#প্রবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ১৩
।
।
।
হাত থর থর করে কাঁপছে সাদিয়ার। ভয়ে ভয়ে কাঁপা হাতটা রায়হানের নাকের কাছে নিতেই….
একটা গরম হাওয়া হাতের আঙ্গুলের উপর এসে পরল সাদিয়া। প্রাণ ফিরে পেল যেন সাদিয়া। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছে এই বুঝি প্রাণটা চলে গেল।
আমজাদ চৌধুরির কাছ থেকে ডাক্তারের ফোন নাম্বর নিয়ে ডাক্তারকে ফোন করার জন্য তাদের ঘরে যায় সাদিয়া। দরজার বাইরে থেকে ডাকতে থাকে “বাবা, মা! দরজাটা একটু খুলুন। উনার শরীর খুব খারাপ। বাবা, মা….?” সাদিয়া কান্নার শব্দ আর চেঁচানো শুনে তারা দুজন ঘুম থেকে উঠে যায়। রেহানা বেগম ঘুম জরানো চোখে দরজা খুলে জিগ্যেস করে, এত রাতে কি হয়েছে রে মা? আর তুই কাঁদছিস কেন?”
সাদিয়া তাদের সব খুলে বলে। আমজাদ চৌধুরির ফোন করে বাসায় ডাক্তার ডাকে। এত রাতে ডাক্তার বাসায় আসতে না চাইলেও আমজাদ চৌধুরির আকুতি-মিনতি এবং রায়হানের সিরিয়াস কন্ডিশনের কথা শুনে আসতে রাজি হয়।
পুরো বাড়িতে সবাই জেগে আছে, আতঙ্কিত হয়ে আছে। রায়হানের জ্বর কমলেও কোন সাড়া শব্দ নেই ওর। সবাই ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছে!
কিছুক্ষণের মধ্যে ডক্টার এসে রায়হানকে দেখে বলে,
—“অতিরিক্ত জ্বরের কারনে রোগি অচেতন হয়ে গেছে। কোন সমস্যা কেই। আমি ঔসধ দিচ্ছি ঠিক হয়ে যাবে।”
—“ডক্টর যখন জ্বর ১০৪ডিগ্রী ছিল তখন আমি উনার হার্টবিট শুনতে পাইনি। হার্টবিট না শুনতে পাওয়ার কারণ?”
—“আপনি বুকে হাত রেখে হার্টবিট শুনতে চেয়েছিলেন বোধয় তাই শুনতে পাননি। এমনটা হয় মাঝে মাঝে।”
—“না, আমি উনার বুকে মাথা রেখের হার্টবিট শুনতে পাইনি তখন। ”
—” হৃদপিণ্ডে একটি হৃদ স্পন্দন সম্পন্ন হতে সময় লাগে ৮ সেকেন্ড। আপনি আট সেকেন্ড মাথে রেখেছিলেন কি? ”
—“না, ৪ সেকেন্ড হবে।”
—“এজন্যই শুনতে পাননি। আর হৃদপিন্ড তখনি কাজ করা বন্ধ করে দেয় যখন হার্ট অ্যাটাক হয়। সাধারণত হৃপপেশির রক্ত সরবারাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে সৃষ্টি হয় হার্ট অ্যাটাক। কিন্তু রায়হানের এসব কিছুই হয়নি। ”
—“আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম তখন। ”
—“ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক যেহেতু আপনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। জ্বর তো এখন মোটামোটি কম জল পট্টীটা দিয়ে ভালো করেছেন। আমি মেডিসিন লিখে দিচ্ছি আনিয়ে নিবেন। চিন্তার কোন কারন নেই।
—“ধন্যবাদ ডক্টর। ”
সাদিয়ার কথা শেষ হতেই হৃদয় পিছন থেকে ডক্টরকে বলে উঠল,
—“আমি কালই আপনাকে বাসায় ডাক্তাম মিম এর জন্য। ”
—“ও হ্যাঁ, মিমের কথা তো ভুলেই গেছিলাম। কেমন আছে ও ?”
