প্রেম সায়রের ছন্দপাত পর্ব ২৬

#প্রেম_সায়রের_ছন্দপাত

#সাদিয়া_নওরিন

পর্ব—-২৬

সকালের স্নিগ্ধতা ছাপিয়ে রোদের তেজটা বেড়েছে একটু। ঠিক সেইসময় সাতজনের পুরো দলটি জাম্বু স্টেশনে এসে নামলো। বন্যা আঁড়চোখে কয়েকবার সাগরের দিকে তাকালো। কিন্তু সাগর কোন রেস্পন্স ছাড়াই হাটতে শুরু করলো সামনে! আগেরদিনের ঝামেলার কারণে ইরশাদ, সাগর আর ইরহামের মধ্যে তেমন কোন কথায় হলো না আজ। সাগর উষ্কখুষ্ক করেও কোন শব্দ বের করতে পারলো না নিজের গলা ছেড়ে! কেমন ইতস্ততা ঝেকে ধরেছে তাকে। আর ইরহাম সে যতোসম্ভব কম কথায় বলল সবার সাথে! একদম ট্রেন থেকে নামার পর থেকেই নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো সে! যেন ফোনে ভেতর ডুকে পড়তে পারলেই সে খুশি! আর তারও একটু পর সে ফোন টিপতে টিপতে হাওয়া হয়ে গেল সেখান থেকে!

একইভাবে হাঁটতে হাঁটতে তারা চলে এলো ম্যাটাডোর বাসের স্টেশনে।একটু পর ইরহামও এসে দাড়ালো তাদের পাশে। কোথায় গিয়েছিল সে তা আর জিজ্ঞেস করলো না কেউ। বরং যে যার মতোই বাসে চেপে বসলো।এই বাসে চড়ে তারা দশ রুপি ভাড়া দিয়ে, তাদের ভাড়া করা হাইচে কাছে যাবে। গাড়িতে সবাই চুপচাপই রইলো। আর শেষে হাইচের কাছে পৌঁছাতেই সেটাই উঠে বসলো তারা৷
সবার এমন চুপচাপ থাকাটা ভালো ঠেকলো না আরশীর কাছে। সে মুচকি হেঁসে প্রশ্ন ছুড়লো,
—– আচ্ছা, রিজার্ভ গাড়ি ছাড়া এখান থেকে কাস্মীর যাওয়া যায় না?
—– অবশ্যই যায়। বাসে গেলে জনপ্রতি ৫০০ রুপি। আর শেয়ার জীপে ৮০০।আর যদি ট্রেনে যেতে চায় তাহলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়৷
“ওহ”
ইরশাদের কথার প্রতিউত্তরে আলতো মাথা ঝাঁকিয়ে চুপ হয়ে গেল আরশী।

বন্যা বার কয়েক সাগরের দিকে তাকালো। আগের পুরো রাত ঘুম হয় নি তার। সাগরের কথার বিপক্ষে নিজের অনুভূতি এখনো পরিষ্কার নয় বন্যার কাছে।মনের ভেতরটা কেমন অশান্ত হয়ে ছিল তার পুরো রাত জুড়ে। সাগরের বলা কথাগুলো যে তার কাছে ভালোই লেগেছে তা তার চেহারার মাঝেই দৃশ্যমান।
কিছুসময় পর হাতে থাকা ফোনটি বের করে অবাক হয়ে গেল আরশী। কয়েকবার ডায়াল কল টিপে বিরবিরিয়ে বলল,
—- এখানে নেটওয়ার্ক নেই কেন?
—– এখানে ইন্ডিয়ার সিমগুলো চলে না। নতুন সিম কিনতে হয়।
গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো ইরহাম৷ আরশী প্রতিউত্তরে হতাশজনকভাবে বলল,
—- কাল থেকে বাড়িতে কথা হয় নি আমার৷ এখন কল কিভাবে করবো তাদের।
—– সমস্যা নেই কাস্মীর পৌঁছে না হয় নতুন সিম কিনে নিও।
আরশী হ্যা সূচকে মাথা ঝাঁকিয়ে তাকিয়ে রইলো বাইরে।

