হয়ত পর্ব ২৯

#হয়ত
পর্ব:- ২৯
.
তাপৌষি বসে আছে রাজশাহী রেলস্টেশনে। ঘড়িতে এখন এগারোটা বেজে উনিশ মিনিট। ট্রেন এসে থেমেছে প্রায় এক ঘণ্টা আগে। সেই সকাল থেকেই ও ওর বাবার ফোনে ফোন করে যাচ্ছে। কিন্তু ফরিদ সাহেব ফোন ধরছেন না। হয়ত ব্যস্ত আছেন। তাই বলে কী একটা বারও ফোনের দিকে নজর দেননি?
.
তাপৌষিকে স্টেশন অবধি এগিয়ে দিতে এসেছিল রৌদ। ফেরার আগে তাপৌষির ফোন নাম্বার নিতে ভুলেনি সে। তাপৌষিকে বারবার করে বলে দিয়েছে দরকারে অদরকারে ফোন দেয় যেন। বাড়ি পৌঁছে ফোন দেওয়ার কথাও অনেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। বলতে গেলে রৌদ ব্যতীত ওদের কারও কাছেই তাপৌষির নাম্বার নেই। নাম্বার দেওয়ার সুযোগই হয়নি। আসার সময় তনয়া বেগম ও দিশার মুখ ভার দেখেছিল তাপৌষি। ওরা খুব দুঃখ পেয়েছে তাপৌষির আকস্মিক চলে আসার সিদ্ধান্তে। সব থেকে হাসি খুশি ছিল অথৈ। খুশি হবেই না কেন তাপৌষি নামক আপদ যে বিদায় হচ্ছে! শেষ বিদায়ে বর্ষণের দেখা পায়নি। তাপৌষি মনে মনে জানতো বর্ষণ ওকে বিদায় জানাতে আসবে না। স্বাভাবিকই না আসা। বরং বর্ষণ আসালেই সেটা অস্বাভাবিক দেখাতো।
.
একটু পর ঢাকার উদ্দেশ্যে একটা ট্রেন ছাড়বে। প্লাটফর্মে তাই অনেক মানুষের ভিড়। এই ভিড়ের কারণে তাপৌষি নির্ভয়ে বসে আছে। তবে যখন স্টেশন ফাঁকা হবে তখন কী করবে তাপৌষি? শুনেছে রাতের বেলা এইদিকে জুয়ার আসর বসে। রাতের আঁধারে মদ্যপায়ীরা মদ্যপান করে।
.
ফ্ল্যাটের ঠিকানা তাপৌষি জানে। একটা অটো নিলেই চলে যেতে পারবে। তবে ও ওর বাবার ফোন ধরার ভরসায় বসে আছে। একটু পর স্টেশন খালি হয়ে যাবে; ভয়ে তাপৌষির বুক কাঁপছে।
.
হ্যান্ডব্যাগ টা তাপৌষি ভালো মতো পেঁচিয়ে নিলো ডানহাতে, ট্রলি ব্যাগের হ্যান্ডেলটা বামহাত দিয়ে চেপে ধরল…..তারপর দ্রুত পায়ে স্টেশনের বাইরে হেটে আসলো।
তাপৌষি চিন্তায় পড়েছে। ওর অটো নেওয়া উচিত নাকি রিকশা? অটো নিলে আতঙ্ক বেশি। এই দিকে অনেক অটো সম্পর্কিত ঘটনা শুনতে পাওয়া যায়। ভোরের দিকে অথবা রাতের বেলা মেয়েদের একা অটোতে উঠা সুরক্ষিত নয়। তাপৌষি রিকশাই নিল। ব্যাটারি চালিত রিকশা। স্পীড অটোর সমান। গন্তব্য এখন উপশহর, নিউমার্কেট তিন নং সেক্টর।
.
