#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ২৫
মিরা বাচ্চাটাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে। বাচ্চাটা মিরার গালে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
—” মাম্মা তুমি এতু দিন তোতায় থিলে? দানো তোমাল দন্য আমাল কতু কতথ হয়েথে?”
মিরা বাচ্চাটার হাতের উপর হাত রেখে বলে,
—” সরি বাবা। আর কখনো তোমাকে কষ্ট দেবে না। খুব ভালোবাসবো। আর মাম্মার সাথে রাগ করে থেকো না।”
—” না মাম্মা আমি তোমাল থাথে নাগ করিনি। তুমি তো আমাল মাম্মা তোমাল থাথে নাগ কততে পালি।”
ওদের কথার মাঝে মিহান বলে,
—” হয়েছে মা ছেলের কথা? এবার আমার দিকেও একটু নজর দিন আপনারা।”
বাচ্চাটা মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” মাম্মা এতা তে?”
মিরা কিছু বলার আগে মিহান বলে,
—” আমি তোমার পাপা।”
বাচ্চাটা মিহানের কথা বিশ্বাস না করে মিরার দিকে তাকায়। মিরা হাসি মুখে মাথা নেড়ে হ্যা বলে। বাচ্চাটা মিহানের দিকে তাকায়, মিহান হাত বাড়িয়ে বলে,
—” আমার কোলে আসবে না?”
বাচ্চাটা আস্তে আস্তে বিছানার উপর দিয়ে হেটে মিহানের সামনে যায়। সামনে দাড়িয়ে আস্তে করে বলে,
—” পাপা।”
মিহান ঝড়ের গতিতে বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরে।
———————————–
কাল রাতে মিহান চৌধুরী বাড়ি ফিরে বাচ্চাটার কথা সবাই কে বলেছে। অনু তো সকাল থেকেই সারা বাড়ি নেচে বেড়াচ্ছে কখন আসবে বাচ্চাটার কাছে। মিহানের মম আর অনু অনেকগুলো খেলনা কিনে আসে খান বাড়িতে। মিহান সেই সকালে বেরিয়েছে এখনো ফেরেনি। দত্তকের ব্যাপার টা নিয়ে মিহান দৌড়াদৌড়ি করছে। প্রেম প্রিয়ার থেকে সবকিছু শুনে বাচ্চাটাকে দেখতে এসেছে। সবাই বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আদর করছে। অনু তো কোল থেকে নামাতে চাচ্ছে না। সবার কাছে নজর কেড়েছে বাচ্চাদের চোখ জোড়া। মনে হয় যেন বড়দের মতো চোখের লেন্স পড়ে আছে। বাচ্চাটার কি নাম রাখা যায় এখনও কেউ কিছু ঠিক করতে পারেনি। হঠাৎ করে মিরার দাদি বলে ওঠে।
—” আচ্ছা ওর নাম মিরান না রাখলে কেমন হয়?”
নীলা লাফিয়ে উঠে বলে,
—” নানু তুমি তো ফাটিয়ে দিয়েছো।”
নীলার কথা শুনে সবাই নীলার দিকে কৌতুহলী হয়ে তাকায়। নীলা নিজের মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,
—” তোমরা সবাই ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো আমার দিকে?”
নিঝুম কটাক্ষ করে বলে,
—” না তোর দিকে তাকাবে না তো কার দিকে তাকাবে? মিস বাংলাদেশের দিকে?”
অনু নিঝুমের কথা কানে না দিয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” আপু তুমি কী বলবে বলো। ওর কথা শোনার দরকার নেই।”
অনুর কথা শুনে নীলা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
—” নানু যে নামটা বলেছিলো মিরান তাই তো? এই নামটা ই আমরা রাখতে পারি। মিহান আর মিরা থেকে মি, মিরা থেকে রা, আর মিহানের থেকে ন। এতে দুজনের নামের সাথে মিল রেখে নাম রাখা হয়।”
মিরা অস্পষ্ট স্বরে বলে,
—” মিরান!”
মিহানের মম সব শুনে হেসে দিয়ে বলে,
—” এক কথায় মিরান চৌধুরী।”
প্রিয়া মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” কী রে তোর ছেলের নাম তোর পছন্দ হয়েছে?”
