হয়ত পর্ব ২৩

#হয়ত
পর্ব:- ২৩
.
আজ রিমির রিসেপশন। দিশাদের ফ্ল্যাটে গ্রাম থেকে আগত মানুষের ভিড় জমেছে। তনয়া বেগম কিংবা রাবেয়া বানু কেউই এই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। গ্রামের বাড়ি ফাঁকা রেখে আসতে পারলেন না উনারা। তাছাড়াও রিমি আর রিমির বর আসবে গ্রামে। ওদের যত্ন আত্নীরও একটা ব্যাপার আছে।
.
দিশা আর অথৈ গিয়েছে বিউটি পার্লারে সাজতে। তাপৌষিকেও নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক পীড়াপীড়ি করা হয়েছিল। তবে অসুস্থ বলে তাপৌষি যেতে পারেনি। ওই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাজার জন্য বসে থাকা এখন ওর পক্ষে সম্ভব নয়।
রিসেপশন প্রোগ্রামের সময় ঠিক করা হয়েছে রাতে। ঢাকার এক নামকরা কমিউনিটি সেন্টার বুক করা হয়েছে। গেস্ট সংখ্যা প্রায় হাজার ছুঁইছুঁই।

এই কমিউনিটি সেন্টারে এসে তাপৌষির হাসফাস লাগছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও প্রচুর মানুষের ভিড় এখানে। এখন মনে হচ্ছে জর্জেটের জামা না পড়ে হালকা সুতির জামা পড়লে ভালো হতো। তাপৌষি আজ একদমই সাজে নি। এমনকি কোন জুয়েলারিও ওর গায়ে নেই। প্রচণ্ড অস্বস্তি নিয়ে ও কমিউনিটি সেন্টারে এসেছে।

দিশা আর অথৈ এসেছে সবার পরে। ওদের সাজতে প্রায় অনেক সময় চলে গেছে। খোপায় দেওয়ার জন্য শাড়ির সাথে ম্যাচিং ফুল পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে স্প্রে কালার করে ফুল আনা হয়েছে। বর্ষণকে অনেক রিকোয়েস্ট করার পর ও এনে দিতে রাজি হয়েছে।

