#এক_জীবনে_অনেক_জীবন(১০)
*********************************
যাবে না যাবে না করেও শেষ পর্যন্ত রফিক তার আব্বার হাত থেকে নিস্তার পেল না । যেদিনের জন্য আওলাদ হোসেন তাঁর স্যারের কাছ থেকে সময় নিয়ে রেখেছিলেন, রফিক ভেবেছিল সেদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই বেরিয়ে যাবে বাসা থেকে । মোবাইলে এ্যালার্মও দিয়েছিল শুতে যাওয়ার আগে অথচ যখন তার ঘুম ভাঙলো, ঘড়িতে তখন সকাল দশটা । একটু পরেই তাদের যাওয়ার কথা । মেজাজটা খারাপ করে মোবাইল চেক করতে গিয়ে দেখলো এ্যালার্ম ঠিকই দিয়েছে কিন্তু পিএম টাকে এএম করতেই ভুলে গেছে । রফিক শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছে কী করা যায়, কী করে পাশ কাটানো যায় ঠিক তখনই আওলাদ হোসেন রুমে উঁকি দিয়ে বললেন –
কী ব্যাপার এখনো উঠছিস না কেন? কাল রাতেই তো বলে রাখলাম আজ সকাল সকাল উঠে যাস, তোর তো কোনো ভাবান্তরই নেই । ওঠ তাড়াতাড়ি ওঠ । ঝটপট নাস্তা খেয়ে নে । একটু পরেই বের হতে হবে ।
আব্বা ঘর থেকে বের হয়ে গেলে রফিক বুঝলো আজ আর ছাড়া পাবে না কোনোভাবে । অগত্যা সুবোধ বালকের মতো আপাতত আব্বার সাথে যাওয়াটাকেই তার কাছে বুদ্ধিমানের কাজ মনে হলো । আব্বাকে এখন কোনোভাবে রাগানো যাবে না । আব্বাকে বুঝিয়ে যদি সঞ্চয়পত্রের টাকাটা বের করে নিতে পারে তাহলে কিছু একটা ব্যবসা শুরু করবে বন্ধুদের সাথে ।
রফিক তার আব্বার পুরোনো অফিসটায় যখন পৌঁছালো রিসিপশনের ছেলেটা তাদের বসতে বলে আওলাদ হোসেনের সাথে কথাবার্তা বললো । কীভাবে চলছে সংসার, এখন তিনি কিছু করছেন কি-না এইসব খোঁজখবরের ফাঁকে আওলাদ হোসেন ছেলেটিকে জানালেন যে এমডি স্যার তাঁকে আসতে বলেছিলেন । ছেলেটার যদি একটা চাকরি হয়ে যায় তাহলে নিশ্চিন্ত হন তিনি ।
রিসেপশনিস্ট ছেলেটা জানালো নতুন করে অল্প কিছু লোক নেয়া হচ্ছে অফিসে ।
এমডির রুমে ডাক পড়তেই আওলাদ হোসেন ছেলেকে আরো একবার ভালো করে মনে করিয়ে দিলেন, যা যা জিজ্ঞেস করা হবে সে যেন সবকিছুর ঠিকঠাক উত্তর দেয় । কোনো পাকামি বা বাড়তি কথা যেন একদম না বলে ।
এমডি স্যার আওলাদ হোসেনকে দেখে আন্তরিক ভাবেই বলে উঠলেন –
আরে আওলাদ সাহেব, ভালো আছেন? আসেন আসেন, বসেন ।
আওলাদ হোসেন এতোটা আন্তরিকতা আশা করেননি স্যারের কাছ থেকে কারণ তাঁরা যখন এখানে কাজ করতেন, এমডি স্যারকে বেশিরভাগ সময়ই খুব গম্ভীর থাকতে দেখেছেন । সরাসরি ওভাবে তেমন কথাও বলতেন না তাদের সাথে । তাঁরা যতো রকম কথাবার্তা, আদেশ-নির্দেশাদি সবই পেতেন জিএম স্যারের কাছ থেকে ।
চেয়ারে বসতে বসতে আওলাদ হোসেন বললেন –
স্যার এ আমার ছেলে রফিক । এর চাকরির জন্যই বলেছিলাম আপনাকে ।
হুম, আপনি তো আগেও সময় নিয়ে আর আসলেন না, আজম বলেছিল আমাকে আপনার আসার কথা । আমি আসলে আমার এখানে যাঁরা আগে কাজ করতেন তাঁদের ছেলেমেয়েকে আগে সুযোগ দিতে চাই । যদি সেরকম যোগ্য কেউ থাকে তাহলে অবশ্যই আমার এখানে কাজ করতে পারবে । রফিকের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন –
বাহ, আপনার ছেলেটি দেখতে তো বেশ । আপনাকে তো অনেক ছাড়িয়ে গেছে লম্বায় । তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন, বসো । কী যেন নাম তোমার ?