মিরা অনুর কোলে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” পছন্দ হবে না কেনো? খুব পছন্দ হয়েছে।”
অনু মিরানের গালে শব্দ করে চুমু দিয়ে বলে,
—” আমার মিরান বাবা।”
অনুর কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। অনু ওদের দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলে,
—” দেখলি মিরান বাবা ওরা আমাদের কথা শুনে হাসছে। ওদের সাথে আর কথা নাই।”
অনেকক্ষণ হাসি ঠাট্টা করার মাঝে অনু ওর মমের দিকে তাকিয়ে বলে,
—” মম তুমি ভাবীকে বলছো কথাটা?”
মিরা মিহানের মমের দিকে তাকিয়ে বলে,
—” কি কথা আন্টি?”
মিহানের মম মিরাকে রাগ দেখিয়ে বলে,
—” কে আন্টি? কার আন্টি? এখানে কারো আন্টি নেই। আমি মিহানের মম মানে তোরো মম। আমাকে মম বলে ডাকবি না হলে কথা বলবো না তোর সাথে আমি।”
মিহানের মমের কথা শুনে মিরা হাসি মুখে বলে,
—” আচ্ছা বলো মম তুমি কী বলবে?”
মিরার কথায় উপস্থিত সবার মুখে হাসি ফুটে উঠে। মিহানের মম ঠোঁটের কোনে হাসি টেনে বলে,
—” এইতো আমার মেয়ের মত কথা। যাইহোক শোন আমার বড় ননদ মানে মিহানের বড় ফুপি তার দাদা শ্বশুর আর দাদি শাশুড়ির মৃত্যু বার্ষিকীতে প্রতিবছর মিলাদের আয়োজন করা হয়। এ বছরও হবে। আমরা প্রতিবছরই যাই এ বছরও যাবো। আমি আর মিহানের পাপা চাই তোরাও যাবি আমাদের সাথে। প্রেম, প্রিয়া, নীলা আর নিঝুম যাবে আমাদের সাথে। মিহানের পাপা তোর পাপা সাথে কথা বলে নিবে।”
মিরা ইতস্ত বোধ করে বলে,
—” কিন্তু মম আমি বা প্রেম প্রিয়া কখনো এমন অনুষ্ঠানে যায়নি।”
অনু বলে,
—” ভাবি আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে দেবো চলো না?”
মিরার ফুপি বলে,
—” ঘুরে আয় তোরা ভালো লাগবে তোদের।”
মিরা সবার কথা শুনে বলে,
—” আচ্ছা যাবো আমরা। কবে যাব আমরা মম?”
—” কাল সকালে রওনা দেবো কুমিল্লার উদ্দেশ্যে।”
প্রেম কপাল ভাঁজ করে বলে,
—” সেটা আবার কোথায়? আর কতক্ষন সময় লাগবে যেতে?”
অনু মিরানকে মিরার কোলে দিয়ে বলে,
—” ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে ছয়-সাত ঘণ্টা মতো সময় লাগবে।”
প্রেম শুকনো ঢোক গিলে বলে,
—” এত সময় লাগবে?”