এত সুন্দর সাজ অথচ কোন ছবি তুলবে না দুজন তা কী হয়? রিমির পাশে যেয়ে দুই পার্লার সুন্দরী মুখ টেরাবাঁকা করে ছবি তোলা শুরু করেছে। রিমির সাথে ছবি তোলার পর্ব শেষ করে দুজন আবার সিঙ্গেল ছবি তুলছে। রৌদ এদের সিঙ্গেল ছবি তুলে দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠেছে। স্টেজের একপাশে দিশা, অথৈ আর রৌদের লাফালাফি তাপৌষি নিচে চেয়ারে বসে দেখছে। ভালোই লাগছে ওর। এরা কত সুন্দর মজা করছে!
হঠাৎ ওর চোখে পড়লো কালো শার্ট, ব্লু জিন্স পড়া একজনের উপর। হাতে রোল্যাক্সের হাত ঘড়ি। চুল গুলো পরিপাটি ভাবেই আছড়ানো। কী অসাধারণ লাগছে মানুষটিকে! এই যে খুব সাধারণ ড্রেসাপেও মানুষটাকে কী ব্যক্তিত্ববাণ লাগছে তা কী সে জানে? গায়ে ব্যান্ড বলতে সেই ঘড়িটাই। মূল্য ট্যাগ লাগিয়ে ঘোরার মতো মানুষ সে নয় তা তাপৌষি অনেক আগেই জেনে গিয়েছে।
স্টেজের মাঝে সুন্দরভাবে চারসেট সোফা সাজানো। মাঝের সোফায় দুই জনের বসার জায়গা। সেখানে রিমি বসে আছে। এখন এদিকে মানুষ নেই বললেই চলে। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু হওয়ার জন্য সবাই ওইদিকেই। রিমির বরও সম্ভবত সেখানে অতিথিদের সাথে কথা বলছে। রিমির পাশে বসে ছবি তুলছে সেই ব্যক্তিত্ববাণ পুরুষটি। “বর্ষণ”। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ছবি তুলতে তার বিশেষ আগ্রহ নেই। তবুও রিমির জোরাজুরিতে ক্যামেরার ফ্ল্যাশের সামনে সে হাসি মুখে বসে আছে।
.
খাওয়ার সময় তাপৌষি খুব একটা খেতে পারলো না। খাওয়া শেষে ও বারবার দিশাকে জিজ্ঞেস করছে ওরা কখন রওনা দিবে। তখন দিশার উত্তর ছিল ‘এই আর কিছুক্ষণ’। তবে সমস্যা বাধলো পড়ে। হঠাৎ তাপৌষির দিক তাকাতেই দিশা দেখলো তাপৌষি খাবারের একটা টেবিলে হেলান দিয়ে বসে আছে।
-‘ তোমার কী খুব খারাপ লাগছে তাপৌষি?’
-‘ দিশা আপু আমাকে একটু ওয়াশরুমে যেতে সাহায্য করবে?’
-‘ হুম চলো।’
তাপৌষি ওয়াশরুমে ঢুকলে দিশা দরজার সামনে দাঁড়ায়। কিন্তু তাপৌষি ত্রিশ মিনিটের মাথায়ও যখন বের হচ্ছিল না তখন দিশার চিন্তা বেড়ে যায়। দুইবার সজোরে নক করার পরও যখন তাপৌষি কোন সাড়া দিল না তখন দিশা ভয় পেয়ে যায়। পার্স থেকে ফোন নিয়ে অথৈকে ফোন করে ডাক দেয়। ফোন রাখার পর আবার ও দরজায় নক করতে থাকে। এক সময় গেট খুলে তাপৌষি বের হয়ে আসে।
-‘ দিশা আপু আমি এক্ষুণি বাড়ি যাবো প্লিজ।’
-‘ কী হয়েছে তোমার তাপৌষি?’
তাপৌষির শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বমি লাগছে। তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না ও। রীতিমতো টলছে। ওয়াশরুমের টাইলসে একসময় ও বসে পড়ে। সারা মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। ঘাম ঝরছে তরতর করে। তাপৌষি কোন মতে বলল,
-‘ দিশা আপু আমার ডিজমেনোরিয়া আছে।’
দিশা তাপৌষির এই অবস্থা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞত। ওর নিজেরই হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে শরীর অবশ হয়ে যাবে।
অথৈ আসার পর দিশা শরীরে বল পেল। বর্ষণকে ফোন দিয়ে শুধু “বাড়ি যাচ্ছি, তাপৌষি অসুস্থ” এইটুকুই বলল। তারপর ‘পাঠাও’ থেকে ক্যাব বুক করে দ্রুত তাপৌষিকে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টার থেকে বের হয়ে এলো।
তাপৌষি হাটতে পারছিলনা। দিশা আর অথৈ এর গায়ে ভর দিয়েই ও ক্যাব তারপর ক্যাব থেকে ফ্ল্যাট অবধি এসেছে। কোন মতে জামা পাল্টিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। ভয়ানক পেটের ব্যথা শুরু হয়েছে ওর। দিশা পানি গরম করে হট ব্যাগ তাপৌষি কোমরের কাছে রেখেছে। ঘরে থাকা একটা ব্যথা নাশক ট্যাবলেট খাইয়ে দিয়েছে। কিন্তু ব্যথা কিছুতেই কমছিল না।
অথৈ তাপৌষির জন্য হালকা সুপ রাঁধছে। কিন্তু সুপ না খেয়েই তাপৌষি ব্যথায় ছটফট করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে।
.
রিমির রিসেপশন উপলক্ষে গ্রাম থেকে যারা এসেছিল তারা আজ রাতেই কন্যা ও জামাতা নিয়ে রওনা হবে। দিশা -রৌদের ভার্সিটি থাকায় ওরা যেতে পারবে না। আর বর্ষণের পক্ষেও এখন যাওয়া সম্ভব না। হাতে অনেক কাজ পড়ে আছে। ও ভাবছে শেয়ারে একটা রেস্টুরেন্ট খোলার কথা। সেই রেস্টুরেন্ট নিয়েই পার্টনারের সাথে আলোচনা আছে কাল।
তনয়া বেগম চেয়েছিলেন তাপৌষি যেন রিমিদের সাথে চলে আসে। তবে দিশার কাছে তাপৌষির শারীরিক অবস্থা শুনে তিনি তাপৌষিকে ঢাকাতেই থাকতে বললেন।
.
.
চলবে….
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here