—“রাত থেকে সাভাবিক ব্যাবহার করছে তার উপর কথাও বলে।”
—“এটা তো গুড সাইন। এত তাড়াতাড়ি এই ধরেনের পেশেন্ট ঠিক হচ্ছে ভাবতেই অবাক লাগছে।”
—“আঙ্কেল এখন থেকে ওর জন্য আমাদের কি করোনিয়?”
—“ওকে যথাসম্ভব লোকসমাগমে রাখার চেষ্টা করতে হবে ওর সাথে হাসি, ঠাট্টা, কথা বলা মনে ওকে কিছুক্ষনের জন্যও একা থাকতে দেয়া যাবে না। ওর সঙ্গে কেউ একজনকে সারাক্ষণ থাকতেই হবে। তাহলে দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে নয়তো একা একা থাকলে মিম আবার আগের মত হয়ে যেতে পারে।”
—“আমি সারাক্ষণ থাকবো। ওকে পুরোপরি সুস্থ করে তুলবো। ”
—” তোমার এই প্রচেষ্টাই তোমাকে সফল করে তুলবে ইয়াং মেন।
বলে একটা হাসি দিয়ে “আসি” বলে চলে গেলেন তিনি। হৃদয় মিমির ঘড়ে গিয়ে দেখল মিম ঘড়ের আলো জ্বেলে ঘুমাচ্ছে। চোখের উপর ওড়না দিয়ে। হৃদয় ঘড়ের লাইট আফ করে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।
।
।
সাদিয়া আজ আর ঘুম আসবে না। বসে বসে ররায়হানের মাথায় জল পট্টি দেয়ে যাচ্ছে সেই কখন থেকে। মাঝখানে একবার রায়হানের শরীর মুছে দিয়েছে যাতে রায়হানের একটু ভালো লাগে, একটু ভালো ভাবে ঘুমাতে পারে। রায়হানের চোখের পাতা জ্বলছে চোখ বন্ধ রেখেই সাদিয়াকে বলল,
—“সাদিয়া?”
—“হুম বলেন? এখন কেমন লাগছে? শরীর খারাপ লাগছে কি এখনো?”
—“সারা রাত তো জেগে ছিলে। আমার পাশে একটু শোও এখন।”
—“আমি ঘুমাবো পরে আপনি একটু ঘুমান তো? ”
—“আমার কথা বলতে ভাল্লাগছে না, কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি চাও……?”
—“আচ্ছা শুচ্ছি। ”
সাদিয়া রায়হানের পাশে শুতেই রায়হান সাদিয়াকে জরিয়ে ধরে ওর উপর এক পা দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
সাদিয়ার শরীরে রায়হানের শরীরের উত্তাপ লাগছে। ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে সাদিয়া।
রায়হানের কাছ থেকে একটুও সরছে না রায়হানের ঘুম ভেঙ্গে যাবে বলে।
।
।
মাঝ রাত্রে মিম চোখ খুলে ওয়াশরুম যাবার জন্য। চোখ খুলতেই লাইট বন্ধ দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠে মিম। চিৎকারের শব্দ শুনে ভয় পেয়ে সোফা থেকে পরে যায় হৃদয়। ভয়ে ভয়ে খাট থেকে নেমে সুইচ বোর্ড খুঁজতে থাকে মিম। হৃদয়ও ফ্লোর থেকে উঠে সুইচ বোর্ডের কাছে যেতে থাকে। অন্ধকারে হাতরেঁ হাতরেঁ এগোনোর সময় হাতটা হৃদয়ের শরীরে লাগতেই ভয়ে চেঁচিয়ে ওঠে মিম। মিমের চেঁচানো শুনে হৃদয়ও ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে। দ্রুত সুইচ বোর্ডে খুঁজে সুইচে হাত চেপে লাইট অন করে হৃদয়। মিম হৃয়কে দেখে চমকে যায়। বলে,
—“এত রাতে আপনি চমার ঘড়ে কেন? ”
—“না মা..মা..মানে এমনি।”
—“লাইট অফ করেছিলেন কি আপনি?”
