এক জীবনে অনেক জীবন পর্ব ১৪

#এক_জীবনে_অনেক_জীবন(১৪)
**********************************

গত ক’দিন ধরে আদিত্যর সাথে জারা’র মনোমালিন্য চলছে । জারা কোনোভাবেই আদিকে রাজি করাতে পারছে না তাবাসসুমের সাথে দেখা করার জন্য । জারা যতবারই জিজ্ঞেস করেছে দেখা করতে সমস্যা কোথায়, আদি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি । জারা তাই আদির ফোন ধরা ছেড়ে দিয়েছে ।

গতকাল রাত থেকে এই পর্যন্ত সাতচল্লিশটা মিসড কল উঠে আছে জারা’র ফোনে । আবারও রিং বাজতেই জারা তাকিয়ে দেখলো আদির কল । মোবাইলটা হাতে নিয়ে চেক করে দেখলো একটা নাম্বার ছাড়া সবগুলো কলই আদি করেছে । করুক গিয়ে । জারা মোবাইলটা রেখে রুবিকস কিউব মেলাতে লাগলো । একটু পরেই শুরু হলো ম্যাসেঞ্জারের টুংটাং । অনিচ্ছা সত্ত্বেও মোবাইলটা হাতে নিলো জারা । আদি লিখছে তাকে । খুব অনুনয় বিনয় করছে একবার ফোন রিসিভ করার জন্য । একটার পর একটা সরি স্টিকার পাঠিয়েই যাচ্ছে । ম্যাসেজ সিন করে কোনো রিপ্লাই না দিয়ে জারা নিজের কাজ করতে থাকলো ।

আবারো আদির ফোন । এবার জারা ফোনটা রিসিভ করলো । গম্ভীর গলায় বললো –

বারবার ফোন করছো কেন ?

তুমি আমার কল রিসিভ করছো না কেন ?

এখন তো রিসিভ করেছি । কী বলবে জলদি বলো ।

এতো জলদি কিসের ?

আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না ।

আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না !

না ।

তাহলে রেখে দাও ।

কথাটা শুনে জারার ভীষণ মেজাজ খারাপ হলো । আর কোনো কথা না বলে জারা লাইনটা কেটে দিলো ।

লাইনটা কেটে দেয়ার পরই জারা’র কেমন যেন লাগলো । এতোক্ষণের মন খারাপ আর রাগ হঠাৎ করে কমে গেল । সে খুব করে অপেক্ষা করতে লাগলো আদিত্যর ফোনের । প্রায় আধ ঘন্টা চরম অস্থিরতায় পার করার পর জারা যখন মোবাইলটা হাতে নিলো আদিকে ফোন করার জন্য ঠিক তখনই আবার আদির কল এলো । ফোনটা রিসিভ করে জারা চুপ করে রইল । আদি বললো –

কথা বলতে ইচ্ছে না করলে কল রিসিভ করলে কেন ?

আবার ফোন করেছো কেন ? বারবার বিরক্ত করছো কেন?

আর বিরক্ত করবো না । একটু পরে তো মরেই যাবো । তারপর বিরক্ত করার আর কেউ থাকবে না ।

মানে কী ?

তুমি এভাবে আমাকে ইগনোর করলে আমি তো মরে যাবো ই । লাস্ট আধ ঘন্টা আমি তো মরেই যাচ্ছিলাম প্রায় । মন বললো আরেকবার নক করে তোমাকে জানিয়ে যেতে, কতোটা ভালোবাসি তোমাকে ।

জারা আর রাগ ধরে রাখতে পারলো না । আদির এমন কথার ভঙ্গিতে হেসে ফেললো ফিক করে । তারপর বললো –

তুমি কী আমার কথাটা রাখবে না ?

কোন কথা ?

মা’র সাথে দেখা করো ।

আচ্ছা তুমি আমাকে একটা কথা বলো তো, আন্টি হঠাৎ আমাকে দেখতে চাইছেন কেন আর তুমিই বা এতো জোর করছো কেন ?

আমি চাই তোমাকে নিয়ে মা’র যে ভুল ধারণা আছে তুমি সেটা ভেঙে দাও । আমি সিওর তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর মা ওনার ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে আসবেন । প্লিজ একবার দেখা করো আদি ।

আর যদি আমাকে দেখার পর আন্টির ভালো না লাগে, তখন ?

