মন পাড়ায় পর্ব ৫৩+৫৪

#মন_পাড়ায়
#পর্ব_৫৩
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা

অর্ক বসে আছে বিনয়ের মা’য়ের সামনে। চা’য়ে চুমুক দিচ্ছি সে। বিনয়ের মা বলল,
“বলো না বাবা মেয়েটাই কুফা। আমাদের বাড়িতে আসার পর থেকে আমাদের পরিবার নষ্ট করেছে আর এখন তোমার পরিবার। দেখ বাবা তোমাদের সামনে ভালো সাজে কিন্তু পিছে ঠিকই উল্টাপাল্টা কথা বলে। মেয়েটাই এমন।”
বিনয়ের মা প্রায় দশ মিনিট ধরে প্রভার নামে খারাপ কথা বলেই যাচ্ছে আর অর্ক তা চুপচাপ শুনছে কিছু বলতে না। সে হঠাৎ করে বিনয়ের মা’য়ের কথা কেটে বলল,
“আন্টি একটু ফাতেমা ডাক দিবেন?”
কথাটা শুনতেই বিনয়ের মা হকচকিয়ে গেল। সে বিস্মিত সুরে বলল,
“কে…কেন বাবা?”
“একটু ডাক দিন। কতদিন দেখি না। ওর ভার্সিটি নিয়ে কথা আছে।”
বিনয়ের মা’কে অনেক অস্বস্তিতে ভুগতে দেখা গেল কিন্তু তবুও ডাকতে হলো তার ফাতেমাকে। ফাতেমা আসার পর সে ফাতেমাকে জিজ্ঞেস করল,
“কেমন আছিস ফাতেমা?”
“ভালো ভাইয়া।”
“তোর ভার্সিটি কেমন চলে?”
ফাতেমা আড়চোখে তাকায় তার মা’য়ের দিকে আবার মাথা নামিয়ে উওর দেয়,
“ভালো ভাইয়া।”
“ভালো? কিন্তু তোর ভার্সিটি থেকে তো জানতে পাই যে তুই ক্লাসই করিস না। ফার্স্ট ইয়ারে তিনদিন পড়ে আর ক্লাসই করিস নি। পরীক্ষাও দিস নি।”
সাথে সাথে বিনয়ের মা উঠে তার মেয়ের কাঁধ ধরে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“কী! তুই পরীক্ষা দেস নি? ক্লাস করিস নি? তাইলে প্রতিদিন কই ঢ্যাঙঢ্যাঙ করে বেড়াস?”
বিনয়ের মা’য়ের নাটক দেখে অর্ক তাচ্ছিল্য হেসে চা’য়ে আবার চুমুক দিয়ে বলে,
“আন্টি আমি আপনাকে বেতন যে দিতাম তা কোথায় গেল? এখন এইটা বলবেন না যে ফাতেমা বেতন দিত কারণ আপনি নিজে বলেছেন বেতন আপনি দেন।”
বিনয়ের মা অর্কের দিকে তাকালো। তাকে বিভ্রান্ত দেখাল। অর্ক ফাতেমাকে বলল,
“তুই যেয়ে তোর প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে নে।”
ফাতেমা সাথে সাথে রুমে ঢুকে পড়ে। বিনয়ের মা ধীরে-সুস্থে বসে সোফায়। অর্ক তার দিকে পাঁচটা কাগজ এগিয়ে দেয়। বিনয়ের মা জিজ্ঞেস করে,
“এইসব কী বাবা?”
“আপনি এখন আপনার নাটক বন্ধ করতে পারেন। আমি আপনার সত্যিটা জানি। আর এগুলো হচ্ছে বিনয়ের লেখা চিঠি। যেখানে স্পষ্ট লেখা আছে যে আপনি প্রভার নামে যা বলেছেন তা সব মিথ্যা। খালা আমি আপনাকে অনেক সম্মান করতাম। এইসব আপনার থেকে আশা করি নি।আপনাকে আমি প্রভার কথা কী বলব! আপনি ফাতেমার সাথে কত কি করেছেন তাতে যদি আপনার বুক না কাঁপে তাহলে প্রভা তো পরের ঘরের মেয়ে।”
অর্ক উঠে দাঁড়িয়ে চিঠিগুলো হাতে নিলো। ফাতেমাও তার রুম থেকে একটা ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছে। অর্ক যাওয়ার পূর্বে বলল,
“আমি ফাতেমাকে নিয়ে যাচ্ছি আমার বাসায়। সেখানে থেকে ওকে পড়াশোনা করাব আর পরে বিয়েও দিব। আর আপনি ভুলেও আর উল্টা-পাল্টা কিছু করবেন না, নাহয় আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”
বলে অর্কে ফাতেমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই বাহিরে গাড়ির কাছে যা।”
ফাতেমা কাঁপছিলো সে মুহূর্তে। আড়চোখে একবার তার মা’য়ের দিকে তাকাল। তার অগ্নিদৃষ্টি দেখে দৌড়ে গেল বাসার বাহিরে।
পিছনে অর্ক যেতে নিলেই বিনয়ের মা বলল,
“তোমার কী মনে হয় যে তুমি আমাকে ধমক দিবে আর আমি চুপ থাকব? আমি সবাইকে এটা বলে দিব যে তোমার ও প্রভার মাঝে আগের থেকে খারাপ সম্পর্ক ছিলো এইজন্য তোমরা আমার ছেলেকে…..”
অর্ক বিনয়ের মা’য়ের কথা কেটে স্বাভাবিক গলায় বলল,
“আর আমি আপনাদের লাইফ হেল করে দিব। আপনি সে মুহূর্তের জন্য আফসোস করবেন যে মুহূর্তে আপনি এই কথাটা ভেবেছেন।”
অর্ক ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি নিয়ে চলে গেল সেখান থেকে।
.
.
ঝিনুক ভার্সিটি যেয়ে সবার পূর্বে গেল হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অফিস রুমে। সেখান থেকে গেল ৩০৭ নং রুমে। সে রুমে যেয়ে প্রফেসর রহিমকে বাহির থেকে ডাকলো। স্যার বোর্ডে অঙ্ক করাচ্ছিলো। ঝিনুকের কথা শুনে বের হলো একটু। বের হয়েই কড়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“দেখছ তুমি ক্লাস করাচ্ছি তবুও বারবার ডাকছ কেন? আর তুমি ফাস্ট ইয়ারে না? এতদিন ক্লাস করছ না কেন?”
ঝিনুক কিছু বলল না। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। তার সামনে একটি ছবি তুলে ধরলো।

