#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩২
(গতকাল একটা লাইন এ ইচ্ছাকৃত ভাবেই বানান ভুল করেছিলাম😁এতে আর কিছু না হলেও সাইলেন্ট রিডার রা একটু কমেন্টস করে)
দাঁত কিড়মিড় করতে করতে নিবিড় হাতে থাকা রুটি ছিড়ে টুকরো টুকরো করে নিচে ফেলছে।
-আরে আরে নিবিড় ভাই।কি করছেন টাকি?নোংরা করছেন কেন?
কলিগের কথাতে ধ্যান ভাঙলো নিবিড়ের।কলিগের দিকে তাকালো সে।অন্যরা নিবিড়কে রুটি ছিড়তে দেখলেও নিবিড় জানে সে রুটি না মনে মনে অনুকে কেটে পিসপিস করে মসলা মাখাচ্ছিল।অনু ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠছিল।সেই দৃশ্য কল্পনা করতেই নিবিড়ের জিভ টা এখনি ভিজে এলো।মুখে এক পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠলো নিবিড়ের।
-আরে নিবিড় ভাই।খাবার তো নষ্ট করে ফেললেন আপনি?
-সামাদ ভাই এতো চিন্তা করার কিছুই নেই।আপনি জানেন অপরাধী কে শাস্তি দিতে হলে তাকে কখনো ভরাপেট কোনো বাঘের সামনে রাখতে নেই।বাঘের যে খিদেই থাকবে না।তাকে রাখতে হয় ক্ষুধার্ত বাঘের সামনে।ক্ষুধাতে যার পেটের চামড়া ঝুলে পড়েছে।গায়ের সাথে লেগে গেছে।জিভ দিয়ে টপটপ করে লালা পড়ছে।এতে কি হবে জানেন?বাঘটা ঝাঁপিয়ে পড়বে।একদম খুবলে খাবে অপরাধী কে।
-আপনি এই কথা কেন বলছেন?হঠাৎ?বুঝলাম না।
-আমি ও না খেয়ে থাকব আজ থেকে।নিজেকে ক্ষুধার্ত করতে হবে অনেক ক্ষুধার্ত।অনেক বড় অপরাধী কে শাস্তি দেব আমি।যেন জীবনে নিবিড় নামের ন শুনলেই গা কেপে ওঠে তার।
নিবিড় উঠে দাড়ালো।বাকি খাবারটাও ফ্লোরে ফেলে পা দিয়ে পিষলো।আয়াকে ডাক দিয়ে পরিষ্কার করতে বলে চলে গেল।
সামাদ সাহেব নিজের খাওয়া বন্ধ করে নিবিড়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছেন।
-আসলেই এ মানুষ না।জানোয়ার একটা।খাবার কেউ এভাবে ফেলে পা দিয়ে পিষে!আপনার কপালে ভাত জুটবে না দেখে নিয়েন।মানুষ না খেয়ে মরে।আর এ,,,ছিহ ছিহ।
নিবিড়কে মনে মনে থুথু দিয়ে আবার নিজের খাওয়াতে মনোযোগ দিলেন সামাদ সাহেব।
অফিসের বসের কেবিনের বাইরে দাড়িয়ে আছে নিবিড়।দরজায় টোকা দিতেই বস তাকে ভেতরে যেতে বললো।
-স্যার।
-বলুন মি,নিবিড়।
-স্যার আপনি না বলেছিলেন আমাকে ঢাকাতে পোস্টিং করবেন?
-হুম।বলেছিলাম তো।আর করেও ছাড়ব।
-স্যার আমি কবে ঢাকা যেতে পারব।মানে কবে পোস্টিং?
-একি মি,নিবিড়!সেদিন না আপনি না করছিলেন।আজ এতো তাড়া।
-আসলে স্যার তেমন কিছু না।আমার আম্মাজান অসুস্থ।অনেকদিন ধরেই ভাবছি ঢাকা নিয়ে যাব ডাক্তার দেখাতে।এখানে তো তেমন ভালো ডাক্তার নেই।
-ওহ।কিন্তু আপনার পোস্টিং এর জন্য আরো চার পাঁচ মাস অপেক্ষা করতে হবে মি,নিবিড়।
-এতো দিন!
-হুম।
-স্যার তাড়াতাড়ি করা যায়না?
