#এক_জীবনে_অনেক_জীবন(২১)
**********************************
কায়সার ঘরের ভেতর পায়চারী করছিলেন সাদাত না ফেরা পর্যন্ত । সাদাত আসা মাত্রই ওকে নিয়ে জারা’র রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন তিনি । তাবাসসুমকে কোনো কিছু জানানোর আগে তিনি নিজে বিষয়টা জানতে চান । সাদাতকে বসতে বলে কায়সার জিজ্ঞেস করলেন –
কী কী দেখলে বলো ? কোনো ইনফরমেশন বের করতে পারোনি ?
খালু ওদের বাসার সবার কথা শুনে মনে হলো, জারা’র বিষয়টা ওরা জানে না ।
তোমার এটা কেন মনে হলো ? তুমি জারা’র ভাই এটা জানার পর নিশ্চয়ই সতর্ক হয়ে গেছেন তাঁরা ।
না খালু , আমি ঐ বাড়িতে জারা’র ভাই হিসেবে যাইনি , রফিকের বন্ধু হিসেবে গিয়েছি । ওনারা একদমই বুঝতে পারেননি যে জারা আমার কেউ, তাছাড়া জারা’র খবরই তো ওনারা জানেন না । পুলিশ ওনাদের একটা ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে দিয়েছে । রফিকের মা নিজ থেকেই আমাকে বললেন, বাবা-ছেলের ঝগড়ার কারণে কয়দিন আগে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে সে । পুলিশ আসার কথাটা উনি নিজেই বললেন ।
বাড়ি ঘরের কী অবস্থা সাদাত ? ওরা মানুষ কেমন ?
একদম সাধারণ মধ্যবিত্ত যেমন থাকে তেমনই । একটু টানাটানির সংসার মনে হলো । রফিক কিছু করে না বলে বাসায় খুব অশান্তি ।
এমন একটা ছেলের পাল্লায় জারা কেমন করে পড়লো ? আমি জহিরকে এখনই ফোন দিয়েছিলাম । এখনো পর্যন্ত কোনো খবর নেই, মোবাইলটাও অফ আছে । ওরা ট্রেস করার চেষ্টা করছে । জহির বললো ও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ।
জহির আংকেল নিশ্চয়ই ওনার পুরো ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করবেন ।
ঐ বাড়িতে যেয়ে তাহলে কোনো লাভ হলো না ?
একটা লাভ হয়েছে । রফিক আর জারা’র খবর না পেলেও ওর বেস্ট ফ্রেন্ডের মোবাইল নাম্বার পেয়েছি । বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর রফিক না-কি ওখানেই উঠেছে ।
কোথায়, নাম্বারটা কোথায়, ফোন দিয়েছিলে ? নাম কী ঐ ছেলের, কোথায় থাকে ?
নাম তানভীর, কোথায় থাকে তা জানি না । ফোন দেইনি । আমি ভাবলাম আপনার সাথে কথা বলে তারপর ফোন দেবো ।
দাও দাও নাম্বারটা দাও তাড়াতাড়ি ।
খালু আমি কিন্তু ইচ্ছে করেই ফোন করিনি । সে তো রফিকের বন্ধু । কেমন মানুষ কে জানে? রফিকের মতো চতুর আর মিথ্যুক হলে তো এর কাছ থেকে কথা আদায় করা যাবে না । আপনি কী বলবেন আগে একটু ঠিক করে নেন ।
অসুবিধা নেই, নাম্বারটা বলো ।
সাদাত নাম্বারটা বের করলে কায়সার নিজের মোবাইলে নাম্বারটা টুকে নিয়ে ফোন করলেন ।
পরপর দু’বার রিং হয়ে থেমে গেলে কায়সার অস্থির হয়ে উঠলেন । বললেন –
আচ্ছা মানুষজন এমন কেন বলো তো ? আমি তো একটা প্রয়োজনেই ফোন করেছি । ফোনটা রিসিভ ই করছে না ।
হয়তো ফোন থেকে দূরে আছে । পাঁচ মিনিট পরে আবার ফোন করেন ।
ছোট খালাকে তো রাতের পর থেকে আর দেখেইনি সাদাত । খালার কী অবস্থা আল্লাহ ই জানেন, খালুর অবস্থা দেখে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে । একদিনের মধ্যে মনে হচ্ছে উনার বয়স কয়েক বছর বেড়ে গেছে ।
দশ মিনিট পরে ফোন করলে এবার তানভীর রিসিভ করলো । কায়সার বললেন –
আপনি কী তানভীর বলছেন?
জ্বি । আপনি ?
আপনি আমাকে চিনবেন না তবে আমি বিশেষ একটা প্রয়োজনে আপনাকে ফোন করেছি । আপনি কী রফিক নামে কাউকে চেনেন ?
তানভীর একটু সতর্ক হয়ে জিজ্ঞেস করলো –
কোন রফিক ?