ছবিটা দেখে রঙ উড়ে গেল প্রফেসর রহিমের। সে বিস্মিত দৃষ্টিতে ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলো। বিস্ময়ে সে ছবিটা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে তাকাল ঝিনুকের দিকে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“তুমি এই ছবি পেলে কীভাবে? এই ছবি তো ঝুমুরের কাছে ছিলো। তুমি ঝুমুরের সাথে পরিচিত?”
ঝিনুক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এখানে লোকটা আপনি?”
“তুমি অফিসে যেয়ে বসো, আমি আসছি।”
“আপনি আমাকে উওর দিন।”
“আমি ক্লাসে বলে আসছি। তুমি দাঁড়াও।”
প্রফেসর রহিম রুম থেকে সবাইকে কাজ দিয়ে ঝিনুককে নিয়ে গেল অফিস-রুমে। সেখানে একটি মেডাম কাজ করছিলো। তাকেও বের করলো কোনো এক কাজের বাহানায়। তারপর ঝিনুককে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি ঝুমুরকে চেনো? ওর বোনের মেয়ে তুমি? নাম কী যেন? হ্যাঁ প্রভা। না, ও তো আরও বড় ছিলো। তুমি কীভাবে চেনো ঝুমুরকে? আর কেমন আছে ও? কতবছর ধরে দেখি না।”
ঝিনুক ক্রোধের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে। তার চোখে জল টলমল করছে। হাতের মুঠো বন্ধ করে রেখেছে। সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“উনি আত্নহত্যা করেছে একুশ বছর আগেই।”
কথাটা শুনার জন্য রহিম স্যারকে অপ্রস্তুত দেখাল। সে টেবিলটা ধরে দাঁড়ালো। তার দৃষ্টি বিভ্রান্ত।

ঝিনুক আবারও বলল,
“আর আমি উনার মেয়ে।”
প্রফেসর রহিম চোখ তুলে তাকাল এবার। ঝিনুক তার চোখে জল দেখতে পেয়ে বুঝতে পারল আসলেই হয়তো তার বাবা উনি। কিন্তু লোকটা কাঁদছে কেন? যে মানুষ সে বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তার খবর রাখে নি এমন মানুষের এই নাটকীয় কান্না দেখার বিন্দুমাত্র শখ নেই তার।

