#গল্পঃবিকেল বেলার রোদ
#পর্বঃ০৩
#লেখাঃনুসরাত মাহিন
হঠাৎ করেই চোখ গেল এক সিট সামনে দাঁড়ান লোকটার দিকে। ভয়ে আমি কুচুমুচু দিয়ে বসলাম দুলাভায়ের বোনের স্বামী। আমার সামনের সিটে বসা লোকাটার সাথে কথা বলছে মনে হয় পরিচিত। আমি চুপ করে ওনাদের কথা শোনার চেষ্ঠা করছি।
— আরে কাওছার ভাই আপনি এখানে। আজ আপনার শালার বিয়েতে যাবার কথা ছিল না।
— আর বইলে না ভাই আমার শালার ভাগ্যে ভালো চরিত্রহীন মেয়ের সাথে বিয়ে হয়নি। মাইয়া অন্য এক পোলার সাথে ফোস্টিনোস্টি করে বাইরাইয়া গেছে।
— আল্লাহ কী বলেন নাসিম বিশ্বাসের মেয়ের সাথে বিয়ার কথা ছিল না..?
— হয় ভাই। ওই বাইরানী মাইয়া যে খারাপ তা দেখলে বোঝা যায়। শালারে কত করে কইলাম সুন্দরী মাইয়া দেইখা বিয়া দিমু তরে। কে কার কথা শোনে নাসিম বিশ্বাসের মাইয়াগো মধ্যে কী পাইছে আল্লাহয়য় জানে। নাদিয়ারে বিয়া করল আমার শালারে রাইখা অন্য বেডাগ লগে প্রেম পিরিতি কইরা করল আত্নহত্যা । এতকিছুর পরেও আমার শালা কবিরের হুশ হয়নাই।
আমার মাইয়া এত কাজ করলে ধইরা আইনা টুকরা টুকরা নদীতে ভাসাইয়া দিতাম।
পোলারা বাইরে গেলে হয় বাদশাহ আর মাইয়ারা বাইরে গেলে হয় বেশ্যা।
— ঠিকেই বলছেন ভাই।
মানুষ এত খারাপ হয় কিভাবে..?? । একটা মানুষের সম্পর্কে না জেনে না শুনে কত সুন্দর করে বদনাম রটিয়ে দিল। ওনাদের কথা শুনে নিজের অজান্তে চোখ পানি চলে এসেছে।
কাজী নজরুল ইসলাম একটা কথা বলেছিলেন।আমরা সবাই পাপি আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি। আমরা যে যেমন সবাইকে তেমন ভাবি।
ওই মানুষগুলা নিজেরা যেমন খারাপ অন্যকে ঠিক তেমনি খারাপ ভাবে। না জেনে না শুনে মানুষের নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে সামান্য তম খারাপ ও ওদের লাগে না।
অন্যের মেয়ের নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে ওদের বিবিকেও বাধলো না শেষ পর্যন্ত আমার মরা বোনটার নামেও মিথ্যা অপবাদ দিল। আল্লাহর বিচার ঠিকি পাবে একদিন। আপনারও একটা মেয়ে আছে আজ মিথ্যা মিথ্যা আমাদের নামে অপবাদ দিলেন একদিন আপনার মেয়ে সত্যি এই নোংরা কাজ গুল করবে। সমাজের মানুষের কাছে মুখ দেখাতে পারবেন না থু থু দেবে সবাই। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম।
সন্তানদের প্রিয় বন্ধু হয় বাবা-মা, আবার সন্তানদের সবচেয়ে বড় শত্রুও হলো বাবা-মা..
