#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_২
যেই আকাশ তন্নিমার ঠোঁটে ঠোট বসাবে তখনি ঠাসস ঠাসসস।
মেরে দিলাম দুগালে দুটা থাপ্পড়। আমার হাতের থাপ্পড় খেয়ে আকাশ একটু পিছিয়ে গেল।
আকাশ- হাউ ডেয়ার ইউ?(রেগে লাল হয়ে)
আমি- আমার সাহস সবসময় একটু বেশীই। তাই তো আপনাকে মারতে পারলাম।(বলেই হাত ঝাড়া দিলাম। যেন কোনো ধুলো ছুঁয়েছিলাম।)
মেঘ- এই মেয়ে তোমার সাহস কি করে হয় ওকে টাচ করার? তুমি জানো ও কে? আর আমরাই কারা?
আমি- কারা আর হবেন? হবেন কোনো বড়লোক বাবা মার বিগড়ে যাওয়া সন্তান। দেখেয় বুঝা যাচ্ছে আপনারা ভালো শিক্ষা পান নি।
নিপা- ইউ স্টুপিড গার্ল। তুমি জানো তুমি কাকে চড় মেরেছো? আর তোমার সাহস কি করে হয় আকাশকে চড় মারার। জানো সে চাইলে তোমাকে এই ভার্সিটি থেকে বের করে দিতে পারে।(সিনিয়র দলের মেয়ে রেগে)
আমি- তাই?? কই আমার তো জানাছিল না। আসলে আমি এখানে নিজের যোগ্যতায় ভর্তি হয়েছি। তাই তোমাদের মতো এতকিছু খুজ নেই নি?
মেঘ- কি বলতে চাইছো তুমি?
আমি- তোমরা বাবার টাকা খাইয়ে এই ভার্সিটিতে এসেছো। নিজের যোগ্যতায় না। আচ্ছা আমি কি ভুল বলছি? আছে কারো সৎ সাহস আমার সাথে সায় দেয়ার?
তখন ভীরের মধ্যে একটা ছেলে এসে বলে-
ছেলেটি- ঠিকি বলেছো তুমি। এরা এক একটা বদের হাড্ডি। জানো এদের দলের লিডারটা না সবথেকে খারাপ। জানো এরা না আমাকে র্যাগের না করে প্যান্ট খুলে দিয়েছিল। আর মেরেও ছিল।(ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে)
ছেলেটাকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে ছেলেটা মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ নয়। স্বভাব আর চেহারা যেন বাচ্চা টাইপ।
আমি- বাহ! তাহলে এটাই আপনাদের র্যাগ। র্যাগের নামে অসভ্যতামী! আর আপনারা সব মুখ বুঝে সহ্য করেন? কেউ কমপ্লেইন করেন না প্রিন্সিপালের কাছে?
তখন একটা মেয়ে বলে-
মেয়ে- কে করবে কমপ্লেইন? তুমি জানো তুমি কাকে মেরেছো? যাকে মেরেছো সে হলো প্রিন্সিপালের ছেলে। তাই ভয়ে কেউ কিছু বলে না। আর এদের লিডার হলো ভার্সিটির ভিপি। এখন তুমিই বলো কার সাহস থাকবে এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে?
আমাদের কথার মধ্যেই একটা গাড়ির শব্দ হলো। মনে হচ্ছে গাড়িটা প্রচুর বেগে এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। গাড়ির শব্দ শুনে সবাই তাড়াতাড়ি রাস্তা ছেড়ে দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। হুট করেই একটা কার প্রচুর স্পীডে এসে ব্রেক করে আমাদের সামনে। আমি ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেই।
আমি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি গাড়ি থেকে ধোয়া বের হচ্ছে। হুট করেই গাড়ি থেকে একটা ছেলে নেমে আসে। ছেলেটাকে এক কথায় সুদর্শন পুরুষ বলা যায়। যেমন চেহারা তেমন গায়ের রঙ, হাইট, এটিটিউড সব যেন কোনো মেয়েকে এক নিমিষে।তার দিকে আকৃষ্ট করার জন্য যথেচ্ছ। যাকে দেখলে মেয়েরা এমুহূর্ত ক্রাশ খেয়ে মরে যাবে।
কিন্তু এতসব কিছুর ভিতরে কেন জানি আমার খুব রাগ হচ্ছে ছেলেটাকে দেখে আবার বুকের ভিতরে এক অজানা অনুভূতিও হচ্ছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম ছেলেগুলো সব ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে। আর মেয়েগুলো সব ছেলেটাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। মেয়েদের দেখে কেন যেন আমার খুব রাগ হচ্ছিল। ইচ্ছে করছিল গিয়ে মুখ ভেঙে দেই।
আকাশ- এবার দেখবে সিনিয়রদের সাথে পাংগা নেয়ার ফল। রাত তোমাকে তা খুব ভালো করেই বুঝিয়ে দিবে।
রাত নামটা শুনে বুকের ভেতর ধক করে উঠল।
আমি- রাত! কে এই রাত? ও নয় তো? না না। ও কি করে হবে? ওরা তো আরো ৭বছর আগে বিদেশ চলে গেছে। তবে বাংলাদেশে আংকেলের অনেক উন্নতি করেছে। কিন্তু এ যদি সেই রাত হয় তাহলে….(ভেবেই ভয়ে জড়সড় হয়ে গেলাম আমি)
রাত- ওয়াটস আপ এভরিওয়ান। কি হচ্ছে এখানে?(বলেই চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলল।)
চোখ দেখে আমি ভয়ে আরো সেটিয়ে গেলাম।
আমি- আবার সেই বিড়াল চোখ।
আকাশ- এই মেয়েটা কি করেছে জানিস রাত? এই মেয়েটা আমাকে সবার সামনে চড় মেরেছে আর এতক্ষণ ধরে আমাদের সবাইকে ইনসাল্ট করছে।(আমাকে দেখিয়ে দিয়ে)
রাত ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো।
রাত- তুমি! তুমি আমার বন্ধুকে চড় মেরেছো? রেয়েলি? দেখে তো ফ্রেসার মনে হচ্ছে? তা চিনো ওকে?(চুইংগাম চিবুতে চিবুতে)
আমি নিজেকে সংযত করে উত্তর দিলাম-
আমি- শুনেছি উনি প্রিন্সিপালের ছেলে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। উনি অন্যায় করেছে তাই আমি তার প্রতিবাদ করেছি।(বলেই অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম)
রাত- তাই? তা কি অন্যায় করেছে ও?