লোকটা তার মাথায় হাত রাখতে নিলেই ঝিনুক এক ঝটকায় তার হাত সরিয়ে দিলো। সিক্ত কন্ঠে বলল,
“আপনার জন্য আমার মা আত্নহত্যা করেছে আর আমি অনাথ হয়ে গেছি। সাথে পেয়েছি অবৈধ সন্তানের সিল। আপনি যদি আমার মা’কে আপনই করতেন তাহলে কেন উনাকে ভালোবাসা দেখালেন? কেন? সেদিন আপনার মেয়েকে দেখেছিলাম আপনার সাথে। খুব ভালোবাসেন ওকে না? আমার কী? তাহলে আমি কী দোষ করেছিলাম? আমাকে ফেলে আসলেন কেন? আমাদের জীবনটা এলোমেলো করে দিয়ে নিজে সুখে সংসার করছেন?”
প্রফেসর রহিম কাঁপছিলেন। সে যেয়ে বসলেন তার চেয়ারে। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর তার মানিব্যাগ হাতে নিয়ে একটা ছবি বের করে দিলেন আর বললেন,
“এইটা আমার ও সীমার বিয়ের ছবি।”
ঝিনুক ছবিটা দূর থেকে দেখেই চিনলো যে এই ছবির মেয়েটা তার মা’য়ের সাথের ছবিতেও ছিলো।
প্রফেসর রহিম আবার একটি ছবি বের করে বললেন,
“আর এইটা ঝুমুর ও অনিকের বিয়ের ছবি।”
কথাটা শুনতেই চমকে গেল ঝিনুক। অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ প্রফেসর রহিমের দিকে তাকিয়ে থেকে ছবিটা হাতে নিলো। দেখলো ছবিটা আসলে তার মা ও আরেকটি ছেলের। সে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকায় প্রফেসর রহিমের দিকে।

