঘাস.. চারদিক দিয়ে সা সা বাতাস বইছে … এর ঠিক কিছুটা দুরে একটা বেঞ্চে ইয়ামিনা মুখ ভার করে বসে আছে। কারন একটাই তার দিহানজি।।কতক্ষন ধরে বসে আছে কিন্তু তার দিহানজির আশার নামই নেয়।।।ইয়ামিনা রাগে ফুলছে মনে মনে বির বির করেই চলছে আজকে আসুক একদমই কথা বলব না উনার সাথে…হটাৎ কেউ তার সামনে হাটু গেরে বসে ইয়ামিনার সামনে এতগুলো চকোলেট ধরে।। ইয়ামিনার মুখটা খুশিতে যেন প্রসারিত হয়ে যায় কিন্তু পরক্ষনে ব্রু কুচকে মুখটা অন্য পাশে ফিরিয়ে নেয়…

দিহান মুচকি হেসে…. কি হলো ম্যাডাম এখনও রেগে থাকবেন।।

ইয়ামিনা এখনো মুখটা অন্য পাশে করে রেখেছে..

আচ্ছা সরি এদিখে তাকাও।।প্লিজ।।।।। এদিকে তাকিয়ে এই অদম্যকে উদ্ধার করো।।। এই অশান্ত মনটাকে শান্ত করো..

…………………

কি হলো আচ্ছা তুমি বললে এই জনসবার সামনে কান ধরে উঠ বস করতে রাজি আছি।।কি বলো করব…

ইয়ামিনা এবার বেশ রেগেমেগে বলে… আপনি জানেন আমি কতক্ষন ধরে বসে আছি আপনারর অপেক্ষায় আর আপনার এখন আসার সময় হল..

এই দেখো কান ধরে সরি বলছি। আচ্ছা যাও উঠ বস করছি পরে কিন্তু লোকে বউ পাগলা বলবে..

ইয়ামিনা ব্রুটা কিঞ্চিত প্রসারিত করে..
বউ!!!
দিহান মাথায় নাড়িয়ে মুচকি হাসে…….

ইয়ামিনা লাফিয়ে উঠে চোখেমুখে খুশির ঝলক ।। সত্যি!!! আমি যা ভাবছি সত্যি দিহানজি।। আমি ভাবতেও আরছি না..বলুন না দিহানজি আমি আপনার মুখে শুনতে চাই…

ইয়ামিনার দুগাল টেনে বলে… হ্যা একদম ঠিক ভাবছো ইয়ামনি।।বাসায় সবাই আমাদের দুজনের সম্পর্কের কথা মেনে নিয়েছে এবং আমাদের বিয়ের কথাটাও খুব শীগ্রই বিয়ের তারিখ ঠিক করবে।। এখন শুধু তোমাকে সম্পুর্ন ভাবে আমার করার পালা..

আমাকে আগে বলেননি কেন আপনি..

বলতে দিয়েছো কই এসেই তো দেখি মুখ ফুলিয়ে রেখেছো.

আমি তো ভেবেছি আন্টি আমাকে মেনে নিবে না কারন প্রথম থেকে আমাকে উনার পছন্দ ছিল না…
ওসব বাদ দাও তো ইয়ামনি বিয়ে হলে এমনি সব ঠিক হয়ে যাবে…

ইয়ামিনা দুহাতে অজস্রভাবে দিহানের গাল টেনে বলে..
“ভালোবাসি পাগলা”

হটাৎ দরজার বেল বাজতেই ইয়ামিনা অতীত থেকে বেরিয়ে আসে।। চোখের কোনে জ্বল গুলো চিক চিক করছে কেও দেখার আগে মুছে নেয়।।।। দরজার সামনে যেতেই দেখে একজন ডাক্তারকে দু জন সার্ভেন্ট এসে আমিরের রুমে নিয়ে যাচ্ছে… ইয়ামিনা পিছে পিছে যায়…

ড. আরিফ আমিরকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে মুখুটা কিছু মলিন করে ফেলে… তারপর জাফরা ভাবিকে সব বুঝিয়ে দেয় কোন অওষুধ কখন কিভাবে খেতে হবে লাগাতে হবে।। ইয়ামিনা চুপ করে দাড়িয়ে সেসব শুনছিল আর দেখছিল…

আমির আরিফের এমন ব্যবহারে বেশ রেগে গেলেন সে ভাল করেই জানে সে কখনও হাটতে পারবে না তারপরও ড.আরিফেরর এসব বনিতা দেখে বেশ রেগে বলে..

