এক জীবনে অনেক জীবন পর্ব ১১

#এক_জীবনে_অনেক_জীবন(১১)
**********************************

দেশ থেকে আসার আগেই তাবাসসুম প্ল্যান করে এসেছিলেন এবার কোথায় কোথায় বেড়াবেন । নায়াগ্রা ফলস এর আগে দু’বার দেখা হয়েছে তাই এবার বেড়ানোর তালিকায় ওটা রাখেননি । জারা’র খুব শখ গ্রান্ড ক্যানিয়ন দেখার আর ওয়ান্ডারল্যান্ড যাওয়ার তাই এবার ওখানে যাবেন বলে আগেই ঠিক করেছেন । আসার পর শাফিন বললো আমিষ ভিলেজে একদিন নিয়ে যাবে । এই সম্প্রদায় সম্পর্কে তিনি পত্র পত্রিকা পড়ে যতটুকু জেনেছেন, তাতে ভীষণ আগ্রহ জন্মেছে সরাসরি তাঁদের জীবনযাপন দেখার । তাঁর দেবরের বাচ্চারাও ওয়ান্ডারল্যান্ড যাওয়ার বায়না ধরেছে । তাবাসসুম দেবরের বউকে বললেন বাচ্চারা যেহেতু যেতে চাইছে তাহলে তাঁরা প্রথমে ওয়ান্ডারল্যান্ডেই যাবেন তারপর বাকিগুলোয় ।

জারাকে একটু আগে দেখেছিলেন ব্যাক ইয়ার্ডে দেবরের দুই ছেলেমেয়ের সাথে । বারান্দা থেকে উঁকি দিয়ে দেখলেন ওখানে এখন কেউ নেই । তাবাসসুম জারা’র খোঁজে রুমে এসে দেখলেন রুমেও কেউ নেই । বিছানায় জারা’র এলোমেলো জামাকাপড় দেখে বিরক্ত হলেন একটু । মেয়েটা কবে যে একটু গোছানো হবে কে জানে ! তিনি বিছানায় বসে মেয়ের জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে দিতে লাগলেন । একটা জামা ভাঁজ করার জন্য হাতে নিতেই ভেতর থেকে জারা’র মোবাইলটা বের হয়ে আসলো । দেখো মেয়ের কান্ড ! কিসের ভেতর মোবাইল রেখে গেছে । মোবাইলটা নিয়ে পাশে রেখে টুকিটাকি জিনিসপত্রগুলো ব্যাগে ভরে ফেললেন । হঠাৎ ম্যাসেঞ্জারে কল আসতেই দেখলেন রোজার ফোন । একটু আগেই রোজার সাথে তাঁর কথা হয়েছে । মেয়েটা ভীষণ মন খারাপ করছে, সবাই মিলে এখানে মজা করছে অথচ সে থাকতে পারলো না সবার মাঝে । মেয়েটাকে সাথে নিয়ে এলেই ভালো হতো । বেচারি একেবারে অস্থির হয়ে গেছে । কিছুদিন আগেই মেয়ে জামাই বেড়িয়ে গেল দেখে তিনি আর ওদের আসার কথা বলেননি । তাবাসসুম কল রিসিভ করলেন । রোজার কন্ঠে খুব তাড়াহুড়ো –

হ্যালো জারা ছবি পাঠিয়েছি দেখেছো ?

জারা নেই এখানে । কিসের ছবি পাঠিয়েছো তুমি ?

ওহ মা, মা আমি ছবি পাঠিয়েছি, জারাকে দেখতে বলো । ভিক্টোরিয়া সিক্রেটস এর এই জিনিসগুলো মনে করে ওকে কিনতে বলো, ঠিক আছে ?

আচ্ছা কিনে নেবো । তুমি কী করছো এখন?

সিয়ামের সাথে বাইরে যাবো একটু পরে । ঠিক আছে মা রাখছি এখন । ফিরে এসে কথা বলবো আবার ।