প্রফেসর রহিম বললেন,
“তুমি ওদের ভালোবাসার অংশ মামনী। অবৈধ সন্তান বলে ওদের ভালোবাসার অপমান করো না। ওরা বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলো। আর এটা ওদের বিয়ের ছবি। আমি ও অনিক অনেক ভালো বন্ধু ছিলাম। সীমাকে আমি পছন্দ করতাম এবং সীমার বান্ধবী ছিলো ঝুমুর ও শান্তা। আমার ও সীমার সম্পর্কে পর আমরা জানতে পারি ঝুমুর ও অনিকও একে একে অপরকে পছন্দ করে। আর আমরাই ওদের সম্পর্ক করতে সাহায্য করি। এরপর সীমার পরিবার আমাদের সম্পর্কের কথা জানে এবং আমাদের সম্পর্ক ভাঙতে চায়। আমাকে তারা কোনোভাবেই আপন করতো না তাই আমরা দুইবছর সবাইকে বুঝানোর পর হার মেনে পালিয়ে বিয়ে করি। আর আমাদের দেখাদেখি ঝুমুরের মনেও শখ জাগে বিয়ের। তোমার মা পাগল ছিলো একটা। সারাটাক্ষন পাগলামো করতেই থাকতো। তবে হ্যাঁ সে পাগলামিগুলো খুব মনে করেছি এতবছর।
অনিকের পরিবারে ঝ
ঝুমুরের কথা প্রায় সবাই জানতো কিন্তু ওর মা মেনে নিচ্ছিলো না ঝুমুরকে। সে শহরের শিক্ষিত কোনো মেয়েকে ঘরের মেয়ে করেই আনবেন না।
ঝুমুরের পরিবারে শুধু ওর মা জানতো অনিকের কথা। ঝুমুরের জেদের কারণেই আমাদের বিয়ের একসাপ্তাহের মধ্যে ঝুমুর ও অনিক বিয়ে করে। আর তার দশদিন পর ঝুমুরের মা’য়ের মৃত্যুর খবর পাই। কিন্তু আমরা কেউ-ই সেখানে যেতে পারি না কারণ আমার পরিবার পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেছিলো। আমার মামা ছিলো পুলিশে তাই ভারী সমস্যা হয়। কিন্তু অনিক যায় সেদিন। কিন্তু ঝুমুরের সাথে কথা বলতে পারে না। ভালো মতো দেখাও করতে পারে নি। মানুষ ছিলো যে অনেক। আমরা কয়েকদিন ওর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু ঝুমুরের কোনো খবর ছিলো না। ওর মা মারা গিয়েছিল তাই বুঝতে পারছিলাম যে ও এখন কথা বলার অবস্থায় নেই। অন্যদিকে অনিকের পরিবার ওকে কলকাতা পাঠায় যেন পুলিশের এইসব জঞ্জাল থেকে বের হতে পারে।
তবে অনিকে কলকাতা যাওয়ার পূর্বে দেখা করে ঝুমুরকে সবটা জানায়।
আমরা একমাস পর জানতে পারি অনিকের মা না’কি ঝুমুরকে বলেছে অনিক অন্য কোথাও বিয়ে করেছে। যে মেয়েকে অনিকের জন্য পছন্দ করেছে তাকে বউ হিসেবে পরিচয় করিয়েছিলো ঝুমুরকে। এইসব সীমাকে অনিকের ভাবি বলেছে। আমরা ঝুমুরের বাসায় যেয়ে দেখি ঝুমুর এবং ওর বাবা কেউ-ই নেই ঘরে। আশেপাশে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তারা গিয়েছে চট্টগ্রাম। ঝুমুরের বোনের বাসায় শিফট হয়ে গেছে। আমরা জানতাম না ওর বোনের বাসা কোথায়! এরপর আর ওকে খুঁজে পাই নি। আমি জানি না ও অনিকের মা’য়ের কথা বিশ্বাস করে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে কি’না? যদি নিয়ে থাকে তাহলে ও অনিকের ভালোবাসার অপমান করেছে। অনিক ঝুমুরের জন্য নিজের পরিবারের সাথে যুদ্ধ করেছে একরকম আর ও বিশ্বাসই রাখলো না সে ভালোবাসার উপর। কিন্তু আমার মনে হয় না ঝুমুর কখনো অবিশ্বাস করবে অনিককে। ওদের ভালোবাসা ভীষণ গভীর ছিলো।”
ঝিনুকের সাথে সাথে মাথায় এলো সৈকতের সাথে তার করা ব্যবহারগুলো। সে আবার তাকাল তার মা ও বাবার ছবির দিকে। আবার নোনাপানি মাখা নয়ন নিয়ে তাকাল প্রফেসর রহিমের দিকে। ঝিনুক ভীষণ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কোথায় এখন সে?”
“তোমার বাবা?”
কথাটা শুনতেই ঝিনুকের কান্না আসতে চাইলো। তার বাবা? আজ প্রথম এই শব্দটা শুনে তার ঘৃণা লাগছে না। কাজ করছে একরাশ সুখ। সে ভীষণ আগ্রহ নিয়ে মাথা নাড়ালো।
প্রফেসর রহিম তার চশমা খুলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“কলকাতা যাওয়ার চারমাস পরই ও এক্সিডেন্টে মারা গেছে।”
কথাটা শুনতেই ঝিনুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। সে লোকটা আজীবন ঘৃণা করে এসেছে। তার জীবন থেকে মুছে দিতে চেয়েছে। আজ যখন সে লোকটাকে সে নিজের বাবা হিসেবে প্রথমবার সম্মান করছে তখন সে জানতে পারছে মানুষটার অস্তিত্বই নেই এই পৃথিবীতে!
প্রফেসর রহিম আবারও বললেন,
“আমাদের তো জানানোও হয় নি ওর মৃত্যুর খবর। প্রায় একবছর যোগাযোগ না করায় আমি অনেক খোঁজ নেওয়ার পর জানতে পারি অনিক আর নেই।”
ঝিনুক চোখ বন্ধ করতেই তার দুইগাল ভিজে গেল।
প্রফেসর রহিম আবারও বললেন,
“মামনী তুমি বাসায় চলো, সীমা তোমাকে দেখে অনেক খুশি হবে। শুধু ঝুমুরের মৃত্যুর কথাটা….. ”
ঝিনুক তার কথা কেটে উদাসীন কন্ঠে বলল,
“আজ না স্যার। ক্ষমা করবেন আপনার সাথে এত বাজে ব্যবহার করার জন্য।”
“চাচা ডাক দিবে। তুমি না দেখতে তোমার মা’য়ের মতো হয়েছ কিন্তু চোখটা তোমার বাবার মতো। অনিক ও ঝুমুর দেখতে পেল না তাদের মেয়েটা এত মিষ্টি হয়েছে, মাশাল্লাহ!”
“চাচা আমি কী বাবা ও মা’য়ে ছবিটা নিতে পারি?”
প্রফেসর রহিম তার চোখ মুখে ব্যস্ত হয়ে বলল,
“অবশ্যই মামনী। তুমি কিছু খাবে মা? আনাব? দাঁড়িয়ে আছ কেন বসো।”
“না, আজ এমন অনেক কিছু জেনেছি যা আমি সারাজীবনে কল্পনাও করি নি।”
.
.
ঝিনুক বসেছিল ভার্সিটির পিছনের এক জায়গায় প্রায় দুই ঘন্টা ধরে। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। সে ঠিক বুঝতে পারছে না তার অনুভূতি। একদিক দিয়ে তার বাবার প্রতি এত বছরের ঘৃণাটা ভুল প্রমাণ হওয়ায় স্বস্তি লাগছে আবার অন্যদিকে সে বাবা পৃথিবীতে নেই ভেবে বুকের ভেতর বিষণ্ণতা ছড়িয়ে যাচ্ছে।