দেখুন ড.আরিফ আমাকে আপনি কোনো ছোট বাচ্চা ভাববেন যে আবেগের মধ্যে ভাসে আর একটু কিছুর জন্য হতাশ হয়ে যাব…
তাই আপনার এসব মিলোর ড্রামা বন্ধ করে আর বনিতা না করে সোজাসাপ্টা সত্যটা বলেন…
ড. আরিফ কাচুমাচু করে বলে…. আসলে কখনও হাটতে পারবে না তা বলতে পারব না আবার হাতটেও পারবেন তার গেরান্টিও দিতে পারবনা.. আসলে আপনার মেজর হাড্ডিতে চাপ বেশি পরায় অকাজো হয়ে পরেছে আমরা সব রকমের চেষ্টা করে দেখছি বাকিটা আল্লাহ ভরশা…
আমির এরকম উত্তর আশা করে নি.. বেশ বিরক্ত নিয়ে বলে বলা হয়েছে এখন যেতে পারেন গেট লস্ট…

ইয়ামিনা এখনো ঠাই দাঁড়িয়ে আছে.. ভাবছে এতকিছু হওয়ার পর একটা মানুষ কিভাবে এতটা স্ট্রোং থাকতে পারে যেখানে সে সত্যিটা জানে…ইয়ামিনার চোখে জল। কেউ দেখার আগে সেটা আড়াল করে ফেলে…

ড. আরিফ বের হলে ইয়ামিনা তার পিছু পিছু যেয়ে জিজ্ঞেস করে..
ড.সত্যি উনিকি কখনও আগের মত হাতটে পারবে না..
ড.আরিফ কিছু চিন্তিত হয়ে বলে…
উনি আগের মত হাটতে না পারার চান্সেস খুব কম বলতে গেলে ৮০%… বাকি ২০% শিওর না উনি হাটতে পারবে কিনা।। তাই উনাকে বসিয়ে না রেখে উনাকে বেশি বেশি করে হাটাতে হবে খুব যত্ন নিবে হবে…বাকিটা আল্লাহর উপর।।
ড..আরিফ চলে যায়..

ইয়ামিনার মনের চিন্তার ভোর করে উনিতো উনার ধারের কাছে আমাকে আসতে দেয় না আমি কিভাবে এত কিছু করব অনিশা মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষন চিন্তা করে.. আসলে কি উনার এসবের জন্য আমি দায়..
___________

ইয়ামনা রুমে এসে জাফরা ভাবিকে দেখে তিনি আমিরকে কিছু হয়তো বুঝাচ্ছেন আর আমির বেশ গম্ভীর ভাবে শুনে চলছন ইয়ামিনার দিকে চোখ যেতে কিছুক্ষন তাকিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়…জাফরা একবার ইয়ামিনার দিকে চেয়ে বের হয়ে আসে রুম থেকে…
আমির পাশে থাকা টেবিলের কাছ থেকে পানি নিয়ে যেন নিতে পারছে না ইয়ামিনা দৌড়ে ধরেতে গেলে…
আমির ইয়ামিনার হাত শক্ত করে ধরে দৃষ্টি পানির দিকে রেখে বলে..

আমি তোমাকে বলেছি সাহায্য করতে.. কোন সাহসে সাহায্য করতে আসো খবদার নেক্সট টাইম যেন না দেখি বলে এক ঝটকা মেরে ইয়ামিনার হাত সরিয়ে দেয়…

রুহান বলে চিতকার দেয় আমির.. রুহান দৌড়িয়ে আসে.. কিছুটা হাপাতে থাকে.. ভয়ে তার অন্তরআত্মা কেপে উঠেছিল…হাপাতে হাপাতে জি স্যার বলেন..

আমাকে ওয়াসরুমে নিয়ে যা ওয়াশ হবো.. রুহান আমির কে ধরে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দেয়… যাওয়ার আগে আমির পেছনে তাকিয়ে বলে..তোমাকে এই রুম কি এই বিছানাতে ঠাই দিতাম না শুধু জাফরা ভাবির কথাতে তোমাকে সহ্য করছি.. নিয়ে যা রুহান…

ইয়ামিনা এখনও ঠাই দাড়িয়ে আছে…এই লোকটা তাকে এত ঘৃণা করে কিন্তু তার অবস্থা জন্য সত্যি কি আমি দায়….
____________

রাত.. ২.০০ছুই ছুই..
ইয়ামিনার চোখে ঘুম নেই।। বিছানার একপাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে.. ডিম লাইটের আলো রুমটাকে আভছা আলোকিত হয়ে আছে..আমির যে নিশ্চুপে চোখের জল ফেলছে ইয়ামনা সেটা ভাল করেই বুঝতে পারছে।। মানুষটা যতই শক্ত থাকুক দিনে শেষযে সবাই নিজের কস্টটা ভাগকরার জন্য একটা ভরশার হাত খুজে বেড়ায়… একটা মানুষকে জড়িয়ে ধরে কস্টটের ভাগাভাগি করছে চায়.. কিন্তু সেই মানুষটাই যে আমিরের নেই ছেড়ে চলে গেছে নিজের স্বার্থের জন্য….ইয়ামিনার চোখের কোনে পানি..দুজনের চোখে যেন ঘুম নেই।। ঘুম তো তাদের প্রিয় মানুষ চুরি করে নিয়ে গেছে..
দুজনে যেন একই আত্মার মানুষ। বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ।।কিন্তু একই আত্মার হয়ে তারা এক না.. দুইটি ভিন্ন মানুষের কাছে নিজেদের ভালবাসা খুজচ্ছে..

♪♪লইয়া যাইও দিল দেশে♪♪
কইও কথা নিশিতে……..

~হলিদিয়া ফুল বনে~
আসিবো সাজি দিলও টানে…….

🍁দিল ডাকিয়া কও মোরে🍁
এক নজর দেখি বসিয়া….

🍁দিল আমার কিছু বুঝেনা🍂
~ও দিল আমার….~

চলবে… 🌸

কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন🌸💐

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here