প্লিজ আপনি না বলবেন না । আমি জানি আপনি রফিককে চেনেন । কলেজের সময় থেকে আপনারা বন্ধু । আমি শুনেছি আপনারা বেস্ট ফ্রেন্ড ।
আপনি কে বলুন তো ? আমার কাছে রফিকের কথা জানতে চাচ্ছেন কেন ?
আমি খুব বিপদে পড়ে আপনাকে ফোন দিয়েছি । আমি কোথাও কোনো আশার আলো দেখছি না গতকাল থেকে । এখন আপনি যদি আমাকে রফিকের খোঁজটা দেন, আমি খুব বেশি কৃতজ্ঞ থাকবো আপনার প্রতি ।
তানভীরের মনে হলো নিশ্চয়ই পুলিশ তার মোবাইল নাম্বার পেয়ে গেছে, এখন তাকে ধরার জন্য এই কৌশল নিয়েছে । সে বললো –
হ্যাঁ রফিক আমার বন্ধু । এমন আরো অনেক বন্ধু আছে আমার । মাঝে মাঝে দেখা হয়, আড্ডা হয় এই তো ।
শেষ কবে দেখা হয়েছিল ?
প্রায় মাসখানেক আগে ।
কিন্তু ওর বাসা থেকে যে বললো বাসা থেকে বের হয়ে সে আপনার এখানেই উঠেছে ।
তানভীর কী বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না । মিনা আপা তার নামটাই বললো পুলিশের কাছে ! রফিক ধরা পড়ার আগে সে-ই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল ! এতোটাই মন্দ কপাল তার । কান্না আসছে, ভীষণ কান্না আসছে তার । রাগে মাথার চুলগুলো ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে । সে একটু স্মার্টলি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করলো –
দেখেন স্যার অনেকেই অনেক কিছু বলে । ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য এর তার ওপর দোষ চাপায় কিন্তু তাই বলে তো সেই মানুষটা দোষী হয়ে যায় না, তাই না ?
না না আমি আপনাকে কোনো দোষ দিচ্ছি না । আমি শুধু এটুকু জানতে চাইছি রফিক এখন কোথায় আছে ? সে কী আপনার ওখানে আছে ?
আমার এখানে নেই আর কোথায় আছে সেটা তো আমি জানি না স্যার ।
আমি আপনাকে আবারো রিকোয়েস্ট করছি, আমি ভীষণ নিরুপায় হয়ে আপনার কাছে সাহায্য চাচ্ছি । এখানে আমার মেয়ের জীবন জড়িত ।
তানভীর একটু যেন তাজ্জব বনে গেল ! পুলিশের মেয়ে আবার এটার মধ্যে ঢুকলো কেমন করে রে বাবা ? এক জারা কী কম ছিল, এখন আবার পুলিশের মেয়ে ? হঠাৎ তার মাথায় ক্লিক করলো কথাটা –
আংকেল আপনি কী থানা থেকে বলছেন ?
না তো । আমি তো আমার বাসা থেকে বলছি । কেন বলেন তো ?
আপনি পুলিশ না ? প্রশ্নটা করেই তানভীরের মনে হলো, সে খুব বাচ্চা টাইপ একটা প্রশ্ন করে ফেলেছে । এমন করে কেউ জিজ্ঞেস করে না-কি ?
কায়সার তারচেয়েও বেশি অবাক হয়ে বললেন –
পুলিশ ! না তো । আমি কী পুলিশ নিয়ে কোনো কথা বলেছিলাম ? মনে পড়ছে না তো ।
আপনি তাহলে কে ? পরিচয়টা বলবেন প্লিজ তাহলে কথা বলতে সুবিধা হতো ।
আপনি তো আমাকে চিনবেন না । আমার নাম কায়সার । রফিকের সাথে আমার মেয়েটার পরিচয় ছিল তাই ওর খোঁজে ফোন দিয়েছিলাম ।
জারা ! আপনি জারা’র বাবা ! আংকেল আপনি জারা’র বাবা?
আপনি জারাকে চেনেন !
জ্বি চিনি তো ।
প্লিজ তাহলে এবার আমার ওপর একটু দয়া করে হলেও বলেন রফিক কোথায় আছে আর জারা কী ওর সাথে আছে ?
আংকেল আমি যে মনে মনে আপনাদের মোবাইল নাম্বার কতো খুঁজেছিলাম ।
আমাকে জারা’র খোঁজটা দেন বাবা । ও কী রফিকের সাথে আছে ? দু’দিন ধরে বাসার সবাই পাগলের মতো হয়ে আছে । আমি এখনো পর্যন্ত জানি না আমার মেয়েটা কোথায় ।
আংকেল আপনারা কিছু জানেন না ?
