পর্ব ৯+১০
#এক_ফাগুনের_গল্প
#পর্বঃ-০৯
স্যার সিড়ি বেয়ে নেমে গেল আর আমি গভীর চিন্তা নিয়ে রাতের জোনাকিপোকা কিংবা হলুদ রঙের ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে বাতি দেখে অবাক হচ্ছি। মানুষের জীবন ব্যতীত অন্যান্য সকল কিছু কতটা সুন্দর নিয়মে চলে প্রতিনিয়ত। শুধু মানুষের বেলায় সব ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু কেন?
আমার মনে হচ্ছে মোহনার কথা তার বাবার কাছে কিছুটা বলেছে নাহলে এভাবে উদাহরণ দিয়ে তিনি বারবার নতুন কাউকে জড়াতে বললেন। ঠিক তার মতো করেই তো আমার জীবন টা এগিয়ে যাচ্ছে, স্যার কি তাহলে চাচ্ছেন যে তার মেয়েকে আমি বিয়ে করি? যদি তাই না হবে তাহলে মোহনার মাঝে মাঝে অনেক কিছু তিনি দেখেও না দেখার ভান করেন। এটা কি মৌন সম্মতি নাকি কোন কিছু মনে না করা বা ফ্রী মানসিকতার পরিচয়?
সত্যি সত্যি যদি সেরকম কিছু হয়ে থাকে তাহলে তো অফিসের সকলের ধারণা সঠিক হয়ে যাবে। সবাই তখন বলাবলি করবে যে তাদের ধারণা শতভাগ সাফল্য অর্জন করেছে। বিষয় টা গভীর চিন্তা আর ভাবুক করে তুলে যাচ্ছে আমাকে, এদিকে মোহনা নাকি রাতে কথা বলতে আসবে। চাকরি করতে এসে এ কোন সমস্যার মধ্যে পরলাম? নাকি আস্তে আস্তে আমার অন্ধকার জীবনটা আলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?
বিছানা গুছিয়ে বাতি বন্ধ করে শুয়ে পরলাম, রকির কাছে কল দিতে ইচ্ছে করে। অনেকদিন তার সাথে কথা হচ্ছে না, রকি চাকরি করে গাজীপুরে। একবার দেখা হয়েছিল হাউজবিল্ডিং মাস্কাট প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে চা খেয়েছিলাম। তারপর আর দেখা করতে পারি নাই, ওর চাকরির ব্যস্ততা বেশি তাই সময় করে উঠতে পারে না। ওর একটা সিভি এনে রেখে দিয়েছি নিজের কাছে, সুযোগ পেলে আমাদের অফিসে যদি একটা ব্যবস্থা করতে পারি! নাম্বার বের করে কল দিলাম, রিসিভ করতে দেরি হয়েছে, মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে।
– হ্যাঁ সজীব বল।
– কিরে ঘুমাচ্ছিস?
– নারে রান্না করতেছি তাই দেরি হলো, ব্যাচেলর জীবন বন্ধু তাই রান্না করতে হয়। তোমার মতো তো ভাগ্য নেই তাই অফিসের বসের মেয়ের হাতের রান্না কপালে জোটে না।
– সেই হাতের রান্না খেয়ে কতটা যন্ত্রণার মধ্যে আছি সেটা একমাত্র আমি জানি।
– কেন কি হইছে? সে কি তোকে এভাবেই সারাটা জীবন ধরে রান্না করে খাওয়াতে চায়? তোর সামনে ভবিষ্যতের রান্না ঘরের দায়িত্ব চায় নাকি?
– হুম তেমনটিই আশা করে আছে এবং আজকে সে সেই পোস্টে নিযুক্ত হবার জন্য দরখাস্ত জমা দিয়েছে অবশ্য আমি গ্রহণ করিনি।
– কেন কেন কেন? রাজত্ব আর রাজকন্যা একসাথে পাবি, আমাদের মতো অবহেলিত চাকরিজীবীদের ভালো ভালো চাকরি দিবি।
– রাজত্ব আর রাজকন্যার এই উপহাসটা সবাই করে রে বন্ধু, তাই তো মন-মানসিকতা বেশি ভালো লাগে না। সবাই এসব নিয়ে সন্দেহ করে আর সত্যি সত্যি যদি হয়ে যায় তাহলে কি হবে ভেবে দেখ। তাছাড়া অর্পিতার কথা তো আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না।
– রাগ করিসনে বন্ধু, আচ্ছা তোর বসের মেয়ে কি অর্পিতার বিষয় জানে কিছু? মানে তুই কি তাকে বলেছিস?
– হ্যাঁ সবকিছু জানে।
– তবুও রাজি আছে?
– হ্যাঁ, সে ভাঙ্গা আয়নায় নিজের চেহারা দেখে সাজতে চায়, আরো কত রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বলে প্রপোজ করে।
– তাহলে ভালো একটা বুদ্ধি দেবো?
– কি বুদ্ধি?
