তুমি হলেই চলবে পর্ব শেষ

#তুমি~হলেই~চলবে 🍁
#writer~হাফসা~আলম🍂
২৪(.অন্তিম~পাতা🍁)
.
.
টিপটিপ করে চোখ মেলে তাকালাম। চারপাশে একবার দেখে নিয়ে মনে হচ্ছে আমি নিজের রুমেই আছি।কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আমাকে বাসায় নিয়ে আসার লোক আর যেই হোক আযমান না।তাহলে এত তাড়াতাড়ি আমি কি করে এলাম??আমি পাশে পিড়ে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি উনি আমার হাত ধরে বসে আছে।দেখেই প্রচুর ক্লান্ত লাগছে।আমি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম…..
—বাসায় নিয়ে এলেন কখন??আমি তো বুঝতেই পাড়লাম না।আর আপনি এখন কেমন আছেন??এত হাইপার কেন হন বলেন তো??এভাবে রিয়েকশন দিচ্ছেন মনে হচ্ছে আমি ম…..
—তোমার কি মনে হচ্ছে আমি শুনতে চাই না আয়ুজান।কথা কম বলবে এখন থেকে।কোথাও যেতে হলে আমাকে বলবে।হাঁটতে ইচ্ছে হলে আমাকে বলবে।
—-মি.শেখ আমরা চেকআপ করে নি??
.
দরজার দিকে তাকিয়ে এত এত ডাক্তার নার্স দেখে আমি অবাক হলাম।তার চাইতে অবাক করা ব্যাপার রুমটাতে বেস পরিবর্ত এসেছে।অনেক কিছু উল্টাপাল্টা যেমন দরজার রং,আলমারি মিসিং,রুমের রংটাও কেমন যানি নতুন নতুন।বারান্দা জানালাও কেমন যেন নিজের জায়গায় নাই।এত পরিবর্ত কেনো রুমের??আমি একটু উঠে বসলাম। উনি আমাকে ধরে পিছনে বালিশ দিয়ে তাতে ঠেস দিয়ে বসিয়ে দিলেন।ডাক্তারা চেকআপ করে কি কি জানি বললেন উনাকে উনার মুখটা শুকিয়ে ছিল আগে থেকেই আরো শুকিয়ে গেল।চিন্তিত ভঙ্গিতে আমার পাশে বসে পড়লেন।আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।আছে তো আছেই চোখই আর সরাচ্ছে না।আমি অবাক হলাম।উনি এভাবে তাকিয়ে থাকার মানুষ না।তবে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো??আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই উনি আমার কোলে মাথা দিয়ে দিলেন।কোমড় জড়িয়ে কি যেন বিড়বিড় করলেন।তারপর কয়েকটা চুমু খেলেন।উনার ভারী নিশ্বাস গুলো আমার পেটে পড়ছে।মানে সে ঘুমিয়ে গেছে।উনি এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলেন।হঠাৎ দরজায় একজন নার্স এসে দাঁড়ালেন।আমাদের এভাবে দেখে মুখ ঘুড়িয়ে চলে যেতে নেয়।আমি কাছে ডাকলাম। উনি ধীর পায়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমি প্রশ্ন করলাম……
—আপনাকে কি বাসায় নিয়ে এসেছে??আমার দেখা শুনার জন্যে???
—না ম্যাম।এটা আপনাদের বাসা না এটা হসপিটাল।
.
আমি অবাক হয়ে চারপাশ দেখছি।এত কিছু কিভাবে হসপিটালে এলো??আর কখনইবা এগুলো সেট করেছে।আমি আবার অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম…..
—কিন্তু এটাকেত আমার নিজের বেডরুমের মত লাগছে।কি ভাবে এগুলো হলো??
—স্যার করেছে।রাতেই সব ঠিক করে ফেলেছে।আপনাকে বাকি মাস গুলো এখানেই থাকতে হবে।তাই আপনার যাতে কষ্ট না হয় তাই স্যার এগুলো করেছে।ম্যাম খাবার গুলো রেখে যাচ্ছি খেয়ে নিবেন।আমি আসি।
.