রফিকুল ইসলাম ।
তোমার সার্টিফিকেট, অন্যান্য কাগজপত্র সব এনেছো সাথে ?
জ্বি । রফিক ফাইল থেকে কাগজপত্র বের করে এমডি স্যারের দিকে এগিয়ে দিলো ।
কাগজপত্রগুলো দেখতে দেখতে এমডি স্যার বললেন –
তোমার তো কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই , তোমাকে আপাতত সেলসের কাজে দিচ্ছি । যদি কাজ করতে চাও তবে তেমন কোনো কষ্টের না কাজটা । প্রথম পনেরো দিন তুমি আরেকজনের সাথে সাথে থেকে কাজের ধরণটা ভালোভাবে বুঝে নেবে আর বাকিটা আমি আজমকে বলে দিয়েছি । আপনি আজমের কাছ থেকে জেনে নেবেন আওলাদ সাহেব ।
রফিককে উসখুস করতে দেখে এমডি স্যার বললেন –
কী কিছু বলতে চাও না-কি ?
আওলাদ হোসেন ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন –
না স্যার অন্য কিছু বলবে না । আপনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাচ্ছিল কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছে না । এভাবে তো আজকাল কেউ কাউকে চাকরি দেয় না স্যার ।
তা অবশ্য দেয় না । আমিও দিতাম না কিন্তু আপনারা আমাদের এখানে এতোদিন ধরে কাজ করেছেন, আমাদেরও তো কিছুটা দায়িত্ব থাকে আপনাদের প্রতি । ঠিক আছে তাহলে , কাল থেকেই জয়েন করো আর এই কাজে তুমি যতো বেশি শ্রম দেবে, তোমার টার্গেট ফিল আপের পর যত বেশি সেল করতে পারবে, তোমার তত বেশি লাভ । ওগুলো অবশ্য আজম সব বুঝিয়ে দেবে । ঠিক আছে তাহলে । কথা তো হয়েই গেল, কাল থেকে জয়েন করো না-কি আরো কিছুদিন সময় নিতে চাও ?
রফিক কিছু বলার আগেই আওলাদ হোসেন বললেন –
কাল থেকেই আসবে স্যার ।
ঠিক আছে কালই জয়েন করো তাহলে ।
রফিক চেয়েছিল দুই-চারটা উল্টোপাল্টা কথা বলে এমডির মেজাজ খারাপ করে দিয়ে চাকরির বারোটা বাজিয়ে চলে আসতে কিন্তু লোকটা এতো বেশি ভদ্র যে সে বেয়াদবি করার মতো বা কিছু বলার মতো সাহস সঞ্চার করতে পারলো না ।
এমডির রুম থেকে বের হয়ে রফিককে নিয়ে আজম স্যারের রুমে আসলেন আওলাদ হোসেন । আজম সাহেব তাদের বসতে দিয়ে জয়েনিং লেটারটা প্রিন্ট করিয়ে আনালেন । বললেন –
আওলাদ সাহেব আপনি তো এতো বছর এখানে কাজ করেছেন । আপনাকে তো আর নিয়মকানুন নিয়ে বলার কিছু নেই আর আপনি যেমন আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করেছেন আশা করছি আপনার ছেলেও তেমনই হবে ।
জ্বি স্যার নিশ্চয়ই ও আন্তরিকতা নিয়েই কাজ করবে ।
জয়েনিং লেটারটা আওলাদ হোসেনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন –
এই বেতনেই আপাতত শুরু করুক তারপর ওর পারফরম্যান্সের ওপর বাকিটা দেখা যাবে ।
আজম স্যারকে বারবার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আওলাদ হোসেন ছেলেকে নিয়ে বের হয়ে আসলেন অফিস থেকে । কিছু টাকা তিনি আলাদা করে রেখেছিলেন রফিকের জন্য । কী সব ছেঁড়া জিন্স আর গেঞ্জি পরে ঘুরে বেড়ায় ছেলেটা ! এইসব কাপড়ে তো আর অফিস করা যায় না । ছেলেকে বললেন –
চল একবার ঢাকা কলেজের ওখানে যাই ।
কেন আব্বা, ওখানে আবার কী কাজ ?