রিকশা থেমেছে ” অদিতিয়া’ (কাল্পনিক) এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর ঠিক সামনে। তাপৌষি ভাড়া মিটিয়ে ব্যাগটা হাতে নিল। ট্রলি নামিয়ে এগিয়ে এলো বিল্ডিং এর সামনে। তবে গেটেই দারোয়ান আটকে দিল। প্রথমেই জানতে চাইল তাপৌষি কার কাছে এসেছে? সব শুনে কাকে যেন ফোন করলো। তারপর তাপৌষিকে উপরে উঠতে দেওয়া হলো।
.
বি-৩…কাঠের দরজার উপর সুন্দর একটি নেম প্লেট ঝুলছে। তাতে লিখা “ফরিদ আহমেদ ও শুভ্রা খন্দকার”। নিচে লিখা “Sweet Home”। তাপৌষির ঠোঁটের কোণায় ঈষৎ হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। তিন বছর আগে তাপৌষির মা তনিমা বেগম তনয়া বেগমের থেকে জমি না নিয়ে জমির দরে প্রায় বিশ লক্ষ্য টাকা নিয়েছিল। সেই টাকার পুরোটাই এই ফ্ল্যাট কিনতে লেগে গেছে। শুধু এতেই হয়নি। ফরিদ সাহেব নিজের বিগত সারা জীবনের সঞ্চয় এই ফ্ল্যাটের পিছনে ঢেলেছেন। তখন তনিমা বেগমের সেলাই এর টাকায় চলতো গোটা সংসার। তাপৌষির পিছনে কখনোই সেভাবে খরচ করতে হয়নি উনাদের। পঞ্চম শ্রেণির প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় তাপৌষি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল; এমনকি জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায়ও একই ফলাফল অব্যাহত ছিল। ফলে দশম শ্রেণি অবধি তাপৌষি স্কুলে বিনা বেতনে অধ্যয়নরত ছিল। ভালো ছাত্রী হওয়ায় ওকে টিউশনির কারিকারি টাকাও দিতে হয়নি শিক্ষকদের। ওর মা শুধু একটু সুন্দর মতো বাঁচতে চেয়েছিল। অথচ সসম্পূর্ণ দরজায় চোখ বুলিয়েও মায়ের নামের কোন অংশও তাপৌষির চোখে পড়লো না।
কলিংবেল টিপার পর অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলো তাপৌষির। দরজা খুলল এক একুশ- বাইশ বছরের যুবক।
-‘ আর ইউ তাপৌষি?’
-‘ জি।’
-‘ ওহ কাম ইন।’
.
ফরিদ সাহেব সোফার বসে আছেন। পড়নে সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা। এক পায়ের উপর আরেক পা তুলে চুয়াল্লিশ ইঞ্চি এলইডি টিভিতে খবর দেখছেন। পাশে বসে স্লিভলেস নাইটি পরহিতা শুভ্রা খন্দকার আয়েশ করে চা পান করছেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চা না খেলে তার আবার শান্তি লাগে না। ঘুম হয়না ঠিক মতো। সবার বিপরীত অভ্যাস গুলোই সে রপ্ত করেছে। “স্রোতের অনুকূলে গা ভাসিয়ে দেওয়ার মতো আমি নই”, এই একটি কথা তাপোষি উনার মুখে অনেক বার শুনেছে।
-‘ মম ডেড ইজ শী দ্যাট গার্ল?’
তাপৌষিকে দেখে শুভ্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
-‘ ও মাই গড তাপৌষি। তুমি আসবে আগে কেন বলনি? গাড়ি পাঠিয়ে দিতাম।’
-‘ বাবাকে ফোন দিয়েছি কয়েকবার। ফোন ব্যস্ত দেখাচ্ছে।’
এবার ফরিদ সাহেব মুখ খুললেন।
-‘ হুম সকাল থেকে ব্যস্ত ছিলাম। নিলাভ্রর বার্থ ডে পার্টির প্ল্যানারের সাথে দেখা করতে গেছিলাম। কিন্তু তুমি গতকাল ফোন করে বললেই পারতে আজ আসবে। আমি নিয়ে আসতাম।’
-‘ না ঠিক আছে। নিলাভ্র?’