ইতিমধ্যে অঞ্জলি আসলো কোথা থেকে সে ঝিনুককে দেখে ধমকের সুরে বলল,
“তোকে না আমি বলেছিলাম বারোটায় দেখা করব? প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট ধরে কল দিচ্ছি তোকে তোর খবরই নেই। প্রভা আপুকে কল দিয়ে জানলাম তুই বের হয়েছিস। সম্পূর্ণ ভার্সিটিতে খোঁজার পর এইখানে পেলাম তোকে। আচ্ছা শুন একজনের সাথে তোকে দেখা করাব।”
#মন_পাড়ায়
#পর্ব_৫৪
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা

ঝিনুক উদাসীন কন্ঠে বলল,
“প্লিজ অঞ্জলি আজ না।”
“সে এসে বসে আছে ক্যান্টিনে।”
“কে?”
“মোহিনী।”
চকিতে তাকায় সে অঞ্জলির দিকে। জিজ্ঞেস করে,
“যার সাথে সৈকতের…..”
অঞ্জলি তার কথা কেটে বলে,
“আমি তোকে মোহিনীর সাথে কথা বলার পর সবটা বলব।”

ক্যান্টিনে বসে আছে তিনজন। মোহিনীর কোলে একটা ছোট বাচ্চা। ঝিনুক সে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে ছিলো। মোহিনী বলল,
“তুমি ঝিনুক তাই না? সৈকত তোমাকে নিয়ে খুব কথা বলে। বিশেষ করে তোমার হাসিটা নিয়ে।”
ঝিনুক মোহিনীর দিকে তাকাল কিন্তু কিছু বলল না। তার গলা দিয়ে কোনো শব্দই যেন বের হচ্ছে না। একদিনে তার সাথে আর কত কি হবে এবং সে এইসব কিভাবে সামলাবে তাই ভাবছে সে।
মোহিনী আবার বলল,
“এত বছর পর এই ভার্সিটিতে এসে অনেক ভালো লাগছে। পুরনো অনেক স্মৃতি ভাসছে চোখের সামনে। থ্যাঙ্কিউ অঞ্জলি আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য, নাহয় আমি হয়তো কখনো আর এই অনুভূতি উপভোগ করতে পারতাম না।”
অঞ্জলি হেসে বলল,
“বাবুর নাম কী আপু?”
“সাগর।”
ঝিনুক বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকায় মোহিনীর দিকে। তার বুকের ভেতর দলা বাঁধে একরাশ ভয়। ‘সাগর’ নামটা সৈকতের সাথে মিলানো।

অঞ্জলি মোহিনীকে জিজ্ঞেস করল,
“আপু সৈকত ভাইয়া জানে যে আপনারা এসেছেন?”
“তুমি মানা করেছ দেখে আর জানাই নি। আচ্ছা যেজন্য এসেছি তা বলি?”
অঞ্জলি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। মোহিনী বলতে শুরু করল,
“আমি ক্লাস নাইনে থাকতে একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে যাই যা। প্রায় ছয়মাস পর জানতে পারি ছেলেটা আমার সাথে টাইমপাস করছিলো। কিন্তু আমি আমার ভবিষ্যৎ ওর সাথে দেখতে শুরু করেছিলাম। আমি নিজেও ভেঙে পড়ি। ও যখন অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্কে যায় তখন আল্লাহ জানে মাথায় কি ভূত চাপে আমি কয়েকটা করে ছেলের সাথে সম্পর্কে যেতে শুরু করি। এর মধ্যেই আমি দুইবার প্রেগন্যান্ট হয়েছিলাম। আর এবরশনও করিয়েছি। পরে আমার বন্ধুত্ব হয় সৈকতের সাথে। সত্যি বলতে ওকে আমি পছন্দও করতাম। সৈকতকে চেনার পর ওকে কে না পছন্দ করবে? খুব চেষ্টা করেছিলাম ওকে পাওয়ার। এর মধ্যেই ভার্সিটিতে গুজব আমাদের মধ্যে সম্পর্ক আছে। কিন্তু সৈকত বলেছিল ও অন্য কাওকে ভালোবাসে আর কোনো ভাবেই মেয়েটার বিশ্বাস ভাঙবে না। মেয়েটার চোখে কোনোমতে কান্না দেখতে পারবে না সৈকত। আমি এইসব নিয়ে ডিস্টার্ব ছিলাম তখন আবার একজনের সাথে সম্পর্কে যাই এবং প্রেগন্যান্টও হই। প্রেগ্ন্যাসির রিপোর্ট একদিন একটা বইয়ে থেকে যায় ভুলে সে থেকেই ক্লাসে সবাই জানে যে আমি প্রেগন্যান্ট। এইসব নিয়ে অনেক কিছু হয় তখন। আমি এবরশন করাতে যেতাম কিন্তু সৈকত এর আগেই সব জেনে যায় এবং আমাকে অনেক বুঝালো। বুঝালো যে আমি যা করছি তা কত খারাপ। শুধু আমি নিজের না আরও অনেকের জীবন নষ্ট করছি। ওই ছেলেটা আমার সাথে যা করেছে আমি কতগুলো ছেলের সাথেও তা করছি। সাথে হত্যা করছি কয়টা প্রাণের, আমার অংশের।
সাগরের বাবা কোনো কিছুতেই রাজি ছিলো না ওকে মেনে নেওয়ার জন্য। ও বিশ্বাস করতে পারবে না যে এইটা তার বাচ্চা। ওর মতে আমার মতো চরিত্রহীন মেয়েকে ও বিশ্বাস করতে পারবে না। কিন্তু এখানে বাচ্চা নিয়ে থাকাটা আমার পক্ষে জটিল হয়ে যায়।

