#চল তবে শূন্যতা ধরে হাঁটি
Zannatul ferdaous zannat
part:13
লিফ্ট এর দরজা খুলে যেতেই একদৌড়ে অন্তি ওদের ফ্লাটের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। নিশ্বাস টা যেনো গলায় আটকে আসছে।
মা দরজা খুলতেই অন্তি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে নিজের রুমে ঢুকলো। বুকটাও ভার হয়ে আছে। মনে হচ্ছে ফেইন্ট হয়ে যাবে। তবে এখন নিজেকে স্বাভাবিক রাখাটা জরুরি। কেননা বাড়িতে বাবা মা আছেন। বিহন আজ যা করেছে বাবা মা কে তা বলা খুবই জরুরি। তবে অন্তির দুর্বলতা আরশান।বিহন যদি আরশানের কথা বাসায় বলে দেয়?
মনের মাঝে ভয় নিয়ে হাসি খুশি স্বাভাবিক হয়ে বাবা মার সাথে বসে ভাত খাওয়া আড্ডা দেয়া সব কিছুই অন্তির কাছে অনেক বেশি দমবন্ধের মতো লাগছে।তবুও দুই মুঠো ভাত খেতে বসেছে অন্তি। তবে তাড়াতাড়ি করতে যেয়ে গলায় মাছের কাঁটা আটকে গেলো। এটা নিয়ে কি হুলুস্থুল কান্ড। অন্তির মা বার বার মুঠো মুঠো সাদা ভাত অন্তিকে গিলে ফেলতে বলছে।অন্তির বাবা গ্লাসে পানি নিয়ে বসে আছেন। আবার না মেয়েটার গলায় ভাত আটকে যায়।
রুশ্য বাবা মা আর অন্তির এমন কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ হচ্ছে। রুশ্য যেনো অন্তির পিছনে লাগতে পারলেই খুশি।
একমুহূর্তে মেয়েটা যেনো আজকের ইন্সিডেন্ট টা ভুলে গেলো। কেমন একটা সুখ সুখ গন্ধ লাগছে। পরিবারের সবাই মিলে এমন হৈ হৈ করে খাওয়া, এমন অনুভূতিটা অনেক দিন পর পেলো অন্তি।
ঘুমাতে যাওয়ার সময় বিহন নামক অশান্তিটা যেনো আবার মাথায় চড়ে বসলো। অন্তির কিছুতেই ঘুম পাচ্ছে না। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে একটা ফোন থাকা খুবই জরুরি ছিলো। আরশানকে অন্তত বলতে পারতো, শেয়ার করতে পারলে হয়তো চিন্তাটা একটু কমতো কোনো সলুশনও পাওয়া যেতো। তবে যেহেতু এখন অন্তির কাছে কোনে ফোন নেই তাই পাইচারি করা ছাড়া আর কোনো কিছুই করার নেই অন্তির।
মাথায় একটা চিন্তাই ঘুরঘুর করছে শুধু, “বিহন কিছু বলে দিবে না তো? এতো কিছুর পর বাবা মা কে কিভাবে ফেস করবে অন্তি? তাছাড়া বিহন আরশানের কোনো ক্ষতি করবে না তো?”
সকালে ঘুম থেকে ধরফর করে উঠে বসলো অন্তি।মুখের সামনেই প্রিয়া চুল মেলে দিয়ে মনোযোগ সহকারে অন্তি কে দেখছে। অন্তি ভীতু গলায় বললো
-তুই? এখানে? এই সময়? এই ভাবে??l
-কখন থেকে ডাকছি,vতোর তো উঠার নামই নেই। তারাতাড়ি ঝটপট রেডি হয়ে নে, মামি তোর ব্যাগ গুছিয়েই রেখেছেন। আমাদের বাসায় যেয়ে খাবি।
-ব্যাগ গোছাতে হবে কেনো?
-আমি, তুই, পুনম আপু আর আপুর বর মানে অভি ভাইয়া আর অভি ভাইয়ার বোন ঘুরতে যাবো। ঢাকার ভেতরই কোনো একটা রিসোর্ট এ। আর কি জানিস তো মামা কে বলার সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেছেন। আমরা দুদিন থাকবো। তবুও মামা আপত্তি করলেন না। উল্টো মামিকে বললেন ব্যাগটা গুছিয়ে দিতে।
-অন্তির যেনো বিস্ময় কাটছে না। প্রিয়ার কথা গুলো স্বপ্নে শুনছে না তো?
