এই রাত তোমার আমার শেষ পর্ব

#এই_রাত_তোমার_আমার
#সানজিদা_ইসলাম
#২৪তম_পর্ব

চেয়ার টানার শব্দে ফিমা অতীত থেকে বেরিয়ে এলো। সামনে আনাস মিষ্টি হেসে বসে আছে। লোকটা আসলেই খুব খারাপ না।ফিমাকে তার সাথে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অনেক সময় দিয়েছে।অনেকটা।সে স্বামী কম বন্ধু বেশি ছিলো। তার চোখে কখনো ছল চাতুরতা দেখেনি।না করেছে অভিনয়।

লোকটার সাথে এখনো ঝগড়া হয় ছোট ছোট বিষয়ে ঝগড়া হয়। তার রাগ খুব বেশি নকের ডগায় সবসময় চুপচাপ বসে থাকে একটু উনিশ থেকে বিশ হলেই শুরু চিল্লাচিল্লি। কিছু দিনের মধ্যেই সে বুঝতে পেরেছিলো কুইন এলিন কার মত হয়েছে।

সে সত্যিই দেখিয়ে দিয়েছে সব পুরুষ এক হয় না কিছু ব্যতিক্রমও আছে। তার সামান্য কিছু হলেই ফিমার বুক ফেটে যায়।সব পরিস্থিতিতে ফিমাকে সেই তো সামলিয়েছে এখনো সামলায়। তার মন খারাপের কারণ গুলো দূর করে দেয়। লোকটার কিছু হলে সে মনে হয় বাচঁবেই না।

আসলে আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।মাহিয়াত তাকে প্রত্যাখ্যান না করলে বধু বেশে আনাসকে পেতনা।

—আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে না আমি জানি আমি সুন্দর এখনো কত অল্প বয়সি মেয়েরা আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় আমাকে দেখলে নাকি বোঝাই যায় না আমি তিন ছেলে মেয়ের বাবা।

আনাসের কথায় ফিমা কিছুটা নরে চরে বসে। কপাল কুঁচকে বিরক্ত ভঙ্গিতে তাকালো,আনাস বোকা হাসলো।ফিমা কিছু বললো না মুখটিপে সামান্য হেসে খাবার বেড়ে দিয়ে তার পাশে বসে রইলো।

হঠাৎ তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো তার হাতে বা মাথায় ব্যান্ডেজ নেই।আর না আছে কোন ক্ষতের চিহ্ন।ফিমা চোখ ছোট করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো।

খাওয়ার মাঝে হঠাৎ আনাসও তার দিকে তাকালো।ফিমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো কিন্তু সে বুঝতে পারলো ফিমা এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে তার দৃষ্টি অনুসরণ করে নিজের দিকে তাকাতেই তার মনে পরে গেলো।সে ব্যান্ডেজ লাগাতে ভুলে গেছে।

আসলে তার এক্সিডেন্ট হয়নি ফিমার বকুনি থেকে বাঁচতে ছোট একটা নাটক করেছিলো। রাতে কোনো রকমের ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ফিমার সেবা যত্ন নিবে সকালে রাগ কমলে সত্যি বলে দিবে। কিন্তু এখন যে নিজের হতবুদ্ধির জন্য ধরা খেয়ে যাবে তা বুঝতে পারেনি।

কিন্তু এখন বুঝতে পারছে তার সাথে কি হতে চলেছে।যদিও সে চাইলেই ফিমাকে নিমিষেই শান্ত‌ করে দিতে পারে। কিন্তু তাকে রাগাতে তার বকুনি গুলো শুনতে তার ভালো লাগে।কারণ এই রাগগুলোর পিছনে এতো তো গোপন ভালোবাসা আর যত্ন থাকে যা সে মিস করতে চায় না কখনো।

আনাস কিছু বললো না চুপচাপ খাওয়া চালিয়ে গেলো। আর ফিমা রাগ করে ঘরে চলে গেলো।আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আর কোনোদিন কথা বলেনা এই বাটপার লোকের সাথে।সব সময় এমন করে। তার যে কষ্ট হয় তা কি সে বোঝেনা?

