বিয়ের দুবছর পর স্বামী বাড়ি আসার কথা শুনে অন্য সব মেয়েদের মতো মনে উৎফুল্লতা কাজ করলোনা ইরার।বরংচ ভেতরে ভয় গ্রাস করলো।
হাত পা কাপাকাপি শুরু করলো প্রবল ভাবে।
এই শীতল পরিবেশেও রীতিমতো গা ঘেমে চুপচপে হলো তার।
অন্য সব মেয়েরা যেখানে স্বামীর পছন্দ মতো খাবার রান্নায় ব্যাস্ত হতো,স্বামীর জন্য নিজেকে সুসজ্জিত করতো সেখানে ইরা সিদ্ধান্ত নিলো সে আজ ঘর থেকেই বের হবেনা।
খিল এটে বসে থাকবে ঘরে।
কেউ ডাকলেও খুলবেনা।
ফুপি ডাকলেও না।
ইরার স্বামীর নাম শৌখিন।
চট্টগ্রামে চাকরীরত আছে সে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ট্রান্সফার সে নিজে সেচ্ছায় নিয়েছে যাতে ইরার সামনে না থাকতে হয়।
কেননা সে তো ইরাকে বউ হিসেবে মানেইনা।
বিয়ের দিনই সে তার মাকে পইপই করে বলে দিয়েছিলো ইরা এ বাড়িতে থাকলে সে থাকবেনা।
এবং তারপরেই চট্টগ্রামে চলে গিয়েছিলো।
আজ দুবছর পর বাড়ি ফিরছে।
ফিরে ইরাকে এখনো এ বাড়িতে দেখলে নিশ্চয় রেগে যাবে
রেগে চিৎকার চেচামেচি করবে।
তখন কি ইরাকে জোর করে বের করে দেবে?
ভয়ে ইরার অবস্থা নাজেহাল হলো।
বারংবার গলা শুকিয়ে কাঠ হলো তার।
ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছলো।
ঘরের দরজা ভালোমতো লাগিয়ে দিলো।
একটু আগেই শোখিনের ছোট বোন শাম্মি এসে শৌখিনের বাড়ি ফেরার বিষয়টা জানিয়েছে ইরাকে।
কথা বলার সময় শাম্মিকে কি উৎফুল্ল দেখাচ্ছিলো!
দেখাবেই না কেনো?
এতোগুলা দিন পর তাই ভাই বাড়ি আসছে যে!
ইরার অসস্থি লাগছে খুব।
সে মনে মনে জায়গা খুজছে।
শৌখিন যদি এসে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাহলে সে কোথায় যাবে?
অনেক ভেবেও কোন জায়গা পেলো না ইরা।
তার কান্না পেলো খুব।
এই এতো বড় পৃথিবীতে তার কিনা যাওয়ার কোন জায়গা নেই?
ওহ হ্যা এক জায়গা আছে।
কিন্তু সেখানে যাওয়ার কথা ভাবতেই আঁতকে উঠলো।
কি ভয়ংকর দিনটাই না ছিলো সেদিন।
তখন ইরা তার মামা মামির কাছে থাকতো।
ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ায় মামা মামিই আশ্রয় দিয়েছিলো তাকে।
একটা মফস্বলে থাকতো তারা।
সারাদিন ইরাকে ইচ্ছেমতো খাটাতো মামি।
তবু কোনদিন টু শব্দ করেনি সে।
যাদের বাড়িতে থাকছে,খাচ্ছে তাদের মুখের উপর কি করে কথা বলতো?
পড়াশোনার খরচ চালাতো টিউশনি করিয়ে।
টিউশনির বেশিরভাগ টাকাই মামি নিয়ে নিতো।
হুট করে একদিন মামা ইরার বিয়ে ঠিক করলো।
যদিও ওটাকে বিয়ে বলেনা,বলে বিক্রি করা।
মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এক বহু পত্নীর বয়স্ক লোকের সাথে ধরে বেধে বিয়ে দিচ্ছিলো।
কোন আশার আলো যখন চোখে পরছিলোনা তখন আশার আলো হয়ে সামনে এসে দাড়িয়েছিলো ইরার ফুপু।
তার সাথে কোনপ্রকার যোগাযোগ ছিলোনা ইরার।
মামা মামিই কারো সাথে যোগাযোগ রাখতে দেয়নি।
সেই ফুপু ইরাকে সাথে করে ঢাকায় নিয়ে এলো।
কিন্তু নিয়ে আসার আগে নিজের ছেলে শৌখিনের বউ করে নিয়ে এলো।
শৌখিন তার মায়ের কথার উপরে কখনো কথা বলেনা।
তবে সেদিন বলেছিলো।
তার মায়ের কথার ঘোরতর বিরোধিতা করেছিলো।
তবুও শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে বিয়েটা করতে হয়েছিলো।
বাড়ি ফিরে তার পরেরদিনই চাকরীতে যোগ দিয়েছিলো এবং বলেছিলো ফিরে এসে যেনো ইরাকে এ বাড়িতে না দেখে।
সে ইরাকে বউ হিসেবে মানেনা এবং কখনোই মানবেনা।
ভাবনা চিন্তার মাঝেই দরজায় টোকা পরলো।
শাম্মী বলে উঠলো,
—ইরা বাইরে আয়।তাড়াতাড়ি।
মুলত ইরা শাম্মীর ভাইয়ের বউ হলেও সে তাকে ভাবী ডাকেনা।শৌখিনের ভয়েই ডাকেনা।যেখানে শৌখিন এ বিয়েটাই মানেনা সেখানে তার বোন ইরাকে ভাবি ডাকছে জানলে সে তুলকালাম বাধাবে।
তাছাড়া ইরা আর শাম্মী সমবয়সী।একই সাথে একই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে দুজনে।
ইরা শাম্মীর কথা শুনে থরথর করে কাপে।
মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করে।
—বাইরে কেনো যাবো?কেউ এসেছে?
শাম্মী দ্বীগুন উৎসাহে বলে ওঠে,
—কেউ এসেছে বলেই তো তোকে ডাকছি।তুই বাইরে আয়।
,
,
চলবে…….
,
,
#পথে_হলো_দেরি
#পর্বঃ১
#নুশরাত_জেরিন