অনু ঠোঁট চেপে হেসে বলে,
—” হ্যা ভাইয়া।”
প্রেমের অবস্থা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসতে শুরু করে।
মিহানের দাদার চার ছেলে মেয়ে দুই ছেলে আর দুই মেয়ে। বড় মিহানের পাপা মানে আকাশ চৌধুরী।তারপর বড় ফুপি তনু চৌধুরী তার স্বামী রায়হান মির্জা বড় ছেলে তানভীর মির্জা, ছোট ছেলে রাফি মির্জা, তানভীরের স্ত্রী রিয়া মির্জা এবং রাফির স্ত্রী নুর মির্জা। চাচা আমান চৌধুরী, স্ত্রী আয়েশা চৌধুরী, মেয়ে মিথি চৌধুরী, ছেলে আশিক চৌধুরী। ছোট ফুপি কথা চৌধুরী, স্বামী তামিম খান, মেয়ে ইরা খান, ছেলে নিশান খান। সব কাজিনদের মধ্যে মিহান বড়। মিহানের পাপা ওর মমর বিয়ের পর ঢাকায় চলে আসে ব্যবসার জন্য। মিহানের দাদা দাদি আর চাচা ময়মনসিংহে থাকে। পরিবারের কোনো অনুষ্ঠান আর দুই ঈদে ছাড়া তেমন কারো সাথে দেখা হয় না। ঈদে ফুপিরা মিলে মিহানের দাদার বাড়ি ময়মনসিংহে যায়। তখন সবাই মিলে অনেক মজা করে।
———————————–
সকাল সাড়ে আটটার বেশি বাজে মিহান, অনু, প্রেম আর প্রিয়া খান বাড়ির হল রুমে বসে ব্রেকফাস্ট করছে। মিহানের মম আর পাপা এক ঘন্টা আগে রওনা দিয়েছে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে। মিরারা রেডি হয়ে নিচে এলে ওরা সবাইকে বলে বেরিয়ে যায়। মিহান গাড়ি ড্রাইভ করছে, পাশে মিরা আর মিরার কোলে মিরান ঘুমিয়ে আছে। মাঝের সিটে নীলা, অনু আর নিঝুম বসা আর পিছনের সিটে প্রেম আর প্রিয়া বসা। বেশকিছু ড্রাইভ করার পর মিহান অনুকে বলে,
—” গাড়ির ভিতরে এমন চুপচাপ ভালো লাগছে না অনু। একটা গান শুরু করতো!”
—” না ভাইয়া মিরান ঘুমাচ্ছে এখন না।”
—” কে বলছে আমার মিরান বাবা ঘুমাচ্ছে? আমার মিরান বাবা অনেকক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠে গেছে তাই না মিরান বাবা?”
মিরান মিরার কোলে বসে এক গাল হেসে বলে,
—” অহহ পাপা।”
—” নে অনু শুরু কর গান।”
অনু নীলা আর নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বলে,
—” নিঝুম আর নীলা আপু তোমরাও আমার সাথে গাইবে?”
নীলা অনুর দিকে ফিরে বলে,
—” আচ্ছা, গাইবো প্রথমে তুমি শুরু করো।”
—” ঠিক আছে।”
গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ
আ-মা-র মন ভুলায় রে।
ওরে কার পাণে মন হাত বাড়িয়ে
লুটিয়ে যায় ধূলায় রে আমার
মন ভুলায় রে।
গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ
আ-মা-র মন ভুলায় রে।
ও যে আমায় ঘরের বাহির করে
পায়ে পায়ে পায়ে ধরে
মরি হায় হায় রে।
ও যে কেড়ে আমায় নিয়ে যায় রে
যায় রে কোন চূলায় রে আমার
মন ভুলায় রে।
গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ
আ-মা-র মন ভুলায় রে।
ও কোন বাঁকে কী ধন দেখাবে,
কোনখানে কী দায় ঠেকাবে
কোথায় গিয়ে শেষ মেলে যে
ভেবেই না কূলায় রে আমার
মন ভুলায় রে।
গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ
আ-মা-র মন ভুলায় রে।
— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ২৬
গোধূলির শেষ বিকেলে গাড়ি এসেছে কুমিল্লার একটি গ্রামে, অবশ্যই গ্ৰাম বলা যায় না মফস্বল বলা যায়। গাড়ি থেকে নেমে সবাই হাত পা নাড়াচাড়া করতে ব্যস্ত। টানা কয়েক ঘন্টা জার্নির ফলে সবার গা গতর ম্যাজম্যাজ করছে। মিহান মিরার কাছ থেকে মিরানকে নিজের কাছে নেয়। মিরান ঘুমিয়ে আছে। মিরা আশেপাশে দেখছে কোথায় কী আছে? মিহান সবাইকে আসতে বলে মিরানকে কোলে নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। একে একে সবাই হাঁটতে শুরু মিহানের পিছনে। সবার পিছনে মিরা হেলেদুলে আসছে সবকিছু দেখতে দেখতে। মিহান দিয়ে পা থামায় দোতলা কাঠের বাড়ির সামনে। মিরা বিস্ময় চোখে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে। আগের দিনের ধনী পরিবাররা না কী এমন বাড়ি তৈরি করতে। একথা মিরা ওর পাপার কাছ থেকে শুনেছে। সুন্দরী কাঠের তৈরি বাড়ির কথা মিরা অনেক শুনেছে। তাহলে কি এই বাড়ীর সুন্দরী কাঠের তৈরি? মিরা ক্লান্ত চোখে মিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
—” ভীতুরাম এটা কি সুন্দরী কাঠের বানানো বাড়ি?”