খাবার রেখে নার্স চলে গেছে।আমি শুধু তাকে দেখছি।এত ভালোবাসা হয় নাকি???হুম হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আল্লাহ এমন ভালোবাসা রাখে।হাজবেন্ড ওয়াইফের ভালোবাসায় আল্লাহর রহমত থাকে।তাই এমন ভালোবাসাও হয়।আমি উনার মাথায় বিলি কাটছি।আর উনি ক্লান্ত মানুষের মত ঘুমাচ্ছে। আসলেই উনি খুব ক্লান্ত। ভালোবেসে ক্লান্ত উনি।আমাকে ভালোবাসতে বাসতেই ক্লান্ত হয়ে গেছে।আচ্ছা ভালোবাসায় ক্লান্তি আছে??উনি উঠলেই যানতে চাইব।
.
.
—-এই দেখেন না আমি কেমন মটকা হয়ে গেছি।আর পেটাও ফুলে গেছে অনেক।এত মোটা হলেত আমি বেলুনের মত ঠুসসস করে ফুটে যাবো।আর এই সবই হয়েছে আপনার জন্যে। এত খাওয়াতে কে বলেছে??আমি আর খাবো না।যান এখান থেকে।
.
মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলাম।কেমন লাগে??কত কত খাইতে পারে একটা মানুষ??আমার তো নিজেকে মানুষই মনে হচ্ছে না।এত খাওয়ালে তো এমনেই মারা যাবো।থাক এগুলো বলা যাবে না।থাপ্পড় একটাও মাটিতে সরি ফ্লোরে পরবে না সব গালে পরবে।আমি চুপ করে মুখ ঘুড়িয়ে বসে আছি।উনি শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে বলে……
—তুমি মোটা হয়েছ এই কথাটা কোন আহাম্মক বলেছে??? আমাকে বল??সেই আহাম্মকের কি দৃষ্টি শক্তি নাই নাকি??তোমাকে মোটা বললে মোটাকে কি বলবে??এগুলো জাস্ট ননসেন্স টাইপের কথা বুঝলে আয়ুজান। এগুলো তুমি কানে নেও কেন বলত??
—তাহলে আপনার মনে হয় আমি আন্ধা???
—ছিছিছি এটা কেন মনে হবে??এত সুন্দর চোখ তোমার আমি শুধু শুধু এমন কথা কেন মনে করবো বল তো???
—আমি নিজেইত দেখছি আমাকে কত মোটা লাগে।গাল গুলো দেখেন কেমন ফুলে ফুলে গেছে।মনে হচ্ছে রসগোল্লা। এহহহহহহ্
—-এই না না একদম কাঁদবে না।তুমি মোটা না তো বাবু।তুমি একটু নাদুসনুদুস হয়েগেছ।আর তোমাকে এখন কতটা সুন্দর লাগে আমি বলেও বুঝাতে পারবো না।নতুন করে প্রতি সকালে তোমার প্রেমে পড়ি।হাবুডুবু খেয়ে মরি।আর গাল গুলো আসলেই রসগোল্লা। মন তো চায় টুপ করে খেয়ে নি।আর তুমি কি না শুধু শুধু এমন করছ??বাবু আমার খাওয়া কম্পিলিট কর।প্লিজজজ সোনা বউ আমার।পাখি একটা।
—-এই একদম এই সব আদুরী কথা বলে আমাকে পাম দিবেন না।বুঝলেন।আপনার চালাকি বুঝিনা ভেবেছেন নাকি??আমাকে খাওয়াতে খাওয়াতে মোটা বানাবেন পরে বলবেন বউ পছন্দ না চেঞ্জ করতে চাই।
—আবার ফাউল কথা।কবে বাদ দিবে এগুলো জান??আমার তো তুমি ছাড়া কাউকে দেখতেই ভালো লাগে না।আর এখনতো অফিসেও যেতে ইচ্ছে করেনা।তুমি দিন দিন এত এত কিউট হয়ে যাচ্ছ শুধু তোমাকেই দেখতে ইচ্ছে করে।সারা দিন তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুমি আগের থেকে সুন্দর, কিউট,গোলগাপ্পার মত হয়ে গেছ??
.
মাথা নাড়িয়ে আমি না বললাম।উনি রুমে থাকা নার্সকে ডেকে বলে উঠে…..
