তুই হৃদহরণী পর্ব ২৯

#তুই_হৃদহরণী – ২৯

নতুন জীবনের নতুন এক সকাল। তুরফার ঘুম ভাঙ্গলে হাই তুলে বিছানায় বসল। শরীর কেমন ম্যাচম্যাচ করছে। রাতের সব কিছু মনে হতেই বুক টা চিঁপা দিয়ে উঠল। শুষ্ক একটা ঢোক গিলল। নিজেকে একদম গুটিয়ে নিয়েছে তুরফা। চাদর জড়সড় করে খুব কাছে নিয়ে এলে চোখ গেল সামনে। মানুষটা পিছনে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকক্ষণ পর আহরার বলল,
“ফ্রেশ হয়ে এসো ব্রেকফাস্ট করবে।”

“…..

“যাও নি?”
তুরফা কি বলবে ভেবে পায় না। ইতস্তত বোধ করছে। এবার আহরার তার দিকে ফিরল।

“যাবে নাকি..”
তুরফা তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুমে গেল। ফ্রেশ হয়ে যখন ফিরল তখন আহরার ঘরে ছিল না। তুরফা হাফ ছাড়ল। ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে ভিজে চুল মুছছিল তখন হঠাৎ-ই ব্যালকুনি থেকে আহরার এসে পিছন থেকে তুরফার কোমর পেঁচিয়ে নিল। মেদহীন পেঁটে চাঁপ লাগায় তুরফা ভেতর থেকে কেঁপে উঠল। শরীরে লোম যেন সজাগ হয়ে গিয়েছে। তুরফা ভয়কে গেল এতে। আয়নায় আহরার কে দেখে মুচড়াতে লাগল। ভেতরে অস্বস্তি বোধ করছে খুব। আহরার তুরফার গলায় মুখ গুঁজতে চেয়েও পারল না। দমকা হাওয়ার মতো সে তুরফাকে নিজের দিকে ফিরায়। চোখ বন্ধ করে ভিজে চুলের সুভাস টেনে বলল,
“পাখির মতে এত ছটফট করো কেন তুর পাখি?”

“ছাড়ুন।”

“কেন?”

“আমি বলছি তাই।”

“তুমি বললেই ছাড়তে হবে?”

তুরফা অনেক জোর গলায় বলল,
“হ্যাঁ ছাড়তে হবে। ছাড়ুন আমায়।”

আহরার হাল্কা চেঁপে ধরল তুরফার গাল।
“আমার সাথে জোর গলায় একটুও কথা বলো না। সবার আগে আমি তোমার স্বামী। কথাটা ভুলো না যেন। মাথায় রেখো।”

তুরফার আর কিছু বলার নেই। কলিং বেল বাজতে আহরার বলল,
“ভেতরে যাও আমি দেখছি।”
আহরার গিয়ে সার্ভেন্টের থেকে ট্রে নিয়ে ঘরে এলো। টেবিলের উপর রেখে তুরফা কে ডাকল। তুরফা শুধু একবার অমত করেছে। এরপর আহরার নিজেই তুরফার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে। তুরফা পরোটায় হাত দিতে গেলে আহরার বলল,
“ভুলেও হাত দিও না।”
ভয়কে গেল তুরফা। নিজেই জোর করে খাওয়ার জন্যে ডাকল। আর এখন না করছে? এ কোন ধরনের লোক? কেমন মানুষ? ভেতরে খুব রাগ হলো তার।

“কারণ আমি খায়িয়ে দিবো।”
মুখের সামনে খাবার ধরলে তুরফা একটা ঠোঁট উল্টে চুপচাপ খেয়ে নিল।

