আজ আমার প্রাক্তনের বউ ভাত। কার সাথে জানেন? আমার কাজিনের সাথে! প্রাক্তন শব্দটা উচ্চারণ করা খুবই সহজ, তবে এর মর্মার্থ অনেক। প্রাক্তন শব্দটার মাঝে লুকিয়ে আছে একদফা বিশ্বাসঘাতকতা, একদফা মানসিক যন্ত্রনা, বুক ভরা আক্ষেপ, না পাওয়ার বেদনা, তাকে কাছে পেয়ে ও মন থেকে তৈরি হওয়া এক বিশাল দূরত্বের দেয়াল, ব্যর্থতা, গ্লানি, ক্লান্তি, চোখের জল, চাঁপা দীর্ঘশ্বাস, প্রতারণা, ঠকে যাওয়া, ভিতরের নিগূঢ় জ্বলন সব মিলিয়ে আমার কাছে প্রাক্তন এক্টা লাভারূপী বহ্নির প্রকাশ।
মেরুন রঙ্গের শাড়ীতে নিজেকে পরিপাটি করে সাজিয়েছি। সাথে ম্যাচ করা কানের দুল, গলার হার, সোজা সিঁথির মাঝখানে ছোট্ট এক্টা টিকলি। টিকলির নিচের অংশটা সাদা পাথরের। জানালা দিয়ে আসা এক মুঠো রোদের ঝলকে সাদা পাথরটা কেমন গ্লেইস করছে। দেখতে দারুন লাগছে। ভারী মেকাপের আড়ালে বিবর্ণ ত্বকটাকে মসৃণভাবে সাজিয়েছি। কপালের মাঝ বরাবর মাঝারি সাইজের খয়েরি টিপ পড়েছি। চুলটা হাত খোঁপা করে বেঁধে নিয়েছি। শাড়ির সাথে বড় গলার ব্লাউজ পড়েছি। পিঠের অংশটা পুরো উন্মুক্ত। ঠোঁটে গাঢ় লাল টিপস্টিক পড়েছি। চোখে ঘন করে কাজল দিয়েছি। আয়নাতে নিজেকে বার বার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। ভিতরের ঘাঁ টা যেনো উপরের খোলসটায় আক্রমন করতে না পারে এর জন্যই নিজেকে বারংবার আয়নাতে দেখা। সবাই বলে এই হালকা সাজেই নাকি আমাকে দারুন লাগে। কোনো এক সুন্দুরী প্রতিমার মতো। যাকে দেখেই মুগ্ধ হওয়ার মতো।
আমি তমা। এবার অনার্স থার্ড ইয়ারে আছি। ঢাকা ভার্সিটিতে ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে পড়ছি। সেকেন্ড ইয়ার এক্সাম শেষে নিজের বাড়িতে আসা। তা ও আবার কাজিনের বউভাতে। এক্সাম আছে বলে বিয়ের অনুষ্ঠানটা পরিবারের সবার থেকে এড়িয়ে গেছি। কিন্তু বউভাত এড়ানো সম্ভব না। কারণ কালই আমার এক্সাম শেষ হয়েছে। তাই আমার বড় ভাইয়া কাল রাতেই জোর করে আমাকে কুমিল্লায় নিয়ে এলো। এক্টু পরেই আকাশদের বাড়িতে যাবো। আকাশ মানে আমার প্রাক্তন। ওর সাথে আমার দুই বছরের সম্পর্ক ছিলো। আকাশ আমার বড় ভাইয়া তমালের বেস্ট ফ্রেন্ড! সেই খাতিরে আকাশ ভাইয়ার সাথে রোজ দেখা হতো। দেখতে দেখতেই প্রেম, প্রেম থেকে ভালোবাসা। এখন আবার ছাড়াছাড়ি ও হয়ে গেলো।
আমার কাজিন জয়া আপুর সাথে আকাশের বিয়ে হয়েছে। জয়া আপু আমার এক বছরের বড়। আমার বড় ফুফুর মেয়ে জয়া আপু। আপু এবার অনার্স ফোর্থ ইয়ারে আছে। চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে পড়ছে জুলজি ডিপার্টমেন্টে। আপু হয়তো এখনো জানেই না আমার প্রাক্তনের সাথে আপুর বিয়ে হচ্ছে। জানলে হয়তো এই কাজটা করতে পারত না। আদরের ছোট বোনের সুখ এভাবে কেড়ে নিতে পারত না!