একটা সন্তানের বেশি ভালো চায় তার বাবা-মা, আবার একটা সন্তানের পুরো জীবনটাই খারাপ করে দেয় তার বাবা-মা। যেমনটা আমার আব্বা- আম্মা করছে নিজে হাতে কলা টিপে আমার আপুর জীবনটাকে, স্বপ্নগুল শেষ করে দিয়েছিল। জন্মদাতা পিতামাতা হয়ে ঠেলে দিয়েছিল মৃত্যু মুখে।
আব্বা সব সময় একটা কথা বলে হালেরর গাভি মানে মেয়ে গরু দিয়ে জমি চাষ করা যায় কিন্তু মাইয়া মানুষ দিয়া কোন কামে লাগে না। অগো পিছনে শুধু খরচ আর খরচ ঘারের বোঝা। আব্বার ধারোনা মেয়েরা কোন কাজ করতে পারে না ঘর সংসার করাই একমাত্র মেয়েদের কাজ।
নিজের ভাল থাকার জন্য, সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য বাবা যা বলতো বাবার সাথে সাথে মাও একি কথা শুনাত। আমার মকে কখনো দেখিনি বাবার অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে।
সেই কখন থেকে একা একা শুধু কথা বলে যাচ্ছি আমার পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি।
আমি নাবিলা এবার ইন্টার পাশ করেছি। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম বিসিএস ক্যাডার হব। বরাবরি পড়াশুনা ভালো ছিলাম, ক্লাস ফাইভে, এইটে গ্রাম থেকে আমি একমাত্র মেয়ে বৃতি পেয়েছিলাম। অবশ্য আমার আগে আমাদের কলেজের স্যাররে ছেলে পেয়েছিলো। এস এস সি, এইচ এস সি, দুটাতেই গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি। এখন খুব ইচ্ছা ঢাকা ইউনিভার্সিটিত্র বিবিএ তে ভর্তি হবার। গ্রামে কোন এডমিশ কোচিং নেই মেইন টাউট আমার বাসা থেকে অনেক দূরে ছাব্বিশ কিলোমিটার দূরে। বাসা থেকে অতদূরে যাওয়া সম্ভব না।
মামা সাইফুর্স এর বিবিএ এডমিশন বই কিনে এনে দিয়েছিল, বিভিন্ন কোচিং থেকে সাজেশন, সালের প্রশ্ন যোগার করে দিতে ছিল। আমি বাসায় বসে এডমিশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ভালো ভাবেই এগুচ্ছিলাম এর মধ্যে কবির এসে সমস্যা বাঁধাল।
আমি জানি আজ কবিরকে বিয়ে করলে নাদিয়ার মতো আমার জীবনটা শেষ হয়ে যেত।
কথা গুল ভাবতে ভাবতে বাস গাবতলি পৌছে গেছে। আমার পাশে থাকা ভাইয়াটা ঘুমিয়ে আছে উনাকে ডেকে তুইলাম।
বাস থেকে নামার সময় ভাইয়াটা ধন্যবাদ বলে চলে গেল। মানুষটা কেমন যেন একটু আজব টাইপের।
কফিশপের সামনে দীপা আন্টি দাঁড়িয়ে আছে। আমি দিপা আন্টির দিকে এদিয়ে যাবার আগেই দিপা আন্টি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি তো বোরখা পরা দিপা আন্টি আমাকে চিনল কিভাবে…?? আন্টির সাথে অনেকবার ফোনে কথা হয়েছে সরাসরি দেখা হয়নি কখন ও।
— তোর আসতে কোন অসুবিধা হইনি তো..??
— না আন্টি কোন অসুবিধা হয়নি কিন্তু আন্টি আমি তো বোরখা পড়া তুমি আমাকে চিনলে কিভাবে..?
— হাবলুটা, তোর মামা ফোনে আমাকে ডিটেলস বলে দিয়েছে।
— তানভীর মামাকে তুমি হাবলু বলে ডাক।
— তোর মামাকে হাবলু বলবো না তো কী বলবো সরকারি ব্যাংকে চাকরি পেয়েও কেউ করে না বল। কত করে বললাম চাকরিটা কর। সে ব্যংকে চাকরি করবে না সে এসপি হবে। চাকরি না করে গ্রামে গিয়ে পরে আছে। নাবিলা বার বার ওদিকে তাকিয়ে কী দেখছিস..??
