এক ফাগুনের গল্প পর্ব ১১

#এক_ফাগুনের_গল্প
#পর্বঃ-১১

– আঙ্কেল বললেন, মেয়েটা কে বাবা? মনে হয় যেন তোমার খুব পরিচিত কেউ, হয়তো তোমাকে খুঁজে না পেয়ে এসেছে।

– আমি যেখানে চাকরি করি সেই অফিসের এমডি স্যারের মেয়ে সে, ওর খালাতো বোনের বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই সেখানে যাচ্ছে। আর সাথে কেউ নাই তাই আমাকে যেতে হচ্ছে তাদের সাথে যদিও ইচ্ছে ছিল না।

– ইচ্ছে ছিল না কেন?

– অফিসের স্যারের পারিবারিক বিষয়ে যেতে সবাই তো পছন্দ করে না তাই না আঙ্কেল?

– হ্যাঁ তা ঠিক বলছো।

– আপনারা কি ঢাকা শহরে থাকেন?

– হ্যাঁ ঢাকায় আছি বেশ কিছু বছর, গ্রামের বাড়িতে যাবো বেড়াতে তাই দুই স্ত্রীকে নিয়ে রওনা দিলাম।

– আমি বৈদ্যুতিক শকট খাবার উপক্রম করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, দুই স্ত্রী মানে? দুজন স্ত্রী কে কে?

– আঙ্কেল তার হাত দিয়ে ইশারা করে পান খাওয়া মহিলাকে দেখিয়ে বললেন, ইনি হচ্ছে আমার প্রথম স্ত্রী। আর যুবতী মেয়ের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন, ও হচ্ছে দ্বিতীয় স্ত্রী।

– মনে মনে খুব লজ্জিত হলাম, ভাবলাম মোহনার কথা কারণ সে আমাকে উন্নতমানের হাইব্রিড জাতীয় বুদ্ধিমান বলেছে। এখন মন চাচ্ছে তাকে এনে দেখাই যে আমার মতো বোকা মদন আছে নাকি আর কোথাও? আমি লোকটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে তার বয়স আন্দাজ করতে চেষ্টা করছি। আনুমানিক পঞ্চাশের একটু নিচে হতে পারে আর মেয়েটার বয়স সর্বোচ্চ পঁচিশ হয়েছে হয়তো। কিন্তু এমন বুড়ো মানুষের সাথে একটা মেয়ে কেন বিয়ে করতে রাজি হয়েছে?

– আঙ্কেল আবার বললো, প্রথম বিয়ে করেছি আজ ছাব্বিশ বছর হয়ে গেছে কিন্তু আজও কোন সন্তান আমাদের হলো না। তারপর এতদিন পরে শেষ বয়সে এসে দ্বিতীয় বিয়ে করলাম, অবশ্য তোমার বড় আন্টি রাজি ছিল। ও রাজি না থাকলে দ্বিতীয় বিয়ে করার কোন ইচ্ছে ছিল না আমার।

– আমি ভাবলাম, ছাব্বিশ বছর আগে তিনি বিয়ে করেছেন, এর মানে তিনি যখন প্রথম বিয়ে করেন ঠিক তেমনই সময় অন্য কোন দম্পতি বিয়ে করেই এই মেয়েটা জন্ম দিয়েছে। যখন তারা বিয়ে করে আর তখন হয়তো মেয়েটা জন্মেছে কিংবা তারও পরে। বললাম, আঙ্কেল আমি তাহলে আসি, আবার পরে কথা হবে যেহেতু একসাথে সকাল পর্যন্ত এই লঞ্চে আছি।

– ঠিক আছে বাবা ভালো থেকো তুমি।

কেবিনের কাছে গিয়ে দেখি মোহনা কেবিনে নেই। মনে হয় রাগ করে কোথাও দাঁড়িয়ে আছে তাই তাকে খুঁজে বের করতে হবে এখন। আমি আবারও হাঁটতে লাগলাম, মাথার মধ্যে পঞ্চাশ বছর বয়সী আঙ্কেলর পঁচিশ বছর বয়সী যুবতী মেয়েকে বিয়ে করার দৃশ্য কল্পনা করে যাচ্ছি।

মোহনার সাথে দেখা হলো ছাঁদে গিয়ে, সেখানে গিয়ে দেখি একলা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। আমি হাঁটতে হাঁটতে তার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিন্তু কিছু বললাম না। মোহনা আমার দিকে একবার তাকাল তারপর আবার নদীর দিকে তাকিয়ে রইলো। নদীর মধ্যে অনির্বাণ নৌকার আলো মিটিমিটি তারার মতো করে জ্বলছে।

অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি তবুও তার নড়ার নাম গন্ধ পাচ্ছি না, আমি আগের চেয়ে আরেকটু কাছে গিয়ে দাড়ালাম। পূর্বের মতো একবার তাকাল তারপর আবার নদীর দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি এবার সম্পুর্ণ তার কাছে ঘেঁষে গেলাম, বললামঃ-

– জানি আমার উপর অনেক রাগ করে আছো, চাই না সেই রাগ ভাঙ্গাতে। কিন্তু তুমি হয়তো একটা কারণে আমাকে ভুল বুঝে আছো তাই অনুমতি দিলে সেই ভুলটা ভাঙ্গাতে চাই।

– চুপচাপ।

– সেদিন জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে যার সাথে কথা বলছিলাম তার নাম বৃষ্টি। বৃষ্টি বিয়ে হয়ে গেছে তবে মাঝে মাঝে যোগাযোগ হয় আমাদের। তার সাথে আমার উল্লেখযোগ্য কোন সম্পর্ক নেই, না সে আমার বন্ধবী, না সে আমার গার্লফ্রেন্ড। তাই তার সাথে কথা বলতে দেখে মিছামিছি আমাকে ভুল বুঝে থেকো না।

– মোহনা বললো, ওসব নিয়ে আমার কিছু বলার নেই কারণ আপনি তো আমার কেউ না। তাহলে শুধু শুধু আপনি কার সাথে কথা বলেন আর কার ব্যাগ এগিয়ে সাহায্য করেন সেটা নিয়ে অভিমান কিংবা মন খারাপ করা মূর্খতা হবে।

– এমন কঠিনভাবে কথা বলছো কেন?

