#হয়তো_তোরই_জন্য
#পার্ট_৫
#নিশাত_জাহান_নিশি
জায়ান এক্টু নিচু হয়ে তমার পার্সটা হাতে নিয়ে স্টোর রুমের দরজা খুলে রুমটাতে ঢুকেপড়ল।
স্টোর রুমে ঢুকার সাথে সাথেই জায়ানের হাত থেকে পার্সটা পড়ে গেলো। মুহূর্তেই মূর্তি ভাব ধারণ করল জায়ানের জীবন্ত শরীরটা। জায়ানের চোখের সামনেই তমার নিথর দেহটা পড়ে আছে। জায়ান নিজের সাথে যুদ্ধ করে ও পারছে না পা নাঁড়িয়ে সামনের দিকে মুভ করতে।
হুট করে স্টোর রুমের জানালা দিয়ে এক্টা গলাকাটা বিড়াল জায়ানের গায়ের উপর এসে পড়ল। বিড়ালটা একদমই ধবধবে সাদা, সদ্য হওয়া বাচ্চা বিড়াল। মনে হচ্ছে কেউ ক্ষোভের বসে এই নিরীহ বিড়ালটাকে নিষ্ঠুর ভাবে গলা কেটে মেরেছে। নিশ্চয়ই সে বিড়াল প্রাণী ঘৃণা করে। তাই এতোটা পাষাণ হয়ে বিড়ালটাকে মারতে পেরেছে। বিড়ালটার গাঁ থেকে তাজা তাজা লাল রক্ত গুলো জায়ানের গা বেয়ে টপটপ করে পড়ছে। মুহূর্তেই জায়ানের কালো চুল গুলো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। রক্তের স্রোত থেকে এক ফোঁটা রক্ত গড়িয়ে জায়ানের চোখে পড়ল। সাথে সাথেই জায়ানের হুশ ফিরল।
জায়ান গলাকাটা বিড়ালটাকে মাথা থেকে তুলে মাটিতে ছুড়ে ফেলল। এখন ওর বিড়ালের দিকে মনযোগ নেই। বিড়ালটা কোথা থেকে এসেছে, কে মেরেছে এতো কিছুর উৎস সন্ধান করার সময় নেই ওর। জায়ানের মনযোগ এখন তমার দিকে। রক্তাক্ত শরীর আর রক্তে ভেজা হাত নিয়ে জায়ান দৌঁড়ে তমার নিথর দেহটার সামনে বসে পড়ল। চোখে এক রাশ জল আর আতঙ্ক নিয়ে জায়ান কাঁপা কাঁপা হাতে তমার গালে চাঁপড় মারছে আর কাঠ কাঠ গলায় বলছে,,,,,,
—-“এই তমা….কি হয়েছে তোর? তুই এভাবে চোখ বুঝে আছিস কেনো? তাছাড়া তুই এই পরিত্যক্ত স্টোর রুমে এলিই বা কেনো? তমা প্লিজ কথা বল।”
তমার কোনো রেসপন্স নেই। সে নিথর হয়ে পড়ে আছে। জায়ানের চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে। জায়ান এবার ভালো করে তমার দিকে লক্ষ্য করে দেখল তমার ঠোঁট গুলো কেমন সাদা বর্ণ ধারণ করেছে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। তমা ঠিক ভাবে নিশ্বাস নিচ্ছে কিনা তাও সন্দেহ আছে।
জায়ান এই মুহূর্তে নিজেকে দুর্বল করতে চায় না। তাই সে চোখ বন্ধ করে বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে তমার বুকে দুইহাত দিয়ে প্রেস করতে লাগল। পরপর তিনবার প্রেস করার পর তমা বড় এক্টা নিশ্বাস নিয়ে দুই ফুট উপরে উঠে আবার ঠাস করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। জায়ান কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে তাড়াতাড়ি করে তমাকে কোলে তুলে স্টোর রুমে থেকে বের হয়ে স্টোর রুমের পাশের রুমটাতে নিয়ে তমাকে শুইয়ে দিলো। ডেস্কের উপর থেকে পানির জগটা হাতে নিয়ে জায়ান ইচ্ছে মতো তমার চোখে, মুখে পানি ছিটাতে লাগল। তমার ঠোঁট জোড়া ধবধবে সাদা হয়ে গেছে। হাত পা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঠান্ডা হয়ে আছে।