—মিসস..ফাতেমা আপনিই বলেন আমার বউ আয়ুজান আগের থেকে শতশত গুন সুন্দর হয়ে গেছে না??
—অবশ্যই স্যার।আমি কেন সব নার্সরাই ওনাকে দেখতে আসে।সবার একই কথা ম্যাম কত কত কিউট আর সুইট, মিষ্টি হয়ে গেছে আগের থেকেও বেশি।
—কি এবার বিশ্বাস হল তো??তা না হলে সবাইকে ডেকে ডেকে জিজ্ঞেস করবো।খুশি এবার খাও।প্লিজজজ প্রিন্সেসটা কত কষ্ট পাচ্ছে।খাও।
.
উনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। দিনে তিনবার আমি উনার সাথে এভাবে ঝগড়া করি।আর উনি ঠিক এই ভাবে আমাকে মানায়।আমার এমনটা করতে ভালোই লাগে।এই সাপ্তাহে আমার অপারেশন। নরমাল ডেলিভারি করা যাবে না।সিরিয়েস কেইস তাই ডেটের আগেই অপারেশন করাতে হবে।তা না হলে রিক্স আরো বেড়ে যাবে।যানি না উনার সাথে বাকি জীবন কাটাতে পাড়বো কি না।তবে আমি চাই কাটাতে।উনার হাত ধরে আমার চলার ইচ্ছা প্রবল।আল্লাহই ভালো বুঝেন।উনার ইচ্ছাই শেষ ইচ্ছে।
.
.
রাত ১২টা ছুঁই ছুঁই আমি বিছানার উপড় একটা ছোট টেবিল তুলে তাতে কাগজ রেখে একটা চিঠি লিখতে বসেছি।মিনি প্লাস্টিকের টেবিল হওয়াই লাভ হয়েছে।এটা এখানেই থাকে আমার খাবার খাওয়ানো হয় এই টেবিলে রেখে।আযমানকে একদিন বড় আপুদের দেওয়া লাভলেটার দিয়েছিলাম উনি সে গুলো পুড়িয়ে দিয়ে বলেছে আমার বউ আছে।পিচ্চি বউ যখন বড় হবে তখন তার হাতের লেখা চিঠিই আমি পড়বো।বউ থাকতে কেনো আমি আলাদা মেয়েদের চিঠি পড়ব??পাপ হবে।আমি শুধু আমার বউয়েরটাই পড়বো।তাই আজ তার জন্যে চিঠি লিখতে বসেছি।এই তিন বছরে কখনো এটা লিখার ইচ্ছে ছিল না তবুও এই নয় মাস আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।তাই মনে হয়েছে এই চিঠিটা লেখা প্রয়োজন তাই লিখতে বসেছি।তবে চিঠিটা অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগেই দিব বলে ভেবে নিয়েছি।সাদা ঝকঝকে কাগজে লিখতে বসেছি আমি।
.
🍁
প্রিয়..আসাবা
ছোট বেলা থেকেই এত এত কড়া ভাবে আমাকে রেখেছেন যে কি করে আর আপনাকে ভালো নাম দি বলেন।তাই এই আসাবা নাম দিলাম।নামের সম্পূর্ন্য না বললেও আপনি বুঝবেন।তবুও বলি আযমান সাদা বান্দর।যানি এখন হাসবেন তবে আমি নিষেধ করছি হাসবেন না।আপনি যানেনও না কত কত বকা দিয়েছেন আমাকে।কত কাঁদিয়েছেন।আপনার মনে আছে ছোট বেলায় আমি পাশের বাসার আকাশ নামের এক ছেলের সাথে খেলেছি দেখে আপনি আমাকে একটা থাপ্পড় দিয়েছিলেন।আর আমার লড়লড় দাতঁটা ফেলে দিয়েছিলেন। হা হা।যদিও সেদিন আপনার উপড় খুব রাগ হয়েছে কিন্তু আমি মনে মনে খুব খুশিও হয়েছি দাঁতটা যা ব্যাথা করত আপনাকে কি আর বলবো।