পড়ন্ত বিকেল। গোধূলির আবছায়া আলো লাল আভা দিচ্ছে। কি সুন্দর প্রাকৃতির দৃশ্য। এসময় টা আকাশের দিকে তাকালে আনমনে মন ভালো হয়ে যায়। মুগ্ধ হয়ে এক নাগাড়ে তাকিয়ে থাকলে ঠোঁটের কোণায় এমনি একটু হাসি ফুটে উঠে। গোধূলির ওই মুহূর্তে নিজেকেই অন্য রকম লাগে। বেখেয়ালি মনে ভালো লাগার অনুভূতি হয়। তুরফা একা দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটের ফাঁকে হাসির রেখা। এত মুগ্ধতার মাঝেও মনের কোণায় প্রশ্নেরা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। মন মস্তিষ্ক আজকাল আহরার কে নিয়েই বেশি ভাবছে, নাড়াচাড়া করছে। আহরারের কথা মনে হতেই প্রশ্নরা এক সাথে জড়ো হয়েছে মাথায়। প্রশ্ন পোকা কিলবিল করছে মাথায় উত্তর জানার আশায়।

হঠাৎ দুটি হাত তার নরম পেট জড়িয়ে নিয়েছে। চমকে পিছন ফিরতে চাইলেও পারল না। তার হাতখোঁপা করা চুল গুলি খুলে তাতে মুখ ডুবাল। তুরফা বুঝল এটা আহরার। কারণ আহরারের গায়ের ঘ্রাণটার সাথে কাল গভীর ভাবে পরিচিত হয়েছে সে। দুনিয়ার অন্য কিছু ভুললেও হয়তো ওই সুভাস ভুলবার নয়। ‘মূলত প্রতিরা পুরুষের গায়ে আলাদা এক ঘ্রাণ খুঁজে পাওয়া যায়।’ আহরার নিজের নাক দিয়ে তুরফার সাদা ঘাড়ে স্লাইড করতে লাগল। তুরফা চাইলেও কিছু বলছে না। আহরার তার পেট চেঁপে ধরে নিজের আরো কাছে মিশিয়ে নিল। তুরফা কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জড়িয়ে নিল। তুরফার মাথাটা নিজের বুকের মাঝে চেঁপে ধরে চোখ বন্ধ করে রইল। বুক যেন তার শীতল হচ্ছে একটু একটু করে। আগুন নিভে পানি হয়ে তা হীম শীতল রূপে যেন জমে যাচ্ছে। প্রশান্তি যেন সারা অঙ্গে বিরাজ করছে। একটু পর তুরফার মাথা তুলে আলতো হাতে গাল স্পর্শ করল। কপালে গভীর এক ভালোবাসার চিত্র আঁকল। আদরে গলায় বলল,
“তুর আমার বেবি চাই। ছোট্ট একটা বেবি চাই। ছোট্টছোট্ট হাত পা গুলি জড়িয়ে ধরতে চাই। আদো গলায় ওর মুখ থেকে বাবা ডাক শুনতে চাই। বিশাল বাড়িতে দৌড়ে দৌড়ে আব্বু ডাকের মুখরিত পরিবেশ উপভোগ করতে চাই। আমার বেবি চাই তুর।”
কি বলবে তুরফা ভেবে পাচ্ছে না। ভেতরে অদ্ভুত অনুভূতির আভাসে ছেয়ে গেছে সব। রোমাঞ্চকর অনুভূতি কাজ করছে সর্বাঙ্গে। শরীর কাঁপছে খুব। নিশ্বাস ঠিপ ভাবে নিতে পারছে না। তুরফার চোখ চিকচিক করছে। বেবি? তার নিজের বেবি? তার গর্ভের ফল? ভেবে যেন তুরফার শরীর কাঁপতে লাগল।
‘প্রতিটা মেয়ের মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতির মিল পাওয়া যায় এই খানে। যখন নিজের গর্ভজাত সন্তানের কথা মনে করে কোথা থেকে যে এক অনুভূতির উদয় হয় হৃদয়ে তা বুঝানো মুশকিল। তবে ভাবা মাত্র এক শিহরণ লেগে যায় শরীরে।’

