গল্প: আমার গল্পে শুধু তুমি
লেখক: হাচনাইন হোসেন সাব্বির
পর্ব:২
-সামান্য খিঁচুরিও রান্না করতে পারিস না অথচ এতো বড় বাড়ির বউ হওয়ার সাধ!!
-ফুপ্পি!!
-চুপ কর!!একটা কথা ও বলবি না তুই কি ভেবেছিস তোরা আমার মাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার ছেলের ঘারে চেপে বসে ওর ঘার ভেঙ্গে খাবি?ভুল করেও এমন ভাবিস না তোর গোষ্ঠিকে চালানোর জন্য একটা টাকা ও আমার ছেলে তোকে দিবে না অন্তত আমি বেঁচে থাকতে তো নয়ই বুঝলি।
কথাটা বলে তমশা বেগম রান্না ঘর থেকে চলে যায়।অন্তী থম মেরে দাড়িয়ে আছে।এই ফুপ্পিকে যেন সে আগের ফুপ্পির সাথে কিছুতেই মেলাতে পারছে না।আগে যখন ফুপ্পি অন্তীদের বাড়িতে আসতো অন্তীকে কতোই না আদর করতো আর আজ…..!!
সকাল বেলা অন্তীর ঘুম ভাঙ্গে তূর্য চিৎকার চেচামেচিতে।তূর্য বারান্দায় দাড়িয়ে কারো সাথে খুব জোড়ে জোড়ে কথা বলছে।বোধয় খুব রেগে আছে ও।
অন্তী গুটিগুটি পায়ে একটু এগিয়ে গিয়ে বারান্দায় উঁকি দিতেই দেখে তূর্য ফোনে কারো সাথে খুব ঝগড়া করছে।
অন্তী বরাবরই তূর্যর রাগকে খুব ভয় পায় তাই আর সেদিকে না এগিয়ে পা বারায় ওয়াশ রুমের দিকে।
অন্তী গোসল করে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখে তূর্যর ফোনটা বাজছে।অন্তী এদিক ওদিক উঁকি ঝুকি মারে কিন্তু তূর্যকে আসে পাশে কোথাও দেখতে পায় না সে।অথচ ফোনটা বেজেই চলেছে।
অন্তী কি মনে করে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে
-জান আমি তোমায় খুব ভালোবাসি খুব খুব তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারো না। প্লিজ তুমি ফিরে এসো প্লিজ আমি তোমাকে ছাড়া….
-হ্যালো
(কথাগুলো শুনে অন্তী কি বলবে বুঝতে পারছিলো না তাই মেয়েটাকে থামানোর জন্য এই উপায়)
-হ্যালো কে বলছেন?কে আপনি তূর্য বেবির ফোন আপনার কাছে কেন?কি হলো চুপ করে আছেন কেন?
-আমি…..মানে আমি আসলে তূর্য ভাইয়া তো….
ব্যাস এইটুকু বলতেই পেছন থেকে কেউ একজন ছোঁ মেরে অন্তীর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়।
অন্তী পেছন ফিরে তাকাতেই তূর্য অন্তীর হাতটা পেঁচিয়ে ধরে….
-তোর এতো সাহস হয় কি করে আমার জিনিসে হাত দিস??
-আহ্ তূর্য ভাইয়া আমি ব্যাথ্যা পাচ্ছি
-খুব সাহস বাড়ছে না তোর?কি মনে করেছিস বিয়ে করেছি বলে মাথায় উঠে গেছিস?এতো সাহস আসে কোথা থেকে?এই সব সাহস গিয়ে তোর সাগড় ভাইয়াকে দেখা আমাকে না…
তূর্য এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে অন্তীর হাতটা আরো শক্ত করে ধরে।
-ও মা গো!!আপনার ফোন বার বার বাজছিলো আপনি কোথাও ছিলেন না আমি ভেবেছিলাম হয়তো জরুরি কোনো ফোন তাই আমি।আমার ভুল হয়ে গেছে আর কখনো হবে না…
অন্তী এবার জোড়ে জোড়ে কেঁদে দেয়।
তূয এবার হাতের বন্দ্ধন আলগা করে দেয়।অন্তী ছুটি লাগায় ফুপ্পির কাছে।
ফুপ্পিকে বলে দিবে তূর্য ভাইয়া ওকে মেরেছে….
আর কাল রাতে তো!! না না সব বলেদিবে ও ফুপ্পিকে
অন্তী একরকম ছুটতে ছুটতে ফুপ্পির কাছে যেতেই মাঝ পথে ধাক্কা খায় বড় ভাবির সাথে
-আউ্চ এই এভাবে ছুটছো কেন?দেখে চলতে পারো না ধূর!
-সরি ভাবি আমি দেখতে পাইনি!!
-যত্তসব
-ভাবি তুমি কি কোথাও বেরোচ্ছো?
-সেই কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে??
অন্তী এবার চুপ হয়ে যায়।প্রভা ভাবির কাছ থেকে এমন ব্যবহার আসা করেনি অন্তী।
বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে দুই মাস হলো।বাবা বড় ভাইয়া আর ভাবিকে দাওয়াত দিয়ে সে কি এলাহী কান্ড করেছিলো।তখন তো বড় ভাবি…
হয়তো খুব রেগে আছেন তাই এমন ব্যবহার করলেন!
