শ্রাবণ রাতের বর্ষণ পর্ব ১৯

#’শ্রাবণ রাতের বর্ষণ’❤
#’লেখিকাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা
#’পর্বঃ ১৯

__________________
রাত্রির প্রবল বৃষ্টিপাতের পর সকালটা এখন স্নিগ্ধময়। দূর থেকে পাখিদের কিরচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। চন্দ্রা খানিকটা নড়েচড়ে উঠল। চোখ মেলতেই নিজেকে রুদ্রের উন্মুক্ত বুকে আবিষ্কার করল। সাথে সাথে চন্দ্রার চোখে স্পষ্ট হয়ে উঠল কাল রাত্রির ঘটনাসমূহ। এক প্রকার মায়া কাজ করছিল তখন চন্দ্রার। রুদ্রের প্রতি মনের সেই মায়াতে অন্ধ হয়ে পরেছিল সে। রুদ্রকে বাঁধা দিতে পারে নি কিংবা দিতে চায় নি। চন্দ্রার চোখ ভরে এলো হঠাৎ-ই। কাল রাত্রি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করে ফেলেছে সে। নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছে রুদ্রের হাতে। কিভাবে পারলো সে এটা? প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে রুদ্র তো দায়ী তার মাতা-পিতার মৃত্যু জন্য। সেসব ভুলে গিয়ে রুদ্রকে কিভাবে আপন করল সে? প্রশ্নগুলোর উত্তর এলো না আর। প্রশ্নগুলো প্রশ্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইল। আরেকটু নিবিড়ভাবে রুদ্রের বুকের সঙ্গে লেপ্টে রইল চন্দ্রার মুখমন্ডল। রুদ্র জেগে গেছেন হয়তো। চন্দ্রার কেশে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। খানিকবাদ শান্ত স্বরে বলে উঠলেন রুদ্র,

—” জানো চন্দ্রপ্রভা? এ শ্রাবণ মাসের রাতগুলো আমার জন্যে একরাশ বেদনা আর ভালোবাসার রাত। কেননা এই একই মাসে, কোনো না কোনো রাতের একই বর্ষণের মাঝে নিজ মাতার এক ঘৃণিত সত্য জেনেছি আমি। পাশাপাশি তোমাকে পেয়েছি নিজের করে। তবে বেদনাটা এখনও বিদ্যমান আমার মাঝে। চাইলেও সেটা ভোলার নয়। মাতার এমন নিকৃষ্ঠ সত্য জানার পর সেটা ভোলা নিশ্চয়ই কষ্টদায়ক?”

বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রুদ্র। চন্দ্রা সব কিছু সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করে উঠলেন,

—” কি করেছিলেন রাণী অমরা?”

রুদ্র হঠাৎ-ই গম্ভীর হয়ে উঠলেন। পরপর বেশকয়েকবার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। পরক্ষণেই গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,