অফিস যাবি কী পরে ? আছে তো শুধু ছেঁড়া জিন্স । চল ওখান থেকে কয়েকটা ভালো শার্ট, প্যান্ট কিনে নিবি ।
ওখান থেকে !
হ্যাঁ, কেন অন্য কোথাও যাবি ?
রাফিক কিছু বলতে যেয়েও কথাটাকে গিলে ফেলে । আব্বাকে রাগানো যাবে না কিছুতেই ।
আওলাদ হোসেন বললেন –
বাবারে অনেক চেষ্টা করেও আজকাল চাকরি পাওয়া যায় না । ভালোমতো কাজ করিস । এখানে কিন্তু আমার কাজের একটা সুনাম ছিল, সে জন্যেই কিন্তু স্যার বেশি কিছু না বলে তোকে চাকরি দিয়ে দিলো । মন দিয়ে কাজটা শুরু কর, ধীরে ধীরে প্রোমোশন পেয়ে একদিন বড় পোস্টে কাজ করতে পারবি দেখিস । চল তোর পছন্দের ক’টা কাপড় কিনে নে ।
রফিক বললো –
ঠিক আছে চলেন । মনে মনে ভাবলো, জয়েন করে কয়দিন যাওয়া আসা করেই দেখি না কী হয় । এরমধ্যে টাকাটা হাতে চলে আসলেই ঐ ফেরিওয়ালার চাকরিকে সালাম ।
.
.
তিনজন মিলে গল্প করছিল রাতের খাওয়া শেষ করে । গল্পের কোনো মাথামুণ্ডু থাকে না । সারাদিন কী কী ঘটলো সেই সব টুকিটাকি গল্প শুনতে বেশ লাগে নিলুফারের । সাদাতও মা আর বোনের সাথে জমানো কথাগুলো বলে শান্তি পায় খুব । গল্পের ফাঁকে শাফিনের কথা উঠতেই নিলুফার বললেন –
দেখতে দেখতে সময় কীভাবে গড়িয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি । চোখের সামনে সব টুকটুক করে হেঁটে বেড়াতো আর এখন তাদের সব বিয়ের কথাবার্তা শুরু হয়ে গেছে ।
সানজিদা বললো –
কার কথা বলছো মা, কার বিয়ে ?
এই আমাদের বাচ্চাগুলোর কথাই বলছি ।
কার বিয়ে ভাইয়ার ? ভাইয়ার তো এখন চাকরিও হয়ে গেছে । ইশ তোমার বিয়েতে আমি অনেক মজা করবো ভাইয়া ।
সাদাত ধমকে উঠলো –
এই সানজি কী বলিস এইসব ?
নিলুফার বললেন –
সেদিন তোর ছোট খালার ওখানে গেলাম না , ওখানেই বিয়ের কথা হচ্ছিল । রোজার শাশুড়ি একটা প্রস্তাব দিলো ।
সাদাত জিজ্ঞেস করলো –
কার বিয়ের জন্য প্রস্তাব মা ?