“অন্য কারো মতো নিজের সন্তান কে দূরে সরিয়ে দিব না। যেমন পরিস্থিতিই আসুক না কেন আমি আমার বেবি কে আগলাব। নিজের সব টা দিয়ে ভালোবাসব আর আগলে রাখব। কখনো দূরে সরাব না তুরফা। ওমন বাবা আমি হতে চাই না যে নিজের সন্তান কেই দূরে ঠেলে দেয় কারণে। কখনো হতে চাই না কোনো দিনও না। তুরফা আমার একটা বেবি চাই।”
কথা গুলি বলার সময় আহরার কে কেমন উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল। কিন্তু শেষের কথাটায় আহরার মোম গলে পরার মতো বলল। স্বরে কতটা আকুতি ছিল তুরফা উপলব্ধি করতে পেরেছে সেটা। “তুরফা আমার একটা বেবি চাই” বলার সময় আহরারের কাঁদার অবস্থায় চলে এসেছে। সেই কাঁদোকাঁদো ললিত সুর হৃদয়ে লাগছে খুব। কিন্তু তুরফা এটা বুঝতে পারছে না আহরার ওমন কেন বলল? আর বলার সময় কেন এত বিচলিত লাগছিল তাকে?

“তুরফা দিবে আমায়? একটা বেবি দিবে তুর?”
কি মিগধ হৃদয়স্পর্শী সুর। বুক নাড়া দিয়ে উঠে তাতে। আহরার শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তুরফা কে। আর তুরফা যে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল একটা পুতুলের মতো। নীরব হয়ে আহরার আবার পরশ দিল তুরফার কপালে।

“আমরা কাল চলে যাচ্ছি।”
কথাটায় তুরফা ঝাটকা খেলো। এই লোক বলে কি? উনি না একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিংয়ে এসেছিল অফিস স্টার্ফকে নিয়ে। তবে কি হলো? মিটিং শেষ? তাকে তো জানায় নি? মাথায় জ্যাম ধরেছে তুরফার। আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল।
“আপনি না এখানে মিটিংয়ে জন্যে এলেন?”

“শেষ।”

“মানে কখন? কই আমাকে তো..”

“বললাম তো যা হওয়ার হয়েই গেছে। আর কোনো কাজ বাকি নেই। কাল আমরা যাচ্ছি। তবে তুমি বললে কয়দিন থেকে যেতে পারি আমরা দুজন।”

তুরফা চিন্তিত হয়ে গেল। মাথা ব্যথায় তার ছিঁড়ে যাচ্ছে। বিড়বিড় করে বলল,
“ইসস এবার বুঝি আমি পাগল হয়েই যাবো। আল্লাহ আমাকে এসব থেকে মুক্তি দাও। সব কিছু পরিষ্কার করো।”

“কি বিড়বিড় করছো?”

“কি কিছু না।”

“রেডি হয়ে নিও এক জায়গায় যাওয়ার আছে।”

“কোথায়?”

“এত কথা না বলে যা বললাম তা করো। আর যা চেয়েছি মনে রেখো মাই কুইন।”

রাতে তারা একটা রিসোর্টে ডিনার করেছে। আর রাত টা সেখানেই কাটিয়েছে দুজন একসাথে।

ফ্লাইটে বসে বসে তুরফা কিছু একটা ভাবছে। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল। চোখ যখন খুলল তখন বাংলাদেশের মাটিতে সে। ফ্লাইট থেকে তাড়াতাড়ি করে নেমে গেল। বাতাসে নিশ্বাস নিল। মন যেন একটুতেই চাঙ্গা হয়ে গিয়েছে। এই আবহাওয়া আর ওই আবহাওয়ায় আকাশ পাতাল তফাৎ। ছোট থেকে মানিয়ে নিয়েছে সে। মুখ ভর্তি হাসি টেনে মোনতাহ্ কে বলল,
“চল বাসায় যাই।”

কোনো সাড়াশব্দ নেই কথা নেই দেখে তুরফা সবার দিকে তাকাল। সবাই অবাক হয়ে দেখছে তাকে। যেন না জানি কি কথা বলে ফেলেছে সে। তুরফা পুরোই বোকা বনে গেল এসবে। ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে আছে। ফিরাত আর মোনতাহ্ কে দেখে মিচকে হাসি দিল।
“আ আসলে আমি না..”

“বাসায় চলো।”

“কোথায় যাবো আমি? আমি মোনতাহ্-র সাথ..”