জানি না কোন ভুলে আকাশ আমার থেকে বিচ্ছেদ নিলো। জানতে ও চাই নি ওর থেকে কিছু। এক সপ্তাহে আগে যখন শেষ বারের মতো সে আমায় কল করেছিলো, ঐ দিন শুধু এক্টা কথাই বলেছিলো আমি যেনো ওর সাথে আর কখনো যোগাযোগ করার চেষ্টা না করি। সে বিয়ে করছে আমার জয়া আপুকে। আমি যেনো ওর পথের কাটা না হই। সবকিছু যেনো হাসি খুশি মেনে নেই। বাড়িতে কাউকে যেনো আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে কিছুই না জানাই। না হয় হিতে বিপরীত হবে। এক প্রকার থ্রেড দিয়েছিলো সে আমাকে। মুখ বুঝে সব সহ্য করে নিয়েছিলাম। এক্টা টু শব্দ ও করি নি। শুধু তিনটা ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুম দিয়েছিলাম। সে ঘুম ভেঙ্গেছে আমার একদিন পর। চোখ খুলেই নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করেছি। ভাগ্যিস লিমা আমার পাশে ছিলো। না হয় হোস্টেলে কে রাখে কার খোঁজ? লিমা হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। মেয়েটা অসম্ভব রকমের ভালো। সবসময় আমি ওকে পাশে পেয়েছি বিনিময়ে আমি ও ওর পাশে ছিলাম। দুজনের বন্ডিং খুবই স্ট্রং।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই তমার চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। এর মাঝেই দরজার খটখট আওয়াজ হলো। মনে হচ্ছে কেউ দরজা ধাকাচ্ছে। তমা তাড়াতাড়ি করে চোখের জল মুছল। আয়নায় ভালো করে তাকিয়ে দেখল চোখের জলের কারনে গাল থেকে কিছু মেকাপ ধুয়ে গেছে। তাই সে ঐ জায়গা গুলোতে আবার মেকাপ ঘঁষতে লাগল। কেউ যেনো না বুঝে সে কান্না করেছিলো। সবই ওর দুঃখ লুকানোর টেকনিক। মেকাপ কিন্তু মেয়েদের জন্য খুবই উপকারি। মেকাপ যেমন মেয়েদের সৌন্দর্য্য বর্ধন করতে পারে তেমনি কষ্টের ছাপ ও লুকাতে পারে!
দরজার খটখট আওয়াজ ক্রমশ বেড়ে চলছে। এক পর্যায়ে দরজায় ফাটল ধরার উপক্রম হলো। তমা বেশ বিরক্ত নিয়ে বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। হুট করেই দরজা ধাক্কানো থেমে গেলো। সবকিছু কেমন নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। তমা কিছুটা অবাক হয়ে ধীর পায়ে হেঁটে যেই না দরজার কাছে এগুতে লাগল অমনি ব্যালকনি দিয়ে কেউ তমার রুমে ঢুকে তমাকে দরজার সাথে চেঁপে ধরল।
তমার সামনের অংশটা দরজার দিকে আর পিছনের অংশটা লোকটির দিকে। লোকটি তমার পিঠে বার বার ঠোঁট দিয়ে স্লাইস করছে। তমা বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছে। ভয়ে তমা শুকনো ঢোক গিলছে। গলা শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে গেছে। কিছুতেই ওর গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। তমা গলার সাথে না পেরে হাত দিয়ে বার বার লোকটিকে পিছনের দিকে ঠেলছে। লোকটির এতো কোনো হেলদুল নেই। উল্টো লোকটি তমাকে আরো জোরে চেপে ধরছে।
এই মুহূূতে তমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে বাট ভয়ে, উওেজনায় গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। লোকটি তমার পিঠে চুমো খেতে খেতে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। এক হাত দিয়ে উনি তমার পেটে আঁকি বুঁকি করছে, অন্য হাত দিয়ে তমার কোমড় চেঁপে ধরেছে। তমা ছটফট করছে লোকটির থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য। হাত দিয়ে না পেরে তমা এবার পা দিয়ে লোকটিকে সমানে লাথি মারতে লাগল।
লোকটি এবার চোখ লাল করে হেচকা টান দিয়ে তমাকে উনার দিকে ফিরিয়ে নিলো। লোকটিকে দেখার সাথে সাথেই তমা মুখে হাত দিয়ে জলভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি তমার বড় ফুফুর ছেলে জায়ান। জায়ান হলো জয়ার বড় ভাই। টানা সাত বছর পর জায়ানের সাথে তমার দেখা। তমা যখন ক্লাস টেনে তখনই জায়ান দেশ ছেড়ে ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছিলো। পড়া লেখার সুবাদে তাকে ইতালি যেতে হয়েছে। বোনের বিয়েতে সে এটেন্ট করতে পারে নি। তাই বউভাতে চলে এলো সেই সুদূর ইতালি থেকে।
তমা এখনো মুখে হাত দিয়ে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান চোখ লাল করে রাগী দৃষ্টিতে তমার দিকে তাকিয়ে আছে। আগুনের ফুলকির চেয়ে ও লাল হয়ে আছে জায়ানের চোখ। জায়ান দাঁত কিড়মিড় করে তমার দিকে ঝুঁকে বলল,,,,,,,
—-“জায়ান ইজ ব্যাক। রেডি থাক তমা, তোর জম ফিরে এসেছে। এবার থেকে তোর সব স্বাধীনতা শেষ। ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করা টোটালি বন্ধ। সেজে গুজে নটাংকি করা ও নট এলাউড! বুঝেছিস তুই?”