– তুই বিয়ে করে ফেল বন্ধু, জীবন কারো জন্য কিন্তু থামিয়ে রাখতে নেই। হয়তো হঠাৎ করে একদিন তুই দেখবি অর্পিতা বিয়ে করে সন্তানের জননী হয়ে গেছে। তখন কিন্তু নিজেকে অসহায় মনে হবে, তখন ভাববি যে, কতটা পিছনে তুই শুধু তার জন্য অথচ সে তার জীবন থামিয়ে রাখেনি। সেদিন চাইলে কিন্তু সবকিছু পিছন থেকে শুরু করতে পারবি না।
– তাই বলে বসের মেয়ে?
– আচ্ছা তুই দেখ সজীব, তোর বসের মেয়ে ছাড়া আর কেউ কি তোকে এই মুহূর্তে বিয়ে করতে চায়?
– আমি কি বিজ্ঞাপন দিছি নাকি? তবে বিয়ের ইচ্ছে হলে তখন মেয়ে দেখে বোঝা যাবে কেউ বিয়ে করতে চায় কি না।
– কিন্তু সবকিছু জেনে তবুও হাসিমুখে তোর সাথে থাকতে সবাই হয়তো চাইবে না। আর অপরিচিত কাউকে বিয়ে করতে গিয়ে দেখবি কার না কার গার্লফ্রেন্ড যোগাড় করেছিস। তখন সেই মেয়ে চেষ্টা করবে তোর সাথে মানিয়ে নিতে আর সেই ছেলে পাবে কষ্ট। কি দরকার এসবের? তারচেয়ে বরং যে তোকে পছন্দ করে ভালবেসে নিজে সুখী হতে চায় এবং তোকেও সুখে রাখতে চায় তার সাথে জীবন নামের নদী পার হয়ে যা।
– হঠাৎ করে আমাকে বিয়ে দেবার জন্য এতটা উঠে পরে লাগলি কেন রে? মতলব কি তোর?
– বন্ধু মানুষ এমনই হয়, ভালো বুদ্ধি দিলাম কিন্তু মানতে রাজি হলি না, কপাল।
– আচ্ছা ঠিক আছে ভেবে দেখি।
– ধন্যবাদ বন্ধু, ভেবে দেখো তাতেই আমি খুশি।
– রাখলাম তাহলে?
– আচ্ছা ঠিক আছে।
সত্যি সত্যি দরজা খুলে মোহনার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম কিন্তু সে আসেনি। দরজা খোলা রেখেই কখন ঘুমিয়ে গেছি জানিনা, সকাল বেলা উঠে দেখি দরজা সেভাবেই খোলা আছে। নাস্তা করে বের হবার সময় মোহনার সাথে ড্রইং রুমে দেখা, আমি দরজা খুলে বের হচ্ছিলাম তখন বললোঃ-
– যার সাথে কথা বলতে চাওনা তার জন্য দরজা খুলে অপেক্ষা কেন করো?
– আমি থমকে গিয়ে বললাম, আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি সেটা তোমার ভুল ধারণা।
– তাহলে দরজা খোলা ছিল কেন?
– মনে হয় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল করে দিতে মনে ছিল না তাছাড়া এখানে তো চুরি ডাকাতির ভয় নেই তাই দিতে হবে এমনটা নয়।
– আমি কিন্তু তোমার রুমে গেছিলাম।
– মানে কি?
– হ্যাঁ ঠিকই বলছি, গিয়ে দেখি তুমি গভীর ঘুমে নিমগ্ন তাই ডাকিনী। শুধু….
– সর্বনাশ, শুধু কি?
– হাত দিয়ে কপাল স্পর্শ করে চলে এসেছি।
– এটা কিন্তু অন্যায়।
– কিসের অন্যায়? কিছুদিন পরে তো তোমার পা টিপে দেবো, হাত টিপে দেবো, মাথা টিপে দেবো তাই এখন নাহয় কপাল টিপে দিলাম। হিহিহিহি।
– কি সাংঘাতিক কথা, আচ্ছা হঠাৎ করে আপনি থেকে তুমি হলাম কখন?
– গতকাল প্রপোজ করার পরে।
– আমি তো একসেপ্ট করি নাই।
– তোমার ঘাড়ে করবে? হাত পা মাথা চুল ইত্যাদি প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ একসেপ্ট করবে।
– এমন বাড়াবাড়ি রকমের কথা বলার মানে কি?
– বাড়াবাড়ির দেখছো কি? আরো কত বাকি আছে সেটা সময় হলে জানবে মিঃ হাইব্রিড।
– ঠান্ডা মাথায় একটা কথা বলবো?