না । জারা কোথায় তানভীর ? সে এমনভাবে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে, আমরা কেউ কিছু অনুমান করতেই পারিনি । যাওয়ার সময় মোবাইলটাও রেখে গেছে যাতে আমরা তাকে ট্রেস করতে না পারি । আমি জানি এগুলো সব ঐ রফিকের বুদ্ধি । আমি আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না আমাদের মনের ভেতর কী হচ্ছে । জারা’র মা’কে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে । আমি সারাক্ষণই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, আমাকে যেন কোনো খারাপ সংবাদ শুনতে না হয় । আমার মেয়ের কিছু হলে…. না না আমি ওরকম ভাবতে চাই না, একদম না । জারা কোথায় তানভীর ? আমি কী ওর সাথে কথা বলতে পারি ?
আংকেল আমি খুবই সরি । এখানে একটা ব্যাপার ঘটে গেছে । আমি আগে থেকে জানলে কিছুতেই এটা হতে দিতাম না ।
জারা ভালো আছে তো ? ও কোথায় ?
আংকেল আপনি একটু শান্ত হয়ে বসেন । আমি আপনাকে সব বলছি । ভালো হতো ফোনে কথা না বলে সামনাসামনি কথা বলতে পারলে ।
আমার মেয়েটা ভালো আছে কি-না এটা আগে বলেন ।
জারা ভালো আছে ।
কায়সার যেন নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না । ছোটোবেলার পর আর কখনো কাঁদেননি তিনি । এখন হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন । বললেন –
সত্যি ভালো আছে তো ?
জ্বি ভালো আছে ।
আপনি ফোনেই বলেন, অসুবিধা নেই । আমি শুনছি ।
আংকেল আপনারা কী রফিক সম্পর্কে কিছু জানতেন না ?
না আমরা ছেলেটার সম্পর্কে সেভাবে কিছু জানি না । আমরা তো তাকে আদিত্য হিসেবে চিনি । এখন তো দেখছি তার নাম রফিক । শুনেছিলাম নিকুঞ্জে থাকে অথচ পুলিশ ঠিকানা দিলো শ্যামলীর ।
আপনি মনটা শক্ত করে আমার কথাগুলো শুনবেন । রফিক যে আদিত্য সেজে জারা’র সাথে রিলেশন করেছে সেটা যেমন জারা জানে না, আমরা বন্ধুরাও বিষয়টা জানতাম না । গতকাল রাতে আমি ঘটনা জানতে পেরেছি । জানার সাথে সাথেই বলেছি জারাকে বাসায় দিয়ে আসতে কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি ।
ওরা কী আপনার বাসায় আছে ? আমি আসবো জারাকে নিতে । প্লিজ এড্রেসটা দেন ।
না ওরা আমার বাসায় নেই মানে আমার বাসায় তো ওরা আসেইনি ।
তাহলে ?
ওরা উত্তরায় এসেছিল, আমাদের অন্য বন্ধুর বাসায় ।
এসেছিল মানে! এখন নেই ওখানে ?
আংকেল জারা আর রফিক গতকাল বিয়ে করেছে ।
কী করেছে, জারা কী করেছে ? কে বিয়ে করেছে ঠিক বুঝলাম না ।
তানভীর ফোনের এ পাশ থেকেই বুঝতে পারলো, কায়সার হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন । সে বললো –
আংকেল আপনি একটু শান্ত হয়ে আমার কথাটা শোনেন । আপনি এতো অস্থির হয়ে গেলে তো আমি আর কিছু বলতে পারবো না ।
কায়সার যেন নিজের কানে শোনা কথাটা বিশ্বাস করতে পারলেন না । এটা কী বললো ছেলেটা ! জারা বিয়ে করে ফেলেছে ! কীভাবে সম্ভব এটা ? তাঁর মনে হচ্ছে সামনের দুনিয়াটা যেন হঠাৎ দুলে উঠলো, সব কেমন টালমাটাল লাগছে । অনেক রকম খারাপ চিন্তা আসছিল তাঁর মনে কিন্তু জারা বিয়ে করে ফেলবে এটা তাঁর কল্পনায় বা ভাবনায় ছিল ই না । তাবাসসুমের চেহারাটা মনে পড়তেই বুকটা হিম হয়ে গেল তাঁর । তাবাসসুমকে তিনি খবরটা দেবেন কী করে ?
খালুর চেহারার হঠাৎ পরিবর্তনে সাদাত ভয় পেয়ে গেল । জারা’র কী তাহলে…. না সে অন্তত জারাকে নিয়ে খারাপ কিছু ভাবতে চায় না । সে জিজ্ঞেস করলো –
খালু আপনার কী খারাপ লাগছে ? পানি খাবেন ?
ওদিকে কায়সারের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তানভীর জিজ্ঞেস করলো –
আংকেল আপনি শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা ?
কায়সার যেন কোন গহীন অন্ধকারে তলিয়ে গিয়েছিলেন । বহু কষ্টে অন্ধের মতো হাতড়ে তীরে ফিরলেন মাত্র । কিছুটা ধাতস্থ হয়ে জিজ্ঞেস করলেন –
তুমি কী কনফার্ম ? কোথাও ভুল হচ্ছে না তো ?