“শাট আপ ননসেন্স। বাসায় চলো।”
তুরফা নেকাবের নিচে হাজার বার মুখ ভেংচি কাটল।

গাড়িতে বসে বসে তুরফা একটা জিনিস গভীর ভাবে ভাবল। একটা বিষয় সে খুব ভালো করেই জানে আর দেখেছে। মানুষটার কথা না শুনলে রেগে যায়। খুব রেগে যায়। তুরফা মনে মনে বলতে লাগল।
“সত্যি জানতে হলে সুযোগ নিতেই হবে। সময়ের অপেক্ষা।”

বাসায় গিয়ে দুজন খেয়ে শুয়ে পরল। এই কদিনেই আহরার জোর করে টেনে তুরফা কে বুকের সাথে মিশিয়ে ঘুমায়। না হলো তার ঘুম হয় না। অল্প সময়ের ব্যবধানে এটা তার অভ্যাসে রূপান্তর হয়েছে। তুরফা কে বুকে নিয়ে ঘুমালে তার বুকটা ভরা মনে হয়। নয়তো সব টাই খালি খালি লাগে। তুরফার বারণ আহরার শুনে না। আর চওড়া পাঁজরে ঘুমতে তার অসুবিধা হয় না বরং শান্তি তে ঘুমাতে পারে। ভাবতেই মনে শিহরণ লাগে এই পাঁজরের হাঁড় দিয়েই তাকে বানানো হয়েছে।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তুরফা ফ্রেশ হয়ে অপেক্ষা করছে। প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত তার মাথা ব্যথা কমছে না। আহরার ওয়াশরুম থেকে এসে অফিস যাওয়ার জন্যে রেডি হচ্ছে। তুরফা এক কোণায় দাঁড়িয়ে চিন্তা করছে কি বলে শুরু করবে। চিন্তা ভাবনার ফাঁকে বলল,
“আমি অফিস যাবো না?”

“না।”

“কেন?”

“আমি বললাম তাই।”

“তবে আমার চাকরি?”

“তোমার চাকরি আমাকে সামলানো।”

“….

“লজ্জায় কথা আসছে না?”

“….

“অফিসের কাজ আমি বাহিরে দেখে নিব। তুমি ঘরে থেকে অফিসের কাজও দেখবে আর সাথে আমাকেও সামলাবে। গট ইট মাই কুইন?”

“আমার প্রশ্নের উত্তর চাই।”
হঠাৎ এহেন কথায় আহরার কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে তাকায় তার দিকে। খুব বেশি অবাক হচ্ছে তেমন বুঝা যাচ্ছে না। আহরারের ওমন চাউনি তুরফা কে ইতস্তত বোধে ফেলে দিল। একটু পর আহরার নিজে বলল,
“আমি বুঝতে পারছি তুমি আমার কাছে উত্তর জানতে চাইছো। ত..”

“তো বলুন না প্লিজ। আমি আমার প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই প্লিজ।”

“এখনো সময় হয়নি।”

“কখন হবে সময়? উত্তর জানার জন্যে সময়ের দরকার নেই। প্লিজ আপনি বলুন।”

“…

“প্লিজ বলুন না। প্লিজ রিকুয়েস্ট করছি আমি। প্লিজ বলুন।”

আহরার শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল,
“বললাম তো হৃদহরণী সময় হয়নি। হলে নিজ থেকেই বলব।”

রেগে গেল তুরফা। খানিক জোর গলায় বলল,
“না আমার এখন উত্তর চাই মানে এখন চাই। আপনি বলুন কেন করলেন এমন? বলুন। আমি ঘুমাতে পারছি না এত এত প্রশ্নের জ্বালায়। এই প্রশ্নের জাল আপনিই বেদ করতে পারেন। প্লিজ বলুন আমায় সব কিছু।”

শার্টের বোতাম লাগিয়ে আহরার এগিয়ে আসে তুরফার দিকে। দুই বাহুতে দুই হাত রেখে আহরার শান্ত গলায় বলল
“তুর তুর প্লিজ তুমি শান্ত হোও। প্লিজ লিসেন টু মি। এখনো সব উত্তর দেওয়ার সময় হয়নি। সম্পর্ক টা আরো মজবুত হতে দাও ঠিক বলব।”