তুমি আসো তো আগে । আমি জানি তোমার সাথে কথা বললে মা মুগ্ধ হয়ে যাবে । তুমি এতো সুন্দর করে কথা বলো , আর কিছু লাগে ইমপ্রেস করার জন্য ? তুমি শুধু শুধুই ভয় পাচ্ছো । তোমার সবকিছুই আছে, তোমার ফ্যামিলি নিয়ে তো মা’র আপত্তি হওয়ার কথা না । আপুর শ্বশুরও বিজনেস করেন । সেখানে তো কোনো প্রবলেম নেই তাহলে তোমার বেলায় কেন প্রবলেম হবে ? তুমি দেখা করতে কেন এতো ভয় পাচ্ছো ? প্লিজ আদি……

তুমি বলছো দেখা করবো ?

হ্যাঁ আমি বলছি । মা উল্টোপাল্টা কিছু বললে তো আমি আছি তোমার পাশে । কবে আসবে বলো ?

কোথায় আসবো ?

আমাদের বাসায় চলে আসো ।

পাগল ! বাসায় আসবো কেন ?

আচ্ছা আমি মা’কে জিজ্ঞেস করে তোমাকে জানাচ্ছি মা কোথায় দেখা করতে বলেন ।

আর যেখানেই হোক, বাসায় না জারা । এখন বাসায় আসা ঠিক হবে না ।

আদির সাথে কথা শেষ করে জারা তাবাসসুমের রুমে আসলো । তাবাসসুম তখন পত্রিকা পড়ছিলেন । জারা তাবাসসুমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো –

মা তুমি আদির সাথে দেখা করতে চেয়েছিলে, কবে কোথায় আসতে বলবো ওকে ?

আদি কে ?

আদিত্য ।

ওহ , আমার তো মনেই ছিল না । তাবাসসুম একটু চিন্তা করে বললেন –

পরশু বিকেলের দিকে আসতে বলো ।

কোথায় আসতে বলবো ?

ইয়েতে আসতে বলো, ঐ যে যমুনায় আসুক । ওখানে আমার কাজ আছে । একবারে কাজ শেষ করে দেখা করে আসবো ।

ঠিক আছে ।

জারা রুম থেকে বেরিয়ে গেলে তাবাসসুম অপলক চেয়ে রইলেন জারা’র যাওয়ার পথের দিকে । এই দেখা করতে যাওয়াটা কী ঠিক হচ্ছে, বুঝতে পারছেন না তিনি । অন্য কোনো উপায়ও দেখছেন না এছাড়া । আজকালকার বাচ্চাগুলো কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে । এদের এতো উদ্ধত আচরণ দেখে মাঝে মাঝে খুব অবাক হয়ে যান তিনি । নিজেদের বিষয়গুলো তাঁরা কখনোই লজ্জায় বলতেই পারেননি মা-বাবার সামনে আর তাঁর মেয়ে অবলীলায় কথাগুলো বলে বেরিয়ে গেল ! এটা কী অতি আধুনিকতার ফল ? এরা কী স্মার্ট হওয়ার সাথে সাথে আবেগহীন আর লজ্জাহীন হয়েও বড় হচ্ছে ? ঠিক বুঝতে পারেন না তাবাসসুম । কারণ তাঁর অন্য দুই বাচ্চাও তো এ যুগেরই । জারা’র চাইতে ওরা কতো বেশি ডিসেন্ট , কতো ধীরস্থির ।

তাবাসসুম একবার ভাবলেন দেখা করতে য়াওয়ার বিষয়টা কায়সারকে জানাবেন কিন্তু কয়দিন ধরে অফিসে কাজের ঝামেলায় কায়সার এমনিতেই টেনশনে আছে তাই তাঁকে আর বাড়তি টেনশন দিতে চাচ্ছেন না তাবাসসুম । তিনি জারাকে নিয়ে দেখা করার পর তারপর যা করার করবেন ।

.
.