পানি ছিটানোর দরুন তমা পিটপিট করে চোখ খুলছে। জায়ান চট জলদি জগটা ডেস্কের উপর রেখে চোখে শত সহস্র জলরাশি নিয়ে তমার হাত দুটো ঘঁষতে লাগল। দুইহাতের ঘর্ষনে তমার ঠান্ডা শরীরটা আস্তে আস্তে গরম হয়ে আসছে। জায়ান চট জলদি এক্টা ভারী কম্বল তমার শরীরে পেঁচিয়ে দিলো। প্রায় দশ মিনিট পর তমার পুরো শরীরটা গরম হয়ে আসে। তমা কিছুটা আরাম পেয়ে তন্দ্রা বিলাসে ডুব দিলো। হুট করে জায়ান তমার বুকে মাথা রেখে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে বলল,,,,,
—-“জানিস তমু? তোকে আমার অনেক কথা বলার আছে। খুব ভালোবাসি আমি তোকে তমু। খুব ভালোবাসি। আমি তোর জন্য ঠিক কতোটা ডিসপারেড তুই আদৌ এর কিছু জানিস না। তোকে বলতে খুব ইচ্ছে করে তমু। আমি তোর জন্য ঠিক কতোটা সাইকো। তোর জন্য আমি আব্বুর মার খেয়েছি, জাবেদ ভাইয়ার মার পর্যন্ত খেয়েছি। দুজন আমাকে মেরে মেরে আধমরা করে দিয়েছিলো। টানা এক মাস আমি হসপিটালে ছিলাম। ওরা আমাকে কেনো মেরেছিলো জানিস? শুধু মাএ তোকে ভালোবাসার অপরাধে। ঐ দিন আমি তোর জন্য শাফিনকে খুব মেরেছিলাম, সেই অপরাধে আব্বু আমাকে ইতালি পাঠিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করেছিলো। আমি জানতাম আমি দেশ ছেড়ে চলে গেলেই সবাই তোকে জোর করে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবে। তাই সেই দিন খুব ক্ষুব্ধ হয়ে আমি দুই পরিবারের সামনেই তোকে বিয়ে করার প্রস্তাবটা দিয়েছিলাম। কিন্তু দুই পরিবারের সবাই ই এই প্রস্তাবে ঘোর নারাজ ছিলো। কারণ, আমার বড় ভাইয়া জাবেদ তোকে খুব পছন্দ করত। সবাই রাজি ছিলো জাবেদ ভাইয়ার সাথে তোকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। জাবেদ ভাইয়ার ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না। ঐ দিনই জানতে পারলাম জাবেদ ভাইয়া তোকে খুব পছন্দ করে। জানার সাথে সাথেই আমি রেগে গিয়ে ঐদিন সবার সাথে খুব বাজে বিহেভ করেছিলাম। জাবেদ ভাইয়ার শার্টের কলার পর্যন্ত চেপে ধরেছিলাম। আব্বু এসব চোখের সামনে সহ্য করতে না পেরে আমাকে স্ট্যাম্প দিয়ে মেরে মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল সাথে জাবেদ ভাইয়া ও ছিলো। অনেকক্ষন মারধরের পর ওরা আমাকে হসপিটাল নিয়ে এডমিট করে। পুরো তিনদিন আমি অজ্ঞান অবস্থায় ছিলাম। তিন দিন পর হুশে এসে আমি আবার পাগলামী শুরু করে দেই। কারণ আব্বু আমার ইতালী যাওয়ার সব বন্দোবস্ত করে রেখেছিলো। এমনকি জাবেদ ভাইয়ার সাথে তোর বিয়ের ডেইট ও ফিক্সড করে ফেলেছিলো। তমাল আমাকে গোপনে সত্যিটা জানায়। সাথে