রোজার সাথে কথা শেষ করে ছবি দেখলেন কী জিনিস নিতে বলেছে মেয়ে । মোবাইলটা রেখে দিয়েও কী মনে করে আবার হাতে নিলেন । বড় আপার সাথে কয়েকবার কথা হলেও ছোট আপার সাথে কথা হয়নি একবারও । ছোট আপা তো ম্যাসেঞ্জার, ফেসবুক কিছুই ইউজ করে না তাই ইচ্ছে হলেও বড় আপার মতো যখন-তখন ওকে পাওয়া যাচ্ছে না এখানে আসার পর থেকে । সানজিদার নামটা খুঁজতে যেয়ে দেখলেন রোজার সাথে কথা বলার আগে দূরন্ত পথিক নামের আইডির সাথে কনভারসেশন হয়েছে জারা’র । তিনি বুঝতে পারেন না মানুষ নিজের এতো সুন্দর নাম বাদ দিয়ে এমন অদ্ভুত কিম্ভুত নাম কেন ইউজ করে ! নামে বুঝার কোনো উপায়ও নেই এটা কী মেয়ে না ছেলে না-কি অন্য কোনো কিছু । কৌতূহল থেকেই তিনি নামটার ওপর ক্লিক করলেন । কিছুক্ষণ আগে জারা কথা বলেছে এর সাথে । ওর কোনো বন্ধু হবে হয়তো । স্ক্রল করে ওপর দিকে যেতে যেতে দেখলেন বেশ কিছু লেখালেখি , সবই আজকের । আজকের আগে আর কোনো কিছু নেই । ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লেখা পড়তে তাঁর খুব বিরক্ত লাগে তবুও তিনি কৌতূহল থেকেই পড়তে শুরু করলেন । শুরুর দিকের কথাগুলোয় ঠিক বুঝতে পারছিলেন না কার সাথে কথা হয়েছে জারার । পড়ার মাঝামাঝিতে এসে হঠাৎ গরম লেগে গেল তাঁর । জারা লিখেছে –

আদি তোমার এই হঠাৎ রেগে যাওয়া আমার একদম ভালো লাগে না ।

আদি মানে কে ! এ কী সেই ছেলেটাই, আদিত্য ? জারা তো বলেছিল সে ছেলেটার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে । অস্থিরতায় হাত কাঁপতে লাগলো তাবাসসুমের । আবারও লেখায় চোখ রাখলেন তিনি –

বেশ কয়েকবার সরি লেখা , কয়েক রকম লাভ স্টিকার দেয়া ।

এগুলো দেখে খুব লজ্জা আর অস্বস্তি লাগছে তাঁর । তিনি কী করবেন এখন ? পড়বেন না মোবাইলটা অফ করে রেখে দেবেন এই দ্বিধা কাটিয়ে আবার চোখ রাখলেন স্ক্রীনে । এরপর লেখা –

তোমার ঘাড়ের তিলটাকে খুব মিস করছি, তোমার কোমরের ভাঁজ মিস করছি ।

এবার তাবাসসুমের মনে হলো তাঁর ঘাড় যেন গরম হয়ে উঠছে ভীষণ । মাঝে মাঝে প্রেসার আপ-ডাউন হলে তাঁর ঘাড়টা গরম হয়ে ওঠে । এখন ঠিক তেমনই ফিল হচ্ছে তাঁর । এই মেয়ে তো তাঁকে ভীষণ রকমের বোকা বানিয়েছে ! এ তো এই ছেলের সাথে রিলেশনটা শেষ করেইনি ।

মোবাইলটা হাতে নিয়ে সেভাবেই বসে রইলেন তিনি । হঠাৎ এমন একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন, একদম চিন্তাই করেননি তিনি । কায়সারের মুখটা সবার আগে মনে পড়লো তাঁর । কায়সার ভীষণ কষ্ট পাবে কথাটা জানতে পারলে । মেয়েটা এমন ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছে তাদেরকে ! কায়সারকে কোনোভাবেই এখন জানানো যাবে না কথাটা । কারো আসার শব্দ পেয়ে তিনি ঘুরে তাকালেন দরজার দিকে । জারা আসছে, হাতে এক বাটি আইসক্রিম । তাঁকে রুমে দেখে জারা একটু অবাক হয়ে বললো –

মা তুমি এখানে ! আর আমি তোমাকে ওপর নিচ সব জায়গায় খুঁজে আসলাম । চাচী তোমাকে খুঁজছিল একটু আগে ।

বিছানার জিনিসপত্র সব গোছানো দেখে জারা বললো –

সরি মা, সব একটু এলোমেলো হয়ে ছিলো । আমি এখনই সব গুছিয়ে ফেলতাম, তুমি তার আগেই সব গুছিয়ে দিয়েছো । থ্যাংক ইউ মা । আইসক্রিম খাবে, বলেই জারা বাটিটা তাবাসসুমের দিকে এগিয়ে দিলো ।

মেয়ের কথার উত্তর না দিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন –

তুমি আমার সাথে আর কী কী মিথ্যে বলেছো বলো তো?