—“হুম…. তুমি চোখের উপর উরনা দিয়ে লাইট জ্বেলে ঘুমাচ্ছিলে তো তাই আরকি!”
—“আমি একা ঘুমাতে ভয় পাই বলে লাইট জ্বেলে ঘুনিয়ে ছিলাম। আপনাকে কে বলছে বন্ধ করে দিতে? ”
—“সরি। আমি বুঝতে পারি নাই। ”
—“আপনি কোনদিন কিছু বুঝেছেন বলেন? মাঝ রাসস্তা সকলের সামনে একটা মেয়েকে বলে বসলেন “আই লাভ ইউ”। জানেন কতটা লজ্জায় পরতে হয়েছিল সেই দিন আমাকে?”
—“আমি আনার ভুল বুঝতে পেরেছিলাম সেইদিন। আমাকে মাফ করে দাও। ”
—“আমার সাথে কেউ কোন অপরাধ করলে আমি তাকে সাথে সাথে মাফ করে দেই কেননা আমার মাফ না করার ফলে হয়তো সে শাস্তি ভোগ করবে কবরে। সুধু একজনে মাফ করিনি আর করবোও না।”
—“তোমার এই সুন্দর চিন্তাধারাটাকে সালাম জানাই আমিও আজথেকে এইটাই করবো। আচ্ছা কাকে মাফ করবে না কখনো?”
—“আমার সাদিয়া আপুর ধর্ষক, আমার মায়ের খুনি ঈশান ভাইয়াকে। আপনি আমর ঘরে কি করছিলেন সেটা বলেন?”
—“না, মানে আমার ঘড়ের ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছে তো তাই এই ঘড়েই ঘুমাতে….”
—“মিথ্যা বলা মহা পাপ জানেন তো?”
—“জানোই তো এই ঘড়ে কেন আমি তাও প্রশ্ন করছো কেন?”
—“একজন পরপুরুষকপ একটা কুমারি মেয়ের ঘরে সোভা পায় কি? আমার তো গুনাহ হচ্ছে।”
—“আমি পরপুরুষ হয়ে থাকতে চাইনা সাদিয়া। আর তোমার গুনাহও বারাতে চাই না। করবে কি আমাকে বিয়ে?
—“আপনি প্লিজ চলে যান এখন এই ঘর থেকে আমি ঘুমাবো।”
—“আচ্ছা চলে যাচ্ছি তবে উত্তটা তুমি দিলে না?”
—“আমার কাছে উত্তটা নেই। যখন হবে তখন দিব।”
“আমি অপেক্ষায় থাকবো উত্তরটার।” — বলে চলে গেল হৃদয়।
।
।
সকালে বেলা ! সাদিয়া ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সমনে বসে ভেজা চুল শুকাচ্ছে। রায়হান খাটে আধশোয়া অবস্থায় বসে আছে। হাতে মিশু মনির ‘অনুভুতি’ বইটা পড়া রেখে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ সাদিয়া রায়হানের দিকে তাকাতেই দেখলো রায়হান ওর দিকে তাকিয়ে আছে, অপলকহীণ ভাবে।
—“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন যে?”
—“কি হলো শুনছেন।”
এবার সাদিয়া কিছুটা জোররে বলাতে রায়হানের হুশ ফিরলো বলল,
—“হুম, কিছু বলছো?”
—“হা করে তাকিয়ে ছিলেন যে?”
—“একটা জিনিস দেখছি।”
—“কি দেখছেন?”
—“তোমার ঘারের একটু নিচে যে তিলটা আছে সেটা আগে দেখিনি তো কখনো? সেটাই দেখছিলাম।”
—“কিহ😡😡😡😡😡”
—“রেগে যাচ্ছো কেন? তোমার স্বামী হিসেবে কি এটুকু অধিকার নেই আমার? ”
—“( নিশ্চুপ )
—“বইটা পড়তে ভিষণ খারাপ লাগছে তুমি পড়ে শোনাবে কি?”