-না।ওখানে পোস্ট খালি হলে তবেই তো আপনাকে পাঠাব।
-ওহ।
-আর কিছু বলবেন?
-না স্যার।
-ঠিকাছে আসতে পারেন আপনি।
-জি স্যার।
বসের কেবিন থেকে মুখ গোমড়া করে বের হলো নিবিড়।মনে মনে বসকে ও যে কতবার কুত্তার বাচ্চা বলেছে সে নিজেই ভালো জানে।
নিজের কেবিনে এসে নিবিড় গভীর চিন্তায় মগ্ন।হুট করেই নিবিড়ের মুখে পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠলো।
-আর যাই হোক।আম্মাজান কে ছেড়ে তো আমি তোমার খোঁজে যেতে পারব না অনু রানী।এতো বড় শহর।কোথায় বা খুঁজতাম তোমাকে।ভালোই হলো।কয়েক মাসে তুমিও একটু নিবিড় নাম ভুলে যাবে।আর তারপর হুট করে সারপ্রাইজ পাবে।এমন সারপ্রাইজ যে নিবিড় নাম তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে যাবে।হাহা। আমি তোমার সেই ভয়ার্ত চেহারা দেখার জন্য বসে আছি অনু রানী।ইশ কতদিন তোকে রাতে কাছে পাওয়া হয়না।থাক একটু সবুর করি।সবুরে নাকি মেওয়া ফলে।
অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো নিবিড়।
৯১
খাট জুড়ে শপিং ব্যাগ ছড়িয় আছে।তুলি একেক টা করে জামা বোরখা বের করছে আর অনুর গায়ে ধরে দেখছে।অনু চুপটি করে বসে আছে।
-অনু সব গুলোতেই তোমাকে খুব মানাবে ।কাল থেকে তোমার নতুন জীবন শুরু।তুমি কলেজ যাবে।
তুলির কথাতে অনুর কোনো অনুভূতি নেই।সে চুপ করে আছে।
-কি হয়েছে অনু?
-তুলি আপু আমার ভয় করছে।উনি যদি আমার খোঁজ নেন।উনি আমাকে নিয়ে যাবেন এখান থেকে।আমি আবার মরে যাব বেচে থেকেও।
আরিয়ান ঘরে ঢুকতে অনুর কথা শুনতে পেলো।
-এরকম কিছু হবে না।
আরিয়ানের গলা পেয়ে অনু আরো জড়সড় হয়ে বসলো।আরিয়ান ঘরের কোন থেকে চেয়ার টেনে এনে বিছানার সামনে বসলো।বিছানায় অনু আর তুলি বসা।আরিয়ান স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অনুর চেহারায় ভয়ের ছাপ।
-অনু।
-হুম।
-এদিকে তাকান।ভয় কেন পাচ্ছেন আপনি?আপনি আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ আপনি জানেন কি?
আরিয়ানের কথা শুনে অনু অবাক এর চরম পর্যায়ে পৌছালো ।
-আমিই!