তানভীর মনে মনে দুঃখের হাসি হাসলো । আংকেল শুধু কী কনফার্ম ! কপাল গুণে তো আমিই উকিল ছিলাম এই বিয়ের । সেটা জানতে পারলে তো আপনি আমাকে সেই রকম দৌড়ানি দেবেন । মুখে বললো –
জ্বি আংকেল ।
বিয়েটা কখন হয়েছে, কোথায় হয়েছে ?
বিয়ে ! জারা কী শেষ পর্যন্ত রফিককে বিয়ে…. সাদাতের শরীরে যেন কারেন্ট বয়ে গেল, মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো । জারা রফিককে বিয়ে করে ফেললো ! এভাবে নিজের সর্বনাশ করে ফেললো মেয়েটা !
আংকেল উত্তরাতেই হয়েছে সবকিছু ।
জারা কোথায় তানভীর ?
আংকেল সেটা আমি জানি না, সত্যি বলছি জানি না । আজ ভোরবেলায় রফিকের বড় বোন আমাকে ফোন করে জানালেন যে বাসায় পুলিশ এসেছিলো । আমি তখনই রফিককে বলেছি, ও যেন জারাকে বাসায় দিয়ে আসে কিন্তু.….
কিন্তু কী ?
তার পরপরই রফিক জারাকে নিয়ে চলে গেছে ।
কোথায় গেছে কিছুই কী বলে যায়নি ?
জ্বি না । ও সিএনজি নিয়ে এসে তড়িঘড়ি করে জারাকে নিয়ে চলে গেল । আংকেল আমি খুবই দুঃখিত । জারা’র জন্য আমি কিছুই করতে পারলাম না ।
জারা কী জানতে পারেনি রফিক যে আদিত্য সেজে ওকে বোকা বানিয়েছে? তুমি ওকে জানাতে পারতে তানভীর । তোমাকে তো আমার ভালোই মনে হচ্ছে । একটাবার শুধু মেয়েটাকে জানিয়ে দিয়ে আমাদেরকে একটা ফোন করে দিতে ।
আংকেল আমি একবার ভেবেছিলাম সেটা কিন্তু জারা’র সেফটির কথা চিন্তা করে আর সাহস পাইনি । রফিক যেমন ঠান্ডা মাথায় এতোদিন ধরে প্ল্যান সাজিয়েছে, জারা যদি সেটা জেনে যেতো তাহলে তো সে নিশ্চয়ই রিএক্ট করতো আর তখনই রফিক হয়তো ওর কোনো ক্ষতি করে ফেলতো ।
আচ্ছা তোমার সাথে আমার কীভাবে দেখা হতে পারে বলো ? আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছি ।
আংকেল আপনার বাসার এড্রেসটা দেন যদি কোনো প্রবলেম না হয় । আমি অফিস শেষে চলে আসবো ।
তোমার অফিস কোথায়?
কারওয়ান বাজার ।
কায়সার বাসার ঠিকানাটা তানভীরকে দিয়ে বললেন –
এর মধ্যে যদি কোনোভাবে কোনো খবর পাও, আমাকে জানিয়ো প্লিজ ।
জ্বি আংকেল অবশ্যই । আংকেল একটা রিকোয়েস্ট ছিল ।
বলো ।
আমার নামটা যেন মাঝখানে না আসে । এখানে আমার কিন্তু কোনো দোষ নেই ।
হুম ।
তানভীরের সাথে কথা শেষ করে সাদাতের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলেন কায়সার । বললেন –
তোমার কী হয়েছে, শরীর খারাপ লাগছে না-কি ?
না খালু ।
.
.
জারা কিছুতেই বুঝতে পারছে না এখানে আসার কারণটা কী । সে রফিককে জিজ্ঞেস করলো –
এটা কোন জায়গা, এখানে কেন আসলাম আমরা ?
এটা টাঙ্গাইল ।
হ্যাঁ সেটা তো সাইনবোর্ড দেখে বুঝতে পেরেছি কিন্তু আমরা এখানে কেন আসলাম, কেউ থাকে এখানে ?
বলবো, আগে বাসায় যেয়ে নেই তারপর সব বলবো ।
এখানে কার বাসা ? আদি তুমি কী আমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছো ?
মানে কী, আমি কী লুকাবো ?