—“আমি পড়বো? আচ্ছা পড়ছি।
বলে সাদিয়া খাটে এসে পা ঝুলিয়ে বসে রায়হানের হাত থেকে ‘অনুভুতি’ বইটা নিল। তখনি রায়হান বলে উঠল,
—“তুমি আধশোয়া হয়ে বসবে আমি তোমার কোলে মাথা রেখে গল্পটা শুনবো। ”
রায়হানের কথা মতো পা ছড়িয়ে দিয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে পরে সাদিয়া। ওর কোলে মাথা রেখে গল্প শুনতে থাকে রায়হান। গল্পটা অর্ধেক শেষ হতেই হৃদয় দরজায় নক করে সাদিয়া দ্রুত উঠে যেতে চাইলে রায়হান ওকে ধরে ফেলে। সাদিয়ার কোলে মাথা রেখেই রায়হান ঘড়ে ঢুকতে বলে হৃদয়কে। সাদিয়া উরনা দিয়ে নিজেকে ঢেকে ফেলে।
হৃদয় ঘরে ঢুকে রায়হান সাদিয়াকে দেখে বলে,
—“আমি নাহয় পরে আসবো ভাইয়া।”
—“আরে না, আয়।”
—“তোমার শরীরটা এখন কেমন আছে??”
—“তোর ভাবির চিকিৎসায় সুস্থ আছি এখন। তোর না অফিস জয়েন করার কথা কাল?”
—“হুম, কাল থেকে জয়েন করবো।”
—“মিমের জন্য তোর এত পরিবর্তন। মিমকে খুব ভালোবাসিস তাই না?”
—“হুম অনেক। মিমের কথা বলতেই একটা কথা মনে পড়ল? আমাদের বাসা থেকে কে মিমকে কিডন্যাপ করার কথা ভাবতে পারে তাই ভাবছি। বাড়িতে এখন দুই দুটা মেয়ে আছে এমন হলে কিভাবে হবে? কিছু তো ভাবতে হবে তাই না? ”
—“সাদিয়া তুমি আমার আর হৃদয়ের জন্য দুইকাপ চা করে আনবে প্লিজ।”
“এখনি বানিয়ে আনছি” — বলে সাদিয়া চলে যায়। রায়হান হৃদয়কে বলে,
—“সাদিয়ার সমনে এসব কথা আর বলিস না। আচ্ছা সিকউরিটি গার্ডের কথা কি কিছু জানিস? ও থাকতে বাসায় কি করে কেউ ঢুকতে পারে? ”
—“ওই শালা কুত্তার বাচ্চাকে আমিও খুজছি। ”
—“আমাকে সিকিউরিটি গার্ড আগে কোথায় কাজ করত সেটা খোঁজ নিয়ে জানাবি? কাল থেকে তো তোর অফিস খোলা আজই খোঁজ নিয়ে জানা। ”
—“হ্যাঁ, আমি জানি তো ওই শালা আগে ফাহিম প্রধান নামে একজনের বাসায় কাজ করত।”
—“ফাহিম….?”
চলবে……..
#পবিত্র_সম্পর্ক
লেখক : রিদন রায়হান
পর্ব : ১৪
—“ফাহিম একজন ধর্ষক। সেই ধর্ষকদের মধ্য একজন যারা সাদিয়াকে ধর্ষন করেছিল আর মিমকে আমাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেতে চাইছিল।”
—” কিহ বলছিস ভাইয়া তুই? ”
—“হুম। আমার এই অবস্থা পিছনেও দায়ি।
রাগে গা’জ্বলছে হৃদয়ের বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
—“আমি বন্ধুদের নিয়ে আজই ওকে শায়েস্তা করবো।”
—“নাহ, উত্তেজিত না হয়ে বস এখানে।
হৃদয় ভাইয়ের কথা শুনে বসে পড়ল। রায়হান আবার বলতে লাগল,
—“আমিও প্রথম উত্তেজিত হয়ে, কোন পরিকল্পনা ছাড়াই ওদের মারতে চলে গেছিলাম। যার কাররনে আমার এই দশা। আজ আমি হয়তো বেঁচেই থাকতাম না ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি। আমার কিছু হয়ে গেলে বাবা-মা পুরোপুরি ভেঙ্গে পরবে এবং সাদিয়ার জীবটাও শেষ হয়ে যাবে। তেমনি তোর কিছু হলেও মিম এর ভবিষ্যৎ টা শেষ হয়ে যাবে আবার বাবা-মা ও ভেঙ্গে পরবে। তাই আমি ভেবেছি এখন থেকে সকল পরিকল্পনা করেই ওদের মারবো যাতে করে আমার কোন ক্ষতি না হয়।”
—“মারবো মানে? তুই কি খুন করার কথা ভাবছিস?”