– হ্যাঁ।
– তোমাদের বাসায় থাকি, তোমার বাবার অফিসে চাকরি করি, তাই তোমার কাছে অনুরোধ রইল তুমি এমন কিছু করিও না যাতে চাকরি এবং এই বাড়ি দুটোই ছাড়া লাগে। আমি জানি এই চাকরি গেলে আমার অনেক কষ্ট হবে এমন একটা চাকরি পেতে কিন্তু তবুও ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলে বাধ্য হবো।
– আপনি আমার উপর খুব বিরক্ত তাই না? আমি আসলে বুঝতে পারিনি, সরি ক্ষমা করবেন।
মোহনার চোখে পানি টলমল করছে, মনে হয় আমি কথার মাধ্যমে বেশি আঘাত দিয়ে ফেলেছি। আমি কি এখন সরি বলবো? নাকি অন্য কোন সান্তনার বিবৃতিতে কথা বলবো? নাকি ঘাড় ফিরিয়ে বেরিয়ে যাবো?
|
|
তিনদিন পর।
অফিসে কাজ করছি, মনটা খারাপ কারণ মোহনার সাথে সেদিন ওভাবে কথা বলার পরে সে পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমার সাথে কথা বলে ঠিকই কিন্তু সেই কথার মধ্যে কোন স্নেহের পরশ নেই। প্রয়োজন ছাড়া তার সাথে কথা বন্ধ হয়ে গেছে, আবার সুযোগ মতো সরি বলার সময় পাচ্ছি না।
হঠাৎ করে আমার মোবাইলে বৃষ্টির নাম্বার থেকে কল এসেছে দেখে অবাক হলাম। মাঝে মাঝে তার সাথে কথা হয় ঠিকই কিন্তু অফিস টাইমে সে কখনো কল করে না তাই অবাক হয়ে গেলাম।
– হ্যাঁ বৃষ্টি বলো।
– কেমন আছেন আপনি?
– আলহামদুলিল্লাহ তুমি?
– জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, কি করেন?
– অফিসে কাজ করছি, তুমি কি করো?
– রান্না করছি, গতকাল ঢাকায় এসেছি আর আপনি কথা দিছিলেন পরবর্তীতে আমি আসলে তখন নাকি অবশ্যই দেখা করবেন।
– কথা যখন দিয়েছি তখন অবশ্যই দেখা হবে।
– কবে আসবেন?
– তুমি বলো, এবং কোন যায়গা?
– আজকে বিকেলে আসতে পারবেন? জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে।
– কয়টা বাজে আসতে হবে?
– চারটা বাজে হলে ভালো হয়।
– ঠিক আছে পৌঁছে যাবো।
– সত্যি আসবেন?
– হ্যাঁ আসবো।
অফিসে বলে সেখান থেকে লান্সের খানিকটা পরেই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পরলাম। উত্তরা থেকে জাতীয় সংসদ ভবন যেতে অনেক সময় দরকার তাই আগে থেকে বের হওয়া ভালো।
আমি সাড়ে তিনটার দিকে পৌঁছে গেলাম, বৃষ্টির কাছে কল দিলাম, সে পাঁচ মিনিট পরেই এসে হাজির হয়েছে। কিন্তু তাকে দেখে বিস্মিত হয়ে গেলাম কারণ আগের সেই বৃষ্টি আর নেই। চেহারা কেমন যেন হয়ে গেছে, পরিচিত যে কেউ তাকে দেখে অবাক হবে।
– কেমন আছেন সজীব ভাই?
– ভালো আছি, তোমার এ কি অবস্থা? এমন হয়ে গেলে কেন?
– কেমন সজীব ভাই? আমি তো আমার মত আছি কিছু তো পরিবর্তন দেখিনা।
– সবকিছু কেমন হয়ে গেছে, আচ্ছা তুমি কি কোন কিছু নিয়ে ডিপ্রেশনে আছো?
– জীবন টা এমন কেন সজীব ভাই?
– কেমন মনে হয় তোমার কাছে?
– সাজাতে চাই একরকম কিন্তু সেটা সৃষ্টিকর্তা কেন ভিন্ন ধরনের সাজিয়ে দেয়? আমার মনের চাওয়া অনুযায়ী সাজিয়ে দেয় না কেন?
– কারণ তিনি সকল ক্ষমতার মালিক সেটা যেন আমরা উপলব্ধি করতে পারি। সৃষ্টিকর্তা জগতের সকল ক্ষমতা আমাদের দেন নাই তাই আমরা তাকে স্মরণ করি। যদি সবকিছু আমাদের হাতে থাকতো তাহলে আমরা কখনো তাকে মূল্যায়ন করতাম না বৃষ্টি। কি হইছে জানতে পারি?
– আমাকে আপনার অফিসে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন? স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে তাহলে আলাদা জীবন শুরু করতাম। এভাবে যে আর থাকতে চাই না সজীব ভাই।
– স্বামীর সাথে কি ভালো সম্পর্ক নেই?