-‘ওহ, মিট নিলাভ্র। তোমার বড় ভাইয়া হয়।’
তাপৌষি সেই একুশ বাইশ বছরের যুবকটাকে এবার ভালো মতো লক্ষ করল। শুভ্রা খন্দকারের সাথে চেহারায় মিল আছে।
বাহ, এতো দারুণ বিষয়! বউয়ের সাথে এতো বড় একটা ছেলে ফ্রি! তাপৌষি অবনত মাথায় দাঁড়িয়ে শব্দহীন হাসি হাসল। ভালোই ফাঁসা ফেঁসেছে ওর বাবা।
-‘ হাই তাপৌষি।’
নিলাভ্র তাপৌষির সাথে করমর্দনের জন্য নিজের হাত এগিয়ে দিয়েছে। তবে তাপৌষি করমর্দন না করে সালাম দিয়েছে বিপরীতে। ফরিদ সাহেবের মাথা কাটা যাচ্ছে মেয়ের এমন অস্বাভাবিক ব্যবহারে। এই মেয়ে মায়ের মতো জনমকার ক্ষেত থেকে গেল। শুভ্রাকে বলে এর গ্রুমিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
-‘ একচুয়ালি নিলাভ্র, তাপৌষি খুব শাই একটা মেয়ে।’
-‘ ওহ ইট’স ওকে ড্যাড।’
ফরিদ সাহেব তাপৌষির ট্রলি হাতে নিয়ে তাপৌষিকে বলল উনাকে অনুসরণ করতে।
.
রুমটা বেশি বড় না। মাঝারি সাইজের। তবে বারান্দা আছে। ঘর ভর্তি আসবাবপত্র। ড্রেসিংটেবিল, আলমারি, ওয়ারড্রব, মিডিয়াম সাইজের টেবিল, একটা ডাবল বেড। বুঝাই যাচ্ছে, শুভ্রা নিজের মনের মতো করে ঘরটা সাজিয়েছে। তাপৌষি এক দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো। তনিমা বেগম কখনো ঘরে এতো জিনিসপত্র রাখতে চাননি।
ফোনের রিংটোনের শব্দে তাপৌষির ধ্যান ভাঙল। রৌদ ফোন দিয়েছে। হয়ত তাপৌষি ঠিক মতো আসতে পেরেছে কীনা জানতে চাইবে।
-‘ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।’
-‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম। ট্রেন কি লেট করছে তাপৌষি? পৌঁছাওনি এখনো?’
-‘ দুঃখিত ভাইয়া। ভুলে গেছিলাম ফোন দিতে।’
-‘ ইট’স ওকে। ভালো মতো পৌঁছাতে পেরেছ তো?’
-‘ জি।’
-‘ আচ্ছা রেস্ট নাও তাইলে।’
-‘ হুম।’
-‘ তাপৌষি..’
-‘ জি ভাইয়া বলুন।’
-‘ তুমি সুখী হবে দেখো। ‘
-‘ রাখি ভাইয়া, ভালো থাকবেন।’

‘সুখ’ ইংরেজিতে বললে ‘হ্যাপিনেস’…অভিশপ্ত শব্দ। সকলের ক্ষেত্রে না হলেও অন্তত তাপৌষির জন্য অভিশপ্ত। প্রতিবার সুখের কাছাকাছি এসেও হাত ফোসকে বের হয়ে গেছে এই ‘সুখ’ নামক পাখিটি। ভেবেছিল মা-বাবার সাথে উঠবে কষ্টের টাকায় গড়া এই সুন্দর ফ্ল্যাট টিতে। খুব সুখে থাকবে তিনজন। সুখ এসেও এলো না। বর্ষণকে অজান্তে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল। ভালোবেসে ছিল মন উজাড় করে; ভেবেছিল এই মানুষটি পাশে থাকলে ও খুব সুখী হবে। ভালোবেসেও সুখ পেলো না।
.
-‘ তাপৌষি তুমি কি কিছু খাবে? খাবার গরম দিব?’