আমি- উনি ওই মেয়েটার সাথে অসভ্যতামী করছিলেন। আর তাও র্যাগের নামে।
রাত- তা কি অসভ্যতামী করছিল ও?(বলেই বাঁকা হাসলেন)
আমি বুঝতে পারলাম যে উনি আমাকে কথার প্যাচে ফেলে অপমান করতে চাইছেন। তাই আমি আর কিছু না বলে সবার উদ্দেশ্যে বললাম।
আমি- আজকের মত মজা এখানেই শেষ আপনারা আসতে পারেন। আরেকদিন এমন মজা হলে না হয় আমি নিজে গিয়ে আপনাদের ডেকে আনব।
কথার ভিতরের অপমান বুঝতে পেরে অনেকেই চলে গেছে। আর কিছু আছে যাদের সামনে থেকে অপমান করলেও তাদের গায়ে লাগে না।
তাই আমি তন্নিমার কাছে গিয়ে তন্নিমার হাতটা ধরে বললাম চলো।
তন্নিমাকে নিয়ে যেই সামনে এগুতে যাবো তখনি পিছন থেকে ডাক পড়ে এই যে মিস নীল ড্রেসওয়ালী।
বুঝতে পারলাম আমাকেই ডাকছে। কারণ আমি আজকে নীল রঙের একটা ড্রেস পড়ে এসেছি। আমি ডাককে পাত্তা না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই কেউ এসে আমার হাত ধরে টান দেয়।
টাল সামলাতে না পেরে আমি তন্নিমাকে নিয়েই নিচে পড়ে যায়। উল্টো ঘুরে পড়ে যাওয়ায় অনেকটা ব্যথা পাই কিন্তু তা প্রকাশ না করে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি সিনিয়র সিটিজেনরা আমাদের দেখে হাসছে। বুঝতে পারলাম এটা তাদেরই কাজ। কোনো মতে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম।
আমি- তা সিনিয়র সিটিজেনস পিছন দিক দিয়ে ছুড়ি মারা কি আপনাদের সবসময়ের অভ্যাস?
আমার কথা শুনে যেন এক একজন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। জ্বলারি কথা কারণ আমি তাদের মতো হট হ্যান্ডসাম ছেলে মেয়েদের সিনিয়র সিটিজেন বলেছি। গায়ে তো একটু লাগবেই।
তন্নিমা হয়ত বুঝতে পেরেছে আবার ঝগড়া হবে তাই সে আমাকে টেনে তার পিছনে নিয়ে দাড় করিয়ে ওদের স্যরি বলতে থাকে।
তন্নিমা- স্যরি ভাইয়া আপুরা। ওর হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। ওর এভাবে বলা ঠিক হয় নি। প্লিজ ক্ষমা করে দিন।(হাত জুড় করে।)
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম তার আগেই তন্নিমা আমাকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। আমি শুধু রেগে একবার পিছনে সিনিয়র সিটিজেন দের দিকে তাকিয়েছিলাম।
তন্নিমা- তুমি আমার অনেক বড় উপকার করেছো বোন। কিন্তু আমি আর চাইই না আমার জন্য তোমার ক্ষতি হোক। শুনেছি ওরা অনেক ডেঞ্জারাস। দয়া করে আর ওদের সাথে লেগো না প্লিজ।
আমি নিজেকে শান্ত করে বললাম।
আমি- আচ্ছা ঠিক আছে। (বলেই হালকা হাসলাম)
তন্নিমা- ওহ তোমার নামই তো জানা হলো না। আমি তন্নিমা।(হেসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।)
আমি- আমি তারা। ফাস্ট ইয়ার বাংলা ডিপার্টমেন্ট। তুমি?
তন্নিমা- আমিও। তাহলে তো আমরা ক্লাসমেট। সো ফ্রেন্ডস?
আমি- অবশ্যই।
তারপর আমরা ক্লাসে চলে গেলাম। ক্লাস শেষ হতেই আমরা তুমি থেকে তুই তে পৌছে গেলাম। আর সাথে হয়ে গেলাম বেস্টফ্রেন্ডও।
চলবে?
ভুল এুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন এবং উৎসাহ দিবেন। ধন্যবাদ।