#আমার_তুমি❤
#লেখিকাঃ-তানজিনা আক্তার মিষ্টি ❤
#পর্ব:- ৬
–মিস ঝগড়ুটে…!!
আরুশির মনে পরে গেছে এইটা সেই অসভ্য ছেলে।
–ও হ্যালো আমি মুটেও ঝগড়ুটে না । আপনার সাহস কম না আমাকে ঝগড়ুটে বলেন। খাডাশ কোথাকার,
–তুমি আবার আমাকে বকছো এতো সাহস পাও কোথায় চেনো আমাকে কেউ আমার মুখের উপর কথা বলার সাহস করে না আর তুমি রীতিমতো বকছো। আগেও তোমার জন্য অনেক বিপদে পরতে হয়েছে আমাকে আবার বাসার এসে জামেলা করছো।
–কি বললেন আমি জামেলা করি?
–অব কোর্স জামেলাই তো করছো তোমাকে তো আমি শুধু ঝগড়ুটে জানতাম কিন্তু তুমি তো দেখছি চোর ও। আমার বাগানে থেকে ফুল ছিরেছো আবার সেটা কানেও দিয়ে রেখেছো।
–দেয়েছি বেশ করেছি। আর কি বললেন আপনার বাগান মানে কি? আপনার বাগান হলো কি করে মিথ্যে বলার জায়গা পান না তাই না এটা আন্কেলের বাসা আর তারই বাগান। আপনার হলো কি করে??
–আন্কেলটা আবার আসলো কোথায় থেকে তোমার সাথে আমি বেশি কথা বলতে চাইনা। ফুল দাও চোর একটা !!
–আবার চোর বলছেন আমি চোর না কতো বার বলবো। একটা ভদ্র মেয়েকে চোর বলছেন লজ্জা করেনা।
–তুমি আর ভদ্র ইমপসিভল।
রাইয়্যান হেসে বলল,
আরুশি তো সেই হাসি দেখে গা জ্বলে উঠলো,
— অসভ্য লোক একটা, আমার কথাকি আপনার জোকারের মনে হচ্ছে যে এভাবে পাগলের মতো হাসছেন।
–আবার বকলে তোমাকে তো আমি,
বলেই রাইয়্যান আরুশির হাত চেপে ধরলো,
–হাত ছারুন,
হাত ছুটানোর চেষ্টা করে,
–কি বললে আমি পাগল?
–হুম পাগল ই তো ছারুন হাত আগের সরি কিন্তু এখন ও বলেন নি আবার খারাপ বিহেভ করছেন। হাত ছারুন আর সরি বলুন?
–হুয়াট তোমাকে সরি বলবো আমি লাইক সিরিয়ালি, রাইয়্যান চৌধুরী তোমার মতো একটা মেয়েকে সরি বলবে,
বলেই হাত আর ও জোরে চেপে ধরলো,
–তোমার জন্য রাস্তায় কি হেনস্থা ই না হতে হয়েছিলো আমাকে মনে নেই। তার শাস্তি তো বাকি আছে আবার আমি তোমাকে সরি বলবো,
–হুম বলবেন আমার জন্য আপনি হেনস্থা হন নি নিজের দোষ এ হয়েছেন। আর আপনার জন্য আমি সবার কাছে হাসির পাএ হয়েছিলাম। সো আপনার আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত যদিও আমি এতো সহজে আপনাকে ক্ষমা করবো না কিন্তু,,
–ও হ্যালো তোমার মাথা ঠিক আছে আমি ক্ষমা চাইব না কোন দিন ও না ওকে। ওইটা একটা এক্মিডেন্ট ছিলো এতে আমার কোন দোষ ছিলো না। আর দোষ থাকলে ও রাইয়্যান চৌধুরী কখনো কারো কাছে মাথা নিচু করে না। করতো ও না।
–তা করবেন কেন খালি অন্য কে দোষ দেওয়া নিজের দোষ তো চোখে পরে না আপনাদের। টাকা থাকলেই নিজেকে সব মনে করা আপনাদের স্বভাব। রাইয়্যান না ফাইয়্যান যওসব…!!
–মিস ঝগড়ুটে আমার নাম নিয়ে ভেঙানো কিন্তু আমি টলারেট করবো না।
–আপনার যা ইচ্ছে করেন আমার আসে ও না যায় ও না ছারুন তো।
বলেই আরুশি হাত ঝটকা মেরে নিজে সরে দাড়ালো রাগে ওর শরীর কাপছে। এই লোকটা এখানে কি করছে,
–আপনি এখানে কি করছেন?[ ভ্রু কুচকে]
–আমার বাসায় দাড়িয়ে আমাকে জিগ্গেস করছো আমি কি করছি??