আমি আবার কখন মিথ্যে বললাম ?

তুমি মিথ্যে বলোনি আমার সাথে ? জারা তুমি গেম খেলা শুরু করেছো আমার সাথে ।

মা তুমি এমন করছো কেন ? কী করেছি আমি?

তাবাসসুম নিজের আবেগ আর রাগকে সংযত করার চেষ্টা করলেন । ভীষণ কান্না পাচ্ছে তাঁর কিন্তু এখানে এখন কোনো রকম সিনক্রিয়েট করা যাবে না । কাউকে জানতে দেয়া যাবে না ব্যাপারটা । মোবাইলটা জারার দিকে এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন –

এটা কী ?

এটা আবার কী, আমার মোবাইল এটা ।

দূরন্ত পথিক কে জারা ?

কিসের দূরন্ত পথিক ? কী বলো মা বুঝি না তো ।

বুঝতে পারছো না কার কথা বলছি ?

জারা খুব অবাক হয়ে চেয়ে আছে তাবাসসুমের দিকে । কিছু যেন বুঝতে পারছে না । মা কিসের কথা বলছে তাকে ? সে তো আদিত্যর সাথে কথা বলে আর চ্যাটিং শেষে সব কনভারসেশন মুছে দেয় সবসময় । আদির আইডিটা ব্লকও করে দিয়েছে যাতে আদি তাকে নক করতে না পারে । তাহলে মা এই নামটা জানলো কেমন করে ! সে একদম নার্ভাস না হয়ে খুব স্মার্টলি জিজ্ঞেস করলো –

কী বলো মা , তুমি কোনো কিছু খুঁজছো, দূরন্ত পথিক নামের কোনো কিছু ?

থাপড়িয়ে তোমার দাঁতগুলো ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে আমার । এতো সাহস হয়েছে তোমার ! এভাবে বোকা বানিয়ে যাচ্ছো আমাদের ? এটার মধ্যে কী লেখা এগুলো ? এটা সেই ছেলেটা না? সেই বদমায়েশটা ।

জারা আইসক্রিমের বাটিটা টেবিলে রেখে ছোঁ মেরে তাবাসসুমের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে সাথে সাথে ম্যাসেঞ্জার চেক করলো । ম্যাসেঞ্জারে ঢুকেই আদির আইডি দেখে শরীরটা ঝিমঝিম করে উঠলো জারা’র । এটা কেমন করে হলো ! সে কথা শেষ করেই কনভারসেশন মুছে তারপর অন্য কাজ করে । হঠাৎ মনে পড়লো, আদিত্যর ফোন রাখতে না রাখতেই আপু তাকে ফোন দিয়েছিলো । আপুর সাথে কথা শেষ করে চাচীর ডাক শুনে সে ফোনটা রেখে চলে গিয়েছিলো । এই তাড়াহুড়োর মাঝেই ভুলটা সে করে ফেলেছে । জারা’র খুব রাগ হলো নিজের ওপর । মনে মনে ভাবলো, এখন মোটেও ভয় পাওয়ার বা ঘাবড়ে যাওয়ার সময় না । উল্টো রাগ দেখিয়ে তাবাসসুমকে জিজ্ঞেস করলো –

মা তুমি আমার মোবাইল চেক করেছো কেন ? কারো পারমিশন ছাড়া এভাবে চুরি করে মোবাইল চেক করা খুবই ছোটলোকি কাজ ।

চুপ একদম চুপ , বেহায়া মেয়ে কোথাকার । তুমি আমাকে ছোটলোকি আর ভদ্রলোকগিরি শেখাও ? এভাবে আমাদের বোকা বানিয়ে রেখেছো এটা কী কাজ হুম ? তুমি আমাকে বলেছিলে এর সাথে তোমার আর কোনো যোগাযোগ নেই তাহলে এ এখন এলো কোত্থেকে ? তোমাকে বারবার করে বলা হয়নি যে ছেলেটা ভালো না ?

মা তুমি একই কথা বারবার কেন বলছো ? তুমি তো আদিত্যকে দেখনি তাহলে কেন ওর সম্বন্ধে তোমার এতো খারাপ ধারণা ?