-হ্যা আপনি।অনু আমি নিজে আজ অবধি যত বিপদগ্রস্ত মেয়ে পেয়েছি সকলকে সাহায্য করেছি।আপনি জানেন কি পতিতা মেয়েদের ও আমি কর্মের ব্যবস্থা করেছি।কেন জানেন?আমি কখনোই তাদের পতিতা মনেই করিনা।কারণ তারা কেউ ই সেচ্ছায় আসেনি।এই সমাজ তাদের এই পেশায় পতিত করেছে।অথচ পতিতা তারা হয়েছে।তারা প্রত্যেকে বিপর্যস্ত ।কেউ তাদের জন্য একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেয়নি।উল্টা তাদের সুযোগ নিয়েছে।বিক্রি করেছে তাদের।আমি যাদের কাজের সন্ধান দিয়েছি তাদের জীবনের অতীতের কাছে আপনার অতীত কিছুই নয়।তারা যদি পারে সমাজের সবার অপমান সহ্য করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে আপনি কেন পারবেন না?অনু আপনাকেও ঘুরে দাঁড়াতে হবে।আমি আজ অব্দি কোন চ্যালেঞ্জ এ হার মানিনি।আজ ও মানব না।আপনার জন্য আজ আমি আপনার গ্রামে গিয়ে সবকিছু নিয়ে এসেছি যত কাগজ পত্র ছিল আপনার।আমি আপনাকে একটা সুন্দর জীবন দিতে চাই ছি অনু।আপনি যদি এভাবে ভয় পেয়ে থাকেন তো একবার ভাবুন আমি ও দুর্বল হয়ে পড়ব।আপনি বলুন আপনি কি চাননা নিজের একটা ঠিকানা বানাতে?যাতে কেউ আর কখনো বাপের বাড়ি স্বামী র বাড়ি এই কথা গুলো আপনাকে বলতে না পারে।
অনু ছলছল চোখে আরিয়ানের দিকে তাকালো।
-আমি চাই আরিয়ান সাহেব।কিন্তু আমি কিভাবে পারব?উনি যদি একবার জানতে পারেন।
-কিছু করতে পারবে না।অনু আল্লাহ আছেন।তাকে ডাকুন।আমি আছি আপনাকে সাহায্য করতে।আল্লাহ আমাকে যা সামর্থ দিয়েছেন সেটা দিয়ে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।আপনি পিছু হটবেন না।
-কিন্তু আরিয়ান সাহেব আমার পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে যে অনেক দেরী।এমনিতেই পড়াশোনার গ্যাপ গেছে।আমি এতো দিন কিভাবে ধৈর্য ধরব।
অনুর কথায় আরিয়ান ও চিন্তায় পড়লো।আসলেই অনু ঠিক বলছে।অনুকে আরো দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।কিন্তু পড়াশোনা করে সেই অবধি যেতে অনেক সময় লাগবে।
-অনু সেই ব্যবস্থা ও আমি করে দিতে পারি।
-কিভাবে?
-সেটা পরে বলব।কিন্ত আপনাকে কিন্ত পড়াশোনা ছাড়লে হবে না।সেটা ভালো করতেই হবে।
-আমি করব।
-ঠিকাছে।এখন মন খারাপ না করে কাল সকালের জন্য প্রস্তুত হন।আপনাকে নতুন করে সব কিছু শুরু করতে হবে।
আরিয়ানের কথাতে অনেক টা মনোবল পেলো অনু।মাথা নাড়িয়ে আরিয়ানকে সম্মতি জানালো।
-এই তো।গুড গার্ল।আপনাকে আরেকটা কথা বলার ছিল।
-কি?
-অনু এটা বলা ঠিক হবে কিনা আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।
-কি কথা?
-অনু আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় কাটা আপনার অতীত।সেটাকে আপনাকে উপড়ে ফেলতে হবে।তাহলেই চোখ বুজে সামনে আগাতে পারবেন আপনি।না হলে এভাবে বার বার মনোবল হারাবেন।
-মানে?
-আপনি আপনার স্বামীকে ডিভোর্স দেবেন।
-ডিভোর্স!
অনু শব্দটা শুনে যেন কেঁপে উঠলো।তুলি অনুর হাতটা শক্ত করে ধরলো।
-অনু কি হলো উওর দেও?
-কি বলছেন টাকি আপনারা?এটা আমি পারব না।কিছুতেই না।
অনু কেঁদেই দিয়েছে ভয়ে।আরিয়ান যেন অনুর উওর টা ঠিক হজম করতে পারলো না।বুকের ভেতর একটা চিনচিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার।রেগে দাঁড়িয়ে গেল আরিয়ান।
-কেন?কেন পারবেন না আপনি?ঐ স্বামীর পরিচয় নিয়ে থাকবেন?যে দিনের পর দিন আপনাকে জানোয়ারের মতো পিটিয়েছে।ঐ অমানুষ টার পরিচয় দিতে খুব ভালো লাগবে তাই না?
অনু আরিয়ানের চিৎকার শুনে আরো জোরে কেঁদে দিল।
-হচ্ছে টাকি ভাইয়া?তুই কেন এতো রাগছিস?অনুর সিদ্ধান্ত ওকে নিতে দে।
-আমি রাগছি কি এমনি?ঐ জানোয়ারটাকে ডিভোর্স দিতে গিয়ে এতবার ভাবতে হবে।না বলতে হবে!
