শ্রাবণ রাতের বর্ষণ পর্ব ১১

#’শ্রাবণ রাতের বর্ষণ’❤
#’লেখিকাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤
#’পর্বঃ ১১
.

রাণী অমরার অগ্রে দাঁড়িয়ে আছেন সম্রাট রুদ্রদীপ। রাণী অমরা মুখ গম্ভীর করে রেখেছেন। তার পাশেই দাঁড়ানো রত্নমা। তার মুখেও বিরাজমান কেমন রাগী রাগী ভাব। যাতে বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই রুদ্রের। থমথমে পরিবেশের ইতি টেনে রাণী অমরা এবার গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” এসব করার কারন কি রুদ্র? জানতে পারি?”

—” আমি শুধু ওর ভালোবাসার গভীরতা জানতে চেয়েছি মাতা। ও বলেছিল ও আমার জন্য সব কিছু করতে পারবে। অথচ সামান্য কেশ কাঁটা নিয়ে রাজদরবার ডেকে নিয়ে বসে আছে। ইহা কি পরীক্ষার ফলাফল নয় মা?”

রাণী অমরা মুখে আরও গাম্ভীর্য এঁটে নিলেন। খানিকটা সময় চুপ থেকে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার সন্তান তো ঠিকই বলছে। যদি তাকে ভালোবেসে সব করবে বলেছে রত্নমা তাহলে কেশ কাঁটায় এত উগ্য হয়ে উঠছে কেন? সামান্য কেশই তো! মৃত্যু তো চায় নি রুদ্র। তবুও এ ভাবনার পরপরই মনে হলো সবকিছু ওই চন্দ্রা কিংবা রুদ্রের দোষ। হয়তো চন্দ্রা রুদ্রের কানে বিষ ঢেলে দেওয়ায় রুদ্র সবার সঙ্গে এরুপ আচরণ করছে, নতুবা রুদ্রের মনের কোন এক জায়গায় দোষ আছে। ভেবেই আবারও বলে উঠলেন রাণী অমরা,

—” তুমি কি সবার সঙ্গে ওই যুবতীটির কারনে এরুপ ব্যবহার করছো রুদ্র? রত্নমার এত সৌম্য কেশ কেঁটে ফেললে তুমি? কাউকে আকর্ষণ করার ক্ষমতাই তো সে হারিয়ে ফেলেছে। তোমাকে আকর্ষণ করবে কিভাবে?”

রুদ্র ভ্রুকুটি করে থমথমে কণ্ঠে বললেন,

—” ওই যুবতী অর্থাৎ? চন্দ্রপ্রভা ওর নাম মাতা। আশা করি সেই নামেই ডাকবেন। এবং রত্নমা তো শুধু আমাকেই আকর্ষণ করবে তাই না? তাহলে অন্য কাউকে রুপের মাধ্যমে আকর্ষণ করার কথা আসছে কেন? আর তাছাড়া এই রুদ্রকে আকর্ষণ করতে হলে রুপ নয় গুণের প্রয়োজন মাতা। প্রয়োজন একজন রাজকুমারী থেকে রাণী হয়ে ওঠার অদম্য ইচ্ছে ও তা আমল করার জন্য প্রসংশনীয় কর্ম। সে যেকোনো রাজ্যের রাণীই হোক না কেন, নিজের দায়িত্বে পিছু হটবে না। তার থাকবে রাণীদের মতো তেজ আর জেদ। যা রত্নমার মধ্যে নেই। সে তো একজন বিশাল সম্রাজ্যের সম্রাটের সঙ্গে বিবাহের মাধ্যমে রাণী হতে চেয়েছে। এবং সারাদিবা-রাত্রি আয়েশ-আরামে কাটাতে! সুতরাং বলা যায়, রত্নমার আমাকে আকর্ষণ করবার মতো সামার্থ কোনোদিনই ছিল না। কেশ আছে বলেই কি, আর ছিল বলেই কি!”