অন্তিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রিয়া অন্তির হাত ঝাকিয়ে বললো
-হা করে থাকিস না দেরি হচ্ছে কিন্তু।
উন্তি উঠে ঘুম ঘুম চোখে ফ্রেশ হয়ে বসার ঘরে আসতেই বুঝলো যে সত্যি মা ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছেন।
প্রিয়া দের সাথে সকালের নাস্তা সেরে সবাই বেশ আড্ডা দিলো প্রিয়াদের বাড়িতে। আর দুপুরের খাবার সেরে অন্তি সবার সাথে রিসোর্টের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো। অন্তি সব থেকে খুশি হয়েছে ওদের সাথে নুন ও যাচ্ছে। সাথে অভির ছোট বোন আরিশাও রয়েছে।তবে নুন তখন থেকে ভাবি ভাবি করে বাসায় কি কি হলো, কি হচ্ছে, তার ভাই কি করলো, কি করে সারাদিন সব বর্ননা দিয়ে যাচ্ছে। অন্তির শুনতে বেশ ভালো লাগছে। বিশেষ করে নুন কোন ভনিতা ছাড়াই নির্সংকোচে ভাবি ডাকে। ডাকটা শুনতে অন্তির বেশ ভালো লাগে। তাছাড়া আরশানের সম্পর্কে জানতে অন্তির অনেক আগ্রহ। আর নুন যেহেতু আরশানকে সব সময় কাছ থেকে দেখে ওর থেকে ভালো বর্ননা আর কেউ দিতে পারবে না।
সারারাত অন্তির টেনশনে ঠিক ভাবে ঘুম হয় নি আর সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে চলে এসেছে তাই অন্তি গাড়িতে উঠার আধা ঘন্টার মাঝেই নুন এর কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলো।
রিসোর্ট টা বেশ। অনেকটা জায়গা জুড়ে কয়েকটা এলোমেলো ছড়ানো ছিটানো বাংলো বাড়ির মতো।চারটা পাশাপাশি রুম অভি বুকিং দিয়ে রেখেছিলো আগে থেকেই। অন্তি ঘুম ঘুম চোখে কোন মতে একটা রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো। শরীরটাও অনেক খারাপ লাগছে। তবে ঘুমটা ধরলো না। ওর পাশের রুমেই নুন আর আরিশা দখল করেছে। আর এক রুমে পুনম আর অভি। চতুর্থ রুমটার বাথরুমে প্রিয়া গোসল করতে ঢুকে গেলো।
সন্ধ্যার দিকে অন্তির হঠাৎ চোখ খুলে দেখলো চারপাশ অন্ধকার। হাই তুলতে তুলতে ওর মনে পড়ে গেলো এখানে ঘুরতে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। অন্তির এখন নিজেরই নিজের উপর রাগ লাগছে। সবাই কি ভাববে এটা মনে করতে করতে সবাইকে খুজলো কিন্তু কেউ ই কোনো রুম এ নেই। একদম কর্নারের রুমটাতে আলো দেখে অন্তি ওই রুমটার দিকে এগিয়ে গেলো। সবাই হয়তো ওই রুমেই আছে।তবে রুমের দরজাটা হালকা ভেজানো। চোখ ডলতে ডলতে দরজা হালকা খুলেই অন্তির মুখটা আপনা আপনি হা হয়ে গেলো।
দরজাটায় হালকা শব্দ হতেই আরশানও দরজার দিকে তাকালো। আরশানের মাথাতেও যেনো বাজ পড়লো।
অন্তি? এখানে? কিভাবে?
অন্তির যেনো গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছিলো। এই ছেলে এতো মুগ্ধকরে কেনো অন্তিকে? আরশান দাড়িয়ে দাড়িয়ে টাওয়েল দিয়ে চুল মুছছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মাত্র গোসল করে আসলো। অন্তি চোখ সরাতে পারছিলো না। জিম করা বডি যদিও পুরোপুরি সিক্সপ্যাক নয়,তবে পারফেক্ট। আরশান খালি গায়ে একটা ব্লাক জিন্স পড়ে আছে।
অন্তিকে এইখানে দেখে আরশান যেনো আর কিছু বলতে পারলো না। অন্তিকে যে ভেতরে আসতে বলবে এই খেয়ালও নেই ছেলেটার।
পকেট থেকে ফোনটা বের করে কোনোকিছু না ভেবেই আরশান অভিকে ফোন দিলো
-ভাই তুই এটা কি করলি? আমাকে বলিস নি কেনো অন্তি এখানে আসছে।
————-(ওপাশের কথাটা অন্তি শুনতে পেলো না)
-রাখ তোর সারপ্রাইজ। পুনম ভাবিকে কিভাবে ম্যানেজ করবি? ও তো আর এতো কিছু জানে না।
——-
-আমাকে একটা বার বলবি তো। অন্তির বাবা জানলে কি হবে বুঝছিস?