প্রকৃতির সৌন্দর্য ডানা মেলতে শুরু করেছে এখানেও। চারপাশের নির্মল প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে স্মুথ রাস্তা। এ যেন সত্যই প্রশংসনীয়। রাস্তার কিছু দূর পরপরই টার্নেলের দেখা মিলে এখানে। এই লম্বা সুড়ঙ্গের মাঝখানের এই পথ আরো উত্তেজিত করে তুলছে তাদের!কারন এমন টার্নেলের দেখা মিলে না বাংলাদেশে।আর মৃদু আলোতে পুরো টানেল জুড়ে অন্যরকম সৌন্দর্য বিরাজ করছে ।

আচমকা আরশীর হাতের ওপর আলতো হাত ছুঁয়ালো ইরশাদ। আর এতে শিউরে উঠলো আরশী। লজ্জায় নত হয়ে গেল তার মস্তক।আলতো মাথা নুইয়ে সে আঁড়চোখে তাকালো ইরশাদের দিকে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে সামনে তাকিয়ে থাকা অবস্হায় ই ফ্লায়িং কিস ছুড়লো ইরশাদ! এবার লজ্জায় আরশী তাকালো অন্যদিকে । কিন্তু ইরশাদ এবার আরো ভয়ংকর কাজ করে বসলো! সে তার ডানহাতটি নিজের ঠোঁটে ছুঁইয়ে আলতোভাবে তা স্পর্শ করালো আরশীর কোমল গালে! এবার থরথরিয়ে কেঁপে উঠলো আরশী।অন্যদিকে ইরশাদের মুখে ফুটে উঠেছে দুষ্টু হাসি!

ঠিক দুপুর একটায় রাস্তার কাছের একটি ধাবায় দাঁড়ালো তাদের গাড়ি। সবাই নেমে সেখানেই খাবারের অর্ডার করলো। গরম কাটারীভোগ চালের ভাত, আলু সিমের ভর্তা, মুগের ডালের ভুনাআর বেগুন ভর্তা। সাদামাটা খাবারের স্বাদও এখানে অপূর্ব, যেন জিহ্বায় সন্তুষ্টির যোগান দেয়।

খাবার শেষে বেসিনের দিকে এগিয়ে যায় সাগর।এবং ঠিক তার পিছুপিছু সামনে এগিয়ে যায় বন্যা!তারা একটু নিরিবিলিতে পৌঁছেই হঠাৎ সাগরের পেছন থেকে প্রশ্ন ছুঁড়ে বন্যা,
—– কালকে রাতের জোক্সটা খুব সুন্দর ছিল।
সাগর চুপচাপ হাত ধুয়ে পেছনের দিকে পা বাড়ায়। চেহারা স্বাভাবিক রেখে একদম এড়িয়ে যায় সে বন্যার বলা কথাটি! বড্ড অভিমান হচ্ছে তার বন্যার বলা এমন কথায়। কিন্তু নিজেকে সংযত করে চুপ করে গাড়ির দিকে পা বাড়ায় সে। কিন্তু বন্যার কাছে সাগরের এই ব্যবহার মোটেও প্রছন্দনীয় হলো না। সে নাক ফুলিয়ে খপ করে চেপে ধরলো সাগরের হাত! তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—- রসিকতা করার জন্য আর কাউকে পেলি না। কেবল আমাকেই পেলি? কেন তোর কি আমাকে পুতুল মনে হয়? মনে হয় আমার আগে পিছে তেমন কেউ নেই যা ইচ্ছে তা বলবি আর আমি চুপ করে বসে থাকবো! আমার অনুভূতির কোন দাম নেই?

এবার পছন্দ রেগে গেল সাগর। রাগে গা হাত নিষপিষ করে উঠলো যেন তার। সে আচমকা বন্যার হাত ধরে, খুব জোরে টান দিয়ে নিয়ে গেল তাকে ধাবার পেছনে!

