বৈবাহিক চুক্তি পর্ব ১২

#রোদে_ভেজা_মেঘ
#লিখাঃ Liza Bhuiyan
#বৈবাহিক_চুক্তি (সিজন ২)
#পর্বঃ ১২

হোটেলের রুমের বেডে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে সায়রা, হাতে থাকা আইফোনে ফেসবুক স্ক্রল করে যাচ্ছে।এগর্ন বারবার এদিকেই তাকাচ্ছে তবে সায়রার দিকে নয় হাতে থাকা আইফোনের দিকে, মনে হচ্ছে স্বর্নের হরিণ নিজে এসে ওর হাতে ধরা দিয়েছে। ভাবতেই পারেনি বাঙালী মেয়েরা এতো আপডেট হয়। এর আগে যে মেয়েকে নিয়ে আসছিলো সে ফিলিপিনো ছিলো, কিন্তু এক্ষেত্রে ভেবেছিলো অনেক কাঠখড় পুড়াতে হবে কিন্তু এতো সহজে পাখি ধরা দিবে ভাবতে পারেনি,

“আম গট্টা ফ্রেশেন আপ বেব, ইউ ফিল কম্ফরটেবল হেয়ার ”

মাথা নাড়ালো সায়রা, একবার তাকাতেই দেখেছিলো অলরেডি ছেলেটি শার্টলেস তাই আর তাকায়নি, সম্পুর্ণ মনোযোগ ফোনের দিকে। এগর্ণ ওকে ভালোমতো স্ক্যান করে ওয়াশরুমের দিকে গেলো, আজকে সারারাত শুধু মজাই আর মজা। ওয়াশরুমে দরজা লাগার সাথে সাথেই সায়রা উঠে দাঁড়াল এতোক্ষন যেন এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো ও,

“ইয়া ম্যানি, ও ওয়াশরুমে গিয়েছে আমি ওর ফোন খুজার ট্রাই করছি”

ফিসফিস করে বললো সায়রা, কানে ব্লুটুথ লাগানো যাতে এতোক্ষন ক্রমাগত কথা বলছিলো ওর বন্ধুরা যাতে ও নার্ভাস ফিল না করে, কিছুক্ষনের মধ্যে ফোন পেয়ে যেতেই ফোনটা আনলক করার ট্রাই করলো কিন্তু কিছুতেই খুলছে না তাই হতাশ হলো সায়রা। যেকোন মুহুর্তে দরজা খুলতে পারে, কি করবে ভেবে পাচ্ছে না তখনি ম্যানি বললো

“আই নো হিজ লকার নাম্বার , ইটস ৫৪৩২১”

সায়রা সাথে ট্রাই করতেই খুলে গেলো, ও গেলারিতে ঢুকে খুজতে লাগলো যেখানে কিছু মেয়ের সাথে ও ঘনিষ্ঠ অবস্থার ফটো রয়েছে, খুজতে খুজতে যেই কাঙ্ক্ষিত ছবি পেলো তখনি দরজা খুলার শব্দে ওর হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। আর ও ভয়ে ভয়ে এগর্ন এর দিকে তাকায় যে কিনা শুধুমাত্র একটা টাওয়াল পড়ে আছে। একদিকে এগর্ণ কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে অপর দিকে বন্দুরা ক্রমাগত বলছে কি হয়েছে, কিসের শব্দ?

“কি করছিলে তুমি?”

“বেবি আসলে আমার ফোনের ব্যালেন্স শেষ, আমি তোমার ফোনটা নিয়েছিলাম মাম্মাকে কল করবো যে আমি আজকে ফিরছিনা, ফ্রেন্ডের বাসায় থাকবো, কিন্তু আমি লক জানিনা তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করবো আর তুমি হুট করে চলে আসছো ”

এগর্ন যে কথাটা পুরোপুরি বিঃশ্বাস করেনি তা ঢের বুঝা যাচ্ছে কিন্তু ভাগ্য ভালো দরজা খুলার আওয়াজে ও ভয়ে গ্যালারি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো আর পড়ে গিয়ে ফোন লক হয়ে গেছে, এগর্ন ফোন খুলে কিছু একটা দেখলো তারপর লক খুলে ফোনটা ওর দিকে এগিয়ে দিলো।

“আমি ড্রিংকস বানিয়ে আনছি ” বলে এগর্ন সরতেই ও গ্যালারিতে ঢুকে ওই ছবি ডিলেট করতে যাবে কিন্তু পরে কি ভেবে যতো ছবি ছিলো সব ডিলেট করে ম্যানিকে ফোন দিয়ে শুনিয়ে কিছু বললো তারপর ফোনটা পাশে রেখে দিলো,

“এই নাও, ড্রিংক ইট” রেড ওয়াইনের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো এগর্ন, সায়রা ভাবছে কি বলা যায় এটা না খাওয়ার জন্য!