আম্মু তো আমার চিৎকারের জন্য ধরতেই পারতো না।আর আপনি এক থাপ্পড়ে চিৎপটাং করে দিলেন।মনে মনে আমি কিন্তু আপনার আর একটা নাম দিয়েছি আর সেটা হল thor.ও কিন্তু আমার প্রিয় avenger.তাই আপনি এবার একটা ঠোঁট বাকিয়ে হাসি দিবেন প্লিজজ।আমার দাড়ুন লাগে আপনার বাকা ঠোঁটের হাসি।ছোট বেলায় এত প্যারা কেনো দিলেন বলেন তো??তবে সব প্যারা আমি শোধ করে দিয়েছি।এই তিন বছরে।আপনার মনে আছে আমাকে ক্লাসে দিয়ে আসলে আমার বান্ধুবিরা আপনাকে গিলে খেত।আমার কিন্তু তখন ওত রাগ হতো না।কিন্তু আপনি যখন হাতে কামড়ে দিয়েছেন তখন থেকে মনে এক অন্য রকম শিহরণ শুরু হলো।আপনার বুকে মাথা রেখে যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন সত্যিই এক অদ্ভুত প্রশান্তি কাজ করেছে।আর বৃষ্টিতে ভিজেঁ আমার মনে হয়েছে আমি বৃষ্টিতে না এক সুখ মিশ্রিত অনুভুতিতে ভেঁজেছি।আপনার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আমার জীবনে বেস্ট ছিল।আপনার সাথে রাতের আকাশে চাদঁ দেখাটাও ছিল বেস্ট।আর কৃষ্ণচূড়াগুলো এখনো আমার কাছে আছে।শুকিয়ে গেছে কিন্তু তাতে এখনো আপনার প্রথম প্রকাশিত ভালোবাসার গন্ধ আছে।মন কাড়া সেই গন্ধ।পাগল করা ঘ্রাণে মাতাল করে। আমি মাঝে মাঝেই সেগুলো দেখি আর আপনার প্রথম প্রকাশিত ভালোবাসার ঘ্রাণ নি।আপনার মনে আছে মাঝে মাঝেই আমি টুপ করে আপনার গালে চুমু খেতাম আর আপনি হাবার মত তাকিয়ে থাকতেন।ঠিক সেই সময় গুলোতেই আমি কৃষ্ণচূড়ার ঘ্রাণে মাতাল হয়ে থাকতাম।তাই তো আপনাকে কেবলাকান্ত বানিয়ে চুমু খেতাম।আমার কিন্তু খুব হাসি পেত আপনার মুখ দেখে।আপনার নদীর বুকে লঞ্চের কথা মনে আছে?? রাতে আমরা পানির ঘ্রান নিয়েছিলাম।যানি আছে তবুও বলছি। সেই শিহরণের কথা আমি আজও ভুলিনি।চোখ বুজলেই দেখি সেই চাঁদ সেই পানির কল কলানির শব্দ আর নাকে আসে সেই ঘ্রাণ।

প্রেম কি আমি বুঝিনি।কেমন যানি না।কিভাবে হয় তাও বলতে পারবো না।তবে আমিও প্রেমে পড়েছি।আমি প্রেমে পড়েছি সেই ছেলেটার যে আমাকে শিখিয়েছে বৃষ্টির নতুন ঘ্রান নিতে।যে শিখিয়েছে কৃষ্ণচূড়ার রংয়ে নিজেকে রাঙ্গাতে।যে বুঝিয়েছে সবাই এক না।কেউ কেউ আপনার মত কৃষ্ণচূড়াও হয়।যে নিজের রংয়ে আমাকে রাঙ্গিয়েছে।হ্যাঁ প্রেমে পড়েছি সেই ছেলেটার যে হাত বাড়িয়ে বাতাসকে নিজের মুঠোয় নিতে শিখিয়েছে। নদীর পানিরও যে আলাদা ঘ্রান হয় এটা যে শিখেছে আমি তার প্রেমে পড়েছি।আমার নিশ্বাসে যার বসবাস আমি তারই প্রেমে পড়েছি।সবাইকে উপেক্ষা কারি আমার সেই আপনিটার প্রেমে পড়েছি।হ্যাঁ আমি আপনাকে ভালোবাসি।আপনার মত কোরে না কিন্তু আমার মত করেই ভালোবাসি।