সকাল থেকে বারবার ফোন করে আদিত্যকে এটা ওটা মনে করিয়ে দিচ্ছে জারা । মা’র সাথে কেমন করে কথা বলতে হবে, যে খাবারটা মা’র পছন্দ আদি যেন সেটাই অর্ডার করে মা’র জন্য, কোন কালারের শার্ট পরবে , ছেঁড়া জিনস এর কথা যেন আজকে সে ভুলে যায় আরো কতো হাবিজাবি হাবিজাবি । আবার মনে পড়তেই ফোন করলো জারা । আদি ফোন ধরে বললো –

সব মনে আছে আমার । সকাল থেকে যতোবার বলেছো তাতে সব মুখস্থ হয়ে গেছে কখনই । বলবো?

না না বলতে হবে না । একটা কথা বলা হয়নি । সেটার জন্যই আবার ফোন করলাম ।

আর কী বলার বাকি আছে ? কোনটা ?

শোনো আদি, আজ কিন্তু মানিব্যাগটা ভুলে ফেলে এসো না বাসায়, প্লিজ ।

ওহ এই কথা । আচ্ছা যাও মানিব্যাগটা এই এখনই পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম । আমি যাই আর না যাই, আমার মানিব্যাগ ঠিক পৌঁছে যাবে সময়মতো ।

তুমি রাগ করলে আদি ? মা’র সামনে যদি আমি বিল পে করি, ব্যাপারটা কেমন হয়ে যায় না ? হয়তো মা নিজেই বিল পে করে দেবেন কিন্তু তুমি মানিব্যাগটা সাথে রেখো । আমি চাই না তুমি মা’কে ভুল ধরার মতো একটাও সুযোগ দাও ।

ওকে ওকে ঠিক আছে । ছয়টার সময় আসছি তাহলে ।

হুম ।

ফোন রেখে জারা নিজের সাজগোজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল । কোন ড্রেসটা পরবে, মা’র সামনে আদির সাথে কী কথা বলবে, এগুলোর সবকিছু আরো একবার ঠিক করে নিচ্ছে সে ।

জারা মা’র রুমে একবার উঁকি দিয়ে দেখলো, তাবাসসুম বিছানায় শুয়ে আছেন । চোখ বোঁজা অবস্থায় মা’কে দেখে জারা ঠিক বুঝতে পারছে না মা কী ঘুমিয়ে আছে না-কি জেগে । কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর চলে আাসার জন্য ঘুরতেই তাবাসসুম বললেন –

কিছু বলবে ?

মা তুমি ঘুমাওনি ?

চোখ লেগে গিয়েছিল একটু । বলো ।

মা একটু পরে যেতে হবে, মনে আছে তো তোমার ?

হুম আমার মনে আছে । ঐ ছেলে আসবে তো ? সে কনফার্ম করেছে তোমাকে ?

জ্বি মা ।

ঠিক আছে যাও তৈরি হয়ে নাও । একটু পরে বেরোবো আমরা ।

মা তুমি কী আব্বুকে বলেছো?

কী কথা ?

এই যে আমরা দেখা করতে যাচ্ছি আদিত্যর সাথে ।

তোমার কী মনে হয়, তোমার আব্বুকে জানানো উচিত ছিল ? আসলে তোমার আব্বুরও দেখা প্রয়োজন তাঁর মেয়ে কাকে পছন্দ করেছে , ছেলেটা মানুষ হিসেবে কেমন । আমি তোমার আব্বুকে জানিয়ে দেই, অফিস থেকে সোজা যমুনায় চলে আসতে বলি ।

না না, মা প্লিজ আব্বুকে এখন বলো না । আগে তুমি ওর সাথে কথা বলে নাও তারপর আব্বুকে বলো ।

ঠিক আছে যাও ।

.
.

এতোদিনের বন্দী জীবন কাটিয়ে জারা আজ বাইরে আসতে পারায় ভীষণ খুশি । যদিও মা সাথে আছে, তাতে কী ? মা’কে নিয়ে তো সে আদির সাথেই দেখা করতে যাচ্ছে । আলাদা একটা উত্তেজনা কাজ করছে ভেতরে । মনটা খুব ভালো হয়ে আছে জারা’র । মা’কে লুকিয়ে-চুরিয়ে আদির জন্য অনেক জিনিস কিনেছিল সে শপিংয়ের সময় । আজ ব্যাগে ভরার সময় দেখলো ব্যাগটা একটু বেশিই বড় হয়ে যাচ্ছে । মা’র সামনে আদিকে এগুলো দিলে আদিও হয়ত অস্বস্তি ফিল করবে তাই জারা একদম ছোটখাটো জিনিসগুলো ছোট একটা ব্যাগে নিয়ে নিলো । বাকিগুলো রেখে দিলো আলমারিতে । পরেরবার যখন দেখা হবে তখন দিয়ে দেবে ।