তুরফা রেগে মেগে ঝাড়ি দিয়ে দুই হাত সরিয়ে দিল। চেঁচিয়ে বলল,
“কি সময় সময় করছেন আপনি? আপনাকে বলছি উত্তর দিতে। আপনাকে যে বলছি আমি ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারি না। অস্বস্তি হয় আমার উত্তরের তাড়নায় আর আপনি? সম্পর্ক ভালো হওয়ার কথা বলছেন? আরে এতে তো আমি আপনার সাথে সম্পর্কই তৈরি করতে পারব না। আর আপনি? থাক দরকার নেই লাগবে না উত্তর। আপনার সব উত্তর আপনার নিজের রহস্য সব আপনি আপনার মাঝে রাখুন। চললাম আমি। আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না। আর না থাকতে পারব। এখানে থাকলে আমার দম টা বন্ধ হয়ে যাবে। মরে যাবো আমি। তাই এখানে, আপনার সাথে থাকব না। চলে গেলাম আমি।”
তুরফা রাগে কটমট করে হাটতে লাগল। আহরার ভয়ংকর রেগে গেল। মুখের বর্ণ পাল্টে গেছে। চোখ দিয়ে লাল আভা দেখা দিচ্ছে। ভয়ংকর আর হিংস্র বাঘের মতো দেখাচ্ছে আহরার কে। আহরার লম্বার দুই তিন পা বাড়িয়ে তুরফার হাত ধরল। কোনো রকম নিজের দিকে ঘুরিয়ে আচমকা এক চর বসিয়ে দিল তুরফার গালে। আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব তুরফা। গাল জ্বলে যাচ্ছে তার। মনে হচ্ছে আগুনে পুড়েছে। চরের কারণে চোখে পানি চলে এসেছে তার। চোখে সব ঝাপসা দেখছে। তবে অনুভব করল আহরার তাকে বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। আর সেটাও খুব শক্তে। তুরফা আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু গাল টা মরিচের মতো জ্বলে যাচ্ছে।

“তুই শুধু আমার। আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভুলে কল্পনাতেও আনিস না। তোকে ছাড়া আমি এখন থাকতে পারব না। তুই আমার সব। তুই আমার থেকে চলে গেলে আমি দম আটকেই মরে যাবো তুরফা। আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা তুই বলিস না তুরফা। মরে যাবো আমি মরে যাবো।”

তুরফা কিছু বলতেও পারছে না আর না নড়তে পারছে। আহরার এত শক্তে ধরেছে তাকে দমই নিতে পারছে না ঠিক করে। ভয় মিশ্রিত কন্ঠে অতি কষ্টে বলল,
“ছা ছাড়ুন আমায়।”

“না ছাড়ব না।”

“নিশ্বাস নিতে পারছি না আমি।”
হন্তদম্ত হয়ে আহরার তুরফা কে ছেড়ে দিল। ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল
“ঠিক আছো তুমি?”
তুরফা কিছু বলল না। আহরারের চোখ গেল তুরফার গালের দিকে। চার আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট। পুরো গাল লাল টকটকে হয়ে আছে। চোখে পানি। আহরারের চোখ দিয়েই পানি চলেই এলো। তুরফা অবাক হলো।
“খুব লেগেছে হৃদহরণী?”

“….

“খুব ব্যথা দিয়েছি তোমায়? প্লিজ সরি। মাফ করে দাও আমায়। আমি বুঝতে পারি নি জান। সরি।”

“….

“জান না আমার সরি। প্লিজ সরি। তুমি, তুমি সব উত্তর চাও তো? ওকে দিব। আর তুমি চাইলেও আমার কাছ থেকে দূরে যেতে পারবে না। আমি হতেও দিব না। উত্তর দিব তোমায়। আগে এদিকে আসো।”
আহরার টেনে তুরফা কে নিয়ে বিছানায় বসাল। এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,
“পানি টা খেয়ে নাও পরে বলছি।”

কান্না ভর্তি চোখ নিয়ে তুরফা মাথা নাড়াল। পানি খাবে না। আহরার জোর করে অল্প পানি খায়িয়ে দিয়ে কোলে তুলে নিল।
“এখন প্লিজ জিজ্ঞেস করো না কেন কোলে তুললাম।”