রাণী অমরা ক্ষুণ্ণ হয়ে বললেন,

—” চন্দ্রপ্রভার কি এই গুণগুলো আছে?”

—” অবশ্যই! যদিও প্রথমে ওর রুপ দেখেই আমি ওর প্রেমে পরেছিলাম। এবং চন্দ্রা কিছুটা হলেও ভীতু। কিন্তু ওর তেজ-জেদ, নিজ রাজ্যের রাণী হয়ে উঠবার অদম্য ইচ্ছে, দায়িত্ব জ্ঞান ও আমার প্রতি কম আকর্ষণ দেখেই ওর প্রতি প্রেম থেকে ভালোবাসা জেগে উঠেছে আমার। চন্দ্রার যদি এখন আমি কেশও কেঁটে ফেলি তবুও ওর প্রতি বিন্দু মাত্র আকর্ষণ কমবে না আমার। কেননা আমি চন্দ্রার রুপের চেয়ে ওর ভেতরের সত্ত্বাকে বেশি ভালোবাসি মাতা।”

কথাগুলো শুনে লাভার আগুনে যেন জ্বলে উঠলো রত্নমা। শুধু হাত মুঠ করে দাঁড়িয়ে আছে সে। মাঝে মাঝে বিষাক্ত চাহনী দিয়ে রুদ্রকে দেখছে। সেটা নিত্যান্তই সবার অগোচড়ে। এদিকে রুদ্র কথা শেষ হতেই চলে যান কক্ষ থেকে। রাণী অমরা ওভাবেই বসে আছেন। রুদ্র কি বলেছেন তা বুঝবার চেষ্টায় আছেন তিনি। কেননা কথাগুলি বুঝেও যেন বুঝতে পারছেন না রাণী অমরা।

____________________

একাকিত্বের সঙ্গী আকাশের পানে চেয়ে আছে চন্দ্রা। বাহির থেকে দমকা হাওয়া মৃদু মৃদু তার শরীরও স্পর্শ করছে। শ্রাবণ মাসের এই আবহাওয়ায় এমন স্পর্শে অদ্ভুদ এক ভালো লাগা জেগে উঠছে চন্দ্রার। যা নিমিষেই হারিয়ে যায় পশ্চাৎ থেকে আসা রুদ্রের শান্ত কণ্ঠে,

—” আমার সঙ্গে ঘুরতে যাবে চন্দ্রা? কর্পনরাজ্যে!”

চন্দ্রা মহাবিরক্তি নিয়ে পশ্চাতে রুদ্রের পানে তাকান। রুদ্রের মুখে লেগে আছে মিষ্টি হাসি। বরাবরের মতো শান্ত স্বরে রুদ্র বলে উঠেন,

—” যাবে না আমার সঙ্গে?”

—” না!”

চন্দ্রার এক বাক্যের উত্তর। তবে উত্তরটা ঠিক পছন্দ হলো না রুদ্রর। তবুও বিরক্তি কিংবা রাগের ছিটেফোটাও প্রকাশ করলেন না রুদ্র। চন্দ্রার দিকে এগোতে এগোতে বলে উঠলেন,

—” যাবে না?”

রুদ্রের আগানো দেখে দেওয়ালের সঙ্গে কিছুটা ঠেঁসে দাঁড়ালেন চন্দ্রা। বিরক্ততে চোখ-মুখ কুঁচকে বললেন,

—” আপনি কি শুনতে পান নি? আমি বলেছি আমি যাবো না।”

—” হুম তাই তো।”

বলতে বলতেই চন্দ্রার একদম কাছে এসে দাঁড়ালেন রুদ্র। সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্রা অনুভব করতে পারলেন রুদ্র নেশা করেছেন। মুখের আরও বিকৃতি করে মুখ ফিরিয়ে নিলেন চন্দ্রা। রাগী কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” আপনি নেশা করে এখানে মাতলামো করতে এসেছেন আমার সঙ্গে?”