– একঘেয়ে হয়ে গেছি, তার মাঝে বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন ভালবাসা স্পর্শ পাইনি। মাঝে মাঝে গভীর রাতে তার চাহিদা পূরনের জন্য আমাকে ডেকে তোলে। তারপর নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে পতিতা-দের মতো ছুড়ে ফেলে দেয়। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখ মুখ ধুয়ে কান্না করতে করতে এসে ঘুমিয়ে যাই। তার সেই স্পর্শের মধ্যে কোন ভালবাসার ছোঁয়া থাকে না, যা দেখতে পাই সেটা হচ্ছে তার তীব্র চাহিদা। এ জন্য খুলনা থেকে এখানে আসতে ইচ্ছে করে না সজীব ভাই, তবুও মা-বাবার দিকে তাকিয়ে আসতে হয়। যদি নিজেই একটা চাকরি পাই তাহলে আর মা-বাবার কথা মানতে হবে না।
– কেবল মাত্র আরম্ভ, আরো কিছুদিন দেখাে যদি মানিয়ে নিতে পারো। কারণ একটা বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধন ছিন্ন করা ঠিক না। যদিও আমাদের এই ইসলাম ধর্ম তালাককে জায়েজ করেছে কিন্তু সেটা কিন্তু সবচেয়ে নিকৃষ্ট। ইসলামের মধ্যে যতগুলো জায়েজ কাজ আছে তার মধ্যে তালাক দেওয়া সবচেয়ে নিম্নমানের।
– কিন্তু হাঁপিয়ে যাচ্ছি সজীব ভাই, বড্ড ক্লান্ত লাগে জীবনের পথচলা।
কিছু একটা বলতে যাবো তখনই দেখি সামনে মোহনা এবং তার সাথে আরো দুটি মেয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। মোহনার চোখের তীব্র দৃষ্টি আমার দিকে, আমি তাকানো মাত্র তার সাথে চোখে চোখ পরলো। আমার দিকে তাকাতে তাকাতে সে আর সেই মেয়ে দুটো আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আমিও মোহনাকে কিছু বললাম না আর সেও কিছু বললো না, তবে তার মনে নিশ্চয়ই সৃষ্টি হয়েছে সন্দেহ আর আমার মনে সৃষ্টি হয়েছে ভয়।
কি আশ্চর্য!
দুজনের দেখা হয়ে গেছে, দেখা হবার জন্য দুজনের মনের মধ্যে দুজনের প্রতি নতুন কিছু সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু একটা সন্দেহ আরেকটা ভয়, দুজনের মধ্যে সেই রাগারাগি আরো ভয়ংকর হচ্ছে সেটা চোখের সামনে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি।
এরপর বৃষ্টি তার নিজের দুঃখের আরো অনেক কিছু বলে যাচ্ছে কিন্তু সেগুলো আর মনোযোগ দিয়ে শোনা হলো না। আমার অন্যমনস্ক ভাব বৃষ্টি বুঝতে পেরেছে তাই বৃষ্টি বললোঃ-
– আপনি মনে বিরক্ত হচ্ছেন, চলেন বাসায় ফেরা যাক সজীব ভাই।
– আসলে ঠিক বিরক্ত না, হঠাৎ করে অর্পিতার কথা মনে হলো তাই মনটা খারাপ হয়ে গেছে।
– আপনি কিন্তু তার কাহিনি বলেন নাই আজও।
– কতদিন থাকবে এবার?
– এখনো সপ্তাহ খানিক আছি।
– এরমধ্যে আরেকবার দেখা করবো আর সেদিন নাহয় সবকিছু বলবো।
– ঠিক আছে ধন্যবাদ, এবার চলুন নাহলে আমার স্বামী আবার সন্দেহ করবে। তার সাথে না থাকার কারণ হিসাবে আরেকটা বিষয় হচ্ছে সন্দেহ, সে আমাকে প্রচুর সন্দেহ করে। আমার সকল বন্ধুদের ত্যাগ করতে বলে, আমি তবুও চেষ্টা করছি সবকিছু মানিয়ে নিতে।
– সেটাই উত্তম পন্থা অবলম্বন হবে। এই রিক্সা যাবে? আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে নিয়ে যেও।
– বৃষ্টি রিক্সায় উঠে বললো, আসি সজীব ভাই।
– ভালো ভাবে যেও, বাসায় পৌঁছে একটা কল দিও।
★★
আরো দুদিন পেরিয়ে গেছে কিন্তু মোহনার সাথে দেখা হচ্ছে না। আগে যাও একটু সৌজন্যমূলক কথা বলতো কিন্তু এখন বাসায় এলে তাকে সামনেই পাই না আমি। সুযোগ করে তাকে বৃষ্টির সবকিছু খুলে বলতে চেষ্টা করছি কিন্তু সুযোগ হচ্ছে কোই? কিন্তু মোহনা তো আমার কাছে আসেই না আর সামনেও পরে না।
বৃষ্টির সাথে যেদিন মোহনা আমাকে দেখেছে তার ঠিক তিনদিন পর রাতের খাবার খেয়ে ছাঁদে গেলাম। ছাঁদের দরজা খুলেই দেখি মোহনা দাঁড়িয়ে আছে, মনে মনে ভাবলাম আজই সুযোগ তার সম্পুর্ন ভুল ভাঙ্গাতে পারবো। কিন্তু আমাকে দেখেই মোহনা আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগিয়ে আসছে।
মনে হয় এখনই নেমে যাবে, আমি দরজার সামনেই ছিলাম তাই মোহনার হাতটা ধরে বললামঃ-
– তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে মোহনা, প্লিজ একটু সময় নিয়ে শুনবে?