জারা’র জন্য । দেখ অবস্থা, জারা’রও বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু হয়ে গেছে ।
সাদাত অবাক হয়ে বললো –
ছোট খালা এখন জারা’র বিয়ে দেবে ? ওর তো পড়া শেষ হয়নি ।
তাবাসসুম তো না করে দিলো কিন্তু রোজার শাশুড়ি খুব জোর করছিলেন । বললেন ছেলে ডাক্তার আর খুব ভালো ছেলে । বিয়ে তো দিতেই হবে দু’দিন আগে আর পরে । কপালে যদি থাকে তাহলে ঐ ছেলের সাথে বিয়ে হবে ।
সানজিদা বললো –
জারা আপু যা সুন্দর দেখতে, ওর তো বিয়ের প্রস্তাব আসবেই । আগেও আরো প্রস্তাব এসেছিল, জারা আপু বলেছে আমাকে ।
সাদাত একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললো –
হুম জারা অনেক সুন্দর দেখতে , পাহাড়ি ফুলের মতো, বহতা নদীর মতো….
সানজিদা বুঝতে না পেরে সাদাতের গায়ে ধাক্কা দিয়ে বললো –
এই ভাইয়া কী বলো বুঝি না তো ।
না কিছু বলিনি তো ।
জারা’র বিয়ের কথা শুনে মনটা কেমন উদাস হয়ে গেল তার । সে যতই মনেপ্রাণে চাইছে জারা সম্পর্কে এমন ভাবনাগুলো মন থেকে তাড়িয়ে দিতে, ওগুলো যেন আরো জেঁকে বসছে । জারাকে সে অন্য চোখে কিছুতেই দেখতে চায় না, তাহলে মন কেন তার সাথেই এমন নির্দয় খেলায় মেতেছে ? সে তো কখনো কাউকে কষ্ট দেয়নি, আঘাত দেয়নি কারো মনে তবে তার মনটা কেন আজ এতোটা উতলা হয়ে উঠছে বারবার ?
হঠাৎ করে আড্ডায় আগ্রহ হারিয়ে ফেললো সাদাত । বললো –
মাথাটা একটু ব্যাথা করছে । ঘুমালে বোধহয় ঠিক হয়ে যাবে ।
চা করে আনবো ভাইয়া, চা খাবে ?
না রে চা খাবো না এখন ।
যা বাবা তুই যেয়ে একটু শুয়ে থাক । কাল অনেক রাত অবধি জেগে ছিলি তো , তাই মাথা ব্যাথা করছে বোধহয় । ঘুমালে ব্যাথা কমে যেতে পারে , তুই যা ।
সাদাত উঠে নিজের রুমে চলে এলো । জারা’র চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে সে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করলো ।
.
.
আদিত্যর এমন অস্থির বহুদিন লাগেনি । জারা চলে যাওয়ার পর থেকে সে এমনিতেই টেনশনে আছে তার ওপরে জারা’র সাথে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছে না । জারা নিজ থেকে দুই বার ফোন করেছিল তারপর আর কোনো সাড়াশব্দ নেই । ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার কোথাও সে জারাকে ধরতে পারছে না । এখানে কারো কাছে ফোন করে যে জারা’র কথা জিজ্ঞেস করবে সেই উপায়ও নেই । একটু পর পর সে অনলাইনে ঢুকে চেক করছে জারা এক্টিভ হচ্ছে কি-না । জারা’র কোনো বন্ধুবান্ধবের মোবাইল নাম্বারও তার কাছে নেই ।
তিনদিন অপেক্ষার পরে যখন জারা’র ফোন এলো আদিত্য তখন কথা বলার মুডে নেই । পর পর দুই রাত না ঘুমিয়ে কেমন যেন ঘোরের মধ্যে আছে । জারা’র ফোনটা রিসিভ করে ধমক দিয়ে উঠলো আদি –
কী ব্যাপার তোমাকে ফোনে পাচ্ছি না কেন আমি ? কী করছো ওখানে ? কিসের এতো ব্যস্ততা তোমার ?
আরে বাবা এতোদিন পরে ফোন করলাম আর তুমি এমন করে কথা বলছো কেন আমার সাথে ?
