Unexpected_lover
part_05
#Rimy_Islam
কি! আমি থমকিত চিত্তে ভাবতে থাকি, কেন এত মায়া আমার জন্য! প্রথমে আমাকে বিয়ে করতে চাইলেন, মেনে নিলাম। কখনো বা খারাপ আচরণ করেন, কখনোবা ভালো। বারে বারে নতুন রঙে সামনে আসেন। একি মানুষকে প্রতিবার নতুনভাবে জানছি, বুঝছি, দেখছি। আর কত কি জানা বাকি আছে?
হয়তো বিয়ের পর আরো অনেক নতুন তথ্য জানতে পারবো!
আমি বললাম,
” আপনি মানুষটা এত অদ্ভুত কেন?ঠিকমতো কিছু বলেন না। একটা কিন্তু রেখেই দেন।”
অনিব হেসে বলেন,
” এত ভাবনা বিয়ের পর ভেবো। গায়ে হলুদে মন দাও। শরীরের প্রতিটা রন্ধ্র হলুদে রঞ্জিত হওয়া চাই। বিয়ের হলুদে নিজেকে গভীরভাবে রাঙাও।”
” বয়েই গেছে আমার! হলুদে আমার চোখের এলার্জি। ”
” কি? চোখ জ্বলে?”
” না। হলুদ দেখলেই বিরক্তি লাগে তাই।”
” এতদিন ভেবেছিলাম সামান্য পাগল। এখন দেখি, পৃথিবীর সব পাগলের মাথা এক হয়ে মিলে তোমার মাথা তৈরি। কি করে সামলে উঠবো আমি জানি না। ” আল্লাহ রক্ষা করো।”
বলেই গটগট করে হেঁটে চলে যান অনিব। এদিকে আমি অপমানের খোঁচা পেয়েও দিব্যি সয়ে নিলাম। না সয়ে উপায় তো নেই! মনে মনে পণ করি, বিয়ের পর আপনার জীবনটা ত্যানা ত্যানা করে দিবো। সামনে আর মাত্র একটাদিনের ব্যবধান।
.
.
.
.
.
.
.
একটা লাল শাড়ি পরে বধূ বেশে বসে আছি। মিতি, দিতি অপলক চোখে দেখছে আমায়। আর আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে গভীর পর্যবেক্ষণ করছি। যতটুকু মনে পড়ে আমার জন্য একটা গোলাপি ল্যাহেঙ্গা বাছাই করা হয়েছিল। অথচ আজ দেখি ওটা বাদে তার জায়গায় শাড়ি! এ বাড়িতে প্রতিনিয়ত একটা করে সারপ্রাইজ পেয়ে চলেছি। আর কত সারপ্রাইজ বাকি কে জানে!
” ওয়াও ভাবি! দারুণ মানিয়েছে তোমাকে। দেখলেই ভাইয়া কবুল বলে দিবে।”- বললো মিতি।
দিতি ফোঁড়ন কাটলো,
” তোর কথার কোনো ঢং নেই মিতি। দেখলেই কবুল বলবে কেমন কথা? বল দেখলেই পাগল হয়ে যাবে।”
” আমি অলরেডি পাগল হয়েই বিয়ে করছি। নতুনভাবে পাগল হওয়ার কিছু নেই।”- বলতে বলতে ঘরে ঢুকেন অনিব।
সবার চোখ আটকে পড়ে তাঁর উপর। সাদা শেরওয়ানীতে নবাবী ভাব মুখে ফুটে উঠেছে। অনিব আবারো বললেন,
” তোরা একটু বাইরে যা। আমার বউয়ের সাথে কথা আছে। ”
” আহা! কি রোমান্টিক! “- বলতে বলতে ওরা দু’ বোন চলে যায়।
অনিব দরজা বন্ধ করে দেয়। এদিকে আমি ভয়ে অস্থির। বিয়ে না হতেই স্বামীর অধিকার ফলাতে চলে এলো নাকি লোকটা? আমি ভীতি দূর করতে বলি,
” আপনি না লেহেঙ্গা পছন্দ করেছিলেন? তবে এই শাড়ী কেন? এই শাড়ীটা লেহেঙ্গার চেয়েও ভারী। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।”
অনিব আমার খুব নিকটে চলে এলো। তারপর হেঁচকা টানে একহাত ধরে কাছে টেনে নিল আমায়। অতঃপর বললো,
” ওইসব লেহেঙ্গা পরবে আর লোকজন তোমার কোমর,পেট ফ্রিতে দর্শন করবে। আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো আর পুলকিত হবো? ”
আমি নড়ে চড়ে নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। ওভাবেই বলি,
” কি যে বলেন! অনেকেই তো পরে। আমি একাই তো পরতাম না।”
” অনেকের বর এলাও করে তাই পরে। বাট আমি এলাও করবো না। সবাই আর আমি এক না। জলদি তৈরি হয়ে এসো।”
” আমার তৈরি হওয়া শেষ। ”
” এত তাড়া? আমি খুশি হলাম।”
আপনি তো দিন রাত খুশি হয়েই থাকেন। মরণ তো আমার। না পারি সইতে, না পারি কইতে। মনে মনে আওড়ে গেলাম।
.