সরি আপনাকে ছেড়ে যেতে চাই না কিন্তু আপনাকেও আমি প্রাপ্তির সন্ধান দিতে চাই।যদি ওনি চায় আবার দেখা হবে।হয় এই জন্মেই আপনার বউ হয়ে আপনার প্রিন্সেসের মা হয়ে পিরিয়ে দিবে।তা না হলে আমি আপনাকে পরকালেও চাইবো।আল্লাহর কাছে চাইবো আপনিই আমার স্বামী রূপে সব কালে থাকেন।ভালোবাসার শেষ হয়না। জীবন ইতি টানে কিন্তু ভালোবাসায় ইতি সমাপ্তি নেই।ভালোবাসার কোনো জীবন হয় না।এটাতো একটা অনুভুতি।মানুষের মৃত্যু হয় কিন্তু মনের হয় না।আত্নার মৃত্যু নেই।আর ভালোবাসা আত্নার ব্যাপার।অন্তরের অন্তরস্থ হতে এই ভালোবাসার আবিষ্কার।ভালোবাসা আপনাকে ভালো রাখে।ভালোবাসা এক রহস্যময় অনুভুতি।নিজে থেকে প্রকাশিত না হলে এটা প্রকাশ করা যায় না।আপনার ভালোবাসায় কোনো অভাব ছিল না।এত ভালোবাসা পাওয়ার পরে আমি একটু না অনেকটুকু লোভী হয়েগেছি।তাই বলছি আপনি আমার পরে দ্বিতীয় কোনো নারীকে আমার বাম পাশ দিতে পারবে না।এমন কি প্রিন্সেস কেও না। ওকে ডানটা দিবেন।বামটা শুধু আমার।এটা যেন মাথায় থাকে।আচ্ছা চলেন এবার প্রপোজ করি।আপনি তো অনেক বার করেছেন।এবার না হয় আমি করি।প্রপোজালের নাম হবে চিঠি প্রপোজ। চিঠিতে করছি বলে কথা।আচ্ছা শুরু করি…….
….হে প্রিয়
ভালোবাসা কি যানেন???আমার কাছে এটা একটা সুপ্ত অনুভুতি।যে অনুভুতির নাম জানা নেই।তবে এর একটা আলাদা ঘ্রান আছে।যেমন আপনার গায়ের গন্ধ।ঘামে ভেঁজা আপনি।আপনার বুকের উষ্ণতার ঘ্রান। সবই মাতাল করা।প্রথম দেখার প্রেম নয়।কিশোরী বয়সে প্রেমে পরেছি বুঝলেন??এই প্রেম আঠারোতে নয় আট হাজারে বিশ্বাসি।আমি আপনার প্রেমিকা হতে চাইনা।শুধু পথ চলার সঙ্গী হতে চাই।চাই ধোয়াঁশার চাদরে নয় অদৃশ্যমান হাওয়াতে ভেসে থাকতে।যে হাওয়াকে প্রতি মুহূর্তে আপনি অনুভব করবেন।নাক টেনে যে হাওয়ার ঘ্রাণ গায়ে মাখাবেন। আমি সেই হাওয়াই হতে চাই। হোতে দিবেন কি আমাকে সেই হাওয়া??ভাসাবেন কি আপনার মনের মোহোনায়??রাঙ্গাবেন কি আপনার কৃষ্ণচূড়ায়??অপেক্ষায় থাকবো।আপনার উত্তরের আসায়।তবে আমার আপনি~হলেই~চলবে না আপনার ভালোবাসা~হলেই~চলবে……….
.
ইতি…
আপনার আয়ুজান 🍁
.
চিঠিটা ভাজ করে রেখে দিয়েছি।উনার একটা হাত আমার বালিশে রাখা।কিছুদিন থেকে তার ঘুম হয় না।আজ অনেক দিন পরে ঘুম হয়েছে।আমি অবাক হোই একটা লোক কিভাবে সুস্থ হয়েও হসপিটালে রাত কাটাতে পারে।কিন্তু উনাকে দেখে এটা বিশ্বাস হয়ে গেছে।আমি গুটি মেরে উনার বুকে মাথা রাখতেই উনি দু হাতে আমাকে জড়িয়ে নিলেন।যেন সে যানতো আমার শেষ আশ্রয় স্থান উনার বুকের বা পাশটা।
.
