হৃদয়ের শুভ্রতা পর্ব ২০

#হৃদয়ের_শুভ্রতা🌸🌸

পর্ব~২০

#ফাবিহা_নওশীন

🌺🌺
শুভ্রা কফির মগ হাতে হৃদের সামনে দাড়িয়ে আছে।হৃদ শুভ্রার হাত থেকে কফির মগটা নিলো।শুভ্রা মনে মনে শুধু বলছে,
খাও চান্দু তারপর বুঝবে ঠেলা।

হৃদ কফির মগটা মুখের সামনে নিয়ে সরু চোখে শুভ্রার দিকে তাকালো।তারপর আবার মগটা নামিয়ে নিলো।শুভ্রার সামনে ধরে বললো,
—–নেও তুমি খাও।

শুভ্রা ঢুক গিলে অবাক হয়ে বললো,
—–আমি কেন খাবো?আমি খাবোনা।

হৃদের সন্দেহ শুভ্রা কিছু একটা গড়বড় করেছে।তাই বললো,
—–তোমাকে তো খেতেই হবে বেবি।নেও কুইক।

শুভ্রা দ্রুত বললো,
—–আমি খাবোনা।কেন খাবো?তুমি খেতে চেয়েছো এনেছি।এখন ইচ্ছে না হলে ফেলে দেও।

—–ফেলার জন্য তো আনতে বলিনি।খাওয়ার জন্য এনেছি।তুমি একটু টেস্ট করে দেও।বলা তো যায় না যদি বিষ টিষ দেও?

শুভ্রা ভ্রু কুচকে বললো,
—-বিষ!!! বিষই দেওয়া উচিত ছিলো।

—–যদি আপোশে খাও তো ভালো নয়তো কিভাবে খাওয়াতে হয় আমার জানা আছে।
হৃদ শুভ্রাকে আলমারির সাথে চেপে ধরে।তারপর মুখের সামনে কফির মগ নিতেই শুভ্রা বললো,
—-ওকে খাচ্ছি।
শুভ্রা কিছুটা বাধ্য হয়েই হৃদের হাত থেকে কফিটা নিয়ে এক চুমুক দিলো।
তারপর ঢুক গিলে হৃদের হাতে কফির মগ দিলো।

ঝালে শুভ্রার জিহবা,মুখ,গলা জ্বলে যাচ্ছে কিন্তু মুখে প্রকাশ করছেনা।শুভ্রা মুখ শক্ত করে থমকে দাঁড়িয়ে আছে।কোনো কথা বলছেনা।ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে পানি খেতে।মনে মনে বলছে আমাকে যখন খাইয়েছো তোমাকেও খেতে হবে।
হৃদ শুভ্রাকে পর্যবেক্ষণ করে শুভ্রার বরাবর দাঁড়িয়ে কফিতে চুমুক দিলো।কফিতে চুমুক দিয়েই হৃদ স্ট্যাচু হয়ে গেলো।
শুভ্রা বিজয়ের হাসি দিলো।তারপর দৌড়ে পালানোর জন্য পা বাড়ালেই হৃদ ওর হাত চেপে ধরে।কফির মগ রেখে শুভ্রাকে বললো,
—–ঝাল খাইয়েছিস মিষ্টি খাওয়াবি না?

শুভ্রার বুক ধক করে উঠলো।হাতের দিকে অসহায় চাহুনি দিলো।
হৃদ শুভ্রার হাত ধরে টান মেরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।একহাতে কোমড় জড়িয়ে ধরলো অন্য হাত শুভ্রার চুলে ডুবিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।

হৃদ শুভ্রাকে ছেড়ে দিতেই শুভ্রা হৃদকে মারতে লাগলো।
হৃদ শুভ্রার দুহাত ধরে চোখ মেরে বললো,
—–এমন মাসালা কফি আমি রোজ খেতে রাজী।
সাথে বউয়ের সুইট ফ্রি।

শুভ্রা হৃদকে সরিয়ে দিয়ে গালাগাল করতে করতে ঘরের বাইরে পা দিলো।

শুভ্রা রুম থেকে বের হতেই রোজকে ঝড়ের গতিতে রুমে ঢুকতে দেখলো।
রোজ এত তাড়াতাড়ি বাসায়?আর এভাবে কেন রুমে ঢুকলো?কিছু কি হয়েছে?
শুভ্রা রোজের পেছনে পেছনে রুমে গেলো।রোজ ব্যাগ রেখে টেবিলে শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।

শুভ্রা রোজকে কাদতে দেখে ভয় পেয়ে গেলো।আতংকিত চোখে বললো,
—–রোজ!!