–আপনাররর বাসসা মানেনন
–আমার বাসা মানে আমার বাসা।
আরুশি তো হা হয়ে আছে এই বাসা টা এই অসভ্য ছেলেটার।
—-কি হচ্ছে এখানে রাইয়্যান? তুমি চেচালে কেন আর আরুশি মা তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো তোমাকে তো রুমে ফ্রেশ হতে বললাম। জেসমিন কই,
জেসমিননন জেসমিনন
বলেই হাক ছারলেন,,
সাথে সাথে জেসমিন দৌড়ে এলো ও আরুশির ব্যাগ রেখে নিচে চলে গেছিলো। হঠাৎ নিজের নামের ডাক শুনতেই ছুটে আসে।
–জি কাকু,
–তুমি কোথায় ছিলো আরুশি কে রুমে না দিয়ে কোথায় গেছিলে।
–আমি আসলে,
কথার মাঝের রাইয়্যান বলে উঠে,
–আববু এই চোর মেয়েটা বাসার ভেতরে কি করছে?
এবার আরুশি বুঝতে পারে এই খচ্চর টার বাবা এই ভালো আন্কেল আরুশি চুপ করে চোখ দিয়ে গিরে খাচ্ছে রাইয়্যান কে? রাইয়্যান ওর বাবার সাথে কথা বলছে। অসভ্য আবার চোর বলল, কতো বেয়াদব হলে চোর না তবুও চোর বলতে পারে কেউ, তোকে বাগে পাই বুঝাবো আরুশি কি জিনিস? তোর জন্য মামির কাছে মার খেতে হয়েছিল আমাকে খচ্চর কোথাকার।
–এসব কি রাইয়্যান তুমি ওকে চোর কেন বলছো?
কথা শুনেই আরুশি খুশি হয়ে তাকালো আন্কেলের দিকে কি ভালো আর ছেলেটা বদের হাড্ডি একটা।
–চোর কে চোর বলবো না তো কি বলবো?
–রাইয়্যান কি কথা ও চোর না একটা ফুল ছিরলে কেউ চুর হয়ে যায় না। আর আরুশি এখন থেকে এখানেই থাকবে ওকে আর চোর বলবে না।
–হুয়াট আর ইউ ম্যাড, ও এখানে থাকবে মানে কি? কি হচ্ছে এসব আববু আমার ফুল গাছে হাত দেওয়ার সাহস কারো হ য় না আর তুমি ওকে এভাবে ছেরে দিয়েছো আবার বলছ এখানে থাকবে।
— সামান্য একটা ফুলের জন্য কি করবো ওকে কি মেরে ফেলতে চাও। আর থাকার সিদ্ধান্ত টা আমার এতে ওকে অপমান করতে পারো না তুমি। জেসমিন ওকে নিয়ে যা।
আরুশি হাসি মুখ করে চলে যেতে থাকে একবার পেছনে ফিরে তাকায় রাইয়্যানের দিকে রাইয়্যান কটমট চোখে তাকিয়ে আছে ওর যাওয়ার দিকে। ও শয়তানি হাসি দিয়ে চলে যায় ।
জেসমিন রুমটা দেখিয়ে চলে যায়। আরুশি ফ্রেশ হয়ে এসে মায়ের ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখে জল ফেলে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর খুব এভাবে আপন সবাইকে ছেড়ে অচেনা জায়গার বাসা বাধতে হবে কে জানতে। মামা তো আমাকে নিয়ে খুব টেনশনে আছে নিশ্চয়ই একটা বার ফোন করে কথা বলতে পারলে ভালো হতো কিন্তু ফোন পাবো কোথায়? আন্কলের তো ফোন থাকবে কিন্তু তার কাছে কি বলে নিবো ফোন কার কাছে কেন ফোন দেবো নানা কথা জিগ্গেস করবে।
ছবিটা ব্যাগ এ ভরে হাত মুখ ধয়ে এলো। পেটে হাত চলে গেল কি খিদে যে পেয়েছে বলে বুঝাতি পারবো না। একটু কিছু খেতে দিবে না এরা পেটে হাত দিয়ে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পরলো। রুম টা স্ক্যান করতে লাগলো ছোট খাট রুম একটা একটা টেবিল একটা খাট, আলনা, শেষ আর কিছু নেই। কিন্তু আরুশির রুমটা পছন্দ হয়েছে। থাকার জায়গা পেল ওই আন্কেলটা খুব ভালো। কিন্তু ওই অসভ্যের জন্যই রাগ উঠে যায়। আমাকে চোর কতো বার বলল, ইডিয়েট একটা। একটা ফুলের জন্য এতো কথা শুনালো, ঔইদিন যে আমাকে কাদায় ফেলে দিচ্ছি লো তার জন্য একটা সরি চাইলাম তাও বলল না উল্টো অহংকার দেখালো,,,
–নিচে আসো বড় স্যার খেতে ডেকেছে!!