সাথেই আমি পাগল প্রায় হয়ে যাই। কোনো দিশা খুঁজে না পেয়ে আমি হসপিটালের বেডে শুয়েই হাতের রগ কেটে ফেলি। সঠিক সময় ট্রিটমেন্টে না করা হলে হয়তো আমি মরেই যেতাম। ভাগ্য ভালো ছিলো বলে বেঁচে গেলাম। টানা এক মাস আমি হসপিটালে ছিলাম। আমার এসব পাগলামী দেখে আব্বু বেশ ভয় পেয়েছিলো। তাই আব্বু বাধ্য হয়ে তোর পরিবারকে কনভেন্স করে। জাবেদ ভাইয়ার বদলে তোর সাথে আমার বিয়ে ফিক্সড করা হয়। জাবেদ ভাইয়া ও ব্যাপারটা ইজিলি মেনে নিয়ে চট্টগ্রাম শিফট হয়ে যায়। হয়তো জাবেদ ভাইয়া ও বুঝে গেছে এই জায়ান তোর জন্য ঠিক কতোটা সাইকো। ইতালী যাওয়ার আগের দিন তোর সাথে আমার রেজিস্ট্রি ম্যারিজ হয়। তুই তখন মাএ ক্লাস নাইনে পড়িস। বয়সে ছোট হলে ও তোকে দেখলে কেউ বুঝতে পারত না, তোর বয়স কম। কারণ, তোর গ্রোথ তাড়াতাড়ি হয়েছিলো। এখন যেমন আছিস, ঐ সময় ঠিক তেমন ই ছিলি। পার্থক্য শুধু এখন সামান্য হেলদি আর লম্বা হয়েছিস। খেলার ছলেই আমি তোমাকে রেজিস্ট্রি পেপারে স্বাক্ষর করিয়ে নেই। কথা ছিলো আমি ইতালী থেকে ফিরেই তোমাকে বিয়ে করব। এর মধ্যে তোর গ্রেজুয়েশনটা ও কমপ্লিট হয়ে যাবে। আমি সবাইকে বলে গিয়েছিলাম তোর আর আমার বিয়ের ব্যাপরটা যেনো গুপ্ত থাকে। তুই যেনো কোনো মতেই এই ব্যাপারে কিছু না জানিস। কিন্তু দেশে ফিরেই আমার মতি ঘতি চেইন্জ্ঞ হয়ে যায়। কারণ, তোর চোখে এখনো আমাকে নিয়ে ভয় কাজ করে। তাই আমি চেয়েছিলাম তোর ভয়কে জয় করে তোর মনে এক্টা পাকাপোক্ত জায়গা করে তোকে ঘরে তুলব। জানি না কেনো আমার মধ্যে প্রতিটা মুহূর্তে ভয় কাজ করছে। মনে হচ্ছে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি আমাদের মাঝখানে আছে। সামনে তোর আর আমার ঘোর বিপদ। কেউ একজন আমাদের আলাদা করতে চায়। আমাদের ক্ষতি করতে চায়। ইতালী থাকা কালীন কেউ প্রতিরাতে আমার ফোনে কল করত, ম্যাসেজ করত। তোকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলত। আমাকে মারার থ্রেড ও দিতো। প্রথম প্রথম লোকটা আমাকে মারার হুমকি দিতো। কিন্তু লাস্ট কয়েকদিন ধরে তোকে মারার হুমকি দিচ্ছিলো। তাই আমি আগ পাছ না ভেবে হুট করে তোর কাছে চলে এলাম। তুই আর আমি দুজনেই চরম বিপদের মধ্যে আছি। এই মুহূর্তে দুজন দুজনের পাশে ছায়ার মতো থাকতে হবে। ঐ তৃতীয় ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে হবে। আমি জানি তোর এই অবস্থার জন্য ঐ তৃতীয় ব্যক্তিই দায়ী। আমার জন্যই আজ তোর এ’ই অবস্থা। আমি তোর কাছ থেকে এক্টু সরে যাওয়াতেই এতো বড় অনর্থটা হলো। তুই চিন্তা করিস না তমুপাখি। আমি ঐ তৃতীয় ব্যক্তিকে খুব শীঘ্রই খুঁজে বের করব।”