রোজ শুভ্রাকে দেখে থমকে গেলো।কিন্তু কান্না থামাতে পারছেনা।শুভ্রা রোজের কাছে যেতেই রোজ শুভ্রাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেদে দিলো।শুভ্রা রোজের কান্না নিতে পারছেনা।শুভ্রা স্তব্ধ হয়ে রোজের পিঠে হাত বুলাচ্ছে।নানা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
শুভ্রা রোজকে শান্ত করে বিছানায় নিয়ে বসালো।চোখের পানি মুছে দিয়ে পানি খেতে দিলো।রোজ পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিলো।মনে হচ্ছে গলা শুকিয়ে গেছে।
শুভ্রা রোজের গালে হাত রেখে বললো,
—–বল কি হয়েছে?

রোজ না চাইতেই ওর চোখে আবারো পানি চলে এলো।চোখের পানি মুছে সবকিছু বললো।সবটা শুনে শুভ্রা নির্বাক।শুভ্রা রোজকে আবারো জড়িয়ে ধরলো।
শুভ্রা ভাবতে পারেনি রোজের জীবনে এমন কিছু ঘটবে।শুভ্রা ভাবছে,
“অরিত্রকে দেখে খারাপ মনে হয়নি।ভালো ছেলে মনে করেছিলাম।কথা বলে যথেষ্ট ভদ্র ছেলে মনে হয়েছিলো।রোজের কাছেও অনেক প্রসংশা শুনেছি।তাহলে রোজকে কেন কষ্ট দিলো?ওরা এমন কেন?”
শুভ্রা নিজেও কাদছে।চোখের পানি থামাতে পারছেনা।

কিন্তু না শুভ্রার মনে হচ্ছে,
“আমাকে দূর্বল হলে চলবেনা।রোজকে সামলাতে হবে।এমন ঘটনার সম্মুখীন আমিও হয়েছি।কষ্ট কাকে বলে আমি বাচ্চা বয়সেই অনুভব করেছি।রোজকে একা ছাড়া যাবেনা।ওকে সাপোর্ট দিতে হবে,শক্তি যোগাতে হবে।ওকে ভেঙে পড়তে দেওয়া যাবেনা।”

শুভ্রা চোখ মুছে রোজকে সোজা করে বসালো তারপর ওর চোখের পানি মুছে দিলো।
—–রোজ কাদিস না।আমি তোর সাথে আছি।তোর ভাইয়া আছে।তোর পুরো পরিবার তোর পাশে আছে।তুই কোনো অন্যায় করিস নি তুই কেন কষ্ট পাবি?বি স্ট্রং।অরিত্র ওর কৃতকর্মের ফল পাবে।ওকে পস্তাতে হবে।তুই কাদবিনা।একদম না।এমন একটা মানুষের জন্য চোখের পানি ফেলবি না।

হৃদ শুভ্রার খোজে রুম থেকে বেরিয়েছে।রোজের রুমের দরজা খোলা দেখে ওর রুমের কাছে আসে।দরজার সামনে এসে ওদের এভাবে দেখে শকড হয়ে যায়।রোজের প্রতি হৃদ অনেক সেন্সেটিভ।বোনকে অনেক ভালোবাসে।রোজের চোখের পানি ওর বুকে বিধছে।
হৃদ হন্তদন্ত হয়ে রোজের রুমে ঢুকে।রোজ শুভ্রা দুজনেই হৃদকে দেখে হকচকিয়ে যায়।রোজ তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নেয়।
হৃদ রোজের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
—–কি হয়েছে?তুই কাদছিস কেন?

রোজ কোনো জবাব দিচ্ছেনা।হৃদ শুভ্রার দিকে তাকালো।।
—–শুভ্রা রোজের কি হয়েছে?