– হাত ছাড়ুন বাবাও কিন্তু ছাঁদে আছে।
আমি ধপ করে হাত ছেড়ে দিয়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখি ছাঁদের দক্ষিণ প্রান্তে দাঁড়িয়ে স্যার আমার আর মোহনার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এতটা লজ্জিত হয়ে গেলাম যে সেটাই আমার জীবনের স্মরনীয় লজ্জিত ঘটনা।
হাত ছাড়ার সাথে সাথেই মোহনা নেমে গেছে আর স্যারকে দেখে আমিও দ্রুত সিড়ি বেয়ে নেমে গেলাম।
নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বাতি বন্ধ করে শুয়ে পরলাম। সেই রাতে আর চোখে ঘুম আসে না, অনেক রাত পর্যন্ত শুধু অন্ধকারে লজ্জা পেয়ে গেলাম। সমস্ত রাত্রি শুধু ভাবলামঃ-
আজকের ঘটনার জন্য চাকরি চলে যাবে নাকি?
এ বাড়ি থেকে আমাকে কি বেরিয়ে যেতে হবে?
স্যার আমার বিরুদ্ধে কি এ্যাকশন নেবে?
পরদিন সকালে অফিসে গিয়ে কাজের মধ্যে ছিলাম, এগারোটার দিকে স্যারের রুমে ডাক পরলো। আমি ভাবলাম সত্যি সত্যি তাহলে এই অফিসের চাকরি নেই আর।
– স্যার আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়া আলাইকুম আসসালাম, মুখটা গম্ভীর করে স্যার বললো, বসো সজীব।
– জ্বি।
– তোমাকে একটা কথা বলার জন্য ডাকলাম, কিছু মনে করবে না তো?
– মনের ভয় আরো বেড়ে গেল বললাম, না স্যার বলেন আমি কিছু মনে করবো না।
– আগামীকাল থেকে তোমাকে অফিসে আসতে হবে না।
– আমার গলা শুকিয়ে গেল, মনটা খারাপ করে মাথা নিচু করে বললাম, কিন্তু স্যার।
– স্যার কঠিন গলায় বললেন, কোন কিন্তু আমি শুনতে চাই না সজীব, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাই সেটাই হবে।
#পর্বঃ_১০
– বললাম, আপনি যেমনটা ভালো মনে করবেন সেটাই করেন তবে আমার বিশ্বাস আপনি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিবেন না। শিক্ষক ও বাবার পরে আমি যেই পুরুষ মানুষটাকে বেশি পছন্দ করি সেটা আপনি।
– আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা তোমার কাছে ঠিক কতটা সঠিক সেটা বুঝতে পারছি না। তবে আমার দিক থেকে আমি যথেষ্ট ভেবে তারপর সবকিছু ঠিক করেছি।
– জ্বি বলেন স্যার।
– তোমাকে এই অফিসে আর চাকরি করতে হবে না, আর আমার বাসা থেকেও তোমাকে চলে যেতে হবে। কিন্তু ভেবোনা আমি খুব কঠোর ভাবে কাজটা করে যাচ্ছি, আমি খুব শান্ত হয়ে করছি।
– ওহ্হ আচ্ছা।
– হ্যাঁ, চলতি মাসের শেষে তুমি এই অফিস থেকে চলে যাবে আর আমার বাসা থেকেও।
– ঠিক আছে।
– আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।
– বলেন।
– চট্টগ্রামে আমাদের এই অফিসের জন্য নতুন একটা শাখা চালু করা হয়েছে, নিশ্চয়ই জানো?
– হ্যাঁ স্যার।
– তুমি সেখানে গিয়ে জয়েন করবে, আমার অফিসে চাকরি করবে ঠিকই কিন্তু ঢাকা শহরে নয়। আমি কি জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ তুমি?
– জ্বি স্যার, মোহনার জন্য।
– বুদ্ধিমান ছেলে, এবার তুমি বিবেচনা করে বলো যে আমি কি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি?
– না স্যার, একজন দায়িত্ববান বাবা হিসাবে যেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা চমৎকার। আবার আমার মতো চাকরিজীবীর ভবিষ্যত ভেবে আমাকে বেকার জীবন ধরিয়ে না দিয়ে অন্য ব্যবস্থা করেছেন সেটাও প্রশংসার দাবিদার। সেজন্য কিন্তু প্রথমেই বলেছি যে আপনি বিচক্ষণ ব্যক্তি তাই ভুল সিদ্ধান্ত নিবেন না।
– আমি আমার সাধ্য মতো চেষ্টা করি সবসময় যেন আল্লাহ এবং দুনিয়ার মানুষ আমার উপর খুশি থাকে। কিন্তু সবকিছু ঠিক আছে তবে একটা নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
– কি সমস্যা?