জায়ানের ধমকে তমা কিছুটা কেঁপে উঠল। শাড়ী খাঁমচে ধরে সে চোখের পানি ফেলছে। জায়ান দরজায় এক হাত ঠেকিয়ে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আছে। সাথে সাথেই তমা মুখটা ডান পাশে ফিরিয়ে নিলো। জায়ান তমার গাল চেঁপে ধরে ওর দিকে ঘুরিয়ে তমার চোখের জল গুলো ঠোঁট দিয়ে চুষে নিলো। তমা নাক মুখ কুচকে চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে। জায়ানের এক হাতে এক্টা ল্যাকেজ ছিলো। ল্যাকেজটা সে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তমার কোমড় চেঁপে ধরল। তমা কিছুটা কেঁপে এবার চোখ খুলে তাকাল। জায়ান খুব মনযোগ দিয়ে তমার গালে ঠোঁট দিয়ে স্লাইস করছে। তমা দুই হাত দিয়ে জায়ানকে ঠেলছে সাথে সাথে জায়ান তমাকে ছেড়ে দিয়ে এক্টু দূরে দাঁড়িয়ে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত তমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। কিছুক্ষন তমার দিকে তাকিয়ে থাকার পর মুহূর্তেই জায়ানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। তমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জায়ান চোখ লাল করে বলল,,,,,
—-“এভাবে রং চং মেখে সং সেজে আছিস কেনো? আর…. শাড়ির সাথে এটা কি রকমের ব্লাউজ পড়েছিস? পুরো পিঠ দেখা যাচ্ছে। ঠোঁটে এসব কি লাগিয়েছিস? চোখে এতো কাজল কেনো দিয়েছিস? শাড়িটা এতো পাতলা কেনো? ধবধবে সাদা পেট টা দেখা যাচ্ছে। নাভীর কাছে কালো তিলটা ও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এক্ষনি চেইন্জ্ঞ করবি তুই। ওয়াশরুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি চেইন্জ্ঞ করে আয়।”
তমা শাড়ি আঁকড়ে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে হেচকি তুলে কাঁদছে। জায়ানের কথায় সে পাওাই দিচ্ছে না। জায়ান মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে তমার গাল চেঁপে ধরে বলল,,,,,
—-“আমার কথা কি তোর কানে দিয়ে যাচ্ছে না? আমি কি বলছি তুই কি শুনছিস না? আমি বলছি তুই এক্ষনি ওয়াশরুমে যাবি। এসব রং চং ধুয়ে আসবি। ন্যাচারালি লুকে তোকে অসম্ভব সুন্দুরী লাগে। এসব রং চং এ তোকে একদম ই মানায় না।”
তমা কাঁদতে কাঁদতে জায়ানের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল,,,,,
—“আজ জয়া আপুর বউ ভাত বলে এভাবে সেজেছি। কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে তো মেয়েরা এভাবেই সাজে। তাই আমি ও এভাবে সেজে গুজেই জয়া আপুর বউ ভাতে যাবো।”
—-“দাঁড়া তোকে আমি এভাবে সেজে গুজে জয়ার বউ ভাতে যাওয়া বের করছি।”
কথাটা বলেই জায়ান তমার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। অনেক রুডলি কিস করছে সে। এক প্রকার কামড়ে কামড়ে। তমা ওর শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে জায়ানকে ঠেলছে। জায়ান কিছুতেই তমার ঠোঁট ছাড়ছে না। উল্টো আরো জোরে জোরে কামড়াচ্ছে। তমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। ব্যাথায় সে কুঁকিয়ে উঠছে। তমার ঠোঁট থেকে এবার রক্ত গড়াতে শুরু করল। জায়ান ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে তমার ঠোঁটে এবার সফলটি কিস করছে। এক পর্যায়ে জায়ানের রাগ কমে আসায় সে তমার ঠোঁট ছেড়ে দিলো।
তমা চোখ বন্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কাঁদছে। জায়ান তমার মুখটা তুলে ঠোঁটে লেগে থাকা রক্ত গুলো মুছে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,
—-“এবার খুশি হয়েছিস তো? ভালো কথা বললে তো শুনবি না তাই আঙ্গুলটা বাঁকাতে হলো। ফটাফট ওয়াশ রুমে গিয়ে শাড়ী চেইন্জ্ঞ করে এসব আটা ময়দা ধুঁয়ে আয়। আমি ইতালি থেকে তোর জন্য এক্টা সুন্দর শাড়ী এনেছি। এটা পড়েই তুই আজ জয়ার বউ ভাতে যাবি। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?”
তমা হেচকি তুলে কেঁদে মাথা নাঁড়িয়ে সম্মতি জানালো। জায়ান মুচকি হেসে তমার চোখের জল গুলো মুছে দিলো।
#চলবে……..
#হয়তো_তোরই_জন্য (The Crazy Lover)
#সূচনা_পর্ব
#নিশাত_জাহান_নিশি
(গল্পটার প্রথম পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ভালো রেস্পন্স পেলে গল্পের পরের পার্ট লিখব না হয় এখানেই সমাপ্ত)