.
.
.
সকল বিধি মেনে তিল কবুল বলে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল। আমার রীতিমতো চিন্তায় হাত-পা ঘামতে শুরু করেছে। এখন নিজেকে কিভাবে বাঁচাবো? যদিও তিন আজ থেকে আমার হাজবেন্ড। তবুও বাধ্যের বিয়েতে প্রকৃত বউয়ের ভূমিকা পালন করতে পারবো কি! নিজেকে নিয়ে ঘোর সন্দেহ রয়েছে।
বাসর ঘরে আমাকে রেখে চলে গেছে সবাই। ঘড়ির কাটার টিকটিক শব্দে আমার বুক ঢিপঢিপ করছে। এই বুঝি অনিব চলে আসবেন। সত্যি তিনি দরজা ঠেলে ধীর পায়ে ঘরে ঢুকলেন। আস্তে করে দরজা লাগিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন। আমার দিকে ফিরেও তাকালেন না। একটু পর বের হয়ে বিছানায় আমার পাশেই সটান শুয়ে পড়ে বললেন,
” কি কষ্ট বিয়ে করতে বাবা! সারাদিন এদিক থেকে ওদিক দৌঁড়ানো, লোকের ভিড়, হৈচৈ। মাথায় আগুন লেগে যাচ্ছিলো।”
আমি উনার শুয়ে পড়া দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম,
” আপনি খুব ক্লান্ত বোঝাই যাচ্ছে। সকালে হয়তো অফিসেও যেতে হবে।ঘুমিয়ে পড়ুন।”
অনিক আমার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবেই আমাকে হেঁচকা টানে বিছানায় ফেলে দেয়।তারপর আমার উপর চড়ে বললো,
” এই শোনো, নিজেকে বেশি চালাক ভেবো না। মনে করো না যে, ছবির হিরোর মতো আমি তোমাকে বলবো যে তুমি যতদিন না চাইবে। আমি তোমাকে ছোঁবো না। আমার সোজা কথা, বউ হয়েছো, তোমার উপর অধিকার আছে আমার। সো নো ছাড়।”
আমি মিনতির স্বরে বলি,
” আজকে অন্তত ছাড় দেন?”
” উহু। আজকের দিন কখনো ফেরত আসবে। বরং অন্য সব দিন ছাড় পাবে, আজ না।”
আমি অসহায় হয়ে চেয়ে আছি। কোথা থেকে কি হয়ে গেল। নকল বউ থেকে সত্যি বউ হয়ে গেলাম। আর এখন এইসবও সইতে হবে। কাঁদতে চেষ্টা করছি, পারছি না। যদি কান্না দেখে লোকটার মন গলে তবুও আজ রেহায় পেয়ে যাবো। কিন্তু সময়মতো কান্নাও হাত গুটিয়ে নিয়েছে।
অনিব আমার দু’হাত চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট গুজলেন। বাঁধা দিয়ে জানি লাভ নেই। এবার কিন্তু চোখের জল পড়তে ভুললো না। আমি সারারাত কেঁদে গেলাম। আর উনি সেসব তোয়াক্কা না করে নিজের অধিকার ফলিয়ে গেলেন।
চলবে……………