– মোহনার বড় খালার বাড়ি বরিশালে, তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই সেখানে সবাইকে যেতে হবে। মোহনার খালাতো বোন তাই ওরা সবাই যাবে।
– আপনি যাবেন না?
– আমি যাবো বিয়ের দিন কারণ অফিস সামলাতে হবে তো তাই না?
– হ্যাঁ তা ঠিক।
– আমি বললাম, তোমার আন্টি মোহনা আর ফাহিম চলে যাক আর আমি পরে যাবো। কিন্তু সে কথা তো তোমার আন্টি মানতে রাজি হচ্ছে না।
– তাহলে কি করবেন?
– তোমার আন্টি বলছেন তোমাকে ছুটি দিতে।
– কেন?
– সে তোমাকে তাদের সাথে নিয়ে যাবে, তারপর সেখানে গিয়ে বিয়ে শেষ হলে তাদের নিয়ে ফিরবে।
– এটা কেমন কথা?
– খুব ভালো প্রস্তাব ছিল, কিন্তু আমি তো আপাতত এমনটা চাচ্ছি না কারণ আমি চাই মোহনার সাথে তোমার যোগাযোগ দেখা সাক্ষাৎ না হোক। কিন্তু তোমার আন্টি মানতে রাজি হচ্ছে না বলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য মোহনা তোমাকে নিয়ে যেতে রাজি নয় কিন্তু তোমার আন্টি জিদ করে বসে আছে।
– এটা মানার মতো প্রস্তাব না।
– তবুও মানতে হবে সজীব, কিছু করার নেই।
– মানে?
– মানে হচ্ছে তুমি মোনমহনাদের সাথে বরিশালে যাবে তবে আমার ইচ্ছায় না বরং তোমার আন্টির ইচ্ছেতে।
– আমার যেতে ইচ্ছে করছে না আপনি বরং আন্টি কে বলবেন যে আমি যেতে রাজি নই।
– তার দরকার নেই তুমি যাবে তাদের সাথে, তবে মোহনার সংস্পর্শ থেকে দুরে রবে। মাত্র কয়েকটা দিন তাই সেগুলো তোমাকে মোকাবেলা করতে হবে। আমার বিশ্বাস তোমাকে যে ভরসা করছি সেটা তুমি রক্ষা করবে। বরিশাল থেকে ফিরে তুমি চট্টগ্রামে যাবার প্রস্তুতি নেবে।
– কিন্তু স্যার।
– আলোচনা এখানেই সমাপ্তি, আগামীকাল সন্ধ্যা বেলা তোমার বরিশালে যাচ্ছ এটাই ফাইনাল।
– আপনি স্যার মানুষটা বড্ড অদ্ভুত।
– মোহনার জন্য তোমাকে বাড়ি আর অফিস থেকে বের করলাম তাই কিছু মনে করো না। আমার স্থানে হলে তুমিও এমনটা করতে হয়তো, তাছাড়া আমি কিন্তু তোমাকে মোটেই খারাপ ছেলে হিসাবে জানি না সবসময় নিজের সন্তান হিসাবে দেখি।
– সত্যি বলতে স্যার আমিও মোহনার থেকে এড়িয়ে চলতে চাই, আমি অর্পিতাকে ভুলতে পারবো না। তাই তার স্থানে অন্য কাউকে বসানো আমার পক্ষে সম্ভব না সে যত সুন্দরী হোক।
– যাক তাহলে নিশ্চিত হলাম, আশা করি ভালো করে বরিশাল সফর করবে।
– চেষ্টা করবো।
– আরেকটা কথা, আমি চেয়েছিলাম সবাই মিলে একটা গাড়ি নিয়ে চলে যাবে কিন্তু সেখানেও তোমার আন্টি সমস্যা। তিনি গাড়িতে বেশিক্ষণ চড়তে পারে না তাই বাসে কিংবা মাইক্রোবাসে যাওয়া যাবে না। তোমাদের লঞ্চে করে যেতে হবে, তবে সমস্যা নেই বরিশালের সেই ঘাটে মোহনার খালুর লোকজন অপেক্ষা করবে। মোহনার খালু বর্তমানে তাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাই সমস্যা নেই।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
★★
পরদিন সন্ধ্যার আগেই আমরা সবকিছু নিয়ে ঢাকার সদরঘাট রওনা দিলাম। স্যারের বক্তব্য অনুযায়ী মোহনা আমাকে নিতে রাজি নয় কিন্তু তার মুখের অবস্থা দেখে মনে হয় না সে বিরক্ত। বরং একটা পর পর আড় চোখে তাকাতে দেখা যাচ্ছে। সারাদিন প্রচুর গরম পরেছে, আমরা রাস্তায় গাড়িতে থাকতেই হঠাৎ করে ২০/২৫ মিনিট ভারি বর্ষন হয়ে গেল। গরম এতে খানিকটা কমবে হয়তো, কিন্তু জৈষ্ঠ্যমাস তাই আকাশে হুট করে ঝড়ের সৃষ্টি হতে পারে। এমন অবস্থায় লঞ্চে করে বরিশাল যাবার কোন যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না। আমি চট্টগ্রামের ছেলে, লঞ্চে করে আমি কখনো বরিশালে ভ্রমণ করিনি।
গাড়ি থেকে নামলাম, চারিদিকে পানি জমে গেছে, মাখামাখি অবস্থা হয়ে গেছে সবকিছু। ব্যাগপত্র যা আছে সেগুলো সবাই কিছু কিছু নিলাম, ড্রাইভার সাহেব ভারি লাগেজ নিলো আমিও আরেকটা ভারি ব্যাগ নিয়ে হাঁটছি।