আরাফাত যতটুকু ইনফর্মেশন দিয়েছে তাতেই বুঝেছি, ছেলেটা খারাপ । তোমাকে আমি অনেক ভালোভাবে বুঝিয়ে বলেছিলাম জারা এরকম হঠাৎ পরিচয়ের সম্পর্কগুলো কখনো ভালো হয় না, হতে পারে না । এতো করে সবাই বুঝিয়ে বলার পরও তুমি এই ছেলেটাকে ছাড়তে পারোনি ! কেন জারা ?

আগে বলো আরাফাত কে ?

তোমার জানতে হবে না আরাফাত কে । শুধু জেনে রাখো এই ছেলে আরাফাতকে তার এড্রেসও ভুল দিয়েছে আর মোবাইল নাম্বারও ভুল দিয়েছে । আমরা পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি এই নামের কোনো ছেলে ওখানে থাকেই না । বাদ দাও আমি তোমাকে এতো কথা এক্সপ্লেইন করছি কেন ? তুমি শুধু জবাব দাও কেন আমাদের সাথে মিথ্যে বলেছো ?

তোমরা আমাকে বাধ্য করেছো মিথ্যে বলতে । আদি মোটেও খারাপ ছেলে না । ওকে আমি খুব ভালো করে চিনি ।

আমার এখন ইচ্ছে হচ্ছে……. দাও ফোন দাও । এই মোবাইল তুমি আর ধরবে না । আর কোনো যোগাযোগ করতে পারবে না ঐ ছেলের সাথে । কী হলো মোবাইলটা দাও ।

মা তুমি খুবই হাস্যকর কথা বলছো । আমি আমার মোবাইল তোমাকে কেন দেবো ?

কারণ তোমার খুব বেশি বাড় বেড়েছে । ঢাকায় যেয়ে আমি তোমার ব্যবস্থা করছি দাঁড়াও । মোবাইল দাও জারা ।

আমি তোমাকে মোবাইল দেবো না মা ।

আমি তোমার আব্বুকে ডাকবো, বলবো সবকিছু ?

ডাকো, সেটা তোমার ইচ্ছা । তুমি নিজেই বলো যে আব্বু বেশি স্ট্রেস নিতে পারে না এখন তুমিই অকারণে আব্বুকে স্ট্রেস দিতে চাইছো ।

জারা ! এতোটা অসুস্থ হয়ে গেছো তুমি ! তোমার কী মাথাটা পুরো নষ্ট হয়ে গেছে ? তুমি বুঝতে পারছো তুমি কীভাবে কথা বলছো আমার সাথে ?

আমি বললাম তো আমি কোনো অন্যায় করিনি মা ।

জারা আমি তোমাকে শেষ বারের মতো বলছি মোবাইলটা দাও । এখানে এই বিষয়টা নিয়ে আমি আর একটা কথাও বলতে চাই না ।

মা তুমি কী ভেবেছো তুমি আমার মোবাইলটা নিয়ে নিলেই সব শেষ হয়ে যাবে?

তাবাসসুম বুঝতে পারছেন না তিনি এখন কী করবেন । তাঁর হাত-পা সব যেন অসাড় হয়ে যাচ্ছে । খুব ইচ্ছে হচ্ছে ছুটে গিয়ে মেয়েটার দু’গালে ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে দিতে । তাঁর মেয়ে এতোটা বেয়াদব তো কোনোদিনও ছিল না । এই কী সেই জারা যার বিছানায় এখনো পুতুল সাজানো থাকে, এখনো দুপুরে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকা তাঁর আদরের জারা কী এই মেয়েটা !

তাবাসসুমের খুব অসহায় লাগতে লাগলো । কী করে মেয়ের মাথা থেকে এই ছেলেকে সরাবেন বুঝতে পারছেন না তিনি । কায়সার বা শাফিনকে এই বিষয়ে কিছু বললে ওরাও টেনশন আর মন খারাপ করবে । জারার হাত থেকে মোবাইলটা নেয়ার জন্য উঠতে যাবেন তখনই দেবরের বউ এসে রুমে ঢুকলো । তাবাসসুমকে দেখে স্বর্ণা বললো –

ভাবি আপনি এখানে আর ভাইয়া আপনার অপেক্ষায় বসে আছে । আচ্ছা কোনটা আগে কনফার্ম করবো গ্রান্ড ক্যানিয়ন নাকি…….