“সায়রা ডোন্ট হ্যাভ দ্যট ড্রিংক” ম্যানি চেঁচিয়ে বললো সায়রাকে

“এগর্ন আমার এলকোহল টলারেন্স খুব বাজে, আমি কোন সফট ড্রিংক নেই?”

এগর্ন যে এই কথায় রিতীমত মতো বিরক্ত হলো কিন্তু কিছু বললো না, গিয়ে ড্রিংক বানিয়ে নিয়ে আসলো সাথে কিছু একটা মিশালো যা ওয়াইনের সাথে মিশিয়েছিলো। সায়রাকে দিতেই সায়রা না চাইতেও এক চুমুক খেলো।

কিন্তু এখন কি হবে! কি করে বাচবে এখান থেকে, ভেবেছিলো ওয়াশরুমে থাকতে থাকতেই ডিলেট করে বেরিয়ে যাবে কিন্তু তা আর হলো, যতো সময় যাচ্ছে ততো এখানে কেন এসেছে রিগ্রেট করছে ও, এদিকে এগর্ন অলরেডি কিছুটা ঘেষে বসছে ওর। চোখমুখ শক্ত করে একবার এগর্ন এর দিকে তাকালো আর পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ভাস দিয়ে মাথায় খুব জোরে আঘাত করলো যাতে এগর্ন কিছুটা দূরে সরে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো আর এই সুযোগে সায়রা ফোন নিয়ে পালালো, কিন্তু কয়েকপা এগোতেই মাথা কেমন ঝিমঝিম করে উঠলো আর একটা গেট ধরে দাড়িয়ে গেলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই পাশ থেকে কেউ একজন হেচকা টানে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। ও চিৎকার দিতে যাবে তার আগেই বিছানায় চেপে ধরলো আর বললো

“হুশশশ শব্দ করোনা শুনতে পাবে”

সায়রার চোখ ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে আসছে, তাই ছেলেটির চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না, অনেক চেষ্টা করেও ও চোখ খুলে রাখতে পারলো না, এদিকে ফ্রেন্ডরা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে ও ঠিক আছে কিনা! কিছুই যেন বুঝতে পারছে এক সময় গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়লো ও,, ফোনের অপর পাশের শব্দ ক্রমশ যেন বাড়ছে আর সাথে কতোগুলো আকুতি ভরা কন্ঠ।

সামনে থাকা পঁচিশ উর্ধো ছেলেটি ফোনটি তুললো তারপর বললো

“চিন্তা করবেন না, ও ঠিক আছে। কালকে সঠিক সময় আপনাদের কাছে পৌছে যাবে আপাদত নিয়ে আসা রিস্কি ” বলেই খট করে কেটে দিলো ছেলেটি

এই করুণ মুহুর্তে একটি আশ্বাসের কন্ঠ শুনে কিছুটা স্বস্তি পেলো ম্যানিলা, জন্মগতো ভাবে ফিলিপিনো হলেও ছোট থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলসে থাকে, ফিলিপিনের রাজধানীর নাম অনুযায়ী ওর নামও ম্যানিলা। ছয়মাস আগে এগর্ন নামের এক ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিলো ও, খুব ভালোই চলছিলো সব কিছু কিন্তু বিপত্তি বাধে যখন ছেলেটি রুমডেট করতে চায় তাও জীবনের প্রথম প্রেম বলে সবটা উজাড় করে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু রুমডেটের পরই সে তার গায়ের হয়ে যায় কয়েকদিন ডিপ্রেশনে থাকলেও সায়রা সহ বাকি ফ্রেন্ডদের সহযোগীতায় ঠিক হয়ে গিয়েছিলো।

কিন্তু একমাস ধরে সেই এগর্ন কন্টিনিউয়াসলি ওকে ব্লেকমেইল করছে যদি টাকা না দেয় তাহলে তার ছবি ভাইরাল করে দিবে। দিনদিন টাকার এমাউন্ট বাড়ছে তাই বন্ধুরা মিলে এই প্লেন করে আর সায়রা ওকে হেল্প করতে রাজি হয়। ফেক আইডি খুলে সায়রা সাতদিন যাবৎ কথা বলেছিলো আর আজকে এখানে আসে কিন্তু হটাৎ এমন হবে ভাবেনি। সায়রা সেফ থাকলেই হয়!