অনু চোখু মুছে জবাব দিল,
-দেখুন আরিয়ান সাহেব।আপনাদের পুরুষ মানুষের কাছে না বিয়ের মূল্য নাই থাকতে পারে।আপনারা তো দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করেন।বউকে তিন বেলা খাইয়ে পড়িয়ে দেন।দুদিন পড় ছাড়তে গেলে একটু বাধে না।কিন্ত মেয়েদের এমন নয়।একটা মেয়েই জানে বিয়ের পর সে তার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ টাই হারিয়ে ফেলে।যেটা গেলে কখনো ফেরত পাওয়া যায়না।সেটার মূল্য না টাকা দিয়ে কেনা যায়না।আপনি ঐ যে পতিতা কথাটা বললেন না।তাদের কে মানুষ টাকা দিয়ে ওজন করে।কিন্তু তারাও জানে সবকিছু টাকা দিয়ে ওজন করা যায়না।আর বিয়ে তো একটা পবিত্র সম্পর্ক।আমি তো কখনো এটা কে অসম্মান করিনি।আমি তো ওনাকে কখনো নিচু চোখে দেখিনি।তাকে আমি ভালো ও বেসেছি।আমার জীবনের প্র থম পুরুষ সে।
অনুর কথা শুনে আরিয়ান ঠান্ডা গলায় জবাব দিল,
-তাহলে কেন ছেড়ে আসলেন আপনার স্বামীকে?তার কাছেই ফিরে যান।
-কেন এসেছি সেটা আপনিও জানেন।সব মেয়ের কি আর আমার মতো কপাল পোড়া হয়।আর ফিরে যাওয়ার জন্য আসিনি।আপনাদের সমস্যা হলে বলুন আমি চলে যাব।
-কোথায় যাবেন?
আরিয়ানের কথা শুনে অনুর মাথা নিচু হয়ে গেল।আরিয়ান রেগে বললো,
-খুব এতক্ষণ এটা ওটা সাফাই দিচ্ছিলেন।আরে সব কিছু সবার জন্য না।পাখির জন্য যেমন খোলা আকাশ মানায় খাচা না।তেমনি যেসব স্বামী মানুষ তাদের জন্য সব কিছু ত্যাগ করা যায়।কিন্তু জানোয়ারদের জন্য না।আর ঐ যে মেয়েদের কথা বললেন না।আসলেই আমরা ছেলেরা খারাপ।কিন্ত আপনারা মেয়েরা ও খারাপ।এতো বেশি আবেগী কে হতে বলেছে? চোখ খুলে দেখেছেন এই দুনিয়া?কোনো আবেগের স্থান নেই।আবেগ টাকে মানুষ এখন দুর্বল জায়াগা হিসেবে ধরে।যাতে বার বার আঘাত করা যায়।আর কি বললেন যাবেন?এই বাড়ি কেন ঘরে থেকে যাওয়ার জন্য একটা পা বাড়িয়ে দেখুন আপনার পা কেটে ফেলবো আমি।আমি আপনার ভালো করতেই এসেছিলাম।কিন্তু কি বলুন তো সবার ভালো করতে নেই।একদম করতে নেই।পারলে ক্ষমা করবেন।আপনার শ্রদ্ধেয় গুনধর গুনের বাগান স্বামী কে ডিভোর্স দিতে বলেছি আমি।ছি ছি।আমার জিভ তো খসে পড়া উচিত।
রেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল আরিয়ান।অনু মাথা নিচু করে বসে আছে।
-অনু।
-তুলি আপু আরিয়ান সাহেব এতো রাগলেন কেন?
-অনু ভাইয়া ভাইয়ার দিক থেকে সঠিক ভুল বিচার করছে।আর তুমি তোমার দিক থেকে।যাই হোক।বাদ দেও।এরপর যদি কখনো মনে হয় ভাইয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেবে তো জানিও।না হলে না হয় থাক।ঘুমিয়ে পড়ো এগুলো গুছিয়ে।
-হুম।
ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে আরিয়ান।অনুর ঐ না উওর এখনো তার কানে বাজছে।হজম করতে পারছে না সে।বদ হজম হয়ে গেছে।পারলে উগলে দিত সব।
৯২
রাতের বেলা মাহির বেলকনিতে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।ইলা পা টিপে টিপে গিয়ে মাহির কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।মাহির যেন বড়সড় শক খেলো।রাখছি বলে ফোন কেটে দিয়ে ইলার হাত দুটি সরিয়ে পেছনে ঘুরলো।পেছনে ঘুরেই আরেক ধাক্কা।ইলা জোরে জাপটে ধরলো মাহির কে।
-thank you মাহির।আপনি জানেন না আমি আজ কত খুশি আমি।আমি সত্যি আশা করিনি আমি এতোদিন পর আমার আলু পাখিকে দেখতে পারব।thank you so much.