আমার কেন যেন এমন ফিল হচ্ছে যে তুমি কিছু একটা তো হাইড করছো ই ।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে না থেকে কথাগুলো বাসায় যেয়ে বলি চলো । একটু আগেই নেমে যেতে হলো । উহ, এখানেও রাস্তা কাটার হাঙ্গামা ! আমি তো ভেবেছিলাম শুধু ঢাকাতেই রাস্তা কাটা থাকে সারা বছর । পাশের রোডেই আমার খালার বাসা । চলো একটু ঘুরে তারপর যেতে হবে ।
জারা আর কোনো কথা না বলে রফিকের পাশে পাশে হাঁটতে হাঁটতে পাশের রোডে চলে আসলো । শরীরটা খুব দুর্বল লাগছে তার । একটু শুতে পারলে ভালো হতো ।
চার তলায় উঠতে জারা’র হাঁপ ধরে গেল । দুর্বলতার কারণেই এমনটা হচ্ছে । একদম দাঁড়াতে পারছিলো না সে । রফিকের খালা এসে দরজা খুললেন । রফিকের সাথে জারাকে দেখে একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন –
কী রে কোত্থেকে এলি কোনো খবর না দিয়ে ? আয় আয় ভেতরে আয় । জারা’র দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন –
কে রে মেয়েটা ?
বলছি খালা, আগে বসতে দাও ।
খালা আর রফিকের সাথে যেয়ে ড্রইংরুমে ঢুকলো জারা । ওদের বসতে দিয়ে খালা ভেতরে চলে গেলেন ।
খালা চলে যেতেই ছোট একটা বাচ্চা এসে পর্দার আড়াল থেকে মুখটা বের করে জারাকে ভেঙচি কাটলো । জারা খুবই মজা পেলো বিষয়টাতে । সে হাতের ইশারায় বাচ্চাটাকে ডাকতেই সে নিমিষেই অদৃশ্য হয়ে গেল পর্দার আড়ালে । জারা রফিককে জিজ্ঞেস করলো –
আমরা এখানে কেন আসলাম আদি ? উনি কী তোমার আপন খালা ?
না, সীমা খালা আমার মা’র খালাতো বোন । লেখাপড়ার জন্য আমাদের বাসায় ছিলেন কয়েক বছর ।
আচ্ছা ।
আর ঐ যে বিচ্ছুটাকে দেখলে, ও হলো খালার ছেলে । খালার দুই ছেলেমেয়ে, মেয়েটা বড় । খালু দুবাইয়ে আছেন । এখানে খালা শাশুড়ি আর বাচ্চাদের নিয়ে থাকেন ।
তোমার খালা কী মনে করবেন আদি, আমরা যে এভাবে চলে এলাম ?
আরে কী মনে করবে আবার, কিছুই মনে করবে না । সীমা খালা আমাদের বন্ধুর মতো, অনেক আদর করেন আমাদের । তুমি একদম রিলাক্স হয়ে বসো । তুমি বরং শুয়ে থাকো, তোমাকে দেখতে খুব টায়ার্ড লাগছে । আমি খালার সাথে কথা বলে এখনই আসছি ।
জারাকে রুমে রেখে রফিক ভেতরে চলে গেল । জারা’র সত্যিই ভীষণ খারাপ লাগছিল কিন্তু অপরিচিত কারো বাসায় এসে কেমন করে শোবে, তাই বলে থাকলো সে ।
রফিক ভেতরে এসে রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখলো খালা রুটি বানাচ্ছেন । রফিককে দেখে সীমা খালা বললেন –
কী রে কী অবস্থা বল তো ? কিছুই তো বুঝলাম না । কোনো খবর না দিয়ে চলে এলি আর এই মেয়েটা কে তোর সাথে ?
খালা একটা কাজ করে ফেলেছি । তুমি একটু সামলে নাও প্লিজ ।
কী করেছিস, মেয়ে নিয়ে পালিয়েছিস না-কি ?
রফিক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো –
তুমি কী করে জানলে ?
কী করে জানলে মানে ! তুই কী সত্যি তাই করেছিস না-কি ? আমি তো দুষ্টামি করে বললাম ।
খালা আমরা বিয়ে করে ফেলেছি ।
সীমা আঁতকে উঠে বললেন –
কী বলিস তুই এগুলো ? তোর বাসায় জানে ?
কেউ জানে না খালা । হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে করে ফেলেছি ।
কীসের এতো তাড়া ছিল তোর শুনি ।
ওর ফ্যামিলিতে প্রবলেম করছিল খালা । ওর বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিল জোর করে তাই বাধ্য হয়ে বিয়েটা করতে হয়েছে আমাদের ।
হায় আল্লাহ তুই যে কখন কী করিস বুঝি না । সেদিন আপার সাথে ফোনে কথা হলো, আপা কতো কান্নাকাটি করলো তোদের বাপ-বেটার কথা বলে । তোর আব্বা সংসার চালানোর জন্য দোকান দিয়ে বসেছে আর তুই কোথায় সংসারের দায়িত্ব নিবি তা না করে বিয়ে করে আরো ঝামেলা বাড়িয়েছিস । তোর বাপ-মা শুনলে যে কী করবে আল্লাহ ই জানেন ।
আস্তে বলো খালা, জারা শুনতে পাবে তো ।
ওর নাম বুঝি জারা ? তোর মতো বদমাশের কপালে এতো সুন্দর মেয়ে কী করে জুটলো রে ?