—” মাতার অধিক রাজাদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। পিতার সঙ্গে বিবাহের পরও! আমি, পদ্ম, কিশোর এবং কৃষ্ণ কেউই পিতার আসল সন্তান ছিলাম না। মাতার অবৈধ সম্পর্কের ফলাফল ছিলাম আমরা। এসব সম্পর্কে আমরা আগে অজ্ঞাত ছিলাম। পিতার আসল সন্তান না হলেও পিতা অনেক ভালোবাসতেন আমাদের। কিন্তু একদিন এই শ্রাবণ মাসের শ্রাবণ রাতের বর্ষণে পিতা আর আমি মাতার কক্ষে গিয়েছিলাম সাক্ষাত করতে। ওখানে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম দু’জনেই। মাতা অন্য রাজ্যের সম্রাটের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন! পিতা চাইলেও কিছু করতে পারতেন না তখন। কেননা এই সিংহরাজ সম্রাজ্য পূর্বে একটি ছোট্ট রাজ্য ছিল। আর মাতা যেসব রাজাদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হতেন তারা ছিলেন বড় বড় রাজ্যের সম্রাট। মানসিক, শারিরীক এবং শক্তিতে কোনো ভাবেই পেরে উঠতেন না পিতা। তাই সব মেনে নিয়েছিলেন। কেননা মাতাকে ভালোও বাসতেন পিতা। তবে নিজ সন্তানের সামনে স্ত্রীর এহেন নোংরা কাজ দেখে লজ্জায় ভেঙ্গে পরেছিলেন তিনি। আমার কক্ষের এককোণে কেঁদে চলেছিলেন অনবরত। আমি তার পাশেই ছিলাম। মুখ চেঁপে কান্না করছিলাম মাত্র। বাইরের প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাঁদছিলাম একজন পিতা এবং সন্তান। বারবার মাতার নোংরামিগুলো চোখে ভেসে উঠছিল আমার, সঙ্গে পিতার কান্না শব্দ কানে! ঘৃণা জন্মেছিল আমার মাতার প্রতি। কিন্তু তা ক্ষণিকের জন্য। মাতা যখন আমার অসুখের সময় পাশে থাকতেন তখন তার মমোতা দেখে দিনকে দিনকে ঘৃণাটি মন থেকে মুছে যেতে লাগলো। তখন বয়সই বা কত ছিল? জন্মের দশ কি এগারো বছর পেরিয়ে গিয়েছিল আমার। হয়তো এর জন্যই….! তারপর মাতা যখন অসুস্থ হয়ে পরলেন তখন তার প্রতি ভালোবাসা আরও উতলে পরল আমার। মাতার সকল কথা শুনতে বাধ্য ছিলাম আমি। অনেকটা পিতার মতো। নিজের শ্রম দিয়ে ছোট্ট সিংহরাজ রাজ্যকে সম্রাজ্যে পরিণত করি আমি। আর তখনই মাতার আসল রুপ আবারও অসুখের আড়ালে ফুটে উঠে।

মাতার স্বর্ণ-মুদ্রার প্রতি ঝোঁক ছিল প্রচুর। নিজ পিতার ছোট্ট রাজ্য হওয়ায় বিভিন্ন বড় বড় রাজ্যের রাজাদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের বিনিময়ে অমূল্য রত্ন, গহনা, স্বর্ণ, পোশাক নিতেন তিনি। অসুখ হওয়ার পর এসব করতে পারতেন না মাতা। বিনিময়ে স্বর্ণ-মুদ্রা এগুলো কারো কাছ থেকে নেওয়ার উপায় ছিল না। কিন্তু যখন দেখলেন তার নিজের পুত্রই তাকে এসব দিতে পারবে তখন তিনি আমাকে বলে রাজকোষ থেকে শত শত গহনা, আর স্বর্ণ আনাতেন। একসময় তাকে মানা করতাম আমি। তিনি শুনতেন না আমার কথা। উল্টো বিশ্বাসঘাতকতা করলেন আমার সঙ্গে।”

এতটুকু বলেই চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে আবারও বললেন রুদ্র,

—” মাতা তার অবৈধ সম্পর্কে জড়ানো রাজাদের কন্যাদের সঙ্গে আমার বিবাহ ঠিক করেন। তাদের কাছে শর্ত রেখেছিলেন, বিবাহের পর আমার মন জয় করে রাজ্যের সকল স্বর্ণ,গহনা, দামী দামী পোশাক, মুদ্রা তাকে দিতে হবে। এবং বিনিময়ে তারা আমাকে এবং আমার রাজ্যকে পাবে। তারাও রাজী হয়ে যায়। আর আমি সবকিছু থেকে অজ্ঞাত থেকে তাদের বিবাহ করে ফেলি মাতার কথায়। কিন্তু রত্নমার ক্ষেত্রে বিষয়টা আলাদা। কিশোরের বিবাহ উৎসবে আমাকে দেখে রত্নমার পছন্দ হয়। মাতাকে বিভিন্ন উপহার দেওয়ার মাধ্যমে সে মাতাকে রাজী করায় আমাকে যেন তার সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হয়। রত্নমার রাজ্য সিংহরাজ সম্রাজ্যের মতো বিশাল না হলেও যথেষ্ট ছিল। তাই মাতাও রাজী হয়ে যান রত্নমার প্রস্তাবে।”