মাহির ও আলতো করে ইলাকে জড়িয়ে নিল।
-তুমি খুশি হয়েছো?
-অনননেক।
-তোমার খুশি দেখার জন্য আমি সব করতে পারি পানিজল।
-জানেন আজ আপনার জন্য আমার আলু পাখিও কততো মজা করেছে।ও বলেছে ,,,,।
-কি বলেছে?
-মামোনি তোমার লাল টুকটুকে বরকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।ভালো আংকেল।
-তাই?
-হুম।
-আলিশা ভারি কিউট।ওকে আমাদের এখানে রাখতে পারলে ভালো হতো।আমার ও ছাড়তে মন চাইছিল না।
-হুম।
-শোনো।
-কি?
-তোমার আলু পাখির তো আমাকে পছন্দ হয়েছে।কিন্তু।
-কিন্তু কি?
-তোমার কি পছন্দ হয়েছে?
ইলা মাথা উঠালো মাহিরের বুক থেকে।মাহিরের চোখের দিকে তাকালো।
-আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি পানিজল। I love you.
-আমিও,,,,,,।
-থাক।
ইলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাহির আটকে দিল।
– কি হলো?
-তুমি সময় নেও।আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করতে রাজি।
-কিন্তু আমি সত্যি,,,,।
-তোমার জন্য একটা গিফট আছে।
-আমার জন্য!
-হুম।ভেতরে চলো।
মাহির ইলাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসিয়ে আলমারি থেকে বড় একটা কাটুন বের করে বিছানার ওপর রাখলো।
-নেও খুলে দেখো।
ইলা তো বেশ উৎসুক।ইলা দ্রুত খুলে ফেললো কাটুন না।ইলার মুখটা মুহূর্তেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল।ইলা কল্পনা ও করতে পারেনি মাহির তাকে এমন কিছু দেবে। ইলার যেন কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।মাহির তার সাথে এমন করতে পারে সে বিশ্বাস করতে পারছে না।
#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ৩৩
ইলা ছলছল চোখে মাহিরের দিকে তাকালো।
-আপনি আমার সাথে এমনটা করতে পারলেন মাহির!
মাহির ইলার কথা শুনে কোনো প্রতিক্রিয়া না করে দাড়িয়ে ফোন হাতে নিয়ে তাতে মনোযোগ দিল।
ইলা আরো রেগে গেল।
-মাহির।
-কি হয়েছে?
-আপনি কি জানেন আপনি পৃথিবীর সব থেকে খারাপ স্বামী।আপনার গুণে নুন দেওয়ার জায়গা নেই।আপনি একদম আলুনি তরকারি।
মাহির ইলার দিকে একনজর তাকিয়ে আলমারির দিকে গেল।টিস্যু বক্স বের করে এনে ইলার হাতে দিল।
-নেও ধরো।কেঁদে নেও।
-মাহির!
-শুনছি তো।
-আপনি এটা করতে পারেন না।
-আমি কি খারাপ করেছি পানিজল?
-আপনিই মনে হয় পৃথিবীর প্রথম তিতা ফ্রেভারের স্বামী যে কিনা বউকে এক কাটুন ভরা বই খাতা কলম গিফট করে।আবার ভেতরে তিনটা বেত রেখে চিরকুটে লিখে দেয়-“পড়া ঠিক মতো না পড়লে দুই ঘা বেতের বাড়ি খেতে হবে”।
ইলা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদেই দিল।মাহিরের বেশ হাসি পাচ্ছে ইলাকে দেখে।মাহির ইলার পাশে ভাবলেসহীন ভাবে বসে পড়লো।
-দেখো পানিজল পড়াশোনা তো সব চাদ ও না মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়েছো।তোমার আর পড়াশোনার সম্পর্ক এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে,”সূর্যে ও চিনেনা,চানদেও চিনে না।তোমরা দুজন দুজনকে একদম চেনো না “।
ইলা নাক টেনে মাহিরের দিকে তাকালো।
-মাহির আপনি ভুল করছেন।
-কোনো ভুল না।তুমি কি ভেবেছো এ কদিন টোটো কম্পানি করে বেড়িয়েছো বলে আমি সব ভুলে গেছি?