ঘরে গিয়ে ফিমা চুপ চাপ শুয়ে পড়ল,আনাস রুমে আসলো কিছুক্ষণ পর, তারপর আমতা আমতা করে বলল,

—ইয়ে মানে আসলে হয়েছিল কি! অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিলই শুধু ব্যাথাও পেয়েছিলাম রক্তও বেরিয়ে ছিলো তাইতো ব্যান্ডেজ করেছিলাম। মনে হয় গোসল করার সময় সব পানিতে ধুয়ে ভালো হয়ে গেছে।

ফিমা উঠে বসে তার দিকে তাকিয়ে বললো,
—আচ্ছা আমার চেহারায় কি বড় বড় অক্ষরে বোকা লেখা আছে? যে তুমি আজগুবি কথা বলবে আর আমি বিশ্বাস করে নেবো? রক্ত না হয় বুঝলাম পানিতে ধুয়ে যায় তাই বলে কি ক্ষতও ধুয়ে যায়?এতো মিথ্যা কিভাবে বলো তুমি? তুমি জানো আমার কেমন লাগছিল এতক্ষণ?

শেষ কথাটা বলার সময় তার গলা একটু ধরে আসছিলো।আনাসেরও খারাপ লাগে।নাহ এইবার একটু বেশিই করে ফেলেছে সে।এ কথা বলা উচিত হয় নি।সে ফিমার পাশে বসে ফিমাকে বুকে জরিয়ে নিলো ফিমার ছুটার জন্য দুই একবার চেষ্টা করে পরে থেমে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।ফিমাকে কান্না করতে দেখে আনাস তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে।

—আরে হয়েছে তো।সরি সরি আর করবো না কখনো।এই শেষ এই সামান্য কারণে কেউ কান্না করে বোকা মহিলা।

—তুমি সবসময় এমন করো জানো আজকে আমি কতটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম?আমি খুব কষ্ট পেয়েছি তোমার সাথে কথা নেই যাও।

—সত্যি সত্যি আঘাত পেলে খুশি হতে বুঝি?

—আমি কি সেটা বলেছি?দু লাইন বেশি বোঝো কেনো?প্রমিস করো আর কোনো দিন এই ধরনের দুষ্টুমি করবে না।

ফিমা কিছুটা জোরে কথাটা বললো,

—মিথ্যা নাটক কি আর সাধে করি তোমার ভয়েই তো করি। বিয়ের আগেই বউ ভালো ছিলো আমার এক ধমক খেয়ে চুপ করে থাকতো।আর বিয়ের পর তার ধমকের ভয়ে নতুন নতুন বাহানা বানাতে হয়।

আনাস বিরবির করে কথাগুলো বললো, ফিমা শুনেও না শোনার ভান করে বলল,
—কি হলো কি বিরবির করছো?

—কই কিছু না বলছিলাম যে প্রমিস,প্রমিস আর এমন টা হবে না।

—মনে যেন থাকে।

—হ্যা থাকবে থাকবে আস্ত তুমি মনে ঢুকে আছো আর তোমার কথা মনে থাকবে না তা কিভাবে হয়?

আনাসের কথায় দুজনেই শব্দ করে হেসে দিলো।



‌।
গভীর রাত চারদিকে নিস্তব্ধতা ছেয়ে আছে। কোলাহল মুক্ত পরিবেশ কিছুক্ষণ পর পর কুকুরের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।সময়টা সবার ঘুমানোর জন্য হলেও কিছু কিছু মানুষের জন্য চোখের জল আর দীর্ঘশ্বাস ফেলার উপযুক্ত সময়।

ফিমাও তার ঘরের বারান্দায় রেলিং ঘেসে দাঁড়িয়ে নিজের অতীত ভুলার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। তার প্রথম সন্তানের কথা মনে করে তার বয়স চেহারা অনুমানের চেষ্টা করতেই প্রতিবার একটা পরিচিত মুখ ভেসে উঠে আর কান্না গুলো আটকে রাখতে পারে না।

কোনো মা কি তার প্রথম সন্তানকে ভুলতে পারে?