অন্তির শরীর যেনো অবশ হয়ে যাচ্ছে, আবার কেমন যেনো কান্না কান্নাও পাচ্ছে। দরজা ছেড়ে একছুটে যেয়ে অন্তি আরশানকে জড়িয়ে ধরলো। অন্তি নিজেও প্রস্তুত ছিলো না, কেনো এই কাজটা করলো নিজেও জানে না। তবে আরশানও বিস্মিত হয়ে গেলো। হাত থেকে ফোনটা পড়তে পড়তেও আরশান ধরে ফেললো আর বিছানার উপর ঢিল দিয়ে অন্তির গালের দুই পাশে হাত রেখে নিজের মুখোমুখি করতেই দেখলো মেয়েটা কাঁদছে।
-অন্তি! কাঁদছো কেনো? (মুহূর্তেই ছেলেটা অনেক সিরিয়াস হয়ে গেছে)
-জানিনা
এটুকু বলেই অন্তি আরশানকে আবার জড়িয়ে ধরলো।
আরশান বেশ অবাক হচ্ছে। প্রায় চার বছর আগে আরশান একদিন আবেগের বশবর্তী হয়ে অন্তিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার অপরাধে যেখানে সাতদিন অন্তি আরশানের সাথে কথা বলে নাই সেইখানে এই মেয়ে আজ নিজে থেকে জড়িয়ে ধরছে। তাও আবার এতো শক্ত করে যেনো ছেড়ে দিলেই আরশান চলে যাবে।
আরশান অন্তিকে হালকা জড়িয়ে ধরে একটু পর ছাড়িয়ে নিয়ে আবার দুই গালে হাত রেখে বললো
-কি হইছে পাগলি?
-তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।
-হ্যা বলো।
-তার আগে বলো তুমি এখানে কেনো?
-আর বলো না অভি ভাই আমাদের দুজনকেই আনছে তবে আমরা কেউই জানতাম না। তবে ভালই হলো বলো? ঠিক ভাবে কথা হয় না আমাদের দুটোদিন মন খুলে কথা বলা যাবে।
অন্তি চোখ মুছে আরশানকে ছেড়ে রুমের দিকে মনোযোগ দিলো। এই রুমটা অন্য রুমগুলোর থেকে আলাদা। একটু ছোট। রুমটার সামনেই একদম খোলা বারান্দা। ডানদিকে একটা বিছানা পাতা। সাদা বেডশিট বিছানো। আর তার পাশেই কাচের ছোট্ট গোল টেবিল।টেবিলটার উপর সুন্দর একটা লেম্প। বারান্দর দরজা ঘেসে দুটো সিঙ্গেল সোফা। আর তার পাশে ছোটো ওয়ারড্রব এর মতো কিছু একটা। তার পাশে একটা দরজা। বাথরুমের দরজা হয়তো।
অন্তি এতোকিছু খেয়াল করতে করতেই আরশান এর মাঝেই শার্ট টা পড়ে নিলো।
বিছানায় বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে অন্তি বললো
-পুনম আপু তো জানে না কিছু। পরে যদি ঝামেলা হয়।
আরশান ওয়ালেটটা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে বললো
-অভি ভাই ম্যানেজ করবে বললো। দেখি কি হয়। আচ্ছা কি যেনো বলবে বলছিলে?
-এখন না পড়ে বলবো। আচ্ছা ওরা সবাই কোথায় জানো কি?
-হ্যা রিসোর্টের রেস্টুরেন্টে খেতে গেছে। তুমিও চলো।খুধা লাগছে তো তাইনা?