-মাহির।কেন এসব টেনে আনছেন।এখন কই সংসার করব।হালি হালি বাচ্চা কাচ্চা পালবো।ওদের বিয়ে দেব।তারপর ওদের বাচ্চা কাচ্চা পালবো।আমি নানী দাদী হবো।
-আহা।কি ইচ্ছে!শুনে তো আমার নিজেকে কলাগাছে র সাথে ঝুলাতে মন চাইছে।মানুষ বিয়ে করে সংসার এর চিন্তা করে পারেনা উনি নাতি নাতনি অবধি চলে গেছে!একদম চুপ করে বসে আমার কথা শুনবে।
মাহিরের বকা খেয়ে ইলা কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছে।মাহির ইলার কাছে গিয়ে ইলার একটা হাত টেনে নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।
-পানিজল।
-,,,,,,,।
-পানিজল।
-উফ!শুনছি তো।আমি কানে কম শুনিনা।
-দেখো আমি চাইনা তুমি পরিচয়হীন থাকো।আমি চাই তুমি নিজের একটা পরিচয় গড়ো।শুধু শুধু সারাদিন বসে বসে টোটো কম্পানি করে বরের টাকায় বসে বসে খাবে সেটা আমি দেখব না।আর তুমি,,,,,,,।
এর মধ্যে মাহিরের ফোন বেজে উঠলো।ম্যানেজার এর ফোন দেখে মাহির ফোন হাতে নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল।ইলা তো হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে।সে ভেবেছিল পড়াশোনা নামক ভাইরাস থেকে সে মুক্তি পেয়েছে।তাকে আর এসব করতে হবে।কিন্তু সেগুড়ে বালি।ইলা মেনেই নিতে পারছে না।আরো মাহির কিনা আজ তাকে পড়াশোনার জন্য খাওয়ার খোটা দিল!ইলা যেন কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
-আজ এই পড়াশোনার জন্য মাহির আমাকে খাওয়ার খোটা দিল।আল্লাহ এই দিন দেখার ছিল।এই পড়াশোনা যে কে আবিষ্কার করছে তাকে একবার পাইতাম।আমার পছন্দের মুরগীর ঝোলের কসম ওরে গুলি করে ওর খুলি উড়াই দিতাম।একদম এই পার থেকে ওপারে পাঠাতাম।কিন্তু এর খোঁজ পাব কি করে?
ইলা আসন গেড়ে বসে হাঁটুতে এক হাত ভর করে গভীর চিন্তায় মগ্ন।
-আর আমি তোমাকে ইমিডিয়েট পাবনা ভর্তি করব না সেটার খোঁজ নিচ্ছি।
মাহিরের গলা পেয়ে ইলা পেছনে মাহির কে দেখে ঢোক গিলে চুপচাপ বসে রইলো।মাহির ইলার পাশে এসে বসলো।
-শোনো খাওয়ার খোটা দেইনি।ইলা মানুষ চিরন্তন নয়।আমি আজ আছি।কাল থাকব না।আমার সবকিছু তোমার ই।কিন্ত কি হবে জানো?মানুষ বলবে সব তোমার স্বামীর।তুমি কি করেছো?আমি এজন্য ই চাইছি তুমি নিজের পায়ে দাঁড়াও।তুমি আমার কথা না শুনেই উল্টা বুঝো।আমি তোমাকে খোটা কেন দিবো?স্বামী হয়ে দায়িত্ব ই যদি না নিতে পারব তাহলে বিয়ে করব কেন?বুঝেছো আমার কথা।
-হুম।
-কি হুম?
-কিন্তু আমার হালি হালি বাচ্চা কাচ্চা।ওদের কি হবে?