.
সকাল থেকে দিল মাথা খাচ্ছে। আজ সকাল সকালই এর আগমন।এসেই বলে উঠেছে…..
—আয়ু তোর যদি যমজ মেয়ে হয় তবে সেই হবে।
—কিভাবে সেই হবে??যানান মহারানী।
—কিভাবে হবে মানে কি। আরে দিহান আর সাফ্রানের বউ করবো দুজনকে।
—কিন্তু আমার তো যমজ হবে না। বলে দিয়েছে ডাক্তার এখন কি হবে বল???
—ভাই আল্লাহরে বল না তোর যাতে যমজ হয় তা না হলে আমার ছেলেগুলোর কি হবে??? (কাঁদোকাঁদো হয়ে)
—কি হবে মানে কি??ওদেরও বিয়ে হবে।বাচ্চা হবে।এতে এত প্যারার কি আছে।আমার বাবু বাদে কি আর মেয়ে থাকবে না নাকি পৃথিবীতে??পৃথিবীতে মেয়ের অভাব হবে না।তুই বরং যাদের যমজ মেয়ে আছে তাদের কাছে যা।
—দেখ আয়ু ফাইজলামি করবি না।আমার তোর মেয়েই চাই।আমি নিশ্চিত কিউটের ডিব্বা হবে।আর ওই কিউটের ডিব্বা নিয়া কি যে টানা টানি হবে আল্লাহ মালুম।
—টানা টানি কেনো হবে??(ভ্রুকুঁচকে বলে উঠলাম)
—আরে কেনো বুঝসনা আমার দুই পোলাই ওর পিছনে ঘুড়বে আরো তো কত কত ঘুড়বে কি আর বলবো।
—আগে থেকেই তোর ছেলেদেরকে সামলা। আমার বাবুকে তোর বাড়িতে বউ করে দিব??ইম্পসিবল।
—কেনো কেনো??কম কোন দিন দিয়ে আমরা।
—এই যে ঝগড়া করবি ওর সাথে।আবার তো তুই মারামারি পারস।তখন দেখা যাবে আমার কিউটি কিউটি বাবুটারে তুই নাক মুখ ফাটিয়ে দিবি।
—সত্যি আয়ু মারবোনা। প্রমিস।তবুও তোর মেয়েকেই চাই।
—একজনের জন্যে নিবি ভালো আর এক জনের কি হবে??
—তুই আর একটা বাচ্চা নিস।ওটা মেয়ে হলেই হবে।
—তা আর এই জনমে সম্ভব না।এজনের জন্যেই উনার জীবন ঝুলে আছে আর একজনের ব্যাপার হলে তো উনি শেষ।
.
আমি আর দিল হাসছি।দিলের বেবিগুলো দৌড়ে এসে আমার কোল নিয়ে ঝগড়া করছে।ছেলেরা আসলে তেমন ঝগড়া পারেনা।তবে ওরা এত এত করতে পারে বলার বাহিরে।আমি আর দিল হাসছি।দিল তার এক হাত আমার পেটে দিয়ে রেখেছে যাতে ওরা লাফিয়ে না পড়ে।দুজনের একজনকেও আমি চিনতে পারছি না।এদের চিনা মশকিল। একদম অবিকল এক দেখতে।একজন চোখ মুখ খিঁচে বলে উঠে…..
—তুই সল সল
—না আমি বোলবো ফুফির কুলে…
.
কথাগুলো এত কিউট কি আর বলবো।এখনো অত ক্লিয়ার না কথা।একজন এবার জিতে গেল। তার নাম সাফ্রান।আমার কোলে বসে তার কত কত কথা।দিহান কেঁদে দিল।তাই দুইজকে দুই হাটুতে নিলাম।আযমান এসে চোখ রাঙ্গিয়ে ওদের নামাতে বলেছে।কিন্তু আমি নামালাম না দেখে দুজনকেই কোলে তুলে নিলেন।বাবা হিসেবে পারফেক্ট একজন লোক উনি।
.
.