তাবাসসুমের এখন কোনো কিছু মাথায় ঢুকছে না । কী বলতে কী বলে ফেলবেন ঠিক নেই । দেবরের বউ বা অন্য কাউকেই তিনি বিষয়টা বুঝতে দিতে চান না । তাড়াতাড়ি বললেন –

স্বর্ণা তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেভাবেই করো ।

বাচ্চারা অবশ্য ওয়ান্ডারল্যান্ডে যেতে চাইছে আগে ।

তোমরা যেটা ভালো বোঝো প্লিজ স্বর্ণা…..

ভাবী আপনার কী শরীর খারাপ লাগছে, এতো ঘামছেন কেন ?

না না খারাপ লাগছে না । মাঝে মাঝে এমন হয় আমার । কাল অনেক রাত পর্যন্ত শাফিনের সাথে গল্প করেছি তাই ঘুম একটু কম হয়েছে । একটু ঘুমালেই ঠিক হয়ে যাবে ।

ঠিক তো ? অন্য কিছু না তো আবার ?

আরে না না, অন্য কী হবে ? তুমি যেয়ে ওদের সাথে কথা বলে কনফার্ম করে ফেলো । আমি এখানে একটু রেস্ট নেই । কিছুক্ষণ ঘুমালে সব ঠিক হয়ে যাবে ।

ঠিক আছে ভাবী ।

স্বর্ণা জারা’র দিকে তাকিয়ে দেখলো জারা মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে আছে । টেবিলে রাখা বাটির আইসক্রিম গলতে শুরু করেছে । স্বর্ণা বললো –

কী হলো জারা, আইসক্রিম তো গলে যাচ্ছে । খাচ্ছো না কেন ? বাটিটা নিয়ে চলে এসো আমরা লিভিং রুমে যেয়ে বসি । মা’কে একটু ঘুমাতে দাও ।

জারা আইসক্রিমের বাটিটা তুলে নিয়ে স্বর্ণার পেছন পেছন বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে তাবাসসুম ধমক দিয়ে বললেন –

জারা মোবাইলটা দিয়ে যাও ।

স্বর্ণা জিজ্ঞেস করলো –

এটা কী আপনার মোবাইল ভাবী ? শ্রেয়ার হাতে একটা মোবাইল দেখলাম । ও বললো ওটা আপনার মোবাইল । আমি আরো ওকে ধমক দিয়েছি আপনার মোবাইল ধরেছে বলে ।

তাবাসসুম কিছু বললেন না । জারা বললো –

এটা আমার মোবাইল চাচী । মা গেমস খেলার জন্য চাচ্ছে ।

আপনিও মোবাইলে গেমস খেলেন ? আমিও সময় পেলেই গেমস খেলি । পাজল্ গেমসগুলো আমার ভীষণ ভালো লাগে । আপনি কোন গেমস খেলেন ভাবী ? না না এখন মা’কে মোবাইল দিও না । এখন গেমস খেললে আপনার রেস্ট হবে না । আপনি একটু ঘুমান ভাবী । দরজাটা টেনে দিয়ে যাচ্ছি । এই জারা চলো চলো সবাই অপেক্ষা করছে ।

তাবাসসুম অসহায় চোখে চেয়ে দেখলেন জারা স্বর্ণার সাথে বেরিয়ে গেল রুম থেকে ।

.
.

বেশ কিছুদিন যাবৎ নিলুফারের হাঁটুতে ব্যাথা । এমনিতে তেমন ব্যাথা থাকে না তবে বসা অবস্থা থেকে উঠতে গেলে তখন বুঝতে পারেন ব্যাথার তীব্রতা আবার নামাজ পড়ার সময়ও ব্যাথাটা বেশ ভোগায় । এরকম হালকা পাতলা অসুস্থতায় নিলুফার নিজেই নিজের ডাক্তার । মাথা ব্যাথা, পেট ব্যাথা, হাড়ে ব্যাথাসহ আরো বেশ কিছু ব্যাথার ঔষধ তাঁর ঔষধের বক্সে সবসময় রাখা থাকে । যখন যেটা প্রয়োজন বের করে খেয়ে নেন ঝটপট । দু’চার দিন পর ব্যাথা এমনিতেই ভালো হয়ে যায় । একবার ডাক্তারের কাছে গেলেই সবকিছু মিলে কমসেকম দু’হাজার টাকার ঝক্কি । এতোগুলো টাকা চলে গেলে বুকের ভেতরটা খচখচ করে তাঁর । তাই পারতপক্ষে তিনি ডাক্তার আর হসপিটাল এড়িয়ে চলেন । এবারও হাঁটুর ব্যাথায় পেইন কিলার খাওয়া শুরু করেছেন । তাতে ব্যাথাটা একটু কমে কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার বেড়ে যায় ।