তাপৌষি গোসল করে বের হয়েছে সবেমাত্র। গা,হাত পায়ে ধুলাবালি লেগেছিল। ঘরের দরজায় দাঁড়ান শুভ্রার কথায় ও ফিরে তাকায়।
-‘ না রাতে আর কিছু খাবো না।’

শুভ্রা তাপৌষিকে দেখছে। মেয়েটা রূপবতী বললে খুব কম হবে। দেখতে মা’য়ের মতো হয়েছে। নাকটা শুধু বাবার মতো। এই মেয়েটাকে দেখলে শুভ্রার রাগ হয়। অন্তর জ্বলে যায়। প্রথম যেদিন ফরিদ শুভ্রাকে বাসায় নিয়ে আসে সেদিন শুভ্রা অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিল নিজের রূপ নিয়ে। ওর মনে হয়েছিল ফরিদ যেহেতু ওর দিকে ঝুঁকছে তারমানে ফরিদের বউ দেখতে খুব অসুন্দর হবে। কিন্তু বাসায় এসে শুভ্রার আত্মবিশ্বাস ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। তনিমাকে দেখে ওর হৃৎপিন্ডে অসহ্য জ্বলনের সৃষ্টি হয়। সেই জ্বলনে ঘি ঢালতে বোধহয় তাপৌষির আগমন। তনিমার মৃত্যুর পরও শুভ্রার চিত্তে এক অদৃশ্য ব্যথা ছিল। ও শান্তি পাচ্ছিল না তনিমার এই মেয়েটাকে নিয়ে। শুভ্রা অনেকবার মেনে নিতে চেষ্টা করেছে। তবে পারেনি। তাপৌষি যদি ল মা’য়ের চেহারা না পেতো তাহলে শুভ্রার কখনো এতো কষ্ট হতো না।

আজও মনে পড়ে ফরিদের সাথে দেখা হওয়ার দিনটা।
শুভ্রার বাবা আমজাদ খন্দকার তখন রাজশাহীর বড় ইন্সুরেন্স কোম্পানির একটি চালাচ্ছিল। ফরিদ সেখানে ইন্টার্ভিউ দিতে আসে। বাবার সাথে সাথে শুভ্রাও অফিসে যেত। ঘটনাক্রমে ফরিদের ইন্টার্ভিউ নেওয়ার দায়িত্ব পড়ে শুভ্রা সহ আরও তিনজন বোর্ড মেম্বারের উপর। সেই প্রথম ফরিদকে দেখা।
ফর্সা, সুন্দর, আত্মপ্রত্যয়ী, বলিষ্ঠ চেহারার একজন মানুষ ফরিদ আহমেদ। যে তার প্রথম ইম্প্রেশনে শুভ্রার হৃদয় ঝাঁকিয়ে দিয়েছিল।
শুভ্রা মন থেকে চাইছিল ফরিদের চাকরিটা যেন হয়। যেদিন ফরিদের জয়েনের ডেট ছিল তার আগের দিন অবধি শুভ্রা রাতে ঘুমাতে পারেনি ফরিদ কে কল্পনা করে। এই একটা মানুষকে পাওয়ার জন্য শুভ্রা কী না করেছে! নির্লজ্জতার পরিচয় দিয়ে বারবার ভালোবাসার দাবি নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তনিমা নামটা শুভ্রা মনে প্রাণে ঘৃণা করে। এই একটি নাম ওকে ওর ফরিদের কাছে আসতে দিচ্ছিল না। তবে এখন? এখন কই তনিমা? শুভ্রা ফরিদ এখন এক হয়ে গেছে। কেউ নেই ওদের চলার পথের কাঁটা হয়ে। কিন্তু তাপৌষিকে নিয়ে শুভ্রার চিন্তা হয়। ওর এই মুখ ফরিদকে বারবার তনিমার কথা মনে করিয়ে দিবে। শুভ্রা তো তনিমা নামটাই ফরিদের জীবন থেকে মুছে ফেলতে চায়।

-‘ আপনি কি আর কিছু বলবেন?’

তাপৌষির কথায় শুভ্রা নিজের গভীর চিন্তার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে। মুখে মেকি হাসি টেনে “গুড নাইট” জানায়। উত্তরে তাপৌষি শুধু হাসে।
-‘ শুভ্রা আন্টি..’