রুদ্র থেমে থেমে আবারও বলে উঠলেন,

—” জানো চন্দ্রা, এসব জেনে কেমনটা লেগেছিল আমার? ইচ্ছে করছিল মাতাকে হত্যা করে ফেলি। রত্নমাকে বিবাহের আগ থেকেই মাতার এসব নোংরা কাজ সম্পর্কে অবগত ছিলাম আমি। কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না। সব জানা সত্ত্বেও রত্নমাকে বিবাহ করেছি আমি। কারণ মাতার সঙ্গে মিলিত সকল সদস্যকে শাস্তি দেওয়ার ছিল আমার। হ্যাঁ, এতকিছুর পরও মাতার সঙ্গে প্রীতিময় ব্যবহার করি আমি। কেননা আমি জানতে চাই মাতার এসব নোংরামির শেষটা কোথায়। যেদিন শেষটা দেখবো আমি সেদিন নিজ হাতে সকলকে এক এক করে হত্যা করব। আমার বিশ্বাস এত কিছুর পর নিজ মাতাকেও হত্যা করতে হাত কাঁপবে না আমার। কেননা রুদ্র এতটাও উদার নয় চন্দ্রা। তোমার ভাষায় নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন। তবে বিশ্বাস করো, এই নিষ্ঠুরতা তোমার জন্য হলেও একটু কমে গেছে আমার। তোমাকে যখন প্রথম দেখেছিলাম…..”

বাকিটুকু আর বললেন না রুদ্র। মুচকি হেসে চন্দ্রার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে এর পরিবর্তে বলে উঠলেন,

—” তোমাকে নিয়ে আমার অনুভূতিগুলো অজানা থাক চন্দ্রপ্রভা। এগুলো একান্তই আমার। শুধুই আমার!”

______________________

কেটে যায় বেশ কয়েকটা দিন। চন্দ্রা বেশভাবে বুঝতে পারেন তিনি রুদ্রের প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছেন। অথচ সেটা মানতে চন্দ্রা নারাজ। রুদ্রের কাছ থেকে যথা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করেন চন্দ্রা। আর রুদ্র ততই নিকটে এসে দাঁড়ান চন্দ্রার। কিন্তু চন্দ্রা যখন নিজ রাজ্য অর্থাৎ ‘কূঞ্জনরাজ্য’ যাওয়ার আবদার করেন তখন চন্দ্রাকে এড়িয়ে যান রুদ্র। চন্দ্রা তখন দীর্ঘশ্বাস ফেলেন মাত্র। তবে একটা পরিবর্তন রুদ্রের মাঝে লক্ষ্য করেছেন চন্দ্রা। তা হলো আগে থেকে একটু হলেও নিষ্ঠুরতা কমে গেছে রুদ্রের। দাস-দাসী, প্রজা! এদের প্রতি অতি না হলেও যথেষ্ট উদার আচরণ করেন রুদ্র। যা বেশ ভালো লাগে চন্দ্রার। কিন্তু একটা আফসোসও হয়। এত কিছু পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও রুদ্রের হুট-হাট গর্দা কেটে ফেলার অভ্যাসটি বদলায় নি। এই তো কালকে, অন্য রাজ্যের একজন গুপ্তচড়কে হত্যা করে সরাসরি চন্দ্রার সামনে এসে দাঁড়ান রুদ্র। হঠাৎ করে রুদ্রকে দেখে ভয়ে আড়ষ্ঠ হয়ে পিছে হটে যান চন্দ্রা। কেননা রুদ্রের সারা মুখশ্রী রক্তের বিন্দু বিন্দু ফোটায় সজ্জিত ছিল। যা দেখেই চন্দ্রার ভীতি। চন্দ্রাকে ভয় পেতে দেখে বাঁকা হাসলেন রুদ্র। দ্রুত গতিতে চন্দ্রার কাছে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরলেন তার। চন্দ্রার ওড়না দিয়ে নিজ মুখমন্ডল মুছে তার মুখের অতি নিকটে রুদ্রের মুখ নিতেই ভয়ে চন্দ্রা চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলেন। রুদ্রের বাঁকা হাসি আরও দৃঢ় হয় এতে। চন্দ্রার কানে ঠোঁট লাগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠেন রুদ্র,

—” তুমি আমাকে ভয়ও পাও চন্দ্রপ্রভা?”