আরুশি ভাবনায় ছিলো হঠাৎ একজন মহিলার ডাকে তার দিকে তাকালো। কে ইনি চিনলো না আরুশি খেতে ডেকেছে শুনে আর কিছু না বলে পেছনে পেছনে যেতে লাগলো,,
ডায়নিং টেবিলে এসে আরুশির চোখ চরকগাছ বাপরে এতো খাবার। কিন্তু ডায়নিং টেবিল খালি কেন বাসার আর লোক কই এতো সময় তো কাজের লোক আর গার্ড ছাড়া কাউকে দেখলাম না। আরুশি চারপাশে দেখছে না কেউ আসছে না আন্কেল টেবিলে বসে আছে আর কেউ নেই। ওই জেসমিন মেয়েটা খাবার এনে রাখছে আর আমাকে যে মহিলা ডেকে আনলো সে খাবার বেরে দিচ্ছে। আমি দাড়িয়ে আছি কোথায় বসে খাবো বুঝতাছিনা। এতো বড় টেবিলে তো আমার জন্য না নিচেই বসতে হবে মহিলাটি খাবার বেরে দিলো আমার জন্য ও। আমি পিলেট টা নিয়েই নিচে বসতে যাবো,,
–একি আরুশি নিচে বসছ কেন?
–তাহলে কোথায় বসবো আমি !
–চেয়ার এ বসো।
— এ মা ছি ছি কি বলছেন আপনার সাথে বসবো কেন? আমি নিচে বসেই খেতে পারবো কোনো সমস্যা হবে না।
–নিচে কেন বসবে উপরে বসো। তোমাকে মেয়ের মতো ভাবি আর কাজ করলে ও কিছু মানুষ আমাদের সাথে খায় এই যে জেসমিন ও তো ডায়নিং এ বসেছে ওর মতো তুমি ও এখানেই বসো।
— কিন্তু আন্কেল,,,
–মুখে মুখে কথা বলা আমি পছন্দ করিনা।
চেয়ার টেনে বসলো আরুশি খাবারের সমাহার টেবিলে এতো খাবার অথচ কেউ নেই আচ্ছা বাসার আর মানুষ আসছে না কেন? মনের ভেতরে কথা গুলো আকুবিকু করছে।
— আন্কেল একটা কথা বলবো,
— বলো,
হঠাৎ সিড়ি দিয়ে কারো নামার আওয়াজে সেদিকে তাকালো আরুশি ওই রাইয়্যান না ফাইয়্যান আসছে। নামটা বলথে মনে পরলো নামটা কাল রাতেও ছেলে গুলো বলেছিলো তাহলে কি এই সেই রাইয়্যান।
–কি যে বলবে বলছিলে আরুশি মা।
আরুশি বলতে গিয়ে ও থেমে গেল রাইয়্যানের কথায়।
–খাওয়ার সময় আজেবাজে কথা আমি পছন্দ করি না।
কটমট করে রাইয়্যানের দিকে তাকালো অসভ্য আমাকে বলল,
–আন্কেল পরে বলবো নি।
–আচ্ছা।
রাইয়্যান নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে কোন দিক তাকাচ্ছে না।
আরুশি ও নিজের খাওয়ায় মন দিলো মাংস কতো দিন পর খাচ্ছে দেখেই চোখ টা ছলছল করে উঠলো ওর এতো খাবার কেন এদের আমার এতো এতো খাবার একমাস চলে যাবে। ধনীরা এমন ই অনেক খাবার না হলে তাদের হয় না বেশি খেল না আরুশি এতোদেখেই ওর পেট ভরে গেছে এমন অবস্থা। আর লজ্জা একটা ব্যাপার আছে যা পাচ্ছে। সবার আগেই রাইয়্যান উঠে গেল তারপর আন্কেল ও চলে গেল। এবার আমি আর জেসমিন আছি মহিলাটি খাবার নিয়ে নিচে বসে পরলো।
–মা এখানেই বসতে পারতে নিচে কেন বসলে?