ছয়টা বাজার একটু পর তারা পৌঁছালো যমুনায় । জারা আদিত্যর নাম্বারে ফোন করছে কিন্তু আদিত্য ফোন রিসিভ করছে না । এটা খুব বিরক্ত লাগে জারা’র কাছে । কাজের সময় ছেলেটা কখনোই ফোনটা রিসিভ করে না ।

তাবাসসুম মেয়ের কাছে জানতে চাইলেন আদিত্য কোথায় । জারা বললো –

আদিত্য ফোন রিসিভ করছে না ।

ঠিক আছে সমস্যা নেই । হয়তো রাস্তায় আছে । চলো তাহলে আমাদের কেনাকাটাগুলো সেরে ফেলি । এরমধ্যে ফোন করলে ওকে বলে দিও আমরা কোথায় আছি ।

তাবাসসুম তাঁর প্রয়োজনের জিনিসপত্র কিনে নিচ্ছেন দোকান ঘুরে ঘুরে । এদিকে জারা একটু পর পর ফোন করে যাচ্ছে আদিকে । জারা’র যেমন টেনশন হচ্ছে, তেমনি মেজাজটাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে । আজ যদি আদি না আসে মা তাকে আরো পেয়ে বসবে । একগাদা কথা শোনাতেও ছাড়বে না ।

কেনাকাটা যখন প্রায় শেষের দিকে তাবাসসুম জারাকে জিজ্ঞেস করলেন –

কোথায় আদিত্য , এসেছে না-কি ?

ফোন ধরছে না মা ।

চলো তাহলে, আমার আর অপেক্ষা করার সময় নেই । অলরেডি এক ঘন্টার কাছাকাছি হয়ে গেল আমরা এখানে এসেছি ।

কথার মাঝখানেই আদিত্যের ফোন আসলো । আদিত্যর সাথে কথা বলে জারা তাবাসসুমকে বললো –

মা আদি চলে এসেছে । ওকে আড়ং এর সামনে আসতে বলেছি ।

হুম ঠিক আছে ।

মা-মেয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল, একটা ছেলে সামনে এসে দাঁড়িয়ে তাবাসসুমকে সালাম দিয়ে বললো –

ভালো আছেন আন্টি ?

জারা বললো –

মা ও হচ্ছে আদিত্য । জারা লক্ষ্য করলো , আদিকে আজকে অন্যদিনের চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে ।

সালামের উত্তর দিয়ে তাবাসসুম ভালো করে ছেলেটাকে লক্ষ্য করলেন । তারপর বললেন –

চলো ওপরে বসে কথা বলি । তুমি একটু বেশি দেরি করে ফেলেছো । বেশি ব্যস্ততা না-কি ?

আদি বললো –

সরি আন্টি । আমি ইচ্ছে করে দেরি করিনি । আসলে আমি যখন বাসা থেকে বের হবো তার কিছুক্ষণ আগে আম্মু পড়ে যেয়ে পায়ে খুব জোরে ব্যাথা পেয়েছেন । একটা হাড়ও বোধহয় ভেঙে গেছে । এতোক্ষণ হাসপাতালে ছিলাম । আম্মুকে বাসায় রেখে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেল । আবারও সরি আন্টি ।

তোমার মা’র কোথাকার হাড় ভেঙেছে ?

ডান হাতের মনে হয় ।

আচ্ছা উনি পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছেন আর হাড় ভাঙলো হাতের । এটা কেন হলো ? কোন হাসপাতালে নিয়েছিলে ?

আমাদের বাসার কাছেই । তাহলে মনেহয় হাতেই ব্যাথা পেয়েছে । টেনশনে আমি ঠিক খেয়াল করতে পারিনি ।

একটা নাম তো থাকেই হাসপাতালের , তাই না ?