সবার সামনে ড্রাইভার কারণ তিনি বরিশালের লোক এবং লঞ্চের টিকিট তিনি সংগ্রহ করেছেন গতকাল এসে। তার পিছনে ফাহিম, তারপর আন্টি, তারপর আমি খানিকটা পিছনে। আমার পিছনে পরার কারণ হচ্ছে মোহনা, উচু একজোড়া জুতা পায়ে দিয়ে কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে আসছেন তিনি। আর তাহার জন্য আমাকে একটু পর পর থামতে হচ্ছে, যখন তাকে রেখে অনেকটা এগিয়ে যাই তখন সে হাঁটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
চারিদিকে লোক লোকারন্য সবাই যার কাজে ব্যস্ত, আমি একবার কিছুটা সামনে গিয়ে দেখি পিছনে মোহনা নেই। মাথা সামান্য উপরে তুলে দেখি মোহনা দাঁড়িয়ে আছে, আবারও পিছনে গিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলার আগেই সে হাঁটতে লাগলো।
আরেকটু সামনেই ঘাট, হঠাৎ করে দেখি একটা মেয়ে ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় পানির মধ্যে পরে গেছে। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম মেয়েটার চোখে পানি টলমল করছে। প্রথমে ভেবেছিলাম ব্যথা বেশি পেয়ে গেছে মনে হয় কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো সবার সামনে পরার জন্য সে আঘাতের চেয়ে লজ্জা পেয়েছে বেশি। তাই লজ্জায় কেঁদে উঠে যাবার মতো উপক্রম করছে তাছাড়া কিছু না।
মেয়েটা একা নয়, তার সাথে তার মা-বাবা আছে মনে হয় কারণ দুজনকে দেখা যাচ্ছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি তখন মোহনা পিছন থেকে হাত দিয়ে গুতা দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। আমি পিছনে ফিরে ওকে দেখে আবারও ওই মেয়ের তাকে তাকিয়ে রইলাম। সচারাচর এমন পরিস্থিতি সবসময় সৃষ্টি হয় না তাই দেখে নিতে পারি।
– আমি মেয়েটার বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম, আঙ্কেল আপনারা কি লঞ্চে যাবেন?
– হ্যাঁ বাবা কিন্তু সাথে মালপত্র বেশি তাই সমস্যার মধ্যে পরে গেলাম। এদিকে আরেকজন আছাড় খেয়ে ব্যথা পেয়ে কেমন করছে, মনে হয় যাত্রা করা ঠিক হবে না, শুরুতেই সমস্যা।
– আপনি কিছু মনে না করলে আমি আপনার ব্যাগটা ঘাট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আবার আমাকে ধোঁকাবাজ মনে করবেন না কারণ আমিও আপনাদের মতো বরিশালে যাবো।
– তুমি ধরতে পারবে? তোমার সাথে ব্যাগ আছে তোমার কষ্ট হবে, থাক বাবা। তবে তুমি নিজে আগ্রহ দেখাতে অনেক খুশি হয়েছি, ধন্যবাদ বাবা।
– সমস্যা নেই আঙ্কেল আর একটু তো পথ আমি সাহায্য করছি।
ব্যাগটা হাতে নিয়ে অবাক হলাম কারণ তার মধ্যে পাঁচ কেজি ওজন হবে না মনে হয়। কিন্তু সেটা নিয়ে একটা জলজ্যান্ত যুবতী মেয়ে রাস্তার মধ্যে উষ্টা খেয়ে পরে গেছে মানতে পারছি না।
ঘাটে গিয়ে দেখি ড্রাইভার তার হাতের মালপত্র এবং আন্টি আর ফাহিম কে রেখে এসেছে। আমি আমার হাতের ব্যাগটা দিলাম তিনি সেটা নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল, আর পাঁচ কেজি ওজনের ব্যাগটা তাদের কাছে দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি মোহনা নেই।
এদিক সেদিক তাকিয়ে পিছনে হাঁটতে লাগলাম, হেঁটে হেঁটে পৌঁছে গেলাম যেখানে ওই মেয়ে আছাড় খেয়ে পরেছে সেখানে। আর সেখানেই মোহনা তার হাতের ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আমি রাগ করবো নাকি অন্য কিছু বলবো বুঝতে পারছি না।
ভাবলাম আগের মতো আমি আসার সাথে সাথে মনে হয় হাঁটা শুরু করবে কিন্তু সে নড়ছে না। আমি কিন্তু হাঁটা শুরু করলাম কিন্তু সে আসে না তাই সামনে গিয়ে বললামঃ-
– কি হইছে?