—এই রাত তোমার আমার,শুধু তোমার আমার এখানে এই তৃতীয় ব্যক্তি তোমার চোখের অশ্রু আর ভাবনায় উনি কি করছে?

হঠাৎ কেউ ফিসফিসিয়ে ফিমার কানে কানে কেউ কথাটি বললো।

ফিমা পিছনে ফিরে পুরুষ অবয়বটির বুকে মাথা রেখে বললো,

—কি করবো আমি আনাস চাইলেও যে তাকে আমি ভুলতে পারি না।যত বার আমার বাচ্চাটার কথা মনে পড়ে ততবার না চাইতেও তার কথা মনে পড়ে।আমি কি করবো? আমাকে একটু বলো কি করলে আমার বুকের মধ্যে যে জ্বালা তা কমবে? তুমি তো ম্যাজিক জানো আমার সব ইচ্ছে পূরণ করো।আর সব কষ্ট নিমিষেই দূর করে দাও। তাহলে আমার এই কষ্টটা কেনো দূর করতে পারো না কেনো? আমার ছেলে আমার কাছে এনে দিতে পারো না?আমি আমি তোমার কাছে কিছু চাই না শুধু আমার সন্তান কে একবার আমার কাছে নিয়ে আসো এক বার ওকে দেখতে চাই ছুঁয়ে দিতে চাই ভালোবাসতে চাই নইলে যে আমি মরেও শান্তি পাবো না।

—শান্ত হও ফিম। আমার সাধ্যের মধ্যে হলে কবে তোমার ইচ্ছে পূরণ করতাম কিন্তু তুমি চিন্তা করো না আমি তোমাকে ওয়াদা করছি আমি একবারের জন্য হলেও মাহির কে তোমার কাছে এনে দেবো।আই প্রমিস।

ফিমার কান্না থামলো না সে আনাসের কথায় সন্তুষ্ট না।সেটা সে বোঝে। প্রায় প্রতি রাতেই ফিমা এভাবে কান্না করে আর আনাস একই ওয়াদা প্রতিদিন করে তাই এক কথা শুনতে শুনতে সে অভ্যস্ত। সারাদিন হাসি খুশি ব্যাস্ত রমনির রাতে অন্য রুপ দেখা যায়।যার রাতের আকাশ অন্ধকার মেঘ চাঁদ তারা আর সে নিজে।




কাঁধে ব্যাগ নিয়ে রেডি মাহির তাকে খুব হাসিখুশি দেখাচ্ছে ছেলেকে খুশি দেখে নুহাও খুশি। শুধু মাহিয়াত মুখ অন্ধকার করে রেখেছে। সেদিনের পর মাহির নুহার সাথে স্বাভাবিক হলেও মাহিয়াতের সাথে তার আগের মত সক্ষতা নেই।আর আজ ছেলের এমন আবদার আর নুহার সম্মতিতে সে ভিত ও বিরক্ত দুটোই।যা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

ইমিগ্রেশনের সময় হয়ে গেছে।মাহির মাকে ইশারায় সাবধানে থাকতে বলল তার জন্য চিন্তা করতে নিষেধ করল, তাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলো তারপর তাদের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে ঘুরে গেলো। মাহিরের আচরণে মাহিয়াত খুব কষ্ট পেলো নুহাকে ভালো ভাবে বিদায় দিলো এতো কিছু বলে গেল কিন্তু তার কাছ থেকে শুধু বিদায় নিয়ে চলে গেল তাহলে কি মাহির তাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে? সামনে এগিয়ে গিয়ে আবার মাহির দৌড়ে পেছনে ফিরে এসে মাহিয়াতকে জরিয়ে ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।মাহিয়াতের মন হলো যেন প্রচন্ড খরায় এক পশলা ঝুম বৃষ্টি হয়ে মনটাকে একেবারে ঠান্ডা করে গেলো। অজান্তেই চোখে আসা খুশির পানিটুকু সবার অগোচরে মুছে নিলো।