—(নিশ্চুপ)
—“যাই করিস না কেন খুব স্বাভধানে করিস ভাইয়া।”
।
।
আজ এক মাস বিশ দিন!
রায়হান এখন পুরোপুরি সুস্থ। সাদিয়ার খেদমতে এখন হতটাও পুরোপুরি ঠিক হয়ে গেছে। এতদিন বাসায় বসেই অফিসের টুিকিটাকি কাজ করেছে রায়হান। তাবে হৃদয়ই সবদিক সামলেছে অফিসের খুঁটিনাটি সব দিক।
হৃদয়ের কথা বলতেই মনে পরল, কিছুদিন আগেই সবাই একসাথে বসেছিল হৃদয় আর মিমের বিয়ের ব্যাপারে। হৃদয়দের আত্মিয়স্বজনরাও উপস্থিত ছিল তখন। রায়হান, সাদিয়া, আমজাদ চৌধুরি, রেহানা বেগম মিমের সাথে হৃদয়ের বিয়েতে রাজি হলেও মিম রাজি ছিল না। হৃদয়ের মত একটা বাজে ছেলেকে সে কিছুতেই বিয়ে করবে না। যে কিনা বাবা-মাকে সম্মান করেনা, ধর্ষিতার মত একটা অসহায় মেয়েকে সমাজের কলঙ্ক মনে করে তাকে বিয়ে করবে না মিম।
মিমের কথাগুলো খারাপ লেগেছিল সেদিন হৃদয়ের। ডিপ্রেশন এ চলে গিয়েছিল, খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এসব দেখে মিমকে অনুরোধ করে রেহানা বেগম, হৃয়কে যেন মিম বিয়ে করতে রাজি হয়। ছেলে যেমনই হোক ছেলের খারাপ নিজের চোখে দেখে বসে থাকতে পারেনি তিনি। যতই হোক মা তো! গুরুজন বলে তার কথা শোনে মিম।
।
।
সাদিয়ার কয়েকটা শাড়ি আর কিছু থ্রিপিস রায়হান বিয়ের আগে ওর জন্য কিনে রেখেছিল, তাই এই দেড় মাস ধরে পরছে সাদিয়া । কিছু নতুন জামা-কাপড় কিনে দেয়া প্রয়োজন ভেবে রায়হান আজ সাদিয়াকে নিয়ে সপিং এর জন্য বের হয়।
রায়হান ওয়ারড্রব এর উপর থেকে গাড়ির চাবি নেয়ার সময় সাদিয়া বলে উঠে,
—“গড়ি দিয়ে যাবো না রিক্সায় করে যাই? অনেকদিন রিক্সায় চড়ে কথাও যাই না।”
রায়হান সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
—“আগে বলবে তো। আমি রিক্সা ডেকে আনি। মায়ের কি কি যেন লাগবে তুমি মায়ের কাছ থেকে লিস্টি এর কাগজটা নিয়ে এসো। ”
সাদিয়া ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নারে। রায়হান সাদিয়ার হাতে গড়ির চাবিটা দিয়ে চলে যায় রিক্সার খোঁজে।
বেশ কুছুক্ষণ পর! সাদিয়া ড্রিয়িংরুমে চক্কর কাটছে। রায়হান জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু রায়হান এখনো আসছে না।
রায়হান অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও একটা রিক্সা না খুঁজে পেয়ে সামনে দিকা হাঁটা ধরে। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজা-খুঁজির পর একটা রিক্সা পায়। কিন্তু সেই রিক্সা চলক ওত দূরে যাবে না বলে চলে যাওয়ার জন্য হেন্ডেল ঘুড়িয়ে রিক্সা চালিয়ে চলে যেতে থাকে। রায়হান ১৫০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা বলাতে সে রিক্সা ঘুড়িয়ে আবার রায়হানের কাছে আসে।