আমার মা বাবা ডিভোর্সের পর আলাদা হয়ে যায় তাই অনেক আগে থেকেই হোস্টেলে থাকতাম আমি। তারা মাসে টাকা পাঠাতেন এই পর্যন্তই তাদের দায়িত্ব ছিলো। সৈকত তাদের সাথেও কথা বলে। তারা শুরুতে অনেক রাগ করে, আমাকে মেয়ে মানতেও নারাজ ছিলো তারা। তারপর সৈকত উনাদের বলেছিলো আমাকে সঠিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাদের প্রথমে সময় বের করা উচিত তারপর আমাকে দোষারোপ করা উচিত। আমার বাবা থাইল্যান্ডে থাকতো। সৈকত আমাকে দূরে পাঠিয়ে দেয়, আমার বাবার কাছে। আমি সেখানে খুশি আছি। পড়াশোনা করছি। দিনকাল ভালোই যাচ্ছে। সৈকতের সাথে এখনো যোগাযোগ হয় আমার তবে শুধু বন্ধু হিসেবেই। ও কখনো আমার দিকে খারাপ নজরে তাকায়ও নি। ও তো তোমাকে ছাড়া অন্যকোনো মেয়ের কথা কখনো ভাবেও নি। এত বছর ধরে ভালোবেসেই আসছে। তুমি যখন ওর থেকে দূরে ছিলে তখনও ও তোমার খেয়াল রাখতো। তুমি তোমার বান্ধবী মিথিলাকে জিজ্ঞেস করতে পারো আমার কথা বিশ্বাস না হলে।”
মোহিনী ঝিনুকের হাতের উপর হাত রেখে বলল,
“তুমি অনেক ভাগ্যবান ঝিনুক যে সৈকত তোমাকে ভালোবেসেছে।”