ইলা বাচ্চা বাচ্চা মুখ করে মাহিরকে প্রশ্ন করলো।মাহিরের চোখ বড় বড় হয়ে গেল ইলার কথা শুনে।আবার ভেতরে ভেতরে পুরানো কষ্ট টা যেন খোঁচা দিতে লাগলো।
গম্ভীর মুখে মাহির বললো,
-ঘুমিয়ে পড়ো।কাল থেকে কলেজ যাবে।আর ডেইলি যেতে হবে না।আমি তোমার নোটের ব্যবস্থা করব।সময় মতো পরীক্ষা দিলেই হবে।ভালো করে পড়ো।আরেকঁ টা কথা ।
-কি?
-ইলা বাচ্চা বাচ্চা করো কেন?বাচ্চা না থাকলে কি খুব ক্ষতি হবে।
মাহিরের কথা শুনে ইলা ভড়কে গেল।
-কি বলছেন কি আপনি?মাথা খারাপ হয়েছে?বাচ্চা না থাকলে কি আর সংসারহয়!
-ওহ।
মাহির মলিন হেসে উঠে দাড়ালো।মাহিরের হাসিটা ইলার ভালো লাগলো না।নিমিষেই যেন মাহিরের মুখ থেকে দুষ্টুমি র ছাপ মুছে একরাশ অন্ধকার ছেয়ে গেছে।মাহির চলে যেতে নিলেই ইলা মাহিরের হাত টেনে ধরলো।
-কি হয়েছে?
-আপনার কি হলো?মুখটা এমন করে আছেন কেন?
-কিছু না।
-বাচ্চার কথা বলতেই এমন মুখ ভার হলো যে?
-বাচ্চা বাচ্চা করলেই কি হয় পানিজল?তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না।সংসার টা তো অনেকটা এক তরফা করছি আমি।তোমার অসুবিধা গুলো দেখছি।নিজের পছন্দ মতো তোমাকে বিয়ে করেছি।তোমার মতামত নেইনি।আমি তখন এটা বুঝতে পারিনি এভাবে এক তরফা হবে সব।বুঝলে এই কাজটা করতাম না।
মাহির মূলত নিজের কষ্ট টার জন্য কথাটা ঘুরিয়ে দিল ইলাকে।যদিও এটাও সত্যি।আর এই সত্যি টা মাহিরকে আরো কষ্ট দেয়।কিন্তু কেন যেন ইলার খুব কষ্ট হচ্ছে মাহিরের অবস্থা দেখে।
-মাহির।
-হাতটা ছাড়ো।ঘুমিয়ে পড়ো।রাত হয়েছে।
-আপনি ঘুমাবেন না?
-আমার অফিসের কিছু কাজ আছে।সেটা শেষ করে ঘুমাব।
-এতো রাতে অফিসের কাজ!
মাহির ইলার কথার উওর না দিয়ে হাত টা ছাড়িয়ে নিল ইলার থেকে।ল্যাপটপ নিয়ে পা বাড়ালো বেলকনির দিকে।
মাঝরাত।পুরো শহর ঘুমে আচ্ছন্ন।আশে পাশের যতদূর অবধি দেখা যায় বিল্ডিং গুলো অন্ধকার।দু এক জায়গায় আলো জ্বলছে।মাহিরের মনে হচ্ছে হয়তো মাহিরের মতো ও কোনো রাত জাগা পাখি আছে।যাদের কাছে দিনের আলো থেকে রাতের আঁধার টাই অধিক পরিষ্কার।রাস্তায় রাস্তায় ল্যামপোস্টে বাতি জ্বলছে।মাহির সিগারেটে টান দিচ্ছে।মুখ থেকে ধোয়া বের করে উড়িয়ে দিচ্ছে আধারের ঘনঘটায়।মাহির সিগারেট খায়না।কিন্ত তার কাছে একটা প্যাকেট থাকে সব সময়।আরিয়ান বলেছিল সিগারেটের ধোয়ায় নাকি কষ্ট গুলো ও উবে যায়।তাই আজ সেই কথাতেই মাহির একটা চেষ্টা করে দেখলো।ইলার কথা মাথায় আসতেই মাহির এর আরো কষ্ট হচ্ছে।সে নিজ হাতে ইলার জীবনটা শেষ করে দিলো নাতো?