(অন্তী মনে মনে কথাগুলো বলে)
এদিকে অন্তীকে মুখ ভেঙ্গিয়ে প্রভা বেরিয়ে যায়।
অন্তী আবার ছুট লাগায় ফুপ্পির কাছে।কাল এসে থেকে একবারও ফুপ্পিকে দেখেনি।তাই মন কেমন কেমন করছিলো।
অন্তী ফুপ্পির ঘরের সামনে দাড়াতেই কানে আসে তমসা বেগম ফুপ্পার সাথে বেশ চিৎকার চেচামেচি করছে।
-দয়া দেখিয়ে তো মেয়েটাকে আমার ছেলের ঘারে চাপালে তারপর কি হবে ও কি আমার ছেলের যোগ্য বলো
-চুপ করো তো অন্তী কতো ভালো মেয়ে তা কি তুমি জানো না!
-রাখো তোমার ভালো মেয়ে আমার ছেলে বিয়ে করবে কোনো বড়লোকে বেটি কে আর তা না
-ও তোমার নিজের ভাইয়ের মেয়ে ওদের কি অবস্থা তা তো তুমি জানোই।
-তাতে আমার কি?
অন্তী অনেক্ষন দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথাগুলো শুনে।
-ফুপ্পি!!
তমসা বেগ মুখ তুলে তাকায়
-কি হয়েছে এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আড়ি পাতছিলি।
-না না ফুপ্পি আসলে তূর্য ভাইয়া আমাকে মেরেছে দেখো… (হাত দেখিয়ে)
-বেশ করেছে মেরেছে….এখন এইসব ন্যাক্যামো না করে কাজ টাজ কিছু কর।বাড়িতে দুই দুইটা বউ থাকতে কাজের লোকের রান্না খাবো নাকি আমরা।
-অন্তী
-হ্যা ফুপ্পি।।
-গিয়ে একটু খিচুড়ি কর তো।তোর মা খুব ভালো রান্না করতো….
অন্তী ফুপ্পির ধমকানী শুনে এইটুকুও বলতে ভুলে গেছে যে সে রান্না করতে জানে না।
বাবা মায়ের প্রথম সন্তান হওয়ার ক্ষাতীরে মা কখনো এক গ্লাস পানিও নিজে নিয়ে খেতে বলে নি।
অন্তী রান্না ঘরে এসে অনেক চেষ্টা করেও কিছু করে উঠতে পারছে। একেই তো অপরিচিত জায়গা তার উপর এসব কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
মাঝে তমসা বেগম একবার রান্না ঘরে এসে অন্তীকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে রাগে গজগজ করতে করতে কথা গুলো শুনিয়ে উপরে চলে যায়।
তমসা বেগমের রান্না করা খিচুড়ি চাই মানে চাই।এবং সেটা অন্তীকেই রান্না করতে হবে।এতো বড় বাড়ির বউমা শ্বাশুড়ির এতটুকু আবদার না রাখতে পারলে এমন অযোগ্য বউ দিয়ে কি করবেন ওনি!!
অন্তী ওখানেই মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।গাল বেয়ে পানি পড়ছে।
মানুষগুলো হটাৎ করে এমন পাল্টে গেলো কি করে!!সম্পর্ক পাল্টে গেলে কি মানুষ ও পাল্টে যায়।
অন্তী বেখেয়ালে চুলায় বসানো গরম পানির দিকে হাত বাড়াতেই কেউ একজন হাতটা চেপে ধরে…. -তূর্য ভাইয়া তুমি!!
-হুহ….কোথায় দাড়িয়ে আছিস হুস নেই এখনি হাতটা পুড়িয়ে ফেলতিস
-না মানে ফুপ্পি আমাকে রান্না করতে বলেছে কিন্তু আমি তো
-কোনো কাজের নই
-মানে
-তুই যে কোনো কাজের নস সেটা আমি জানি।
-ওও
-তুই এখন উপরে যা আমি করে দিচ্ছি!
-মানে
-যেতে বলেছি!!
-হুহ যাচ্ছি।
যেতে যেতে অন্তী হটাৎ করে পেছন ফিরে তাকায় তূর্যর দিকে -আচ্ছা সকালে যে আপনাকে ফোন করেছিলো সে কে??
-ওও সেই মেয়ে যাকে আমি ফিরে গিয়ে বিয়ে করবো!ও সেই মেয়ে যে আমাকে ভালোবাসে!ও সেই মেয়ে যে আমার জন্য সব করতে পারে!ও তোর মতো স্বার্থপর আর চরিত্রহীনা নয়।
-তাহলে আমাকে বিয়ে কেন করলেন আর কাল রাতে….ওমনই বা কেন করলেন??
-আমার ইচ্ছে হয়েছিলো তাই!!
কথাগুলো বলেই তূর্য কাজে মন দেয় অন্তী ছুট লাগায় নিজের ঘরের দিকে।
আবার সেই অতীতের একটা মিথ্যে…… একটা খুব বড় মিথ্যে!!