আবার দুজনকে বিদায় দিয়ে বেরিয়ে পরলো তার গন্তব্যে…




দুপুরের সময় ফিমা রান্না করতে করতে ক্লান্ত। কি না কি মেহমান আসবে তার জন্য এতো আয়োজন।সব তার একা করতে হচ্ছে শাশুড়ি অসুস্থ মানুষ মেয়ে দুটো হয়েছে ধূর্ত।একটা কথাও শুনবে না কাজেও হাত দিবে না কিন্তু একটার পর একটা ওর্ডার দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই একাধারে কেউ ডোর বেল বাজিয়ে যাচ্ছে কেউ দরজা খুলছে না বাধ্য হয়ে ফিমারই যেতে হলো। দরজার ওপারে আজ যে আছে তার আজকে শেষ দিন।

দরজা খুলে একটা মাত্রাতিরিক্ত ফর্সা অল্প বয়সি ছেলেকে দেখে ফিমা হতচকিয়ে গেলো। কাঁধে ব্যাগ প্যাক নিয়ে নিজের মুখ ঢেকে দারিয়ে। তার পর কয়েক মূহুর্ত পর হঠাৎ তার হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে শুরু করলো ছেলেটার চেহারা একেবারে মাহিয়াতের মত ফিমার মতে অতিরিক্ত সুদর্শন। শুধু বয়সটা বোধহয় কম। পিছন থেকে আনাস উঁকি দিয়ে বললো,

—ছেলেকে শুধু কি তাকিয়েই দেখবে নাকি, ইচ্ছে গুলোও পূর্ণ করবে?

ফিমা যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।এইটা তার ছেলে? তার প্রথম সন্তান…

(সমাপ্ত)

পরিশিষ্ট
প্রথম বার মাহির প্রায় এক মাস ফিমার কাছে থেকে গিয়েছিলো।সে যখন শুনেছে মাহির কথা বলতে পারে না সে কি কান্না?মাহিরই তাকে সামলিয়েছে। ছেলেকে একেবারে চোখে হারাচ্ছে। কুইন, এলিনও, তাকে আপন করে নিয়েছে। তারা মাহিরের সব কথা বোঝে না তাই সবাই আস্তে আস্তে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শেখা শুরু করে দিয়েছে। মাহির ও তার আরেক পরিবার পেয়ে খুব খুশি।

মাহির একমাস থেকে চলে যায় তার অন্য পরিবারে যাওয়ার সময় একটা চিঠি ফিমার হাতে দিয়ে যায়।
আর বলে যায় সে আবার কিছুদিন পর এখানে এসে থেকে যাবে।

ফিমা চিঠিটা সাথে সাথে পড়ে, সেখানে লিখা ছিলো,

ফিমা,
আসলে তোমাকে কি নামে সমন্ধন করবো জানা নেই।আর নাই তোমার নামের আগে প্রিয় লিখতে পারবো, কারণ তুমি আমার মোটেও প্রিয় নও। আবার অপ্রিয় ও নও। তুমি যেমন আমার কাছ থেকে নিজের অজান্তেই একটা দামী জিনিস নিয়ে দিয়েছো অবশ্য এতে তোমারও দোষ নেই জিনিসটা হারানোর পেছনে কিছুটা আমিই দায়ী তবুও, তোমার সবচেয়ে দামী সম্পদ আমি নিয়ে নিয়েছিলাম। জানিনা তুমি কেমন শুধু এতটুকুই জানি একজন খারাপ মানুষ কারো হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারে না।তাই আমার কাছে তুমি নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ।

তবুও আমি ভয় পেতাম প্রচুর ভয়। আমার সন্তান হারানোর ভয়। অনেক কষ্টের পর আমি মাহির কে পেয়েছি।তাই সেই সময়টায় তাকে নিয়ে খুব পসেসিভ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার ভয়ের মাত্রা এতোই বেশি ছিলো যে আমি তোমার সাথে একটাবার তাকে দেখা করার সুযোগ দেই নি। নিজের কাছে রেখেছি আমি ধ্যেন জ্ঞান সব ভুলে তাকেই সময় দিয়েছি।রাতে ঘুমানোর সময় মনে হতো এই বুঝি তুমি চুপিচুপি এসে ওকে নিয়ে গেলে তাই সারারাত তার পাশে জেগে কাটিয়েছি।বলতে পারো সেই সময়টায় আমি হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিলাম। যার কারণে আমি আমার আরো একটা মূল্যবান সম্পদ কে হারিয়েছি।