রুদ্র ঘর কাঁপানো হাসি হাসলেন কিছুক্ষণ। পরক্ষণেই হাসি থামিয়ে বলে উঠলেন,

—” যদি তা করা যেতো প্রিয়তমা! কিন্তু জানো কি, তোমাকে দেখার পর থেকে নেশাও এই শরীরে কাজ করে না। মাতাল না হয়ে মাতলামো কিভাবে করি বলো তো?”

বলেই আবারও হাসলেন রুদ্র। হাত দিয়ে চন্দ্রার মুখ নিজ মুখের কাছে আনতেই চন্দ্রা চেঁচিয়ে উঠলেন,

—” আপনার মুখ দূরে সরান দয়া করে। বিশ্রি গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।”

রুদ্র ভ্রু ক্রুটি করে তাকিয়ে রইলেন চন্দ্রার পানে। তবে তা ক্ষণিকের জন্য। পরক্ষণেই চন্দ্রার মুখ নিজের মুখের অতি নিকটে এনে লম্বা একটা ফুঁ দিলেন। চন্দ্রা চোখ-মুখ শক্ত করে দম বন্ধ করে নিলেন সঙ্গে সঙ্গে। একটু পর রুদ্র সরে দাঁড়াতেই চন্দ্রা আবারও চেঁচিয়ে ওঠেন,

—” সমস্যা কি আপনার? নির্লজ্জের মতো এরুপ আচরণ কেন করছেন আমার সঙ্গে?”

রুদ্র দু’কদম এগিয় এসে বললেন,

—” করব না আর এখনের জন্য। শুধু বলো আমার সঙ্গে ঘুরতে বের হবে।”

—” কখনও না।”

—” তাহলে এই নির্লজ্জের নির্লজ্জতা সামলাও।”

বলেই এগিয়ে আসতে লাগলেন রুদ্র। চন্দ্রা ঘাবড়ে গেলেন। মদের ওমন বিষাক্ত ঘ্রাণ সহ্য করা অসম্ভব চন্দ্রা নিকটে। কি করবেন বুঝতে পারছেন না চন্দ্রা। এদিকে রুদ্র ক্রমশই এগিয়ে আসছে তার অগ্রে। তাই বাধ্য হয়ে চন্দ্রা শত দ্বিধার সঙ্গে বলে উঠলেন,

—” আমি আপনার সঙ্গে যেতে রাজি। তবুও অনুগ্রহ করে কাছে আসবেন না।”

রুদ্র বাঁকা হাসলেন। কিছু না বলেই চন্দ্রাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,

—” তুমি হলে আমার সেই নেশা, যা থেকে নিজেকে দূরে রাখা অতি কষ্টদায়ক চন্দ্রপ্রভা। আর এই রুদ্রদীপ কখনও কোনো কষ্ট সহ্য করে না।”

থেমে থেমে আবারও বললেন রুদ্র,

—” তৈরি হয়ে নাও তাহলে। আমি খানিকবাদ পর আসছি।”

____________________

রত্নমা আকাশের পানে তাকিয়ে নিশব্দে কাঁদছে। ঠিক কাঁদছে বললে ভুল হবে। হিংসা আর রাগ দেখাতে না পেরে চোখ থেকে আপনা আপনি পানি পরছে তার। হঠাৎ ঘাড়ে কারো উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব করতেই পেছনে ফিরে তাকায় সে। দেখতে পায় রুদ্র বাঁকা হেসে তার পশ্চাতে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু না বলেই রত্নমার গাল স্পর্শ করতে লাগলেন রুদ্র। রত্নমা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল মাত্র। রুদ্রের ভাব গতি কিছুই তার আয়ত্বে নেই। একদমই নেই।

____________চলবে__________
Rehnuma Tasneem Islam, Aysha Siddika , Afrin Shuvra সহ সবার জন্যে রইল অবিরাম ভালুবাসা❤
Ishanur Tasmia

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here