বিষ্ময়ে থ বনে আছে বন্যা। সাগরের হঠাৎ এমন ব্যবহার অবাক করে তুলল যেন তাকে। কিন্তু সাগর তাকে অবাক করে দিয়ে আরো শক্ত ভাবে চেপে ধরলো তার হাতদুটি! রাগে লাল হয়ে উঠেছে তার আঁখি! বন্যার পরপর শুঁকনো ঢোক গিলল। তারপর আমতাআমতা করতে করতে মিনমিনিয়ে বলল,
—– সাগর, কি করছিস। ছাড়
—– কেন ছাড়বো? তোর জবাব দরকার না। জবাব ই তো দিতে এলাম।
ক্ষুদ্ধ কঠিন স্বরে বলে উঠলো সাগর। রাগে গা জ্বলছে তার।
সাগরের কঠিন কন্ঠস্বরে, কলিজার ভেতরটা ধুক করে উঠলো বন্যার। সাগরের এই ব্যাবহার পূর্বের আগের রাতের বলা কথাগুলর সত্যতা ফুটিয়ে যেন তুলেছে !আর তাই সে আলতোভাবে চোখ নামিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,
—– থাক। সমস্যা নেই। কোন উত্তর চায় না আমার। আমি যাব এখন।
—– কেন? আমি তো তোর ইমোশন নিয়ে খেলি।তো বলে যা কিভাবে খেললাম? আমি তো বলবো তুই খেলিস আমার অনুভূতির সাথে।
—- আমিহ!
—— তো আর কে? আমি আজ চারটি বছর ধরে ভালোবাসি তোকে। আর তুই আমার দিকে ফিরেও তাকাস না! আমাকে খুঁচিয়ে চলিস কি আমি তো কিছু বলি না।
আর তাছাড়া সবসময় যখন ইরশাদ ইরশাদ করিস। জানিস আমার ভেতরটা তখন কতোটুকু জ্বলে? আমার হৃদয়ের এই দহনটা কখনো অনুভব করেছিস তুই? কখনো বুঝেছিস হৃদয় পুড়বার হাহাকারটি? তুই কেন বুঝবি? তুই বুঝবি না। কারণ তুই হার্ডলেস

বন্যা ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাগরের যাওয়ার পানে। কিছুসময় আগে সাগরের বলা কথাগুলো, তার শক্তভাবে চেপে ধরা সবটাই যেন অদ্ভুত সুখের অনুভূতি দিচ্ছে এখন বন্যাকে! এই অনুভূতি স্বর্গীয়! বন্যা নিজের হাতদুটো আস্তে আস্তে সামনে নিয়ে এলো। কালচে দাগ বসে গেছে হাত দু’টিতে! সে ঐভাবেই হাতদুটির দাগে আলতো চুমু খেয়ে তার জড়িয়ে ধরলো শক্তভাবে! ব্যাথার বদলে এই দাগ যেন পরম সুখ দিচ্ছে তার ম মনে!

চোখ বুঝে ততটা সময় ধরে এই অনুভূতি সে অনুভব করলো, যতোক্ষণ আরশী একদম গা ধরে ঝাকা দিল না তাকে। শেষে জোরে চেঁচালো আরশী,
—– কোথায় হারালে?
—- হু! তেমন কিছু না। আসলে ওয়েদার টা ভালো তো তাই তা অনুভব করছি।
—- ওহ,। ওকে চল গাড়ি ছেড়ে দিবে এখন
আলতোভাবে সম্মতিসূচক মাথা দুলিয়ে আরশীর পিছুপিছু পা বাড়ালো বন্যা।

গাড়ির কাছে এসেই সাগরের পাশে বসে পড়লো বন্যা। সাগর তা দেখেও মুখ ফিরিয়ে নিল অন্যপাশে। অভিমানে মন ভার হয়ে আছে তার। বন্যা অদেখা মুচকি হাসলো সেদিকে তাকিয়ে। তারপর একদম চেপে বসলো সে সাগরের সাথে।এতে সাগর আরেকটু চেপে গেল ইরহামের দিকে। এবার বন্যা ধুপ করে মাথাটা সাগরের কাঁধে ফেলে চোখ বুঝে ফেলল! সাগর বিস্ফোরিত চোখে তাকালো বন্যার দিকে! বন্যার এমন ব্যবহার যেন কল্পনাতীত তার কাছে! সে কম্পিত হাতে বন্যার চুলগুলো গুছিয়ে পেছনে দিয়ে দিল। কিন্তু এতে একদমই নড়লো না বন্যা।
সাগরের হৃৎস্পন্দন যেন ক্রমশ বাড়তে লাগলো। সে চোখ বুঝে নিশ্বাস ফেলতে লাগলো একের পর এক! মনের সাথে অদ্ভুত যুদ্ধ চলছে আপাতত তার মস্তিষ্কে। খারাপ লাগা অভিমান ভাবটি কপুরের মতো উবে গিয়েছে বহুসময় আগে। ভালোলাগার মিষ্টতা অনুভব করছে আপাতত সাগর। আর এই অনুভূতি অতুলনীয়।
সাগর গভীর দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো বন্যাকে। মুখের ওপর খেলা করা চুলগুলোকে ধরতে গিয়েও ধরলো না সে আর। কারন মেয়েটির ঘুমটি ভাঙ্গতে যে সে বড্ড নারাজ!
অন্যদিকে চোখ বুঝে সাগরের মনের দ্বন্দ্ব ভালোভাবেই উপভোগ করছে বন্যা। প্রশান্তির মিষ্টি ছোঁয়া দোলা দিচ্ছে৷ যেন তার হৃদয়ে। আর সে উপভোগ করছে এই লুকোচুরি!