সাদাত বিষয়টা খেয়াল করলেও নিলুফার এটা-ওটা বলে পাশ কাটিয়ে গেলেন কয়েকদিন ।

নিলুফার তখন মাত্র নামাজ শেষ করেছেন । উঠে দাঁড়াতে যেয়ে ব্যাথায় একেবারে কুঁকড়ে গেলেন তিনি । সাদাত বারান্দার ফুল গাছে পানি দিচ্ছিলো । সে তাড়াতাড়ি এসে মা’কে ধরে বিছানায় নিয়ে বসালো । বললো-

কোথায় লাগলো মা, কোমরে ব্যাথা পেলে না-কি ?

না কোমরে না । হাঁটুর ব্যাথাটা ভালোই হচ্ছে না ।

সাদাত একটু রাগ করেই বললো –

মা তোমার তো ভালোই ব্যাথা হাঁটুতে । তোমাকে যতবারই জিজ্ঞেস করেছি তুমি বলেছো হালকা শরীর ব্যাথা, ঠিক হয়ে যাবে । এতো ব্যাথা সহ্য করছো কী করে বলো তো মা ?

আরে ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে ।

না না, একবার ডাক্তারকে দেখিয়ে নেয়া দরকার । ডাক্তার যা বলেন সেভাবে ওষুধ খেতে হবে ।

ব্যাথার ওষুধ তো সব একই । ঠিক হয়ে যাবে বললাম তো ।

ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেতে তোমার সমস্যাটা কোথায় বলো তো মা ?

ডাক্তারের কাছে গেলে খামোখা এত্তগুলা ওষুধ ধরিয়ে দেবে । এতো ওষুধ খেতে আমার ভালো লাগে না ।

ওষুধ তো কেউ ভালো লাগার জন্য খায় না, সুস্থ থাকার জন্য খায় । আমি ডাক্তারের সিরিয়াল নিয়ে রাখছি । কাল অফিস থেকে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো ।

ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না, আমি এমনিতেই ভালো হয়ে যাবো ।

মা এখন অল্প সমস্যা হচ্ছে , ওষুধ খেলে এটা ঠিক হয়ে যাবে । পরে ব্যাথা আরো বাড়লে তখন নতুন নতুন জটিলতা দেখা দেবে । কালকে আমরা ডাক্তারের কাছি যাচ্ছি ব্যাস ।

পরদিন অফিস শেষে বাড়িতে এসে মা’কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল সাদাত । হাসপাতালটায় সবসময় রোগীর ভীড় লেগেই থাকে । ঘণ্টাখানেকের অপেক্ষার পর ডাক্তারের রুমে ডাক পড়ে । আগে যতোবার এসেছে, এমনই হয়েছে প্রতিবার ।

বসার জন্য একটা চেয়ার খালি হতেই সাদাত মা’কে বসতে দিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো ।

এতো মানুষের ভীড় ঠেলে একটা ছেলে তার কাছাকাছি আসতেই চেহারাটা খুব পরিচিত মনে হলো সাদাতের । ছেলেটা হেঁটে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো –

কেমন আছিস দোস্ত ?

সাদাত মনে করার খুব চেষ্টা করছে ছেলেটাকে সে কোথায় দেখেছে ?

ছেলেটা হেসে বললো –

চিনতে পারিসনি মনেহয় ? এখানে কেন, কাকে নিয়ে এসেছিস ?

মা’কে নিয়ে এসেছি ।

আমি এসেছি আমার বোনকে নিয়ে । ওর কিডনিতে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে । প্রফেসর আবদুস সালামকে দেখাচ্ছি । তারপর বল কী অবস্থা, আছিস কেমন ?

সাদাত কোনোভাবেই মনে করতে পারছে না ছেলেটাকে সে কোথায় দেখেছে কিন্তু দেখেছে তো অবশ্যই । বোকা বোকা হাসি দিয়ে বললো –

ভালো আছি কিন্তু আপনাকে….…

চিনতে পারিসনি তাই তো ? তোর চেহারা দেখেই বুঝেছি । তুই তেমনই গুড বয় টাইপ রয়ে গেছিস । আগারগাঁও বয়েজ স্কুল, ইউনুস স্যারের কোচিং, মনে পড়ে ?

সাদাতের মনে পড়ে গেল হঠাৎ । বললো –

তুমি রফিক না ?……………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here