জ্বি , হলি ফ্যামিলি ।

হলি ফ্যামিলি ! এইসব ক্ষেত্রে পেসেন্টকে আসলে পঙ্গুতে নিয়ে যাওয়াটাই মনেহয় বেটার । আচ্ছা তোমাদের বাসাটা কোথায় যেন ?

জারা’র দিকে তাকিয়ে আদিত্য বললো –

আমাদের বাসা নিকুঞ্জে আন্টি ।

আচ্ছা হলি ফ্যামিলি তো মগবাজারের ওদিকে, তাহলে ? ঠিক আছে চলো, আমরা বসে কথা বলি ।

আন্টি আমাদের বাসার পাশের হলি ফ্যামিলি । আমাকে আসলে এক্ষুণি যেতে হবে । বাসা থেকে ফোন আসছে বারবার । আজকে আর থাকতে পারছি না আন্টি । প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না ।

আমার আসলে তোমার সাথে কথা বলা দরকার ছিল । আমার মেয়ে কাকে পছন্দ করেছে , তার পছন্দ কী রকম সেটা আমি জানতে চাচ্ছিলাম । তুমি এমনভাবে আসলে, বাসায় এতো সমস্যা বলছো , তোমাকে আটকেও রাখতে পারছি না । ঠিক আছে , সমস্যা তো আর বলে কয়ে আসে না । বসার দরকার নেই তাহলে । চলো তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমরা চলে যাবো । যেতে যেতে কথা হবে তোমার সাথে ।

না না,আন্টি । আমাকে ড্রপ করতে হবে না । আমার এক ফ্রেন্ড অপেক্ষা করছে আমার জন্য । ওর সাথে বাইক আছে । আন্টি প্লিজ কিছু মনে করবেন না । আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে , আমি আজ আসছি ।

আর কারোকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত সরে গেল আদিত্য ।

জারা কী করবে বুঝতে না পেরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো মা’র পাশে ।

.
.

বড় খালা কয়দিন ধরে ওনার পছন্দের আতরের জন্য ফোন করে যাচ্ছেন সাদাতের কাছে । আল হারামাইন থেকে আগেও একবার সাদাত আতর নিয়েছিল খালার জন্য । সেই আতরের বোতলটা কয়দিন ধরে আর খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি । এবার আতরের সাথে অ্যালকোহল ফ্রি বডি স্প্রেও নিতে বলেছেন ।

সাদাত খালাকে বলেছে, আজ অফিস শেষে আতর আর স্প্রে নিয়ে খালার বাসায় আসবে সে । অফিস শেষে সাদাত যমুনায় চলে এলো খালার জন্য আতর কিনতে । আতর আর স্প্রে নিয়ে সাদাত আড়ংয়ে ঢুকলো । সানজিদার খুব শখ ছোট ছোট জিনিস দিয়ে ঘর সাজানোর । সে কয়েকটা মাটির জিনিসপত্র কিনে নিলো । মা’র জন্য একটা টুল খুব পছন্দ হলো সাদাতের । কিনতে গিয়েও রেখে দিলো আবার । এটা নিয়ে এখন বড় খালার বাসায় যাওয়া দারুণ ঝামেলার হবে । তারচেয়ে অন্য আরেকদিন নেবে ।

কেনাকাটা শেষে বাইরে এসে জারাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাদাতের বুক ধুকপুক শুরু করলো । তার থেকে বেশ একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে জারা , পরনে রাণী কালারের একটা থ্রিপিস । দূর থেকেও মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকলো সাদাত । কী সুন্দর লাগছে দেখতে জারাকে । রাণী কালারটা যেন ওর জন্যই তৈরি হয়েছে । ছোট খালা আর জারা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে । সাদাত ছেলেটার মুখ দেখতে পাচ্ছে না । তার খুব ইচ্ছে করছে সামনে যেয়ে কথা বলতে, জারাকে সামনাসামনি একবার দেখতে কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো সাদাত । মন যতোদিন এতো উতলা হয়ে থাকবে ততদিন জারা’র থেকে দূরে সরে থাকবে সে । দূর থেকেই দাঁড়িয়ে ওদের দেখতে লাগলো সাদাত ।

কথা বলার মাঝখানে ছেলেটাকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখে অবাক হলো সে । এই ছেলে এখানে কী করছে ? সে কী খালার পরিচিত ? কী জানি, হতেও পারে । ……………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here