🌸🌸🌸

দরজা ঠেলে রুমের ভেতরে ঢুকলো রুশি, একঘণ্টা ধরে এপাশ ওপাশ করেও যখন চোখে ঘুম ধরা দেয় নি তাই সিদ্ধান্ত নিলো সায়ানের ঘরে আসবে, কয়েকদিন ধরেই সায়ানকে কেমন একটু অসুস্থ দেখছে, আগের থেকে চেহারা অনেক ফ্যাকাসে হয়ে গেছে প্রথমে কাজের প্রেশার ভাবলেও এখন ভাবছে অন্যকিছু। এতোটা চুপচাপ মানুষটাকে কখনো দেখেনি।

খাটের পাশে বসে সায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, কি নুরানি চেহারা। হাজারো মায়া যেন ভীড় করেছে এখানে। হাত এগিয়ে মুখখানি ছুতে গিয়ে ফিরিয়ে নিলো। যখনি সায়ানকে ক্ষমা করতে চায় তখনি রুহানের লাশের কথা মনে পড়ে ওর। খুব করে চায় মানুষটাকে আপন করে নিক, তার সাথে প্রান খুলে কথা বলতে ইচ্ছে করে তার সাথে কিন্তু পারেনা।

সায়ানের সাথে ওইসময় দেখা হয়েছিলো মাত্র তিনমাস মাত্র, কিন্তু রুহানকে ও জন্ম দিয়েছে, নিজের হাতে বড় করেছে তিনটা বছর ধরে। পুরো দুনিয়ার সাথে বাজি রেখে ওকে বড় করেছে যখন সায়ান ওদের পাশে ছিলো না। রুহানকে জন্ম দেয়ার আগে থেকেই ভালোবেসেছে ওকে যেখানে সায়ানের অস্তিত্বই ছিলো না।

তাই নিজের বেচে থাকার এক মাত্র অবলম্বনকে এভাবে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি। ওর ছোট্ট রুহান বেচে থাকতো যদি সায়ান ওর লাইফে না আসতো। ওরা তো খুব ভালোই ছিলো কলকাতায়। না সায়ান মাফিয়া হতো আর না রুহানকে মরতে হতো। সব সায়ানের দোষ ছিলো, ও বলেছিলো রুহানের কিছু হতে দিবে না কিন্তু ওর প্রমিস রাখে নি। বাচাতে পারেনি ওকে, ওর ছোট্ট ছেলেটি এভাবে ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। ওতো বাচতেই পারতো না যদি সায়রা ওর গর্ভে না থাকতো। একটা মায়ের কাছে তার সন্তান থেকে বড় আর কিছুই না, ওর কাছেও তাই। পারবে না সায়ানকে ক্ষমা করতে কক্ষনো না। জল গড়িয়ে পড়লো ওর গাল বেয়ে তাই পানি মুছে বেরিয়ে এলো রুম থেকে।

রুশি যেতেই সায়ান চোখ খুললো, আজো ও কথা না বললেও উপস্থিতি ঠিকই টের পেয়ে যায়, ও জানে ওর অভিমাণিনি এখানে এসেছিলো। হয়তো তার চোখের জলও গড়িয়েছে কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারো কিছু না বলেই হারিয়ে গেছে। মাঝেমাঝে খুব অভিমান হয় ওর উপর কিন্তু পরক্ষনেই মনে হয় ওতো মা তাই হয়তো সন্তানের বিয়োজন এখনো মেনে নিতে পারেনি। কি করে পারবে? দিনশেষে ও একজন মা।

“হে অভিমানিণী,,
অভিমানের আড়ি কেটে,
তুমি দূরে রবে
আমি তোমার পানে চেয়ে,
ভালোবাসবো সদা নিরবে”
‘লিজা’

#চলবে

(আমি জানিনা কার কি মনে হয় তবে আমার মনে হয় সন্তানের থেকে বড় কিছু হয়না তাই রুশির ক্ষমা করতে না পারাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমার ছয় বছর বয়সে আমার ছোট একটা ভাই মারা গিয়েছিলো। আম্মু এখনো ঠিক কতোটা কান্না করে তা শুধু আমি দেখি তাই আমার মতে রুশির যা করছে ঠিকই করছে। হয়তো ওর জায়াগায় ও ঠিক। যাইহোক এটা আমার মতামত। যদি সায়ানকে শাস্তি না দিতাম তাহলে অনেকেই বলতো সব গল্পে মেয়েরাই অবলা আর এতো কিছুর পরেও ক্ষমা করে দেয়। তাই ঠিক কোন পাঠকের কথা শুনা উচিৎ আমি কনফিউজড। আমি আপনাদের জন্য গল্পের প্লটো চেঞ্জ করে দেই তারপরো অভিযোগ থাকলে কিছু বলার নেই। যাইহোক ইদানীং ছোট হচ্ছে তাই আমি সত্যিই স্যরি, আমি খুবই ব্যস্ত তাই এমন হচ্ছে। আমি বড় করে দেয়ার ট্রাই করবো ইনশাআল্লাহ। আর যাদের মন মতো হচ্ছে না তাদের ও স্যরি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here