-আমি তো এসেই ঘুমিয়ে গেছিলাম। খাওয়া হয়নি কিছু।
রেস্টুরেন্টের আলাদা টেবিলে পুনম আর অভি বসেছে।বাকিরা একটা বড় টেবিলে বসে আড্ডা দিচ্ছে। অভি তখন থেকে পুনমকে বুঝিয়ে যাচ্ছে কিন্তু পুনম অভির উপর প্রচন্ড রকমের বিরক্ত। পুনম এখানে এসেই জানতে পারলো অন্তি আর আরশানের ব্যাপারটা।মেয়েটার একটাই ভয় কোনো ভাবে অন্তির বাবা জানলে তো কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে ছাড়বেন। আর যদি জানেন যে এখানে অভির হাত আছে অভিকে পুরা কুচি কুচি করে কাটবে।
অভি পুনমকে মানাতে পুনমের হাত ধরে বললো
-আরে পুনম ওদের রিলেশন তো আমাদের জন্য হয়নি।এমন নয় তো যে আমাদের বিয়ের পর হয়েছে ওদের রিলেশন চার বছর এর ও পুরোনো। অন্তি যখন স্কুলে পড়তো তখন থেকে রিলেশন ওদের।
-হুয়াট? তুমি সব জানতে তাইনা?
-না বাবা। কয়েক দিন আগে জেনেছি।
-ছি ছি আমার বোনটা এতো অল্প বয়সে, আর তোমার ভাইটারও কেমন অনুমান অমন বাচ্চা মেয়ের সাথে।
-পুনম ওটা ওদের ব্যাপার। আর বাচ্চা কাকে বলছো? ও তখন নাইন এ পরতো। এযুগের পোলাপানরা তো ফাইভ পাশ করেই প্রেম বিদ্যায় ডিগ্রী নেয়। সেখানে ও অনেক ম্যাচিউর ছিলো।
আরশান দূর থেকে দেখেই বুঝলো অভি আর পুনমের মাঝে যে ঝগড়া চলছে। অন্তিকে প্রিয়ার সাথে বসতে দিয়ে আরশান নিজে এগিয়ে গেলো অভিদের টেবিলের দিকে। মনে হলো ওর নিজের একবার পুনমের সাথে কথা বলা দরকার।
অারশান খুব সুন্দর করে মানুষের সাথে মিশে যেতে পারে। সহজেই তার কথা গুলো অন্য কাউকে বুঝিয়ে ফেলতে পারে। ও টিচিং প্রফেশনে থাকলে খুব নাম করতো। “কন্ট্রোল সিস্টেম এন্ড এনালাইসিস ” সাবজেক্টটার জন্য আরশানের সিজিপিয়ে ৪ আসে নি।তাই এই সাবজেক্ট রিটেক দেয়ার ইচ্ছেও আছে। আর ওর পরিবারও চায় আরশান টিচিং প্রফেশনটা গ্রহন করুক। সে খুব সহযেই সবার সাথে কমিউনিকেট করতে পারে।
সে যাই হোক আরশান কথা বলে খুব সহজেই পুনমকে মানিয়ে নিতে পারলো। যদিও পুনম বার বার অন্তির পরিবারের কথা বলছিলো কিন্তু আরশানের যুক্তি আর পাগলামির সাথে পেরে উঠলো না। বরং এখন মনে হচ্ছে অন্তি খুব ভাগ্যবতি বলেই এমন একটা কেয়ারিং ছেলেকে পার্টনার হিসেবে পেয়েছে।
খাবার খেয়ে সবাই রিসোর্টে চলে আসলো। আজরাতটা হৈ হৈ করে কাটানোর প্লানিং সবার। অন্তির ভয়ছিলো পুনমকে নিয়ে কিন্তু পুনমকে স্বাভাবিক থাকতে দেখে অন্তিও নিশ্চিত হয়েছে। আরিশা পুনম নুন আর প্রিয়া চারজন মিলে মোবাইলে লুডু খেলছে আর অন্তি চুপচাপ ওদের খেলা দেখছে। এভাবে বাবা মা কে ছেড়ে কখনও কোনো রাত কাটায় নি। তাই মার কথা মনে পড়তেই অন্তি প্রিয়ার ফোনটা নিয়ে উঠে গেলে মার সাথে কথা বলার জন্য। পিহুকেও মিস করছে অনেক।রুশ্যর ক্লাস থাকায় সেও আসতে পারে নি। আর আজকাল তো রুশ্য আর পিহুর অনেক মিল হয়েছে যে বিড়াল বাচ্চাটা অন্তির কাছে থাকেই না।
মার সাথে কথা বলা শেষ হতেই অন্তি দেখলো আরশান আর অভি দুজন দারিয়ে কথা বলছে।
আরশানের কথা বলার ভঙ্গিটা খুব সুন্দর। একদম সোজা দাড়িয়ে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলে। যে কোনো শ্রোতাকে যেনো আকৃষ্ট করতে পারে। অন্তি মুগ্ধ হয়ে আরশানের কথা বলা দেখছিলো এরমাঝেই অভি অন্তিকে দেখে ডাক দিলো।
অন্তি আরশানের দিকে তাকিয়ে ছিলো এটা অভি ভাই দেখে ফেলেছে এটা ভাবতেই অন্তি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। অভি অন্তি আর আরশানকে একা রেখে চলে গেলো আর যাওয়ার আগে বলে গেলো
-একসাথে ঘুরো আড্ডা দাও কেউ বিরক্ত করবে না।তবে সময় মতো যে যার রুমে ঘুমাতে যেয়ো।
এই কথাটায় অন্তি আরও বেশি লজ্জা পেয়ে গেলো।তাই মাথা নিচু করেই থাকলো। অন্তিকে নিরব দেখে আরশান বললো
-তখন কি বলবে বলেছিলে, এখন কি বলা যাবে?