এতো গুলো বছর পেরিয়ে গেছে তারপরেও আমার ভয় হয়। আগে ভয় ছিলো তুমি তাকে ছিনিয়ে নিবে না তো? আর মাহির বড় হওয়ার পর ভয় হতো যদি মাহির সব কিছু জেনে আমাকে ছেড়ে চলে যায় তাহলে কি নিবে বাঁচবো?

এই ভয়ে ভয়ে জীবন কাটাতে কাটাতে বিরক্ত হয়ে গেছি।আর কিছু ভালো লাগছিলো না তাই মাহিরকে সব জানিয়ে দিয়েছি।সব জানার পর সে তোমার সাথে দেখা করতে চাইছে আমিও আটকাই নি। জানিনা তুমি কেমন আছো কিন্তু মনে হলো তোমার ছেলের সাথে তোমার দেখা করার অধিকার আছে। আর কত দিন সত্যি গোপন করে রাখবো? আমি নিজেও হাঁপিয়ে উঠেছি।আর সত্যি কয়দিন গোপন রাখা যায় বলতে পারো? একদিন না একদিন তা বেরিয়েই আসে আমরা যতই তা গোপন রাখতে চাই না কেনো।

আর কয়দিনই বা ছেলেকে আটকে রাখবো একদিন না একদিন সে হয়তো অন্য করো কাছ থেকে সব সত্যি জানবে তোমাকে খুঁজে বের করবে কিন্তু এখন আমরা মাহিরের কাছ থেকে ঠিক যতটুকু সম্মান আর ভালোবাসা গুলো পাচ্ছি কথাগুলো অন্য কারো কাছ থেকে শোনার পর ততটুকুই ঘৃণা আর অসম্মান পেতে হত।আমি আমার সন্তানের চোখে নিজের জন্য ঘৃনা কখনোই দেখতে পারবোনা।

জানিনা তোমার কাছে যাওয়ার পর মাহির আবার ফিরবে কিনা কিন্তু তাকে বলে দিও তার এই মা তাকে খুব ভালবাসে।

পরিশেষে একটা কথাই বলবো এতো লুকোচুরি আর ভালো লাগছিলো না।অপরাধবোধ আর ভয় কুরে কুরে খাচ্ছিল আজ হয়তো কিছুটা স্বস্তি পাবো। তোমার সন্তানকে তোমার কাছে থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাইবো না। কারণ আমাদের চুক্তিটাই এমন ছিলো যেখানে তুমি আমি দুজনেই বাঁধা ছিলাম। কিন্তু তোমার সাথে ছলনা করার একটা ভুলটা আমারও ছিল।

কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে না, আমরা নিতান্ত বাধ্য হয়েই কাজটা করেছি। এখানে বাচ্চার জীবনের পাশাপাশি তোমার জীবনের ঝুঁকি ও ছিল। নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে অন্যের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলব এতটাও স্বার্থপর আমি ছিলাম না। ভেবেছিলাম সামান্য ভালো ব্যবহারে যদি তুমি কিছুটা সুস্থ হও তাহলে ক্ষতি কি? কিন্তু সেটাই আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে…যাকগে সে সব কথা।তোমার সাথে অন্যায় করেছি তার শাস্তি তো আল্লাহর আমাকে দিচ্ছেই পারলে তুমিও ক্ষমা করে দিও। আর মাহির কে দেখে রেখো।

হয়তো তার বাবা মায়ের পাপের ফল আল্লাহ তাকেও ভোগ করার জন্য দিয়েছে…

ইতি
নুহা,




বাড়িতে গিয়েও সে নিয়মিত তার মাকে ফোন দিয়ে ইশারায় কথা বলে।ফিমা তার সব কথাই বোঝে মায়েরা বোধহয় এমনি হয় সন্তানের চোখের ভাষায় সব বুঝতে পারে।মুখে বলার প্রয়োজন মনে করে না।