সাদিয়া ড্রয়িংরুম পেরিয়ে ডাইনিং রমে যাওয়ার সময় কলিং বেল বেজে উঠল। দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই ঘামার্ত অবস্থায় রায়হানকে দেখতে পায়।
রায়হান সাদিয়াকে দেখেই হাত ধরে টেনে বলে,
—“রিক্সা পেয়েছি চলো।”
মুখোশ পরা সাদিয়ার চোখ দুটো কেমন ভেঁজা ভেঁজা লাগল রায়হানের, মনে হলো এখনি কেঁদে দিবে। তার উপর কন্ঠশোরটাও যেন কেমন ভাড়ি শোনা গেল। কিছু না বলে চুপচাপ সাদিয়ার পিছু পিছু ঘরে চলে গেল।
ঘরে ঢুকতেই সাদিয়া পড়নে হিজাপ খুলে গলায় পেঁচানো ওরনাটা দিয়ে রায়হানের মুখ মুছে দিল। সাদিয়ার হঠাৎ এরূপ কাজে রায়হান কিছুটা অবাক হলো। আলমীরা থেকে নিজের পছন্দের কালো রঙের একটা শার্ট বেড় করে রায়হানের হাতে দিয়ে বলল,
—“পড়নের শার্টটা খুলে এটা পরে নিন। যেটা পরে আছেন সেটা তো ঘামে পুরো ভিজে গেছে। এটা বেশিক্ষণ পরে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।”
সাদিয়ার কেয়ার করা দেখে শুধু অবাক হয় রায়হান। এক দৃষ্টিতে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে শার্টের বুতাম খুলতে থাকে রায়হান। সাদিয়া রায়হানের চোখের দিকে তাকিয়ে চোখা-চোখি হতেই মাথা নামিয়ে নিচের দিকে তাকায়। সাদিয়াকে দেখে রায়হান মুচকি হেসে উঠে।
না চাইতেই রায়হানের ঘামার্ত রোমশ বুকের দিকে চোখ চলে যায় সাদিয়ার। খালি গায়ে কতদিনই তো রায়হানে দেখেছে সাদিয়া তবে আজকের মত এমন অদ্ভুত আনুভুতি কখনো হয়নি। ঘামের কারনে পশম গুলো লেপ্টে আছে বুকের সাথে। বুক থেকে পশমের এজ স্বচ্ছ রেখা নাভি পর্যন্ত এসে থেমেছে তা দেখেই সাদিয়া কেমন কেঁপে উঠল। সাদিয়া চোখ তুলে রায়হানের দিকে তাকিয়ে দেখল রায়হান এখনো তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তা দেখে সাদিয়া বলে উঠল,
—“ভেঁজা শার্টটা আমার কাছে দিন।”
রায়হান হাত বাড়িয়ে শার্টটা দিল। সাদিয়া হাত পেতে সেটা নিয়ে ওয়াশরুমে রেখে এসে দেখল, রায়হান শার্টের বুতাম উল্টা পাল্টা লাগাচ্ছে অন্য দিকে মনেযোগ দিয়ে।
রায়হানকে এভাবে দেখে সাদিয়ে হেসে ফেলল। সাদিয়ার হাসির আওয়াজ শুনে ধ্যান ভাঙ্গল রায়হানের। রায়হান মুচকি হেসে জিগ্যেস করল,
—“কি হলো হাসছো যে?”