শুভ্রা রোজের দিকে একবার চেয়ে বললো,
—–রুমে যাও এসে বলছি।

হৃদ কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।তারপর শুভ্রাকে বললো,
—–তাড়াতাড়ি এসো।রাইট নাও।

হৃদ যেতেই রোজ শুভ্রার হাত ধরে ভয়ে ভয়ে বললো,
—–আপি কি হবে এখন?ভাইয়ার যে রাগ ভাইয়া জানলে অনেক ঝামেলা বেধে যাবে?রক্তারক্তি হয়ে যাবে।

শুভ্রাও বুঝতে পারছে হৃদের কানে এ কথা যাওয়া মানে খুনাখুনি হয়ে যাওয়া।হৃদ কিছুতেই অরিত্রকে ছাড়বেনা।হৃদকে থামানোও সম্ভব না।কিন্তু হৃদকে না জানিয়েও উপায় নেই।
রোজকে বললো,
—-কিন্তু কিছু করার নেই হৃদকে জানাতে হবেই।একদিন না একদিন জানবেই।আমি চেষ্টা করবো যাতে হৃদ কোনো গন্ডগোল না করে।

~~~~~

হৃদ রুম জুড়ে পাইচারি করছে।ওর কপালে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।শুভ্রা রুমে যেতেই হৃদ শুভ্রার কাছে এসে বললো,
—–কি হয়েছে রোজের?কোনো সমস্যা? কেউ কিছু বলেছে?

শুভ্রা কিছুক্ষণ হৃদের দিকে চেয়ে রইলো।বলার সাহস পাচ্ছেনা।সাহস জুগিয়ে বললো,
—–অরিত্র রোজের সাথে আজ ব্রেকাপ করে ফেলেছে।

হৃদ যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।শুভ্রার দিকে অবিশ্বাসের চোখে চেয়ে আছে।।
শুভ্রা হৃদকে সবটা খোলে বললো।
হৃদ হাতের মুঠো শক্ত করে আছে।কপালের রগগুলো ফুলে উঠছে।মাথায় রক্ত টগবগ করে যেনো ফুটছে।হৃদ শুভ্রার দিকে চেয়ে বললো,
—–ওকে সেদিন শুধু একটু মেরেছিলাম আজ আমি ওকে খুন করবো।ওর এত বড় সাহস ও আমার বোনকে হার্ট করেছে।ওর ইমোশন নিয়ে খেলেছে।ও ভুল জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছে।জানোয়ারটাকে আমি কুকুরের মতো করে মারবো।ব্লাডি বিচ।
হৃদ রুম থেকে বের হতে নিলেই শুভ্রা দরজা বন্ধ করে দিলো।
—–তুই দরজা বন্ধ করলি কেন?

—–কারণ তুমি পাগল হয়ে গেছো।তুমি অরিত্রকে খুন করলে তোমার বোন খুশিতে তোমার গলা জড়িয়ে ধরবে?রোজ তো অরিত্রকে ভালোবাসে,
অরিত্রের ক্ষতি ও মেনে নিতে পারবে?রোজ একটা ট্রমাতে আছে।এখন আমাদের উচিত ওর পাশে দাড়িয়ে ওকে সাপোর্ট দেওয়া,খুনাখুনি না।রোজ অনেক কষ্ট পাচ্ছে।তোমার সাপোর্ট প্রয়োজন।

হৃদ রোজের রুমে গিয়ে রোজের পাশে বসলো।রোজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
—–তুই কি চাস?তুই যদি চাস আমি অরিত্রকে তোর পায়ের সামনে এনে ফেলবো।

রোজ শুকনো হেসে বললো,
—–তুমি জানো তোমার বোন এটা কখনো চাইবেনা।ভালোবেসেছি বলে কুড়িয়ে নেবো?না।আমার জন্য চিন্তা করোনা।

হৃদ কিছু বলতে পারছেনা।ভিতরে ভিতরে বোনের অবস্থা দেখে কষ্ট পাচ্ছে।ইচ্ছে করছে অরিত্রকে খুন করতে।কিন্তু রোজের মুখের দিকে চেয়ে সেটা পারছেনা।

শুভ্রা বাড়ির সবাইকে রোজের বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছে।রোজের সাথে এমন একটা ঘটনা কেউ মেনে নিতে পারছেনা।রোজের পাপা রোজের সামনে যেতে পারছেনা।তিনি তার প্রিন্সেসের কান্নারত মলিন মুখ দেখতে পারবেনা।যে মেয়ে পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখে সে আজ নিশ্চুপ।এটা তিনি মানতে পারছেননা।অন্যদিকে রোজের মাম্মা মেয়ের অবস্থা দেখে কেদে ভাসিয়ে ফেলছে।