এসব কথার মাঝেই হুট করে আরেকটা গলাকাটা বিড়াল এসে তমার মুখের মধ্যে পড়ল। সাথে সাথেই তমার চোখ, মুখ রক্তাক্ত হয়ে গেলো। তমা এবার সম্পূর্ণ চোখ মেলে তাকালো। জায়ান তাড়াহুড়া করে তমার বুক থেকে মাথা তুলে চট জলদি তমার মুখ থেকে বিড়ালটা হাতে নিয়ে জানালার দিকে তাকালো। জানালার দিকে তাকানোর সাথে সাথেই জায়ানের চোখ গেলো এক্টা ছায়ার দিকে। ছাঁদ থেকে ছায়াটা আসছে। কেউ ছাঁদ থেকে ঝুঁকে রুমের জানালা দিয়ে তমার শরীরে বিড়ালটা ছুড়ে মেরেছে। জায়ান আর দেরি না করে বিড়ালটা হাতে নিয়ে ছুটল ছাঁদের উদ্দেশ্যে।
দরজার বাইরে পা রাখতেই তমা চিৎকার করে বলে উঠল,,,,,,
—-“জায়ান ভাইয়া প্লিজ তুমি কোথাও যেও না। তুমি আমার কাছ থেকে সরলেই লোকটা আমাকে মেরে ফেলবে। লোকটা এই সুযোগটাই খুঁজছে। তুমি রুম থেকে বের হলেই লোকটা আবার আমার গলা চেঁপে ধরবে। এবার লোকটা আমাকে মেরেই ছাড়বে। আর বাঁচতে দিবে না আমাকে। প্লিজ জায়ান ভাইয়া আমাকে বাঁচাও। আমি এতো সহজে মরতে চাই না।”
তমা এসব বলছে আর হেচকি তুলে কাঁদছে। তমার কান্না দেখে জায়ানের চোখে ও পানি চলে এলো। জায়ান দৌঁড়ে এসে রুমে ঢুকে জানালা দিয়ে গলা কাটা বিড়ালটাকে ছুড়ে মেরে ধপ করে বেডের উপর বসে পড়ল। জায়ান আর তমা দুজনের শরীরই রক্তাক্ত হয়ে আছে। জায়ান তমার পাশে বসে তমাকে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,
—-“তমা…. আমি আছি তো। তুই প্লিজ ভয় পাস না। যতক্ষন পর্যন্ত এই জায়ান তোর পাশে থাকবে, কোনো তৃতীয় ব্যক্তিই তোর ক্ষতি করতে পারবে না। এই জায়ান ওর তমু পাখির জন্য যথেষ্ট স্ট্রং। খুব শীঘ্রই আমি ঐ তৃতীয় ব্যক্তিকে খুঁজে বের করব। মরলে দুজন একসাথেই মরব। বাঁচলে দুজন একসাথেই বাঁচব। তার আগে আমাদের শাফিনকে খুঁজে বের করতে হবে। আমরা দুজনই এখন ফ্রেশ হয়ে শাফিনকে খুঁজতে বের হবো। তোর বিবরণ অনুযায়ী ঐ স্যাডোটা শাফিনের। তাই আমি ওর এড্রেস কালেক্ট করেছি। আমরা এক্ষনি বের হবো। আগে চল আমরা ফ্রেশ হয়ে নেই।”
কথাটা বলেই জায়ান তমাকে কোলে তুলে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। তমা ভয়ে এখনো কুঁকড়ে আছে। চোখ, মুখ খিঁচে সে জায়ানের শার্টের কলার আঁকড়ে ধরে আছে। প্রথমে জায়ান তমাকে ফ্রেশ করিয়ে এরপর নিজে ফ্রেশ হয়ে নিলো। রক্তের বাজে গন্ধে জায়ানের উল্টি আসছে। তাই সে মাথাটা পানি দিয়ে ঘঁষে ঘঁষে ধুয়ে নিলো। সাথে তমার মাথা ও ধুয়ে দিলো জায়ান। হুট করে তমা জায়ানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,,,
—-“জায়ান ভাইয়া তুমি আমাকে বিশ্বাস করো তো?”
—“করি তমু। খুবব বিশ্বাস করি। নিজের থেকে ও বেশি।”
—-“কেউ আমাকে বিশ্বাস করে না জায়ান ভাইয়া। শুধু তুমি আর তাহাফ ভাইয়া ছাড়া।”
জায়ান কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,,,,
—-“তমু তুই কি তাহাফ ভাইয়াকে এই স্যাডোটার ব্যাপারে কিছু বলেছিস?”