গাড়ি চেনানী নাসরি টার্নেলে ডুকার পর মনে হলো তারা অনন্তকাল ধরে এই টার্নেলের মাঝে আছে! পুরো সাড়ে নয় কি.মিঃ লম্বা এই টার্নেল। যদিও একটু পরপর অক্সিজেনের ব্যবস্হা আছে তবু অদ্ভুত লাগলো তা তাদের কাছে। হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে বমি ভাব হলো আরশী। সে অসস্তিকরভাবে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। ইরশাদ বিষয়টি বোঝে আরশীকে নিজের গায়ের সাথে মিশিয়ে নিল। আর তার মাথাটি নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো। তারপর আলতো মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
—- বেশী খারাপ লাগছে?
—- হুম।
—- চোখ বুঝে রাখ।
আরশী ইরশাদের বুকের কাছে মুখ ঘসতে ঘসতে চোখ বুঝলো। মিষ্টি একটা স্মেল ভেসে আসছে ইরশাদের শরীর থেকে। যা আরশীর শরীরে ইনেস্তেসিয়ার মতো কাজ দিচ্ছে। সে চোখ বুঝে ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়লো।

টানেল থেকে বের হতেই গাড়িতে ঝাঁকুনি অনুভব করলো তারা। রাস্তাটি হালকা ভাঙ্গা। আর ধুলোও উড়ছে এখানে একটু বেশী। কিন্তু এখানের পরিবেশটা ছবির মতো সুন্দর। দু’পাশে সুউচ্চ পাহাড়।আর পাহাড়ের ওপরে রয়েছে ছোট ছোট ঘরবাড়ি। বরফ গলা শিতল পানি বহমান পাহাড়ের গা বেয়ে। বান্দরবন, আর ভাটিয়ারীর পাহাড়গুলোর চেয়ে বৃহৎ মনে হলো পাহাড়গুলোকে তাদের।আর সবুজে ঢাকা এই পাহাড়গুলো যেন মোহিত করে এমন সুন্দর!

অবশেষে পুরো আটঘন্টা জার্নি করে তারা পৌছালে কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে। পৌছতে পৌঁছতে বিকেল সাতটা বেজে গেল তাদের। পৌঁছেই সবাইকে নিজনিজ ক্যাবিনে যেতে বলল ইরশাদ।কারণ ফ্রেশ হওয়া, গোসল ছাড়া খাবার কারো গলা দিয়ে নামবে না। যদিও সবাই অনেক বেশী ক্ষুদার্ত কিন্তু ফ্রেস হতেই চলে গেল তারা সবাই। একটি ত্রিস্টার হোটেল আগেই বুক করেছিল তারা তাদের জন্য। আর তাই হোটেল নিয়ে কোন কষ্ট পেতে হলো না তাদের।

গোসল সেরে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো আরশী। সাদা রঙের একটি গাউন পড়েছে সে আজ। এতে শুভ্র পরীর মতো দেখাচ্ছে তাকে। সে দূরের পাহাড়ের দিকে তাকালে।দূর থেকে এই পর্বত শিখর অত্যন্ত স্বর্গীয় দেখায়। পর্বতের উপরে পতিত সূর্যের আলো ও ভাসমান মেঘ মুগ্ধ করে তুলে তাকে। গভীর নীল আকাশের সৌন্দর্য মনকে শান্ত এবং সতেজ করে তুলছে যেন। শ্রীনগর, হ্রদের শহর নামে পরিচিত। এটি আকর্ষণীয় ডাল হ্রদ, হজরতবাল মঠ (দরগাহ) ও শালিমার বাগ এবং নিশাত বাগ হিসেবে অভিহিত মুঘল উদ্যানের জন্য ওবিখ্যাত। অভয়ারণ্য, রোপওয়ে এবং অপূর্ব ট্র্যাকিং রুট সহ পহলগাঁও একটি অত্যন্ত সুন্দর উপত্যকা এই শ্রীনগর।