অপরদিকে হৃদ শুভ্রার সাথে রাগারাগি করছে কেন ও বাড়ির সবাইকে সবটা জানালো।।
—–তোকে কে বলেছে আগ বাড়িয়ে নাচতে নাচতে সবাইকে বলতে?

শুভ্রা হৃদের কথার কড়া উত্তর দিলো।
—–তুমি ওর ভাই,আর বাকিরা কি উড়ে এসেছে?ওর অবস্থার কথা ওর বাবা-মায়ের সবার আগে জানা উচিত।
ওর যে অবস্থা তাতে ওর সবার পাশে থাকা প্রয়োজন।আপনজনের ভালোবাসা,সহানুভূতি,সাপোর্ট সব থেকে বেশী প্রয়োজন।নয়তো একা একা গুমরে মরতো।অসহায়ত্ব ও একাকিত্বে ভুগতো,সব বিষাদ লাগতো।কিভাবে বুঝতে পারছি জানো?
কারণ এই ঘটনা আমার সাথেও ঘটেছে।তখন আমার এসবের খুব প্রয়োজন ছিলো কিন্তু পাইনি।তাই আমি চাইনা রোজ আমার মতো ফিল করুক।মরে যেতে চাক।

শুভ্রা কথা শেষ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।শুভ্রার কথা শুনে হৃদের খারাপ লাগছে।যাইহোক, যেকারণেই হোক কোনো একদিন শুভ্রাকেও কষ্ট দিয়েছে।শুভ্রাকেও হৃদয় ভাংগার ব্যথা সহ্য করতে হয়েছে।

রোজের মাম্মা রোজকে যত্ন সহকারে খাইয়ে দিচ্ছে।রোজ খেতে চাইছেনা কিন্তু তিনি মেয়েকে বাচ্চাদের মতো করে খাওয়াচ্ছেন।হৃদ আর হৃদের পাপা দরজার সামনে দাড়িয়ে দেখছে।হৃদ ভিতরে গিয়ে বললো,
—–মাম্মা এটা কিন্তু ঠিক না।মেয়েকে কি সুন্দর খাইয়ে দিচ্ছো আমি কি ভেসে এসেছি?

—–আসছে আমার বুড়ো খোকা মায়ের হাতে খেতে।খাওয়ানোর জন্য বউ আছে বউয়ের হাতে গিয়ে খা।

এভাবে নানান মজা,গল্পে রোজের খাওয়া শেষ হলো।রোজের বাবাও যোগ দিয়েছেন।রোজের অনেকটা ভালো লাগছে।পুরো পরিবার যখন একসাথে থাকে তখন মনে হয় যেনো সমস্ত বিপদ থেকে মুক্ত আছে।আগলে রাখার লোক আছে।
খাওয়ানো শেষ করে রোজের মাম্মা বললো,
—-আজ রোজ আমার সাথে ঘুমাবে।

শুভ্রা চট করে বললো,
—–উহু আজ আমি রোজের সাথে থাকবো।সারারাত গল্প করবো।

রোজের মাম্মা মানা করলেও শুভ্রার জোড়াজুড়িতে রাজি হলো।হৃদ বুঝতে পারলো শুভ্রা ওর সাথে অভিমান করে রোজের সাথে থাকবে।

সবাই চলে যাওয়ার পর রোজের পাপা রোজের কাছে এলেন।তিনি রোজকে অরিত্রের বিষয়ে একটা কথাও বলে নি এতক্ষণ।
রোজের মাথা টেনে তিনি কাধে নিলেন।রোজ পাপার গলা জড়িয়ে ধরলো।তিনি মেয়ের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বললেন,
“মানুষের জীবনে অনেক দূর্ঘটনা ঘটে কারণে অকারণে।প্রতিটি ঘটনা ঘটার পেছনে সূক্ষ্ম কারণ থাকে।এ ঘটনাগুলো আমাদের জীবন বদলে দেয় কিংবা এলোমেলো করে দেয় ঝড়ের মতো।কিন্তু আমাদের শিক্ষা দেয়।পরবর্তীতে জীবনের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।মানুষের জীবন অনেকগুলো উপাদান নিয়ে গঠিত।যেমন বাবা-মা,ভাই-বোন, ফ্যামিলি,আত্মীয়স্বজন,বন্ধুবান্ধব,পড়াশোনা,ক্যারিয়ার,ভালোলাগা, ভালোবাসা,সম্মান,স্বপ্ন, বিয়ে,স্বামী সংসার ইত্যাদি।ভালোবাসা জীবন নয় জীবনের একটা উপাদান তবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।এই যে তোমার পরিবার তোমাকে কত ভালোবাসে।পরিবারের চেয়ে কেউ আপন হয়না।জীবন কিছু কেড়ে নিয়েছে হয়তো এর চেয়ে ভালো কিছু তোমাকে উপহার দিবে তাই।তাই বি স্ট্রং।আই নো তুমি পারবে।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here