–আমরা কি ওই খানে বসলে হয়। মালিকের জায়গা ওটা তোকে তো স্যার মেয়ের মতো ভালো বাসে তাই কিন্তু আমাকে তো নিজের জায়গায় থাকতে হবে।
–তুমি এতো দিন ধরে আছো এখন ও উপরে বসলে না আর এই মেয়েটা একদিনেই এখানে বসে খেলো। কাকু বেশিই করছে তাই না। কোথাকার কে না কে চুরি করে ধরা খেলো কোথায় শাস্তি দিবে তা না বাসার এনে মাথায় চরালো অসহ্য।
কথাটা কানে আসতেই আরুশির খাওয়া অফ হয়ে গেল। আর খেতে পারছে না বেশি খায় এ নি এতো খাবার দেখতে দেখতেই ওর সময় চলে গেছে এখন তো আর ও খেতে পরবেনা।
–জেসমিননন চুপ কর তুই কিন্তু বেশি বেশি করছিস তাদের বাসা কি করবে না করবে তাদের ব্যাপার।
আরুশি উঠে চলে এলো,,,
–ঢং দেখো
আরুশি এগিয়ে গিয়েছে তবুও ওকথা টা কানে এলো,
রুমে এসে বসে রইলা তারপর আবার নিচে এসে চারপাশে দেখলাম নাহ আর কেউ নেই বাসায়।
ওই মহিলাটি এলো হঠাৎ আমার কাছে এসে ক্ষমা চাইলো মেয়ের হয়ে। মহিলাটিকে খুব ভালো লাগলো একটু কথা বললাম তার সাথে মেয়েটা তার মতো একদভ না উনি কতো সরল কতো ভালো তার থেকে জেনে নিলাম আন্কেলের রুম। আর বাসায় কেউ নেই সেই বলল, রাইয়্যানের মা মারা গেছে আর বাসা বাবা ছেলে ছাড়া আর কেউ আত্মীয় নেই। সব সার্ভেন্ট এখানকার ,,
তার থেকে কাজ বুঝে নিলাম আন্কেল বলেছিলো সে আবার ও বলে দিলো আন্কেল সকালে ও রাতে কফি খায়। সাথে রাইয়্যান ও তিনি বা তার মেয়ে দিতে এখন আমাকে দিতে বলল,, রাইয়্যানকে না দিলে ও চলবে আন্কেলকে আমাকেই দিতে হবে। খাবার তিনি অপরেই খায় মাঝার ব্যাথার জন্য নিচে আসা যাওয়া খুব কম করে আমাকে তার খাবার উপরে নিয়ে যেতে হবে।
আমি আন্কেলের রুমে গেলাম তিনি শুয়ে আছে আমাকে দেখে কাছে ডেকে বসতে বলল। আর ঔষধ দেখিয়ে দিলো তার ঠিক মনে থাকে রাইয়্যান দেখে মনে করিয়ে দেয় আমি যেন মনে করিয়ে দেয়তা বলল,,
মাথা নেড়ে আচ্ছা বললাম,
[ সারাদিন আর আরুশি রাইয়্যান কে দেখে না রাতে বাসায় ফিরে। তখনই জেসমিনের মা চাচি আমাকে কফি নিয়ে যেতে বলে। তাই ঝগড়া করার মুড নাই আর তাদের বাসায় আছি ঝগড়া করবো না। তা ই চুপচাপ কফি করে নিয়ে যায়]
–আপনার কফি,,
রাতে
রাইয়্যান ফোনে কথা বলছিল। কালকের শো নিয়ে আজকে সারাদিন শো করে প্রচণ্ড ক্লান্ত ও।আরুশি রাইয়্যানের পেছনে রাইয়্যান কথা বলতে বলতে পেছনে ফিরতেই হাত লেগে ঠাসস!
কফি আরুশির হাতে পরছে আর কাপ টা নিচে পরে গেছে। আরুশি চোখ বন্ধ করে ছোট করে আহহ করে উঠে,, গরম কফি পরায় প্রচণ্ড জ্বলছে জায়গাটা আগেও ব্যাথা অনেক পেয়েছে তাই তেমন চিৎকার করে না ও কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা আছে। রাইয়্যান তো হতদম্ভ হয়ে আছে এটা কি হলো ও বুঝতেই পারে নি। কাপ পরে ভাঙার শব্দে আরুশির দিকে রেগে তাকায়,,,
চলবে❤