মাহিয়াতও মাঝে মাঝে লুকিয়ে মা ছেলের কার্যকলাপ দেখে,ফিমকে দেখে। তার চেহারায় একটা সুখি সুখি ভাব আছে।সে মনে শান্তি পায় কিছুটা হলেও অনুশোচনা কমে। যাক সে তো ভালো আছে সংসার করছে জীবনে এগিয়ে গেছে এতেই সে খুশি। কিন্তু একটা বার তার কাছে মাফ চাইলে বোধহয় মনটা আরো হালকা হয়ে যেতো।

নুহা সবই বুঝতে পারে কিন্তু কিছু বলে না। তার ছেলে তার কাছে ফিরে এসেছে এই অনেক। আর ইদানিং ফিমার সাথেও তার কথা হয়।সে ভালোই আছে।হয়তো মাহিরের কারণে সম্পর্ক টা আজীবন টেনে নিয়ে যেতে হবে…

____________________
কিছু কথা

গল্প অনেকেরই ভালো নাই লাগতে পারে। অনেকের কাছে নুহা দষী, কিন্তু আসলেই কি তাই প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে বেশি সেই সাফার করেছে।আর যদি বাচ্চাকে দেখতে না দেওয়ার কারণে তাকে খারাপ বলেন তাহলে আগেই বলে রাখি তখন সে মেন্টালি সিক ছিলো। তাই সে সময় তার ও রকম আচরণ করাই স্বাভাবিক।

দ্বিতীয়তঃ অনেকে মাহিয়াতকে দোষী ভাবছেন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে অতটা দোষী না বিয়ের আগেই সে সব কিছু ক্লিয়ার করে দিয়েছিলো।হয়তো শেষে তার অনুভূতি নিয়ে খেলা করাটা ঠিক হয়নি কিন্তু সে তখনো বাধ্য ছিল ফিমার আর বাচ্চার সুস্থতার জন্য তাকে চিন্তা মুক্ত রাখার একটাই উপায় ছিল তার সাথে ছলনা করা আর তার যথেষ্ট সাজা সে পাচ্ছে।

লুহার বাবা-মার বিষয়টা তোলাই থাক।আর যদি ফিমার বাবা-মার কথায় আসি তাহলে বলবো প্রত্যেক বাবাই চায় তার সন্তান সুখে থাক। হয়তো তাদের চিন্তাধারা খারাপ ছিল কিন্তু তারা সন্তানের খারাপ চাই নি।

আবার অনেকের কাছে ফিমার তৃতীয় বিয়েটা ভালো লাগেনি। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু আমার কাছে তার জীবন গুছিয়ে দাওয়ার অন্য কোন উপায় ছিল না। একা থাকা মোটেও কোন সহজ বিষয় না যদি তার সন্তান তার সাথে থাকত তবুও তাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু একে তো তার বয়স কম তার ওপর একেবারে একা তারওতো ভালো থাকার স্বামী-সন্তানের সুখ পাওয়ার অধিকার আছে। তাই একটা বিশ্বস্ত হাত জরুরি ছিল।আর এমন না যে তৃতীয় বিয়ে হচ্ছে না। হচ্ছে সমাজের অসংখ্য হচ্ছে হয়তো আমরা তাদের খারাপ চোখে দেখছি। কিন্তু একটা কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে একটা মেয়ে কম কষ্টে নিজের সংসার ছেড়ে আরেকটা বিয়ে করে না।

(শেষে একটা কথাই বলবো এতো দিন ধৈর্য ধরে গল্প পড়ার জন্য সাবাইকে ধন্যবাদ।হয়তো অনেক দেরী করেছি।কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনি তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। সকল ঝামেলা থেকে মুক্তি পেলে ইনশাআল্লাহ আবার নতুন গল্প নিয়ে হাজির হব। কতদিনের জন্য আল্লাহ হাফেজ।)

3 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here