হঠাৎ আরশীর কাঁধে হাত রাখলো বন্যা। এতে হালকা চমকে পেছন ফিরে তাকালো আরশী। তারপর বন্যার হাতদুটো চেপে ধরে বিষ্মিতভাবে প্রশ্ন ছুড়লো সে,
—- তোমার হাত তো অনেক ঠান্ডা! আর এগুলো কিসের দাগ?
—- আরে তেমন কিছুই না৷ পানি ধরে ছিলাম অনেকখন তাই। আর তাছাড়া বাইরে অনেক ঠান্ডা সোয়েটার পড়। খেতে যেতে হবে । অনেক খিদা লেগেছে।
—- হুম৷ কিন্তু দাগগুলো!
বন্যা এড়িয়ে গেল আরশীর প্রশ্ন।তারপর দ্রুত গতিতে বেরিয়ে গেল সে কক্ষ ছেড়ে আর বলে।গেল খেতে যাচ্ছে সে। আরশী সেদিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে নিজের জ্যাকেটটি গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লো।

সবাই একটি মুসলিম হোটেলে ডুকে বসলো। সাগর আঁড়চোখে বারবার বন্যার দিকে তাকাচ্ছে। বন্যার হাতের দাগটি দেখতেই ভেতরটা ভিষন জ্বলছে তার। নিজের কাজে বড্ড অনুতপ্ত সে। কিন্তু বন্যা অতিস্বাভাবিকভাবেই খাবারে মনোনিবেশ করে আছে।
ধৌয়া উঠা গরম ভাত, গরুর মাংসের ঝাল ভূনা, মুগ ডালের ভুনা, আলুর চড়চড়ি অর্ডার করেছিল তারা। এখানের গরুর মাংসের স্বাদটা অসাধারণ। তিশা ডাইট ডাইট বলতে বলতে আরো দুচামচ মাংস তুলে নিল নিজের পাতে। তিতাস সেদিকে তাকিয়ে হেঁসে বলে উঠলো সাথে সাথে,
—– এ আবার কেমন ডাইট তিশু? এর নাম কি কব্জি ডুবানো ডাইট?

নজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলল তিশা। তিতাসের এমন ডাকে নিজেকে বড্ড স্পেশাল মনে করে সে। সে লাজুক হাসি মুখে ঝুলিয়ে বলল,
—- একদম আমার খাবারে নজর দিবে না। আমি খাবো। আর খেয়ে ড্রাম ও হবো। তোমার সমস্যা হলে ঘরে দরজা আরেকটা কাটিও।
এবার সবাই খিলখিলিয়ে হেঁসে দেয় একসাথে।

ইরশাদ ইরহামের পাতের দিকে তাকিয়ে মুগ ডাল ভূনা তুলে দেয় তাকে অল্প। এতে তার পানে চমকে তাকাই ইরহাম। ইরশাদ সেদিকে না তাকিয়েই বলে উঠে ,
—– শুকনা শুকনা খাবার খাওয়া ভালো না।
ইরহাম তা শুনে অদেখা হাসি দিয়ে নিজের খাবার খাওয়ায় মনোনিবেশ করে।

আরশীর খাবার শেষ। সে হাত ধৌতে দাঁড়াতে নিলেই,টেবিলের নিচ থেকে খপ করে তার বামহাতটি ধরে ফেলে ইরশাদ! আর সাথে সাথে বরফের মতো লজ্জায় জমে যায় আরশী। হেঁচকির বেগ পেতে থাকে তার! পরপর ঢুক গিলে হেঁচকি বন্ধে আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে সে।আর আঁড়চোখে তাকাই ইরশাদের দিকে। সাথে চোখ বড় করে শাসায় ও। কিন্তু ইরশাদ সে যেন আজ না ছাড়ার পণ নিয়েছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here