খালা কী বলো না বলো সব বাজে কথা । আমি বদমাশ?
চুপ কর । খেয়েছিস কিছু ?
না খেতে দাও আমাদের ।
যা গিয়ে বস , আমি খাবার রেডি করে নিয়ে আসছি ।
রফিক ড্রইংরুমে এসে দেখলো জারা মাথা নিচু করে বসে আছে । সে এসে পাশের সোফায় বসে বললো –
আমার কী যে খুশি লাগছে তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না ।
আদি আমি আপুকে একটা ফোন করবো । বাসায় সবাই নিশ্চয়ই অনেক টেনশনে আছে । তাঁরা তো জানেই না আমি কোথায়, কীভাবে আছি । তোমার ফোনটা দাও ।
আমার ফোনটা তো অফ করে রেখেছি একটা কারণে ।
কী কারণে ?
তুমি সেটা বুঝবে না ।
আদি কালকে থেকে তুমি যেন কেমন করে যাচ্ছো আমার সাথে । আমি তো সবাইকে ছেড়ে তোমার কাছে চলে এসেছি তারপরও কেন এতো ভয় পাচ্ছো তুমি ?
ভয় পাবো কেন ! আমার ফোনে ব্যালেন্স নেই বলে ফোনটা অফ রেখেছি । ঠিক আছে আমি একটু পরে বাইরে যেয়ে রিচার্জ করে নিয়ে আসবো তখন ফোন কোরো আপুকে ।
জারা’র আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে করলো না । মেজাজটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে দেখে চুপ করে গেল সে ।
রফিকের খালা ওদের খেতে দিয়ে টুকটাক কথাবার্তা জিজ্ঞেস করছেন জারা’র ফ্যামিলি সম্পর্কে । জারা উত্তর দিচ্ছে আর অনিচ্ছা সত্ত্বেও অল্প করে খাবার নিয়ে খাচ্ছে । কথার মাঝখানে সীমা খালা জিজ্ঞেস করলেন –
রফিক তোর ঐ চাকরিটার খবর কী রে ? আপা বলছিল যে ভালো একটা চাকরি পেয়েও ঠিকমতো না-কি যাচ্ছিস না তুই ।
জারা খেয়াল করলো আদি সাথে সাথে কথা ঘুরিয়ে দিলো । বললো –
আচ্ছা খালা খালুর কোম্পানিতে যে ছাঁটাই চলছিলো সেটা বন্ধ হয়েছে ? তুমি তো খুব টেনশনে ছিলে, খালু দেশে ফিরে আসলে কী হবে এইসব নিয়ে ।
এইবারের মতো মনে হয় বেঁচে গেছে তোর খালু । যাদের চাকরি চলে গেছে কোম্পানি গতমাসে তাদের সবাইকে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে । খুব টেনশনে ছিলাম রে ।
এরপর জারা’র দিকে তাকিয়ে বললেন –
তুমি কিছু খাচ্ছো না কেন ? ভালো লাগছে না ।
জ্বর ছিলো তো তাই কিছু খেতে ভালো লাগছে না ।
অন্য কিছু বানিয়ে দেবো ?
না এটাই খাবো ।
খালা আবার রফিকের সাথে কথা শুরু করলেন আর জারা’র মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো, আদির খালাও তাকে রফিক ডাকছেন কেন, ওটা তো বন্ধুদের দেয়া নাম আর আদি কবে চাকরিতে ঢুকলো ! সে তো কিছুই জানে না এসবের । প্রশ্নগুলো মাথায় নিয়েই চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো জারা ।
তিন বেডরুমের ফ্যাটটা বেশ ছিমছাম করে গোছানো । জারা’র কাছে ভালো লাগলো বাসাটা ।
খাওয়া শেষ হলে সীমা খালা তাদেরকে একটা বেডরুমে নিয়ে আসলেন । জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়ে বললেন –
এই রুমটা তো খালি পড়ে থাকে সারাবছর । দিয়া ওর দাদীর সাথে ঘুমায় আর দীপ্তিকে নিয়ে আমি পাশের রুমটায় থাকি । তোরা আসাতে খুব ভালো লাগছে । অনেকদিন কেউ আসেনি রে থাকার জন্য । জারা তোমার কিছু প্রয়োজন হলে কিন্তু বলবে আমাকে । লজ্জা পেয়ো না যেন । মনে করো এটাই তোমার শ্বশুরবাড়ি । কথাগুলো বলে সীমা খালা হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন ।
খালা চলে যেতেই রফিক দরজা বন্ধ করে দিয়ে এসে জারাকে জড়িয়ে ধরে বললো –
শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকে পেলাম ।
নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে করতে জারা বললো –
তোমার খালা তোমাকে রফিক নামে ডাকলো কেন?