– সহজ ভাবে বলতে পারি না বলে।

– একটা মজার বিষয় শুনবে?

– না।

– না শুনলেও আমি বলবো, আমি যে মেয়ের ব্যাগ নিয়ে এসেছি ভেবেছিলাম সে ওই বৃদ্ধ কাকার মেয়ে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে সে নাকি ওই কাকার দ্বিতীয় স্ত্রী, আর মেয়েটা আমার আন্টি।

– মোহনা সবগুলো দাঁত বের হেঁসে দিল, আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। হাসি থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তাহলে রাস্তা থেকে ব্যাগটা ঘাট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে লস হয়ে গেছে তাই না?

– লস কেন হবে?

– আপনি তো চেয়েছিলেন তাদের সাথে ফ্রী হয়ে ওই মেয়ের সাথে একটু ভাব নিবেন কিন্তু সে আশায় বালু পরে গেল হাহাহা হাহাহা।

– মোটেই তেমন ভাবিনি আমি, তুমি কিন্তু রাগিয়ে দিচ্ছো আমাকে।

– অনেক দিন পরে বলছি তাই বিরক্ত হচ্ছেন?

– না ঠিক আছে, আচ্ছা তুমি তো সেদিন আমাকে তুমি করে ডাকা শুরু করলে কিন্তু হঠাৎ করে সেটা আবারও পরিবর্তন কেন হলো?

– যে জিনিস আপন ভেবে নিজের করে নিতে চাই সেটা যদি সত্যি সত্যি কোনদিন আমার না হয় তবে মিছে মায়া বাড়িয়ে লাভ কি?

– সেজন্য কথা বলতে চাও না?

– অনেকটা সেরকমই।

– এখন যে তোমার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছি সেটা কি বিরক্ত লাগছে?

– একটু একটু।

– তোমাকে খুব বিরক্ত করছি তাই না? চিন্তা করো না, দুদিন পর চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবো আর খুঁজে পাবে না।

– মানে কি?

– তুমি কিন্তু এখনো অভিমান করে আছো, তোমার খালার বাসা থেকে ফিরে এসে আমি চট্টগ্রামে চলে যাবো। এ জীবনে তোমার সাথে হয়তো আর দেখা হবে না, তাই অনুরোধ রইল কিছুটা স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে চেষ্টা করিও।

– চট্টগ্রামে যাবেন কেন? চাকরি করবেন না?

– আমাকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে।

– কে করেছে?

– স্যার নিজে করেছে।

– কিন্তু কেন?

– সেখানে লোকের দরকার আছে তাই।

– আপনি রাজি হয়েছেন যেতে?

– কোম্পানির চাকরি তাই রাজি না হয়ে উপায় কি?

– ওহ্হ আচ্ছা।

– হ্যাঁ সেটাই, চলো কেবিনে যাই।

– একটা কথা বলতে চাই বলবো?

– বলো।

– চট্টগ্রামে যাবার আগে আমার একটা ঔষধ সংগ্রহ করে দিতে পারেন। যেভাবেই হোক আমাকে সেটা খুঁজে বের করে দিতে হবে, পারবেন?

– আচ্ছা চেষ্টা করবো, বলো।

– আমি একটা মানুষকে না চাইতে অনেক ভালবেসে ফেলেছি কিন্তু তার কাছে আমার কোনো মূল্য নেই। তাকে আমি ভুলে থাকতে চাই, তাই একটা মানুষের স্মৃতি গুলো কীভাবে ভুলে থাকা যায়? কীভাবে তার অস্তিত্ব বিলীন করা যায়? সেই ঔষধ সংগ্রহ করে দিতে হবে, পারবেন না?

– বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে খুঁজে বের করতে চেষ্টা করবো, যদি পাই সেই ঔষধ আগে আমি ব্যবহার করবো। তারপর অর্পিতার সকল স্মৃতি গুলো ভুলে গিয়ে তোমাকে নিয়ে নতুন পৃথিবী সাজাবো।

চলবে….?

ক্ষমা করবেন পর্ব ছোট হওয়ার জন্য।
আমি চট্টগ্রামে কতটা সমস্যা আর অসহায়ের মধ্যে আছি সেটা আমি আর আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। তাই সময় হয়না গল্প লেখার, আর সময় হলেও মানসিক কষ্টে লিখতে ইচ্ছে করে না। যদি আপনারা প্রতিদিন রাতে পড়তে চান তাহলে এভাবে ছোট পর্ব পড়তে হবে। আর যদি বড় বড় পর্ব চান তাহলে একদিন পর পর পোস্ট করবো।

আপনারা সিদ্ধান্ত দেন, কি করবো আমি?

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here