মিহান স্মিত হেসে বলে,
—” হ্যা, তুমি চেনো?”
মিরা বাড়িটার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” না তো, আমি কিভাবে চিনবো? আমিতো আন্তাজে বলাম। শুনেছি আর আগের দিনের মানুষ রা সুন্দরী কাঠের ঘরবাড়ি তৈরি করতো তাই মনে হলো।”
মিহান প্রতিউত্তরে কিছু না বলে মিরার দিকে তাকায়। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। মিলনের ভাবনার ইতি ঘটে কারো কথায়। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ওর কাজিন রা কী জানি বলতে বলতে ওদের দিকে আসতেছে। তাদের মধ্যে একজন বেশ উঁচু গলায় বললো,
—” কী রে ভাইয়া, এত দেরি করে আসলি কেনো? কখন থেকে তাদের জন্য অপেক্ষা করছি। এই বুঝি তোদের আসার সময় হলো?”
মিহান একনজর সবার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” রাস্তা তো আর কম নয়। সাত আট ঘণ্টার পথ, আসতে একটু সময় লাগবেই। তা তোরা কেমন আছিস সবাই?”
মিহানের কথায় হাসি মুখে বলে,
—” আমরা ভালো আছি সবাই। এখন ভিতরে চল পরে সব কথা হবে।”
মিরা বাড়ির উঠোনের লাগানো গাছ গুলো দেখছিলো। মিরা আড়চোখে তাকিয়ে দেখে প্রেম প্রিয়ার হাত ধরলে, প্রিয়া চোখ বড় বড় করে প্রেমের দিকে তাকায়, প্রেম সে সব গায় না মেখে সবার আড়ালে প্রিয়ার হাতে চুমু দেয়। প্রিয়া প্রেমের কান্ড দেখে অন্যদিকে তাকিয়ে লাজুক হাসে। মিরা ওদের কান্ড দেখে হেসে অন্য দিকে তাকায়। মিহান মিরাকে ডাক দিয়ে বলে,
—” মিরা, এসো আমরা ভিতরে যাবো।”
মিরা মাথা নেড়ে এগিয়ে আসে ওদের দিকে, ” মিরা ” নামটা শুনে সবাই একসাথে চমকে উঠে বলে,
—” মিরা ভাবি এসেছে?”
মিহান মিরার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,
—” হুম।”
মিরা এসে মিহানের পাশে দাঁড়ালে, মিহান ওর কাজিনদের দিকে তাকিয়ে মিরাকে বলে,
—” আমার চাচাতো বোন মিথি ওর ভাই আশিক। ছোট ফুপির মেয়ে ইরা আর ওর ভাই নিশান। আরো কিছু কাজিন আছে তারা বোধহয় বাড়ির ভিতরে আছে।”
মিরা ওদের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলে,
—” হাই গাইস, কেমন আছো তোমরা সবাই?”
মিথি এগিয়ে এসে মিরার হাত ধরে বলে,
—” ভাবি আমরা সবাই ভালো আছি। ইভেন তোমাকে দেখে আরো বেশি ভালো আছি। তোমার কথাই ভাইয়ার মুখে অনেক শুনেছি। থাক, সেসব কথা পরে হবে। এখন আগে ভিতরে চলো না হলে বাড়ির বড়রা বকা দেবে আমাদেরকে।”
অনু মিথিকে কটাক্ষ করে বলে,
—” হ্যা, হ্যা, এখন তো ভাই ভাবীই সব। এখানে যে আরো কেউ আছে সেদিকে কারো খেয়ালই নেই। হুর!”