ঝিনুক স্তব্ধ হয়ে রইলো। তার চোখটা সিক্ত হয়ে এলো। সে কাঁপা-কাঁপা কন্ঠে বলল,
“কিন্তু রিপোর্টে যে বাবার নামের জায়গায় সৈকতের নাম ছিলো আর ডাক্তারের কেবিনের সামনে যে আপনারা দুইজন ছিলেন?”
“সাগরের বাবা তো ওকে মানতেই রাজি না উনার নাম দিতামই বা কীভাবে? সৈকতই সব করেছে সাগরের জন্য। আজ সাগর বেঁচে আছে তো শুধুমাত্র সৈকতের জন্য। আজ আমি মাতৃত্বের মধুর স্বাদ উপভোগ করছি তাও ওর কৃপায়, নাহলে আমি তো আবার অমানুষের মতো আরেকটা প্রাণ নিয়ে নিতাম। তাই ওর নামের সাথে মিল রেখেই সাগরের নাম রাখা। আমার এই অবস্থা থাকায় প্রথমে সৈকত তোমাদের ব্রেকাপ সম্পর্কে জানায় নি। পরে যখন জানতে পারি তখন তোমাকে সত্যি বলতে চাইলেও সৈকত দেয় নি। আমি জানি না কেন!”
“কিন্তু আমি জানি।”
মোহিনী ও ঝিনুক তাকাল অঞ্জলির দিক। ঝিনুক মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করল, “কেন?”
অঞ্জলি তাকে সবটা খুলে বলল। ওদিন সৈকত তাকে ছাদে যা বলেছিলো, সব।
সব কথা শুনে মোহিনী বলল,
“ছেলেটা সারাটা জীবন অন্যের জন্যই কাটালো। নিজে কী পেল কষ্ট ছাড়া?”
ঝিনুক চোখ বন্ধ করে রইলো। তার দমটা আটকে আসছে যেন। মাথায় ঝিম ধরে আছে। সে তার কপালে হাত রেখে অনেকক্ষণ বসে রইলো। তারপর উঠে দাঁড়ালো। ব্যাগ নিয়ে বলল,
“আমাকে যেতে হবে।”
অঞ্জলি প্রশ্ন করল,
“কোথায়?”
উওর দিলো না ঝিনুক। দ্রুত গতিতে হাঁটা শুরু করল। দরজায় একবার দেখা হয় সাবের ও অর্ণবের সাথে। অর্ণব ঝিনুককে দেখে জিজ্ঞেস করে,
“কোথায় ছিলে তুমি এতদিন? কল দিয়েছিলাম তুমি……”
ঝিনুক উত্তর না দিয়েই হাঁটা শুরু করল। ফোনে ডায়েল করছিলো কারও নাম্বার ।
সাবের বিস্মিত কন্ঠে বলল,
“এই মেয়েটার আবার কী হলো?”
“দেখে আসব?”
অঞ্জলি তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত আড়াআড়ি ভাঁজ করে বলল,
“ওকে দেখা লাগবে না। কিন্তু আপনাদের কারও সাথে দেখা করানোর ইচ্ছা আছে।”
“কার সাথে?” প্রশ্ন করল অর্ণব।
অঞ্জলি তাকে নিয়ে গেল ভেতরে। ভেতরে যেয়ে সে দেখতে পায় মোহিনীকে। সে বিস্ময়ের শীর্ষে।
মোহিনী মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করল,
“আরে তোমরা আমার ক্লাসে ছিলে না? কেমন আছ তোমরা?”
সাবেক উত্তর দিলো,
“আমরা তো ভালো। তোমার খবর কী? তুমি তো আর দেখাই দিলে না।”
অর্ণব কিছু বলল না। তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না।
.
.
ঝিনুক ফোনটা কানের কাছে নিয়েই বলল,
“সে মেয়েটার সাথে সৈকতের কোনো সম্পর্ক ছিলো না ভাইয়া। সৈকত শুধু ওর সাহায্য করার জন্য রিপোর্টে নিজের নাম দিয়েছে। আর এইজন্যই সৈকত মোহিনীর সাথে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলো কিন্তু তোমার বন্ধু মিথ্যা বলল কেন যে সে সৈকত ও মোহিনীকে কিছু গভীর মুহূর্তে ব্যয় করতে দেখেছে? মিথ্যা বলেছে কেন তোমার বন্ধু ভাইয়া?”
ফোনের ওপাশে পরিশ। সে কথাগুলো শুনে অনেকক্ষণ স্তব্ধ রইল। তারপর বলল,
“আপাতত এইসব কথা বলার সময় না ঝিনুক। বাবা হার্ট অ্যাটাক করেছে, আমি সেখানে যাচ্ছি। প্রভা ও দুলাভাই রওনা দিয়েছে। তুই কী যাবি না’কি এখানে থাকবি?”
মুহূর্তে যেন ঝিনুকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। আজ কী হচ্ছে তার সাথে?
সে আতঙ্ক নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“খালু….খালু ঠিক আছে তো ভাইয়া?”
“হাস্পাতাল নিয়ে গেছে। আমি ঘুম থেকে উঠেই খবরটা পাই। প্রভা ও দুলাভাই আমাকে না নিয়েই চলে গেছে। আমিও রওনা দিচ্ছিলাম। তুই কি আসবি?”
“আসবো না মানে? আমি এখনি আসছি।”
“বাসস্ট্যান্ডে আছি আমি। লোকেশন পাঠাচ্ছি, তাড়াতাড়ি আয়৷ তোর ভার্সিটির কাছেই।”
ঝিনুক এক দুই চিন্তা না করে চলে গেল। সে কখনো তার বাবাকে দেখে নি। কিন্তু তার খালু তার বাবার থেকে কম না।

বিকেল সাড়ে চারটা বাজে। সৈকত রমনায় বসে ছিলো। বারবার কল করছিলো ঝিনুককে তার কল ধরার নামই নেই। প্রভা থেকে কল করে জানতে পারে ঝিনুক তার খালার বাসায় চলে গেছে।

রাত একটা বাজে ঘুম ভাঙে ঝিনুকের। সে উঠে দেখে সে তার রুমে। তার মাথায় এলো সে বাসে বসে ছিলো হঠাৎ করে কীভাবে তার চোখ লেগে এলো সে বুঝতেই পারলো না। তার মনে হলো গতকালের ঘুমের ঔষধের কারণে এই অবস্থায়। পরক্ষণেই তার মনে পড়লো তার খালুর কথা। সে দৌড়ে বের হয় হাস্পাতালে যাওয়ার আসায়। কিন্তু খালুর রুমে তাকে পেয়ে আবারও অবাক হয় ঝিনুক। তার না হাস্পাতালে থাকার কথা?