—-“অনেকবার বলেছি। তাহাফ ভাইয়া বলেছে এই স্যাডোটাকে তাহাফ ভাইয়া হাতে নাতে ধরবে। আমাকে কয়েকটা দিন ধৈর্য্য ধরতে।”
—-“ভালোই করেছিস। তাহাফ ভাইয়া লোকটা আসলেই খুব ভালো। আচ্ছা এখন আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি বাইরে চল। শাফিনকে খুঁজে বের করতে হবে।”
তমা জায়ানকে ছেড়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতে নিলেই জায়ান তমার হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে তমাকে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে হুট করে তমার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরে। তমা চোখ বড় বড় করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান ব্যস্ত তমার ঠোঁটের স্বাদ নিতে। তমা ধস্তাধস্তি করছে জায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়াতে। কিন্তু বারংবারই ব্যর্থ হচ্ছে। প্রায় দশ মিনিট পর জায়ান তমার ঠোঁট ছেড়ে তমার কপালে চুমো খেয়ে কিছুটা হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,,,,,,,
—-“এতোক্ষন খুব কষ্ট পেয়েছিস। ঐ কুওার বা** তোকে খুব কষ্ট দিয়েছে। তাই এখন আদর দিয়ে কষ্টটা পুষিয়ে দিলাম। ভালোবাসি তমু পাখি। খুব ভালোবাসি।”
তমা রাগ দেখিয়ে জায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে মুখটা কালো করে বলল,,,,,
—-“আমি তোমাকে ভালোবাসি না জায়ান ভাইয়া। প্লিজ তুমি নেক্সট টাইম আমাকে ভালোবাসার কথা বলতে এসো না। তোমার আচরণ আমার একদম ভালো লাগে না। হুট হাট তুমি অসভ্যতা শুরু করো।”
জায়ান মুচকি হেসে পিছন থেকে তমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,
—-“এটা অসভ্যতা না ডিয়ার। এটা হলো ভালোবাসা। আমার ছোঁয়ায় পবিএতা আছে। সময় হলে বুঝবি।”
ওদের কথার মাঝেই হুট করে কেউ এসে তমা আর জায়ানের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াল। জায়ান তাড়াতাড়ি করে তমাকে ছেড়ে দিলো। তমা এক গাল হেসে লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—-“আরে জাবেদ ভাইয়া তুমি? কখন এলে?”
জাবেদ চোখ মুখ লাল করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—“তোরা একা একা এই রুমে কি করছিস?”
জায়ান কিছুটা হকচকিয়ে জাবেদকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—-“এ আবার কেমন প্রশ্ন ভাইয়া? তুমি সব সত্যিটা জানার পরে ও এমন উদ্ভট প্রশ্ন করলে কেনো? আমরা দুজন একা একা এক রুমে থাকতেই পারি।”
জাবেদ ধমকের সুরে বলল,,,,,,
—-“শুন জায়ান কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি নিচে চল। জয়াকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে।”
তমা অবাক হয়ে জাবেদের দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ, জাবেদ তমাকে টোটালি ইগনোর করেছে। জাবেদকে দেখে মনে হচ্ছে সে ভীষণ রেগে আছে। কোনো এক্টা বিশেষ কারণে সে বেশ রাগান্বিত। জাবেদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে জায়ানের কেমন ঘটকা লাগছে। জাবেদের শার্টের কলারে লাল রক্ত জাতীয় কিছু লেগে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে রক্তটা বেশ তাজা। মিনিট পাঁচেক আগে হয়তো জাবেদের কলারে রক্তটা লেগেছে। এর আগে হলে নিশ্চয়ই রক্তটা শুকনো থাকত। জাবেদ শেষ বারের মতো জায়ান আর তমার দিকে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে রুম থেকে প্রস্থান নিলো।
জায়ান কিছুটা ভাবুক হয়ে তমার হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রুম থেকে বের হয়েই তমা কিছুটা বিচলিত হয়ে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,
—-“জায়ান ভাইয়া আমার পার্সটা দেখেছ?”
জায়ান তমার হাত ছেড়ে বলল,,,,,
—“স্টোর রুমে হয়তো। কেনো?”
—-“এই পার্সটাতে এক্টা ক্লু আছে!”
জায়ান কিছুটা কৌতুহল নিয়ে বলল,,,,
—“কিসের ক্লু?”