চন্দ্রা জবাব দিলেন না। রুদ্র আবারও একই ভাবে বলে উঠলন,

-” ভালোবাসিলে কয় ভালোবাসি না, “-
-” কাছে আসিবার চাইলে কয় আসিবো না! “-
-” কেন গো রাণী, “-
-” কেন এত দো’টানা? “-
-” তুমি তো এই রুদ্রের অসুখে চেতনা হারা! “-

____________________

ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলেও লজ্জায় মুখটি রাঙ্গা হয়ে উঠল চন্দ্রার। কিন্তু কেন? তা বুঝতে পারছেন না চন্দ্রা। হয়তো রুদ্রের সেই ছন্দগুলো স্মরণ করে। নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হলেন চন্দ্রা। হঠাৎ তার মনে হলো কেউ তার পশ্চাতে দাঁড়িয়ে আছে। সন্দেহ মতে পেছনে ফিরতেই রুদ্রকে দেখতে পান তিনি। দেওয়ালের সঙ্গে ঠেশ দিয়ে দাঁড়িয়ে হাতে দু’টো তলোয়াড় নিয়ে বাঁকা হাসছেন রুদ্র। তার দৃষ্টি চন্দ্রার মাঝেই সীমাবদ্ধ। রুদ্রের মায়াভরা মদকতায় ঘেরা দৃষ্টিতে অস্বস্থি হতে লাগলো চন্দ্রার। তিনি মাথা নিচু করে হাত কঁচলাতে লাগলেন অনবরত। রুদ্র চন্দ্রার অস্বস্থি দেখে স্বাভাবিক হলেন। তবে মুখে বাঁকা হাসি রেখে চন্দ্রার উদ্দেশ্যে হাতে থাকা একটা তলোয়াড় বাড়িয়ে বলে উঠলেন,

—” তলোয়াড় বাজি খেলবে আমার সঙ্গে চন্দ্রপ্রভা? দেখা যাক কে বিজয় হয় এবং কে পরাজয়!”

চন্দ্রার এবার ভ্রু কুঁচকে এলো। বলে উঠলেন,

—” আপনি কি আমাকে প্রতিযোগিতার আহ্বান দিচ্ছেন সম্রাট? পরোক্ষভাবে আমাকে অপমান করছেন?”

রুদ্র আরও দৃড় ভাবে হেসে বললেন,

—” তোমার যা মনে হয়।”

এহেন কথায় চন্দ্রার মুখ কঠিন হয়ে উঠল। তিনি আগ বাড়িয়ে কিছু না বলে সরাসরি রুদ্রের নিকটে গিয়ে রুদ্রের বাড়িয়ে রাখা তলোয়াড় নিয়ে নিলেন। পরপরই সময় না নিয়ে তলোয়াড়টি রুদ্রের গর্দানে বেশ সতর্কতার সঙ্গে রাখলেন। তা দেখে রুদ্র হাসলেন। এক ঝটকায় পেছনে সরে গেলেন তিনি। এতে রুদ্রের দিকে চন্দ্রা তাকাতেই রুদ্র এবার চোখ মারলেন চন্দ্রাকে। চন্দ্রা ক্রোধিত হয়ে রুদ্রের দিকে তেড়ে আসতে নিলে রুদ্র আবারও সরে যান। বলা বাহুল্য, রুদ্র চন্দ্রাকে আঘাত করার কোনোরুপ চেষ্টাই করছেন। শুধু চন্দ্রাকে মন ভরে দেখছেন তিনি। তলোয়াড় নিয়ে চন্দ্রার তার দিকে এগিয়ে আসা। ক্রোধ মিশ্রিত তার চক্ষুজোড়া। মুখে বিরক্তি ভাব ও উন্মুক্ত কেশ এক দিক থেকে অন্যদিকে নড়ে ওঠা সবই ঘায়েল করছে সম্রাট রুদ্রদীপকে। এদিকে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার ফলেও চন্দ্রা ব্যর্থ হোন। এতে প্রায় হাপিয়ে গেছেন তিনি। তবে দমে যান নি চন্দ্রা। আরও একবার রুদ্রকে আঘাত করতে নিলে রুদে তার তলোয়াড় দিয়ে চন্দ্রার তলোয়াড়ে আঘাত করে স্থলে ফেলে দেন তলোয়াড়টি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্রার নিকটে এসে তার কোমড় জড়িয়ে ধরেন। কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠেন,

—” অভিন্দন চন্দ্রা, তুমি পরাজিত!”

.
_____________চলবে____________
(রি-চেক করি নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
Jodha আকবার, Yasmin Putul, Afrin Shuvra, Rehnuma Tasneem Islam, Asma Naeem, Nusrat Jahan Ira, সহ সবার মন্তব্য দারুণ ছিল❤
Ishanur Tasmia

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here