-এই আপনার অফিসের কাজ?ঘরে বউকে একা ফেলে আপনি সিগারেট নামক সতীনকে ধরেছেন।তাকে আবার ঠোঁটের সাথে আলিঙ্গন করছেন।ছিহ মাহির।এটা আপনার থেকে আশা করিনি।আপনি আমাকেও বোধ হয় এ তো টা আলিঙ্গন করেননি।
কারোর কন্ঠ পেয়ে পেছনে ফিরলো মাহির।ইলা কোমড়ে দু হাত রেখে দাড়িয়ে আছে।শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে রাখা।দেখে মনে হচ্ছে কোমড় বেধে ঝগড়া করতে আসছে।মাহির মুখ থেকে সিগারেট টা সরালো।ইলার দিকে দু কদম এগিয়ে এসে ইলার মুখের ওপর সব ধোয়া ছেড়ে দিল।ইলা একটু কেশে ভ্রু কুচকে তাকালো মাহিরের দিকে।
-আপনাকে এর শাস্তি পেতে হবে।
-ভেতরে যাও।এর গন্ধ শুকলে তোমার কষ্ট হবে।
-আর এটা খেলে যে আপনার শরীর খারাপ হবে।
-ভেতরে যাও ইলা।
-যাবো না।
-ইলা আমি বলছি তো ভেতরে যাও।
ইলা মাহিরের দিকে একনজর তাকিয়ে একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়লো মাহিরের ওপর।কাধের ওপর থেকে দু হাত ছড়িয়ে পা উঁচু করে মাহিরকে অন্য ভাবে আলিঙ্গন করলো।এতক্ষণ ধরে মাহির আর সিগারেটের মিলন দেখে যেমন কষ্ট হচ্ছিল সেটা যেন পুষিয়ে নিল।মাহির ও কিছু বললো না।একটু চমকে গেল।মাহিরের হাত থেকে সিগারেট টা পড়ে গেল ফ্লোরে।সিগারেট টা একটু জ্বলতে জ্বলতে একা একাই নিভে গেল।কিন্তু এদিকে যে দুটো মানুষের মনের আগুন নেভেনি।উল্টা দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে।
৯৩
সকাল সকাল খাবার টেবিলে বসে আছে আরিয়ান।একটু পর থানায় যাবে সে।নিত্যদিনের মতো খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে।এর মধ্যে অনু এলো।কাঁচুমাচু হয়ে আরিয়ান থেকে অনু বেশ দূরেই দাড়িয়ে আছে।
-আরিয়ান সাহেব।
অনুর গলা শুনে পত্রিকা থেকে চোখ উঠালো আরিয়ান।কাগজটা ভাঁজ করে টেবিলেই রেখে দিল।উঠে দাঁড়ালো।সকাল থেকেই গম্ভীর হয়ে আছে আরিয়ান।কেন?অনু জানেনা।তবে আরিয়ান জানে কাল রাতটা সে ঘুমোতে পারেনি।অনুর সাথে কথা বলার ইচ্ছে টাও নেই।আরিয়ান অনুর কথার উওর না দিয়ে উঠে দরজার দিকে পা বাড়ালো।অনু দু কদম এগিয়ে গেল।
-আরিয়ান সাহেব।দাড়ান।আমার কিছু বলার আছে আপনাকে।
অনুর আবদার মিনতি আরিয়ান আর ফেলতে পারলো না।দাড়িয়েই গেল।কিন্ত পিছু ঘুরলো না।
উল্টো দিকে ফিরেই বললো,
– কি হয়েছে?
-আপনাকে কিছু বলার ছিল।
-বলে ফেলুন।
-আরিয়ান সাহেব আমি কাল রাতে অনেক ভেবেছি।
-কি ভেবেছেন?
আরিয়ানের কথায় বিরক্তির সুর।
-আপনি ঠিক বলেছেন।জানোয়ার কখনো মানুষ হয়না।
আরিয়ান যেন কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল।সাথে সাথেই পিছনে ঘুরলো।
-মানে?
-আমি ওনাকে ডিভোর্স দেব।আমি একা বাঁচব।কিন্তু বাঁচার মতো বাচব।
আরিয়ান যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।রাত জাগা রাগ মুহূর্তেই উবে গেল।খুশিতে চোখ চকচক করে উঠলো আরিয়ানের।অনু এখনো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
চলবে———