#ঝরা পাতার দিনগুলি
#পান্না হাবিব
পর্ব -২
ঘুমের মধ্যেই টের পেলাম ১৫ কেজির একটা বস্তার মতো গায়ের উপর এসে পরল। চোখ খুলে দেখি বড় ভাইয়ার ছোট মেয়েটা!!
-ফুপি!!
-জি আম্মু বলেন
-উঠো
-বাকি গুলো কই
দরজার চিপা থেকে আরো ৭ টা গুরা গারা বের হয়ে বলে এইযে আমরা!!! বলেই লাফিয়ে খাটের উপর এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
এই সবগুলাই আমার ভাইবোনদের বাচ্চা কাচ্চা!!
গত রাতের কথা মনে পড়তেই চারপাশে তাকিয়ে দেখি সব ফুল ছিড়ে মেঝেতে পরে আছে। কিন্তু আমি খাটের উপরে। ঘড়িতে বেলা ১১ টা বাজে। আমি এতক্ষণ ঘুমিয়েছি!!!
-ফুপি উঠো না!! সব থেকে পিচ্চিটা বলে উঠলো। আজকে তোমাকে অামরা নিয়ে যাব।
-তাই!!
উঠে ফ্রেশ হয়ে সবগুলোকে নিয়ে নিচে নেমে এলাম।
-এতো তারাহুরো করে বিয়ে করানোর কি দরকার ছিল বুঝতে পারছি না আমি। ছেলে মেয়ে দুজনেই ঘরের মানুষ। তোমাদের কাজ কাম কিছুই বুঝি না আমি।
ডাইনিং টেবিলে আসতে আসতে ছোট ফুপির বলা কথা গুলো কানে এলো।
দেখি ড্রইংরুমের সোফাতে বসে ছোট ফুপি, মা মানে মেজো ফুপি আর বড় ফুপি বসে কথা বলছে।
আম্মুকে খুব মিস করছি। ইশ আজকে আম্মু বেচে থাকলে হয়তো উনাদের সাথে গল্প করতো।
পরক্ষনেই মনে হলো, না থেকে ভালোই হয়েছে। ছোট ফুপির কথা শুনতে শুনতে অবস্থা খারাপ হয়ে যেত।
-কি মেহের ঘুম কেমন হলো রাতে!! জামাই তো দেখলাম সকাল সকাল গোসল করে বের হয়েছে!!!
তাহমিনা আপুর কথা শুনে কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। তাইতো!! আমি তো ফ্লোরে ছিলাম। খাটে কিভাবে আসলাম। আর গালে তো থাপ্পড়ের দাগ পরে যাওয়ার কথা।
হাত ধোয়ার বাহানায় বেসিনের আয়নায় দেখি গালে হালকা লাল হয়ে আছে।
সব কাজিনরা হাসা হাসি করছে গালে দাগ দেখে।
কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
থামবি তোরা! মেয়েটা এমনিতেই লজ্জা পাচ্ছে আর তোরা মজা করছিস। মায়ের ধমকে তাহমিনা আপু বলল ওর তো এমনিতেই লজ্জা কম। আরেক দফা হাসির ঢেউ পরে গেলো।
দরজা দিয়ে দেখলাম আমার তিন ভাই আর সাব্বির ঢুকছে। ওর হাতে একটা গিফট বক্স।
বাব্বাহ সাব্বির!! একরাতেই এতো প্রেম! যে সকাল সকাল উঠেই আগে গিফট কিনতে গিয়েছিস?!! হাসি মুখে তাহমিনা আপু বলল।
সাব্বির কোন উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে আমাকে উপরে আসার জন্যে বলে চলে গেলো।
আমার কেমন জানি ভয় করতে লাগলো।
রিতু আপু বলল মেহের তুমি উপরে যাও। তোমাদের খাবার রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি। সাব্বির ও কিছুই খায়নি সকালে।
পিচ্চি গুলোকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিচে রেখে উপরে আসলাম। বাথরুম থেকে পানির সাউন্ড আসছে। তার মানে ও বাথরুমে। তাহমিনা আপু আর রিতু আপু রুমে ঢুকলো।
রুমের কি অবস্থা করেছিস!!!
আমি কিছু করি নাই রিতু আপু, মুখ গোমড়া করে বললাম আমি।
রিতু আপু খাবার আর একটা শাড়ি দিয়ে বলল, রাতে আমার মনে ছিলো না। সাব্বির এসে আমার রুম থেকে নিয়ে গিয়েছে। আমার ভাইটা অনেক ভালো। কস্ট দিস না কখনো।
উত্তরে একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে মাথা ঝাকিয়ে চেপে মুচকি হাসি দিলাম।
কি খুশি মেয়েটা!! তাহমিনা আপু বলল।
-এইরকম একটা ড্যাশিং লুকের জামাই পেলে যেকোনো মেয়েই খুশিতে চারটা লাফ দিবে আপু। আর আমিতো না চাইতেই পেয়ে গেছি। ঢিংকা চিকা বলে চেচিয়ে উঠলাম আমি!!
আপুরা হাসতে হাসতে চলে গেলো।
পিছনে ফিরলে আমার চোখের পানি দেখতে পেতো।
খাটে বসে সাইলেন্ট মুডে রাখা ফোনটা হাতে নিলাম। গত রাত রাত থেকে চেক করা হয়নি। ২৭টা ম্যাসেজ আর ৭৪টা মিসকল ফ্রম ফয়সাল!!!
তারাতাড়ি কল ব্যাক করতে বলছে