—“আপনার শার্টের বুতাম হা হা হা।”
রায়হান শার্টের দিকে তকিয়ে এলোমেলো বুতাম লাগনো দেখে জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল,
—“হায়রে……”
সাদিয়া রায়হানের কাছে এসে একের পর এক বুতাল খুলতে লাগল আর বলতে লাগল,
—“রিক্সা খুঁজে না পেলে বসায় চলে আসতেন শুধু শুধু এত কষ্ট করলেন কেন। ঘেমে একেবারে একাকার হয়ে গেছেন। সব দোষ আমার কেন যে আমি রিক্সায় যাবার কথা বললাম।”
—“আরে এত সামন্য বিষয় নিয়ে মন খারাপ করছো কেন। তুমি একটা আবদার করেছ তাও কি রাখার অধিকার আমার নেই? সমান্য একটু ঘাম কি বের হয়েছে মন খারাপ করে বসে আছো। ”
রায়হান যেন রেগে গেল। সাদিয়া আর কোন কথা বলল না নিশ্চুপ ভাবে একে একে সব বুতাম ঠিকভাবে লাগিয়ে দিল। রায়হান সাদিয়ার কাধে হাত রেখে বলল,
—“মন খারাপ করেছ? মন খারাপ করোনা। বিশ্বাস করো আমার একটুও কষ্ট হয়নি রিক্সা খুঁজতে। বাইরে গরম তো হেঁটেছিলাম তাই একটু ঘাম বের হয়েছে মাত্র। ”
রায়হানের কথা শেষ হতে না হতেই মিম ঘরে ঢুকে বলল,
—“রক্সা ওয়ালা মামা….. ”
বলেই অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়াল মিম। সাদিয়া রায়হানকে ছেড়ে দু’হাত দূরে দাড়াল। মিম বলল,
—“সরি, নক না করে এসে পরেছি। আসলে রিক্সা ওয়ালা মামা বাইরে থেকে ডাকছিল। চলে যাবে বোধয় এত দেড়ি হচ্ছে বলে তোমাদের।”
—“আরেহ সরি কেন বলছিস। ( সাদিয়া )
—“এইরে….এত কষ্ট করে একটা রিক্সা পেয়েছি সেটাও চলে যাবে তাড়াতাড়ি চলো সাদিয়া। মিমু কাজটা ভালে করলে না তুমি। কই একটু তোমার বোনের সাথে রোমান্স করছিলাম তুমি এসে বারোটা বাজালে। হা হা হা ”
—“এহহহ, আমি তে ভালোর জন্যই আসলাম। রিক্সা ওয়ালা মামা চলে গেলে ভালো হতো তাই না? হুহ”
—“আরেহ তোর সাথে উনি মজা করছে। আর আমরা কোন রোমান্স টোমান্স করছিলাম না। ”
বলে ভ্রু কুঁচকে রায়হানের দিকে তাকালো সাদিয়া।
—“রোমান্স করছিলে কি না করছি তা তো দেখতেই পেলাম। আচ্ছা আমি যাই রিক্সা ওয়ালা মামাকে চলে যেতে বলি ভাইয়া কেমন?”