পরিশের রুমের সামনে যেয়ে দরজায় টোকা দেয় ঝিনুক। তার উত্তর লাগবে পরিশ ভাইয়া থেকে। সে মিথ্যা কেন বলল? পরিশ দরজা খুলে না। কিন্তু জিজ্ঞেস করে,
“কে?”
ঝিনুক উওর না দিয়ে রুমে ঢুকে পড়ে। সে রাগের মাথায় কিছু বলতে নিয়েছিলো কিন্তু রুমের অবস্থা দেখে সে স্তব্ধ হয়ে গেল। তার বিছানার সামনেই পরে আছে দুইটা মদের বোতল, গ্লাস, ড্রাগসের প্যাকেট ও তিনটা আধো খাওয়া সিগারেট এবং হাতে সিগারেট। এইসব দেখেই ঝিনুক আকাশ থেকে পড়লো। সে সারাজীবনে পরিশকে সিগারেট ধরতেও দেখে নি আর এই অবস্থা দেখে সে বুঝে উঠতে পারছে না কি এইসব!

ঝিনুক কাঁপা-কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“এই….এইসব কী ভাইয়া? তুমি কবে থেকে…..”
পরিশ তার কথা কেটে বলল,
“তুই এইখানে কী করিস সোনা? যা নিজের রুমে যা।”
“ভাইয়া তুমি নিজের কী অবস্থা করেছ? আর তুমি আমাকে মিথ্যা বলে আনলে কেন? খালু হাস্পাতালে না নিজের রুমে।”
পরিশ উঠে এগিয়ে এলো। সে ভালোভাবে হাঁটতেও পারছিলো না। যা দেখে ঝিনুকের কান্না এসে পরলো। নিজের ভাইকে কখনো তার এমন অবস্থায় দেখতে হবে সে ভাবতেও পারে নি। পরিশ হাত সামনে এসে দাঁড়ালো। কেমন করে হেসে বলল,
“তোর আমার জন্য কষ্ট হচ্ছে? এই’যে দেখ তুই আমাকে কত ভালোবাসিস! আর বাবা বলে তুই না’কি আমাকে ভালোই বাসিস না।”
পরিশ পরে যেতে নিলেই ঝিনুক তার বাহু ধরে তাকে সামলিয়ে নিলো। ঝিনুক বলল,
“আমি অবশ্যই তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি আমার ভাই হও।”
সাথে সাথে পরিশ ঝিনুকের হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে হাত বাহু চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমি তোর ভাই? কীভাবে আমি তোর ভাই? তুই আর আমি কী এক মায়ের সন্তান না তোর আর আমার রক্তে মিল আছে?”
কথাগুলো শুনে ঝিনুক থমকে গেল। পরিশ কি বলল তার বুঝতে সময় লাগে ভীষণ। সে স্তব্ধ রইল অনেকক্ষণ।
পরিশ নিজেই আবার ঝিনুককে ছেড়ে তার গালে আলতো করে হাত রেখে বলল,
“আমার সোনা ময়নাপাখি তুই না ছোট বেলায় পুতুল খেলার সময় বলতি তুই বড় হয়ে আমাকে বিয়ে করবি? আমরা দুইজন আগামীকাল যেয়ে বিয়ে করে আসব ঠিকাছে?”
“আমি বিবাহিত ভাইয়া। ভাইয়া তুমি নেশায় আছ যেয়ে ঘুমাও প্লিজ। তোমার হুশ নেই তুমি কি বলছ।”
পরিশ চেপে ধরে ঝিনুকের গাল। রাগান্বিত স্বরে বলে,
“ওই হারামজাদা সৈকতের জন্য সব শেষ হয়ে গেছে। আমি তোদের এত কিছু করে আলাদা করলাম অথচ অবশেষে ওই কুত্তাই তোর কপালে জুটলো। কিন্তু এইবার এমন হবে না। তুই শুধু আমার হবি। আর কারও না। বুঝতে পারছিস তুই?”
ব্যাথায় কুঁকড়ে গেল ঝিনুক। সাথে এমন কথা শুনে সে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলল,
“ভাইয়া তুমি সৈকতের নামে সব মিথ্যা বলেছ? কিন্তু কেন? তুমি জানো আমি ওকে কত ভালোবাসি তাও তুমি….. ”
পরিশ ঝিনুকের গাল ছেড়ে গলা চেপে ধরলো। অন্যহাত দিয়ে তার বাহু খামচে ধরে বলল,
“কেন তুই ওকে ভালোবাসবি? আমি তোকে ভালোবাসি তা তোর চোখে পড়ে না? ছোট থেকে তোর সব যত্ন আমি করছি তুই ওকে কেন ভালোবাসবি? ওকে কেন বিয়ে করবি? অনেক সহ্য করেছি আর না। তুমি আমার হবি। শুধুই আমার। আমি আগামীকালই তোকে বিয়ে করবো।”

চলবে…….

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here