– চুপচাপ।
– ওরে ভাই লঞ্চ ছেড়ে দেবে আর তুমি এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছো?
– ছেড়ে দিলে আমার কি?
– আমার কি মানে?
– রাস্তার মধ্যে উষ্টা খেয়ে পরে থাকা একটা মেয়ের কত বড় কপাল, তার হাতের ব্যাগ একজন সম্পুর্ণ অপরিচিত ছেলে নিয়ে যায়। আর আমার ফাটা কপাল তাই পরিচিত একটা মানুষ থাকতে একবার জিজ্ঞেসও করে না আমার কষ্ট হচ্ছে নাকি? কেন জিজ্ঞেস করবে? আমি তো কেউ না, আমি তো তার অর্পিতা না।
– আমি এবার হেঁসে দিলাম, বললাম, তাই বলে রাগ করে দাঁড়িয়ে আছো? আচ্ছা ঠিক আছে আমার কাছে দাও আর কষ্ট করতে হবে না।
– কোন দরকার নেই, আমি নিজেই পারবো। এ কথা বলেই মোহনা হনহন করে হাঁটতে লাগলো, এতটা জোরে হাঁটতে লাগলো যে আমি হেঁটে পারছি না তার সাথে।
সুন্দরবন-১০ নামের লঞ্চে করে আমরা যাচ্ছি, দুটো কেবিন বুকিং করা হয়েছে। একটাতে মোহনা আর আন্টি এবং আরেকটাতে আমি ও ফাহিম। তাদেরকে কেবিনে দিয়ে আমি একটু লঞ্চ পরিদর্শনে বের হলাম কারণ জীবনে প্রথম লঞ্চ ভ্রমণ। যেই লঞ্চে করে যাচ্ছি সেটা ভালো করে দেখা ভালো কারণ বিপদ আপদে কাজে লাগে। হাঁটতে হাঁটতে দ্বিতীয় তলায় এসে হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে ডাকলো। ঠিক আমাকে ডাকে কিনা সেটা বোঝার জন্য চারিদিকে তাকিয়ে দেখছি। হঠাৎ করে দেখি সেই আঙ্কেল ও তার স্ত্রী কন্যা বসে আছে বিছানা পেতে। মেয়েটা তার কাপড় পরিবর্তন করেছে, মনে হয় ওয়াশরুমে গিয়ে পরিবর্তন করে এসেছে। তাদের সম্মুখে চায়ের ফ্লাক্স ও কাপ দেখা যাচ্ছে, মনে হয় ঢাকার বাসা থেকে চা তৈরি করে এনেছে। মেয়েটার মায়ের হাতে একটা পানের মোচা মনে হয়, বাহহ অদ্ভুত তো।
আমি তাদের সামনে গিয়ে বসলাম, আঙ্কেল তার সাথে চা খাবার জন্য অনুরোধ করেন। আমি আর কিছু না বলে রাজি হয়ে গেলাম তারপর কথা বলতে বলতে অনেক সময় পেরিয়ে গেল। মনে হয় মোটামুটি আধা ঘণ্টা হয়ে গেছে হঠাৎ করে আঙ্কেলের সেই মেয়ে বললোঃ-
– আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
– বললাম, জ্বি করুন।
– আমি যখন রাস্তায় পরে গেছিলাম তখন আপনি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর আপনার ঠিক পাশেই একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই মেয়েটা কি আপনার পরিচিত ছিল?
– আপনি ঠিক কার কথা বলছেন বুঝতে পারছি না তবে আমার সাথে একটা মেয়ে ছিল এটা ঠিক। কিন্তু আপনি তার কথা বলছেন নাকি অন্য কারো কথা সেটা বুঝতে পারছি না, কিন্তু কেন বলেন তো?
– না তখন যেই মেয়ে আপনার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সেই মেয়েটা অনেকক্ষণ ধরে ওইযে দাঁড়িয়ে আছে। আর সে আমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে তবে আমি যতটুকু বুঝতে পারছি তাতে মনে হয় সে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি পিছনে ফিরে দেখি মোহনা অদুরে দাঁড়িয়ে আছে, আমি তাকানোর সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে চলে গেল। মনে মনে ভাবলাম হায়রে জীবন, সবসময় শুধু ভুল বুঝে গেল। সেদিন বৃষ্টির সাথে কথা বলতে দেখছে সেটাই আজও ভাঙ্গলো না, আবার নতুন করে ঝামেলা।
চলবে….?
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)