আজ অপারেশন। ভয়ে বুক কাপঁছে। হয়তো এটাই শেষ দেখা।আম্মু কাদঁতে কাদঁতে বেহুশ। আমার সামনে না আসলেও আমি যানি।সবার অবস্থাই খারাপ তবে সবচাইতে উনার অবস্থা খারাপ।উনার চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে যদিও প্রতি সকালেই এমন থাকে তবুও আজ বেশি।রাত জেগে নামাজের বিছানায় কান্না করা তার প্রতিদিনের কাজ।তার সকল দোয়ায় আমি।সকল মুনাজাতে আমাকে চায়।তার সকল চাহিদা জুড়ে শুধু আমি।ইনজেকশন দেওয়া হয়ে গেছে।আমি কাঁপা হাতে তার হাত টেনে নিয়েছি হাতের ভাজে চিঠিটা দিলাম।উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।চোখের পানি যেন বাধ মানছেনা।আমার কপালে শেষ চুমুটা দিতেই আর কিছু মনে নেই।ধীরে ধীরে সব শান্ত আর নিস্তেজ হয়ে এলো।ঝাপসা চোখে তাকিয়ে শেষ বার দেখতে পেলাম না।কেমন যেনো চোখগুলো ঘোলাটে হয়ে এলো।
…….🍁
……..🍁
সে যাএায় আল্লাহ উনার কথা শুনেছে।বাঁচিয়ে দিয়েছে আমাকে।জ্ঞান আসার পরে যানতে পেরেছি আমার প্রিন্সেসের বয়স দুই দিন হয়ে গেছে।আর আমার স্বামী দুই দিন সেন্সলেস ছিল।তখন খুব হাসি পেয়েছে এটা শুনে।বউয়ের বাচ্চা হবে স্বামী সেন্সলেস হয়েগেছে। উনি খালি পায়ে দৌড়ে এসে যখন জড়িয়ে ধরেছে তখন মনে হয়েছে সেন্সলেস না এই লোকের আরো অনেক কিছু হয়ে যেতে পাড়তো। সেন্সলেস তো কম কিছুই ছিল।আমার চিঠি পড়েই নাকি উনি সেন্সলেস হয়েগেছে। তখন যদি সামনে থাকতাম থাপড়াইয়া বলতাম শালা প্রপোজ করলে মানুষ সেন্সলেস হয় নাকি??কিন্তু তা আর কারা হল না।ওই চিঠি বাধিয়ে বেড রুমে লাগিয়ে রেখেছে।অফিসে যাওয়ার আগে একবার জোড়ে জোড়ে পড়ে আবার রাতে এসে একবার পড়ে।আমার বাচ্চা মেয়েটার মনে হয় মুখস্থ হয়েগেছে। মাঝে মাঝেই সে চিঠির এক দুই লাইন বিড়বিড় করে বলে।তখন রাগে আমার মাথা ফেটে যায় আর উনি হেঁসে কুটিকুটি হয়।
.
আমার মেয়ের আজ তিন বছর হবে।তাই বাড়িতে বিশাল আয়োজন করা হয়েছে।অনেক কাজ।আমি আম্মু মা দিল অনেকে মিলে কাজ করছি।কাজের লোকগুলোও করছে তবুও শেষ হচ্ছে না।তবে রান্না আম্মু আর মা মিলে করছে।আমি এখনো ভালো রান্না পাড়িনা। আমি মনযোগ দিয়ে সব দেখছি আর শিখছি।কিন্তু উনার তো আমাকে শান্তি না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা আছে তাই।ডেকেই চলেছে।বিরক্ত কর লোক একটা।বউ জ্বালানোই এর কাজ।
.
.
—-কি হয়েছে ষাঁড়ের মত চিৎকার করছেন কেন???
—আমি ষাঁড়?? তুমি এই কথাটা বলতে পারলে???নিষ্ঠুর বউ আমার আয়ুজান।
—ভালো।আপনি আয়াতকে রেডি করিয়ে ফেলেছেন??গুড গুড।
.