কোথায় খালা রফিক নামে ডাকলো ? তুমি ভুল শুনেছো ।
আমি ভুল শুনিনি । উনি তোমাকে রফিক বলেছেন আর তুমি কবে চাকরি শুরু করেছিলে ? আমি জানি না কেন ?
তুমি জ্বরের কারণে কী শুনতে কী শুনেছো তার ঠিক নেই । আমি কবে আবার চাকরি করলাম ?
সেটাই তো আমি জানতে চাইছি ।
এখন এসব কথা না জিজ্ঞেস করলে কী তোমার হচ্ছে না । বিয়ে করা বউটাকে এই পর্যন্ত একটু আদরও করতে পারলাম না । এখন আর কোনো কথা বলো না জারা । কথার জন্য সারাজীবন পড়ে আছে ।
রফিক আরো শক্ত বাঁধনে আটকাতেই জারা বললো –
আমার ভালো লাগছে না আদি ।
জারা’র চুলে নাক ডুবিয়ে রফিক বললো –
এখন কোনো কথা শুনবো না, এখন কোনো খারাপ লাগা চলবে না । এখন সময় শুধু ভালোবাসাবাসির ।
জারা’র অস্বস্তি কাটছে না । তার মাথায় সীমা খালার কথাগুলো ঠোকাঠুকি করেই যাচ্ছে । আদি কিছু তো একটা লুকাচ্ছে তার কাছে । সে জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো –
আমার ওষুধ খেতে হবে, জ্বরটা বোধহয় আবার আসছে । তুমি কখন মোবাইলে রিচার্জ করাবে ? আমি আপুর সাথে কথা বলতে চাই ।
রফিক হঠাৎ রাগ হয়ে গেল । ধমক দিয়ে বললো –
কী তখন থেকে একই কথা বলে যাচ্ছো ? তোমাকে বলিনি যে বাইরে গেলে রিচার্জ করে আনবো ? এমনিতেই টেনশনে আছি তার ওপরে তখন থেকে ঘ্যানর ঘ্যানর করেই যাচ্ছো । যত্তোসব ফালতু ।
জারা খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো –
কী বললে তুমি ! আমি ফালতু ?
তখন থেকে অকারণে কেন বিরক্ত করে যাচ্ছো ?
আমি অকারণে বিরক্ত করছি তোমাকে ? ঠিক আছে আমাকে তাহলে বাসায় দিয়ে আসো ।
রফিক অনেক কষ্টে রাগটাকে কন্ট্রোল করে বললো –
সরি জারা, এমনিতেই মন ভালো নেই । সকালে বাসায় পুলিশ এসেছিল । মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে যাওয়ার পর রফিকের নিজের গালে চড় মারতে ইচ্ছে হলো ।
কার বাসায় পুলিশ এসেছিলো ?
তুমি ওষুধ খাও, খেয়ে একটু রেস্ট নাও ।
বললে না কোথায় পুলিশ এসেছিলো ?
কোথাও না । তুমি রেস্ট নাও, আমি আসছি ।
কোথায় যাচ্ছো ?
খালার সাথে কথা আছে ।
রফিক বেরিয়ে যেতেই জারা’র মনে হলো আদি যেন হঠাৎ করেই পাল্টে গেছে, কেমন অদ্ভুত আচরণ করছে । এই আদিকে সে যেন ঠিক চিনতে পারছে না । কাল রাতেও তো ঠিক ছিলো, এখন হঠাৎ কী হলো তাহলে ?
দুপুরে খাওয়া শেষ হলে রুমে আসার পর জারা দেখলো আদি একটু গম্ভীর হয়ে আছে । তার সাথে কোনো কথা বলছে না । সে জিজ্ঞেস করলো –
মোবাইলটা কী এখন দেয়া যাবে ?
আমি বাইরে গেলাম কখন ? বিকেলে যাবো । আর কথা না বলে রফিক যেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো আর ঘুমিয়েও গেল কিছুক্ষণের মধ্যেই ।
রফিক ঘুমিয়ে গেলে জারা রুম থেকে বের হয়ে ড্রইংরুমে এসে বসলো । কারো কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না । সবাই বোধহয় ঘুমিয়ে আছে । জানালার বাইরে তাকিয়ে জারা অলস দুপুরে লোকজনের যাওয়া-আসা দেখতে লাগলো । কিছুক্ষণ পর সীমা খালা এসে জারাকে এখানে দেখে জিজ্ঞেস করলেন –
তুমি এখানে যে, ঘুমাওনি?
না দুপুরে আমি ঘুমাই না ।
দুপুরে আমিও ঘুমাই না । দুপুরে ঘুমালে খুব খারাপ লাগে । সোফায় বসে সীমা খালা জিজ্ঞেস করলেন –
তোমাদের বাসা কোথায় যেন ?
ধানমন্ডিতে ।
কয় ভাইবোন তোমরা ।
আমরা দুই বোন, এক ভাই ।
তুমি বড় ?