— কোই কিছু না এমনি।
— ছেলেটা কিন্তু বেশ সুন্দর তোর বয়ফ্রেন্ড নাকি।
— কিজে বল না আন্টি বয়ফ্রেন্ড পাব কোই। ওই ভাইয়াটা আমার পাশের সিটে ছিল।
— আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ওই পোলার লগে তোর কিছু একটা হবে। নাটক সিনেমায় এইরকম কত দেখেছি।
— ধুর তুমি না একটা পাগল কী সব উল্টাপাল্টা কথা বল।
— মনে রাখিস এই পাগলের উল্টা পাল্টা কথাই একদিন সত্যি হবে।
— ওই লোকের সাথে আজি প্রথম আর আজি শেষ দেখা আর কখন ও দেখা হবে না।
— যদি থাকে নসিবে এমনি এমনি আসিবে।
— হোইছে চল
আন্টি আগে থেকে একটা মাইক্রো ঠিক করে এনেছে। মাইক্রেতে ওঠার সময় কী মনে করে পিছু তাকালাম এখনো ভাইয়াটা দূরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ইশ্ মানুষটার নামটাও জানা হলোনা।
ঢাকা শহর আইসা আমার মাথা ঘুবাইলো।
ওই ছোট ছোট পোশাক পরা ওড়নাছারা মাইয়া দেইখা চোখে আগুন লাগিলো।
— আন্টি ঢাকা শহরের মেয়েরা কী ওড়না পরে না..?? ওই মেয়েগুলো ওড়না ছাড়া ঘুরে বেরাচ্ছে ওদের লজ্জা করছে না..? ওদের দেখে আমার নিজের ই তো খারাপ লাগছে।
— না ওদের লজ্জা করে না শালীনতার অভাব আছে। ফ্যাশান, ওয়েস্টার্ন কালচারের নামে নোংরামি করে বেরায় তবে ঢাকার সব মেয়েরা এইরকম না কিছু কিছু মেয়ারা নোংরা টাইপের ।
জ্যামের মধ্যে আটকে আছি আমাদের মাইক্রোটা একটা পার্কের পাশে।
পার্কের ভিতরে একটা ছেলে একটা মেয়ে বসে আছে খুবি ক্লোজ ভাবে। মেয়েটা ছেলেটাকে এমন ভাবে বাহুডোরে আবদ্ধ করে আছে আর ছেলেটা মেয়েটার বুকেত ভিতরে মুখ লুকিয়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে নবজাতক শিশুকে তার মা বুকের মধ্যে ধরে রেখেছে।
ওদের আসেপাশে থাকা মানুষ ওদের কে দেখে লজ্জা পাচ্ছে আর ওরা নির্লজ্জর মত ওদের কাজ করেই যাচ্ছে। পাবলিক প্লেস কী আবেগ প্রকাশের স্থান…?
যে কোন সম্পর্কে হোক স্বামী স্ত্রী, প্রেমিক প্রেমিকার পাবলিক প্লেসে অবেগ প্রকাশে সংবেদনশীল হওয়া উচিত।
রাস্তাঘাটে আবেগ প্রকাশ করা তো কুকুরের কাজ। মানুষের কাজ তো সুন্দর আর প্রবীত্রতায় ভরা। আল্লাহ তালা কুকুরের লেজ দিয়েছে পাছা ঢাকার জন্য কিন্তু কুকুর তা না করে নির্লজ্জের মত লেজটা উঠিয়ে ঘুরে বেরায়। আমরা মানুষেরাও এখন কুকুরে পরিনিত হয়েছি।
ওই মেয়টাকে দেখে মনে মনে বললাম হাজার হাজার নারীদেরকে অসম্মান করার জন্য, কলঙ্কিত করার জন্য তোর মতো একটা মেয়েই যথেষ্ঠ।
চলবে…