ফালতু কথা বাদ দাও, অফ লাইন কেন ছিলে সেটার উত্তর দাও আগে ।
জারা একটু সময় নিয়ে তারপর বললো –
শোনো আদি আমি নতুন একটা জায়গায় এসেছি । আব্বু, মা, ভাইয়া আর চাচার ফ্যামিলির সবাই আছে আমার চারপাশে । তুমি সেদিন আমাকে বারবার ফোন করেছো, ম্যাসেজ পাঠিয়েছো । মা’র হাতে মোবাইলটা যেতে যেতেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেয়েছে । আমি তো ফোনে তোমার সাথে যোগাযোগ করছিই আর আমি তো তোমাকে নিষেধ করেছি আমাকে ফোন করতে । সময় সুযোগ মতো আমি নিজেই তোমার সাথে যোগাযোগ করবো । তুমি কী আসলেই সিচুয়েশনটা বুঝতে পারছো না ? না-কি ইচ্ছে করে আমাকে বিপদে ফেলার জন্য এমন করছো বল তো ?
আমি এতোকিছু বুঝি না, তুমি অফ লাইন থাকতে পারবে না বলে দিলাম ।
আদি তোমার সমস্যাটা কী ! তোমাকে আগেও বলেছি, আমাকে এভাবে ধমক দিয়ে কথা বলবে না । মাঝে মাঝে না তোমাকে কেমন যেন অন্য রকম মনে হয় । মনে হয় এই তোমাকে আমি চিনি না ।
আদির হঠাৎ মেজাজ ঠান্ডা হয়ে গেল । সে বুঝতে পারলো যে জারা’র সাথে একটু বেশি বেশিই করা হয়ে যাচ্ছে । এতো উতলা হওয়ারও কী আছে কিন্তু তার মনে যে কতো আজব আজব খেয়াল আসছে জারাকে নিয়ে । সে বললো –
সরি জারা, আসলে তিনদিন কখনো অপেক্ষায় থাকিনি তো তাই মনে হচ্ছিল তোমার খারাপ কিছু হলো না তো আবার ?
আমি ঠিক আছি, সবাই ঠিক আছে আর তুমি আমাকে একদম ফোন করবে না । যখন ফোন করার আমিই করবো ।
এখন সবাই কোথায় ? এতোক্ষণ যে কথা বলছো কেউ শুনতে পাচ্ছে না ?
না, আমি এখন রুমে আছি । সবাই লিভিংরুমে গল্প করছে ।
চলে আসো না জারা প্লিজ ।
কী ! মাত্রই তো আসলাম । এত্ত ভালো লাগছে এখানে আসার পর থেকে তোমাকে কী বলবো ।
আদির মেজাজটা আবার খারাপ হয়ে গেল । বললো –
হুম তুমি ওখানে ফুর্তি করবা আর আমি এখানে অপেক্ষা করতে করতে মারা যাবো ।
ফুর্তি করবো মানে কী ! আদি এগুলো কী ধরণের কথাবার্তা ? তুমি না মাঝে মাঝে কেমন করে যেন কথা বলো ! মনে হয় যে তোমার ভেতর অন্য একটা তুমি আছে । আমার এমন কেন মনে হয় বলো তো ?
সরি সরি আর বলবো না । আমি আসলে তোমাকে না দেখতে পেয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছি ।
আমি তো পালিয়ে যাচ্ছি না, বেড়ানো শেষ হয়ে গেলে চলে আসবো । তুমি যদি এভাবে আমার সাথে কথা বলো তাহলে আমার বেড়াতে, কিছু করতে ভালো লাগবে না । এই কয়টা দিন তো দেখতে দেখতেই কেটে যাবে । ঠিক আছে এখন রাখছি, আমি পরে ফোন করবো তোমাকে ।
এতো তাড়াতাড়ি কেন রাখবে ? আরো কিছুক্ষণ কথা বলো জারা ।
না আর কথা বলা যাবে না । আমি আপুকে ফোন করবো বলে রুমে এসেছি । এখন আপুকে ফোন করতে হবে নইলে মা সন্দেহ করবে ।
আবার কখন ফোন করবে বলো ?
এখন তো বলতে পারছি না , সুযোগ হলেই আমি ফোন করবো, বললাম তো ।
হতাশ হয়ে আদি বললো –
আচ্ছা ঠিক আছে , আমি তোমার ফোনের অপেক্ষায় থাকবো সারাক্ষণ ।………………….…