-রাগ করবে না তো?
-না, রাগ করবো কেনো?
অন্তি অকপটে বিহনের সাথে লিফ্টে ঘটে যাওয়া ঘটনা আরশানকে বলে দিলো। মুহূর্তেই আরশানের রাগ উঠলো তবে লিফ্টের ঘটনার জন্য নয় অন্তির আর একটা কথায়।
অন্তি পুরো ঘটনা বলার পর আহ্লাদি গলায় বলেছে
-বাসাটা না পাল্টাই? বাসা পাল্টালে যদি বিহন তোমার কথা বাবাকে বলে দেয়?
এই একটা কথায় আরশান রেগে যেয়ে বললো
-তুমি কি বাচ্চা অন্তি? কিচ্ছু বোঝো না? ও তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছে আমার কথা। তোমার বাবাকে বলার হলে সেদিন বিয়ের প্রপোজাল রিজেক্ট করার পরই বলে দিতো। ও জেদ আমার জন্য পুষছে তো? আমি দেখে নিবো। আর বাসাটা তুমি পাল্টাবে।আমি এতোদিন ধরে বলছি কথাটা কানে যাচ্ছে না তো? আমার কথা তখনই শুনলে আজ এমন সিচুয়েশন আসতো না।
এটুকু বলেই আরশান রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো।
সবাই খুব মজা করে আড্ডা দিচ্ছে কিন্তু অন্তির মনটা ভিষন খারাপ। আরশান কখনো এভাবে বকে নি অন্তিকে তাই ঠিক মতো হজম করতে পারলো না। রাতে যখন সবাই খাচ্ছিলো অন্তি তখনও মন মরা হয়ে ছিলো। আর কেউ খেয়াল না করুক আরশান এটা ঠিক বুঝলো। ডিনার শেষে আরও অনেক আড্ডা দিলো সবাই। কেউ কবিতা বললো, কেউ গল্প তবে নুন একটা গান গাইলো
“আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাবো
হারিয়ে যাবো আমি তোমার সাথে
সেই অঙ্গীকারের রাখী পরিয়ে দিতে
কিছু সময় রেখো তোমার হাতে
কিছু স্বপ্নে দেখা কিছু গল্পে শোনা
ছিল কল্পনা জাল এই প্রানে বোনা
তার অনুরাগের রাঙা তুলির ছোয়া
নাও বুলিয়ে নয়নপাতে”
গানটা অন্তির বেশ ভালো লাগলো। নুন এর কন্ঠ যে এতো সুন্দর অন্তি গানটা না শুনলে জানতোই না। নুনের প্রশংসা শেষে সবাই যে যার মতো ঘুমোতে গেলো। নুন ও জেদ ধরে বসলো অন্তির সাথে ঘুমাবে, তাই প্রিয়া আর আরশি পুনমদের পাশের রুমে ঘুমাতে চলে গেলো। তার পশের রুমে অন্তি আর নুন। আর তার পাশের রুমে আরশান।
নুন রুমে ঢুকে অন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো
-ভাবি আজ আমি অনেক খুশি। তোমাকে আর ভাইয়াকে কিন্তু বেশ মানায়। শুনোনা আজ কিন্তু আমরা অনেক আড্ডা দিবো। তোমাকে সব শুনতে হবে।
অন্তি হেসে দিয়ে জবাব দিলো
-জ্বি জনাবা বলেন আমি শুনছি।
কিন্তু নুন আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই ফোনে একটা মেসেজ আসলো।আর মেসেজটা চেক করেই নুন বিছানায় শুতে শুতে বললো
-ভাবিগো খুব ঘুম পাচ্ছে আজ। কাল গল্প করবো।
অন্তি নুনের কথায় পুরো অবাক হয়ে গেলো। এই মেয়ে মাত্র বললো কতো আড্ডা দিবে আর এখনই ঘুম ধরে গেলো। অন্তি আর কথা না বাড়িয়ে নুনের পাশে শুয়ে পড়লো। মনটা খুব খারাপ লাগছে। আরশান কেনো তখন এমন করলো? এপাশ ওপাশ করে যাচ্ছে অন্তি। হঠাৎ পিঠে কারো স্পর্শ পেতেই ধরফর করে উঠে বসলো।
অন্তি ভয়ে ভয়ে বললো
-কে?