—“ডিমুর বাচ্চা দাড়া”
মিম ভেংচি কেটে চলে গেল। রায়হান সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
—“চলো এবার তা নাহলে রিক্সা চলে যাবে।”
সাদিয়া দ্রুত হিজাপ পরে নিল। তারপর দুজনে একসাথে বাসা থেকে বের হলো। রিক্সার সামনে এসে সাদিয়া যখন রিক্সায় উঠতে যাবে তখন পড়ে যাচ্ছিল। রায়হান এক হাত সাপোর্ট দিতেই খুব সহজভাবে উঠে গেল সাদিয়া। রায়হান রিক্সায় উঠেই পিছন থেকে এক হাত বাড়িয়ে দিয়ে সাদিয়ার কাঁধে চেপে ধরল যাতে রিক্সার ঝাকুনি না ব্রেক করলে কোনভাবেই সাদিয়া পরে না যায়। সাদিয়া ব্যাপারটা ভেবে খুশি হলো। লোকটাকে যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে।
রায়হান খেয়াল করল রিক্সাস উঠেই যেন সাদিয়ার মনটা খুব ভালো হয়ে গেছে। কেমন মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সবকিছু দিখছে সাদিয়া। রায়হান অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সাদিয়াকে দেখছে। হঠাৎ সাদিয়া রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলল,
—“কি ভালো লাগছে না বাতাসটা? কতো ঠান্ডা, হৃদয় জুরিয়ে যায় যেন।”
—“রিক্সায় অনেক চরেছি তবে কখনো এভাবে উপভোগ করিনি। ”
—“ওই দেখুন, দেখুন কতগুলো টিয়াপাখি ওই নারিকেল গাছটায়! কিহ সুন্দর না দেখতে? ”
সাদিয়া আঙুল দিয়ে দেখালো। রায়হান সেদিকে তাকিয়ে এক অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পেল যেন।
“একটা গাছের গর্তে ঘুকে গেল যে ” — বলই রায়হানের বাহু দুই হাতে জরিয়ে ধরল। রিক্সা ওয়ালা মামাও গাড়ি থামিয়ে দিল। রায়হান পকেট থেকে মোবাইল বের করে ক্যামেরা জুম করে বেশ কিছু ছবি তুলে নিল। রায়হান আজকের মত এত খুশি হতে এই দুই মাসে একদিনও সাদিয়াকে দেখেনি। পুরোটা রাস্তা যেন দুজন মিলে উপভোগ করলো।
সাদিয়া একটু পর পর এটা ওটা দেখে জিগ্যেস করবে,
—“কিহ সুন্দর না মসজিদটা? , আচ্ছা এটাই কি পুরনো দিনের সিনেমাহল?, কি সুন্দর না পথশিশুটাকে দেখতে? , ওই যে বেলুন বিক্রি করছে আমাকে যাওয়ার সময় অনেকগুলো কিনে দিবেন কেমন?”
রায়হান ওর কথা শুনে মাঝে মাঝে বেশ অবাক হয়েছে, মাঝে মাঝে শব্দ করে হেসে উঠেছে। গাড়ি গন্তব্য সপিংমলের সামনে এসে থামলো। রায়হান গাড়ি থেকে আগে নেমে সাদিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। সাদিয়া রায়হানের হাতে ভর দিয়ে রিক্সা থেকে নামলো। রায়হান খুশি হয়ে রিক্সা চালককে দুই হাজার টাকা দিল। সে প্রথমে নিতে চাইলো না রায়হান জোর করে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
—“আজ বৌ, বাচ্চাদের জন্য ভালো কিছু কিনে নিয়ে যাবেন।
রিক্সা চালক খুশি হয়ে রায়হানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলল,
—“আপনাদের পবিত্র সম্পর্ক সারা জীবন অটুট থাকুক।”
রায়হান সাদিয়া মনে মনে বেশ খুশি হলো তবে কেউ কারো কাছে তা প্রকাশ করলো না। সাদিয়ার শাড়ি, থ্রিপিস এবং রাহেলা বেগম এর সবকিছু কিনাকাটা শেষে রায়হান সাদিয়াকে জোর করে সাথে নিয়ে একটা জুয়েলারি সপে গেল সাদিয়ার জন্য এক জেরা রিং কিনতে। সেখানে গিয়ে ফাহিমকে একটা মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করা অবস্থায় দেখতে পেল।
রায়হানের মাথায় যেন রক্ত উঠে গেল। তবে সাদিয়া পাশে আছে বলে নিজেকে সামলে নিল। মনে মনে ভাবলো, “আজ ওর বাড়ি কোথায় সেটা দেখতে হবে ?”
হৃদয়কে ফোন করে জুয়েলারি সপে আসতে বললো তারপার সাদিয়াকে বুঝতে না দিয়ে ফাহিমকে ফলো করতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ পর হৃদয় আসলে সাদিয়াকে হৃদয়ের সাথে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। তারপর নিজে ফলো করতে থাকে ফাহিমকে। মনে মনে বলে, “আজই তোর এই পৃথিবীতে শেষ দিন ”
চলবে……
[ ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন। আর বিলম্বের জন্য ক্ষমা চাইছি ]