উনি একটা হাসি দিলেন।আয়াত আমার মেয়ের নাম।ওকে আজ লাল রং এর জামা পড়িয়েছে উনি।মাথায় চাঁদও একেছে।কিন্তু ভয়ঙ্কর আশ্চর্য ব্যাপার হল উনিতো অর্ধেক চাদঁ আঁকতে পাড়েনা।তবে এত সুন্দর হুবহু কিভাবে আঁকলো।আমি অবাক হলাম।এতে গাফলা তো আছেই।আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি কিন্তু কিছু দেখছিনা।আমি এবার সন্দেহ নিয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি আয়ানাকে বাম থেকে ডান কোলে এনে আমাকে বাম সাইডে এনে কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে এসে বলে উঠে……
—এত সন্দেহ ভাব দেখানোর মানে কি??তুমি কি মনে করেছ আমি এভাবে টিপ লাগাতে পাড়িনা নাকি??আরে আমার প্রিন্সেসর জন্য তো আমি সব করতে পারি।এটা তো শুধু একটা টিপ আঁকা।
—কাজল দিয়ে এত সুন্দর টিপ আপনি দিয়েছেন???এটাও বিশ্বাস করার মত কথা?? যেখানে কাজল ছোঁয়াতেই কেঁপেকেঁপে উঠেন সেখানে এত সুন্দর বাঁকা চাঁদ??অবিশ্বাস কথা নয় কি???
.
উনি কিছু বলতে নিবে তার আগেই দিলের ছেলেগুলো দৌড়ে আসে। তাদের আবার দুইজন যমজ বোনও আছে।দিলের মনে হয় যমজের কারখানা হবে।দিহান আর সাফ্রান এসে বলে উঠে……
—আয়ুকে দেও ওর সাথে খেলবো(দিহান)
—ওই তুই না আমি খেলবো আয়ু আমার।(সাফ্রান)
—না চাচ্চু আয়ু আমার(দিহান)
.
দুজনে শুরু করে দিয়েছে ঝগড়া।এদের একটা ইন্টেরেস্টিং ব্যাপার হল আমাকে ফুফি ডাকে আর উনাকে চাচ্চু। অনেকে অবাক হয় এদের কথা শুনে।নিষেধ করা হলেও বলে।আয়াত এবার বাবার চুল টেনে বলে উঠে……
—নামাল নামাল
—নামাবো আম্মু আগে তো তোমাকে কামড়া কামড়ি থেকে বাচাই।এই যে বাবারা এবাবে ঝগড়া করলে আমি আমার প্রিন্সেসকে দিব না।পরে যদি ব্যাথা পায় তখন??নো রিক্স। আমি কোনো রিক্স নিতে পারবোনা। সরি।
.
দুজন এবার একজন আর একজনের দিকে তাকিয়ে আয়াতের দিকে তাকায়।তারপর বলে…..
—আচ্ছা আমরা ওকে ভাগ করে খেলবো।একসাথে।আয়ু অর্ধেক সাফ্রানের আর অর্ধেক আমার।ঠিক আছে।এবার দেও।
.
উনি আয়ুকে নামিয়ে দিলেন।আয়াত ওদের মাঝে দাড়াতেই দুজনে ওর দু হাত ধরে। আবার হাত ছেড়ে দুই ঝুটি আলত করে ধরে হাটা দেয়।আমি হাঁসতে হাঁসতে পাশে তাকিয়েই ড্রেসিন টেবিলের নিচে কাটাঁ চাঁদের টিপের পাতা দেখে আবার হেঁসে উঠলাম।এটাই তাহলে মূল রহস্য। এমন ভাবে টিপের উপড় পাউডার দিয়েছে কেউই বুঝতে পারবে না।বুদ্ধি আছে জামাইয়ের।উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরতেই বলে উঠলাম……
—আপনার তো এখন প্রিন্সেস আছে।আমাকে কি আর লাগে???
—-সারা পৃথিবী হলেও আমার শুধু তুমি~হলেই~চলবে বুঝলে।ভালোবাসি আয়ুজান।
—আমিও ভালোবাসি আপনাকে।
.
.
#সমাপ্তি………………… 🍁
.
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন……….

দুঃখী দুঃখী সমাপ্তি দিলাম না।খুশি খুশি দিলাম।এবার আপনারাও খুশি থাকেন।কাল থেকে নতুন গল্প দিব।
~একগুচ্ছ~জোনাকির~আলো🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here