-আমি(খুব লো ভয়েজে আরশান জবাব দিলো)
অন্তি কোনো জবাব দিলো না। উল্টে অভিমান দেখাচ্ছে। তখন কেমন রাগ দেখালো। এখন আবার কেনো আসছে?
আরশান আবার বললো
-একটু বাইরে চলো প্লিজ।
-আমি যাবো না।
-প্লিজ।
-না।
-প্লিজ।
-না।
-লাস্ট বার বলছি, প্লিজ।
-না না না।
আরশান আর রিকুয়েস্ট না করে একটানে অন্তিকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এসে নিজের রুমে নিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে দরজা লাগাতে লাগাতে বললো
-কি বলছিলে আসবে না তাই না?
-হ্যা তাই।
আরশান এবার অন্তির পায়ের কাছে ফ্লোরে বসে অন্তির কোলে মাথা রেখে বললো
-অন্তি আমার সবথেকে বড় দুর্বল যায়গা তুমি। তোমার কোনো ক্ষতি হোক তা আমি চাই না। তাই তোমাকে ওভাবে বলা। প্লিজ কিছু মনে করো না। রাগও করো না।
-হুম
-কি হুম। তুমি জানো লজ্জা শরম বিসর্জন দিয়ে নুনকে বলছি ঘুমিয়ে যেতে আর দরজা খোলা রাখতে।বিনিময়ে ঘুস ও দিতে চেয়েছি।
অন্তি নড়েচড়ে বসে বললো
-ছি ছি ছি! ছোট বোনকে বলো লজ্জা লাগে না? এই জন্যই ও হুট করে ঘুমিয়ে গেলো?
-ও আমার বেস্টফ্রেন্ড।
-তাই বলে, ছি! আর এমন করবে না প্লিজ তোমার লজ্জা না লাগুক আমার লাগে।
আরশান হেসে দিয়ে বললো
-আচ্ছা।
অন্তি আর কিছু বলতে পারলো না। কেমন যেনো সুখ সুখ লাগছে আবার লজ্জাও। এই ছেলেটা পাশে থাকলে এতো সুখ লাগে কেনো? সব কিছু কেমন শান্ত হয়ে যায়। শুধু হার্টবিট চলে অনেক দ্রুত। কেনো কেনো কেনো? এতো কেনোর যেনো কোনো উত্তর জানা নেই অন্তির। শুধু এটুকু জানে এই ছেলের জন্য মনের মাঝে আছে অফুরন্ত মায়া আর অপরিসীম ভালোবাসা।
নিরবতা ভেঙে আরশান বললো
-মন থেকে চাইলে সব পাওয়া যায় অন্তি। এইযে আমি এখন তোমার কোলে মাথা রেখে আছি এই মুহুর্ত টা আমি মন থেকে চাইতাম।
-আর কি চাও মন থেকে?
আরশান বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বুকের বা পাশটা দেখিয়ে বললো
-তোমাকে বুকে চাই।ঠিক এইখানে।
কথাটা বলার সাথে সাথেই অন্তি আরশানের বুকে ধরা দিলো।
বেশ কয়েক মিনিট পর আরশান অন্তির গাল ধরে বললো
-আর একটা জিনিস চাই।
-কি?
আরশান অন্তির গালের দুইপাশ হাতে আকড়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো।
অন্তি শুধু চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলো আর একটা সময় আরশানের পিঠটা আকড়ে ধরলো।
ওর খুব বলতে ইচ্ছে করছে-
“আচ্ছা শান সুখ সুখ অনুভূতি গুলো কি এমনই? আমায় কি এখন হাওয়ায় ভাসাবে?”
চলবে….