—-“ওহ্ হ্যাঁ। তোমাকে তো বলাই হয়নি। তুমি যখন ব্যালকনি টপকে আমার রুমে ঢুকেছিলে এর কিছুক্ষন আগেই ঐ অদৃশ্য লোকটা আমার রুমে ঢুকার চেষ্টা করেছিলে হয়তো আমাকে মারার জন্য। বাট তোমার জন্য সফল হতে পারে নি। লোকটা দৌঁড়ে পালানোর সময় ভুলবশত দরজার হ্যান্ডেলের সাথে শার্টের এক্টা অংশ ছিঁড়ে দরজায় আটকে যায়। এই ছেঁড়া অংশটাই আমার পার্সেই আছে।”
জায়ান আর দেরি না করে দৌঁড়ে স্টোর রুমে ঢুকে গেলো। পুরো স্টোর রুম ঘুটে ও জায়ান পার্সটা দেখতে পেলো না। হুট করে জায়ানের গলা কাটা বিড়ালের কথা মনে পড়ল। রুমটা পুরো খালি। মৃত বিড়াল এবং পার্স কোনো টাই স্টোর রুমে নেই। জায়ান কিছুটা ঘাবড়ে মাথায় হাত দিকে চোখ বন্ধ করে মিনমিন করে বলল,,,,,,
—-“তাহলে তমা ঐ সময় ঠিকই বলেছে। লোকটা আমাকে রুম থেকে বের করার জন্যই সেকেন্ড টাইম জানালা দিয়ে গলাকাটা বিড়ালটা তমার গায়ে ছুড়ে মেরেছিলো। লোকটা হয়তো ভেবেছিলো এবার আমি খুব রেগে রুম থেকে বের হয়ে ঐ লোকটার খুঁজ করব। আমি রুম থেকে বের হতে হতেই লোকটা স্টোর রুমে ঢুকে পড়বে। আমি যখন স্টোর রুম ক্রস করে ছাদের দিকে অগ্রসর হবো তখন লোকটা স্টোর রুম থেকে বের হয়ে তমার রুমে ঢুকে তমাকে জানে মেরে ফেলবে। লোকটা ঠিক তাই করেছে। স্টোর রুম পর্যন্ত ঠিকই পৌঁছে গেছে তবে তমা অব্দি পৌঁছাতে পারে নি। কারণ আমি রুম থেকে বের ই হয় নি। তাই তো সে তমাকে মারতে না পেরে মৃত বিড়ালটা আর পার্সটা নিয়ে কিছুটা ব্যর্থ হয়ে তার নিজের গন্তব্যে ফিরে গেছে। লোকটা তমাকে মারতে না পারলে ও প্রমান গুলো ঠিক লোপাট করে নিয়েছে। আমার তমু পাখির লাইফ এখন ভীষণ ঝুঁকিতে আছে। চব্বিশ ঘন্টা আমার তমুরপাখিকে পাহারা দিতে হবে। এক্টু ও চোখের আড়াল করা যাবে না।”
কথাগুলো বলেই জায়ান রুম থেকে বের হয়ে হুট করে দাঁড়িয়ে পড়ল। কারণ তমাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। জায়ান ঠিক এই ভয়টাই পেয়েছিলো তাই সে দৌঁড়ে স্টোর রুম থেকে বের হয়েছিলো। জায়ান ধপ করে মাটিতে বসে বুক ফাঁটা চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,
—-“তমামামামামামা…..কোথায় তুই? কি হচ্ছে আমাদের সাথে এসব? কেনো হচ্ছে আমাদের সাথে এমন? আমরা কার কি ক্ষতি করেছিলাম? কেনো ঐ অদৃশ্য শত্রুটা আমাদের পিছনে লাগল।”
জায়ানের চিৎকারের আওয়াজ নিচ তলা অব্দি পৌঁছে গেছে। বাড়ির সবাই হম্বিতম্বি হয়ে উপরের তলায় ছুটে এলো। জায়ানের আব্বু মিঃ জামাল দৌঁড়ে এসে জায়ানকে ধরল। সাথে তমার আব্বু আর তমাল ও আছে। জায়ান ওর আব্বুকে ঝাপটে ধরে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,
—-“আব্বু আমার তমুকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। কেউ আমার তমুকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। সে আমার তমুর বড় সড় ক্ষতি করে দিবে। আমাকে তাড়াতাড়ি তমুকে খুঁজে বের করতে হবে।”
কথাগুলো বলেই জায়ান মিঃ জামালকে ছেড়ে তমালের হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে হুট আবার উপরের দিকে তাকিয়ে জয়াকে উদ্দেশ্য করে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,
—-“জয়া আকাশ কোথায়?”
জয়া কাঁদতে কাঁদতে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,,,,
—-“আকাশ আর জাবেদ ভাইয়াকে অনেকক্ষন ধরে দেখছি না। হয়তো এখানে সেখানে আছে।”
তমাল জোরে চিৎকার করে কাঁদছে আর জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,
—“আকাশকে খোঁজার রাইট টাইম এটা না জায়ান। আগে আমাদের তমাকে খুঁজে বের করতে হবে। আমার মনটা ভীষণ অস্থির লাগছে।”
#চলবে,,,,,,,,,,,