আহরার তার গুপ্ত ঘর মানে তার আর্ট রুমে নিয়ে নামাল তুরফা কে। বড় একটা প্রিন্টের কাপড় সরিয়ে দিল। তুরফা বিস্মিত হলো খুব। চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। পলক হীন দেখছে শুধু। তার সামনে আরেক টা তুরফা। জলজ্যান্ত তুরফা। খুব বেশি অবাক হচ্ছে তুরফা। কারো প্রিন্টিং এত তরতাজা হয়? তুরফা শুধু অবাক হচ্ছে। সাদা ওড়না মাথায় জড়িয়ে থাকা একটা নিজের প্রিন্টিং। গালের দুই পাশে অল্প চুল এসে পরেছে। ঠোঁটের কোণায় এক চিলতে হাসি। যে কেউ দেখে বলবে এক মানবী হাসছে।

“তুরফা এটা একটু একটু করে আঁকা হয়েছে। কোনো দিন একটু কোনোদিন আগের দিনের থেকে আরেকটু বেশি। এমন করেই আঁকা। চোখের পাতা হয়ে গেছো তুমি আমার। তোমায় প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন তুমি আমার হৃদয় ছিনিয়ে নিয়েছো। যদিও তোমার সাথে প্রথম দেখাটা তেমন ভালো হয়ে উঠে নি। তখন আমার মাইন্ড টাই ছিল ওমন। এর পিছনে কারণ আছে। এনি ওয়ে তুমি জানতে চেয়েছো না সব উত্তর? আজ বলছি।”
আহরার একটু থেমে আহরার বলা শুরু করল।
“প্রতিদিন একটা স্বপ্ন দেখতাম। স্বপ্নে থাকত একটা ছায়া মানবী। অস্পষ্ট ঘোলা। কিছু দেখতে পারত না। কেন এমন হতো জানি না। বাংলাদেশে আসার আগ মুহূর্ত থেকেই এমন হয়ে আসছে আমার। শীতেও ঘেমে যেতাম ওই স্বপ্নে। তবে কিছুই দেখতে পেতাম না। কাউ কে পেতাম না। দিন গুণছিলাম কবে দেখব সেই স্বপ্নের মানবী কে। তবে দিন বাড়ার সাথে সাথে কেমন স্পষ্ট হয়েও হয় না এমন হতো। তারপর ফিরাতের বিয়ে এলো। ও আমার বলেছিল আমি যেন বিয়ে করে নেই। হেসে উড়িয়ে দিয়েছি সে কথা। মনে আছে ছাদে তুমি আমায় বলেছিলে ‘আমি আপনার বউ নাকি যে যখন তখন গায়ে হাত’ কথাটা পুরো শেষ করো নি তুমি। কিন্তু আমি বুঝেছিলাম আমার কি করতে হবে। কফির মগে চুমুক দিয়ে গভীর ভাবে ভেবেছিলাম সেদিন। বিয়ে করে নিলে তুমি শুধুই আমার হবে। তোমাকে আমি আমার কাছে পাবো সবসময়। যখন তখন হাত ধরলেও তুমি কিছু বলতে পারবে না। ইসলামে তো এটা পবিত্র। তাই ঠিক করি তোমায় বিয়ে করে নিবে। কাকতালীয় ভাবে সেই রাতেই তোমাকে স্বপ্নে দেখি আমি। এত দিনের স্বপ্নের মানবী সেই রাতে স্পষ্ট হয় তুরের মাধ্যমে। সে রাতে আমার আর ঘুম হয় নি। ভেবে নিয়েছি যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে আমায়। সময় নষ্ট করা চলবে না।”

তুরফা কি বলবে ভেবে পায় না। বিস্মিত হচ্ছে আহরারের কথায়।
“তবে আমায় বিয়ে করা, আর লিনা, সেসব?”

তুরফার প্রশ্নের আহরার স্লান হাসল। অদ্ভুত সে হাসি।

চলবে….
#সাদিয়া
(কাল সব কিছু জানার জন্যে অপেক্ষা করুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here