-‘ কিছু বলবে?’
-‘ খারাপ লাগে না?’
-‘ মানে?’
-‘ এই যে অন্যের সংসার নিজের করে নিয়েছেন?’
-‘ তাপৌষি..’
-‘ চিল্লাচ্ছেন কেন আন্টি? আমি আপনাকে সত্যি খুব পছন্দ করতাম।’
শুভ্রা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে উত্তর দিল,
-‘ Everything is fair in love and war…ভালোবাসা এবং যুদ্ধে সব কিছু জায়েজ তাপৌষি। আগে পছন্দ করতে, এখন করো না?’
-‘ মা কে কেন মারলেন আন্টি?’
-‘ আমি তোমার মা কে মারি নি তাপৌষি। উনি স্বেচ্ছায় আত্মত্যাগ করেছেন।’
তাপৌষি শুভ্রার কথার পিঠে কোন জবাব দেয়না। শুধু হাসে। রহস্যময়ী হাসি।
শুভ্রার ভয় হচ্ছে। সব পেয়েও আবার হারিয়ে ফেলবে না তো?
তাপৌষির হাসি শুভ্রাকে আরও ভীত করে তুলছে। কেন এমন করে হাসছে তাপৌষি?
-‘ঘুমিয়ে পড়ো তাপৌষি। গুড নাইট।’
.
শুভ্রা যাওয়ার পর তাপৌষি একটি ফাইল খুলে বসেছে। নীল রঙের ফাইল। তনিমা বেগমের মৃত্যুর কয়েকদিন পর ঘর গুছাতে যেয়ে তাপৌষি সেলাই মেশিনের নিচে টেপ দিয়ে আটকানো এই নীলটি দেখতে পায়। পড়ার পর বুঝতে পারে মায়ের মৃত্যুর আসল কারণ। ফাইলের ভিতর একজন মানুষের জীবনবৃত্তান্ত আর কিছু ছবি। শুভ্রা খন্দকার এবং ফরিদ আহমেদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি।
|| শুভ্রা খন্দকার||
“শুভ্রা খন্দকার একজন সিঙ্গেল মাদার। স্বামীর সাথে ডিভোর্স হয় বিয়ের ছয় বছর পর। পেশায় একজন চাকরিজীবী। বাবা-মা’র একমাত্র মেয়ে। বর্তমানে বাবার বাসায় আছেন। বিশ বছরের এক পুত্র সন্তানের জননী। ষোল বছর বয়সে বাসা থেকে পালিয়ে বিয়ে করেন। তবে স্বামী নেশাখোর। ছয় বছর না যেতেই শুভ্রা নিজের দুই বছরের পুত্র সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি ফিরে আসেন। সুন্দরী, শিক্ষিতা, রুচিশীল চালচলনের জন্য অনেক পুরুষের থেকে বিয়ে প্রস্তাব পেয়েছেন। তবে রাজি হোননি একটিতেও। ফরিদ আহমেদ নামক এক অফিসের এম্প্লয়ির সাথে উনি ছয় মাস ধরে লিভ টুগেদারে রয়েছেন। একমাত্র ছেলের অবস্থান এখন ইতালিতে। সেখানে থেকেই সে পড়াশোনা করছে।”

তাপৌষি লিখাগুলোর উপরে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। একবছর আগের তারিখ দেওয়া। তাপৌষিদের সুখের সংসারে অশান্তির কারণ, তনিমা বেগমের মানসিক অবিস্থা বিপন্ন, এমন কী মৃত্যুর কারণ সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে এই ফাইলটিতে। হয়ত ফাইলটি মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী। কেউ হয়ত মা’য়ের ভালো চিন্তা করে সব তথ্য দিতে যেয়ে মা’য়ের খারাপ করে ফেলেছে। তাপৌষির খুব জানার ইচ্ছা ফাইলটা মা’কে কে দিয়েছে? ‘শুভ্রা’ মানুষটিকে তাপৌষি কখনো ক্ষমা করবে না। কখনো না।
.
.
চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here