না আমি ছোটো । আপুর বিয়ে হয়ে গেছে আর ভাইয়া ইউএস থাকে পড়াশোনার জন্য ।
আচ্ছা খুব ভালো । তোমার লেখাপড়ার কী অবস্থা ?
আমি বিবিএ পড়ছি আইইঊবিতে ।
ওখানে তো লেখাপড়ার অনেক খরচ, তাই না ?
জারা কিছু না বলে হাসলো ।
এভাবে লুকিয়ে বিয়ে করতে গেলে কেন বলো তো ? তোমার বাবা-মা জানলে খুব কষ্ট পাবেন তো । আমার কথায় তুমি মন খারাপ কোরো না, এটা করা তোমাদের উচিত হয়নি ।
জারা তবুও কিছু বললো না ।
তোমার বাবা-মা জেনেছে তুমি যে বিয়ে করেছো ?
না ।
আচ্ছা রফিকের সাথে তোমার কীভাবে পরিচয় হলো ?
রফিক ! জারা’র মাথায় আবার ধাক্কা দিলো নামটা । সে এবার জিজ্ঞেস করলো –
খালা আপনি আদিকে রফিক বলছেন কেন?
আদি কে?
আদি মানে আদিত্য ।
হ্যাঁ সেটাই কে ? ও তুমি কী রফিককে আদিত্য নামে ডাকো ? এই নামটা আবার কবে রাখলো ফাজিলটা ?
জারা’র যেন কেমন লাগলো কথাটা শুনে । কী বলবে কিছু বুঝতে পারছে না ।
বললে না রফিকের সাথে তোমার কোথায় পরিচয় হয়েছে ? এক দিক দিয়ে অবশ্য ভালোই হয়েছে , আমার ভাগনে তোমার মতো লক্ষী একটা বউ পেয়েছে । এখন যদি একটু মানুষ হয় ছেলেটা । ওর আব্বা মা তো ওকে নিয়ে সবসময় খুব টেনশনে থাকে । দুলাভাইয়ের চাকরিটা চলে গেল হঠাৎ করে । মিনাটাও বাচ্চা নিয়ে এখানেই থাকে । এমন এক বর জুটেছে মেয়েটার কপালে ! আজ কয় বছর ধরে বিদেশে পড়ে আছে । আসেও না, টাকাপয়সাও পাঠায় না ।
জারা কিছুই বুঝতে পারছে না খালা কাদের কথা বলছেন । সে জিজ্ঞেস করলো –
মিনা কে?
রফিকের বড় বোন । তুমি চেনো না ? ও তো বাচ্চা নিয়ে শ্যামলীর বাসাতেই থাকে ।
শ্যামলীতে কার বাসা ?
শ্যামলীতে কার বাসা মানে ! রফিকদের বাসা । কেন তুমি জানো না ?
নিকুঞ্জে কে থাকে তাহলে ?
নিকুঞ্জে তো আমাদের কেউ থাকে না । কেন বলো তো ?
ওরা নিকুঞ্জে থাকে না ?
ওরা কারা ?
আদিত্য ?
আচ্ছা তুমি রফিককে বারবার আদিত্য ডাকছো কেন ? এটা কী তোমার দেয়া নাম ? আমি তো কোনোদিনও এই নামটা শুনলাম না ।
জারা’র কেমন যেন টালমাটাল লাগছে । মনে হচ্ছে সামনের সবকিছু কেমন দুলছে । কী হচ্ছে তার সাথে এগুলো ? এই মহিলা কী বলছেন এসব ! সে কী কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে ? আদিকে কেন তিনি বারবার রফিক বলছেন ? ভুলটা কোথায় হচ্ছে তাহলে ? তিনিই বা ভুল বলবেন কেন, তিনি তো আদির খালা । আদি কী তাহলে আদিত্য না, সে কী অন্য কোনো মানুষ, রফিক? কে এই রফিক? সে তার কাছে এতোগুলো মিথ্যে কেন বলেছে ? কার কারণে ঘর ছাড়লো সে ?
জারা তোমার কী খারাপ লাগছে, এতো ঘামছো কেন ?
জারা’র শরীরের ভেতরে কাঁপুনি উঠে যাচ্ছে । সে কোনো কিছু মেলাতে পারছে না । অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বললো –
খালা আমি কী একটা ফোন করতে পারি প্লিজ ?
হ্যাঁ করো না, এই নাও ।
সীমা খালার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে রোজার নাম্বারটা ডায়াল করতে যেয়ে জারা দেখলো, সে কিছুতেই বোনের নাম্বারটা মনে করতে পারছে না । সে খুব করে মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই মনে পড়ছে না । ভয়ে তার দমবন্ধ হয়ে আসছে, পৃথিবীটা যেন চেপে আসছে চারদিক থেকে । মা’র চেহারাটা হঠাৎ মনে পড়লো জারা’র ।………………………