মিথি অনুর গাল টেনে বলে,
—” এতো মিষ্টি বোনটাকে কখনো ভুলে থাকা যায়? কখনো না।”
অনু ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
—” আমি জানি তো আপু তুই আমাকে খুব ভালোবাসি। আমি তো এমনি এমনি বলেছিলাম।”
মিথি নিজের কোমরে এক হাত রেখে বলে,
—” দাঁড় পাজি মেয়ে তোর হচ্ছে।”
ইরা এগিয়ে এসে ওদের থামিয়ে বলে,
—” পরে ঝগড়া করিস তোরা এখন ভিতরে। ভাবী তুমি এসো আমার সাথে।”
ইরার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে দিয়ে সম্মতি জানায় মিরা।
একে একে সবাই বাড়ির ভিতরে ঢুকছি। মিরা বাড়ির ভিতরে ঢুকে বিস্ময় চোখে ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখছে। বাড়ির ভিতরে আরও একটা বড় উঠান আছে, সেখানে কিছু লোক বসে গল্প করছে, সাথে মিহানের মম পাপাও আছে। বসার জন্য কিছু চেয়ার আর একটা খাট পাতা আছে। নিশান আর আশিক মিরাদের পিছন থেকে চিৎকার করে বলে,
—” কে কোথায় আছে তাড়াতাড়ি বাড়ির উঠানে চলে এসো। বড় ভাইয়া বড় ভাবীকে নিয়ে এসেছে।”
মিরা ওদের চিল চিৎকার শুনে হতভম্ব হয়ে ওদের দিকে তাকায়। ওদের চিৎকারে একজন মধ্য বয়সী নারী এসে ওদের মাথায় আসতে করে থাপ্পড় দিয়ে বলে,
—” এই বাঁদরের দল এইভাবে চিৎকার করছিস কেনো?”
আশিক মাথা ডলতে ডলতে বলে,
—” উফ! ফুপি আমি আবার কী করলাম?
আশিকের ফুপি ওদের দিকে চোখ গরম করে বলে,
—” তাহলে এতক্ষণ চিৎকার করেছিলো কে?”
নিশান করুণ চোখে তাকিয়ে বলে,
—” হ্যা, তোমরা সবাই পেয়েছো তো মারার জন্য আমাদের দুজনকে।”
আশিকের ফুপি ওদের কথায় ভেংচি কাটে। মিহান হেসে আশিকের ফুপি কে জড়িয়ে ধরে বলে,
—” কেমন আছো ফুপি?”
মিহানের ফুপি মিহানের গালে হাত দিয়ে বলে,
—” ভালো বাবা, তুই কেমন আছিস? ইশ! চেহারার কী হল করেছিস? ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছিস না কী?”
মিহান ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
—” আরে না। অনেকদিন পর দেখছি তো তাই।”
মিহানের ফুপি কপাল ভাঁজ করে বলে,
—” তোর সাথে কথা বলে পারব না আমি। এখন বল আমার বৌমা কোথায়?”
মিহান চোখের ইশারায় মিরা কে দেখিয়ে দেয়। মিহিনের ফুপি মিরাকে দেখে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মিরা মৃদু স্বরে বলে,
—” আসসালামুয়ালাইকুম ফুপি।”
ফুপি মৃদু হেসে বলে,
—” ওয়ালাইকুম আসসালাম। মাশাল্লাহ, মিহান তোর পছন্দ আছে বলতে হবে। তা কেমন আছো মা তুমি?”
মিরা লাজুক স্বরে বলে,
—” আমি ভালো আছি ফুপি। আপনি কেমন আছেন?”
মিহানের ফুপি মিরাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—” আমি ভালো আছি মা। তুমি এখানে এসেছো আমি খুব খুশি হয়েছি। চলো আমি তোমার সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।”
মিহানের ফুপি মিরার হাত ধরে উঠানে নিয়ে যায়। উঠানে ছোটখাটো একটা ভীর হয়ে আছে। মিহানরাও ওদের পিছন পিছন আসে। মিরা মিহানের চোখের দিকে তাকালে মিহান চোখের ইশারায় বুঝায় মিহান ওর সাথে আছে।
চলবে….💙